#অরুর_সংসার
#পর্ব-১৭
#লেখিকা-নিশিকথা
_________________
অরু আজ অয়নের দেওয়া সাদা জামদানী শাড়ি পরেছে…শরীরে মন মাতানো পারফিউম
…..পাতলা আচলে ধবধবে সাদা পেট দৃশ্যমান….গহনা বলতে কিছুই পরেনি অরু…. গলা,কান,হাত খালি….
চুলগুলো খোপায় বেধে বেলীফুলের গাজড়া পরেছে অরু! ছাদে নিজের হাতে লাগানো বেলীফুলের গাছ থেকে ফুল তুলে নিজের হাতেই গাজড়া বানিয়েছে অরু……..
চোখে মোটা কাজল……. ঠোটে টুকটুকে লাল লিপস্টিক……..
মেকআপের আর দরকার কি?এতেই অপরূপ সুন্দরি লাগছে অরুকে যেন এক সাদা পবিত্র অপ্সরী….
♥♥
♥♥এখন দেখার পালা অয়ন তার অপ্সরী বউকে এই রাতে কিভাবে আপন করে নেয়…….. দেখার পালা কিভাবে দুজন দুজনের মাঝে ডুব দেয়।।। কিভাবে প্রতিযোগীতায়তায় নামে একে অপরকে আপন করে নেবার যুদ্ধে……♥♥
♥♥
.
..
…
..
.
রাত ১:৩০ বাজে…. অয়নের রুমে আসার কোন নাম নেই… অরু সেজেগুজে অয়নের অপেক্ষায় বসে থাকতে থাকতে স্কাউচ এর উপর আধশোয়া হয়ে কখন ঘুমিয়ে পরেছে তার খেয়াল নেই….
অয়ন তো এমন করে না…রোজ ১১টার মধ্যে খাওয়াদাওয়া শেষ করে দ্রুত নিজের রুমে চলে আসে..তাহলে আজ কি হল?……
……ওদিকে অয়ন তার বাবার সাথে গল্প করায় এতই মশগুল যে সময়ের তার খেয়াল নেই!
-কি রে! কয়টা বাজে দেখ!! রাত ১:৩০টা।খেয়াল ই ছিল না সময়ের
-হুম বাবা অনেক বেজে গেছে। ঘুমিয়ে পড় তুমি। আমিও রুমে যাই। আর সাদকে জানাতে হবে যে আমরা পরশু ভোরে রওনা হব।
-পরশু না কাল। ওলরেডি দিন শুরু হয়ে গেছে
-ওহ হ্যা
-এখন গিয়ে শুয়ে পর
-ওকে বাবা। আসসালামু আলাইকুম
-ওয়ালাইকুম আসসালাম
.
..
.
সাদের ফোনের রিংটোন বাজছে… বেজেই চলেছে….
-এই শুনছো! থামো না! দেখ ফোন বাজছে তোমার
-হু
-কি হল! দেখ না কে
-উহু
-উফফফফফ প্লিজ থামো, আগে দেখো কে? জরুরি কিছু চলে
-উহ!! দুর কোন শালা এই সময় ফোন দিল
(সাদ মৌ এর উপর থেকে উঠে ফোন রিসিভ করলো…
-হেলো কিডা?
-সাদ! ওকি ভাষা! ম্যানাস্ কি সব ভুলে গেছিস…
-ওহ তুই! ধুর বা** তোর খেয়ে বসে কোন কাজ নাই নাকি ভাবি আজ দেয় নি
-থাপরায় দাত ফেলায় দিবোনি। থাম
-বক বক জলদি
-কাল ভড়ে বান্দরবনের ৪ টা টিকিট কনফার্ম কর… আমি বিকাশে টাকা পাঠায় দিছি
-ওকে ডান। রাখ এবার
(অয়ন ফোন কেটে রুমে ঢুকলো……..
.
অয়ন রুমে ঢুকলো তখন ঘড়ীতে রাত ২ টা ছুঁইছুঁই।
রুমে ঢুকে অয়ন বড়সড় একটা ধাক্কা খেল!…
.
