হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|৬| #শার্লিন_হাসান

0
660

#হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|৬|
#শার্লিন_হাসান

-আরে বা’ল…..

সেরিন তাকিয়ে দেখে শুভ্র তাঁদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। পুরো ক্লাস নিস্তব্ধ। সেরিন চোখ মুখ কচলে পুনরায় তাকায়। না সত্যি এটা জ্বীন না আরজিনই দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু সে আসলো কখন? কীভাবে? নিশাত সেরিনের দিকে চোখ পাকাচ্ছে। তাঁদের আবার কথা বলতে গেলে হুঁশ থাকে না। আশে-পাশে কী হচ্ছে না হচ্ছে।

তখন শুভ্র বলে,
-দু’জনে দাঁড়াও।

সেরিন নিশাত দু’জনে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। তখন শুভ্র কন্ঠস্বর উঁচু করে বলে,
‘ক্লাসে আসো প্রেমালাপ করার জন্য? আমি এখানে এসেছি আমায় চোখে পড়ে না? বেয়া’দব দু’টো। পড়ালেখা তো নেই তার উপর ক্লাসে ডিস্টার্ব করে। স্যার যারা এদের দু’জনের মতো ক্লাসে এসে কথা বলবে, ক্লাসের পরিবেশ নষ্ট করবে এঁদেরকে সামনে নিয়ে কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখবেন।

শুভ্র থেমে বলে,
সীট ডাউন!’

রাগে সেরিনের মাথা ব্যথা শুরু হয়ে গেছে। এমনিতে ওইদিকে কী হলো না হলে সেই চিন্তায় শেষ তারউপর এমন অপমান। নিশাত বসতে,বসতে দশবিশটা গা’লি শুভ্রকে দান করেছে। সেই সাথে কঠোর অভিশাপ! সেরিন মনে, মনে একশটা গা’লি দিয়েছে সেই সাথে অভিশাপ।
‘ দোআ দিলাম তোর বাবু হলে যাতে তোর বউ বাবুকে কোলে নিতে না দেয়। তোর বউ আস্ত ঝগড়ুটে হবে। এতো পরিমান বাচাল হবে যে তোর কান জ্বালা ফালা করে ফেলবে। শুধু তাইনা কথায়,কথায় উঠতে বসতে খোঁটা দিবে। শুধু খোটাই না। এতো রাগ করবে যে রাগ ভাঙাতে,ভাঙতে তোর জীবন লুজ হয়ে যাবে। এতো তেজ থাকবে না ভাই।’

শুভ্র তখন তাঁদের কলেজের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নিয়ে বলে। আগামী কাল থেকে একটা নির্দিষ্ট সময় বের করে রিহার্সাল করানো হবে। এবং যারা গান গাইতে পারে তারা জেনো গানের তালিকায় নাম দেয়।

শুভ্রর সাথে দু’জন টিচার এসেছে। তাঁদের নিয়ে শুভ্র কমার্সের রুমে যায়।
সেরিন নিশাতের দিকে তাকিয়ে আছে। তখন নিশাত সেরিনকে স্বান্তনা দেওয়ার জন্য বলে,
‘এতো তেজ দেখিয়ে লাভ নেই সেই বউয়ের কাছে গেলে বনের সিংহ ও বিড়াল হয়ে যায়।’

‘এই শা’লা জীবনেও বিড়াল হবে না। সিংহ সিংহের মতোই থাকবে।’

সেরিনদের ক্লাস শেষ হতে তাঁদের কলেজের সাংস্কৃতির টিচার একজন স্যার আর একজন ম্যাম আসে নাম নেওয়ার জন্য। নিশাত সেরিনকে ঠেলছে নাম দেওয়ার জন্য। সেরিনের মুড নেই এসবে। কিন্তু সেরিন খুব ভালো গায়। ফেসবুকে তার ভালো একটা ফ্যানবেজ রয়েছে। নিশাতের জোড়াজুড়িতে সেরিন নাম লেখায়।

