নব_প্রেমের_সূচনা #Sumaiya_Akter_Bristy #পর্ব_৩০

0
388

#নব_প্রেমের_সূচনা
#Sumaiya_Akter_Bristy
#পর্ব_৩০

না চাইতেও পরিবারের মায়া ছেড়ে সমুদ্রকে পাড়ি জমাতে হয় অচেনা এক শহরে। যেই শহরে সমুদ্রকে কেউ চিনবে না আর না সমুদ্র কাউকে চিনবে। ইয়াসমিন, নোমান আহমেদ, নিলু, তন্ময় অনেক চেষ্টা করেছে সমুদ্রকে আটকানোর জন্য। কিন্তু সমুদ্র কারো কথা শুনে নি। আর শুনবেই বা কেন? এই শহরটা যে বড্ড কষ্ট দিচ্ছে সমুদ্রকে। এখন অন্তত কাউকে দেখে বুকের মাঝে শূন্যতা অনুভব হবে না। নতুন করে বাঁচবে সমুদ্র। আর সেজন্য এই শহর ছেড়ে বহুদূর যেতে হবে নয়তো কোনোক্রমেই সব ভুলে নতুন করে বাঁচা সম্ভব না।

একপাক্ষিক ভালোবাসা গুলো পবিত্র হয়। এখানে কোনো অসৎ ইচ্ছে মনে জাগে না। ভালোবাসার মানুষটিকে স্পর্শ করে কলঙ্কিত করার কোনো ভয় থাকে না। পাশাপাশি একপাক্ষিক ভালোবাসার অনুভূতি হয় পৃথিবীর সেরা অনুভূতিদের মাঝে একটি। যারা একপাক্ষিক ভালোবেসেছে একমাত্র তারাই অনুভব করতে পারে এই সেরা অনুভূতি টাকে। এছাড়া ভালোবাসা সহজেই পেয়ে গেলে তার মূল্য কমে যায়। এসব কথা ভেবেই সমুদ্র নিজেকে স্বান্তনা দিয়ে চলেছে।

তবে আমরা যাকে ভুলতে চাই তাদের স্মৃতি আমাদের এমন ভাবে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে যে আমরা চাইলেও তাদের ভাবনা থেকে বের হতে পারি না। সমুদ্রের ক্ষেত্রেও ঠিক তাই হয়েছে। দিনের বেলা আরভীর ভাবনা থেকে বের হতে পারে না আর রাতে স্বপ্নেরা সমুদ্রকে ঘুমোতে দেয় না।

এই তো সেদিনের কথা। সমুদ্র ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। শারীরিক ক্লান্তি নয়, মানসিক ক্লান্তি। কিন্তু হঠাৎ করে সমুদ্রের চোখে ভেসে উঠে আরভীর মুখ খানা। সমুদ্র দেখতে পায় আরভীকে কেউ ধারালো ছুড়ি দ্বারা ক্ষতবিক্ষত করছে। আর আরভীর হাত বাড়িয়ে আছে সমুদ্রের দিকে যেনো ইশারায় বুঝাতে চাইছে আপনাকে আমার প্রয়োজন। সমুদ্র আরভীর ইশারা বুঝতে পেরে দৌড়ে যায় আরভীর দিকে। কিন্তু সমুদ্রের গতি কেন যেনো বাড়ছেই না। প্রাণপণে দৌড়াতে চেয়েও কচ্ছপের গতির ন্যায় দৌড়ে চলেছে। তাও এক জায়গাতেই। হঠাৎ করে সমুদ্রের অস্বস্তি হতে লাগে। মনে হচ্ছে এই বুঝি প্যানিক অ্যাটাক করে জীবনটা এখানেই থেমে গেলো।
এই পর্যন্ত দেখে সমুদ্রের ঘুম ভেঙে যায়। আরভীর নাম উচ্চারণ করে লাফিয়ে উঠে বসে সমুদ্র। আশেপাশে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করে কোথায় আছে এখন। উপরে ফ্যান ঘুরছে তবুও শরীরের অবস্থা ঘেমে একাকার হয়ে আছে। খানিক সময় বাদে সমুদ্র বুঝলো এটা স্বপ্ন ছিলো। শুধু স্বপ্ন নয়, দুঃস্বপ্ন। আজকাল এ ধরনের স্বপ্ন ঘনঘন দেখছে সমুদ্র। আচ্ছা আরভীর কোনো বিপদ হয় নি তো? নাকি এটা কেবল একটা স্বপ্ন। এছাড়া মাস ছয়েক হয় আরভীর কোনো খোঁজ-খবর রাখে নি সমুদ্র। একবার খোঁজ নিয়ে দেখবে কি? মনের তৃপ্তির জন্য!
না থাক, তার কোনো প্রয়োজন নেই। এমনিতেই ভুলতে পারছে না আরভীকে। কি দরকার চাঁদের দিকে হাত বাড়িয়ে? যেখানে জানা কথা এই চাঁদ কখনো সমুদ্রের বুকে নেমে আসবে না। চাঁদ তো সর্বদা আকাশের বুকেই অবস্থান করে।

