অন্যরকম_তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ #লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান) #পর্ব_১৩

0
450

#অন্যরকম_তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_১৩

“বিবিজান দরজা খুলো। যদি তুমি দরজা না খুলছো, তবে আজ আমার কাছ থেকে তোমার রেহাই নেই। আবারো বলছি দরজা খুলবে তুমি? নাহলে এখনি দরজা ভাঙব আমি।”

না, নাজীবার রুম থেকে কোনো প্রকার সাড়াশব্দ এলো না। দাঁতে দাঁত চেপে আফরাজ তৎক্ষণাৎ তার কুসুমা ভাবীকে কল দিয়ে নাজীবার রুমের বাহিরে আসতে বলে। আফরাজ ভাইয়ের কথায় ঢোক গিলে কুসুমা রুম থেকে বেরিয়ে গেল। আকবর যেতে চেয়েও গেল না। সে জানে তার বন্ধুর রাগ বেশিক্ষণ স্থায়ী হবে না। বউয়ের স্পর্শে ঠিকই গলে যাবে। এ ভেবে নিশ্চিন্তে তাবাসসুম কে নক দিয়ে টিকেট বুকিং এর কথা মনে করিয়ে দেয়।
নাজীবার রুমের থেকে কিছুটা দূরে আফরাজ কে রাগে পায়চারী করতে দেখে ভয়ে আঁতকে উঠল কুসুমা। তবুও নিজেকে ধাতস্থ করে এগিয়ে যায়। কুসুমা ভাবী-কে দেখে আফরাজ অন্যদিক মুখ ফিরিয়ে বলে,

“ভাবী নাজীবাকে দরজা খুলতে বলুন। আমি নেই এটাও জানাবেন।”

কুসুমা মাথা নেড়ে তীব্র শ্বাস ফেলে নাজীবার রুমের দরজায় মৃদু বা’রি দেয়। নাজীবা ভয়ে বিছানার উপর বসে আছে। সে ভাবতেও পারেনি তার দ্বারা এত বড় ভুল হয়ে যাবে। সে যাকে মন দিয়ে চেয়ে ছিল, সেই যে তার ক্ষতির কারণ হবে কে জানত? নাজীবার কানে কুসুমার দরজা নকের শব্দ পৌঁছাচ্ছে না। বরং সে বালিশে মুখ গুঁজে কান্না থামানোর চেষ্টা করছে। তবুও দরজা খুলল না। কুসুমা অসহায় দৃষ্টিতে আফরাজ এর দিকে তাকায়। সে নিজের রাগ সামলাতে না পেরে জোরেসরে দেওয়ালের মধ্যে আ’ঘা’ত করে চলে যায়। কুসুমা মৃদু গলায় দরজার কাছে ঘেঁষে বলে,

“ভাবী সুস্থ লাগলে আমাকে নক দিয়েন। আমি খাবারটা নিয়ে আসব। আপনি বিকাল থেকে না খেয়ে রুমে বসেন। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা যাবত রুমের ভেতর আপনি। দম বন্ধ হয়ে আসতে পারে। প্লিজ আমাকে নক দিয়েন।”

নাজীবা কান্নার কারণে নীরবে ঘুমিয়ে পড়েছে। তার মন-মস্তিষ্ক আজ যেন ক্ষয় হয়ে গিয়েছে। কোনো অনুভূতি কাজ করছে না তার মনে। কুসুমাও আর না ঘেঁটে আকবরের কাছে চলে যায়।