*******

আর্থ শসীর দিকে তাকিয়ে আছে। যেটা অনেকেরই চোখে পড়েছে। আপাতত মেয়েরা পারছে না শসীকে সরিয়ে নিজেরা শসীর জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়ে। আর্থ চৌধুরীর ব্যবহার প্লাস এট্টিটিউড সম্পর্কে অনেকের ধারণা আছে। বেশীরভাগ তার সুন্দর হাসির প্রেমে পড়েছে। শসীও তার ব্যতিক্রম নয়। শসীর এতো বেশী আফসোস হচ্ছে যে ক্রাশকে সামনে পেয়েও কথা বলতে পারছে না। ওইদিকে অনেক মেয়েরা ছবি তুলছে অথচ তারা ছবি তুলতে পারছে না। সিনহার হাত খামচে ধরে শসী। আস্তে করে বলে,

‘চল পিকচার তুলবো। আই হোপ না করবে না।’

‘আচ্ছা চল।’

সিনহা,শসী আর্থর দিকে এগিয়ে যায়। আর্থ শসীকে এগিয়ে আসতে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। হয়ত চিনে এতো মানুষ দেখে কিছুটা আনইজি ফিল করছে। যাই হোক আর্থর জন্য ভালোই হয়েছে। সে কখনো পাবলিক করবে না প্রেমের কথা। শসী সিনহা আর্থর সামনে যায়। শসী সাহস করে বলেই ফেলে,

‘ভাইয়া যদি কিছু মনে না করেন একটা পিকচার তুলবো।’

‘ভাইয়া?’

আর্থর কথায় বাকীরা তাকায়। শসী মনে,মনে বলে,
‘ভাইয়া না সাইয়্যা বানাবো আপনায়।প্লিজ আসুন,আসুন বলুন ‘ শসী ডু ইউ লাভ মি? উইল ইউ ম্যারি মি। সেটা তো আর বলবেন না। আবার মনে, মনে আশাও রাখেন ভাইয়া না সাইয়্যা হওয়ার। জানি শসী সুন্দরী ভালো না লাগার কিছু নেই।’

‘হ্যাঁ পিকচার নিতে পারেন।’

আর্থর কথায় শসী সেলফি নেয়। ক্রাশের সাথে পিকচার শসী আজকে ভীষণ খুশি। সেরিনকে বাড়ী গিয়ে খবরটা দিতে হতে। আর্থ শসীর মুখের দিকে আরেকবার তাকায়। মেয়েটার হাসিটাও সুন্দর। কিন্তু শসী তো আজকে অনেক বেশী বকা খাবে আর্থর থেকে। আর্থ মনে,মনে ঠিক করে নেয় গাড়ীতে বসেই মেসেজ দিবে।

বৃদ্ধাশ্রম উদ্বোধনের কাজ শেষ করে তারা ব্যাক করে বাড়ীর উদ্দেশ্যে। আর্থ গাড়ীতে বসেই মেসেজ দেয় শসীকে।

‘তুমি আমাকে চিনতে পারোনি? এমন রিয়েকশন দেওয়ার কী আছে? আমি কে? তোমার ফিউচার বর! এই আশেপাশে ছেলে দেখে ঢং করেছো? আমাকে আর ভালো লাগে না? ওই ছেলেদের ভালো লেগে গেছে?’

মেসেজ গেলেও সীন হয়নি। আর্থ থামেনি তার রাগ লাগছে। পুনরায় লিখে,
‘ছেলেদের দিকে তাকিয়েছো নাকী আমার দিকে? এরপর এমন দেখলে না ডিরেক্ট বিয়ে করে চশমায় আমার ছবি লাগিয়ে চোখে জুলিয়ে দেবো। যাতে ডানে,বামে,উপরে,নিচে যেদিকে তাকাও আমাকেই দেখতে পাও। ইউ ক্যান ইমাজিন? আমাদের হুট করে দেখা হলো তাও তুমি খুশি হওনি?’

