#ইয়াসমিন_রিমা
#অসম_প্রেম
#পর্ব_৫২
হঠাৎ পেছন থেকে কেউ আদির কাঁধে হাত দিল। আদি চমকে গেল । বৃথা চোখের পানি মোছার চেষ্টা করল।
পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো আয়ান দাঁড়িয়ে আছে। আয়ান প্রেমার মেজ খালার বড় ছেলে।
আয়ান,একি আদি তুমি। এখানে।
,আদি,হ্যা আমি। আসলে ওর ত এক্সিডেন্ট হয়ে ছিল। এখানো অসুস্থ আছে। তার মধ্যে ও অফিস করছে।কাজকে এত বেশি ভালো বাসে এই অসুস্থতার মধ্যেও ছাড়েনি। কাজের মধ্যে ডুবে থাকবে নিজের কোনো খেয়াল রাখবে না।তাই আমি এসেছিলাম ওর খেয়াল রাখার জন্য।
,ওহ আচ্ছা। সত্যি তোমাকে না দেখলে বোঝা যায় না। তুমি তোমার আপুকে কত ভালোবাসো । সত্যি প্রেমা খুব ভাগ্য করে এত গুলো ভাই বোন পেয়েছে। মুচকি হেসে।যারা ওকে প্রচন্ড রকমের ভালোবাসে।বাট বলতে গেলেও ও কিন্তু ওর ভাইবোনদের অনেক ভালো বাসে।সব দায় দায়িত্ব এড়িয়ে গেলেও ভাইবোনদের প্রতি কোন দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারে না।
দুজনে হাঁটছে আর কথা বলেছে। আয়ান আদির গলায় হাত দিয়ে হাঁটছে।
, হুম। তুমি ঠিক বলেছ।আজ অবধি আমি কখনো ওকে দেখিনি ভাই বোনদের প্রতি কোন দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে।
, হাজারো ঝগড়ার মাঝে আমাদের ভাই বোনের ভালোবাসা টাই সেরা ।
হঠাৎ প্রেমা সামনে এসে দাঁড়ালো।,কিরে তোরা এখানে।
আয়ান ফট করে প্রেমাকে জরিয়ে ধরলো।আদি শুধু তাকিয়ে আছে।প্রেমার চোখে।
আয়ান, তুই ঠিক আছিস। জানিস সবাই কত টেনশনে ছিল। তুই এমন ভাবে গাড়ি কেন চালাস। হ্যা ।
প্রেমা, তোদের আর কোনো কাজ নেই আমাকে শাসন করা।ছাড়া। তুই আমার থেকে বড় নাকি আমি তোর থেকে বড়।
, অবশ্যই মুরুব্বি আপনি।
, আয়ান একদম মজা করবি না। বলেদিলাম।
, আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেলের তুই না থাকলে কখনো মজা হয়। শোন আমরা সবাই মিলে ব্যাচেলার পার্টি দিব। সিয়ানের বিয়ে উপলক্ষে। বিয়ে ডেট কিন্তু ঠিক হয়ে গেছে।
, ওহ্ তাই না কি।
, হুম ২৮ তারিখে।
, কিন্তু আমার যে বিদেশে যাওয়ার ছিল।
, তোর সব সময় কাজ থাকে। আমাদের সময় দিশ কই হ্যা।কে না কে তার জন্য পুরো জীবনটাই শেষ করে দিয়েছিস।দেখ খালু তোর বিয়ে ঠিক করেছে। আমাদের সবাইকে বলেছে তোকে রাজি করাতে । কারন তুই ভাই বোনদের কথা কখনো ফেলতে পারবি না।
, তোদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে।এই বিয়ে হবে না । আমি হতে দিব না।যদি হয় তবে বাসর রাতে ই ফারহানের লা,শ পাবি। আমি কতটা ঘাড়ত্যাড়া তা তোরা এত দিনে বুঝতে পারলিনা। হা হা হা
,প্রেমা সব সময় মজা ভালো লাগে না । এবার অন্তত নিজের কথা ভাব।