অফিসের সময়ের ঘটনা……
নাজীবার চোখ এম্বুলেন্স এর উপর পড়তেই সে পুরোপুরি নিজের কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলল। তার শরীরে নিয়মিত ড্রা’গে’র ফলশ্রুতিতে পুনরায় উম্মাদের মত হয়ে উঠল। আফরাজ এর গলায় দাঁত বসিয়ে দেয়। এ দৃশ্য দেখে অফিসের এমপ্লয়র্স অবাক হয়ে যায়। আফরাজ শক্ত করে নিজেকে ধরে রাখার চেষ্টা করছে। কিন্তু তার গলার ব্যথা বেড়ে যাচ্ছে। নাজীবার সূচালো দাঁত যেন আফরাজ এর গলায় গেঁথে যাচ্ছে। টপ টপ গলা বেয়ে র’ক্ত ঝরে পড়তে লাগে। এতেও হুঁশ নেই নাজীবার। সে তার মত জোরেসরে দাঁত দিয়ে চেপে ধরে রেখেছে আফরাজ এর গলা। যার দরুণ সে আকবরকে ইশারা করে। আকবর ইশারা বুঝতে পেরে তৎক্ষণাৎ এমপ্লয়র্স কে হলরুম থেকে বের করে যার যার কাজে যেতে বলে। তারাও ভাবল স্যার আর তার ওয়াইফ রোমাঞ্চকর সময় কাটাবে এ কারণে যাওয়ার আদেশ করেছে। অনেকে তো বলেই ফেলল, হ্যা স্যারও বউ পাগলা হয়ে গেছেন বুঝা যাচ্ছে। মেয়ে এমপ্লয়র্স নিজেদের মত ভাবাভাবি করে কাজে বসে পড়ে। অন্যথায়, আফরাজ এর কাছ থেকে নাজীবাকে সরানোর চেষ্টা করে কুসুমা। কিন্তু লাভ হলো না। অতঃপর আফরাজ পকেট থেকে একটি মেডিসিনাল ইন’জে’ক’শন বের করে বিবিজান কাঁধে বসিয়ে দেয়। এর প্রতিক্রিয়ায় আস্তে ধীরে হুঁশ ফিরতে লাগল নাজীবার। তার শরীরের রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক হতে লাগল। উম্মাদনা থেকে পুনরায় স্বাভাবিক জ্ঞানে ফেরল। সে খেয়াল করে আফরাজ তার দিকে ছলছল দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। এমন দৃষ্টির কারণ বুঝল না। সামনে তাকিয়ে দেখল কেউই নেই‌। কিন্তু জানালার বাহিরে তখনও এম্বুলেন্স দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রাগের চোটে বলে ফেলে।

“ছিঃ আপনি এত খারাপ? আমাকে এতটা অপছন্দ করেন যে ,আজকের সুন্দর মুহূর্তে আমার খুশির সময়-কে খু’ন করতে আপনার হৃদয়ে বিন্দু পরিমাণ কষ্ট লাগল না? এতটা ঘৃণা করেন যে, আমাকে পাগলাগরাদে পাঠানোর জন্য বাহিরে পাগলদের এম্বুলেন্স দাঁড় করিয়ে রেখেছেন। বাহ্! মিস্টার আফরাজ আপনাকে ভালোবেসে আমি পাগলামী করেই গিয়েছি। আর আপনি তার বিন্দু পরিমাণও কদর করলেন না। জানেন? বিয়ের দ্বিতীয় দিনে‌ আপনার রুমে হিসাবের খাতা পেয়ে ছিলাম। সেখানে সব কন্টাক্ট নাম্বার্স লেখা ছিল। বিশ্বাস করুন, যখন সেই লিস্টে পাগল হাসপাতালের কন্টাক্ট নাম্বার লেখা ছিল। এক-মুহুর্ত এর জন্যে মন চাচ্ছিল আপনাকে খু’ন করে পালিয়ে যায়। তবুও নিজেকে বুঝ দিয়ে ছিলাম, আপনার মনে ভালোবাসা জিনিসটা বসাতে পারলে আজীবন আপনার মাঝেই আবদ্ধ থাকব। এ যেনো দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করে নিয়ে ছিলাম মনের মাঝে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, না আপনি মন থেকে হৃদয়হীন। আপনি কখনো আমার আফাজ হতেই পারেন না।”

শেষের কথায় আর্তনাদে ফেটে পড়ে নাজীবা। উম্মাদনা কমলেও রাগের বশে আফরাজের দেওয়া পরণের শাড়িটা ছিঁড়তে লাগল। আকবর এতক্ষণ যাবত নাজীবা ভাবীর করুণ কথা শোনছিল। কিন্তু এখন যে কান্ড করছে। এতে সে লজ্জায় অন্যদিক ফিরে যায়। আফরাজ হাত মুঠোবদ্ধ করে নিজের কোট খুলে নাজীবার শাড়ির উপর পেঁচিয়ে দেয়। নাজীবা দেখে চিল্লিয়ে নিজেকে সরাতে নিলে ‘ঠাসস’ করে চ’ড় বসিয়ে দেয় তার গালে। নাজীবার মাথা ঘুরে উঠে। এতটা ধকল তার ছোট মস্তিষ্ক সইতে পারল না। শরীর অবশ হয়ে পড়তে নিলে আফরাজ সন্তপর্ণে পাঁজাকোলা করে নেয়। তার নিশ্চুপতায় আকবর অনেকটা অবাক। সে কেন নাজীবা ভাবীর কথার জবাব দিল না। কোনো ঘাপলা অবশ্যই আছে। আফরাজ উচ্চ আওয়াজে তার ড্রাইভারকে গাড়ি বের করতে বলে।
ড্রাইভার চটজলদি গাড়ির দরজা খুলে দেয়। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান) গাড়ির পেছনের সিটে নাজীবাকে বসিয়ে দিয়ে তার পাশে বসে পড়ে। কারো সাথে কোনোরুপ কথা না বলেই ড্রাইভারকে বাসার মধ্যে নিয়ে যাওয়ার আদেশ করে। ড্রাইভার মাথা নেড়ে তৎক্ষণাৎ গাড়ি চালু করে। আকবর ও কুসুমা গাড়ির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। আকবর মনে মনে কিছু একটা ভাবল। কুসুমাকে বলে,