দিন, সপ্তাহ, মাস পাড় হতে হতে পুরো একবছর কেটে যায়। এরই মাঝে সমুদ্র চৌধুরী গ্রুপ অব কোম্পানিতে ম্যানেজার পদে চাকরি পেয়েছে। এক বছর হয়ে গেছে হৃদয়পুর যাওয়া হয় না। বাড়ির জন্য বড্ড মন পুড়ছে। এদিকে ইয়াসমিনও প্রতিদিন কল করে কান্নাকাটি করছেন। তাতে করে আরো বেশি কষ্ট হচ্ছে সমুদ্রের।

রাতের আধারে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে সিগারেট খেয়ে যাচ্ছে সমুদ্র। এই জিনিসটাই আজকাল একমাত্র সাথী। কষ্ট গুলো কত্ত সুন্দর করে উপশম করে দেয়। সিগারেটের ধোঁয়ার সাথে কষ্ট গুলোও বাষ্পাকারে উড়ে যায়। এমনটাই মনে হয় সমুদ্রের কাছে।
আজকের আকাশ তারায় ঝলমল করছে। রুপোর থালার ন্যায় গোলাকৃতির চাঁদ উঠেছে। চাঁদের দিকে তাকিয়ে সমুদ্র মলিন কন্ঠে বলে উঠলো,”মিনহাজ, ভাই আমার। তোর বুকের চাঁদটা আমায় দিয়ে দে না ভাই।”

কিন্তু আকাশ বড্ড জেদি। দেয় নি নিজের চাঁদকে। তা দেখে সমুদ্র তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললো,”দিবি না তাই তো? থাক লাগবে না। তোর চাঁদকে নেওয়ার জন্য আমার বয়েই গেছে। আমি তো তোর চাঁদের থেকেও সুন্দর চাঁদ আনবো আমার জীবনে।”

শেষের কথাটি বলে সমুদ্র ভাবনায় পড়ে যায়। আদো কি এটা সম্ভব? আরভী ব্যাতিত দ্বিতীয় কাউকে কি এ মনে জায়গা দিতে পারবে সমুদ্র? নাকি সারাজীবন দেবদাস হয়েই কাটিয়ে দিতে হবে! কিন্তু দেবদাসকে তো পারু ভালোবসতো। আর আরভী তো সমুদ্রকে ভালোবাসে না। তাহলে সমুদ্র দেবদাস কিভাবে হবে? তবে কি সমুদ্রের নামও ইতিহাসের পাতায় উঠবে? সবাই কি জানবে সমুদ্র একজনকে ভালোবেসে ধুকেধুকে মরেছে?

—–

অবশেষে সমুদ্র সিদ্ধান্ত নেয় হৃদয়পুর ফিরবে। এভাবে আর কতদিন? নিজের স্বার্থের কথা ভেবে পরিবারকে আর কত কষ্ট দিবে? অবশ্য ইয়াসমিন, নোমান আহমেদ ও নিলু বার তিনেক এখানে এসেছে।

তিন দিনের ছুটি নিয়ে রাতের ট্রেনে উঠে পড়েছে সমুদ্র। সেই চিরচেনা জন্মস্থানে আজ এক বছর পর যাচ্ছে। অন্যরকম এক ভালোলাগা কাজ করছে। জন্মস্থানের প্রতি ভালোবাসা সমুদ্র এই এক বছরে হারে হারে বুঝেছে।

ভোর পাঁচটায় ট্রেন হৃদয়পুরের রেলস্টেশনে থামে। ট্রেনের মধ্যকার ভিড় ঠেলে বাহিরে আসতেই নজরে পড়ে নোমান আহমেদ ও তন্ময় দাঁড়িয়ে আছে। সমুদ্র হেসে উনাদের দিকে এগিয়ে যায়।

এদিকে পুরো এক বছর পর সমুদ্রকে হৃদয়পুর দেখে নোমান আহমেদের চোখ যুগল ভিজে উঠে। সমুদ্রের দিকে এগিয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে নিজের একমাত্র ছেলেকে। সমুদ্রের পিঠে হালকা করে চাপড় মেরে জিজ্ঞেস করলেন,”এতোদিনে আসার ইচ্ছে হলো?”

