স্বচ্ছ_প্রেমের_পদ্মপুকুর #লেখা_চাঁদনী_ইসলাম #পর্ব_৪০

0
501

#স্বচ্ছ_প্রেমের_পদ্মপুকুর
#লেখা_চাঁদনী_ইসলাম
#পর্ব_৪০

আসাদ গত কাল ভোরে বগুড়ায় চলে গেছে।আজিজুল হক ও ঢাকায় চলে গেছেন।আসাদ না আসা পর্যন্ত আমিনা বেগম নিরুর সাথে সপ্তাহখানেক থাকবেন।নিরু আমিনা বেগমের সাথে সুন্দর সময় কাটাচ্ছে।আমিনা বেগমকে নিরু রেস্তোরাঁয় দুইদিন নিয়ে গেছে,চারপাশ ঘুরিয়ে দেখিয়েছে।আমিনা বেগম এখন নিরুর কাছে সেই আগের আমিনা হয়ে উঠেছে।মাঝখানের ঘটনাটুকু এখন ম্লান হয়ে গেছে।এখন সবাই হাসি খুশি ভাবেই সময় পার করছে।

এর মধ্যে একদিন হঠাৎ করে খাদিজা সীতাকুণ্ডে আসে।তখন নিরু বাড়িতেই ছিলো। আমিনা বেগম দুপুরে ভাত ঘুম দিয়েছেন।নিরু রেস্তোরাঁয় যাবে বলে গোছাচ্ছিলো।তখনই খাদিজা আসে,নিরু দরজা খুলে খাদিজাকে ভিতরে নিয়ে এসে বসিয়ে পানি দেয়।একটু বসে হাত মুখ ধুয়ে নিতে বলে।

“ফুপি আমি খাবার দিচ্ছি,তুমি হাত মুখ ধুয়ে নাও।”

“নিরু তুই আমার কাছে বস।”

নিরু খাদিজার পাশে গিয়ে বসলো।খাদিজা নিরুর গায়ে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন, “তোকে খুব বুদ্ধিমতী ভাবতাম নিরু,এমন একটা কাজ কীভাবে করলি তুই।”

নিরু অবাক হয়,কি এমন করেছে বুঝতে পারে না।নিরু খাদিজার দিকে তাকিয়ে বলল, “আমি কি করলাম ফুপি।”

“যেই আজিজুল ভাই,আমিনা ভাবি তোকে এতো কষ্ট দিলো।সেই তাদের ছেলেকে বিয়ে করে নিলি?”

নিরু এই কথার পিঠে কি বলবে বুঝতে পারলো না,চুপচাপ বসে রইল।খাদিজা আবার বলল,

“আমি চেয়েছিলাম তোকে বুকে আগলে রাখতে,তোর মধ্যেই আমার ভাইকে খুঁজে পাই।আমি আশা রেখেছিলাম তুই আমাকে বুঝে, আমার ঘরে যাবি।কিন্তু আমার সব আশা ভেঙে দিলি।”

“ফুপি তুমি আগে কিছু খেয়ে নাও,তারপর কথা বলছি।”

“তুই আমার কথা এড়িয়ে যাচ্ছিস, ফুপির কথা একবারও ভাবলি না?”

“ফুপি কিছু তো তোমার অজানা নয়,সবটাই তো জানো।”

“রোহানের কি অবস্থা হয়েছে তা তো জানিস না,ছেলেটা আমার শেষ হয়ে গেল।”

“তুমি কি এইসব নিয়ে কথা বলার জন্য এসেছো ফুপি?”

“আমার কথা তোর ভালো লাগছে না।আমিনা ভাবি যা করেছে, তোর আর কিছু মনে নেই নিরু?”

“না ফুপি আমার আর কিছু মনে নেই।মারা কখনো ভুল করতে পারে না।সন্তানের জন্য কিছু ভাবা ভুল নয়,মামানিও ভুল করেননি।আমাদের কাছে ভুল হতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা এমনই,সবাই ভালো কিছুই চায়,ভালো অবস্থান চায়।মামানিও চেয়েছিলেন।”

“আমিনা ভাবির আচরণ গুলো ভুলে গেলি এতো সহজে?”

“আমি সবার ভালোটা মনের রাখার চেষ্টা করি,খারাপ আচরণ মনে রাখতে পারিনা ফুপি।”

“মনে রাখার হলে দুইটাই মনে রাখবি।”

“দুইটাই যদি মনে রাখতে পারতাম,তাহলে তোমার সাথেও এতো স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতে পারতাম না ফুপি।”

“আমি কি তোর সাথে আমিনা ভাবির মতো আচরণ করেছি?”

“তা করোনি,আবার কমও করোনি।তুমি আমাকে নয়,তোমার ছেলের ক্যারিয়ার দাড় করানোর জন্য আমাকে রাখতে চেয়েছিলে। কিছু আমার অজানা নয় ফুপি,তাই পুরোনো কথা বাদ দাও।দাদু রেস্তোরাঁয় আছে কিছুক্ষণের মধ্যে চলে আসবে।আমি রেস্তোরাঁয় যাবো,তুমি গোসল করে নাও না হয়।আমি টেবিলে খাবার দিয়ে যাচ্ছি।এসে অনেক গল্প করবো।”

এখন যত কথা বাড়াবে,তত কথা বাড়বে।নিরুর রেস্তোরাঁয় না গেলেও হতো,কিন্তু খাদিজা বেগম কানের কাছে এইটা সেইটা বলতেই থাকবেন।নিরু চায় না,এইসব আলোচনা আমিনা বেগমের
কানে যাক।মানুষটা এমনিতেই এখনো অনুশোচনায় ভুগছেন।নিজের নেওয়া সিদ্ধান্তে নিজেই অনুতপ্ত।

নিরু রেস্তোরাঁয় পৌছানোর কিছু সময় পর-ই আসাদ কল দেয়।

“নিরু কোথায় আছিস?”