অরু তার স্কাউচে শুয়া…. দুর থেকে সাদা জামদানী শাড়ি তে যে অরুকে অপ্সরী লাগছে।….. অয়ন অরুর কাছে গেল…. পাতলা শাড়ীর মধ্য দুয়ে অরুর উন্মুক্ত ফরসা পেট সহ সামনে থেকে অর্ধেকাংশ শরীর দেখা যাচ্ছে। অয়ন রিতিমত ঘামতে শুরু করলো…..
.
অরুর সৌন্দর্যে অয়ন বরাবর মুগ্ধ…….. অরুর সৌন্দর্যে অয়ন বরাবর মানতে বাধ্য যে সে এত সুন্দর নারী এর আগে কখনো দেখে নি।…..
.
আজইই অয়ন ভাবছিল এই শাড়িটার কথা যে অরু তার দেওয়া প্রথম শাড়িটা এখনো পরে নি আর আজ ই অরু এই শাড়ি প্রথম বার পরে প্রতিবারের মত অয়নকে মুগ্ধ করে ছাড়লো….
অয়ন ব্যাগ থেকে নোস পিনের বক্সটা বের করে অরুর কাছে বসলো……
.
নোসপিন টা অরুকে পড়িয়ে দিল অয়ন…. ঠিক তখনি ইলেক্ট্রিসিটি চলে গেল আর হীরার নাকফুলে অরুর সুন্দর মুখখানা চাঁদের ন্যায় উজ্জ্বল হয়ে গেল। এমন অপরূপ একটা মুহূর্ত পেয়ে অয়ন এবার কিছু বলার ভাষা যেন হারিয়ে ফেলেছে………. অয়ন অরুর থেকে একটু দুরে সরে এলো। নিজের মোবাইলটা বের করে ঘুমন্ত অবস্থায় কয়েকটা নিজের বউয়ার ছবি তুলে নিল। আজ অরুকে এতই সুন্দর লাগছে যে ছবিগুলা ঘুমন্ত অবস্থায় ও অসাধারণ হয়েছে আর তারউপর জলন্ত হীরার নাকফুলটার উজ্জলতায় বারতি আলোর দরকার হয় নি।
অনেকগুলা ছবি তোলা শেষে অয়ন একটা পার্ফেক্ট জায়গা দেখে সেখানে ক্যামেরা সেট করলো। তারপর টাইমার সেট করে অরুর কাছে গেল….অয়ন অরুর কপালে গভীরভাবে একটা ভালবাসার পরশ দিলো আর সেটাই ক্যাপচার হল অয়নের ক্যামেরায়…….
অয়ন ছবি টা দেখছে…. অসাধারণ সুন্দর হয়েছে ছবি টা…… আজ যে অয়ন ও একটা সাদা গেঞ্জি পরা আছে……
.
নির্জন রাত….
একজোড়া দম্পতি….. একজন নিজের ভালবাসার মানুষটার জন্য অপরুপ সাজে সজ্জিত হয়েছে তার দেওয়া সাদা জামদানী পরে.. আর অন্যজন দেখছে, মন ভরে সেই নারীকে যে কিনা তার জন্যই এই রাতে এত সেজেছে…..
অরু অয়নের জন্য রাতে সেজেছে কথাটা স্বাভাবিক ই তো……
.
তবে……..
.
অরুর সাজ আজ ভিন্ন! এই সাজের দ্বারা সে কি ইঙ্গিত করতে চাইছে অয়নকে???
.
অরুকে আজ অসাধারণ সুন্দরি লাগছে ঠিক ই কিন্তু আজ অরুকে রোজকার মত অপরূপ নির্মল লাগছে না….আজ অরুকে কেন জানি অপূর্ব এক আবেদনময়ী নারী লাগছে অয়নের নজরে…….
.
না সে অরুকে এই রুপে চায় না…
অয়ন তো নিজেকে অনেক কন্ট্রোল করে আসছে গত ৫ মাস ধরে…
সেদিন !!! যেদিন অয়ন-অরু একসাথে সকাল হওয়া দেখেছিল…. সেদিন তো তাদের জীবনের ও নতুন সকাল ছিল! অয়ন সেদিন অরুর মাঝে একজন ভাল ও খুব কাছের বন্ধু পেয়েছিল…
সেদিনের পর থেকে অয়ন তাদের বিয়ে, বিয়ের পরের কিছুদিন গুলো ভালভাবে ভেবেছিল …… সে তো অরুকে ভালবাসে না তবে অরুকে দেখলে তার কাম সাধনা জাগে…..অরুকে দেখলেই অয়নের মাথায় অরুকে পাওয়ার নেশা এমনভাবে ভর করে যে অরুর অবুঝ মনের আঘাত তার চোখে বিন্দুমাত্র ও বাধে না….. এই কাম সাধনাকে কি নিয়ন্ত্রণ করা যায় না?
