#স্বচ্ছ_প্রেমের_পদ্মপুকুর
#লেখা_চাঁদনী_ইসলাম
#পর্ব_৩৭
আসাদ নিরুকে নিয়ে রেস্তোরাঁর বাইরে এলো।আসাদের ফিরতে দেরি হওয়ায় রাকিব রেস্তোরাঁর ভিতরে এসেছিলো।বাহারি তখন রাকিবকে সব জানায়।তারপর থেকে রাকিব আর বাহারী বাইরে অপেক্ষা করছিলো।
আসাদ আজিজুল হককে ফোন করে সবটা জানায়,সাথে এইটাও বলে বিয়ে করবে।আজিজুল হক সায় দিলেন,সাথে খুব খুশিও হলেন।আসাদ, নিরু রেস্তোরাঁ থেকে বের হয়ে রাকিব, বাহারির বর আর বাহারিকে নিয়ে নিরুদের বাড়িতে যায়।আনাস মোল্লা আসাদকে আর নিরুকে একসাথে দেখে কেঁদে ফেলেন,বুকে জড়িয়ে নেন।আসাদ নিরুদের বাড়িতেই অল্প সময়ে কোন গোছগাছ ছাড়ায়, কাজী ডেকে বিয়ে করে নিতে চায়।
নিরু আসাদকে ডেকে বলে সব যতক্ষণ ঠিক আছে কাল মামা মামানি আসুক।তারপর পরশু না হয় বিয়ে করে নেবে।কিন্তু আসাদ নিরুকে আর কোন কথা বলতে দেয়না।রাতেই বিয়ের কার্য শেষ করবে তাই বলে।নিরু আসাদকে বুঝিয়ে একদিন অপেক্ষা করতে বলে।নিরু চায় তার আপনজন গুলো জীবনের এই সুন্দরতম দিনের সাক্ষী হয়ে থাকুক।আসাদ ও শেষ পর্যন্ত নিরুর কথা শুনলো।
তারপর আসাদ বলল, “শোন নিরু তোর কথায় শুনলাম।এই যে পরশু বিয়ে করবি,বিয়ের পর আমার ছুটি আর দুইদিন থাকবে।তাও একদিন আগেই বেরিয়ে যেতে হবে। গুণে গুণে আমাকে একটা দিন ও পুরোপুরি পাবি না।তখন যেন কানের কাছে ঘ্যানঘ্যান করবি না।বর পেলাম না বলে।”
“নিরু মুখ ভেংচি কেটে বলল, ” বলবো না,একবেলা না পেলেও বলবো না।”
“আমার উপরে তোর কোন মায়া দয়া নেই।কার জন্য যে আমি মরিয়া হয়ে মরি।”
নিরু আসাদের কাছে এগিয়ে এসে, আসাদের গলাটা জড়িয়ে ধরে ঘোর লাগা গলায় বলল, “আমরা সারাজীবন একসাথে থাকবো।কিন্তু এই সুন্দর দিনটা সবাইকে সাথে নিয়েই শুরু করতে চাই।আপনি আমার খুশি দেখতে চান না হু!”
আসাদ মাথা নত করে নিরুর কোমরটা জড়িয়ে ধরে নাকে নাক ঘেঁষে দিয়ে বলল, ” চাই তো,খুব চাই।সাথে তোকেও খুব কাছে চাই।”
আসাদ নিরুর চোখে চোখ রেখে ফিচেল হেসে নিরুর ঠোঁটের দিকে গাঢ় নজরে তাকায়। নিরু আসাদের দুষ্টুমি বুঝতে পেরে নিজেকে আসাদের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে,ঘর থেকে দৌড়ে পালিয়ে আসে।
আজিজুল হক আমিনাকে নিয়ে রাতেই সীতাকুণ্ডের উদ্দেশ্য রওনা দেয়।নিরুর চাচা চাচিরা,আয়েশারা সবাই সকালে বের হয়।পরের দিন বিকেলের মধ্যে সবাই সীতাকুণ্ডে পৌঁছে যায়।আমিনা বেগমরা সকাল সকাল চলে আসে।নিরুকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে কান্না করে, নিরুর কাছে ক্ষমা চায়।নিরু আমিনাকে জড়িয়ে বসে থাকে।আমিনাকে অভয় দেয় কিছু হয়নি,আগের কিছু না ভাবতে।নিরুর আগের কোনকিছু মনে নেই।আমিনাকে হাসতে বলে।অনেকক্ষণ জড়িয়ে ধরে বসে থাকে।আজিজুল আর আমিনা একটু বিশ্রাম নিয়ে নিরুকে নিয়ে মার্কেটে যায়,বিয়ের কেনাকাটা করে নিয়ে আসে।আসাদ আন্নাস মোল্লার সাথে থেকে বাড়ি সাজানো হবে কেমন করে বলে দেয়।
