হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|১১| #শার্লিন_হাসান

0
610

#হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|১১|
#শার্লিন_হাসান

পিটি শেষ হতে শুভ্র ফাস্ট ইয়ারের ক্লাসে যায়। আকাশ, জুম্মানের খোঁজ করে। জানতে পারে তারা কেউই উপস্থিত নেই। শুভ্র সেসব আর মাথায় নেয়নি। ফিজিক্স ক্লাসটা সেই করায়। সে কিছুটা প্রশ্ন দেয় সেগুলোর উত্তর সবাইকে লিখতে বলে। শুভ্র পুরো ক্লাস ঘুরে,ঘুরে সবার হ্যান্ড রাইটিং চেক করে। সেরিনের কাছে এসে বলে,
‘তোমার হাতে লেখার একটা পৃষ্ঠা আমায় দিও তো।’

‘আমার রাইটিং বা’জে। এটা দিয়ে কী করবেন?’

‘না একটা দরকার ছিলো।’

সেরিন মাথা নাড়িয়ে হ্যান্ড রাইটিংয়ের একটা পেজ শুভ্রকে দেয়। শুভ্র সেটা নিজের প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে নেয়।

তাদের ফাস্ট সেমিস্টার এক্সামের ঘোষণা ও দিয়ে দেয় শুভ্র। ক্লাস টাইম শেষের পথে। হাতে দশমিনিট সময় রেখে শুভ্র গম্ভীর কন্ঠে বলে,

‘সেরিন পাটওয়ারী মিশাত। আমাদেরকে একটা গান গেয়ে শোনাবে।’

শুভ্রর কথায় সেরিন বোকা বনে যায়। অনেকেই অবাক! যেই শুভ্র ক্লাসে পড়া ব্যতীত অন্য কোন বিষয় এলাউ করে না সেখানে গান। তাও নিজে থেকে! ভাবার বিষয়। নিশাতের ধাক্কাধাক্কি তে সেরিন উঠে সামনে যায়। শুভ্রর ঠোঁটের কোণে হাসি। সেরিন আড়চোখে শুভ্রকে দেখছে। অনেকেই এক্সাইটেড সেরিনের কন্ঠে গান শোনার জন্য। তবে কোন গানটা গাইবে সেরিন কনফিউজড।

‘কী গান গাইবো স্যার?’

‘তোমার যেটা মন চায়।’

‘আোতত গান গাইতে মন চাচ্ছে না।’

শুভ্র চোখ গরম করে তাকায়। সেরিন নজর সরিয়ে নিয়ে বলে,
‘ পল্লিগীতি?’

‘না।’
সেরিন গায়,

‘ঠিক এমন এভাবে
তুই থেকে যা স্বভাবে।
আমি বুঝেছি ক্ষতি নেই।
আর তুই ছাড়া গতি নেই।
ছুঁয়ে দে আঙুল,
ফুঁটে যাবে ফুল, ভিজে যাবে গা,
কথা দেয়া থাক
গেলে যাবি চোখের বাইরে না।
ছুঁয়ে দে আঙুল (২)

শুভ্র মনোযোগ সহকারে গান শোনে। সেরিনের ভয়েসটা তার ভীষণ প্রিয় হয়ে উঠেছে অল্প দিনে। সেরিনকে ধন্যবাদ দেয় শুভ্র। অতঃপর বিদায় নিয়ে চলে আসে ক্লাস রুম থেকে। তড়িঘড়ি নিজের রুমে গিয়ে চিঠি আর সেরিনের হ্যান্ড রাইটিং মিলায়। অনেকটা পার্থক্য খুঁজে পায়। কিন্তু কীভাবে সম্ভব? এই বাবুর আম্মুকে খুঁজে বের না করা অব্দি শুভ্রর শান্তি হবে না। শুভ্র ঠিক করে তার রুমের সামনের করিডোরে সিসি ক্যামেরা লাগাবে। যেই ভাবা সেই কল লাগায়। আগামী কালকের মধ্যে তার সিসিক্যামরা চাই করিডোরে।

