স্বচ্ছ_প্রেমের_পদ্মপুকুর #লেখা_চাঁদনী_ইসলাম #পর্ব_৩৯

0
488

#স্বচ্ছ_প্রেমের_পদ্মপুকুর
#লেখা_চাঁদনী_ইসলাম
#পর্ব_৩৯

রাত নয়’টা বেজে পঞ্চান্ন মিনিট, আজিজুল হক আমিনাকে নিয়ে সন্ধ্যার পর খুব কাছের একজন বন্ধু অসুস্থ থাকায় বন্ধুকে দেখতে গেছেন।আনাস মোল্লা রেস্তোরাঁয় গেছেন।আসাদ ঘুম থেকে ওঠার কিছুক্ষণ পর-ই রাকিবের সাথে বের হয়েছে।দশটা বাজতে এলো নিরু বাসায় একা,নিরু জানে আজিজুল হকদের আজ ফেরা হবে না।নিরু আসাদকে ফোন দিয়েছে।আসাদ বলেছে আধা ঘন্টার মধ্যে আসছে,বাড়ির কাছাকাছি চলে এসেছে।এখনো আসার খোঁজ নেই।নিরু রাতের খাবারের জন্য হালকা কিছু রান্না করে নিয়েছে।আসাদ সাড়ে দশটায় বাড়িতে এলো।নিরু দরজা খুলে দাঁড়িয়ে বলল, “এই আপনার আধা ঘন্টা?”

“পুরোনো বন্ধুদের সাথে দেখা হয়ে গেছিলো,তাই আসতে দেরি গো।”

“এই কয়দিন থেকে একভাবেই দেখা হচ্ছে।”

“এরা আমার ক্লাসমেট না।”

“ওহ আচ্ছা! হাত মুখ ধুয়ে নেন।”

নিরু রান্না ঘরের দিকে চলে যাচ্ছিলো।আসাদ নিরুকে দাঁড়াতে বলে নিরুকে নিয়ে ড্রয়িংরুমের সোফাতে বসালো।নিরুকে বসিয়ে দিয়ে আসাদ নিরুর সামনে ফ্লোরে বসলো।নিরু আসাদের দিকে তাকিয়ে বলল,

“এই আপনি ফ্লোরে বসলেন কেন?”

আসাদ পকেট রেখে একটা বক্স বের করে নিরুর সামনে এগিয়ে দিলো।

“খুলে দেখ।”

নিরু আসাদের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।আসাদ চোখের ইশারা দিয়ে দেখতে বললো।নিরু আসাদের হাত থেকেই বক্সটা খুলে দেখে হড়বড় করে বলল, “এই আংটি আপনি পকেটে নিয়ে ঘুরছেন কেন?আপনার দেওয়া এই আংটিটা বিয়ের দিন খুলে রেখেছিলাম।মামা যেই আংটিটা দিয়েছিলো সেইটা পড়েছিলাম।”

“আমার দেওয়া আগের আংটিটা ওয়ারড্রবের উপরেই আছে নিরু।”

“একই আংটি আবার নিয়ে এলেন যে,আগেরটা তো একদম ঠিক আছে।”

“তুই হাতে নিয়ে ভালো করে দেখবি তো।”

নিরু আসাদের হাত থেকে আংটিটা নিয়ে দেখলো।আংটিটা দেখে বিস্মিত হয়ে আসাদের দিকে মুখ তুলে তাকালো, “আপনি ডায়মন্ড…!”

নিরু আর কথা বলতে পারছে না। আড়ষ্টতা আকড়ে ধরেছে।আসাদ নিরুর চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, “নিরু তোকে প্রপোজ করার দিন বলেছিলাম না,এই ডিজাইনের আংটি বানিয়ে দেবো। এইটা তোর জন্য। ”

নিরু কি বলবে বুঝতে পারছে না। আসাদের দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল, “এতো গুলো টাকা খরচ করলেন কেন?”

“কোথায় টাকা খরচ করলাম? বউকে কিছু দিলে টাকা খরচ হয় না।তোকে আমার সর্বস্ব দিয়ে দিলেও কম হবে নিরু, তোকে কোথায় রাখি বল তো?এতো কাছে থেকেও মন ভরছে না।ইচ্ছে করছে এই বুকটার মধ্যিখানে আটকে নিই।”

“আপনি এতো পাগল কেন?”

“এই পৃথিবীতে এতো মানুষ থাকতে তোর মায়ায় আটকে পড়েছি।পাগল না হয়ে যাবো কই বল?”

