তোমায়_যবে_পাই_দেখিতে #তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া #পর্ব_৯ (প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত

0
301

#তোমায়_যবে_পাই_দেখিতে
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া
#পর্ব_৯
(প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।)

গাড়ির হর্ন শুনতে পাচ্ছে রিক্তা । তিয়াসের শারীরিক কোনো রোগ নেই কিন্তু মানসিকভাবে অসুস্থ কিছুটা। সেজন্য ডাক্তার কিছু মেডিসিন নিয়মিত খেতে দিয়েছে। ছোটো থেকে খুব বাজে পরিস্থিতিতে বড়ো হওয়ার পাশাপাশি প্রিয় মানুষকে হারিয়ে মানসিক অবস্থার কিঞ্চিৎ অবনতি ঘটেছে বলে জানিয়েছিলেন ডাক্তার।
ডিভোর্সের সমস্ত কাগজপত্র রেডি করে ফেলেছে আবরিশাম। অন্যান্য স্ত্রী’দের মতো প্রিয়ন্তি সংসার টেকানোর কোনো চেষ্টা করেনি। কারণ বিয়েটা ঝোঁকের বশেই করেছিলো সে। তাই শ্বশুরবাড়ির প্রতিটি লোকজনকে সে তার সিন্ধান্তের কথা নির্দ্বিধায় জানিয়েছে। রেজওয়ানের শরীর ক্রমশ খারাপ হয়ে যাচ্ছে। বাইরে বেরোতেই পারে না আজকাল। আসমা কিছুদিন আগেই ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দিয়েছে। রেজওয়ানও কিছু না ভেবেই মুক্তি দিয়েছে তাকে। মনে মনে ভীষণ অনুতপ্ত সে। অর্পার সাথে এক ঘরে থাকলেও অর্পা নিজে থেকে কোনো কথা বলে না,স্পর্শ তো দূরের কথা। একমাত্র মেয়ে কল দিলেও ধরে না। সবকিছু মিলিয়ে চরম অশান্তিতে আছে রেজওয়ান।

” রিক্তা আজ তোমাকে কিছু কথা বলবো বলে এখানে ডেকেছি। ”
তিয়াসের বাড়ির পেছন দিকে বড়ো পুকুর আছে একটা। পুকুরের শানবাঁধানো ঘাটে পাশাপাশি বসে আছে রিক্তা ও তিয়াস। এই দিনটার জন্যই এতদিন অপেক্ষা করেছিলো রিক্তা। তিয়াসের সাথে অতিরিক্ত মেলামেশা নিয়ে স্নেহার সাথে একপ্রকার ঝামেলা হয়ে গেছে রিক্তার। স্নেহার সাথে প্রিয়ন্তির কথা হয় প্রায়। তাই স্নেহা জানে প্রিয়ন্তি শীঘ্রই তিয়াসের কাছে ফিরে আসবে। মানুষের চলার পথে হোঁচট খেতেই পারে তাই বলে কি মাঝপথে দাঁড়িয়ে থাকবে?
” হ্যাঁ বলো তিয়াস।”
খুশিতে গদগদ হয়ে বললো রিক্তা। এই কয়েকমাসে আপনি সম্মোধন বাদ দিয়ে তুমিতে এসে ঠেকেছে রিক্তা। তিয়াস শান্ত ভঙ্গিতে রিক্তার চোখে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো।
” রিক্তা আমি জানি তুমি আমাকে পছন্দ করো। আর আমিও এটাও জানি তুমি বন্ধুর মতো পাশে ছিলে বলে প্রিয়ন্তিকে হারানোর যন্ত্রণা একটু হলেও উপশম হয়েছে। কিন্তু আমি শুধু তোমাকে নয়,পৃথিবীর কোনো মেয়েকেই প্রিয়ন্তির জায়গায় বসাতে পারবোনা। ”
তিয়াসের নিকট হতে এ ধরনের কথা মোটেও আশা করেনি রিক্তা। প্রিয়ন্তির উপর ভীষণ রাগ হচ্ছে তার আবার একইসাথে ভালো লাগছে। প্রিয়ন্তি কতটা ভাগ্যবতী! একটা মানুষের থেকে এতটা দূরে থাকা স্বত্বেও তার সমস্ত মনপ্রাণ জুড়ে থাকা সাধারণ বিষয় নয়। রিক্তা আশেপাশে তাকায় বারকয়েক। নিজেকে সামলে নিয়ে ঠোঁটে ম্লান হাসির রেখা ফুটিয়ে বললো,
” সমস্যা নেই তিয়াস। আমি যেমন প্রিয়ন্তির বন্ধু তেমনই তোমারও বন্ধু হয়ে থাকবো আজীবন। আর বন্ধু হয়ে দুজনকে এভাবে কষ্ট পেতে কীভাবে দেখবো! আমি শুনেছি স্নেহার কাছে প্রিয়ন্তি বিয়ে ভেঙে চলে আসবে।”
” আমার সাথে কথা হয় না অনেক দিন। কথা বলার পরে যে প্রিয় প্রচন্ড কাঁদে সেটা আমি বুঝতে পারি। তাই ইচ্ছে করে না মেয়েটাকে কাঁদাতে। তোমাকে কী বলে ধন্যবাদ দিবো জানি না রিক্তা। আঙ্কেল যদি বড়ো অংকের টাকা লোন পাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতেন তাহলে আমার খামারের ব্যাবসা এতো তাড়াতাড়ি করতে পারতাম না। ”
” ইট’স ওকে ডিয়ার। কল দিও আজকে প্রিয়কে। আমি বরং আসি আজকে। কালকে আসবে আবারও। ”
” ঠিক আছে, সাবধানে যেও তবে। ”
রিক্তা মুচকি হেসে উঠে গেলো সেখান থেকে। তিয়াস পুকুরের পানিতে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। প্রিয়ন্তির ফিরে আসার খবরে মনের ভেতর যতোটা না আনন্দ হচ্ছে তারচে দ্বিগুণ চিন্তা হচ্ছে। কারণ প্রিয়ন্তির স্বামী যদি তাকে ডিভোর্স না দেয়? রিক্তা এই কয়েকমাসে তিয়াসকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। যখন দেখলো কম লেখাপড়ায় তেমন ভালো কোনো চাকরি পাওয়া যাচ্ছে না তখন তিয়াসের খালুর মতো খামার তৈরির পরিকল্পনা করলো তিয়াস। যদিও দুজনের একটাই খামার কিন্তু এখন দুজনের যৌথ মূলধনে চলে। আগের চেয়ে পরিসরে বড়ো হয়েছে। একশো গরুর জায়গায় দুইশো গরু আছে খামারে। সবমিলিয়ে তিয়াস এখন যথেষ্ট স্বাবলম্বী।