.
না যায় না….অয়নের শুধু একটাই কথা মাথায় ভালোভাব গাঁথা সেটা হল অরু তার স্ত্রি….. অরুর শরীরের প্রতিটি অংশের উপর শুধু অয়নের অধিকার….. অরুকে সে যখন খুশি কাছে পেতে পারে, অরুর মাঝে ডুবতে পারে… এটা অয়নের #অধিকার।।
.
কিন্তু এটা কি অয়নের ভুল না? হ্যা স্বামি হিসেবে অরুর উপর তার সম্পুর্ণ অধিকার কাছে কিন্তু অরু নিজেই তাদের বাসর রাতে বলেছিল যে অরু প্রস্তুত না…..
তাহলে অরুকে কি সময় দেওয়া যায় না…? অরুকে সময় দিতে অয়নের আগে নিজেকে কন্ট্রোল করতে হবে….. আর নিজেকে কন্ট্রোল করা অয়নের পক্ষে খুবতো কঠিন না কারন নারীতে তো তার কোন দিন ই অতটা আকর্ষণ ছিল না #অরু_ব্যতিত……
তাই তো অয়ন অরুকে গত পাঁচ মাস বন্ধু হিসেবে ট্রিট করেছে, শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয় নি…
.
অরুর রূপের মায়ায় এর মাঝে প্রায় ই পড়েছে অয়ন যখন নিজেকে কন্ট্রোল করা খুব ই কষ্ট সাধ্য হয়ে পরতো তার জন্য একারনেই তো তখন মাঝেমাঝে দুরেদুরে থাকতো অয়ন অরুর থেকে, সময় কম দিতো অরুকে………….
.
♦অয়ন নিজেও জানে না যে সে গত একয়মাসে কেন এমন করেছে… অরু তো অয়নের কামনা পূরনের খোড়াক ছিল অয়নের কাছে বিয়ের দিন থেকে….. তাহলে অয়ন কেন নিজেকে কন্ট্রোল করে অরুকে সময় দিতে চেয়েছে….কেন নিজের শরীরের চাহিদার আগে অরুকে নিয়ে সে এত ভেবেছে….. জানা নেই অয়নের……. ♦
কিন্তু অরু আজ এভাবে তাকে আকর্ষণ করছে কেন??
অরুর লাল টুকটুকে লিপ্সটিক অয়নের চোখ বাঁধছে…..অয়ন নিজের রুমালটা বের করে অরুর কাছে গিয়ে একটু ঝুকলো…. রুমাল দিয়ে অরুর ঠোটের লিপ্সটিক মুছতে মুছতে অরুর ঘুম ভেংগে গেল……
অরু চোখ খুলে অয়নকে নিজের কাছে ঝুঁকা অবস্থায় কেমন যেন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে…
এই নজর অয়নের ঠিক বুকের মাঝে ঘায়েল করছে.. অয়ন ও অরুর দিকে তাকানো….. দুজন যেন দুজনের চোখে হারয়ে যাচ্ছিল……
………… হটাৎ ফযরের আযান দিল……..অরু চোখ নামিয়ে বলল………
-নামায পরে নেই আমি
-হুম
-আপনি পড়বেন না?
