#মায়াবিনী_(২)
#Ayrah_Rahman
#পর্ব_৩৫
_____________
নিকষ কালো রজনী, আকাশে নক্ষত্র কিংবা চন্দ্রের র্যাস মাত্র নেই। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে আকাশের কালো রঙ টা যেন আরও গাঢ় আকার ধারণ করেছে। মেঘেদের ছুটোছুটি খেলা চলছে পুরো আকাশ জুড়ে হয়তো নিচে নামার প্রয়াস চালাচ্ছে! জানালার গ্রিলে মাথা ঠেকিয়ে এক মনে আকাশ দেখে যাচ্ছে আরুহী, চন্দ্র বিহীন আকাশে কি এমন আছে যেখানে তাকিয়ে থাকতে এতো ভালো লাগে, বুঝতে পারে না আরুহী। চোখে চশমাটা এখনো চোখে আঁটসাঁট করে সেটে আছে। আরুহী সচরাচর চোখে চশমা লাগায় না নিতান্তই মাথা ব্যাথা র কারণে।
আগে চশমা লাগালে মাথা ব্যাথাটা কমে আসতো কিন্তু আজকাল তা সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে, ভেতরে ভেতরে অসুস্থ অনুভব হলেও বিশেষ একটা পাত্তা দেওয়া পড়ে না সেখানটায়।
রুমের বাতি জ্বালানো হয় নি, সব গুলো জানালার পর্দা টেনে ডিভানে এসে বসলো আরুহী। ঘড়ির কাঁটা টিকটিক করে জানান দিচ্ছে সে সবে মাত্র একটার ঘরে পৌঁছতে পারলো। রুমে বিন্দু মাত্র আলো ঢুকার চান্স নেই, যাও রাস্তার নিয়ন বাতির আলো জানালার কাঁচ ভেদ করে ভেতরে আসতে চাইছিলো তাও সামনে থাকা পর্দার ভারি আস্তরণের জন্য আসা হয়ে উঠলো না।
ল্যাপটপ টা অন করে পরনে অ্যাস রঙের টি শার্টের ফুল সিল্ভ এক হাতে খানিকটা টেনে ফোল্ড করতে করতে এক পলক ল্যাপটপের দিকে তাকালো। ব্লু টুথ টা কানের সাথে সেট করে দক্ষ আঙুল গুলো চালালো ল্যাপটপের কী বোর্ডের উপর।
হঠাৎ ব্লু টুথ এ টুং টাং আওয়াজ হতেই আরুহী ঘাড় ঘুরিয়ে ফোনের দিকে নজর দিলো সুলতানের কল দেখে খানিকটা অবাক হলো সে,
ব্লুটুথ কানে রেখেই কল রিসিভ করলো , আবারো দক্ষ আঙুল গুলো ল্যাপটপের কী বোর্ডে চালালো, তবে এবারের গতি পূর্বের থেকে কম।
” হ্যালো সুলতান ভাই ”
” আরুহী হেড অফিস থেকে কল এসেছিলো, ই-মেইলটা তোমার একাউন্টে জমা হয়েছে তুমি হয়তো দেখো নি ”
আরুহী কপালে চিন্তার ভাজ ফেলে বলল,
” হেড অফিস থেকে কেন? এনি প্রবলেম সুলতান ভাই? ”
সুলতান হাসলো,
” না প্রবলেম নেই, তুমি ইমেইল টা চেক করো, দেন আমাকে ইনফর্ম করো আমি লাইনেই আছি ”
আরুহী চকিত নজরে ল্যাপটপে তাকালো, যা করছিলো তা স্কিপ করে ইমেইল একাউন্টে ঢুকলো,
হেড অফিস থেকে ইমেইল এসেছে। সেটা অন করতেই আরুহী দেখতে পেলো তার ট্রান্সফার ল্যাটার সাথে বিভিন্ন তথ্য সমেত আর জয়েনিং ল্যাটার টাও এড করা।
