#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_8
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
মহুয়ার মাঝ রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলো। রুমে পানি খুঁজলো কোথাও একটুও পানি নেই। আস্তে করে রুম থেকে বের হয়ে ড্রয়িং রুমে আসলো। ড্রয়িং রুমে এসে অবাক হলো, রান্না ঘরের লাইট জ্বালানো সাথে ঠুকঠাক শব্দ আসছে।
ধীর পায়ে রান্না ঘরের দিকে এগিয়ে গেলো৷
আহনাফ এক হাত পকেটে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
মহুয়া আরও ভালো করে তাকালো। আহনাফ কে দেখেই যেভাবে এসে ছিলো সেভাবেই হাঁটা ধরলো।
” মাঝ রাতে চুল ছেড়ে ভূতের মতো সারা বাড়ি ঘুরে বেড়াচ্ছেন কেনো..?”
মহুয়ার পা থেমে গেলো। পেছন ফিরে বলে উঠলো, ‘ ভূত বিশ্বাস করেন..?’
আহনাফ কিছু সময় চুপ থেকে বললো,’ হুম অবশ্যই আমাদের বাড়ির পেছনে যে বন্ধ ঘর আছে ওখানে অনেকে ভূত দেখেছে। ওই ঘরে এক মেয়ে আত্মহত্যা করে ছিলো তারপর থেকে মাঝে মাঝে মেয়ের আত্মাকে অনেকেই দেখতে পায়। আর যে দেখে সে আর বেঁচে থাকে না।’
মহুয়া আস্তে ধীরে আহনাফের কাছে এসে দাঁড়ালো।
মহুয়াঃ কিন্তু আমি তো শুনেছি ভূত বলতে কিছু নেই।
আহনাফঃ ভূত বলতে নেই তবে পেত্নী, আত্মা, জ্বীন তো আছে।
মহুয়া ভয়ে এদিক ওদিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘ মেয়েটা আত্মহত্যা কেনো করেছে…?
আহনাফ কাপে কফি ঢেলে বললো,’ তা তো আমি জানিনা৷ তবে মাঝ রাতে মেয়েটার চিৎকারের শব্দ শুনা যায়।’
মহুয়াঃ আপনি শুনে ছিলেন..?
আহনাফঃ না। লোকের মুখে শুনেছি।
মহুয়া ভয়ে আহনাফের দিকে তাকিয়ে বললো,’ আমি এইসব ভয় পাই না।’
আহনাফঃ তাহলে এভাবে কাঁপছেন কেনো..? আগে চুল গুলো বেঁধে নিন আপনাকে দেখে আমার ভয় লাগছে বলে আহনাফ চলে যেতে ধরলো।
মহুয়াও আহনাফের পিছন পিছন যাচ্ছে।
আহনাফ পেছন ফিরে বলে উঠলো, ‘ এখানে কেনো এসে ছিলেন.??’
মহুয়া শান্ত কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ পানির জন্য। ‘
আহনাফঃ খেয়েছেন..?
মহুয়াঃ না!
আহনাফ গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো,’ তাহলে খেয়েনিন।’
মহুয়া চুপচাপ পানি খেয়ে আহনাফের পিছু পিছু দোতলায় চলে আসলো। আহনাফ নিজের রুমে প্রবেশ করতে গিয়েও থেমে গেলো৷
মহুয়া আহনাফ কে পাশ কাটিয়ে নিজের রুমের দিকে চলে গেলো ।
আহনাফও এবার নিজের রুমে প্রবেশ করে দরজা বন্ধ করে দিলো৷
মহুয়া রুমে এসে দেখে ছোঁয়া ঘুমাচ্ছে। দরজা বন্ধ করতে গিয়ে থেমে গেলো। দক্ষিণ পাশের রুম থেকে একটা মেয়েকে নিচে নেমে যেতে দেখে অবাক হলো সাথেও একঝাঁক ভয় এসে হানা দিলো। তাও সাহস করে মহুয়া এগিয়ে আসলো মেয়েটাকে দেখার জন্য। এটাই কি আহনাফের বলা সেই মেয়েটি!..?তাহলে কি আহনাফ সত্যি বলে ছিলো!..?
মহুয়া ভালো করে তাকালো। মেয়েটা নিচে গিয়ে পানি খেয়ে আবার উপরে উঠে আসলো। সিঁড়ি দিয়ে ছাঁদে উঠতে নিলেই মহুয়া পেছন থেকে ডাক দিলো।
মেঘলা বিরক্ত হয়ে পেছন ফিরলো৷ এই মাঝ রাতেও এই বাড়িতে শান্তি নেই এর থেকে তো বস্তিতেই ঢের ভালো শান্তিতে ঘুমানো যায়!..
মহুয়াঃ এতো রাতে তুমি ছাঁদে কেনো যাচ্ছো.?
