#মায়াবিনী_(২)
#Ayrah_Rahman
#পর্ব_৩২
_____________
ঘুট ঘুটে অন্ধকার চারিপাশে একটু আলোর ছটাক ও নেই। মোবাইলের ফ্ল্যাস লাইট হন করে একটু একটু করে নিচে নেমে আসছে আরুহী। পিছনে পিছনে আসছে সুলতান ও। সুলতানকে সে আনতে চায় নি কিন্তু সুলতান এক প্রকার জোর করে ই এসেছে, একটা মেয়েকে বিপদের বিপদের মুখে একা কি করে আসতে দেবে সে!
উপরে অবশ্য গার্ড আছে, সবাইকে নিয়ে হয়তো থানায় পৌঁছে ও গেছে।
আরো কিছু টা নিচে যেতেই আরুহীর নজরে এলো সূক্ষ্ণ আলোর রেখা। হাত দিয়ে মাস্ক টা আরেকটু ভালো করে পড়ে নিলো, পিছনে ঘুরে এক পলক সুলতানকেও পরখ করলো ।
আলোক রেখা টা লক্ষ্য করে এগিয়ে গেলো সেদিকে। উপর থেকে যেই আওয়াজ টা আসছিলো তার কিছু ই এখন শোনা যাচ্ছে না তবে আরুহীর মনে হচ্ছে আশেপাশে কেউ আছে। কিংবা অন্য কিছু ও হতে পারে। সাবধান থাকতে হবে। আরুহী চোখের কোনা দিয়ে এক পলক আশেপাশে তাকালো। কোমড় থেকে রিভলবার টা বের করে স্টার্ট করে হাতে চেপে রাখলো। সামনে এগিয়ে যেতেই প্রথমেই কিছু লাল রঙের ড্রাম তার নজর কাড়লো। ভ্রু কুঁচকে এগুলো ড্রাম গুলোর দিকে। একটা ড্রামের ঢাকনা খুলতে গিয়ে ও যেন খুলল না কি ভেবে। খানিকটা ঝুঁকে আঙুল দিয়ে টোকা দিলো, মনে হচ্ছে ভেতরে পানি জাতীয় কিছু একটা আছে।
আরুহী সোজা হয়ে দাড়িয়ে এক টানে খুলে ফেলল ড্রামের মুখ। তীবড় ঝাঁজালো গন্ধ বেরিয়ে এলো তৎক্ষনাৎ। তরল জাতীয় কিছু একটা দিয়ে ড্রাম ভর্তি, বিদঘুটে গন্ধ বের হচ্ছে। গন্ধ টা চিনতে আরুহীর মিনিমাম সময় টুকুও লাগলো না। বিদেশ থেকে আমদানি কৃত ম*দ। বিদেশে বড় হওয়া একজন মানুষের পক্ষে এসব গন্ধ ধরা কোন ব্যপার না, তার উপর আরুহী এসব কেস অহরহ পাচ্ছে, ঘাঁটছে, দেখছে। যদিও এসব নিষিদ্ধ জিনিস কখনো ছুঁয়ে ও দেখে নি। তবে এসব মা*দক ড্রামে ভরে রাখার কারণ টা বুঝলো না সে।
একটা একটা করে প্রায় বিশ পঁচিশ টা ড্রাম খুলে দেখলো, সবগুলো ই ম*দ তবে ফ্লেবার আলাদা, যা বুঝতে পেরে আরুহী হাসলো, তার সাথে আরেকটা জিনিস তার ধারণা হয়ে গেছে।
এসবের মূলে যে রয়েছে নিশ্চয়ই সে খুব সৌখিন স্বভাবের আর অল্প বয়সী। কারণ ফ্লেবার গুলো খুব ই রেয়ার। যা সহজে পাওয়া যায় না। কারো গোঙানির শব্দে আরুহী চমকে উঠলো,
আশেপাশে তাকিয়ে কাউকেই নজরে এলো না তার। আরুহী শব্দের দিক আচঁ করে এগিয়ে গেলো বা দিকে। সেদিকে সারি বদ্ধ ভাবে কিছু কামরা আছে যেখানে মোটা মোটা কিছু ঝং ধরা তালা ঝুলানো। তার ঠিক মাঝের কামরা থেকে ই যেন শব্দ টা আসছে।