বাড়ীতে এসে আর্থ মুখ একটা বাংলার পাঁচের মতো করে রেখেছে। শুভ্র তার কাছে এসবে বসে। আর্থর মুখ দেখে বলে,
‘গার্লফ্রেন্ড ব্রেকআপ করে নিয়েছে নাকী?’

‘না। মেসেজ সীন করছে না।’

‘যদি ফেইক হয় মেয়েটা?’

‘ফেইক হবে কেন? ওর সাথে আজকে দেখাও হয়েছে।’

‘সেটা না! যদি যার সাথে প্রেম করছিস সে জানে না অথচ তার হয়ে আরেকজন কথা বলছে তোর সাথে।’

‘বললেও লাভ হবে না। আমি সেই একজনকে ভালোবাসি। প্রয়োজন সেই একজনকে গিয়ে প্রপোজ দেবো।’

‘নেতা সাহেব প্রেমে পড়ে বাচ্চা ছেলে হয়ে গেলো। তার মেয়ে ফ্যানরা শোনলে ওই সেরিনের খবর আছে।’

‘ভাবীর খবর হবে কেন?’

‘ভাবী কী হ্যাঁ? ও আমার বিয়ে করা বউ নাকী যে তুই ভাবী উপাধি দিচ্ছিস?

‘সে একই! চিঠি তো সেই দিলো আর তুমি আমায় আর আমার বাবুর আম্মুকে দোষ দাও।’

‘নাহ্! ও চিঠি দেয়নি। চিঠি কে দিয়েছে সেটাও জানি না। তবে যে দিয়েছে চালাকি করেই দিয়েছে। কারণ প্রথম চিঠিটা আমার নামে আসলেও পরের চিঠিটা তোর আর আমার নাম মিলিয়ে। এই দাউদকান্দি উপজেলায় এমন কেউ নেই যে আমাদের নাম জানে না। সবাই জানে চৌধুরীদের দুই ছেলে। আরজিন চৌধুরী শুভ্র আর আরফিন চৌধুরী আর্থ। মেয়েটা প্রচুর চালাক।’

‘চালাকি করে দেয়নি। মেয়েটা সত্যি হয়ত জানে না আমাদের নাম।’

‘সে যাই হোক চিঠুর মালিককে পেলে কষিয়ে কয়টা দিয়ে ভুল জায়গায় বাবুর আম্মু হওয়ার আবদার করার মানে বুঝিয়ে দেবো।’

****

আর্থর মেসেজ দেখে সেরিনের মাথায় হাত চলে যায়। সময়টা সন্ধ্যা গড়িয়ে। শসী আসে সেরিনের রুমে। তার হাতে ফোন আর সেই ফোনের স্ক্রিনে আর্থর আর তার ছবিটা জ্বলজ্বল করছে।

সেরিন শসীকে দেখে বলে,

‘বনু বসো একটা কথা বলার ছিলো।’

‘বল?

বসতে,বসতে বলে শসী। তখন সেরিন বলে,
‘আসলে তুমি তো আর্থ স্যারের উপর ক্রাশিত আইমিন প্রেম ভালোবাসা। তো ধরো আর্থ স্যার ও তোমায় লাভ করে।”‘

‘ইম্পসিবল। ও কখনো আমার মতো বাচ্চাকে লাভ করবে না।
‘গাধী আমি তোর থেকে একবছরের জুনিয়র। আমার কাছে কাবু হলে তোর কাছে হবে না?’

‘তার মানে আর্থর সাথে তুই প্রেম করছিস?’

‘না, আর্থ শসীকে ভালোবাসে আর আমি সেরিন যে শসী হয়ে আর্থকে ইমপ্রেস করেছি। এখন প্লিজ আইডি চেন্জ কর। তোর আইডি তুই নে আর আমায় উদ্ধার কর। এমনিতে একজনের কাছে ধরা খেয়ে গেছি।’

‘একদিনে দুই দু’টো খুশির খবর। সত্যি আর্থ আমায় ভালোবাসে?’