” অর্পা তুমি প্লিজ তুমি যেও না আমাকে ছেড়ে। ”
” তুমি সুস্থ হয়ে যাবে চিন্তা করো না। আমি তিয়াসের সাথেই ওর খালার বাসায় থাকবো। আল্লাহ আমাকে ছেলে না দিলেও ছেলের মতো একটা ছেলেকে পাইয়ে দিয়েছেন। এতদিন উপায় ছিলোনা বলেই তোমার ঘরে পড়ে ছিলাম।”
রেজওয়ান দরজা আঁটকে দাঁড়িয়ে আছে। অর্পা ব্যাগপত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তিয়াসের সাথে মাঝে মধ্যে কথা হয় অর্পার। রেজওয়ানের অত্যাচারের কথা অজানা নয় তিয়াসের। এতোদিন ইচ্ছে থাকলেও উপায় ছিলোনা। কিন্তু এখন সে স্বাবলম্বী। প্রিয়কে নিজের কাছে রাখতে পারবে কি-না নিশ্চিত না হলেও তার মা’কে নিজের কাছে রাখার বায়না ধরে ছেলেটা। অর্পাও সবকিছু ভেবে সিন্ধান্ত নেয় বাড়ি ছাড়বে। রেজওয়ানকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছিলো অর্পা। প্রতিদিন খাবারে নির্দিষ্ট পরিমাণে আর্সেনিক মিশিয়ে দিতো। এরজন্যই অসুস্থ হয়ে যাচ্ছিলো রেজওয়ান। কিন্তু একটা সময় পরে অর্পার মনে হলো,এই লোকটা মরে গেলে তো সব শেষ! এতো সহজে মরলে তো খেলা খতম। তারচে একা একা থেকে বুঝবে দাঁত থাকতে দাঁতের মূল্য না দিলে পরবর্তীতে কেমন অবস্থা হয়। তাই আজ বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে অর্পা।
” আমি তোমার পায়ে পড়ছি,তুমি এভাবে একা করে যেওনা আমাকে। মেয়েটাকে কবে হারিয়েছি এখন তুমিও গেলে আমি কীভাবে থাকবো? আমি আমার ভুল স্বীকার করছি। লোভে অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। টাকার লোভ খুব খারাপ। ”
অর্পা তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে। রেজওয়ানকে সরিয়ে দেয় নিজের থেকে। যেহেতু রেজওয়ান অসুস্থ তাই অর্পাকে গায়ের জোরে ধরে রাখতে পারে না। অর্পা ঠিক বাড়ি থেকে চলে যায়। দরজার বাইরে হাঁটু গেড়ে বসে থাকে রেজওয়ান। কত সুন্দর সাজানো সংসার ছিলো। সবকিছু নিজের হাতে শেষ করে দিলো। আঘাতে আঘাতে পাথরেরও যে ক্ষয় হয় সেটা বুঝতে পারেনি রেজওয়ান। অর্পা আজ বদলে গেছে। আর বদলানোর কারণ যে রেজওয়ান নিজে সেই নিয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই।