এই বাড়িটা নিরুর শান্তির নীড়, এই বাড়ির প্রতিটা ডিজাইন নিরুর মনের মতো করে করা।নিরুর ঘরের বিশাল বারান্দা থেকে চন্দ্রনাথ পাহাড়ের ভিউ দেখা যায়।দূরে তাকালে ঝর্ণার জলরাশি দেখা যায়,ঝিরিপথে চোখ যায়। ছয়মাস ঘুরে নিরু এই জায়গাটা অনুসন্ধান করেছে।সব ঘর গুলো থেকেই সুন্দর ভিউ দেখা যায়।নিরুর শান্তির নীড়।
রাজশাহী থাকাকালীন নিরুর দম বন্ধ হয়ে আসতো।মনে হতো এই বুঝি যখন তখন আসাদ মুখোমুখি এসে দাঁড়ালো।সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকতো।শান্তি করে ঘুমাতে পারতো না।চারপাশটা অসহ্য হয়ে উঠেছিলো।নিরিবিলি শান্তি পাওয়ার মতো একটা জায়গায় ছুটে যাওয়ার জন্য,মনটা অস্থির হয়ে থাকতো।কোথায় গেলে শান্তি মিলবে নিরু বুঝতো না।হঠাৎ একদিন সীতাকুণ্ডের কথা মাথায় এলো।সীতাকুণ্ডে আসাদের সাথে অসংখ্য স্মৃতি, আসাদের স্মৃতি নিয়ে পাহাড়ে ওই নিরিবিলি এলাকায় নিরু পুরো জীবনটা কাটিয়ে দেবে।মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে আনাস মোল্লাকে রাজি করিয়ে নিরু সীতাকুণ্ডে আসে।
তার আগে আনাস মোল্লাকে রেস্তোরাঁর পরিকল্পনাটা বলে।আনাস মোল্লা সব সময় নিরুর হাসি মুখটায় দেখতে চায়।তাই নিরুর সব সিদ্ধান্তে নিরুকে অনুপ্রেরণা দেয়।আনাস মোল্লার ও নিরিবিলি পছন্দ, তাই নিরুকে নিয়ে সীতাকুণ্ডে চলে আসে।আনাস মোল্লা চলে আসার ছয়মাস পরেই নিরুর চাচার খুলনাতে পোস্টিং হয়।চাকরির সুবাদে নিরুর চাচিদের নিয়ে খুলনায় বাসা ভাড়া নেই।আনাস মোল্লার বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে রাখে।
নিরুর বাবার জমানো টাকা গুলো দিয়ে নিরু রেস্তোরাঁর জায়গাটা কিনে নেই,নিজের মনের মতো করে রেস্তোরাঁয় বিল্ডিং করে।রুচিসম্মত সাজসজ্জায় সজ্জিত করে সাজিয়ে তোলে পুরো রেস্তোরাঁ।নিরু ছোট থেকে রান্নাবান্না পছন্দ করে,নিরুর রান্নার হাত ও বেশ ভালো।
নিরু রেস্তোরাঁ থেকে রাতে বাসায় গিয়ে,নিজের মন মতো নতুন নতুন রেসিপি রান্না করে।স্বাদটা কেমন হয় আনাস মোল্লা, বাহারি সহ প্রথম যে সাতজন ওয়েটার ছিলো তাদের দিয়ে টেস্ট করাতো।খাবার গুলো খেয়ে সবাই প্রশংসা করতো।এই মেনুটা তখন রেস্তোরাঁয় যুক্ত করে দিতো।এইভাবে নিজের বানানো নতুন নতুন রেসিপি দিয়ে স্বচ্ছতা আহার্য হয়ে উঠলো নামকরা রেস্তোরাঁ।নিরুর অনেক পরিশ্রমের ফল এই রেস্তোরাঁটা,এইভাবে দাঁড় করানো সহজ ছিলো না।নিরু দিন রাত এক করে দিতো,বাহারি, বাহারির বর নিরুকে সব সময় সাহায্য করে গেছে।
এক বছরের মাথায় বাড়ির জন্য জমি কিনে, নিরু এই দোতালা বাড়িটা বানায়।রাজপ্রাসাদের মতো ছোট সুন্দর একটা বাড়ি,নিরু বাড়ির নামটাও স্বচ্ছতা নীড় রেখেছে।
