অরুর_সংসার #পর্ব-৪ #লেখিকাঃ নিশি কথা

0
625

#অরুর_সংসার
#পর্ব-৪
#লেখিকাঃ নিশি কথা
________________

ফোন রেখে পিছে তাকাতেই অয়ন দেখল ঝড়ের বেগে কেউ তার কেবিনে নক না করেই ঢুকে গেল!
সেটা আর কেউ না জয়া…….

জয়ার এমন কাজ দেখে অয়নের মেজাজ আরো খারাপ হয়ে গেল। কিন্তু অয়নের একটা স্বভাব হল তার রাগ হলে সে ২ টা জিনিস করে! এক যার উপর রাগ হয় তাকে ও তার কথা কে সম্পুর্ণ ইগনোর করে আর দুই যার উপর রাগ তাকে ঠান্ডা মাথায় অপমান করে।
অয়ন: ডাঃ জয়া!……… আমি কিন্তু আপনার এত তাড়াহুড়ায় আগমনের কারণ জানি।(বলে অয়ন বাকা হাসি দিল!!)
জয়া :(এই হাসির উপর ই তো জয়া ফিদা) জি?
অয়ন : জ্বি !!!!!
জয়া : কি কারন স্যার??
অয়ন : গত মাসের পেইমেন্ট!!! যেখানে প্রতি মাসে ২ তারিখ আপনাদের পেমেন্ট আমি দিয়ে দেই সেখানে আজ ৩ তারিখ!! সরি ডাঃ! আজ ও পারছি না পেমেন্ট দিতে!! ব্যাংকে যেতে পারি নি! কাল দিয়ে দিবো। চিন্তা করেন না প্লিজ!! পেইমেন্ট এর চিন্তায় তো দেখছি আপনি সব ই ভুলে গেছেন!! ম্যানার্স ও!!!
(অয়নের এই ধরনের কথা শুনে জয়া বড়সড় একটা ধাক্কা খেল” সাথে কষ্ট লজ্জা দুটাই! “!!
জয়ার চোখে পানি টলমল করছে? )
জয়া কিছু বলতে যাবে তখনই অয়ন বলল…
অয়ন: আপনি এখন আসতে পারেন ডঃ!! ৬:৩০ এ দেখা হবে..
(জয়া কথা না বাড়িয়ে চলে গেল)

♣♣♣♣♣

আরোহী কিছুদিনে ধরে খেয়াল করছে যে তার স্বামি অনিক রোজ রাতে খুব দেরি করে ফেরে,মাঝরাতে কারো সাথে ঘন্টা খানিক কথা বলে… আরোহী জিজ্ঞাস করলে বলে বিদেশের ক্লাইন্ট… বিদেশের ক্লাইন্ট হলে কি আরোহীর সামনে কথা বলা যায় না? বারান্দায় কথা বলা লাগে কেন????
বিয়ের ৪ বছরে অনিককে এত অচেনা কোন দিন লাগে নি যা ইদানিং লাগছে!… ৪ বছরের বিয়ের পরিচয় তো আলাদা!! তার আগে যে ৫ বছরের প্রেম!!!!৯ বছরের এত সুন্দর সম্পর্কে কবে এমন দুরত্ব এলো বোঝে নি আরোহী…….

