শুধু_তোমায়_ভালোবেসে #পর্ব_০৪ #সাদিয়া_রহমান_হাফসা

0
491

#শুধু_তোমায়_ভালোবেসে
#পর্ব_০৪
#সাদিয়া_রহমান_হাফসা

____________________

আচমকা গাড়ির হার্ড ব্রেক চাপায় তন্দ্রাঘোরে বসে থাকা রাইদাহ সামনে ঝুঁকে পড়ে। গাড়ির ডেস্কের সাথে মাথায় ধাক্কা খাওয়ার আগেই আফসান তড়িৎ বেগে নিজের হাত বোনের কপালের নিচে রেখে দেয়। চিন্তিত স্বরে জিজ্ঞেস করে,

– বনু ব্যথা পেয়েছিস?

রাইদাহ মাথা দুই দিকে নেড়ে বললো,

– না ব্রো ঠিক আছি। কিন্তু তুই এতো জোরে ব্রেক চাপলি কেন?

আফসান জবাব দেওয়ার আগেই তাদের গাড়ির জানালায় কেউ টোকা মারে। যাকে দেখা মাত্র নিমিষেই রাইদাহ চুপসে যায়। আফসান বোনকে একবার দেখে নিয়ে জানালার কাচ খুলে বিরক্ত সুরে জিজ্ঞেস করলো,

– কি ব্যাপার? কি চাই? মাঝরাস্তায় চলতি গাড়ির সামনে এভাবে গাড়ি দাঁড় করিয়ে বিরক্ত করার মানে কি?

মীর জানালায় ঝুঁকে রাইদাহ-র দিকে ইশারা করে ভাবলেশহীন হয়ে বললো,

– আমার বউকে চাই। ভালোয় ভালোয় আমায় আমার বউ দিয়ে দাও বিরক্ত করবো না।

– এখানে কারো বউ নেই, যে আছে সে আমার বোন। সো ব্রাদার রাস্তা ছাড়ো।

মীর চোয়াল শক্ত করে আফসানকে চোখ রাঙিয়ে বললো,

– দেখ শালা, একেতো আমার বউরে এক সপ্তাহের বেশি সময় তোদের বাড়িতে রেখে এমনিতেই অনেক পাপ কামাই করছিস আর করিস না। পাপে ধ্বংস হয়ে যাবি! এ যেমন-তেমন পাপ নাহ্। স্বামীর অনুমতি ব্যতিত স্ত্রীর আলাদা ঘরে থাকাও গোনাহ, সেখানে তোরা দুই শালা আমার বউরে আমার থেকে ৩ মাইল দূরে রাখছিস!

আফসান রেগে বললো,

– প্রথমত আমরা তোমার শালা না, তোমার বউয়ের বড় ভাই হই। অন্তত এই খাতিরে হলেও তো আমারে একটু সম্মান দিতে পারো মীরজাফর ভাই!

মীর আফসানের কাঁধে হাত রেখে বললো,

– আগে আমার বউ ফেরত দে তারপর তোরে সম্মানের চৌবাচ্চাতে চুবিয়ে রাখবো, প্রমিজ।

আফসান মুখ ভেঙচিয়ে গাড়ির স্টিয়ারিং এ হাত রেখে বললো,

– কোনো চুবান-টুবানের নো দরকার। আমার বনু ভাইয়ের বউ দেখবে বলছে। তাই এখন আমি ওরে ভুবনপুরে নিয়ে যাবো। তুমি চাইলে সেখানে থেকে পরে তোমার বউকে নিয়ে যেতে পারো। আমার হ্যাভ নো সমস্যা!