মেঘলাঃ ঘুমাতে!..
মহুয়া ভ্রু কুঁচকে ফেললো। এই মেয়ে এতো রাতে ছাঁদে ঘুমাতে যাবে.? এমনতো নয় আত্মা মেঘলার মতো সেজে এসেছে!..
মহুয়াঃ তোমার রুমে কি হয়েছে.?
মেঘলাঃ রুম থেকে বের করে দিয়েছে আর কিছু জিজ্ঞেস করবে..? আমার এখন ঘুম প্রয়োজন।
মহুয়াঃ কে রুম থেকে বের করেছে..?
মেঘলাঃ আমার প্রানপ্রিয় স্বামী।
মহুয়াঃ কিন্তু উনি তো বাসায় নেই, আসেও না।
মেঘলাঃ এই মেয়ে এতো কথা জিজ্ঞেস না করে রুমে গিয়ে দেখে আসো। এতো রাতে না ঘুমিয়ে বাড়ি কেনো পাহাড়া দিচ্ছো.?
মহুয়াঃ আমি পানি খাওয়ার জন্য বেরিয়ে ছিলাম। এতো রাতে ছাঁদে না গিয়ে আমাদের সাথে আজকের রাত থেকে যেতে পারো।
মেঘলাঃ লাগবে না বাহিরে ঘুমিও অভ্যস আছে।
মহুয়াঃ এখানে শুনেছি রাতে কোনো এক মেয়ের আত্মা ঘুরে বেড়ায়। আমার রুমে আসো না হয় ভয় পাবে।
মেঘলাঃ এই সব ফালতু কথা মাথায় না নিয়ে ঘুমাতে যাওও। মানুষ মৃত্যুর পর আর কখনো ফিরে আসতে পারে না, নিজের হিসেব-নিকেশ দিয়ে কোল পায় না। আর আত্মা মেয়ে সেজে ঘুরে বেড়াবে!! যাওও মেয়ে ঘুমিয়ে পরও। বলেই মেঘলা হেলতে দুলতে ছাঁদে চলে গেলো।
মহুয়া চুপচাপ নিজের রুমে চলে আসলো। কেনো জানি এই মেয়েটার সাথে কথা বলতে ভালো লাগে মহুয়ার। কেমন আপন আপন মনে হয়।
_______
সেই প্রতিদিনের মতো আজও নামাজ পড়ে মহুয়া, ছোঁয়া ছাঁদে আসলো।
মেঘলা তখনো ঘুমাচ্ছে।
ছোঁয়া মেঘলাকে ছাঁদে দেখে প্রথম ভয় পেয়ে ছিলো।
ছোঁয়াঃ এই মেয়ের কি রুমে শান্তিতে ঘুম আসে না! অবশ্য আসবে কিভাবে কখনো চোখে এতো সুন্দর রুম দেখেছে!.? হুট করে তো আর এতো ভালো রুমে ঘুম আসবে না। লোভী মেয়ে একটা! দেখলেই বিরক্ত লাগে।
মহুয়া একবার মেঘলার দিকে তাকালো। ছোঁয়াকে মুখ বন্ধ রাখতে বললো। ওর কথার শব্দে মেয়েটার ঘুম ভেঙে যাবে।
ছোঁয়া বুঝে পায় না এই মেয়ের প্রতি এতো আদিখ্যেতা দেখানোর কি আছে.?? এই মেয়ের জন্য আজ ওর ভাই বাড়ি ছাড়া, বড় মামি ভালো নেই। সামনে আরও কি কি সমস্যা যে এই মেয়ে তৈরি করে আল্লাহই জানে।
________
আমেনা বেগম অনেক খুশি বড় ছেলে বাড়ি ফিরে এসেছে। নিজ হাতে ছেলের পছন্দের সব কিছু রান্না করলেন।
সবাই এক এক করে নিচে নেমে আসলো।
আহনাফ দাদিজানকে খাবার, মেডিসিন খাইয়ে নিচে নেমে আসলো৷
আজাদ চৌধুরীকে বসে থাকতে দেখে উনার পাশে গিয়ে বসলো।
আহনাফঃ আব্বু আপনি মনে হচ্ছে আমাদের থেকে কিছু লুকাচ্ছেন!.?
আজাদ চৌধুরীঃ এমনটা কেনো মনে হচ্ছে তোমার.?
আহনাফঃ আমি খেয়াল করছি আপনি সব সময় টেনশনে আর ভয়ের মধ্যে থাকছেন!।
আজাদ চৌধুরীঃ তুমি ভুল ভাবছো।
আহনাফঃ মেঘলা মেয়েটার বিষয়টা আপনি যতোটা সাধারণ সবার সামনে দেখাচ্ছেন ততোটাও নয়। মেয়েটা কে.? আর কে পাঠিয়েছে.?? কেনোই বা পাঠিয়েছে..? এতে লোকটার লাভ কি.?কে সেই লোক.? তার সাথে আমাদের কিসের শত্রুতা.?