বিয়ের প্রথম সাড়ে তিন বছর আরোহী মনে করতো তার চেয়ে লাকি এই দুনিয়ায় কোন মেয়ে নেই এত ভালবাসা, কেয়ার করতো অনিক। এই তো সেদিনের কথা আরোহী যখন বলল যে সে মা হতে চলেছে!!অনিক খুশিতে পাগলপ্রায়! আরোহী কে মাটি তে যেন পা ইই রাখতে দিত না…. প্রেগন্যানন্সির ৯মাস অনিক অফিসেই যায় নি….অফিসের কাজ বাসায় বসে করেছে আর দিন রাত আরোহীর খেয়াল রেখেছে………. আর যেদিন রুশার জন্ম হল সেদিন অনিক খুশিতে কেঁদেই দিয়েছিল….. সারা হাসপাতাল, অফিস, পাড়াপ্রতিবেশিদের মিস্টি খাইয়েছিল…. অফিসের স্টাফদের সেই মাসে বোনাস দিয়েছিল মাসের মাঝখানেরি ♥♥♥♥♥কত সুন্দর ছিল আরোহী, অনিক এর চড়ুই সংসার তাদের ছোট্ট রুশাকে নিয়ে!!!! কিন্তু গত ১মাস ধরে অনিক বদলে গেছে!! আরোহীকে সময় দেয় না সেটা আলাদা, সে তো ইদানিং তাদের রুশাকেও সময় দেয় না!!!! যে অনিক রোজ ৮ ঘন্টা অফিস করে ক্লান্ত শরীরেও ফিরেই হাত মুখ ধুয়ে রুশার সাথে ২ ঘন্টা খেলা করতো সেই অনিকে গত ১ মাস রুশার সাথে ৫ মিনিটও খেলে না!।
২বছরে ৬ মাসের বাচ্চা টা সারাদিন তো এই অপেক্ষায় ই থাকে যে কখন তার বাবাই আসবে আর তার সাথে খেলা করবে!!!!
আরোহীর এখনো ১মাস আগে সেই দিনের কথা মনে আছে যেদিন কলিং বেল বাজার সাথেসাথে রুশা গুটিগুটি পায়ে দৌড়ে দরজা খুলে অর বাবাইয়ের দিকে ২ হাত বারিয়ে দিয়েছিল প্রতিদিনের মত… অনিক রুশাকে কোলে নিয়ে কপালে ২ টা চুমু দিয়ে ভিতরে নিয়ে এসেছিল। ফ্রেস হবে বলে রুশাকে নামিয়ে রুমে যেই গেল রুশা তো প্রতিদিনের মত সব খেলনা, বই নিয়ে অনিকের জন্য বসে ছিল যে অনিক ফ্রেস হয়ে এসে খেলবে। অনিক ফ্রেস হয়ে নিচে ঠিক ই এলো কিন্তু রুশার সাথে খেলল না।আরোহীকে খাবার দিত বলে উপরে চলে গেল।আরোহী খাবার এক হাতে নিয়ে আরেক হাতে রুশার হার ধরে উপরে গেল। খাবার হাতে দিতেই অনিক খেয়ে নিল। খাবার শেষ হবার সাথে সাথে রুশা অনিকের হাত ধরে টানতে লাগলো! অনিক বলেছিল মা আজ আমি অনেক ক্লান্ত, আজ খেলবো না। রুশা সেদিন লক্ষি মেয়ের মত অনিকের গালে চুমু দিয়ে একা একাই খেলবে বলে নিচে গেল।…
আরোহীর সেদিন অনিককে অন্যরকম লাগলেও ভেবেছিল হয়তো সত্যিই অনিক আজ অনেক ক্লান্ত। কিন্তু এরপর থেকে ৫,৭ দিন গেল রোজ অনিক এক ই কথা বলে….. আরোহী আর রুশা কে এভয়েড করে………!! রুশাও সে কয় দিন রোজ আশা করে অনিকের কাছে যেত আর মন খারাপ করে ফিরে আসতোআর একদিন!!!!! অনিক বেল দেওয়ার সাথে সাথে রুশা তার সামনে গেলে রুশাকে পাশ কেটে সে চলে গেল!! রুশা অনিকের পিছন পিছন গিয়ে অনিকের হাত ধরে টানা আরম্ভ করলো…..অনেক হয়েছে!! আজ বাবাইয়ে রুশার সাথে খেলা করতেই হবে….
রুশা: বাবাই বাবাই তল তলো (চলো চলো)…….কেলা কেলা (খেলা)
অনিক : না এখন না,যাও পরে
রুশা : কেলা কেলা! তল তল
অনিক : বললাম তো না।যাও (এই বলে ঝারি মেরে হাত সরায় নিল)(সেই সময়ই আরোহী রুমে ঢুকে সব টা দেখে নিল… আরোহী রুশার দিকে তাকালো..রুশার চোখে পানি টলমল করছে )
আরোহী : অনিক!!!!! এমন করছো কেন?? ভালভাবেও তো ভলা যায়!! কি হয়েছে ইদানিং তোমার????
অনিক : কিছুনা। ভাল লাগে না ওত নেকামি।
আরোহী : অনিক!!!!!
অনিক : চুপ! যাও তো এখান থেকে।জাস্ট লিভ!! আর (অনিক রুশার হাত দরে টেনে টেনে আরোহীর
হাতে দিয়ে বলল….)
অনিক: যাও, একেও সরাও এখান থেকে
।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।
আরোহীর চোখ বেয়ে ২ ফোটা জল বের হয়ে গেল এসব মনে করে!!!!
সেদিনের পর থেকে অনিক পুরোই পাল্টে গেছে, পাল্টে গেছে তাদের সম্পর্ক!!

রুশাও ওই দিনের পর থেকে আর অনিকের কাছে যায় না… খেলতে চায় না…রুশার ছোট্ট মন টা অনিকের সেদিনের খারাপ আচরনে কি বুঝেছিল জানা নেই তবে সেই থেকে যে বাবার প্রতি অভিমানের বিশাল পাহার তার মনে সৃষ্টি হয়েছে এটা ভালই বোঝে আরোহী…..
……………..
♣♣♣♣♣♣♣
♣♣♣♣♣♣♣
অরু অয়নের কথা মত নিজের হাতে চাদর কেচে ছাদে নেড়ে দিয়ে আসলো । বেলা বাজে ১:৩০। অরু শাড়ি চেঞ্জ করে নিল! চাদর ধুতে যেয়ে শাড়ি ভিজে গেছে।শাড়ি চেঞ্জ করে পরনের শাড়ি টাও ধুয়ে আবার ছাদে যেয়ে নেড়ে দিল। এখন অরুর পরনে একটা সুতির হলুদ শাড়ি! বিছানায় নিতুন চাদর বিছিয়ে খাটে হেলান দিয়ে বসলো অরু! ক্লান্ত লাগছে তার। রাজ্যের ঘুম ভর করলো অরুকে……..
…………
..
অয়ন লাঞ্চ খেতে ক্যান্টিনে যেতেই ঢাক্কা খেল জয়ার সাথে!!! জয়া সরি সরি বলে উপরে তাকাতেই অয়নকে দেখে হা করে তাকিয়ে আছে। অয়ন ইটস ওকে বলে জয়াকে পাশ কাটিয়ে চলে গেল।খেতে বসল।জয়া হুট করেই অয়ন যে টেবিল বসা সেখানে বসে পড়লো! বলল……
জয়া: স্যার বাইরের খাবার এখন খাওয়া ঠিক কা।দেখে করোনা ভাইরাসের যে প্রকপ! আমি বাসা থেকে নিজের হাতে রান্না করে এনেছি “! প্লিজ এখান থেকে খান..

চলবে…..

Next part পড়ার জন্য আমাকে Follow দিয়ে রাখুন সবাই,তাছাড়া Next Part খুঁজে পাবেন না!💖💖

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here