“চলো বউ । বাসায় যায়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে নাজীবা ভাবীর সঙ্গে কথা বলিও ।”

কুসুমাও স্বামীর কথায় সায় দেয়। তারা অন্য আরেক গাড়িতে উঠে পড়ে।
বাসার মধ্যে নাজীবাকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে ওয়াশরুমে গেল আফরাজ। কিন্তু নাজীবার জ্ঞান ফেরতেই খেয়াল করে , সে তাদের স্বামী-স্ত্রীর রুমে আছে। বিরক্ত আর কষ্টে উঠে নিজের বরাদ্দকৃত রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয় নাজীবা। তার রুমে এটার্চ ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে। আফরাজ মাথা মুছতে থেকে আয়নার সামনে এসে দাঁড়িয়ে যায়। আয়নার পাশে স্ট্যান্ডে রাখা পরণের পোশাক পরে নেয়। গলার যে পাশে নাজীবা কামড়ে দিয়ে ছিল, সেপাশে মৃদু স্পর্শ করে হেসে দেয়। বিরবিরিয়ে বলে,’তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ_বিবিজান’। ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার থেকে ফাস্ট এইড বক্স বের করে ব্যথা উপশমের ক্রিম লাগিয়ে ব্যান্ডেজ নেয়। বক্সটি জায়গামতো রেখে বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখে নাজীবা নেই। ধপ করে মাথা গরম হয়ে যায় তার। বুঝতে পারল মেয়েটা তার কথা না শুনেই নিজের রুমে চলে গিয়েছে। দ্রুত পায়ে বিবিজান এর রুমের দিকে গেল।

নাজীবা তার পরণের ভারী শাড়িটা বেলকনিতে মেলে দিয়ে ঢিলাঢালা থ্রিপিচ পরে নেয়। মুখ মুছে বিছানায় গা হেলিয়ে দেয়। চোখ বুজতে নিলে আফরাজ এর রাগান্বিত গলা শুনে ভয় পেয়ে যায়। গলা শুকিয়ে গেল তার। তবুও সে দরজা খুলবে না। বিরবিরিয়ে বলে, ‘আপনি বেইমান জামাই আপনি বেইমান। আমাকে ঘৃণা করলে বলে দিতে পারতেন আমিই দূরে সরে যেতাম। এভাবে আয়োজন করে পাগলাগরাদে পাঠানোর জন্য এম্বুলেন্স তো ডাকার দরকার ছিল না।’
আফরাজ দরজায় বা’রি দেয়। নাজীবাও চুপ থাকল না। কড়া গলায় বলে,

“চলে যান আপনি প্লিজ! আপনার চেহারা অব্দি দেখতে মন চাইছে না। এত এত পাগলামীপনার এই দাম দিলেন? বাহ! ভালোই আমিও আজ থেকে আপনার ধারে কাছে ঘেঁষব না। প্লিজ! চলে যান। নাহয় আমি আমার ক্ষতি করে ফেলব।”

হাত থেমে যায় আফরাজ এর। মেয়েটা তার মনে এত ক্ষোভ জমিয়ে রেখেছে। বা’রি দেওয়া থামিয়ে নম্র গলায় শুধায়।

“দেখো বিবিজান, রাগ করলে তো হেরে গেলে। কি হয়েছে, কি দেখলে কিছুই জিজ্ঞেস করব না। শুধু বলছি দরজা খুলো তোমাকে আমাদের রুমে নিয়ে যাবো। জলদি দরজা খুলো।”

“আপনি কি যাবেন নাকি আমি নিজের…..!”

