#মায়াবিনী_২
#Ayrah_Rahman
#পর্ব_২২
____________________
” কি অদ্ভুত তাই না! আমরা অনেক কিছু ই ভুলে যেতে চাই কিন্তু ঠিক সেই কথা গুলোই আমাদের না চাইতেও বারংবার মনে পড়ে ”
আরুহীর আনমনে বলা কথা টা কর্নগোচর হতেই সুলতান লুকিং গ্লাসের মধ্যে দিয়ে আরুহীর দিকে তাকালো। রুশা তখন গভীর ঘুমে, সকাল সকাল ই রওনা দিয়েছে তারা চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে।
” আপনার কি মন খারাপ ম্যাম? ”
আরুহী ঘুরে সুলতানের দিকে তাকালো, তাচ্ছিল্যে হেসে উঠলো,
” আমার আর মন খারাপ? মন থাকলে না খারাপ হবে, আমার তো মন ই নেই! ”
সুলতান চমকে তাকালো, এমন কথা আরুহী আগে কখনোই বলে নি..
” ম্যাম! আরুশ খান কিছু বলেছে আপনাকে? আপনি কি কষ্ট পাচ্ছেন? ”
আরুহী মুচকি হাসলো,
” কাঁটাকে কি করে দোষ দেই বলোতো? পা তো আমি নিজেই রেখেছিলাম, কাঁটা তো নিজের জায়গাতেই ছিলো ”
” ম্যাম আমি এমন কঠিন কথা বুঝি না, তবে মনে হচ্ছে আপনার মন খারাপ! আমাদের জীবনে এমন অনেক সময় আসে যখন কোন সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধা দন্ধের মধ্যে পড়ে যায়, তখন আমাদের উচিত মনের কথা শোনা তাহলে ভবিষ্যতে আফসোস জিনিস টা করা লাগে না ”
” হুমম ”
” ম্যাম আপনি কত সুন্দর করে হাসেন, দেখে মনে ই হয় না আপনার জীবনে কোন কষ্ট আছে.! ”
“দুঃখে তো সবাই কাঁদে, হাসতে ক’জনে জানে”
” তাও ঠিক. ”
আরুহী হাসলো, সুলতানের দিকে তাকিয়ে বলল,
” একটা কথা রাখবে সুলতান! ”
” জ্বি ম্যাম ”
” তুমি আমাকে ম্যাম ম্যাম বলো না, বয়সে আমি তোমার ছোট, আমাকে আরুহী বলেই ডেকো, আর আমি বরং তোমাকে ভাই বলব নে! ”
সুলতান অবাক হয়ে আরুহীর দিকে তাকালো,
” কি বলছেন ম্যাম! এটা হয় না, আমি আপনার শুধু মাত্র ই এসিস্ট্যান্ট, আপনাকে ম্যাম না ডাকলে অসম্মান করা হবে! ”
” তোমাকে কে বলেছে অসম্মান করা হবে, কিছু হবে না, এটাই আমার আদেশ, এখন থেকে তুমি আমাকে আরুহী বলবে আর আমি তোমার বোন, ভাইয়া ডাকবো ”
সুলতান ক্ষীণ কন্ঠে বলল,
” চেষ্টা করবো ”
আরুহী হেসে জানলায় মুখ ঠেকিয়ে বাতাস উপভোগ করতে ব্যস্ত,
হঠাৎ মোবাইলে টুং করে মেসেজ এর শব্দে আরুহী ফোন টা হাতে নিলো,
স্ক্রিনে পরিচিত নাম্বার দেখে খানিকটা ভ্রু কুঁচকে মেসেজ অপেন করলো,
” বড় হয়েছো মেয়ে তুমি, এখনো এমন বাচ্চাদের মতো বাহিরে হাত মুখ দিয়ে রাখা কোন ধরনের অভ্যাস রুহী, মুখ ভেতরে নিয়ে জানলা লাগাও, বাতাসে ঠান্ডা লাগবে ”
মেসেজ টা দেখে চমকে উঠলো আরুহী, আশেপাশে তাকালো একবার, নিজের মায়ের এমন কথা শুনে আরুহী বেশ চমকালো, তার মা তো আশেপাশে ও নাই তাহলে বুঝলো কিভাবে?