দেখতে দেখতে কয়েকমাস কেটে গেছে। এরমধ্যে মিউচুয়াল ডিভোর্সের জন্য আবেদন করেছিলো আবরিশাম ও প্রিয়ন্তি। শেষমেশ আজ ডিবোর্স হয়েই গেলো। প্রিয়ন্তিকে বাবার বাড়ি পৌঁছে দিতে হবে আবরিশামকেই। গাড়িতে উঠে বসেছে প্রিয়ন্তি। আজকে বেশ ফুরফুরে লাগছে তার। সবকিছুই আগের মতো হলো শুধু মাঝখানে ডিভোর্সি তকমা গায়ে লাগলো তার। আনহা ছলছল নয়নে গাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। এ বাড়িতে প্রিয়ন্তির সবচেয়ে ভালো সম্পর্ক ছিলো আনহার সাথে। প্রিয়ন্তি আর আনহার দিকে তাকালো না। অযথা পিছুটান রেখে লাভ নেই। তিয়াসের সাথে গতকাল রাতে কথা হয়েছিল। কালকে আর কেউ কান্নাকাটি করেনি। দু’জনের মধ্যেই ছিলো অনেক কথা। অর্পাকে নিয়েই ছিলো তিয়াসের অধিকাংশ কথাবার্তা। প্রিয়ন্তির চোখে তিয়াসের শ্রদ্ধা আরো বেড়ে গেছে। এই মানুষটা জীবনে এতটা কষ্ট করেছে, পরিস্থিতি যাইহোক না কেনো যে মেয়ে তাকে ছেড়ে অন্যত্র বিয়ে করেছিলো তার মা’কে নিজের কাছে রাণীর মতো করে রেখেছে।
” গাড়ি স্টার্ট করছি,সিট বেল বেঁধে নাও মিনি প্যাকেট। ”
” আপনার সাথে আজকে আর কোনো রাগারাগি করবো না। তবে ধন্যবাদ দিবো। আপনি যতই চরিত্রহীন হোননা কেনো,এতগুলো মাসে একবারও আমার অসম্মান করেননি। ”
” হয়েছে ধন্যবাদের দরকার নেই। অন্যের ভালোবাসার মানুষের উপর কেবল অধিকার আছে বলেই জোর খাটানো আমার নিয়মে নেই। তবে একটা কথা বলবো?”
গাড়ি চলছে। আবরিশাম ড্রাইভ করতে করতেই কথা বলছে। ড্রাইভার থাকলেও আবরিশামের মায়ের ইচ্ছেতে প্রিয়ন্তিকে আবরিশাম নিজেই পৌঁছে দিতে রাজি হয়েছে। এতোটা পথ একা ছাড়ার রিস্ক নিতে চাননি তিনি।
” হ্যাঁ বলুন। আজকের পর তো আর আমাদের কথা হবে না, তাই সবকিছুই বলে ফেলুন। ”
” এই যে এতগুলো মাস শ্বশুর বাড়িতে স্বামীর সাথে থেকেছো, তারপরেও তোমার প্রেমিক তোমাকে মন থেকে গ্রহণ করবে?”
প্রশ্নটা কেমন বিদঘুটে লাগলো প্রিয়ন্তির। যদিও প্রিয়ন্তি আর আবরিশামের মধ্যে কখনো বৈবাহিক সম্পর্ক সৃষ্টি হয়নি কিন্তু বাইরের লোকজন তো তা জানে না! তিয়াস কিছু বলবে না সে বিষয় পূর্ণ বিশ্বাস আছে প্রিয়ন্তির। কিন্তু এলাকার লোকজন?
” হ্যাঁ করবে। তিয়াস ওরকম ছেলে নয়। ”
” তাহলে তো ভালোই। তবে হ্যাঁ যদি কোনো দিন মনে হয় আসল মানুষটা আর ঠিক নেই, সেদিন না আবার আফসোস করতে হয়।”
” হুঁশ! এসব অলক্ষুণে কথাবার্তা না বলে চুপ থাকুন। আর সাবধানে গাড়ি চালান।”
আবরিশাম আর কিছু বললো না। কেনো যে এরকম কথা প্রিয়ন্তিকে বললো সে নিজেও বুঝলো না। তবে কি সে মনে মনে প্রিয়ন্তিকে যেতে দিতে চায়নি? নাহ! এসব মনের ভুল। সবকিছু শেষ। এখন এসব অবান্তর চিন্তার কোনো জায়গা নেই কোথাও। আবরিশাম গাড়ির দিকে পূর্ণ মনোযোগ দেয় এবার। প্রিয়ন্তি জানালা দিয়ে বাইরের গাছপালা, মানুষজন, দোকানগুলো দেখছে।
চলবে,

এই মাসের শেষে আমার পরীক্ষা তাই গল্প বেশি বড়ো করবো না। নতুন গল্প দিলেও এরপর একদিন পর পর দিবো। ❤️
পরের পর্বের লিংক https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=371709378843347&id=100080128645410&mibextid=Nif5oz

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here