মীর ক্লান্ত চোখে রাইদাহ-র দিকে চাইলো। রাইদাহ মুখ ভেঙচিয়ে অন্যদিকে ঘুরে বসে। বোঝাই যাচ্ছে বউ তার আজ ভীষণ ক্ষেপে আছে। মনেমনে বললো,

– আবহাওয়া এখনো খারাপ। সমুদ্রের তলদেশে নিম্নচাপ হওয়ার আগাম বার্তা দিচ্ছে। আপাতত ঢেউ যেই পথে যাচ্ছে সেই পথেই চলি, পরে না-হয় ঝোপ বুঝে কোপ মারবো।

নিঃশব্দে মীর পেছনের দরজা খুলে গাড়িতে উঠে বসে। আফসানও কথা না বাড়িয়ে আবার গাড়ি স্টার্ট দেয়। একটু পর রাইদাহ লুকিং গ্লাসের দিকে তাকায়। মীর সেদিকেই তাকিয়ে আছে। চশমা ঠিক করে রাইদাহ পানির বোতল নিয়ে মীরের পাশের সিটে ছুড়ে মারে। তৃপ্তির হাসি ফুটে ওঠে মীরের ক্লাম্ত চোখে-মুখে।

|
|

বেলা~০২:৩০

খাবার পর্ব শেষ হলো মাত্র। রাইদাহ, মীর আর আফসানকে নিয়ে রৌদ্র বাইরে নারিকেল পাতার মাদুর বিছিয়ে গল্প করতে বসেছে। আদনানের কিছু ইম্পর্ট্যান্ট কল দেওয়ার আছে। তাই হৈ-হুল্লোড় হচ্ছে বলে ওদের থেকে কিছুটা দূরে চলে যায়। কথা বলতে বলতে সে বাড়ির পেছনের দিকটায় চলে আসে। এদিকটা বেশ সুন্দর। শান বাঁধানো ছোটখাটো একটা পুকুর ঘাট যেখানে ফুঁটে আছে কয়েকগুচ্ছ পদ্মফুল।

✆ – হ্যালো স্যার আপনি শুনতে পাচ্ছেন?

– হ্যাঁ বলো ঈশান।

✆ – তাহলে কি মিটিং টা পোস্টপন করে দেবো?

– সেটাই করো। আসলে হুট করে একটা ফ্যামিলি প্রোগ্রামে আঁটকে গিয়েছি। তুমি বরং মিটিং কালকে হোল্ড ওভার করে দাও।

✆ – এজ ইউর উইশ স্যার। হ্যাভ আ নাইস ডে!

– থ্যাঙ্ক ইউ।

কথা শেষ হওয়ার পর আদনান বাড়ির পেছনের দরজা দিয়েই ঘরে ঢুকে। পেছনের দরজাটা মূলত আরাধনার ঘরের সাথে জুড়ে। ঘরে ঢুকেই দেখতে পায় আরাধনা ফ্লোরে বসে আছে আর নূরী বেগম তাকে খাবার দিচ্ছে। নূরী বেগম চলে যাওয়ার পর আরাধনা খাবার পাত থেকে এক লোকমা খাবার মুখে তুলে নিতে যায় এর আগেই আদনান এসে তার হাত থেকে খাবার ফেলে দিলো। চমকে উঠলো আরাধনা। আদনানের দিকে তাকিয়ে দেখলো সে রেগে একদম রণমুর্তি ধারন করে আছে। এ রাগের মানে না বুঝে পুনরায় খাবার পাতে হাত দিতে নিলে আদনান প্লেটটা তুলে নিয়ে ছুড়ে ফেলে দিলো ঘরের অন্য আরেক প্রান্তে। স্টিলের প্লেটের ঝনঝন আওয়াজ শুনে নূরী বেগম সহ বাড়ির সবাই এ ঘরে চলে আসে।