আরুহী গিয়ে দাড়ালো সেই কামরার সামনে, সূক্ষ্ণ দৃষ্টিতে একপলক দরজার দিকে তাকালো। নজর ঘুরালো তালা টার দিকে। এটাও বেশ পুরানো ঝং ধরা তবে তেল জাতীয় কোন তরল পদার্থ দেওয়া মানে তালাটা সচরাচর খোলা হয়। আরুহী দরজায় দুটো টোকা দিলো। সাথে সাথে ভেতরের আওয়াজ টা বন্ধ হয়ে গেলো, ভ্রু কুঁচকে ই বোঝার চেষ্টা করলো সে আসলে ভেতর থেকে আওয়াজ টা আসছে কিসে। মনে হচ্ছে কাউকে বেধে রাখা হয়েছে, মুখ বাঁধার ফলে শুধু গোঙানির শব্দটায় আসছে।
আরুহী পকেট থেকে একটা ধাঁ*রালো ব্লে*ড জাতীয় কিছু বের করে তালা টা আলতো হাতে ধরলো। তালার মাথায় দু একটা আঘাত করতেই সহসাই তালাটা খুলে গেলো।
আরুহী দরজায় ধাক্কা দিতেই মর্মর শব্দে দরজাটা খুলে গেলো। ভেতরে ঘুটঘুটে অন্ধকার, আলো বাতাস কিছু আসবার জো নেই। আলোর সূক্ষ্ম রেখাও ঢুকার পথ নেই। আরুহী মোবাইলের ফ্ল্যাস লাইট অন করে হাতরাতে হাতরাতে সুইচ বোর্ড পেয়ে গেলো। অন বাটন ক্লিক করতেই চারপাশে লাল আলোই ভরে উঠলো।
আরুহী সামনে তাকাতেই আঁতকে উঠল, প্রায় ত্রিশ পায়ঁত্রিশ জন মেয়ে হাত পা মুখ বাঁধা অবস্থায় পড়ে আছে। আরুহী নজর ঘুরালো সবার দিকে, একেক জনের অবস্থা শোচনীয়। সহসাই আরুহীর নজর কারলো কামরার এক কোনায় বসে থাকা এক রমনী। লম্বা চুল গুলো উস্কো খুসকো হয়ে এদিকে ওদিক ছড়িয়ে আছে , গায়ের রং ফ্যাকাশে হয়ে সাদা রং টা কেমন উজ্জ্বল দেখাচ্ছে। বোঝাই যাচ্ছে কতদিন সূর্যের আলো গায়ে পড়ে না।
আরুহী এগিয়ে গেলো সেদিকে হাঁটু গেড়ে বসলো মেয়েটার সামনে,
নিজের সামনে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে সামনে তাকালো মেয়েটা। নিভে যাওয়া চোখের পলক যেন পড়ছে না। আরুহী নিজের হাত এগিয়ে দিয়ে চুল গুলো পিছনে ঠেলে দিলো আলতো হাতে। গায়ে স্পর্শ পেয়ে মেয়েটা কেমন যেন কেঁপে উঠল, আর বিরবির করে কিছু একটা বলতে লাগলো, আরুহী ঝুঁকে বোঝার চেষ্টা করলো আসলে মেয়েটা কি বলছে,
” আমাকে ছেড়ে দাও, আমাকে আর মেরো না, আমি আর সহ্য করতে পারছি না, ভীষণ কষ্ট হচ্ছে আমার, শরীর জ্বলে যাচ্ছে, আর মেরো না, পায়ে পড়ি তোমার ”
আরুহী চমকে উঠে মেয়ে টার দিকে তাকালো, সারা শরীরে রক্ত লেগে আছে, মারের দাগ ফর্সা শরীরে কালচে বর্ন ধারণ করেছে। আরুহীর চোয়াল শক্ত হয়ে উঠলো। চোখের বর্ন হয়ে উঠলো ভীষন লাল। এমন ফুলের মতো বাচ্চা একটা মেয়েকে কারা এমন ভাবে মেরেছে জানতে ইচ্ছে করছে। বয়স আর কত হবে এই পনোরোর মতন। এমন একটা ফুল কে যে কষ্ট দিয়েছে এতো সহজেই পার পেয়ে যাবে, তা তো হবে না। সে তো ওই জা*নোয়ার কে বের করেই ছাড়বে আর এমন শাস্তি তার জন্য অপেক্ষা করছে যা সে কল্পনা তে ও আনেনি।