সমুদ্র কিছু বললো না। শব্দহীন হাসলো। আর তন্ময় সমুদ্রের দিকে এগিয়ে এসে নোমান আহমেদকে উদ্দেশ্য করে বললো,”আংকেল জিজ্ঞেস করেন তো ওর কাহিনি কি। বলা নেই কওয়া নেই হুট করে এরকম কেন করলো ওয়?”

নোমান আহমেদ এবার সমুদ্রকে ছেড়ে দিয়ে সমুদ্রের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে শুধালেন,”তুই কি ওখানে কোনো সংসার পেতেছিস সমুদ্র?”

“বাবা কিসব বলছো তুমি? আমি কেন তোমাদের না জানিয়ে এসব করতে যাবো?”

“দেখ সমুদ্র, আমার আগে থেকেই তোর উপর সন্দেহ হচ্ছিলো। যাই হোক, ভয় না পেয়ে সত্যিটা বলে ফেল। আমি বা তোর মা কোনো আপত্তি করবো না। শুধু চাইবো বউ-বাচ্চা নিয়ে আমাদের সাথেই থাক তুই।”

সমুদ্র অবাকের উপর অবাক হলো। বিয়েই হলো না অথচ এখানে বউ-বাচ্চার কথা চলে এসেছে। এই মূহুর্তে কি বলা উচিত মাথায় এলো না। তাই কিছু না বলেই হাঁটা ধরলো বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে।

হৃদয়পুর আসার পর থেকেই মনটা উশখুশ করছে আরভীকে এক নজর দেখার জন্য। ঠিক এই জন্যই হৃদয়পুর আসে নি এই এক বছর। কিন্তু এখন তো দেখা যাচ্ছে এক বছর হৃদয়পুর হতে দূরে থেকে কোনো লাভ হয় নি। ঘুরেফিরে সেই আরভীর দিকেই মন টানছে।

সমুদ্র মনে মনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করলো যাই হয়ে যাক না কেন, আরভীকে দেখার ইচ্ছে মনের মাঝেই শিকল দিয়ে আটকে রাখবে। কিন্তু মন বা ইচ্ছে কি আর শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা যায়?

সমুদ্র পারে নি নিজের প্রতিজ্ঞা রাখতে। সব চিন্তাভাবনা, প্রতিজ্ঞা এক পাশে ছুড়ে ফেলে পরের দিন বিকেল চারটের দিকে ছুটলো আরভীদের বাড়ির উদ্দেশ্যে। তবে সেখানে এতো বড় এক ধাক্কা সমুদ্রের জন্য অপেক্ষা করে আছে তা সমুদ্র ভাবতেও পারে নি।

সমুদ্র আরভীদের বাড়ির সামনে গিয়ে দেখলো গেটে বড় একটা তালা ঝুলছে। গেটের বাহির থেকে ভেতরের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো অনেক দিন যাবত এখানে কেউ থাকে না। বাড়ির প্রাঙ্গণ দূর্বাঘাসে ছেয়ে আছে। বাড়ির রঙ ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে কতটা অবহেলিত হয়ে পড়ে আছে এ বাড়িটা। আশেপাশের লোকদের জিজ্ঞেস করে জানতে পেরেছে পাঁচ-ছ’মাস আগেই আরভী ও আফিফা আফরোজ এই বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন৷ কোথায় গেছেন তা কেউ জানে না।
অপরদিকে সমুদ্র সব থেকে বড় ধাক্কা খায় তখন যখন জানতে পারে আরশাদ রায়হান এক্সিডেন্টে মারা গেছেন।