আরুহী দেখা শেষ করে পুনরায় বাক্য সাজালো বলার জন্য,
” এতো ফাস্ট কেন সুলতান ভাই? আমি তো মাত্র ই কাজ টা কমপ্লিট করলাম ”
” সরকারি কাজ তো তাই টাইম টু টাইম সব কিছু হয়, স্যার তো বলেছিলো ই তুমি যদি কাজ টা করতে পারো তবে তোমার ট্রান্সফার কনফার্ম ”
” হুম ”
” আর শোনো, তুমি যেহেতু ফোর্সেই ছিলে তাই তোমার ট্রেনিং টা নিতে হবে না তবে র্যাংকিং টা নিজেই করতে হবে, আপাতত ল্যাফটেনেন্ট পদে থাকবে তারপর ধীরে ধীরে র্যাংক বাড়বে ”
” হুমম”
” শোনো জয়েনিং ল্যাটার টা দেখেছো তো! কাল ই কিন্তু একবার হ্যাড অফিসে যেতে হবে, যদিও কাগজ পত্র আগেই জমা হয়ে গেছে তবুও তোমাকে কাল যেতে হবে, একবার দেখা করে এসো ”
” হুমম ”
সুলতান ভ্রু কুঁচকালো সে এতো এতো কথা বলছে অথচ যার খুশি হবার কথা সেই শুধু হুম হুম করছে। আরুহী কি তাহলে খুশি হয় নি!
সুলতান জ্বিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে ধীর কন্ঠে বলল,
” আরুহী! ”
আরুহী চমকে উঠলো,
” হহহে সুলতান ভাই! ”
” তুমি কি খুশি হও নি? ”
আরুহী একটু হাসার চেষ্টা করে বলল,
” খুশি হবো না কেন!
কিছু একটা ভেবে
আচ্ছা সুলতান ভাই তুমি হসপিটালে গিয়ে ছিলে? কি অবস্থা ওদিকে? দরকার পড়লে পাহারা আরো কঠোর করবে, কেউ যেন ওদের ধারে কাছে ঘেষতে না পারে! ”
সুলতান হাসলো, এই জন্য ই মেয়েটা সবার থেকে আলাদা, নিজের শরীরের নাই ঠিক এখনো উনি ওদের নিয়েই চিন্তায় আছে। বেশ অনেক বার সুলতান দেখেছে আরুহী মাথায় যন্ত্রনায় কেমন ছটফট করতে কিন্তু মুখ ফুটে কখনো কিছু ই বলে না। বেশ কয়েক বার সুলতান বলেছে চেক আপ করাতে কিন্তু তাও শুনতে নাড়াজ সে।
“ওরা ঠিক আছে আরুহী, তুমি চিন্তা করো না, এখন একটু ঘুমাও, তোমার শরীর খুব বেশি উইক, ঘুম প্রয়োজন তোমার ”
হঠাৎ দরজার নাব ঘুরার শব্দে চকিত নজরে তাকালো সেদিকে। সুলতান কে ধীরে ধীরে বলল,
” আচ্ছা রাখি সুলতান ভাই, পরে কথা হবে ”
বলেই ফোন টা কেটে টেবিলের উপর রাখলো, ল্যাপটপ টাও বেশ কিছু ক্ষন আগেই অফ করে দিয়েছিলো। চারপাশে নিস্তব্ধ অন্ধকারে দরজার আওয়াজ টা কেমন যেন তীক্ষ্ণতা ছড়াচ্ছে।
আরুহী ভ্রু কুঁচকে সে দিকেই তাকিয়ে আছে, এই এতো রাতে কে আসবে তার ঘরে! আরুহী ডিভানেই গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করলো, ঠিক তখন ই তার কানে ভেসে আসলো কারো পায়ের আওয়াজ। অন্ধকারে কেউ ধীরে ধীরে রুমে প্রবেশ করলো যদি ও খুব ভালো দেখা যাচ্ছিলো না তবে কড়া পারফিউম এর ঘ্রান জানান দিচ্ছে অজ্ঞাত ব্যক্তিটি কে!