‘হ্যাঁ। শোন এবার তোর আইডি থেকে আমার গাওয়া গান ডিলিট করে দিস। আমার আইডিতে আমি পোস্ট দিবো। মানে আগের মতো সব ঠিকঠাক করে নিবো।’

শসী সেরিন যে যার আইডি লগ ইন করে নেয়। তখন সেরিন বলে,
‘রিসেন্ট মেসেজের রিপ্লাই তুই দিস।’

‘হ্যাঁ দিবো।’

শসী প্রস্থান করতে সেরিন হাফ ছেড়ে বাঁচে। তার গাড় থেকে বোঝা নেমে গেছে। এখন আরকী! বাকী সব ছেড়ে নিজের ব্যস্ত লাইফে ফোকাস করতে হবে।

রাতে নিজের কাজ শেষ করে শুভ্র শসীর আইডি স্টক করে। কোন গানের ভিডিও নে আইডিতে। হয়ত সেরিন হিংসুটে মেয়েটাকে ব্লাকমেইল করে ডিলিট করিয়ে নিয়েছে। কিন্তু সেরিন হিংসুটে হবে কেন? সেরিন কী তাকে পছন্দ করে নাকী? যা খুশি হোক শসী তার ছেট ভাইয়ের গার্লফ্রেন্ড শুভ্র সেদিকে তাকানোর মতো কিছু নেই। নিজের লাইফ,কর্ম নিয়ে ব্যস্ত সে।

#চলবে

(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। হ্যাপি রিডিং।❤️‍🩹)

#হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|৭|
#শার্লিন_হাসান

এরই মাঝে কেটে যায় বেশ কয়েকদিন। শশী আর্থর প্রেম জমে ক্ষীর। শুভ্র আর বলেনি সেরিন যে এতোদিন সবাইকে বোকা বানিয়েছিলো। কেন বলেনি কারণটাও শুভ্রর অজানা। শুধু সেরিনের ইস্টুপিট মার্কা কার্যকলাপ দেখে যাচ্ছে সে। সময়টা ভোর। শুভ্র নামাজ আদায় করে বাইরে হাঁটতে বের হয়। সাথে আর্থ ও আছে। তারা কলেজের পুরো মাঠ চত্বর দিয়ে পেছনের বিশাল দীঘির পাড়ে যায়। দুই ভাই সকালের শীতল বাতাস উপভোগ করে বাড়ী ফিরে।

নাস্তা করে রেডি হয়ে নেয় শুভ্র। আজকে সে কলেজের কিছু কাজে কুমিল্লা যাবে। আর্থ ও নাকী কুমিল্লা যাবে। তবে আর্থ লেট করে যাবে। শুভ্র নিজের সময় মতো বেড়িয়ে পড়ে।

আর্থ কাবাড থেকে নিজের পোষাক নামিয়ে নেয়। আজকে শসীর সাথে মিট করবে। সাথে তার বোন আর দু’জন ফ্রেন্ড আসবে। সেদিন শশীকে বকা দিয়ে কড়া কথা শোনালেও পরে সব ঠিক করে নেয় আর্থ। আর যাই হোক মেয়েটাকে সে ভালোবাসে।

শশী,সেরিন,সিনহা,নিশাত তারা সবাই বাজারে এসে একসাথ হয়। সেরিন,নিশাত তারা শুভ্রর কলেজের ইউনিফর্ম পড়া। শশী তাদের কলেজের। তবে সেরিন ভয়ে আছে একবার কমপ্লেন গেলে জামেলা হবে। শুভ্রর যা কড়া রুলস তার কলেজের ইউনিফর্ম পড়ে কোন ছেলের সাথে দেখা করতে যাওয়া যাবে না। আর না টিকটক করা যাবে। যদিও সেরিন টিকটক চালায় না। আর্থ ও কিছু বলতে পারবে না কারণ বিষয়টা জানাজানি হয়ে গেলে তারই সন্মান যাবে। কী এক রাজনীতিতে ঢুকেছে যে প্রেমটাও শান্তিতে করতে পারে না।