পরবর্তী তে আবার মেসেজের টুং করা শব্দে পুনরায় মোবাইল এর দিকে তাকালো,
” আমাকে খুঁজে লাভ নেই মেয়ে, আমি সবসময় যেমন তোমার মন মস্তিষ্কে থাকি তুমি ও আমার মন মস্তিষ্কে থাকো, তুমি কখন কি করতে পারো তা আমার জানা, তাই সাবধানে আসো, আর ওই বিচ্ছু টা মনে হয় ঘুমিয়ে আছে, খেয়াল রেখো, আর মা হই আমি তোমার, তোমার প্রতিটি পদক্ষেপ আমার জানা এবং চেনা ”
আরুহী মুচকি হেসে দীর্ঘ শ্বাস ফেলল,
______________
প্রায় ছ’ ঘন্টা জার্নি করে অবশেষে আরুহীর গাড়ি এসে থামলো চৌধুরী ভিলার সামনে, মূলত রুশা কে নামিয়ে দিতেই আসা তার।
রুশা গাড়ি থেকে নামতেই গাড়ি পিছনে নিয়ে ঘুরিয়ে ফেলল, বেচারী কিছু বলতে ও পারলো না।
রুশার ইচ্ছে ছিলো তার দি ভাই কে বাসার ভেতরে নিয়ে যাবে কিন্তু বলার আগেই তো তার দিভাই চলে গেলো। রুশা ঠোঁট উলটে দোতলায় বারান্দার দিকে তাকালো যে খানে আয়াত বুকে হাত গুজে এক দৃষ্টিতে তাদের দিকেই তাকিয়ে ছিলো ।
হঠাৎ নিজের সামনে আবার কোন গাড়ি র অস্তিত্ব টের পেয়ে চোখের দৃষ্টি নিচে নিক্ষেপ করলো,
আরুহী গাড়ি থেকে নেমে এলো হাতে রুশার ব্যাগ।
ব্যাগ টা রুশার হাতে দিতে দিতে বলল,
” যাওয়ার সময় বস্তুা নিয়ে যেতে পারিস এখন নিয়ে আসার সময় মনে থাকে না! ”
রুশা ইনোসেন্ট ফেস করে বলল,
” আররে দি ভাই মনে ছিলো না আর তুমি তো আছোই সমস্যা কি! ”
আরুহী দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল,
” সিরিয়াস হো রুশা নয়তো পস্তাবি! গেলাম আমি ”
বলেই বারান্দার দিকে এক পলক তাকালো।
আরুহী গাড়ির দিকে ফিরতে ই রুশা আরুহী কে পিছনে থেকে ডেকে উঠলো,
” দি ভাই! ”
আরুহী পিছনে ঘুরে দাড়ালো, ভ্রু কুঁচকে বলল,
” কিছু বলবি? ”
” আজকে একটু আমার সাথে থাকো না! ”
আরুহী ভ্রু কুঁচকালো,
” কেন? ”
” শুধু আজ! আর বলব না! ”
আরুহী পুনরায় বারান্দার দিকে তাকিয়ে ধীরে ধীরে বলল,
” ঠিক আছে ”
ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে সুলতান কে উদ্দেশ্য করে বলল,
” ভাই তুমি বরং গাড়ি টা জায়গায় রেখে এপার্টমেন্টে চলে যাও ”
সুলতান কিছু না বলে ই গাড়ি নিয়ে চলে গেলো…
_____________
আরুহী কে সাথে নিয়েই রুশা বাড়ির ভেতর গেলো,রুশা আগে আগে আর আরুহী পিছনে পিছনে ঢুকলো। রুশা ভেতরে ঢুকতেই ড্রয়িং রুমে তাকিয়ে তার চোখ দুটো বড়ো বড়ো করে চিৎকার দিয়ে বলল,
” ছোটওওও বাআআবাআআ ”
বলেই আরুহীর হাত ছেড়ে সোফায় বসে থাকা একজন মাঝ বয়সী লোককে গিয়ে জরিয়ে ধরলো,
আরুহী শার্টের হাতা ফোল্ড করছিলো হঠাৎ রুশার এমন চিৎকারে চমকে সামনে তাকালো,
সোফাই আয়াস চৌধুরী বসে আছে, আরুহী ভ্রু কুঁচকালো।
রুশা আয়াসের গলা জরিয়ে বসে এটা ওটা বলছে আর আয়াস সাথে হেসে তাল মেলাচ্ছে।
ড্রয়িং রুমে প্রায় সবাই ই উপস্থিত, আয়াত মাত্র ই নিচে নেমে এক কোনে বসে মোবাইল ঘাটছে, আবরার আর আয়াস এক সাথে ই বসে ছিলো এখন রুশা গিয়ে দুইজনের মাঝে বসে পড়েছে , আয়াসের পাশেই বসে আছে তার একমাত্র মেয়ে আলিশা চৌধুরী, আরুহীর ছোট তবে রুশার বড় , রাইসা আর মিরা বসে আছে আয়াতের ঠিক বিপরীতে । আরাফ আর মাহির নেই সাথে মিরাজ ও এখানে নেই , হয়তো বাহিরে । আর আরুশ খান কে তো পাওয়াই যায় না ”