সমুদ্র আরো একবার হারিয়ে ফেললো আরভীকে। তবে এবার আর খোঁজার প্রয়োজন নেই আর না আছে তাগিদ। খুঁজেই বা কি লাভ? আরভী তো আর সমুদ্রের হবে না। আরভী হবে মিনহাজের। এটা ভেবে সমুদ্র দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ক্লান্ত পথিকের মতো বাড়ির পথে হাটতে শুরু করে।

রাত হয়ে গেছে। কিন্তু সমুদ্র বাড়ি ফিরে নি। ব্রিজের উপর বসে সিগারেটের ধোঁয়া উড়াচ্ছে।
তখন বাড়ির পথে হেটেও মোড় ঘুরে এখানে চলে আসে, বাড়িতে যেতে ইচ্ছে করছিলো না বলে।
কিছুক্ষণের মাঝে তন্ময়ও যোগ দেয় সমুদ্রের সাথে। একা ভালো লাগছিলো না বিধায় তন্ময়কে এখানে ডেকে এনেছে সমুদ্র। হয়তো তন্ময়ের সঙ্গ পেলে খানিক সময়ের জন্য আরভীকে ভুলে থাকা সম্ভব হবে।

নানান ধরনের কথার মাঝেই সমুদ্র মিনহাজের প্রসঙ্গ তুলে তন্ময়কে জিজ্ঞেস করলো,”মিনহাজের কি খবর জানিস কিছু?”

এই প্রশ্ন করার মূল কারন হলো সমুদ্র জানতে চাচ্ছে তন্ময় আরভী ও মিনহাজের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে কিছু জানে কিনা। কিন্তু তন্ময় সমুদ্রকে অবাক করে দিয়ে প্রতিত্তোরে বলল,”ওর সাথে আমি আমাদের বন্ধুত্ব শেষ করে দিয়েছি।”

সমুদ্র অবাক চোখে তন্ময়ের দিকে তাকায়। বন্ধুত্ব শেষ করে দিয়েছে! কিন্তু কেন? কি এমন কারন থাকতে পারে যার জন্য তন্ময় একদম বন্ধুত্ব শেষ করে দিয়েছে!

“আমাদের মিনহাজ আর আগের মতো নেই রে। ও পাল্টে গেছে। ও ওর বাবা নাহিদ চৌধুরীর মতো হয়ে গেছে।” সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে মিনহাজ বললো।

“কি হয়েছে সব খুলে বল।”

“মিনহাজ অনেক জঘন্য একটা কাজ করেছে রে। আরশাদ রায়হানের মেয়ে আরভীর সাথে প্রেমের নাটক করেছে। আর তারপর আরশাদ রায়হানের বিশ্বাস জিতে পিছন থেকে ছুড়ি বসিয়েছে। ভুলভাল বলে নিয়ে গেছে নাহিদ চৌধুরীর কাছে। আর তারপরের দিন আরশাদ রায়হানের লাশ পাওয়া যায় একটা খাদে। ফরেন্সিক রিপোর্টে স্পষ্ট উঠে আসে এটা দূর্ঘটনা নয় হত্যা ছিলো। কিন্তু কিভাবে কি হলো কেউ জানে না। এক ঘন্টার মধ্যে রিপোর্ট বদলে যায়।”

“তুই এতো কিছু জানলি কি করে?”

“মিনহাজের মোবাইল থেকে জেনেছি। ওর মোবাইলে নাহিদ চৌধুরী ও ওর কল রেকর্ড শুনেছি। মিনহাজকে জিজ্ঞেস করলে ও সব সত্যি স্বিকার করে নেয় আমার কাছে। আর সেদিনই ওর সাথে বন্ধুত্ব শেষ করে দেই।”

তন্ময়ের থেকে এসব শোনার পর সমুদ্র স্তব্ধ হয়ে বসে রইলো। এখন নিজের উপর’ই রাগ হচ্ছে। কেন আরভীকে মিনহাজের ভরসায় ছেড়ে গেছে এটা ভেবে। সমুদ্র’ই বা কি করতো? সমুদ্র তো ভেবেছিলো মিনহাজ সত্যিই আরভীকে ভালোবাসে। কিন্তু মিনহজ যে এমন কিছু করবে তা কস্মিনকালেও ভাবতে পারে নি সমুদ্র।
নাহিদ চৌধুরী কেমন সেটা দু-তিন বছর আগেই টের পেয়েছে সমুদ্র। কিন্তু বিশ্বাস করতে কষ্ট হতো। যেই মামাকে এতোটা ভালোবাসে সেই মামাই কিনা অপকর্মে জড়িত। অনেকবার নিষেধ করেছে সমুদ্র। বলেছে এই পথ থেকে ফিরে আসতে। কিন্তু নাহিদ চৌধুরী উল্টো সমুদ্রকে ভুলভাল বুঝিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিতো।

