#মায়াবিনী_(২)
#Ayrah_Rahman
#পর্ব_২৬
___________
“বিয়ে টা হতে দাও আম্মু ”
আরুশের গায়ে হলুদের দিন রাতে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে মায়ের উদ্দেশ্যে কথা টা বলল আরুহী, খানিক বাদে হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হতে যাবে।
” গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে কালো রঙ টা পড়লে রুহী? শাড়ি টাড়ি নাই বা পরো, অন্য রঙ টা পড়তে পারতে ”
আরুহী পিছনে ঘুরে তাকালো,
” বিয়ে টা আমার নয় আম্মু, বিয়েটা আরুশ খানের তাই লাল, নীল, হলুদ রং গুলো সেই পরুক, আমি যাই পরি না কেন কোন সমস্যা নেই, তার উপর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অনুষ্ঠান শেষ করতে হবে, কাল আমার ফ্লাইট, লন্ডন ব্যাক করবো, আরো আগেই যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু বিয়ে টার জন্য আটকে গিয়েছিলাম, কাল বিয়ে টা কমপ্লিট করে তারপর বের হবো, তখন তো আর কেউ বলতে পারবে না যে আরুহী চৌধুরী নিজের কথা রাখতে জানে না ”
আয়াত ভ্রু কুচকে তাকালো মেয়ের দিকে তাকালো,
” চলে যাবে মানে? আগে বলো নি তো? ”
আরুহী মুচকি হেসে মাকে পিছনে থেকে জরিয়ে ধরে বলল,
” আম্মু আমি নিজের ইচ্ছে ই যেমন আসি নি, নিজের মতে যেমন থাকি নি তেমন ই অন্যের মতের উপর ভিত্তি করে ই চলে যেতে হবে, নোটিশ এসেছে এক সপ্তাহ আগেই তবে আমি ছুটি আরো এক সপ্তাহ বাড়িয়ে ছিলাম, কালই শেষ দিন, যেতে তো হবেই, সরকার তো আর আমার মামা হয় না যে ভাগ্নি বলে সাত খু*ন মাফ ”
আয়াত দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে এক হাত দিয়ে আরুহীর গাল স্পর্শ করলো,
” হ্যা বুঝলাম, চলে যাবে যখন ধরে বেঁধে রাখার কোন মানেই হয় না, তা আবার কবে আসা হবে শুনি? ”
আরুহী মায়ের কাঁধে থুতনি রেখে বলল,
” আম্মু এখনো আমি বের ই হই নি তার আগেই তুমি বলছো কবে আসবো! আর নট সিউর আম্মু, তবে আসবো আমি ”
” তাহলে ঠিক আছে, সমস্যা নেই, যাও আর সাবধানে থাকবে, ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করবে, খাওয়া নিয়ে কিন্তু তোমার সকল অবহেলা, আমি কিন্তু এটা মানব না, ফের এমন হলে পরে কান ধরে লন্ডন থেকে নিয়ে আসবো! ”
আরুহী খিলখিল করে হেসে উঠলো,
” ঠিক আছে ঠিক আছে যাও নিয়ে এসো ”
আরুহী হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সন্ধ্যা সাত টা, আয়াত কে তাড়া দিতে দিতে বলল,
” মা তাড়াতাড়ি চলো চলো, তোমার ভাতিজার গায়ে হলুদ শুরু হয়ে গেলো বলে ”
আয়াত ভ্রু কুঁচকে মেয়ের দিকে তাকালো,
” কি চলছে কি এই মেয়ের মনে! ভেবে পাচ্ছে না সে ”
আরুহী আয়াত কে নিয়ে নিচে নেমে এলো, প্যান্ডেল, স্টেজ সব চৌধুরী বাড়িতেই করা হয়েছে যা একমাত্র রুশার আবদার।