, অন্য মনস্ক হয়ে, হুম এবার আমি নিজর কথাই ভাববো।
আমার জীবনে শুধু প্রিয় থাকবে।বাকা হাসি দিয়ে।
আদি নাড়া দিয়ে,কি ভাবছো তুমি।
প্রেমা,হু কই কিছু নাতো।
আয়ান, আমার না একটু কাজ আছে। জানিস তো পূর্ণতার কথা মেয়েটা আমাকে পাগল করে দিবে ফোন দিতে দিতে।
প্রেমা, হেসে, তোকে পাগল বানাবে না ত আর কাকে বানাবে। তোদের প্রত্যেকের খবর আমার জানা।তোরা ভাই হয়ে বোনদের বউ চোখে দেখিস। এখন জ্বালাবে না ত আর কি করবে।
আয়ান, তুই সব সময় আমাদের নিয়ে এরকম অনেক কিছু বলিছ।দেখবি এমন দিন আসবে তুই ও আমাদের মতন পঁচা শামুখে পা কাটবি হ্যা।
প্রেমা,মোটেও না।তোরা কেটেছিস কাট তার মধ্যে আমায় টানবি না। বলেদিলাম।
,আদি ,ঠিক বুঝতে পারলাম না।
আয়ান,মানে আমি বুঝিয়ে দিচ্ছি। আমাদের কাজিন সার্কেলে সব জোরা জোরা। হেসে।১, আয়ান পূর্ণতা,২,তন্ময় আরুতা,৩, পূর্ব টায়রা ৪,আরিশ টুসি।
এই হলো কাজিন রিলেটেড লাভস্টোরি।এই প্রেমা আমাদের কম পচান পচাইনি। তন্ময় ত ভয় তে ওকে কিছু বলতেই পারি নি।
,আদি, ওহ্ আচ্ছা ।এই ব্যাপার । হেসে।প্রেমার দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি ওদের সাথে এমন না করলেও পারো।আর তুমি তো
আর বলার আগেই প্রেমা সাটআপ বলে দিল।
আয়ান, তুই ওকে কেন বকছিস।সব সময় শাশন করিস বলে এখানে ও।
তন্ময় প্রেমাকে ফোন দিল,
প্রেমা, আমি একটু কথা বলে আসছি,
,হ্যালো
,হ্যালো আপু আমার তোকে কিছু বলার আছে।
, কি বলবি বল।
,আসলে আমি না থাক পরে বলব। এখন রাখি।
,দাড়া তন্ময়। তুই এক্ষুনি আরুতা কে নিয়ে একটা ঠিকানা দিচ্ছি ওই খানে চলে আয়।
, কেন আপু।
, তুই চলে আয়।ব্যাস আসলেই দেখতে পাবি।
, ওকে।
কেটে গেল।
প্রেমার মাথায় একটা বুদ্ধি এলো। চৌধুরী বাড়ির নিয়ম।যে নিয়ম পূর্ব কাল থেকে পালিত হয়ে আসছে।বাকা হাসি দিয়ে।আজ সেই নিয়ম ভাঙ্গবে।সব কিছু শেষ হওয়ার সময় চলে এসেছে।
তন্ময় ও আরুতা কে কাজি অফিসে আসতে বলেছে।
প্রেমা ফিরে এসে দেখে। দুজনে খুব গল্প করছে।আদি একটু অন্য মনস্ক হয়ে আছে।
, আয়ান ,কথা বলা শেষ।
প্রেমা,হ্যা শেষ।
, আমি এখন যাই রে ও আবার আমার জন্য অপেক্ষা করবে ।
, ওকে মিষ্টি খাওয়ার জন্য চলে আসিস কিন্তু।
, কিসের মিষ্টি।
, সেটা খুব শীঘ্রই বুঝতে পারবি।
, তোর প্রত্যেক টি কথা এত রহস্যে মোড়া কেন। সোজা ভাবে বলতে পারিস না।
, না আমি ত্যাড়া তাই আমার কথাও ত্যাড়া বুঝেছিস।আর খুব ভালো করেই জানিস মেজাজ খারাপ থাকলে ত্যাড়া ত্যাড়া কথা বলতে ই বেশি ভালো লাগে।ঠিক করে হেসে।
, আল্লাহ আর তোর সাথে পারা গেল না। আমি গেলাম তুই থাক।
, কেন থেকে যা।
