নব_প্রেমের_সূচনা #Sumaiya_Akter_Bristy #পর্ব_১৫

0
527

#নব_প্রেমের_সূচনা
#Sumaiya_Akter_Bristy
#পর্ব_১৫

আরভীর চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি পড়ছে। আরভী কখনো ভাবেও নি এতো বড় ধোকা হবে আরভীর সাথে। সেটাও প্রিয়মানুষের কাছ থেকে।
ছবিটা দেখার পরও আরভীর বিশ্বাস হচ্ছে না হেমন্তই নাহিদ চৌধুরীর ভাগ্নে।

তবে কি শুরু থেকেই সবটা মিথ্যে ছিলো? হেমন্ত আরভীকে ঠকিয়েছে? কি করে একটা মানুষ এতো সুন্দর অভিনয় করতে পারে?

এবার যেনো একে একে সব হিসেব মিলে যাচ্ছে। নাহিদ চৌধুরী ও হেমন্তের টার্গেট ছিলো আরশাদ রায়হানকে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেওয়া। কেননা আরশাদ রায়হানের মৃত্যুর পর পরই হেমন্ত হুট করে গায়েব হয়ে যায়।
তারমানে শুরু থেকে সব কিছু একটা সাজানো নাটক ছিলো। আর তার জন্যই হেমন্ত আরভীর সাথে! ছিহ! ভাবতেও ঘৃণা হচ্ছে আরভী এমন একটা জঘন্য মানুষকে নিজের মন দিয়েছে, কতশত স্বপ্ন বুনেছে।

আরভীর চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে কিন্তু পারছে না। আরভী আফিফা আফরোজকে জানাতে চায় না কত বড় ধোকা হয়েছে উনার মেয়ের সাথে।

আরভী নিরবে কাঁদতে কাঁদতে বিরবির করে বললো,”কেন হেমন্ত কেন? কেন আপনাকে ভালোবাসার এতো বড় প্রতিদান দিলেন।”

রাত দুটো বেজে পয়তাল্লিশ মিনিট। আরভীর চোখে ঘুম নেই। আরভী ফ্লোরে বসে খাটের সাথে হেলান দিয়ে আছে। চুলগুলো উসকোখুসকো দেখাচ্ছে।
আরভী বুঝতে পারছে না আরভীর অনুভূতি এই মূহুর্তে কেমন হওয়া উচিত। হেমন্ত আরভীকে ধোকা দিয়েছে এই ভেবে আরভী কষ্ট পাবে নাকি হেমন্ত নাহিদ চৌধুরীর ভাগ্নে তা ভেবে ক্ষোভ প্রকাশ করবে।

হেমন্ত আরভীর প্রথম ভালোবাসা এ ভেবে না হয় ছেড়ে দিলো হেমন্তকে। কিন্তু আরশাদ রায়হানের খুনিকে কিভাবে ছেড়ে দিবে?
এছাড়া আরভী তো আরশাদ রায়হানের মৃত দেহকে ছুয়ে কথা দিয়েছিলো যাদের জন্য আরশাদ রায়হানকে পরকালে গমন করতে হয়েছে তাদের প্রত্যেককে আরভী নিজ হাতে ধ্বংস করবে।

আরভী সিলিং এর দিকে তাকিয়ে ক্ষীণ স্বরে বললো,”আজকের পর থেকে আমি আর আপনার কথা ভাববো না হেমন্ত। আজ থেকে আপনি শুধু আমার বাবার খুনি। প্রস্তুত হোন হেমন্ত, নিজের ধ্বংস দেখার জন্য।”

শেষ রাতের দিকে আরভীর চোখে ঘুম নেমে আসে। আরভী হারিয়ে যায় ঘুমের অতল রাজ্যে।

সকাল ন’টার দিকে আরভীর ঘুম ভাঙে। ঘুম থেকে উঠে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখতে পায় আরভীকে কেমন বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে। চোখে-মুখ ফুলে আছে। আরভী নিজেকে দেখে মলিন হাসলো।

নিচে ব্রেকফাস্ট করতে গেলে আরভীর এ অবস্থা দেখে আফিফা আফরোজ ঘাবড়ে যান।
উনি উৎকন্ঠা নিয়ে শুধালেন,”কি হয়েছে আরভী? তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন?”

