নব_প্রেমের_সূচনা #Sumaiya_Akter_Bristy #পর্ব_১৬

0
426

#নব_প্রেমের_সূচনা
#Sumaiya_Akter_Bristy
#পর্ব_১৬

আরভী এবার জোরপূর্বক হেসে বললো,”কাল যা করেছি তার জন্য আই এম এক্সট্রেমলি সরি সমুদ্র। আই রিয়েলাইজ দ্যাট আমার ওরকমটা করা একদমই উচিত হয় নি।”

সমুদ্র চোখ যুগল ছোট ছোট করে আরভীর দিকে তাকালো। আরভী নিজ থেকে সরি বলছে তা সমুদ্রের বিশ্বাস হচ্ছে না।
সমুদ্রকে এভাবে তাকাতে দেখে আরভী অমতা অমতা করে বললো,”সত্যিই আমি অনুতপ্ত। আর আজ রাতে আমাদের সাথে ডিনার করলে আমি অনেক খুশি হবো।”

সমুদ্রে আরভীর প্রতিত্তোরে মুখের উপর বলে দিলো,”যাবো না।”

আরভী পড়ে গেলো বিপাকে। সমুদ্র ডিনারের জন্য রাজি না হলে যে আফিফা আফরোজ অভিমান করে বসে থাকবেন। না, না, যে করেই হোক সমুদ্রকে রাজি করতে হবে।

“সমুদ্র প্লিজ। আপনি না আসলে মা কষ্ট পাবে।”

আরভীর কথায় সমুদ্র এবার বাকা হেসে বললো,”তারমানে আন্টির কথায় আপনি আমাকে সরি বলেছেন ও ডিনারের জন্য ইনভাইট করেছেন, কি তাই তো?”

আরভী কিছু বললো না। চুরি ধরা পড়ে গিয়েছে। যাক গে তাতে সমস্যা নেই। শুধু ডিনারের জন্য রাজি হলেই চলবে। তারপর এই ছেলের কাছ থেকে দশ হাত দূরত্ব বজায় রেখে চলবে আরভী।

সমুদ্র খানিক সময় ভাবার অভিনয় করে বললো,”ঠিক আছে, আন্টি যেহেতু বলেছে তাই যাবো কিন্তু শর্ত প্রযোজ্য।”

“জানতাম।” কথাটি আরভী বিরবির করে বললো। তাই সমুদ্র ঠিকভাবে শুনতে পেলো না।

“কিছু বললেন?”

“নাহ, আপনি কিছু শুনলেন?”

“না তা শুনি নি।”

“তবে শর্তটা বলে দিন।”

সমুদ্র আরভীর দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলিয়ে হেসে বললো,”বেশি কিছু না, শুধু নিজ হাতে বিরিয়ানি রান্না করে খাওয়ালেই হবে। তবে আপনি চাইলে নিজ হাতে খাইয়ে দিতেও পারেন। আমি কিচ্ছু মনে করবো না পাক্কা।”

“সাথে বিষ মিশিয়ে খাইয়ে দেই!” দাঁতে দাঁত চেপে বললো আরভী।

“কোনো সমস্যা নেই। আমি শুনেছি সুন্দরীদের হাতের বিষও নাকি অমৃত হয়ে যায়। আমি না হয় সে অমৃত পান করে আমাদের ভালোবাসাকে অমর করে তুলবো।”

“আমাদের ভালোবাসা কি? বলুন আপনার একার ভালোবাসা।”

“যাক অন্তত এটা স্বিকার করলেন আপনার প্রতি আমার অনুভূতি গুলো মিথ্যে নয়। আপনার প্রতি আমার ভালোবাসার অনুভূতি রয়েছে।”

আরভী আর কথা বাড়ালো না। কারন সমুদ্রের কাছে সবসময় সব কিছুর পালটা জবাব প্রস্তুত থাকে। তাই আরভী যাই বলুক না কেন উল্টাপাল্টা যুক্তি দিতে আরভীকে হারিয়ে দিবে এই ছেলে।

——-

রাত আটটা বেজে সাতাশ মিনিট। আরভী বিরিয়ানি রান্নায় ব্যাস্ত। আর কোনো কিছু রাধতে পারুক আর না পারুক, বিরিয়ানিটা বেশ আয়ত্ত করেছে আরভী। কারন এটা যে হেমন্তের প্রিয় খাবার ছিলো। হেমন্ত মাঝে মধ্যেই আরভীর হাতে বিরিয়ানি খাওয়ার জন্য আবদার করে বসতো। পুরোনো কথা মনে করে আরভী হাসলো।
কিন্তু হঠাৎ করে আরভীর মনে পড়ে গেলো হেমন্ত আরভীকে ঠকিয়েছে।
আরভীর নিজের উপর রাগ হলো। হেমন্তের কথা ভাববে না বলেও কেন হেমন্তের কথা ভাবছে আরভী? আর আরভীরই বা কি দোষ? হেমন্ত তো আরভীর অভ্যাস ছিলো। এক রাতের মধ্যে অভ্যাস পরিবর্তন করা যায় বুঝি?