আরুহী স্টেজের কাছে যেতেই প্রথমে তার চোখে পড়ে অনুষ্ঠানের মধ্য মনি আরুশ আর পুষ্মিতার উপর। দুজন ই হালকা হলুদ আর সবুজের কম্বিনেশনের কাপড় পরেছে, আরুশের পড়নে সবুজ পান্জাবী তার উপর হলুদ সুতোর কাজ, আর পুষ্মিতা পরেছে সবুজ রঙের লেহেঙ্গা যার উপর হলুদ সুতোর আর জরির কাজ, যদিও লেহেঙ্গা টা আরুহীই পছন্দ করে দিয়েছে। আর আরুহীর পছন্দ খারাপ হবে তা তো অস্বাভাবিক।
আরুহী এক পলক আরুশের দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো যা আরুশের চক্ষুগোচর হলো না। আরুহী প্যান্ডেলের এক কিনারে চেয়ার টেনে বসে পড়লো, স্টেজের সামনেই নাচ গানের অনুষ্ঠান হচ্ছে, আরুশ খানের বিয়ে বলে কথা, জমজমাট তো হবেই।
আরুহীর যদি ও বা এসবে কোন প্রকার ইন্টারেস্ট নেই, তাই সে কানে হেডফোন গুঁজে এক মনে মোবাইল ঘাটছে।
হঠাৎ পিছনে থেকে কেউ আরুহীর এক কানের হেডফোন খুলে নিজের কানে পড়তে পড়তে বলল,
” রাতের বেলা সুন্দরী মেয়েদের একা একা থাকা ভালো না! ভুতে ধরে ”
পরিচিত কন্ঠ শুনতে পেয়ে পাশ ফিরে তাকালো আরুহী। এই মুহূর্তে এখানে তিহান কে সে মোটেও আশা করে নি, ভ্রু কুঁচকে তাকালো আরুহী,
শুভ্র রঙের পাঞ্জাবি তে ছেলেটাকে বাচ্চা বাচ্চা লাগছে, এখন তো আরুহী নিজেকেই বুড়ী বুড়ী লাগছে, এই ছেলের সাথে কেউ দেখলে নির্ঘাত বড় বোন টোন বলা টা অস্বাভাবিক কিছু হবে না বোধ হয়!
কে বলবে এই ছেলে আরুহী কে জ্বালায়!
” এভাবে তাকিয়ে থেকো না সুন্দরী! বুকে বড়ো ব্যথা হয়! ”
আরুহীর ভ্রু জোড়া আরোও কুঁচকে গেলো, ছেলে বলে কি!
চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে কথা গুলো বলেই মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো তিহান।
” ফ্লার্ট করা হচ্ছে? আর ভুতে আমাকে না আপনাকে ধরবে মিস্টার তিহান রেহমান ”
সোজা হয়ে বসলো সে,
” না তো একদম না। আমি ফ্লার্ট করবো তাও তোমার সাথে! সেই সাধ্য কি আমার আছে! ”
তিহান আরুহীর দিকে ঘুরে বসলো,
” এই শুনছো? ”
আরুহী বাঁকা চোখে তাকিয়ে বলল,
” এটা কোন ধরনের ভাষা? সুন্দর করে বলেন ”
তিহান খানিকটা চিন্তিত হয়ে বলল,
” আরে রাখো ওসব কথা! শুনলাম আরুশ খান নাকি তোমায় ভালোবাসে! কথা টা কি সত্যি? ”
আরুহী চমকে তাকালো তিহানের দিকে,
” আপনাকে কে বলল? আর আরুশ খান আমাকে কেন ভালোবাসতে যাবে তার চেয়ে বড় কথা আজ আরুশ খান এর গায়ে হলুদ আজ বাদে কাল বিয়ে, এসব কথার কোন মানেই হয় না ”
তিহান মুখ টায় সিরিয়াস ভাব এনে খানিকটা ভেবে বলল,
” আজ বাদে কাল বিয়ে হবে কিন্তু হয়ে তো আর যায় নি, খেলার মোড় যেকোন সময় যেকোন এঙ্গেলে ঘুরে যেতে পারে, বলা তো আর যায় না, আর আমি তোমার থেকে বছর খানেকের বড় হতে পারি, আমাদের এইজ ডিসটেন্স যেহেতু খুব বেশি না তাই আমাদের মনের পরিবর্তন টা আংশিক একই হতে পারে, আমার যতদুর মনে হচ্ছে তুমি আরুশ কে পছন্দ করো ”
আরুহী ভ্রু কুঁচকে তাকালো তিহানের দিকে,
ছেলেটা হঠাৎ এমন কথা বলছে কেন বুঝতে পারছে না আরুহী, যতসব ফালতু কথা!