” আমার অন্ধকার রাজ্যে স্বাগতম আরুহী চৌধুরী। তুমি বেশ সেয়ানা মা*ল আছো আরুহী। এতো ধূর্ত আর তীক্ষ্ণ বুদ্ধি আমি আজ পর্যন্ত কোন মেয়েকেই দেখি নি, সেই ঘুরে ঘুরে আমার আস্তানা বের করেই ছাড়লে! বাট আই লাইক ইট”
পরিচিত কন্ঠ শুনতে পেয়ে আরুহীর চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো। পরক্ষণেই ভ্রু বাঁকা করে শব্দ করে হেসে উঠলো,
” সেয়ানা তো হতেই হতো, আসলে সেয়ানে সেয়ানে না হলে খেলা টা বেশি জমে না মিস্টার সাজিদ খন্দকার ”
সাজিদ খন্দকার খানিকটা এগিয়ে আসলো,
” ব্যাপার টা ভালো লাগলো। আমি ও চারপাশের বোকা বোকা মানুষের সাথে খেলে বেশি একটা স্বাধ পাচ্ছিলাম না। এবার মনে হচ্ছে খেলা টা জমবে ”
আরুহী ভ্রু নাচিয়ে শব্দ করে হাসলো, আরুহীর হাসি শুনে সাজিদ খানিকটা ভরকে গেলো, আরুহীর মুখে ভয়ের ছিটাফোঁটা ও দেখতে পাচ্ছে না সে।
তাই আরুহী কে ভয় দেখাতেই বলে উঠলো,
” চারপাশে আমার লোকে ঘেরাও করে রেখেছে, বের হওয়ার রাস্তা বন্ধ তোমার আরুহী চৌধুরী, এসেছো নিজের ইচ্ছেই তবে বের হতে তুমি পারবে না, আমি চাইলে এই মূহুর্তে তোমার চিন্হ এই পৃথিবীর বুক থেকে মুছে ফেলতে পারি ”
আরুহী পাশে থাকা চেয়ার টেনে আয়েসি ভঙ্গিতে বসে আড়মোড়া ভাঙ্গতে ভাঙতে বলল,
” নিজেকে তুমি বেশ চালাক মনে করো, এটাই তোমার মুদ্রা দোষ ”
সাজিদ অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আরুহীর দিকে, মেয়েটার মনে কি আসলেই ভয় ডর নেই!
” ভয় লাগছে না? ”
আরুহী শব্দ করে হেঁসে উঠলো, যেন সাজিদ কোন মজার জোক্স শোনালো।
” ভয়! আর তোমাকে? হাসালে! কোন কা পুরুষ কে আর যায় হোক আরুহী ভয় পায় না, আর ভয় পাবার কি কোন যুক্তি সঙ্গত কারণ আছে? আচ্ছা ভয় মানুষ কিসে ভয় পায় বলো তো? মৃত্যু কে তাই তো! কিন্তু আরুহী চৌধুরী তো সেটায় চায়, ভয় কেনো পাবে, আজ পর্যন্ত আরুহী চৌধুরী কোন কাজে ভয় পায় নি পাবেও না, সেই আশা টা চিরতরে বাদ দাও ”
আরুহী চোখের ইশারায় সুলতান কে কিছু বলতেই সে নিঃশব্দে কামরা ছেড়ে বেরিয়ে গেলো।
সাজিদ বেশ বিরক্ত হলো, মেয়েটাকে কোন ভাবেই যেন ভরকে দিতে পারছে না। সব ক্ষেত্রে এতো স্বাভাবিক জিনিস টা সাজিদের ঠিক হজম হচ্ছে না।
” তুমি আরুহী আজ থেকে আমার হাতে বন্দি, ভয় নেই একেবারে মা*রব না তোমায় আমি! ধুঁকে ধুঁকে শেষ করবো তোমায় আমি! ”
চলবে…
[ আজকের পর্ব টা কেমন লাগলো গঠন গত মন্তব্য করবেন কিন্তু! ]