রৌদ্র ঘরে এসে দেখে আরাধনা দুইপা গুটিয়ে এঁটো হাতে শাড়ির এক প্রান্ত মুঠোবন্দী করে বসে আছে আর তার পাশেই দাড়িয়ে আদনান রাগে ফুঁসছে। আদনানের রাগ সম্পর্কে বহুত ধারণা আছে রৌদ্রের। আর সে এটাও জানে এই রাগের পিছনে নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে। তাই সে চুপ থেকে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করে। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই আদনান এক টানে আরাধনাকে বসা থেকে তুলে দাঁড় করায়। তারপর মেঝে থেকে স্টিলের গ্লাসে রাখা পানি এনে আরাধনার এঁটো হাতে ঢেলে চিৎকার করে বললো,

– তোমার মাঝে কি নূন্যতম ম্যানার্স টুকুও নেই!? এঁটো হাত শাড়িতে মুছছো! বাচ্চা তুমি?

কয়েক মুহুর্ত আগেও যেই আদনান আরাধনাকে মায়ের মতো যত্ন করছিলো সেই একই আদনানের মাঝে এখন বাবা আর দাদির রূপ দেখে শিউরে ওঠে আরাধনা। বোনের আতংক নজর এড়ালো না রৌদ্রের। কিছুটা ধমকেই বললো,

– আদি! আমার বোনের সাথে এভাবে চিৎকার করছিস কেন?

– ওহ্ জাস্ট শাট আপ! আরাধনা আগে শুধু তোর বোন ছিলো কিন্তু এখন ও আমার স্ত্রীও। আদনান সাখাওয়াতের স্ত্রীকে অন্যের উচ্ছিষ্ট খাবার খেতে দেওয়ার স্পর্ধা কি করে হলো তোদের!? অ্যান্সার মি! (অনেক জোরে চিৎকার করে)

আদনানের হুংকারে কেঁপে উঠে নূরী বেগম। রৌদ্র যেন আকাশ থেকে পড়লো। হতভম্ব হয়ে একবার আদনানকে দেখছে তো আরেকবার দাদীকে। কেননা সে এই বিষয়ে মোটেও অবগত ছিলো না। সে তো এটাও জানে না যে তার অনুপস্থিতিতে তার মা আর বোনের প্রতি কি কি অত্যাচার করা হয়েছে, হচ্ছে। সে যেন বিশ্বাস-ই করতে পারছে না তার দাদী এমন বিশ্রি একটা ব্যবহার তার বোনের সাথে করতে পারে। বিস্মিত হয়ে রৌদ্র জিজ্ঞেস করলো,

– দাদী? তুমি তো বললে আরাধনার খিদে পেয়েছে বলে তুমি নিজের হাতে ওকে খাইয়ে দিয়েছো! এই তোমার খাইয়ে দেওয়া? আমাদের ফেলে দেওয়া খাবার ওকে খাইয়েছ!

নূরী বেগম এদিক-ওদিক চেয়ে কাঁদোকাঁদো সুরে বললো,

– ও রৌদ্র ভাই! মিছা কথা কইতাছে এই ছেমড়া। আরু-ই এইগুলা খাইতে চাইছিলো তাই আমি..

– এনাফ ইজ এনাফ!

রাগান্বিত আদনানের রক্তিম চোখের দিকে চেয়ে আর কোনো শব্দ বের হলো না বৃদ্ধা নূরীর কন্ঠস্বর থেকে। রৌদ্র আদনানের কাছে এগিয়ে গিয়ে বললো,

– আদি বিশ্বাস কর আমি সত্যিই জানতাম নাহ্!

দুই কদম পিছিয়ে পকেটে দুই হাত গুঁজে টানটান হয়ে দাঁড়ালো আদনান। নূরী বেগমের দিকে এক পলক তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিয়ে রৌদ্রের দিকে ফিরে জোর গলায় বললো,

– পাস্ট ইজ পাস্ট রৌদ্র। অতীত নিয়ে কথা বলা না তুই পছন্দ করিস না আমি। ইভেন এই মুহুর্তে যা হলো সেই বিষয়েও কোনো কথা বলতে আমি ইন্টারেস্টেড নই। আমি একটা ডিসিশন নিয়েছি সেটা সবাইকে জানিয়ে এখান থেকে চলে যাবো।

রৌদ্র দৃঢ় আওয়াজে বললো,

– কি ডিসিশন?