আসাদ বাড়িতে প্রথম ঢোকার সময় অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলো,নিরু দূরে থেকেও আসাদকে সব সময় নিজের মধ্যে ধারণ করে রেখেছে।
পুরো বাড়িটা মিউজিক লাইট আর গাদা ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে।সন্ধ্যায় হলুদ আর মেহেদী অনুষ্ঠান হবে।রাকিব, তানজিলা, রাকিবের আম্মু বিকেলেই চলে এসেছেন।রিংকির শরীর খারাপ বলে আসতে পারেনি,কিন্তু কাল ঠিকই আসবে।আসাদের কাছের বন্ধুদের দাওয়াত করা হয়েছে।নিরু রাহিমাকেও ফোন করে দাওয়াত করেছিলো।বিকেলের মধ্যে রাহিমাও চলে এসেছে।বাহারিরা তো সকাল থেকেই আছে।মোটামুটি বড় করেই অনুষ্ঠান করা হচ্ছে।একদিনেই সব ম্যানেজমেন্ট, আজিজুল হক কোনকিছুর কমতি রাখছেন না।আয়েশারা সবাই চলে এসেছে।তানজিলা,রাহিমা,বাহারি,সুমাইয়া,আয়েশা নিরুর সাথেই হলুদ শাড়ি পরে সেজেছে।আসাদ হৈ-হুল্লোড়ের মধ্যে থেকে আয়েশাকে ডেকে মাথায় একটা টোকা মেরে বললো, “আজ এখনো হলুদ সাজে ছবি আপলোড করিসনি কেন মাথামোটা। ”
আয়েশা আসাদকে একটা কিল মেরে বলল, “এতো তাড়া কিসের,সামনেই তো আছে দেখে নে।”
“তুই আমার জীবনটা তেজপাতা করে দিয়েছিলি।”
“আমার কী দোষ?তোর বউ-ই তো ‘হ্যাঁ!’ লিখতে বলেছিলো।”
“কিসের জন্য সেজেছিলো,আমাকে দেখানোর জন্য? ”
“আরে না!তোকে দেখানোর জন্য হলে তো তোর ইনবক্সে পাঠিয়ে দিয়ে বলতাম,দেখ বিয়ে দিয়ে দিয়েছি।তাও হলুদের না বিয়ের সাজ সাজিয়ে তোকে বোকা বানিয়ে ফেলতাম।এইসব তো মাথায়-ই ছিলো না।”
“তাহলে হলুদের সাজ সেজেছিলো কেন?”
“বাড়ির পাশের দাদুর বন্ধুর নাতনির বিয়ে ছিলো, আমাদের খুবই ক্লোজ। আমরা সবাই সেজেছিলাম।নিরুর মন ভালো করার জন্য আমি ধরে বেধে শাড়ি পড়িয়ে সাজিয়ে দিয়েছিলাম।তারপর ছবি উঠছিলাম,অনেক গুলো ছবির মধ্যে একটা ছবিই সুন্দর হয়েছিলো।চোখে ধরার মতো, তাই আপলোড করেছিলাম।কিন্তু দেখ যা কল্পনাও করিনি ঠিক সেইটাই হয়ে গেল।তোর মেসেজ দেখে নিরুকে হাসতে হাসতে বলছিলাম দেখ আসাদ কি লিখেছে।নিরু রাগ করে বলল, ‘বলে দাও হ্যাঁ হয়ে গেছে।’
নিরুর বলা কথাটুকু লিখলাম। তুই আর কিছুই বললি না।হ্যাবলার মতো বিশ্বাস করে নিলি?”
“তোকে এখন পাহাড়ের চূড়ায় তুলে ফেলে দিতে মন চাচ্ছে।”
“মোটা হয়ে গেছি তুলতে পারবি না ভাই।শোন, আমি ভাবছিলাম বাহ কি প্রেম!প্রেমিকা দূর থেকে যা বলল,প্রেমিক বিশ্বাস করে নিলো।”
কথাটা বলে আয়েশা আসাদকে চোখ টিপ মারলো,আসাদ আয়েশার মাথায় একটা টোকা মেরে বলল, “আমাদের প্রেম ভীষণ গভীর রে।তোদের মতো আধাভাঙ্গা না।”
“রাগাবি না।”
“তুই আমার শালি হলে ভালো হতো,শালিরা ভালো হয়।দুলাভাইয়ের কষ্ট সহ্য করতে পারে না। যেমন সুমাইয়া একদিন আমাকে অনেক কিছু বলেছিলো।আর তুই এতো ক্লোজ হয়েও, সব জেনেও আমাকে কিছু জানালি না।”
“আপনার বউয়ের নিষেধ ছিলো।বলতাম কীভাবে?”