আজাদ চৌধুরী গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো,’ এতো কিছু তোমার ভাবতে হবে না। নিজের হসপিটালে মন দাও আর সাবধানে সব কিছু দেখা শোনা করো। তোমাদের আর এই পরিবারের নিরাপত্তার জন্য এখনো তোমার আব্বু বেঁচে আছে।’
আহনাফ স্থির চোখে তাকিয়ে রইলো আজাদ চৌধুরীর দিকে। আজাদ চৌধুরী মুখে কিছু না বললেও আহনাফ ঠিক বুঝতে পারছে কিছু তো একটা রহস্য লুকিয়ে আছে।
খাবার টেবিলে মেঘলা ছাড়া সবাই বসে আছে।
আমেনা বেগম সব কিছু এগিয়ে দিচ্ছেন।
আজাদ চৌধুরীঃ শ্রাবণ কিছু দিন অফিসে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। কিছুদিন বাসায় থাকো বন্ধুদের সাথে সময় কাটাও।
শ্রাবণ খাবারের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আজাদ চৌধুরীর দিকে তাকালো,’ আমি ঠিক আছি আজ থেকে অফিসে আসবো।’
আজাদ চৌধুরীঃ আমি নিষেধ করেছি।
শ্রাবণঃ আমি এখন ছোটো বাচ্চা নেই আপনার সকল সিদ্ধান্ত আমার উপর চাপিয়ে দেওয়া বন্ধ করুন!!..
আজাদ চৌধুরীঃ আমি কিছু চাপিয়ে দিচ্ছি না তোমার ভালোর জন্য বলছি।
শ্রাবণঃ অনেক ভালো বুঝেছেন এখন আমার ভালো আমাকে বুঝতে দেন।
আজাদ চৌধুরী চুপ করে ছেলের দিকে তাকিয়েরইলেন৷ বুঝতে পারলেন উনার উপর ছেলের অনেক অভিমান জমে গেছে।
শ্রাবণ মহুয়ার দিকে তাকিয়ে উঠে গেলো। বড় বড় পা ফেলে নিজের রুমের দিকে চলে গেলো।
_______
শ্রাবণ রুমে এসে শার্ট খুলে বিছানায় ফেলে দেয়ালে স-জোরে একটা ঘুষি মারলো। বুকের ভেতর কিছু একটা নেই মনে হচ্ছে। ভীষণ খালি খালি লাগছে৷ চুল খামচে ধরে বিছানায় বসে পড়লো। কেমন জীবনটাই এলোমেলো হয়ে গেছে। এই এলোমেলো জীবনে সে আর কাউকে চায় না। কিন্তু বেহায়া মন মানতে চায় না নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি এতো মায়া, টান কেনো…? কেনো দেখলেই বুকের বা পাশে চিনচিন ব্যাথা হয়!.?
পর্দার আড়ালে লুকিয়ে আছে মেঘলা। রুমে এসে ছিলো নিজের কাপড় নিতে। কাপড় হাত দিতেই বুঝলো শ্রাবণ আসছে ভয়ে পর্দার আড়ালে লুকিয়ে আছে। এখন তো এই ছেলের রাগ দেখে বের হতে আরও ভয় লাগছে।
শ্রাবণ পাশে টেবিল থেকে একটা ফাইল তুলে নিলো। হঠাৎ চোখ আটকালো পর্দার নিচে এক জোরা পায়ের দিকে।
শ্রাবন কিছু সময় তাকিয়ে থেকে চোখ সরিয়ে বলে উঠলো, ‘ পর্দার আড়াল থেকে বের হয়ে আসো।’
গুণে গুণে পাঁচ মিনিট চলে গেলো মেঘলা বের হলো না।
শ্রাবণ দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো, ‘ বের হতে আর এক মিনিট দেরি হলে গুণে গুণে ছয়টা থাপ্পড় পড়বে গালে।’
থাপ্পড়ের কথা শুনে সাথে সাথে মেঘলা বের হয়ে গেলো।
শ্রাবণঃ কি চুরি করতে এসে ছিলে..?
মেঘলাঃ আমি চুরি করতে আসিনি।
শ্রাবণ তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে উঠলো, ‘ তাহলে কি আমাকে দেখতে এসে ছিলে..?’
মেঘলাঃ আপনি দেখতে অতোটাও হ্যান্ডসাম নন যে আপনাকে দেখতে রুমে এসে লুকিয়ে থাকবো!..