– আমি চলে যাচ্ছি। একা না সাথে আরাধনাও যাবে। কয়েকদিনের জন্যে না সারাজীবনের জন্য।

– ভুলে যাস না আদি আরাধনা আমার বোন। ওর যেকোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আমার আছে।

রৌদ্রের কথার মাঝেই আদনান হাত তালি দিয়ে বললো,

– গলা ফাটিয়ে যাকে বোন বলছিস সেই বোনকে আগলে রাখতে জানিস!? এতদিন নাহয় ফুপ্পি ছিলো কিন্তু এখন তো নেই। এখন তোর সবচাইতে বড় দায়িত্ব হলো তোর বোনকে আগলে রাখা, সেটা কি তুই করেছিস?

নিশ্চুপ হয়ে গেলো রৌদ্র। আদনান রাইদাহ-র দিকে আঙুল তাক করে বললো,

– ঐ যে আমাদের দুই ভাইয়ের একমাত্র বোন। আমার কথা বাদ-ই দিলাম। আফসান যাকে কেয়ারলেস, ইমম্যাচুউর ছেলে বলে জানিস বোনের বেলায় সে হয়ে যায় দুনিয়ার সবচাইতে বেস্ট কেয়ারিং ভাই। রাইদাহ-র দিকে যদি কেউ খারাপ চোখে করে তাকায় আমার আগে আফসান তার হাল খারাপ করে দিবে। পরে আমার কাছে এসে বলবে, “ভাই একটা দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলছি, এবারের মতো বাঁচিয়ে দে।”

শেষ কথাটা বলে হেসে ফেলে আদনান। রাইদাহ আলতো হেসে আফসানের হাত দুইহাতে জড়িয়ে ধরলো। আফসান তো ভাইয়ের মুখে নিজের প্রশংসা শুনে খুশিতে গদগদ। রৌদ্রের বুকের উপর তর্জনী আঙুল রেখে আদনান আবার বললো,

– আর তুই হলি আরেক ভাই যে জানেই না তার বোনের শীত নিবারণের জন্যে কোনো গরম পোশাক আছে কি না। কি জানিস নাকি?

রৌদ্রের চোখ টলমল করছে। আদনানের হাতদুটো ধরে কান্নামিশ্রিত গলায় বললো,

– বিশ্বাস কর ভাই! আমি সত্যিই এসবের কিছুই জানতাম না। তুইও তো ভাই! কোনো ভাই কি জেনেশুনে বোনকে কষ্ট দিতে পারে বল?

– কেন জানতি না? পড়াশোনার জন্যে শহরে থাকিস তাই? তোর বোন কেন পড়াশোনা করে না রৌদ্র! তোর মতো আরাধনাও তো এই বাড়ির-ই মেয়ে। পড়াশোনা তো দূর আরাধনার মাঝে কোনো সামাজিকতা, ভদ্রতা-বিনয়, আদব-কায়দা ইত্যাদি কোনো কিচ্ছুটি নেই! কেন নেই!?

রৌদ্র চোখ বন্ধ করে বললো,

– কারণ আরাধনা মেন্টালি সিক। ছোটবেলা থেকেই ওর বুদ্ধি শক্তি তুলনামূলক অনেক কম তাই ও এসব কিছুই পারেনা। বাবা আর দাদী চিকিৎসা করাতে চেয়েছিলো কিন্তু মা করাতে দেয়নি। আরাধনার এই রোগ মা মানতে নারাজ ছিলো।