“বউকেও দেখছি দাঁড়া,মানুষজন কমতে দে।”
“আয়েশা হেসে নিরুর কাছে গিয়ে বসলো।নিরুর গালে হলুদ ছুয়ে দিয়ে আস্তে আস্তে নিরুকে ঘটনাটা বলে হাসলো।
পরের দিন রান্নাবান্না শুরু হলো,বরযাত্রী আসার তাড়া নেই।তাই ধীর গতিতেই সব কিছু শেষ করলো।নিরুকে লাল টুকটুকে বেনারসি পড়ানো হয়েছে।রাহিমার পার্লার আছে,তাই বাইরের কোন পার্লারে কথা বলেনি।রাহিমায় নিরুকে সাজিয়ে দিয়েছে।নিরুকে একদম পুতুলের মতো লাগছে।আসাদ ঘুরে ফিরে বার বার নিরুকে এক নজর করে দেখে যাচ্ছিলো।এইটা নিয়ে সবাই হাসাহাসি করলো।
আসাদ সাদা সিম্পল একটা পাঞ্জাবি পড়েছে।আজিজুল হক শেরওয়ানি নিয়ে এনেছেন,আসাদ পড়লো না।বিয়ে করার সাথে সাথে আসাদের অন্যান্য দায়িত্ব ও আছে।আনাস মোল্লা আজিজুল হক কেউই ছুটে বেরিয়ে সবদিক দেখতে পারছেন না। নিরুর চাচার সাথে আসাদকেও কম বেশি খেয়াল রাখতে হচ্ছে।রাকিব যথেষ্ট সাহায্য করছে।আসাদকে পাঞ্জাবি পড়েও নিরুর সাথে দারুণ মানাচ্ছে।
আছরের নামাজ পর কাজী এলো।আসাদের কি তাড়াহুড়ো,আসাদের কান্ড দেখে নিরু না পারে হেসে গড়িয়ে পরে, কাজীর কথা শেষ না হতেই আসাদের কবুল,কবুল,কবুল বলা শেষ। রাকিব আসাদকে বলল, “তোর বউ কেউ ডাকাতি করে নিয়ে যাচ্ছে না।থেমে থেমে কবুল বল মামা।”
রাকিবের কথা শুনে বাড়ির সবাই হেসে ফেললো।হাসি মজার মধ্যেই বিয়ের কার্য শেষ হলো।
সন্ধ্যার মধ্যে সীতাকুণ্ডের আত্নীয়রা চলে গেল।রাকিবরা মিলে বাসর ঘর সাজালো।বাসর ঘর সাজিয়ে আসাদের কাছে গুণে গুণে দশ হাজার টাকা নিলো।
আসাদ ড্রয়িংরুমের বাথরুম থেকে শাওয়ার নিয়ে এলো।নিরু মেকআপ তুলে বাথরুমে ঢুকে শাওয়ার নিলো।শাওয়ার নিয়ে এসে চুল গুলো মুছে নিলো।নিরু লাল টুকটুকে জামদানী শাড়ি পড়েছে।আসাদ বিছানার মাঝখানে রাখা ফুল গুলো তুলে একপাশে রাখলো।
পুরো ঘরময় রজনীগন্ধা, কামিনী আর গোলাপের মিষ্টি গন্ধ।নিরু বিছানার একপাশে বসলো,পুরো ঘরে নিরবতা।আসাদ নিরুকে টেনে নিজের বুকে নিয়ে এলো।তারপর বলল, “এখনো দূরে দূরে থাকবি নাকি?ছুটে এসে বুকে লাফিয়ে পড়ে বুকটাতে শান্তি দিতেও তো পারিস।সব সময় শুধু যন্ত্রণা দিতেই পারিস,এই একটাতেই ওস্তাদ।”
নিরু মুখটা কাচুমাচু করে বলল, “হ্যাঁ আমিই তো সব পারি।আপনি কিছুই পারেন না।”
আসাদ নিরুর ঠোঁটে আঙ্গুল স্পর্শ করে বলল, “চুপ,আজ কথা নয় ভালবাসা হবে।”
আসাদ নিরুর কপালে ঠোঁট ছুয়ে গাঢ় করে একটা চুমু খেলো।নিরু আসাদের বুকে মুখ গুজে মুখ লুকালো।আসাদ দুই হাতে নিরুকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে নিলো।
“নিরু এই নিরু!”
