মায়াবিনী_(২) #Ayrah_Rahman #পর্ব_১৮

0
806

#মায়াবিনী_(২)
#Ayrah_Rahman
#পর্ব_১৮
______________________________

সারাদিনের ব্যস্ততা শেষে রিসোর্টে ফিরলো আরুহী। শরীর যেন আর চলছেই না তার। কোন রকমে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে হাতরে ড্রিম লাইট জালিয়েই কোন দিকে না তাকিয়েই টাওয়াল আর লং টি শার্ট আর টাওজার নিয়ে সাওয়ারে ঢুকলো। শরীর থেকে ঘামের বিচ্ছিরি গন্ধ বের হচ্ছে যা তে নিজের ই বিরক্ত লাগছে।

প্রায় আধা ঘণ্টা যাবত সাওয়ার নেওয়ার পর ই বের হলো সে।

চুল মুছতে মুছতে বের হলো, হঠাৎ ই আরুহীর মনে হতে লাগলো, সে ছাড়াও ঘরে আরোও কেউ আছে, বডি স্মেল হোক কিংবা পারফিউম এর স্মেল, কিন্তু কোন না কোন কিছুর স্মেল সে ঠিক ই পাচ্ছে।

সতর্ক দৃষ্টিতে একবার চারপাশে নজর বুলালো কিন্তু কাউকেই পেলো না।

লাইট অন করলো সে,
কিন্তু নাহ্, রুমের মধ্যে কেউই নেই। কিন্তু স্মেল টা আছে এবং খুব চেনা স্মেল এটা আরুহীর কাছে।

আরুহী বেলকনির দিকে এগুলো। কেন জানি মনে হচ্ছে কেউ থাকলে ওখানেই থাকবে!

আরুহী যে ভয় পাচ্ছে ব্যপার টা কিন্তু এমন না, তার সন্দেহ হচ্ছে, এতো সাহস কোন শত্রুর নেই যে সয়ং আরুহী চৌধুরীর অনুমতি ছাড়া তার রুমে ঢুকবে।

আরুহী বেলকনির দিকে এগুলো,

বেলকনির দরজায় দাঁড়িয়ে খেয়াল হলো কেউ একজন বেলকনির একদম কিনারে পকেটে হাত গুজে অপর দিকে ফিরে দাঁড়িয়ে আছে। অবয়ব দেখে এটা স্পষ্ট যে এ কোন ছেলে আর ছেলেটার অবয়ব টা ও আরুহীর চেনা।

আরুহী অবাক হলো বেশশ, তবুও নিশ্চিত হবার জন্য ডাকলো,

” কে ওখানে? ”

ছেলেটার একদম ই নড়চড় নেই, আরুহী খানিকটা এগিয়ে গেলো,

” কে ওখানে? কথা বলছেন না কেন? ”

ছেলেটা এবার পিছনে ঘুরে তাকালো, হালকা আলোই মুখ স্পষ্ট। জ্বলজ্বল করতে থাকা চোখ দুটো বেশ লাল হয়ে আছে যা দেখে সচরাচর ভয় পাওয়ার ই মতো, চুল গুলো উষ্কখুষ্ক, বোঝায় যাচ্ছে গত সপ্তাহ খানেক ধরে চুলে চিরুনি চালানো হয় না। শার্টের উপরের কিছু বোতাম খোলা। মুখে গাম্ভীর্য ভাব স্পষ্ট।

আরুহী চোখ ছোট ছোট করে বিরবির করে বলল,

” আরুশ ভাই! এই পাগল এখানে কেন? আর কিভাবে ই ঢুকলো, চাবি তো ছিলো আমার কাছে!

কিছু একটা ভেবে,

যাক গেএএ এই পাগলের ধারা অসম্ভব কিছুই না! ”

কথা গুলো বলেই গলা পরিষ্কার করে এগিয়ে যেতে যেতে বলল,

” কি ব্যাপার মিস্টার খান? আপনি এখানে কেন? আপনার হসপিটাল রেখে এখানে কি করছেন? তার উপর একজন অবিবাহিত মেয়ের রুমে? এটা কোন ধরনের সভ্যতা? ”

আরুশ এক দৃষ্টিতে আরুহীর দিকে ই তাকিয়ে আছে, কোন কথায় সে বলছে না! যেন কথা বলাটা ভুলেই গেছে এক মূহুর্তের জন্য।

” কি হলো? এমন করে তাকিয়ে আছেন যেন জীবনে কোন দিন মেয়ে মানুষ দেখেন নি! আপনি একজন শিক্ষিত ডাক্তার মানুষ হয়ে আইনের লঙ্ঘন করা টা কি ঠিক করলেন আরুশ খান? বলেন এটা কোন ধরনের ভদ্রতা? ”

আরুশ মুখ খুলল, আরুহীর দিকে এক তাকিয়ে ধীরে ধীরে বলল,

” দেখছি.. মেয়ে মানুষ তো দেখেছি অনেক, কিন্তু এমন কঠিন ধাতু দিয়ে তৈরি মেয়ে মানুষ দেখি নি কখনো, তাই দেখছি ”