-হুম।আমি ওযু করে আসতেছি আগে।ততক্ষন তুমি শাড়ী টা চেঞ্জ করে নেও (অরু কেন রাতে সেজেছে এই শাড়ি পরে অয়ন সেটা জিজ্ঞাস করে আর অরুকে লজ্জা দিল না)
-ঠিক আছে
-হুম
(অয়ন অরু একসাথে নামাযে দাড়ালো…..এই পাঁচ মাসে অরু আর কিছু পাড়ুক না পাড়ুক অয়নকে ৫ ওয়াক্ত নামায পড়াতে অভ্যাস করেয়ে ফেলেছে )
♥
♥♥
♥
ফযরের নামায শেষ করে বারান্দায় দাড়িয়ে ভরের পরিবেশ উপভোগ করছে অনিক।
<মন টা আজ তার অনেক ভাল।ভাল হবেই বা না কেন? যে ঘরে আরোহীর মত লক্ষি বউ আছে সে ঘরে উন্নতি আর বরকত হবেই..... গতকাল ই প্রমোশন হল অনিকের।.... সাথে গতকাল রাতে আরোহী রুশাকে নিয়ে রিটার বিয়েতে গিয়েছিল অনিক। হ্যা রিটা নামক ঝামেলা থেকে সে আজ মুক্ত! আর এর পছনে আরোহীর সহায়তা ছিল সবথেকে দরকারি। আরোহী ই বুদ্ধি করে রিটার মোবাইল আর লেপটপ থেকে অনিক আর রিটার সেই আপত্তিকর ফেক ভিডিও টি ডিলিট করিয়েছিল.. আর এতে আরোহীকে সর্বাধিক সহায়তা করেছিল সাদ। বেস্ট ফ্রেন্ডের বোনের বিপদে সে সহায়তা করবে না তা কি করে হয়....সাদ নিজের পরিচিত এক ভাইকে দিয়ে ট্রিকলি রিটার লেপটপ ও মোবাইল হ্যাক করিয়ে ভিডিও ডিলিট করিয়েছিল... . তারপর অনিক আর আরোহী রিটাদের বাসায় গিয়ে ওর বাবাকে রিটার কর্মকান্ডের কথা ফাস করে দিয়েছিল।... . সেদিন রিটার মা বাবা লজ্জায় পরে গিয়েছিল খুব।অনিক আর আরোহী কাছে অনেক করে ক্ষমাও চেয়েছিল.... . তাইই ইই দ্রুত ভাল ছেলে দেখে রিটার বিয়ে দিয়ে দিল তারা........>
-কি গো? ওখানে দাড়িয়ে কি ভাবছো?
-এই তেমন কিছুনা।
-চল ঘুমাই
-হু।আরোহী!! তোমার নামায হল??
-হ্যা
-কিন্তু!!!
-কিন্তু কি?
-তোমার না ডেট চলছে!!
-হুম চল ঘুমাতে! এসব থাক
-থাক মানে? বল ডেট চলছে তাহলে হল না কেন? গত মাসেও আমি এটা খেয়াল করেছি।
-এত দিকে খেয়াল তোমার??
-বল
-না
-কি না? বল
-কি বলবো!! ধুর ভাল্লাগে না!! তুমার এত দিক নজর কেন!! ধুরো.. সারপ্রাইজ টা ই নস্ট করে দিল
-কি সারপ্রাইজ??
-তোমার মাথা
-বল!!
-তুমি কি কিছুইই বোঝ না!!
-কি বুঝবো??
-অনিক!! আমারা ৩ থেকে ৪ হতে চলেছি♥
– ওহ!! কি????? ওয়েট এ মিনিট!!!! ৩ থেকে ৪ মানে??
-হ্যা অনিক! তুমি আবার বাবা হতে চলেছো♥
(অনিক আরোহীকে জড়িয়ে ধরলো….. আজ নিজেকে অনিকের পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুখী ব্যাক্তি মনে হচ্ছে! সে আবার বাবা হবে! রুশা খেলার সাথী আসতে চলেছে….
-কয় মাস?
-আড়াই মাস
-মানে কক্সবাজারে ওইরাতে??
-হু
-আরোহী…… ভালবাসি ♥♥ বড্ড বেশি ভালবাসি তোমায়….
-আমিও ভালবাসি আমার রুশুর আব্বুকে….
♥
♥♥
♥
নামাযের পাটিতে বসে অরু কেঁদেছে… অয়নকে লুকিয়েই কেঁদেছে সে!! নামায শেষে অয়ন অরুকে বলল….
-অরু
-জ্বি
-বলেছিলাম না নীলাচল নিয়ে যাবো??
-হুম
– কাল ভোরে রওনা হব
♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥
চলবে……………..