“কাল অনেক রাত পর্যন্ত কিছু ফাইল চেক করেছি মা। তার জন্যই।”

“নিজের খেয়াল রাখবি তো নাকি? এতো রাত পর্যন্ত কাজ করলে অসুস্থ হয়ে পড়বি না?”

“সরি মা, নেক্সট টাইম থেকে আর এতো রাত পর্যন্ত কাজ করবো না।”

আফিফা আফরোজ প্রতিত্তোরে কিছু বললেন না। তবে নিজের খাবার শেষ করে জিজ্ঞেস করলেন,”শুনলাম কাল নাকি তুই দারোয়ানকে বলে সমুদ্রকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিস?”

আরভীর এখনো খাবার শেষ হয় নি। তাই এ কথা শুনে খাওয়া থামিয়ে আফিফা আফরোজার দিকে তাকালো আরভী। সন্দিহান স্বরে জিজ্ঞেস করলো,”তোমাকে কে বলছে?”

“সেটা তোর না জানলেও চলবে। তুই কিন্তু কাল কাজটা একদমই ঠিক করিস নি। আমি ছেলেটার চোখে তোর জন্য ভালোবাসা দেখেছি আরভী।”

“মুখোশের আড়ালে মানুষ কতটা ভয়ানক হয় তা তুমি জানো না মা।” তাচ্ছিল্য হেসে বললো আরভী।

“সব মানুষ যে মুখোশধারী তা কিন্তু নয়। আর মানলাম তুই ছেলেটাকে পছন্দ করিস না তাই বলে এভাবে অপমান করবি?”

“আর ছেলেটা যে বারবার আমাকে বিরক্ত করে সেটা?”

“তুই রাজি হয়ে গেলেই পারিস। তাহলেই তো আর বিরক্ত করে না।”

“মা! একটা ছেলে তোমার মেয়েকে বিরক্ত করছে, তুমি স্টেপ নিবে ছেলেটার বিরুদ্ধে। তা না করে তুমি ছেলেটাকেই সাপোর্ট করছো?” অবাক হয়ে বললো আরভী।

“মেয়ে যখন বিয়ে করতে চায় না তখন একটা মা সব কিছুই করতে পারে। আমি আর কিছু শুনতে চাই না এটা নিয়ে। তুই সমুদ্রকে সরি বলে ডিনারের জন্য ইনভাইট করবি নয়তো আমার সাথে কথা বলবি না।” বলে আফিফা আফরোজ সিরি বেয়ে নিজের ঘরে চলে গেলেন। আর আরভী মাথায় হাত দিয়ে বসে রইলো। কারন এই ছেলেকে হারে হারে চেনা হয়েছে আরভীর। সরি ও ডিনারের জন্য বললে এ ছেলে নিশ্চয় কোনো শর্ত জুড়ে দিবে।

নগর ভবনে বসে আরভী ভাবছে কি করে নাহিদ চৌধুরী ও উনার ভাগ্নে হেমন্তের জীবন দুর্বিষহ করে তুলবে। আরভী এতোদিন ভেবেছিলো সব কিছুর হিসেব একসাথে নিবে। কিন্তু এখন আরভী নিজের পরিকল্পনা বদলে ফেলেছে। এখন থেকে তীলে তীলে ধ্বংস করবে এই মামা-ভাগ্নেকে।

সকাল থেকে পুরোনো সব ফাইল ঘাটাঘাটি করেছে আরভী। আর তাতে নাহিদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে বেশ কিছু প্রমাণ যোগাড় করেছে। নাহিদ চৌধুরী স্কুলের উন্নয়ন, রাস্তা-ঘাট মেরামত সহ অনেক কিছুর কথা বলে সরকারের থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েছে। কিন্তু আরভীর বিশ্বাস পুরো টাকা এলাকার উন্নয়নে ব্যায় করেন নি উনি। অর্ধেক টাকা নিজের পকেটেই ঢুকিয়েছেন।
নাহিদ চৌধুরী হয়তো কখনো ভাবেন নি পুরোনো ফাইল গুলো কেউ কখনো ঘেটে দেখবে। আর তাই তো ফাইলগুলো এখনো রয়ে গেছে।
উনি কোথায় কত টাকা খরচ করেছেন তা বের করে প্রমাণ করতে হবে উনি এলাকার উন্নয়নের কথা বলে সরকারের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ভুলভাল হিসেব সরকারকে দেখাতেন। আর এটা প্রমাণ করতে এই ফাইলগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আরভী ফায়াজকে ডেকে বললো,”এই জেলার সব সরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের গিয়ে বলো আরভী রায়হান দেখা করতে চায়।”