বিস্ময়ে রাইদাহ মুখে হাত চেপে ধরলো। আদনান নিজেও হতবিহ্বল হয়ে গেলো রৌদ্রের মুখে এমন জবাব শুনে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে রৌদ্রের কাঁধে হাত রাখলো। রৌদ্র অশ্রুভেজা চোখ খুলে দেখতে পায় আদনানের শান্ত শীতল চাহনি। অত্যন্ত স্বাভাবিক ভাবে আদনান বললো,

– আরাধনা আমার সেই অমূল্য সম্পদ যাকে খোদা তায়া’লা তোদের কাছে রেখেছিল আমানত সরূপ। কিন্তু তোরা সেই আমানতের খেয়ানত করেছিস। আমার সম্পদকে তোরা ভেঙে গুড়িয়ে একদম মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছিস আর আজ আমার হাতে ফেরত দিচ্ছিস আরাধনার ধ্বংসাবশেষ! ব্যাপার নাহ্, এতদিন আমার কাছে ছিলো না এখন থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমার কাছেই থাকবে। আমার সম্পদ আমি পুনরায় জুড়ে নেবো। আমার মনমতো গড়ে নেব।

আর এক মুহূর্ত নষ্ট না করে আদনান আরাধনার হাত শক্ত করে ধরে বেরিয়ে যায় ঘর থেকে। ওদের পিছুপিছু আফসান, রাইদাহ-মীরও চলে গেলো।

শীতের বিকাল। সূয্যিমামা এখনি লুকোচুরি খেলা শুরু করে দিয়েছে। খোলা আকাশে ডানা মিলে উড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে ঝাঁক-ঝাঁক জানা অজানা অতিথি পাখিরা। গেটের পাশের দেওয়ালে কমলা রঙের একজোড়া পাখি বসে আছে। কিন্তু পাখি দুটোর মাঝে অল্প কিছু দূরত্ব। হয়তো তাদের অভিমান পর্ব চলছে। একটা পাখি যতই দূরে সরে যাচ্ছে অপর পাখিটা ততই সেই দূরত্ব কমানোর তোড়জোড় চালাচ্ছে। তাদের এই খুনসুটি দেখে পুলকিত হয়ে উঠে আরাধনার মন। গেট দিয়ে বেরোনোর সময় কৃষ্ণচূড়ার পাপড়ি ঝড়ে শরীর ছুঁয়ে পড়ে মাটিতে।

আদনানকে দেখেই গার্ড’স গাড়ির চারপাশে ঘেরাও হয়ে দাঁড়ায়। পথচারীদের অনেকেই হা হয়ে চেয়ে আছে। নামী-দামী মানুষকে যেখানে-সেখানে দেখলে যেকেউই অবাক হবে। কিন্তু এত মানুষের বিস্মিত দৃষ্টি যার মধ্যে আবদ্ধ সেই আদনান এখন বিরক্ত, চরম বিরক্ত। সে এক হাতে নিজের হবু স্ত্রীর হাত ধরে হনহন করে হেঁটে যাচ্ছে গাড়ির দিকে।

– তুমিই কি শেহজাদা?

থমকে গেলো আদনান। সবেমাত্র গাড়ির দরজা খুলতে নিয়েছিলো এমন সময় নারী কন্ঠের অদ্ভুত প্রশ্ন শুনে গাড়ির হ্যান্ডেল থেকে হাত সরিয়ে নিলো সে। ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় জানান দিলো এ অচেনা কন্ঠস্বরের অধিকারীনী তার অতি নিকটেই আছে। চোখ বন্ধ করে পিছনে ফিরে আদনান। চোখের পাতা খুলেই সোজা দৃষ্টিপাত করে প্রশ্নকারীনীর চোখে। আরাধনা পুনরায় প্রশ্ন করলো,

– তুমিই কি মায়ের বলা সেই শেহজাদা?

শুষ্ক ঢোক গিললো আদনান। লক্ষ্য করলো আফসান, রাইদাহ-মীরও উৎসুক হয়ে ওদের দেখছে। পেছনে কিছুটা দূরে রৌদ্রও আছে। আরাধনার প্রশ্নবিদ্ধ চাহনিতে তাকিয়ে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে আদনান কম্পিত কণ্ঠে বললো,

– শেহজাদা!