“হু বলেন।”
“আমাকে ছাড়া কষ্ট হতো না তোর?”
নিরু মুখ গুজেই বলল, “খুব!”
আসাদ নিরুর চুলে বিলি দিয়ে বলল, “তখন তুই রাগ করে দুষ্টুমি না করলে, আরও আগেই আমরা এক হতে পারতাম।এতো কষ্ট পেতে হতো না দুজনকে।”
নিরু আসাদের বুক থেকে মুখ তুলে বলল, “আচ্ছা আপনি মাহিয়া আপুকে বিয়ে করলেন না কেন?”
“মাহিয়াকে বিয়ে করলে তুই এখন এই বুকে থাকতে পারতি?”
“এই বুক আমার,আমি যখন মন তখন থাকতে পারতাম।”
আসাদ ঠোঁট কামড়ে হেসে বলল, “মোটেও না,মাহিয়া তোকে আমার আশপাশেই ভিড়তে দিতো না।”
নিরু আসাদের বুক থেকে উঠে রাগ নিয়ে বলল, “হ্যাঁ আপনার ও তো ইচ্ছে অন্যজনকে বুকে নেওয়ার,তো যান তাদেরই নেন গা।”
আসাদ অবাক হওয়ার ভান ধরে বলল, “আমি কখন বললাম অন্যদের বুকে নেওয়ার ইচ্ছা?”
“ইচ্ছে না থাকলে তো এইভাবে বলতেন না।আমি তো কিছু হলেও বুঝি তাই না। ”
“আচ্ছা হয়েছে এখন বুকে আয়।কাল ঝগড়া করিস।পরশু থেকে পাবি না।”
“আমার দরকার নেই আপনার বুক।”
“তোর মাথাটা আমার বুকে দরকার আছে।”
“মাথা কেটে নেন।”
“আয় না কষ্ট হচ্ছে তো।”
নিরু এবার আসাদের বুকের দিকে তাকিয়ে রইল।তারপর আসাদকে বলল, “এই আপনি উঠে বসুন তো।”
আসাদ কিছু না বলে উঠে বসলো।নিরু ক্ষেপে গিয়ে বলল, “এই আপনার সেই চওড়া বুক কোথায়?”
“বুকে যেই সুনামি বয়ে দিয়েছিলি।আমার বুক কি আর বুক আছে?”
“আমি এতো কিছু জানিনা।আমার এত পছন্দের সেই চওড়া বুক, কাঁধ, আর কিছু নেই।নিজের এই হাল কিসের জন্য করেছেন?”
“আমি কি ইচ্ছে করে করেছি নাকি।আবার ঠিক হয়ে যাবে।”
আসাদ দু’হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “এখন তো বুকে আয়!”
“যাবো না,এই একটুখানি বুকে আমার জায়গা হবে না। আমার সেই বড় চওড়া বুকটাই লাগবে।”
“এইবার ছুটিতে এলে পেয়ে যাবি।এখন এই চিপকানোটাতেই আয় না।রাত শেষ হয়ে গেল।”
“আমি যাবো না বলেছি তো যাবো না।”
“তুই যদি এখন এমন করিস,আমার নাতি নাতনিদের বাসর ঘরের কোন রোমান্টিক গল্প কি আমি শোনাতে পারবো বল?”
“নিরু চোখ গরম করে আসাদের দিকে তাকালো।আসাদ নিরুকে হ্যাচকা টেনে বুকে নিয়ে এলো।
“এতো অভিমান কেন?এই বুকে কাউকেই আমি জায়গা দেবো না। এই বুকটা শুধু আমার নিরুর,আর কারো না।”
নিরু আসাদের বুকে শান্ত হয়ে পড়ে রইলো।তারপর বললো, “আমি আপনাকে খুব খুব খুব ভালবাসি।এতো ছাড়া ছাড়া করে ধরছেন কেন?শক্ত করে জড়িয়ে ধরুন।”
আসাদ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো,’একেই বলে মে*য়ে মানুষ।কোন কথায় ছিলো,আর এখন কোন কথায় এলো।এতক্ষণ কাছেই আসছিলো না।আর এখন শক্ত করে কেন ধরছিনা এইটাও শুনতে হচ্ছে।’
চলবে…