“জ্বি আপু।”

বিকেলে আরভী গাড়িতে করে বাড়ি ফিরছিলো। পথে সমুদ্রকে দেখে ড্রাইভারকে বলে গাড়ি থামাতে। জানালার গ্লাস নামিয়ে সমুদ্রকে ডাকলো। কিন্তু সমুদ্র অনেকটা দূরে বিধায় আরভীর কন্ঠস্বর সমুদ্র পর্যন্ত পৌছালো না। তাই আরভী ড্রাইভারকে বললো সমুদ্রকে ডেকে নিয়ে আসতে।

ড্রাইভার আরভীর কথা মতো গাড়ি থেকে নেমে সমুদ্রের কাছে গিয়ে বললো আরভী সমুদ্রকে ডাকছে। সমুদ্র ড্রাইভারের কথা শুনে গাড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো আরভী সমুদ্রের দিকেই তাকিয়ে আছে। সমুদ্রের কালকের কথা মনে পড়ে যায়। তাই চোখ ছোট ছোট করে আরভীর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করে আরভী কেন সমুদ্রের সাথে কথা বলতে চাইছে।
কারন জানার জন্য সমুদ্র ড্রাইভারের সাথে গাড়ির কাছে এলো। গাড়ির জানালায় হাত রেখে বললো,”আরেব্বাস! শেষ মেশ আমার প্রেমে পড়েই গেলেন?”

“কি আজেবাজে বলছেন। আমি কখন আপনার প্রেমে পড়লাম?” কপাল কুচকে জিজ্ঞেস করলো আরভী।

“প্রেমে না পড়লে ডেকেছেন কেন?”

“গাড়িতে বসুন। বলছি।”

সমুদ্র গাড়িতে বসলে আরভী ড্রাইভারকে বলে গাড়ি স্টার্ট দিতে।
ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দিলে সমুদ্র কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে হঠাৎ চিৎকার করে বলতে শুরু করে,”বাঁচাও, বাঁচাও, ললনা আমাকে অপহরণ করে নিয়ে যাচ্ছে।”

সমুদ্রের চিৎকারে আরভী ও ড্রাইভার হকচকিয়ে উঠে। ড্রাইভার গাড়ি থামাতে চেয়েও থামায় নি আরভী থামাতে বলে নি দেখে। আর আরভী সমুদ্রকে থামাতে ধমকের স্বরে বললো,”সমুদ্র স্টপ ইট। চিৎকার করছেন কেন?”

“চিৎকার করবো না? আপনি যদি আমাকে তুলে নিয়ে পুরুষ নির্যাতন করেন?”

“আর ইউ সিরিয়াস সমুদ্র?”

“তা না হলে আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আপনি? আমি জানি আমি চকোলেট বয়। আমাকে সব মেয়েরাই চায়। কিন্তু আমি তো আপনাকে ভালোবাসি তাই না? তাহলে কেন এরকমটা করছেন ললনা? আপনি একটু ভালোভাবে বললে আমি এখনই কাজি ডেকে বিয়ের পরের সব কাজ সেরে ফেলবো। তাও আমার গায়ে কলঙ্কের দাগ লাগাবেন না প্লিজ ললনা।”

আরভীর এখন কাঁদতে ইচ্ছে করছে। এই ছেলে এতো নাটক কিভাবে করে? আরভীর অবস্থা এখন ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি।
আরভী গভীর শ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করলো। এই ছেলের সাথে ঝামেলায় জড়ানো যাবে না। তাহলে পাগল করে ছাড়বে। এর থেকে ভালো ডিরেক্ট সরি বলে ডিনারের জন্য ইনভাইট করা। নয়লে আবার আফিফা আফরোজ ঠিক মতো কথা বলবেন না আরভীর সাথে।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here