আরভী বিরিয়ানি রান্না শেষ করে
চোখে-মুখে পানির ছিটে দিলো। নিজের ঘরে এসে অস্হির হয়ে পায়ে চারি করতে লাগলো।
হেমন্তকে ভুলতে হবে। হেমন্তের নাম আরভীর মন থেকে চিরতরে মুছে ফেলতে হবে। নিজের বাবার খুনিকে হৃদয়ে রাখা যাবে না।
আরভীর সাথে ছলনা করার জন্য হেমন্তকে বড় মূল্য চুকাতে হবে। মূল্য হিসেবে দিতে হবে নিজের জীবন।
আরভীর নিজেকে পাগল পাগল মনে হচ্ছে। কি করে মারবে হেমন্তকে?
হেমন্তকে নিজ হাতে মারবে ভেবেই আরভীর হাত-পা কাঁপছে। আরভী এবার ডান হাত কামড়ে ধরলো। কেননা হাত কাঁপলে চলবে না। এভাবে আরভী মারতে পারবে না হেমন্তকে। হেমন্তকে মারতে হলে সবার প্রথমে নিজেকে আরো শক্ত হতে হবে। নাহিদ চৌধুরী ও হেমন্তের থেকে সব কিছুতেই এক ধাপ করে এগিয়ে চলতে হবে।

এসবের মাঝেই আরভী বাহির থেকে বাইকের হর্ন শুনতে পেলো। গুটিগুটি পায়ে বেলকনিতে গিয়ে দেখলো সমুদ্র এসেছে। বাইক একপাশে পার্ক করে ডান হাতে একটা চশমা নিয়ে তা ঘুরাতে ঘুরাতে বাড়ির গেইট দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করছে।

আরভী আগেই দারোয়ানকে বলে রেখেছে সমুদ্র এলে যেনো সম্মানের সহিত ভিতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। তাই সমুদ্রকে দেখে দারোয়ান দাঁড়িয়ে সালাম দিতেই সমুদ্র দাঁড়িয়ে যায়। সানগ্লাস চোখে পড়ে দারোয়ানকে হাত দিয়ে ইশারায় গুলি ছুড়ে বেশ ভাবসাব নিয়ে বাড়ির ভিতরে আসে।

সমুদ্রকে এরকম করতে দেখে আরভীর মুখে হাসি ফুটে উঠে। নিজের অজান্তেই হাসলো আরভী। কিছু সময়ের জন্য যেনো হেমন্তের কথা আরভীর মাথা থেকে বেড়িয়ে গিয়েছিলো।

আরভী যখন বুঝলো আরভী হাসছে তখন হাসি থামিয়ে আবার মুখমণ্ডল গম্ভীর করে এদিক সেদিক তাকাতে থাকে।

আরভী এখনো নিচে যায় নি দেখে আফিফা আফরোজ একজন সার্ভেন্ট কে পাঠালেন আরভীকে ডেকে নিয়ে আসার জন্য। তাই আরভী বাধ্য হলো নিচে যেতে। নয়লে ভেবেছিলো সমুদ্র যতোক্ষণ থাকবে ততোক্ষণ নিচে নামবে না।

খাওয়ার মধ্যে হঠাৎ সমুদ্র বলে উঠলো,”আন্টি একটা কথা বলুন তো। উনার জন্মের পরে কি উনার মুখে মধু দিতে ভুলে গিয়েছিলেন? না মানে আজ পর্যন্ত উনার মুখ থেকে মিস্টি কোনো কথা শুনি নি তো তাই আরকি। উনি কথা বললেই মনে এক গ্লাস নিম পাতার রস খেয়ে কথা বলছেন। আমি বলে দিচ্ছি আন্টি উনার জন্য পাত্র খুজতে অনেক কষ্ট হবে আপনার।”

সমুদ্রের কথা শুনে আরভী ক্রোধ ভরা দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো সমুদ্রের দিকে আর ঝাঝালো স্বরে বললো,”আমার পাত্র বা বিয়ে কোনোটা নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে।”

“সমুদ্র ভুল কি বলেছে? নিজের বয়সের দিকে খেয়াল করেছিস? ছাব্বিশ পেরোলো বলে। আর এখনও তোর বিয়ে করার নাম গন্ধ নেই। একে তো বয়স বেশি তারউপর সবসময় গম্ভীর হয়ে থাকিস। তোকে কে বিয়ে করবে বল তো? মেয়েদের একটু কোমল হতে হয়।”

“মা আমি বিয়ে করবো না। আর আমার মনে হয় না বাহিরের মানুষের সামনে এসব বলার কোনো প্রয়োজন আছে?”

সমুদ্র এবার আফিফা আফরোজ এর দিকে ফিরে ফিসফিস করে বললো,”আন্টি, আপনার মেয়ের মাঝে আবার কোনো সমস্যা নেই তো? উনি আবার আশিক জ্বিন দ্বারা আক্রান্ত নন তো?”