” দেখুন তিহান রেহমান, এসব ভ্যালুলেস কথার কোন মানেই হয় না, যেটা হচ্ছে আমাদের তা হতে দেওয়াই উচিত তার উপর কাল আমার ফ্লাইট, লন্ডন ব্যাক করবো আবার কবে দেশে আসি বলা যায় না, তাই আমি মোটেও চাচ্ছি না এসব কথা তুলতে ”
তিহান স্ব শব্দে হেসে উঠে বলল,
” ঠিক আছে ঠিক আছে আর বলব না তবে আমার মনে হচ্ছে লাস্ট মোমেন্টে না সারপ্রাইজিং কিছু হয়ে যায়! ”
” কিচ্ছু হবে না, চুপচাপ বসে দেখেন ”
তিহান এবার বসা থেকে উঠতে উঠতে বলল,
” আচ্ছা চলুন, সবার তো মনে হয় হলুদ লাগানো শেষ আমরা দুজন ই বাকি, আমরাও একসাথে হলুদ লাগিয়ে আসি! ”
আরুহী কিছু একটা ভেবে তিহানের কথায় সায় জানিয়ে বলল,
” চলুন ”
বলেই আরুহী উঠেই স্টেজের দিকে হাঁটতে লাগলো, পিছনে পিছনে তিহান।
আরুশ এতক্ষণ যাবত আরুহী আর তিহান কে লক্ষ্য করছে, সেই প্রথম থেকে ই দেখছে বলা যায়। আরুশ নিজের হাতের মুঠো শক্ত করে রাগ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় আছে। আরুশের শুধু মনে হচ্ছে তার প্ল্যান ফ্লপ না হয়ে যায়!
আরুহী আর তিহান আরুশের কাছে আসলো, আরুহী হাতের আঙুলে অল্প একটু হলুদ নিয়ে আরুশের হাতে দিয়ে উঠে এলো, আরুশ আরুহী কেই শুধু লক্ষ্য করছে, চোখ মুখ শক্ত করে আছে সে, কষ্ট পাচ্ছে নাকি খুশি হচ্ছে কিছুই যেন বোঝা যাচ্ছে না।
আরুহী চলে যেতেই তিহান গিয়ে আরুশের পাশে বসলো,
আরুশ ভ্রু কুঁচকে তিহানের দিকে তাকাতেই তিহান একটা ভিলেন মার্কা হাসি দিয়ে বলল,
” পরনারীর দিকে দৃষ্টি পাত করা ভালো লক্ষ্যন নহে ডক্টর! ওই যে পাশেই আপনার পার্সোনাল নারী বসিয়া আছেন তাহার দিকে চাইয়া থাকেন আল্লাহ সওয়াব দিবো তবে এখন না কিন্তু আগামী কাল বিবাহের পরবর্তী তে ”
আরুশ ভ্রু কুঁচকে তাকালো তিহানের দিকে,
” পিঞ্চ মারা হচ্ছে আমাকে? ”
তিহান ঘাড় বেঁকিয়ে বলল,
” নহে একদম নহে ”
” গুরুচন্ডালী দোষ টা যেন গেলো না! ”
তিহান হাসলো, আরুশ ও কিছু একটা ভেবে সামনে তাকালো, মুখে তার বাঁকা হাসি বিদ্যমান।
চলবে..
[ আজকের পর্ব টা কেমন হয়েছে? আর সবাই বলেন আরুহী যেন সবসময় শক্ত থাকে, এতো শক্ত থাকলে মিল টা হবে কিভাবে, আমার ও তো গল্পটা টা শেষ করতে হবে! “]