আরুহী হাসলো,
লাফ দিয়ে বেলকনির রেলিঙের উপর চেপে বসে হাত ঝাড়তে ঝাড়তে বলল,

” হুমম ঠিক ই বলেছেন, কিন্তু ধাতু টা এতো কঠিন ছিলো না! আস্তে আস্তে হয়েছে! ”

আরুশ খানিকটা এগিয়ে গেলো আরুহীর দিকে, চোখে চোখ রেখে বলল,

” আরু, ভালোবাসিস আমায়? ”

আরুহী খানিকক্ষণ চুপ করে আরুশের দিকে তাকিয়ে হুট করে ই শব্দ করে হেসে উঠলো, হাসতে হাসতে বলল,

” ভালোবাসা? সেটা আবার কি জিনিস? এটা কি খায় না মাথায় দেয়? ”

আরুশ আরোও খানিকটা এগিয়ে গেলো আরুহীর দিকে, আরুহীর গালে হাত নিবে ওমনি আরুহী পিছনে চলে যায়,

” নোও আরুশ খান, কাজ টা আপনি করবেন না! আই ডোন্ট লাইক দিস! ”

আরুশ হাত সরিয়ে আনলো, কাতর কন্ঠে বলল,

” আরুওও বলনা! ভালোবাসিস আমায়? এতো পাথর হোস না পাখি! একটা বার ক্ষমা করে দে না পাখি! ”

আরুহী আবারো হাসলো, যেন কথা গুলো তার কাছে জোক্স মনে হচ্ছে,

হাসি থামিয়ে বলল,

” আরুহী চৌধুরী ভালোবাসতে ভুলে গেছে আরুশ খান!এক টা সময় ছিলো আরুহী চৌধুরী মন প্রান দিয়ে এক জনকেই ভালোবাসতো, কিন্তু সেটা আজ শুধু ই অতীত! সে এখন আর কাউকে ভালেবাসে না আর রইলো ক্ষমা! হাসালেন আমায়! আরুহীর গুছিয়ে রাখা শব্দ ভান্ডারে ওই একটা শব্দের ই শর্ট ” ক্ষমা ” ওটা আর এড করার ইচ্ছে হয় না। আরুহী ক্ষমা করতে জানে না মিস্টার খান! ”

” জানেন তো আরুশ খান, ছোট বেলায় পড়েছিলাম, অল্প শোকে কাতর আর অধিক শোকে পাথর। কথা টা বেশ ভালো লাগতো আমার। ছোট বেলা থেকে ই আমি বেশশ আদরের ছিলাম। আহ্লাদী ছিলাম বেশ। বাবা তো চাওয়ার আগেই সব দিয়ে দিতো, আর আম্মু ! সে তো সারা দুনিয়ায় কাছে একজন শক্ত মনের মানুষ হলেও আমার কাছে সে আমার মতোই বাচ্চা, আমি জেদ করতাম আম্মু ও জেদ করতো, কিন্তু কি বলেন তো জেদ করতে করতে, একসময় আমি বেশ এক রোখা হয়ে গেলাম, আমার মুখ থেকে একবার যা বের হবে শত কষ্ট হলেও আমি সেটাই করতাম। আমি সেটাই করতাম যেটা আমার পছন্দ।

কিছুটা থেমে..

” আমার এই আদরের মাঝে একটা নাম ছিলো বেশ আতঙ্কের। আরুওওশ খান, গম্ভীর একটা মানুষ, ভয় পেতাম আমি তাকে, অনেক ভয় পেতাম, একদম জমের মতো। তবে যখন ধীরে ধীরে বড় হতে লাগলাম, এই ভয় টা যে কখন ভালোবাসায় পরিনত হলো বুঝতে ই পারলাম না, তার গাম্ভীর্যতা, কম কথা বলা, আলাদা এ্যাটওটিউড, সব কিছু ই ভালো লাগতো এই ভালো লাগা থেকে ভালোবাসার সৃষ্টি। ”

বলেই হাসলো আরুহী, চোখের কোনে বিন্দু বিন্দু পানি কনা ও জমলো দারুন।

” এই ভালোবাসা টাই ছিলো আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল, ভুল করেছি আমি, যার শাস্তি এখনো পেয়েই যাচ্ছি। ”

আরুহী থামলো, এক পলক আরুশের দিকে তাকিয়ে বলল,

” অপমান করতো আমায় সে, তাই না? জানেন মেয়েদের ধৈর্য শক্তি প্রখর! তারা খুব সহজেই ভেঙে পরে কিন্তু কোন বড় বিপদে তারাই কিন্তু থাকে সবচেয়ে শক্তি শালী। নারী যেমন চুলের খোপা খুব শক্ত করে বেধে রাখতে পারে তেমনি বাতাসে চুল খুলে দিতে ও পারে, এই যে এতো অপমান করতো! তারপর ও বারবার কেন যেতাম বলুন তো তার কাছে? ভালোবাসতাম তো! তাই নিজের আত্মসম্মান সব বিসর্জন দিয়ে ছুটে যেতাম তার কাছে।

জানেন তো আবেগের বয়সে করা ভুল গুলোর মাসুল আমাদের দীর্ঘ জীবন দিতে হয়! সে দিনের পর দিন অপমান করতো, কত ঘৃণ্য কথা শোনাতো আর আমি! আমি হাসি মুখে তা মেনে নিতাম। এক সময় আমার ভালোবাসা জেদে পরিনত হলো। তাকে আমার চাই মানে চাইই! এক রোখা আর বদমেজাজি ছিলাম তো! আর তার তো আমাকে পছন্দ ই ছিলো না। তার জন্য উশৃঙ্খল হলাম, সকলের চোখে খারাপ ও প্রমানিত হলাম কিন্তু তাকে! তাকে তো পেলাম না!