যথা সময়ে তারা কুমিল্লায় ধর্ম সাগর নগর উদ্যান গেট দিয়ে প্রবেশ করে। তারা একটা জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়ায়। সেরিন নিশাতকে নিয়ে অন্য সাইডে যায় পিক তোলার জন্য। আর্থ আসতে শশী সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। সেরিন পাটওয়ারী নাম শুনতে তার ভাই শুভ্রর কথা মনে পড়ে। শুভ্রর বাবুর আম্মুর সাথে আর্থর দেখা হয়ে গেলো। যদিও কিছু বলছে না আর্থ। বাড়ী গিয়ে তার ভাইকে পচানো যাবে। ধর্মসাগর পাড়ে কিছুক্ষণ হাঁটাহাটি করে,পিকচার, ভিডিও করে তারা মেইন শহরে যায়। সেখানের একটা রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করে। আর্থ প্রবেশ করতে দেখে শুভ্র সেখানে দাঁড়িয়ে কথা বলছে তার সাথে কয়েকজন টিচারের সাথে। শুভ্রকে একদম আশা করেনি সেরিন আর নিশাত। সেরিন দো’আ দুরুদ পড়ার আগে শুভ্রর চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করে নেয়। নিশাত সেরিনকে টেনে টুনে বাইরে নিয়ে আসে। শশী থাকলে সমস্যা হবে না কারণ তাঁদের কলেজ ভিন্ন সাথে আর্থ আছে। সেরিন আর নিশাত ধরা খেলে সমস্যা আছে।

আর্থ শশীকে ইশারা করে আগে চলে যেতে। শসী সিনহার হাত ধরে আগে চলে যায়। আর্থ কিছুটা ভাব নিয়ে শুভ্রর কাছে যায়। আর্থকে দেখে শুভ্র বলে,

‘তুই এখানে? কী করে জানলি আমিও এখানে আসবো আজকে।’

‘তেমন কিছু না আসলে…

‘আসলে কী?’

‘অন্য রেস্টুরেন্ট নেই? এটাতে কেনো সবসময় আসো?’

আর্থর কথায় শুভ্র অবাক হয়ে তাকায়। সে যতবার কুমিল্লায় আসে ততোবার এই রেস্টুরেন্টে আসে। এমনকি আর্থ ও মাঝেমধ্যে আসে। রিভিউ ও ভালোই দেয়। তখন শুভ্র শুধায়,
‘এটাতে আসলে সমস্যা কোথায়?’

‘একদম বাজে খাবার এই রেস্টুরেন্টের। ভাই হয়ে কীভাবে ভাইকে জেনেশুনে বাজে খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিতে পারি?’

তখন সেই রেস্টুরেন্টের ম্যানাজার আসে। শুভ্রকে চেনে আর্থকেও মোটামুটি চেনে। তাঁদের রেস্টুরেন্টের নামে বাজে রিভিউ শুনে কিছুটা রেগে যায় ম্যানাজার।

‘শুভ্র স্যার আর্থ স্যার এসব কী বলছে? আমাদের রেস্টুরেন্টের খাবার একদম ফ্রেশ। কোন ভেজাল নেই।’

তখন আর্থ শুধায়,
‘আমি তো বলিনি ভেজাল আছে খাবারে। আমি বলেছি রান্না ভালো না। বাবুর্চি চেন্জ করা উচিত।’

আর্থর কথায় শুভ্র তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। তার কাছে আর্থকে চোর, চোর লাগছে। লাইক আর্থর অবস্থা চোরের মনে পুলিশ,পুলিশ। আর্থ আমতাআমতা করে বলে,
‘বাবুর্চি টা চেন্জ করে নিয়েন। ভাইয়া চলো অন্য রেস্টুরেন্টে খাবে আজকে।’