পদধ্বনি টা ধীরে ধীরে প্রকট হচ্ছে যা আরুহী চোখ বন্ধ করে ও বুঝতে পারছে। তার থেকে কয়েক ইঞ্চি দুরত্ব রেখে হঠাৎ শব্দ টা থেমে যায়, গাঢ় নিঃশ্বাস টা আরুহীর চোখে মুখে আছড়ে পড়ছে, বোঝা ই যাচ্ছে লোকটার মুখ তার মুখের ঠিক উপরে খুব নিকটে।
নিজের কপোলে শীতল স্পর্শ পেয়ে খানিকটা কেঁপে উঠলো আরুহী। ফট করে চোখের পাতা খুলতে গিয়েও যেন খুলল না, শীতল স্পর্শ টা কপোল ছেড়ে ধীরে ঘাড়ের দিকে এগুতেই কাটকাট কন্ঠে বলে উঠলো,
” আমার ঘুম কিন্তু আপনার সেন্স অব হিউমারের থেকে ও পাতলা ডক্টর ”
নিঃশব্দ আবহাওয়ায় যেন কথা টা ঝংকার তুলে চার দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে পুনরায় ফিরে আসলো।
আরুহীর দেওয়া ইনডিরেক্ট খোঁচা টা ঠিক হজম হলো না আরুশের তবে মুখে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,
“:সেন্স অব হিউমারের কথা জানি না তবে বিয়ের প্রথম রাত কে যে বাসর রাত বলে সেটা কিন্তু আরুশ খান খুব ভালো করে জানে মিসেস আরুশ খান ”
আরুহী খানিকটা থতমত খেয়ে গেলো, এই ব্যাটা কে জব্দ করতে গিয়ে নিজেই যেন জব্দ হয়ে গেলো।
” সামনে থেকে সরেন আমি উঠবো”
আরুশ আরুহীর দিকে আরও খানিকটা ঝুঁকে আরুহীর ওষ্ঠের উপর আঙুল দিয়ে স্লাইড করতে করতে বলল,
” বিছানায় যেতে এতো তাড়া কেন বউ! তবে ডিভানে থাকলেও আমার বিশেষ কোন অসুবিধা হবে না”
আরুহী অবুঝের মতো তাকিয়ে আছে আরুশের দিকে, কথাটার ভাবার্থ ঠিক বুঝে উঠতে পারলো না সে।
আরুহী ওষ্ঠ দুটো ফাঁক করে দীর্ঘ শ্বাস টেনে বলল,
” মানেহ? কিসের অসুবিধা?”
আরুশ মুচকি হেসে সোজা হয়ে দাড়ালো আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে বলল,
” আই মিন বাসর আর কি! ঘরে এমন একটা হট এন্ড স্পাইসি বউ থাকতে কেউ কতদিন আর ভার্জিন থাকবে ”
প্রায় সেকেন্ড পাঁচেক কথা টা মনে মনে আউড়ে চোখ বড়ো বড়ো করে তাকালো আরুহী, লোকটা দিন কে দিন কেমন লাগাম ছাড়া হচ্ছে।
আরুহী ফট করে উঠে বসলো, রাগী দৃষ্টিতে আরুশের দিকে তাকিয়ে বলল ,
” আপনি এতো রাতে আমার রুমে কি করেন আরুশ খান! ”
আরুশ টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি এনে ডিভানের চারপাশে ঢালতে ঢালতে বলল,
” এতো সুন্দরী, নরম তুলার মতো একটা বউ থাকতে আমি কেন ওই শক্ত পেট মোটা কোল বালিশ জরিয়ে ঘুমাবো, হুয়াই?
আরুহী চটজলদি ডিভান ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো,
” এই কি সমস্যা আপনার ডিভান কি দোষ করলো ওটা ভিজাচ্ছেন কেন? ”
পানির গ্লাস টেবিলে রেখে বিছানায় বসতে বসতে বলল,
” আসলে ডিভান টা অনেক দিন যাবত ময়লা তাই একটু পানি দিয়ে পরিষ্কার করে দিলাম ”
আরুহী রেগে আরুশের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
” আপনি কি জানেন আপনি একটা পাগল? ”
আরুশ মুচকি মুচকি হাসতে হাসতে বলল,
” হুমম বউ পাগল ”
চলবে…
[ কেমন লাগলো? ]