কারণ, সে আমাকে চাই তো না, যেই মা আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু ছিলো সেই মা ই আমাকে রাগের বশে সেদিন অনেক মেরে ছিলো কারণ কি জানেন? কারণ যাকে এতো ভালেবাসেছি সেই নাকি আমার এসব পাগলামির কথা মাকে জানিয়েছে শুধু তাই নয়! তার কোন এক বেস্ট ফ্রেন্ড কে নাকি আমি মেরেছি অথচ সেই মেয়েটাই আমাকে অযথা অপমান করে থাপ্পড় মেরেছিলো সেকথা কেউ গুনাক্ষরেও টের পায় নি, সেদিন তো আমার কোন দোষ ই ছিলো না, অথচ শাস্তি পেলাম এই আমি। সেদিনের কিছু কিছু কথা আর কিছু ঘটনা আড়ালেই রয়ে গেলো! কেউও জানলো না কিছুই!

আরুহী আবারো হাসলো,

“সেদিন জানেন! কেউই আমার সাথে কথা বলে নি! মা ও আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিলো আর বাবা তো দেশেই ছিলো না। অভিমান হলো খুব, মা তো জানতো সে ছাড়া আমার আর কোন বন্ধু নেই, বাড়ির লেন্ড লাইন থেকে ছোট বাবাকে কল করলাম, চলে যাবো আমি এখান থেকে! পুরো দেশ ছেড়ে, আসবো না কখনো। জেদ করেছিলাম সেদিন ছোট বাবার কাছে যেন এই কথা আমি যাওয়ার আগে কেউ না জানে। ছোট বাবাও মেনে নিয়েছিলো আমার কথা। ইমার্জেন্সি ফ্লাইটে ছোট বাবা এসে নিয়ে গিয়েছিলো আমায়। তাও জানত না কেউ। পাড়ি দিলাম ছোট বাবার সাথে অচেনা দেশ, অচেনা শহরের অচেনা মানুষদের উদ্দেশ্যে।

আরুহী থামলো, আরুশের দিকে তাকালো এক পলক, আরুশ দেয়ালো ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে তার ই দিকে,

” আপনাকে কেন বলছি বলুন তো এসব কথা? ”

আরুশ কিছু বলার আগেই, আরুহী হেসে বলল,

” আপনার জানা প্রয়োজন মনে করেছি আমি তাই জানিয়েছি। কারচুপি কোন কিছু ই আমার পছন্দ না, যা হবে সরাসরি ই। আর কেউ আমাকে ভুল বুঝুক সেটা আমি চাই না তাই আজ সবটা ক্লিয়ার করে দিলাম। আশা করি আর কোন প্রশ্ন নেই! ”

আরুশ চুপ করে রইলো, আরুহী ও আর কথা না বাড়িয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে এক পলক আকাশের দিকে তাকালো,

আকাশে অনেক তারা আছে আজ কিন্তু চাঁদ নেই, তবুও সুন্দর লাগছে।

” এখনো কি ভালেবাসিস? ”

আরুহী তাকালো আরুশের দিকে, ধীরে ধীরে বলা কথা টা মনে মনে আবার রিপিট করল সে,

আরুহী হাসলো, উত্তর দিলো,

” সত্যি অর্থে আরুহী চৌধুরীর ভালোবাসা এতো ঢুকনো নয় যে আজ আছে তো কাল নেই! আমি তাকে আজও ভালোবাসি এবং অনেক ভালোবাসি কিন্তু ভুলেও ফিরে পেতে চাই না! সেটা তার জন্য মঙ্গল জনক হবে না, কারণ আমার হাত টা পূর্বের মতো কোমল থাকবে না আর না পাবে সে! ”

আমি চাই সে,
নিজের মতো করে জীবন টা গুছিয়ে নিক কোন প্রকার পিছুটান না রেখে। আমাকে মনে রাখা বা মনে করার কোন কারণ ই আমি দেখছি না! আমিও সব ভুলে যেতে চাই।

সমরেশ মজুমদারের বইয়ের একটা উক্তি ছিলো,

” আমরা কাউকে অকারণে মনে রেখে দেই চিরকাল,
যাকে হয়তো আমাদের মনে রাখার কোন ও কথাই নেই ”

চলবে…

[ আজকের পর্ব টা কেমন হ’য়েছে জানাবেন!

হ্যাপি রিডিং.. ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here