*******

সন্ধ্যা বেলায় চৌধুরী পরিবারে বৈঠক বসে। সেই শুভ্রর বিয়ে নিয়েই বৈঠক। শুভ্রকে জিজ্ঞেস করা হয় তার পছন্দের কেউ আছে কীনা। শুভ্র লজ্জা শরম ত্যাগ করে বলে দেয়, ‘আছে কেউ একজন।’ আর্থ তার ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে রয়। আয়মান চৌধুরী নিজেও বাকরুদ্ধ। এই রাগী, বদমেজাজির ও গার্লফ্রেন্ড আছে? অষ্টম আশ্চর্যের বিষয়। যেই মেয়েটা শুভ্রর সাথে প্রেম করে সে নিশ্চয়ই শান্তি শিষ্ট, ভ্দ্র,নম্র হবে। সবাই এটাই ধরে নিয়েছে। তখন আয়মান চৌধুরী বলেন,
‘মেয়েটা ছবি আছে তোমার কাছে?’

শুভ্র শুধায়,
‘ছবি নেই তবে নাম আছে।’

‘নামটাই বলো?’

‘ওর নাম পিচ্চি।’

শুভ্রর কথায় আর্থ বলে,
‘ভাগ্যিস পিচ্চি এঞ্জেল সাদিয়া না।’

শুভ্র রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আর্থর দিকে। হাতে থাকে কুশন দিয়ে পিঠে বারি মেরে বলে,
‘ভাগ্যিস পিচ্চি জমজ বোন না। আমি আবার শালির সাথে প্রেম করি না। আর না শালি আমায় ইমপ্রেস করে তার বোনকে দেয়।’

শুভ্রর কথার আগামাথা কেউই কিছু বুঝতে পারেনি। তবে শুভ্রর বিয়েটা খুব শীঘ্রই দিতে চাচ্ছে সবাই। তখন আর্থ ও লজ্জা শরম ত্যাগ করে বলে ফেলে,
‘আমার অনেক শখ ভাইয়ার সাথে বিয়ে করার। একসাথে বিয়ে করার আরকী।’

তখন আয়মান চৌধুরী বলেন,
‘তোহ এটা আগে বললেই পারতে।’

‘আসলে লজ্জা লাগছিলো।’

‘তোর আবার লজ্জা!’

শুভ্র বলে। আর্থ লজ্জা-লজ্জা ভাব করে মাথা নাড়ায়। শুভ্র তাকে নিয়ে নিজের রুমের দিকে হাঁটা ধরে। কাঁধে হাত রেখে বলে,
‘আচ্ছা শশীর ছোট বোনের এইজ কত হবে?’

‘আমি কীভাবে জানবো? আমি কী ওর জন্মের দিন ওদের বাড়ীতে গিয়ে বসে ছিলাম?’

‘আনুমানিক করে বলনা?’

‘এই পনেরো-ষোলো হবে।’

‘তোর মাথা। ওর বয়স আঠারো।’

‘তো জানলে আমায় জিজ্ঞেস করলি কেন?’

‘তোর তো আবার এসবে ভালো আইডিয়া কারণ সারাদিন মেয়ে মানুষের আশেপাশে থাকা লাগে।’

‘মেয়ে মানুষের আশেপাশে থাকলেও আমি লয়্যাল। তোমার মতো এঞ্জেল সাদিয়া নামের আইডি থেকে মেসেজ আসলে গলে যাই না। একবার কী জেনো? হ্যাঁ এঞ্জেল সাদিয়া ফেইক আইডির প্রেমে পড়ে গেলা।’

‘বা’জে কথা ছাড়বি? আমি এখনো কারোর প্রেমে পড়িনি।’

‘তাহলে তোমার পছন্দ করা মানুষ আসলো কী করে?’

‘না,না সেসব কিছু না।’

আর্থ শুভ্রর মাথা গাট্টি মেরে নিজের রুমে চলে যায়। সাত পাঁচ না ভেবে শশীকে কল দেয়। এখন সে শশীর সাথে কিছুক্ষণ কথা বলবে।

*********

দেখতে,দেখতে সেরিনের প্রথম সেমিস্টার এক্সাম শুরু হয়ে যায়। সময়টা পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ততায় গেলেও নিজেকে ফ্রেশ রাখার জন্য সেরিন গান গায়। ভিডিও বানায়! শশীর ও ব্যস্ততা বেড়ে গেছে সে আর নিয়মিত নাচের ভিডিও আপলোড দেয় না। সন্ধ্যার দিকে সেরিন টেবিলে বসে পড়ছিলো। তখন শশী আসে হাতে কতগুলো কাগজ। সেরিন তা দেখে ব্রু কুঁচকায়। অতঃপর বলে,
‘এগুলো দিয়ে কী করবি?’