‘আমাদের খাওয়া শেষ এখন কলেজের উদ্দেশ্য রওনা হবো।’

‘ওহ্, তাহলে যাও।’

শুভ্র আর কথা বাড়ায়না। তার সাথের টিচার দুজনকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে। শুভ্র যেতে আর্থ জেনো হাফ ছেড়ে বাঁচে।

ওইদিকে শসী আর তার বান্ধবী সিনহা বসে আছে। আর্থ যেভাবে বলছিলো না জানি আজকে রেস্টুরেন্ট বন্ধের ব্যবস্থা করে দেয়। কী জানি কী জামেলায় পড়লো। শশীর মনে হচ্ছে আর্থ সেরিনের দলেরই একজন। যে যেখানেই যাবে ভেজাল আর বাঁশ ফ্রিতে খাবেই খাবে।

সেরিন নিশাতকে নিয়ে রেস্টুরেন্টের থেকে এক মাইল দূরে চলে আসে। তার রেস্টুরেন্টে যাওয়ার আর মুড নেই। শশী কল দিয়ে যাচ্ছে সেরিন কল তুলছে না। তার তো রাগে মাথা ব্যথাই শুরু হয়ে গেছে।

‘কেন? কেন ভাই সব কিছুতে এই শুভ্রর হাতেই আমি হাতে নাতে ধরা খাইই.. ধরা খেতে যাই। এই লোকটা মোটেও সুবিধার না।’

নিশাতকে বলে সেরিন। তখন নিশাত শুধায়,
‘জানি না ভাই। আমরা যা আজা ইরা কাজকর্ম করি। শুভ্র স্যারের হাতে ধরা খাই বা খাইতে,খাইতে বেচে যাই। না জানি বাকী দেড় বছরে আরো কত হাজার বাঁশ খাই।’

‘বইন আমার মাথা ব্যথা করে। প্লিজ চল চলে যাই।’

‘আমার তো বুক ব্যথা শুরু হয়ে গেছে। আর রিস্ক নিতে চাই না।’

নিশাত, সেরিন বাড়ীর জন্য রওনা হয়। ফোন কভারে বেশী টাকা নেই। তাই তারা লোকাল বাসে করে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। বাস স্টেশন থেকে বাসে উঠে দাউদকান্দির। বাসের সীটে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে বসে সেরিন। শশীর কল রিসিভ হতে সেরিন বলে,
‘আমি বাসে আছি। বাড়ীতে চলে গেলাম।তুই তাড়াতাড়ি চলে আসিস।’

‘কিন্তু তুই চলে যাচ্ছিস কেন?’

‘শুভ্র স্যার একবার জানতে পারলে খবর করবে। কলেজ ফাঁকি দিয়ে ছেলে নিয়ে কুমিল্লা। তারউপর ভাইয়ার কাছে বিচার দিলে সেটা বাবার কানে তুলে দিবে। আর বেডার যা ভয়েস একটা ধমক দিলে আমি সেরিন সেখানে কাত।’

‘তোর অভিযোগের শেষ নাই। আসলে তোর কপালে বাঁশ আর বাঁশ এবং বাঁশ ছাড়া কিছুই নেই।’

শশী কল কেটে দেয়। সেরিন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। বাস ছাড়ার সময় হতে কোথা থেকে শুভ্র বাসে উঠে। শুভ্রকে দেখে নিশাত সেরিনকে ধাক্কা দিয়ে দেখায়। সেরিন এবার পারছে না শুভ্রকে ধাক্কা মেরে বাস থেকে ফেলে দেয়। তাড়াতাড়ি গলায় ঝুলানো হিজাব ওরনা দিয়ে বড় করে গোমটা দিয়ে বাইরের দিকে তাকায়। নিশাত ফোনে কথা বলার ভান ধরে মুখ ঢেকে রেখেছে।