ধমকে উঠে আফরাজ। চিল্লিয়ে বলে,

“এই মেয়ে নিজের জীবনকে সস্তা পেয়েছিস? বারে বারে নিজের জীবন নেওয়ার হু’ম’কি দিচ্ছিস! আয় দরজা খুল এখনই। তোর জীবন আমি নিচ্ছি। আদর করে করে বাঁদর বানিয়েছে দেখে মাথার উপর ছড়ে বসেছিস। ইচ্ছে তো করছে তোর দুই গালে ঠাঁটিয়ে চ’ড় বসিয়ে দেয়, বে’য়া’দপ মেয়ে। তুই এখনই দরজা খুল। আজ তোর রেহাই নেই।”

রাগে গজগজিয়ে পুনরায় দরজায় আঘাত করে আফরাজ। এবার নাজীবা ফ্যাস ফ্যাস করে কাঁদতে লাগে। তার কান্নার শব্দ দরজার বাহিরে অব্দি যাচ্ছে। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)কান্নার শব্দ শুনে আফরাজ কপালে হাত চেপে ধরে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করে। পুনরায় বলেও নাজীবাকে রাজি করানো গেল না।

____

তাবাসসুম ক্লাবে বসে তার মা’কে লাগাতার ফোন দিয়ে যাচ্ছে। তবে কোনো সাড়া না পেয়ে রাগে ফোনটাই সুইচ অফ করে দিল। ওয়াইনের গ্লাস ধরে ড্রিংক করতে থেকে সেই সময়ের কথা ভাবতে থাকে। যখন আফরাজ এর ওয়াইফ তাকে সবার সামনে অপমান করে। সে দাঁতে দাঁত চেপে ফোন বের করে টিকেট বুকিং দেয়। কিন্তু কাপল’স টিকেটের সাথে তাবাসসুম নিজের জন্য সিঙ্গেল টিকেট বুকিং দেয়। ক্ষোভ-মিশ্রিত গলায় বিরবিরিয়ে বলে,

“তোকে আমি শান্তিতে সংসার করতে দেবো না। এবার যা আগুন লাগার লাগবে তোর হানিমুন ট্যুরে। যখন নিজের হাজবেন্ড কে আমার বুকের মধ্যে মুখ গুঁজে থাকতে দেখবি তখন তোর চোখ-মুখে যে কষ্টটা ভেসে উঠবে। সেই কষ্টের উল্লাস বানাব আমি। জাস্ট ওয়েট বেব।”

টিকেট বুকিং শেষে আকবর-কে ই-মেইল পাঠিয়ে দেয়। ওয়াইনের গ্লাসে পুনরায় চুমুক দেয়। হঠাৎ কাঁধে কারো স্পর্শ পেয়ে মুখ ঘুরিয়ে দেখে। দাহাব এহসান কে সামনে দেখে কামুক হাসি দিয়ে বলে,

“আরে আমার কি নেশা ধরেছে যে, আপনি আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন?”

দাহাব এহসান আপাতত কামনার মন-মেজাজে নেই। তাই তিনি নিবিড় গলায় তাবাসসুম এর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থেকে জিজ্ঞেস করেন।

“মা তুমি কি নাজীবার খবর পেয়েছো? তোমার মা যে বলেছিল খুঁজে দেখতে! জানতে পেরেছো কোনো কথা?”

চাচার কথায় কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই তাবাসসুম এর মধ্যে। বরং সে আয়েশে ড্রিংক করেই যাচ্ছে। দাহাব এহসান এর রাগ লাগছে মেয়েটার উপর। এতো ভাবলেশনহীন হয়ে বসে আছে কেমনে মেয়েটা বুঝতে পারছেন না তিনি! তাবাসসুম ওয়াইনের গ্লাসের শেষ অংশটুকু এক চুমুকে খেয়ে দেয়। নেশাগ্রস্ত দৃষ্টিতে চাচার দিকে তাকিয়ে বলে,

“নাজীবা রাইট? হুম আই থিংক আই ফাউন্ড হার। বাট নট সিউর দ্যাট! সি ইজ এ্যা রিয়াল নাজীবা অর নট? বিকজ সি ইজ মিসেস নাজীবা আফরাজ ফাহিম।”

কথাটি দাহাব এহসান এর কানে বজ্রপাতের ন্যায় লাগল। তিনি থমকে দাঁড়িয়ে রইলেন। ওয়েটার কে একগ্লাস ওয়াইন দিতে বলেন। তার কথামত ওয়াইন সার্ভ করা হলো। এক চুমুকে শেষ করে ফেললেন তিনি। গম্ভীর গলায় তাবাসসুম কে বলেন,

“মেয়ের ছবি দেখাতে পারবি? তাকে দেখতে চাই আমি। তার চেহারার আদল না দেখলে বুঝব না।”