,না মুরুব্বি আমার কাজ আছে।
প্রেমার গাল টেনে হাসতে হাসতে বলে গেল। দুজনে হেসে ই যাচ্ছে। সত্যি মন খারাপ থাকলে কিছু বন্ধু গুলোর জন্য এমনই মন ভালো হয়ে যায়। আদি এক নয়নে তাকিয়ে ছিল প্রেমার দিকে। মাঝে মাঝে ওর বেশি ভালোবাসা কাজ করে প্রেমার উপর। আয়ান চলে গেল।
আদি, অনেক হয়েছে। কথা। এবার আমার প্রশ্নের উত্তর দাও। কোথায় ছিলে তুমি। চলে এসেছ অফিসে একবার জানানোর প্রয়োজন বোধ টুকু ও করলে না।
, আমি আমার কাজে এসেছি।কে কি করলো না করলো তা জেনে বা জানিয়ে সেটা করে আমার কোনো কাজ নেই।
, ওহ্। সকালে ঔষধ তুমি খেয়েছ।
, কিসের ঔষধ।
,জানো তুমি।ডাক্তার তোমাকে রেস্ট এ থাকতে বলেছিল। এখনও তেমন ব্যান্ডেজ খোলনি। তার মধ্যে ও কাজ করে বেড়াচ্ছ।
,লিছেন আমার সব বিষয়ে নাক গলাবেনা।
,তাই না কি। আয়ানকে যে বললো তুমি কখনো কোনো কাজিনের সাথে সম্পর্ক এ জড়াবে না। ওরা যে কাজিনের সাথে প্রেম করে বেড়ায় তা নিয়ে ওদের অনেক কথা শুনিয়েছ। কিন্তু তুমি তো ওদের থেকে ও আরো কয়েক কাটি উপরে।ডিরেক্ট কাজিনকে বিয়ে করে ফেলেছো।
তো সেই হিসেবে নাক তো গলাবোই।আর তোমার খেয়ালো আমি রাখবো। তার পর যা ইচ্ছা তাই করতে পারো। সারাজীবন তোমার ছায়া হয়ে পাশে থেকে যাব।
, বাহ্ মুখে ত বড় বড় ডায়লগ দিচ্ছ কাজের বেলায় তো গোড়ার আন্ডা।কত গুলো ফাইল ধরিয়ে দিল।,এগুলো সল্ভ করবে।এই যে এত বড় কাম্পানির তার শেয়ার তোর ও আছে। এখন থেকে নিজের কাজ বুঝেনে ।
, আমার এগুলোর দরকার নেই শুধু আমার বউ কে দিলেই হবে ম্যাডাম।
, পৃথিবীতে মেয়ের অভাব নেই। তাদের মধ্যে থেকে কাউকে কর।
, জানো প্রেমা একটা মেয়ের জীবন তখন সুখের হয়। তখন তার স্বামী ভালো হয় । চেহারা ভালো হওয়ার থেকে ভাগ্য ভালো হওয়া প্রয়োজন। সবার কপালে স্বামীর ভালবাসা থাকে না।আর তুমি তো পেয়েও হাড়াচ্ছো। তুমি চাওনি বলেই আমি কাউকে বলিনি তুমি আমার সেই বউ। আমি চেয়েছিলাম তুমি চাও যখন আমাদের কথা সবার সামনে আসবে।আমি শুধু চেয়েছি তোমার খুশি। ভালো থাকা।
, আমাকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে লাভ নেই।সেই ইচ্ছা এ জীবনে পুরন হবে না।
,এ জীবনে না হলে পরের জীবনে তোমার অপেক্ষায় থাকবো। আমি চাই তুমি সম্পূর্ণ ভাবে আমার হও। তোমার মনে আমার জন্য সেই স্থায়ী জায়গা তৈরি হোক।
,যতসব ফালতু।
প্রেমা চলে যাচ্ছে। আদি পিছু নিয়ে গেল।প্রেমা ড্রাইভ করতে চাইলে আদি দেই নি।সেই এক্সিডেন্ট এ সময় প্রেমা গাড়ি চালিয়েছিল।ভয় কাজ করে তাই নিজে চালিয়ে গেল।
গাড়ি থামলো কাজি অফিসের সামনে। সেখানে তন্ময় ও আরুতা কে আসতে বলেছে। দুজনে কাজি অফিসে ডুকলো।আদি, তুমি ওদের এখানে কেন আসতে বললে।