নিরু দু’হাতে আসাদের মুখটা ধরে হেসে উঠে, কপালে গালে ঠোঁট ছোয়ালো।আসাদ নিরুর হাতটা নিয়ে আংটি পড়িয়ে দিয়ে হাতে অসংখ্য চুমু খেলো।নিরু হালকা নিচু হয়ে আসাদের গলা জড়িয়ে ধরলো।তারপর আসাদের দিকে তাকিয়ে বলল, “এখান থেকে উঠুন না,গলা ধরে একটু ঝুলি।”

“বানরের মতো গলা ধরে ঝুলে থেকে কি যে পাস।”

নিরু মুখটা কাচুমাচু করে বলল,”কাল তো চলেই যাবেন।”

“মিস করবি?”

নিরু মনটা খারাপ করে বলল, “ভীষণ!”

সামনে সপ্তাহ পর্যন্ত চলে আসবো।আমার বাৎসরিক ছুটি কাটানো নেই।ইউনিটে গেলেই ছুটি পেয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ! এখান থেকেও ছুটি বাড়িয়ে নিতে পারতাম।কিন্তু কিছু কাজ আছে যেতে হবে।”

নিরু আসাদের গলা জড়িয়ে থেকেই বলল, “সীতাকুণ্ডে পোস্টিং হলে ভালো হতো।”

“অল্পকিছু দিনের মধ্যে চেষ্টা করবো।নিরু খাদিজা ফুপি আমাদের বিয়েতে এলো না কেন? ফুপি কী অনেক অসুস্থ?”

“অসুস্থ না,আমার বিয়েতে আসবে না। তাই অসুস্থ বলেছে।”

“আসবে না কেন? এতদিন তোর উপর খুব মায়া দেখিয়ে আম্মুকে নাকি কোন খোঁজ দিতো না।”

“অনেক কিছু ঘটে গিয়েছে।”

আসাদের উৎসুক চাহনি,”কী হয়েছিলো বল?”

“ফুফুরা যখন জানতে পারলো আপনার সাথে আমার সম্পর্কের কথা,তখন আমাদের বাড়িতে এসে কথা শুনাতো।দাদুকে বোঝাতো বাইরে কোথাও বিয়ে না দিতে,রোহান ভাইয়ের সঙ্গেই যেন বিয়ে দেয়।আমরা সীতাকুণ্ডে আসার আগে আগে দাদু ফুপির কথায় নরম হয়েছিলেন।অনেকটা মত দিচ্ছিলেন।তারপর ফুপি একদিন দাদুকে এসে বললেন, আব্বুর জমানো টাকা গুলো যেন ফুপিদের আমি দিই।টাকা গুলো নিয়ে রোহানকে একটা ব্যবসায় বসিয়ে দিবে, তারপর আমার সাথে বিয়ে দিবে।এইটা শুনে দাদু ক্ষেপে যান।সেই থেকে দাদু ফুপির সাথে ভালো করে কথা বলেন না।
তারপর দাদুকে রেস্তোরাঁর পরিকল্পনা আর আমার স্বপ্নের কথা বলি।দাদু আমার পরিকল্পনাটা দারুণ ভাবে উপভোগ করেছিলেন,আর সায় দিয়েছিলেন।সেই থেকে শুরু হয়েছিলো দাদু নাতনির পথ চলা।

এইসবের জন্য ফুপি আমাদের উপর রেগে থাকে,আর কিছুটা আশা রেখেও মামানিকে খোঁজ দিতেন না।মাসখানেক আগে এসেও দাদুকে বোঝাচ্ছিলেন,দাদু দাদুর সিদ্ধান্তে দাঁড়িয়ে ছিলেন।আর আমার জীবনের সিদ্ধান্তটা আমার উপরেই দিয়ে দিলেন।নিজের কোন সিদ্ধান্ত আমার উপরে চাপিয়ে দেননি।”

“কত সমস্যা মোকাবিলা করেছিস,আর আমি তোর জন্য কিছু করতে পারিনি নিরু।”

“কে বলেছে কিছু করেননি,আপনার দেওয়া ভালবাসা আর অনুপ্রেরণা গুলোই তো আমার শক্তি ছিলো।আপনি তো কখনো আমাকে দূরে সরিয়ে দেননি।সবটা আমিই করেছি।আর কখনো একটা সেকেন্ডের জন্যও দূরে যেতে দেবো না।”

আসাদ মজার ছলে বলল, “আমি ছিলাম না তারপরও সৌন্দর্য ধরে রাখলি কীভাবে হু?”