সমুদ্র ফিসফিস করে বললেও আরভী সমুদ্রের বিপরীত বরাবর থাকায় ঠিকই শুনতে পেলো। চোখ-মুখ কুচকে বললো,”হ্যাঁ, আমার মাঝে সমস্যা আছে। সাথে আশিক জ্বিনও আছে। তাতে আপনার কোনো সমস্যা?”

“না আমার কোনো সমস্যা নেই। আপনি রাজি হলে আমি আপনাকে এখনি বিয়ে করবো।” তারপর আবার আফিফা আফরোজকে উদ্দেশ্য করে বললো,”আন্টি আমি আপনার মেয়েকে বিয়ে করতে চাই। আপনার মতামত কি?”

মুহূর্তের মাঝে পুরো জায়গা জুড়ে বিরাজ করলো পিনপতন নীরবতা। আফিফা আফরোজ বা আরভী কেউই ভাবে নি সমুদ্র এভাবে হুট করে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসবে।

এই নিরবতা ভেঙে গলার স্বর কঠিন করে আরভী বললো,”আমি আপনার মতো কাউকে অবশ্যই বিয়ে করবো না। আমার হাজবেন্ড যে হবে তাকে ব্যাক্তিত্ববান হতে হবে।”

আরভীর কথায় সমুদ্র হাসলো। হেসে বললো,”আগুনে আগুনে সংঘর্ষ বাড়ে। তাই আগুনকে শান্ত করতে পানির প্রয়োজন হয়। এছাড়া ইতিহাস সাক্ষী আছে। পুরোপুরি বিপরীত চরিত্রের ছেলে-মেয়েদের সংসার সুখের হয়। দুজন একরকম হলে সংসার কেমন পানসে হয়ে যায়।”

আরভী প্রতিত্তোরে কিছু বলতে নিলে আফিফা আফরোজ আরভীকে থামিয়ে দিয়ে বললেন,”আরভী তুই চুপ থাক।”

আফিফা আফরোজ এবার সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে বললেন,”দেখো বাবা, ছেলে হিসেবে তোমাকে আমার অনেক পছন্দ হয়েছে। কিন্তু বিয়ে তো কোনো ছেলেখেলা নয়। আত্মীয়-স্বজনদের সাথেও কথা বলতে হবে। আমাকে একটু সময় দাও আমি ভেবেচিন্তে তোমাকে জানাবো।”

“সমস্যা নেই আন্টি। যতো ইচ্ছে সময় নিন আপনি। আমার খাওয়া শেষ। আজ তবে আসি, অনেক রাত হয়ে গেছে।” চেয়ার থেকে উঠতে উঠতে বললো সমুদ্র।

“আবার এসো কিন্তু। তুমি আসলে আমি খুশি হবো।” হেসে বললেন আফিফা আফরোজ। তারপর আরভীর দিকে তাকিয়ে আদেশের স্বরে বললেন,”আরভী, যা সমুদ্রকে এগিয়ে দিয়ে আয়।”

না বলতে গিয়েও আবার চুপ হয়ে যায় আরভী। মুখের উপর না করে দেওয়া বেয়াদবি দেখায়। এছাড়া আরশাদ রায়হান সবসময় বলতেন মেহমান আল্লাহর রহমত ও বরকত নিয়ে আসে। তাই কখনো মেহমানদের অসম্মান করতে নেই।
বাড়ির বাহিরে সমুদ্রের সাথে যতোই ঝামেলা হোক না কেন এই মূহুর্তে সমুদ্র বাড়ির মেহমান। সেজন্য অনিচ্ছা সত্বেও আরভী সমুদ্রকে বাড়ির গেইট পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসার জন্য উঠে দাড়ালো। আর মনে মনে ভেবে রাখলো যাই হয়ে যাক না কেন, পরবর্তীতে এই ছেলের সামনে পড়া যাবে না।

এদিকে সমুদ্র বাড়ির সদর দরজা পেরোতেই হঠাৎ গান ধরলো।

“Muskaanein jhooti hai
Pehchanein jhooti hai
Rangeeni hai chhayi
Phir bhi hai tanhaayi”

সমুদ্রের এ গান শুনে আরভীর পা থেমে গেলো। আর সমুদ্র এবার গান থামিয়ে এ গানের সুরে শিস বাজাতে বাজাতে বাইকের দিকে এগিয়ে গেলো।
নিস্তব্ধ এ রাতে সমুদ্রের শিস বাজানোর সুর বেশ ভয়ানক শুনাচ্ছে। তারউপর বাহিরে মৃদ্যু শীত পড়েছে। সমুদ্র পরিবেশটাকে কেমন হরর টাইপ বানিয়ে দিয়েছে।
আরভীর গায়ের পশমগুলো দাঁড়িয়ে গেছে। শরীরে এক প্রকার কম্পন সৃষ্টি হয়েছে।
সমুদ্র বাইক চালিয়ে দূরে চলে গেলে আরভী বাড়ির ভিতরে ফিরে আসে।

চলবে….

বি.দ্র. : দুইদিন ধরে রাইটিং ব্লকে আছি। লেখার আগ্রহ পাচ্ছি না, ইচ্ছেও করছে না। তাও একটু একটু করে এই পর্বটা লিখে শেষ করলাম। ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ 🌼

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here