‘এগুলো আমি পেয়েছিলাম সেদিন। কোথায় পেয়েছি মনে পড়ছে না। টেবিলের উপর রাখা ছিলো তাই তোকে দিতে এলাম। তোর কাজে লাগতে পারে।’

‘আমার কাজ নেই এসবে। তুমি নিয়ে মাহিকে দাও। ও নিশাতকে প্রেমপত্র দিতে পারবে।’

‘তুই দে না কাউকে?’

‘এসবে আমার ইন্টারেস্ট নেই। কিসের প্রেম হুম? তুমি নিজে করো দেখে আমাকেও করতে হবে? প্রেম করা ভালো না এতে চরিত্র ন’ষ্ট হয়।’

‘এই শোন যতবড় মাথা নেই ততবড় ভাবনা। প্রেম করলে কিসের চরিত্র ন’ষ্ট হয়? তোর মাথায় আস্ত পঁচা আলু ছাড়া আর কিছু নেই। আর ব্রেইন যেটা? সেটা হাঁটুতে আছে।’

‘সেম ডায়লগ! বাহ কী মিল ভাসুরের সাথে।’

‘ভাসুরটা আবার কে?’

‘শুভ্র স্যার! সেম কথা বলে।’

‘ভুল কিছু বলেনা। সে তো মানুষ চেনে এক দেখায় বলে দিতে পারে কে কেমন।’

‘ওর হয়ে গুনগান গাইছিস যে। সবাই আমার শ’ত্রু কেউ ভালোবাসে না আমায়।’

‘একটা খুশির খবর শুনেছিস?’

‘কী?’

‘ফুফির ছেলে বিডি আসবে প্রায় আট বছর পর। অক্ষর ভাইয়া।’

‘তো নাচ? উনি আসলে আমাদের কী? আর বিয়েশাদির কথা উঠলে তোকেই দেখবে ফুফি। সো এতো লাফালাফির কিছু নেই। নেতাকে বলে বিয়েশাদি সেরে নে।’

‘অক্ষর ভাইয়াকে তুই বিয়ে করবি।’

‘প্লিজ যা বইন এখান থেকে। অক্ষর নিরক্ষর বা’লকে আমি বিয়ে করতে পারবো না।’

শশী আর কথা বাড়ায়নি। সেরিনের কথাটা আসলেই ভাবার বিষয়। সে তো একবছরের জুনিয়র। চাপ আসলে তার উপরই আসবে। কিন্তু আর্থর কথা বললে কেউ কিছু বলবে না। তখন জামেলা যাবে সেরিনের উপর।

শশী যেতে সেরিন রঙিন পেপারের দিকে তাকায়। সেগুলো যত্ন সহকারে ড্রয়ারে রেখে দেয়। এখন অক্ষর নামের ব্যক্তিকে নিয়ে তার চিন্তা। তার ফুফি একটা তো আছেই। সেরিন,শশী। শশী,সেরিন। মনে হয় দুনিয়ায় আর কোন মেয়ে নেই।

শশী তার ফুফির ব্যপার টা আর্থর কাছে শেয়ার করতে আর্থ টু শুভ্রর কনেও পৌঁছে যায় অক্ষর দেশে আসার খবর। শুভ্র শুনেছে অক্ষরের জন্য শশী বা সেরিন একজনকে তার ফুফি ছেলের বউ করেই ছাড়বে। কিন্তু শুভ্র বুঝতে পারছে না কীভাবে কী করবে। একদিকে সেরিনের সামনে কত ভাব নিয়ে চলাফেরা। সেই মেয়ে যদি শোনে শুভ্র তার উপর কাত হয়ে আছে তো এমনিতে চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করে তখন শুভ্রর বউ,বাচ্চা সহ টেনেটুনে এনে বকতে থাকবে। আরেকদিকে সেরিন তার স্টুডেন্ট। বিষয়টা তার কাছেও লজ্জা,লজ্জা লাগছে। শুভ্র ভেবে পায়না কীভাবে কী করবে। তাই তো সে তার মাথা মোটা ভাই আর্থর কাছে গেলো। দু’জনের ফিউচারের উপর একজন নজর দিয়ে বসে আছে।

#চলবে

(ব্যস্ততার জন্য পার্ট ছোট্ হয়েছে দুঃখিত।😐)

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here