আরুহী চোখ ছোট ছোট করে সবার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো, এখনো কেউই তাকে খেয়াল করে নি।
” Heii sis… How are you? ”
আরুহী ঘাড় ঘুরিয়ে আলিশার দিকে তাকালো, এই মেয়েটা দিনে দিনে ব্রিটিশ হয়ে যাচ্ছে, বাংলা বলতে যেন তার এলার্জি, দীর্ঘ শ্বাস ফেলল আরুহী।
আলিশার কথায় সবাই আরুহীর দিকে তাকালো,
আরুহী ভ্রু কুঁচকে আয়াসের সামনে গিয়ে দাড়ালো, এক ভ্রু উঁচু করে গম্ভীর কন্ঠে বলল,
” কখন এসেছো? ”
আয়াস দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল,
” এই তো কাল রাতে ”
” ফোন করলে কি গলা ব্যথা করতো? একটা ফোন দিয়ে আসা যেত না? ”
আয়াস আমতাআমতা করে বলল,
” আসলে হয়েছে কি মা বল তো, তুই তো একটা অপারেশনে গিয়েছিস, এখন কি তোকে জ্বালানো শোভা পায়! তাই বলি নি তার উপর তুই তো আজ আসছিস ই তাই আর কি “..
” তো আসার কারণ কি? ”
” আরে আর বলিস না, আরুশ খুব জরুরি তলব করেছে আসা লাগবেই, কি ডিসিশন নাকি নিয়েছে একেবারে ফুল এন্ড ফাইনাল, তাই এতো তাড়াহুড়ো অথচ দেখ যার জন্য এলাম তার ই কোন খবর নেই! ”
আরুহী ভ্রু কুঁচকালো, মনে মনে ভাবলো, এই পাগল আবার কি ফন্দি আটছে! আল্লাহ ই জানে!
আয়াস দম ফেলে, কেন জানি আরুহী কে তার মায়ের কার্বন কপি লাগে, এতো রাগী আর জেদি, মাঝে মাঝে নিজেই কনফিউজড হয়ে যায় যে আসলে কে কার বাচ্চা?
” চাচিমা কোথায়? ”
আরুহীর কথা শেষ না হতেই পিছনে থেকে কেউ বলে উঠলো,
” চাচি মা কে দিয়ে তোমার কি কাজ? তুমি বরং তোমার কাজ নিয়ে বিজি থাকো, আমাদের খবর তোমার নিতে হবে না, ম*র*লাম কি বাঁচলাম তাতে তোমার তো কিছু যায় আসে না, ফোর্স অফিসার আরুহী চৌধুরী! ”
আরুহী পিছনে ঘুরলো,
একজন মাঝ বয়সী মহিলা যদিও তাকে কোন ভাবেই মাঝ বয়সী মহিলা মনে হয় না এখনো যে কেউ দেখলেই বলবে উনি এখনো কুড়ি বছর বয়সী রমনী, যেমন তার গায়ের রং তেমন লম্বা চুল, তার এই হাঁ*দা*রাম ছোট বাবা কিভাবে যে এমন হুরপরী কে পটালো, বুঝে আসে না আরুহীর।
আরুহী মাথার ক্যাপ খুলতে খুলতে এগিয়ে গেলো মহিলার দিকে।
পিছনে থেকে জরিয়ে ধরে কাঁধে মাথা রেখে বলল,
” আমার জানটুস টা বুঝি আমার সাথে রাগ করেছে? সরি জানু, আমি আসলেই বিজি ছিলাম ”
বলেই মহিলাটির সামনে গিয়ে কানে ধরে কিউট কিউট ফেইস করে সরি বলতেই মহিলা টা ফিক করে হেসে দিলো।
সাথে আরুহীও হাসলো।
সবাই একসাথে বসলো, শুধু আরুহী বাদে।
আরুহী এখানে না থাকলেও আরুহীর রুম টা সবসময় সাজানো গোছানো থাকে। হয়তো তার মা কিংবা রুশা করে রাখে।
আরুহী রুমে গিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে কোমড়ের বেল্ট খুলতে খুলতে ভাবছে, আসলে আরুশের ব্যাপার টা তার ঠিক বুঝে আসছে না। কি এমন জরুরি ডিসিশন যে ছোট বাবাকে আসতে হলো?
কোন নতুন কিছু করছে না তো? যদি করেই থাকে তবে করছে টা কি? ..
চলবে…
[ কেমন হয়েছে জানাবেন প্লিজ ]