নাহিদ চৌধুরী অপকর্মে জড়িত তা জানতো সমুদ্র। তাই বলে একটা জলজ্যান্ত মানুষকে খুন করে ফেলবে তা মানতে পারছে না।

আচ্ছা আরভী ঠিক আছে তো? নাকি মিনহাজ আরভীর কোনো ক্ষতি করে বসেছে? এবার আরভীকে নিয়ে ভয় হতে লাগলো সমুদ্রের। সময় ব্যায় না করে সেই রাতেই মিনহাজের কাছে যায় সমুদ্র। মিনহাজের কাছে গিয়ে কোনো কথা না বলে এলোপাথাড়ি মারতে থাকে মিনহাজকে। অপরদিকে মিনহাজ বুঝতে পারছে না সমুদ্র কেন হঠাৎ এভাবে মারছে।

অতি কষ্টে সমুদ্রকে থামিয়েছে মিনহাজ। ঠোঁট কেটে রক্ত বের হচ্ছে। ঠোঁটের রক্ত মুছে ঘড়ির দিকে তাকায় মিনহাজ। দেখতে পায় রাত একটা বেজে বারো মিনিট। তারপর আবার সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে দেখে রাগে এখনো ফুসছে সমুদ্র।

“মাথা ঠিক আছে তোর? এভাবে এতো রাতে এসে মারধর শুরু করেছিস কেন?”

“তুই আরভীর সাথে কি করেছিস?”

“এটা জানতে তুই হৃদয়পুর থেকে এতোরাতে এখানে এসেছিস? এছাড়া আরভীকে কিভাবে চিনিস তুই?”

সমুদ্র এবার মিনহাজের পরিহিত গ্যাঞ্জি টেনে ধরে বললো,”আরভী কোথায় মিনহাজ? তুই আরভীর সাথে কি করেছিস?”

“আমি জানি না। আমি কিছু করি নি। ছাড় আমাকে। শান্ত হয়ে বস।”

সমুদ্র মিনহাজকে কষে এক থাপ্পড় মেরে চিৎকার করে বলে,”আমি সব জানি মিনহাজ। তুই আরশাদ রায়হানকে খুন করেছিস।”

“আমি খুন করি নি। বাবা করেছে।”

“তুই মামাকে থামাতে পারলি না?”

“চেয়েছিলাম কিন্তু সুযোগ মেলে নি। কিন্তু তুই কেন এতো রিয়েক্ট করছিস আগে আমাকে সেটা বল। আর আরভীকেই বা কিভাবে চিনিস তুই?”

“সেটা তোর না জানলেও চলবে। আগে বল আরভী কোথায়?”

“আমি সত্যি জানি না ইয়ার। আরশাদ রায়হানের মৃত্যুর পর শুধু একবার দেখা করেছিলাম। তারপর ওর সামনেও যাই নি আমি।”

“তোকে যেনো আমি আর কখনো আমার সামনে না দেখি। তোর কানাডায় যাওয়ার অনেক ইচ্ছে না? আমি টাকা দিবো। তবুও তুই এদেশে ফিরে আসবি না কখনো।” দাঁতে-দাঁত চেপে বললো সমুদ্র।

“আমারও ইচ্ছে নেই এদেশে থাকার। তবে আমি চলে যাওয়ার পর বাবার কি হবে? বাবাকে কে দেখবে?”

“মামাকে আমি দেখবো। তুই শুধু দেশ ছাড়।”

“এসব জানার পর তুই বাবাকে দেখে রাখবি বিশ্বাস হচ্ছে না।”

“আরে ইয়ার যেই মামাকে ছোট থেকে দেখে এসেছি, ভালোবেসেছি, নিজের আইডল মেনেছি সেই মামাকে কি করে ফেলে দেই? আমার মামা একজন খুনী। না পারছি এই সত্যটা মেনে নিতে, না পারছি মামাকে ফেলে দিতে। করবো টা কি আমি?”

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here