“এইতো রেস্তোরাঁয় আসলাম।আপনি কী করছেন?”

“অফিস থেকে রুমে আসলাম,মিস করছি!”

“কী মিস করছেন?”

“আমার বউকে মিস করছি খুব।”

নিরু ক্ষীণ স্বরে বলল, “আপনার বউটাও আপনাকে ভীষণ মিস করছে।”

“খুব তাড়াতাড়ি আসছি নিরু,প্রায় দু’মাসের ছুটি নিয়ে আসবো।অনেক ঘুরবো,কোথায় বেড়াতে যাওয়া যায় বল তো?”

“বাড়ি আসেন,এক সাথে পরিকল্পনা করবো।”

“তোর তো আমার চেয়ে পাহাড় প্রিয়,পাহাড়েই নিয়ে যাবো।”

“অনেক খুশি হবো।”

“দু’চোখ ভরে,খুশি হওয়া মুখটায় দেখবো।”

“তাড়াতাড়ি আসুন তাহলে!”

“খুব তো বলছিলি একদম মিস করবি না।এখন তো দেখছি আমার চেয়ে বেশি মিস করছিস।”

“পচাবেন না,মিস করলে আমি কি করবো।এতো মায়া দিয়ে যান কেন?”

“যেন প্রতিটা মুহূর্ত তোর মস্তিষ্কে চরকির মতো ঘুরতে পারি।”

“খুব খারাপ আপনি!”

“অসভ্য বলবি না?”

“খারাপ,অসভ্য দুটোই।”

“বাব্বাহ সেদিন তুই যেভাবে বলেছিলি নিরু নয়,অনিমা রহমান বলুন।এতো কঠিন কথা কোথায় থেকে শিখেছিলি বল তো শুনি?”

“পুরোনো কথা বলে শুধু পচাবে।”

“নিরু আমি যদি তোর পাশে বেশি সময় না থাকতে পারি, তোর কষ্ট হবে?”

“যা বললেন সাহস থাকলে আরেকবার বলেন শুনি।”

লাভ ইউ নিরু,পৃথিবী শুনতে পাচ্ছো? আমার নিরুকে আমি ভীষণ ভালবাসি।”

“একটু আগে যেইটা বললেন এইটা বলেন।”

“ভালবাসি খুব জানিস?”

“আজন্ম আগলে রাখবেন তা জানি।জোর করে দিনে একশত চুমু খাবেন এইটাও জানি!”

আসাদ হেসে ফেললো,নিরুও মুচকি হাসলো।

“একটু আগে যা বললেন,এই ধরনের কথা যেন ভুল করেও আমি আর না শুনি।আর যদি আমাকে এই ধরনের কথা শুনতে হয়।দুঃখ আছে আপনার কপালে,মনে থাকে যেন।”

“মনে না থাকলে হুটহাট চুমু দিয়ে মনে করিয়ে দিস।”

“এই চুমাচুমি ছাড়া কিছু মাথায় আসে না তাই না?”

“অনেক কিছুই তো মাথায় আসে,পাচ্ছি কই?”

“না আসলে পাবেন কই?”

“ইচ্ছে করছে এখনই ছুটে এসে বুকের মধ্যে আটকে নিই।”

“তাড়াতাড়ি আসুন,অপেক্ষায় আছি।”

“ঠিক এতো ভালবাসি
ম*রণের তরেও এতো ভালোই বাসিব।
যেই ভালবাসায় জীবন্ত মায়া,
ললাট ছুয়ে যাবে আজন্ম!”

নিরু মুগ্ধ হয়ে আসাদের বলা কথা গুলো শুনছিলো। “এতো সুন্দর করে কীভাবে বলেন?”

“তুই আমার অনেক সুখে গড়া নিরু, এইটা কী জানিস?তোর চোখের দিকে তাকালে আমি পুরো পৃথিবী এক পাশে ফেলে রাখি।”

“এতো ভালবাসা ভালো নয় কিন্তু মিস্টার আসাদ সাহেব।”

“কম কষ্ট তো আর পাইনি,আমাদের ভালবাসা আর মন্দ হবে না।মরণ ছাড়া ভালবাসা কমবে না,দিন দিন বাড়তে থাকবে।”

“আচ্ছা এবার ফ্রেশ হয়ে বিশ্রাম নেন।বাড়ি গিয়ে রাতে ফোন দেবো।”

নিরু রাত দশটার মধ্যে বাড়ি চলে এলো।নিরু আনাস মোল্লাকে বিকেলের মধ্যে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিলো।খাদিজা জানতো না আমিনা বেগম আছেন,তাই সুযোগ বুঝে নিরুকে বোঝাতে এসেছিলেন।নিরু এইভাবে কাটাকাটা কথা বলবে খাদিজা ঘুনাক্ষরেও জানতো না।তাই বিষন্ন মনে নিরুর দেখিয়ে দেওয়া ঘরেই বসে রইলেন। আনাস মোল্লা বাড়িতে এলে আনাস মোল্লাকে ধরে রোহানের অবস্থা জানালেন।নিরুকে আজিজুলদের ঘরে দিয়ে ভুল করেছেন এইগুলোই বুঝিয়ে গেলেন।

নিরু এসে আগে আমিনার ঘরে গেল।আমিনা বেগম আজিজুল হকের সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলেন।নিরু নিজের ঘরে গিয়ে আসাদকে মেসেজ করে জানিয়ে দিলো বাড়িতে চলে এসেছে,পরে ফোন দিচ্ছে।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here