– তুমিই শেহজাদা? মা বলেছিলো তো!

– ক..কি বলেছিলো?

– একজন আমার চোখকে আকাশ দেখার অনুমতি দেবে, আমার খোলা চুলকে হাওয়া উড়লে বকাঝকা করবে না, আমার দুই হাতকে ফুল ছুঁয়ে দেখতে দেবে, আমাকে কথা বলতে দেবে, হাসতে দেবে! মা বলেছিলো সে শেহজাদা। তুমিই তো আমার সব চাওয়া একসাথে পূরণ করে ফেললে! তুমিই কি শেহজাদা?

আরাধনার বলা কোনো কথা আদৌও আদনানের কর্ণ গহ্বরে পৌঁছেছে কি না কে জানে! সে তো নিষ্পলক চোখে চেয়ে আরাধনাকে দেখতে ব্যস্ত। আজই প্রথম কথা বলছে যে! আর তা-ও ‘তুমি’ বলে ডেকে! কতটা আপন এই সম্বোধন! বারবার ঢোক গিলছে আদনান। নিষ্প্রাণ আরাধনার চঞ্চল চোখ, কথা বলার ভঙ্গি, চোখেমুখে আদনান কে? তা জানার আকুলতা সবকিছু খুঁটিয়ে দুচোখ ভরে দেখছে আদনান।

– তুমিই শেহজাদা??

আরাধনা দুইহাত ধরে ঝাঁকিয়ে পুনরায় একই প্রশ্ন করতেই ঘোর ভাঙে আদনানের কিন্তু মুখে বুলি ফুটে না। রাইদাহ হেঁসে আরাধনার কাঁধে হাত রেখে নরম স্বরে বললো,

– হ্যাঁ ভাবি, ইনিই তোমার শেহজাদা। এখন থেকে তুমি তোমার শেহজাদার রাজ্যেই থাকবে বুঝলে!

– তোমার থেকে যদি আমায় বাবা আর দাদী নিতে আসে তখন?

আরাধনার দ্বিতীয় প্রশ্নে আদনানের নিঃশ্বাস ভারী হয়ে এলো। উওর না পেয়ে আরাধনা আবারও আদনানের পাঞ্জাবির হাতের অংশ টেনে বাচ্চাদের মতো বললো,

– কথা বলছো না কেন? তোমাকেও কি কথা বললে মারে?

– উপরওয়ালা ছাড়া তোমাকে কেউ আমার থেকে নিয়ে যেতে পারবে নাহ্ আরাধনা।

– কেন?

নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে মুখোমুখি হয়ে দাড়িয়ে আরাধনার হাত আরও শক্ত করে ধরে আদনান বললো,

– কারণ তুমি আমার শরীরের অর্ধেক অংশ। আমার অর্ধাঙ্গিনী তুমি। তোমাকে নিতে হলে আমাকেও নিতে হবে আর আমি থাকতে তোমার ঠোঁট থেকে ঐ হাসি হারাবে না। কোনোদিনও না, আমি হারাতে দেবো না। খোদা তায়া’লা যেন আমাদের একসাথেই তার কাছে ডাকেন!

হাসি ফুটে ওঠে রৌদ্রের মুখে। চোখের জল মুছে দূর থেকে দাঁড়িয়ে বললো,

– আমার বোনটাকে তুই ছাড়া কেউ আগলে রাখতে পারবে না ভাই। তোর আমানত যত্নে রাখতে ব্যর্থ আমায় মাফ করে দিস।



চলবে…

(শব্দসংখ্যা~১৯০৬। কেমন হয়েছে আজকের পর্ব। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন চাইলে ধরিয়েও দিবেন। হ্যাপি রিডিং❤️🤍)

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here