শুভ্র সেরিনদের পেছনের সীটে বসে। শুভ্র খুব একটা লোকাল বাসে আসে না। তবে মাঝেমধ্যে আসে। তার কলেজে স্টুডেন্ট আবার কলেজের নাম করে কলেজ ইউনিফর্ম পরিধান করে বয়ফ্রেন্ড নিয়ে কুমিল্লায় ঘুরতে আসে কীনা। যদিও এর আগে দু’চার জন ধরা পড়েছে।

সেরিন তো নিশাতের সাথে বলতে শুরু করে,
‘ভাই আমি কলেজ থেকে টিসি নিয়ে চলে আসবো। এই শুভ্র স্যার দেখি আঠার মতো পেছনে পড়ে আছে।’

‘বুঝিনা ওনার সাথেই কেন আমাদের দেখা হয়। এনার কী খেয়ে দেয়ে কাজ নেই? আমরা যেখানে যাই সেখানে ওনার ও যাওয়া লাগে?’

‘ভালোয়,ভালোয় বাড়ী যাই। আমাদের জন্য বাইরে বের হওয়া মানে বাঁশ। সেখানে বয়ফ্রেন্ড নিয়ে কখনো ঘুরতে আসার স্বপ্ন তো স্বপ্নই।’

সেরিনের ভয়েস শুনেই শুভ্র চিনে ফেলে। ভাগ্যিস ওদের কথা বলার সময় হুশ থাকে না। নাহলে শুভ্র কখনো ওদের চালাকি ধরতে পারতো না। শুভ্র ভাবছে কীভাবে সেরিনকে ডেকে নিয়ে আচ্ছা মতো ধোলাই দেওয়া যায়। মেয়েটা এতো আজা ইরা কেন? আর সবসময় তার চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করে কেন? শুভ্র কী তার পাকা ধানে মই দিয়েছে? একদম না। তাহলে মেয়েটার তার প্রতি এতো ক্ষোভ কেন?

দাউদকান্দি আসতে কোন রকম বাস থেকে এক প্রকাশ তড়িঘড়িতে নেমে পড়ে সেরিন,নিশাত। তাদের পেছন দিয়ে শুভ্র ও আস্তে ধীরে নামে। বাস থেকে নেমে বাড়ীর জন্য সিএনজি ধরবে দু’জন। তখন আবার শুভ্র ও আসে সিএনজি স্টেশনে। সেরিন তাকে দেখে আমতাআমতা করে বলে,

‘আসসালামু আলাইকুম স্যার। আপনি এখানে?’

শুভ্র একবার সেরিনের দিকে তাকায়। অন্য দিকে নজর সরিয়ে নেয়। সেরিনের ঠোঁটের কোণের কৃত্রিম হাসি মূহুর্তে ফ্যাকাসে হয়ে যায়। সেরিন আবারো বলে,

‘স্যার আমরা আমরা আসি তাহলে।’

কথাটা বলে নিশাতের হাত ধরে সিএনজিতে উঠে পড়ে। সেরিনের এমন ভয় আর্থর চমকানো আবার তারা কুমিল্লায় একসাথে!ব্যপারটা শুভ্রকে ভাবাচ্ছে। এমনটা নয়তো সেরিন নিজেই আর্থর সাথে প্রেম করছে শশীর নাম বেচে?

#চলবে

(মাথা ব্যথা, এলার্জীর জন্য চোখে প্রব্লেম তবুও লিখতে হয়। 😑 লেখতে বসলে আপনাদের হাজারটা অভিযোগের নোটিফিকেশন। সেগুলো চেক দিতে,দিতে সময় কোনদিক দিয়ে চলে যায় টের পাইনা। আমার পাঠক পাঠিকারা গল্পটাকে এতো ভালোবাসে কী বলবো।🥹❤️‍🩹)

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here