প্রেমা,কাজ আছে।
তন্ময়,আরে দাদা ভাই তুমি এখানে।আপু তোমাকে ও নিয়ে এসেছে।
,আদি, জানি না তন্ময় তোর আপু র কাজ এখনে।
আরুতা,আপু এখানে কি কারো বিয়ে হবে।কনে বর কই।
,প্রেমা, আছে।আজ এখানে তোদের বিয়ে হবে।
তিন জনেই চমকে গেল। আদি, তুমি এসব কি বলছো। ওদের বিয়ে কিন্তু বাড়ির কাউকে না জানিয়ে।
, হুম ওদের গার্ডিয়ান আমি। তুই ।তাই এই বিয়ে হবে।
তন্ময় আরুতা। নে এখানে সাইন করে দে।
তন্ময়, আপু সবাই জানলে কি হবে।
, সেটা আমি বুঝবো তুই না। তুই শুধু সাইন কর।
তন্ময় সাইন করে দিলো। আরুতা ভয় পেয়ে আছে যদি সবাই কিছু বলে।
, টেনশন না নিয়ে বিয়ে টা করে ফেল।
আরুতা ও এক প্রকার ভয়ে ভয়ে সাইন করে দিলো।
এবার ওদের বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। চার জন গাড়িতে করে যাচ্ছে। তন্ময় জিজ্ঞেস করে,আপু তুই বিয়ে টা কাউকে না জানিয়ে কেন করেসিস। ওরা তো আমাদের সম্পর্ক মেনে নিত। তাহলে।
প্রেমা,হা হা হা ওরা কখনোই মেনে নিত না। আমাদের বাড়ির নিয়ম আছে।
চৌধুরী বাড়ির নিয়ম ছিল যা পূর্ব পুরুষ থেকে এখন অবধি পালন করে আসছে।নিয়মটি ছিল কোনো আত্মীয়তার মধ্যে সম্পর্ক হবে না।যদি হয় তাহলে সমাজ থেকে তাকে বিচ্যুত করতে হবে। যাদের সাথে রক্তের ও বংশের সম্পর্কের মধ্যে ভালোবাসা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।যে এই নিয়ম ভংগ করবে তাকে কঠিন শাস্তি পেতেই হবে। সমাজে চৌধুরী বংশের অনেক সুনাম আছে।যার জন্য সবাই নিয়ম অক্ষরে অক্ষরে পালন করে।এই নিয়ম টাই প্রেমা আজ ভেঙ্গে দিল।
কিছুক্ষণের মধ্যেই বিয়ের খবর চৌধুরী বাড়ির সবাই জেনে গেল।প্রতাপ চৌধুরী বয়স্ক মানুষ হওয়ার স্বত্তেও তিনি শহরের পারি জমালেন। তিনি ভাবতে ও পারেনি এমন এক দুর্ঘটনায় করে ফেলবে।তারই নাতি।কি হবে ভেবে পাচ্ছেন না। বাড়ির সবাই টেনশনে আছে।প্রেমার কার্য কলাপে।দিন দিন ও সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।ওর মতি গতি বোঝা সবার দায় হয়ে পড়েছে।কেউ বুঝতে পারছে কেন করছে ও।গ্রাম থেকে ফুফু ও তার মেয়ে রাও চলে আসলো। সবাই প্রেমা জন্য অপেক্ষা করছে।
আসরাফ চৌধুরী রেগে আছেন। তার মেয়ে দিন দিন বাড় বেড়েই যাচ্ছে।ওর প্রতেকটা কাজের সবার সামনে নিচু হতে হয়। এমন মেয়ে কেন জন্ম দিয়েছিল। তাহলে আজ এই দিন কাউকে দেখতে হতো না।
কয়েক ঘণ্টার মধ্যে প্রেমা বাড়ি আসলো।সদর দরজায় দাঁড়িয়ে আছে তন্ময় আদি আরুতা ও প্রেমা।
সবাই অবাক ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।
আসরাফ চৌধুরী,প্রেমা,,,,,
চলবে,