নিরু নড়েচড়ে বসে বলল, “সাফল্য চূড়ায় এসে পৌছালে দুঃখ ছুতে পারে না, এইটা বিশ্বাস করেন? কষ্ট আর সাফল্য দুটোই সমানভাবে আমার সঙ্গে ছিলো।কিছু মানুষের আগলে রাখার হাত দারুণ ভাবে আমাকে মুগ্ধ করতো।পরিশ্রমের সাথে সাফল্য এতো বেশি আসছিলো দুঃখ দেওয়ার মানুষ গুলো কমছিলো,আর সাফল্য বাড়ছিলো।দাদুকে ভালো রাখতে গিয়ে নিজের ভালো থাকাটাও দায়িত্বের মধ্যে চলে এসেছিলো।”

আসাদ চিবুকে হাত রেখে গভীর ভাবনায় থেকে বলল, “তাহলে কী সাফল্য সৌন্দর্য বাড়ায়?”

“হ্যাঁ অবশ্যই বাড়ায়।”

“তোর এই হাসি মুখটা দেখলে পুরো শরীরে শীতল স্রোত বয়ে যায়।এতো মিষ্টি কেন এই হাসিটা?”

“আপনি সুন্দর করে দেখেন বলে,এবার চলুন খেতে হবে।”

আসাদ উঠে নিরুকে কোলে নিয়ে রান্না ঘরের দিকে হাঁটা ধরলো।রান্না ঘরে ঢুকে যাওয়ার পর নিরু বলল, এবার নামিয়ে দেন খাবার গুলো নিয়ে যায়।”

আসাদ নিরুকে নামিয়ে দিয়ে নিরুর সাথে সাথে খাবার গুলো টেবিলে এনে রাখলো।দুজনে খাওয়া শেষ করে চা নিয়ে বারান্দায় বসলো।দমকা হাওয়া বইছে,নিরু উঠে আলমারি থেকে একটা শাল বের করে নিয়ে এলো।আসাদ বারান্দায় ফ্লোরেই বসে ছিলো।এক পা মেলিয়ে দিয়ে নিরুকে নিজের সামনে নিয়ে গায়ের উপরে শাল জড়িয়ে নিলো।নিরু আসাদের বুকে শরীর এলিয়ে আসাদের হাতটা শক্ত করে ধরে ধরলো।চা খেতে খেতে আসাদ বলল, “নিরু একটা গান শোনা।”

“কোন গানটা শুনবেন?”

“অসময়য়ি এ বৃষ্টি আমি,এই গানটা শুনবো।কতদিন তোর কন্ঠে এই গানটা শুনিনা।”

নিরু চায়ের কাপটা রেখে, আসাদের দু’হাত শক্ত করে ধরে,আসাদের বুকের সাথে মিশে গিয়ে, চোখ বন্ধ করে গান ধরলো।

অসময়ি এ বৃষ্টিতে আমি
অসময়ি এ বৃষ্টিতে তুমি
কিছু না বলা কথা দিলাম ভাসিয়ে
ধুয়ে যাক না এ মন অভিমানী
মেঘলা আকাশ, হালকা হাওয়া
যাই ভিজে আর নিজেকে ফিরে পাওয়া
আধখোলা কাঁচ, বৃষ্টি ছোঁয়াচ
তোমার নামে মেঘের খামে চিঠি দিলাম আজ
আধভেজা প্রহর, আধভেজা শহর
আধভেজা তুমিও, আর আধভেজা আমার সফর
আধভেজা প্রহর, আধভেজা শহর
আধভেজা তুমিও, আর আধভেজা আমার সফর
হালকা পায়ে রঙ ধোয়ানোর আবদার
মেঘ বলেছে বৃষ্টি আনবে বারবার
রাস্তা বেয়ে এক ছাতায় প্রেমের ঢল
রঙিন সাজুক আমার শহর অনর্গল
মেঘেরা clip খুলেছে, মন জুড়োয় খুশিতে
হালকা হাওয়ার symphony-তে কাটছে আজ অবসর
আধভেজা প্রহর, আধভেজা শহর
আধভেজা তুমিও, আর আধভেজা আমার সফর
আধভেজা প্রহর, আধভেজা শহর
আধভেজা তুমিও, আর আধভেজা আমার সফর
এর ফাঁকেই নাম না জানা ইচ্ছে
ফের তোমাকে মন পাঠিয়ে দিচ্ছে
বৃষ্টি শেষে তাও যে থাকে অল্প
আবছা আলো আর না বলা গল্প
তোমাকে মেঘ সাজিয়ে দিচ্ছি, আর নিজেকে
ঠিক সেভাবে বৃষ্টি ভেবে নিচ্ছি তারপর
আধভেজা প্রহর, আধভেজা শহর
আধভেজা তুমিও, আর আধভেজা আমার সফর
আধভেজা প্রহর, আধভেজা শহর
আধভেজা তুমিও, আর আধভেজা আমার সফর

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here