তাবাসসুম ভ্রু কুঁচকে বলে,

“উফ চাচ্চু ক্লাবে দাঁড়িয়েও ঐ কোন না কোন নাজীবার ব্যাপারে জানতে চাইছো! কে এই নাজীবা হুম? মা’কে আস্ক করলেও বলে না। আপনিই না হয় বলে দিন।”

দাহাব এহসান তীক্ষ্ণ নজরে তাবাসসুম এর চোখের দিকে তাকিয়ে বলেন,

“তোর সৎ মামাতো বোন , আমার সৎ নাতনী।”

ছোট বাক্যের কথাটি শুনে চোখ বড় বড় হয়ে যায় তাবাসসুম এর। গলা দিয়ে কোনো বাক্য বের করতে নিলে হাসতে লাগে দাহাব এহসান। নিজের শার্ট টান টান করে অন্য আরেকটি ওয়াইনের গ্লাস নিয়ে চুমুক দেন। তাবাসসুম এর গ্লাসের সাথে ‘চিয়াস’ করে নিজের মত ড্রিংক করতে থেকে বলেন,

“আরে বাবা মজাও দেখি বুঝিস না।”

তাবাসসুমও হেসে ফেলল। সে ভেবেই নিয়ে ছিল তার চাচা সত্য বলছে। কিন্তু মজা বলায় সেও আর পাত্তা দিল না। এদিকে দাহাব এহসান ড্রিংক করার মাঝে আড়চোখে তাবাসসুম এর দিকে তাকিয়ে রইলেন। তিনি নিজের মনে এক বি’শ্রী ফন্দি আঁটেন। ড্রিংক করার মাঝে গলা ঝেড়ে তাকে জিজ্ঞেস করেন।

“তুই আজ হঠাৎ ক্লাবে কেন? তোর তো এ সময়ে অফিসে থাকার কথা।”

“আর বলিও না চাচ্চু ঐ আফরাজ এর বউয়ের কারণে আজ অফিসের স্টাফর্সের সামনে অপমানিত হতে হয়েছে। আফরাজও আমার পক্ষ নিল না। অথচ এক টাইমে এই ছেলেই আমি বলতে পাগল ছিলাম। এখন দু’চোখেও দেখতে চাই না। আমিও আমার শোধ উঠাবো চাচ্চু। আফরাজ-এর কাপল’স হানিমুন স্যুটের বুকিং এর জন্য দায়িত্ব আমাকে দিয়েছে। এরই সুবিধা উঠাবো আমি। আমিও তাদের সঙ্গে যাবো একা।”

শেষের কথায় বাঁকা হাসেন দাহাব এহসান। শয়তানি বুদ্ধি এঁটে তাবাসসুম এর হাত ধরে বলেন,

“শোন একা নয়। বরং তোর সিঙ্গেল বুকিং রিমুভ করে আমার সঙ্গে নাম মিলিয়ে কাপল বুকিং দেহ্।”

তাবাসসুম চকিত নজরে চাচার দিকে তাকায়। লোকটা কি পাগল হয়ে গেল কিনা বুঝল না! সে আমতা আমতা করে বলে,

“চাচ্চু এটা কেমনে সম্ভব কোথায় আপনি আর কোথায় আমি! দিজ হানিমুন অনলি ফর ম্যারিড কাপল’স।”

“তাতে কি? তোর আর আমার জন্য ফেইক পেপার্স রেডি করে জমা দেবো। দ্যাটস ইট। কারণ তুই সিঙ্গেল গেলে সেখানকার ম্যানেজার্স সন্দেহ করতে পারে। আমি গেলে বলবি বয়ফ্রেন্ড এর সাথে ঘুরতে এসেছিস।”

চাচার কথাগুলো তাবাসসুম খানিক সময় নিয়ে ভেবে দেখল। আসলেই একা গেলে সে তার প্ল্যানে সফল হতে পারবে না। অতএব, চাচার কথায় রাজি হয়ে যায়। চাচার সাথে হাত মিলিয়ে বলে,

“ঠিকাছে রাজি আমি। কিন্তু আপনিও বিনিময়ে আমার ব্যাংকে চল্লিশ হাজার টাকা পাঠিয়ে দিবেন।”

দাহাব এহসান হেসে মাথা নেড়ে আলতো হাতে জড়িয়ে ধরল তাবাসসুম কে। সে বুঝতেও পারেনি এই ব্যাপারটা যে, তার চাচা তাকে শুধু মাত্র গুটি হিসেবে ব্যবহার করবেন।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here