শ্রাবণ ভীষণ রেগে গেলো। স্কুল,কলেজ, ভার্সিটিতে কতো মেয়ে ওর জন্য পাগল ছিলো আর এই সামান্য বস্তির অশিক্ষিত মেয়ে কিনা খুব সুন্দর করে ওকে অপমান করে ফেললো!..? শ্রাবণ নিজেকে বুঝালো ” বস্তির মেয়েদের চয়েস আর কতো টুকু ভালো হবে শ্রাবণ তুই এই মেয়ের কথায় রেগে যাচ্ছিস!!.?”
শ্রাবণঃ তাহলে এই রুমে কি..? আমি কাল রাতে বলে দিয়েছি এই রুমে তোমার ছায়াও জেনো না দেখি!।
মেঘলাঃ কাপড় নিতে এসে ছিলাম।
শ্রাবণঃ শুধু কাপড় নয় সব কিছু নিয়ে বের হয়ে যাও। তোমার গায়ের গন্ধ ও জেনো বাতাসের সাথে এই রুমে না থাকে।
মেঘলা চুপচাপ সব কিছু নিয়ে বের হয়ে গেলো। এখানে ঝগড়া ঝামেলা করে লাভ নেই বস্তিতে যেতে হবে অনেক কাজ বাকি।
যাওয়ার আগে বলে উঠলো, ‘ আমার শরীর থেকে আপনার মতো বিশ্রী গন্ধ আসে না মাতাল লোক।’
________
মহুয়া, ছোয়া কলেজের উদ্দেশ্য বের হলো।
আজাদ চৌধুরী নির্জন কে ওদের নিয়ে যাওয়া আবার ছুটির পর নিয়ে আশার কাজ দিলো। কিন্তু তাতে রাজী হলো না ছোঁয়া। ছোঁয়া কিছুতেই এই নির্জনের সাথে যাওয়া আশা করবে না।
নির্জন ও বলে দিলো এই ছোঁয়া কটকটি কে সাথে নিবে না।
অনেক ঝামেলার পর সিদ্ধান্ত হলো যাওয়ার সময় আহনাফের সাথে যাবে আশার সময় নির্জন নিয়ে আসবে।
মহুয়া তো প্রচুর রেগে আছে আহনাফের উপর বেয়াদব লোক কাল রাতে ওকে মিথ্যা বলে ভয় দেখিয়েছে। সকালে মহুয়া ছোঁয়া কে জিজ্ঞেস করে ছিলো। ছোঁয়া তো মহুয়ার কথা শুনে প্রচুর হেঁসে ছিলো।
আহনাফ গাড়ি নিয়ে ওদের জন্য অপেক্ষা করছে।
মহুয়া শুভ্র রঙের সেলোয়ার-কামিজ পড়েছে, চুল গুলো বেনি করে এক পাশে রাখা। বাড়ি থেকে বের হয়েছে।
আহনাফ একবার তাকিয়ে চশমা ঠিক করে গাড়িতে বসে পড়লো।
ছোঁয়া, মহুয়া পেছনে বসতেই আহনাফ বলে উঠলো, ‘ আমাকে দেখে কি তোর ড্রাইভার মনে হয় ছোঁয়া!..? ‘
ছোঁয়াঃ আমাদের জন্য হয়ে যাওও ভাই। শ্রাবণ ভাইয়া সব সময় আমাদের এক সাথে বসতে দিয়েছে।
আহনাফঃ আমি শ্রাবণ নই। একজন সামনে চলে আয়।
ছোঁয়াঃ তুমি তো জানো সামনে বসলে আমার মাথা ঘুরায়, শরীর খারাপ লাগে, বমি আসে।
আহনাফ মোবাইল ছোঁয়ার হাতে দিয়ে বলে উঠলো, ‘ তাহলে পেছনে বসে গেইম খেল আর পাশের জনকে সামনে চলে আসতে বল।
মহুয়াঃ একদম মোবাইলের লোভ দেখাবেন না আমি আপনার সাথে বসবো না। ছোঁয়া সামনে যাওও।
ছোঁয়াঃ তাহলে আজ আর কলেজ না হসপিটাল যেতে হবে।
মহুয়াঃ তাহলে চলো রিক্সা দিয়ে যাই আমরা।
ছোঁয়াঃ ভাই রেগে যাবে।
মহুয়াঃ আমি আছি।
আহনাফ এতোক্ষন ওদের কথাগুলো চুপ করে শুনলো।এবার গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো, ‘ যে গাড়ি থেকে এক পা নিচে রাখবে তাকে আজ হেঁটে কলেজ যেতে হবে!!..।
ছোঁয়া বাধ্য মেয়ের মতো সামনে বসতে গেলে আহনাফ নিষেধ করে গাড়ি স্টার্ট দিলো।
মহুয়া বাহিরের দিকে তাকিয়ে রইলো।
আহনাফ ওদের কলেজ গেইট নামিয়ে চলে গেলো।
কলেজে আসতেই আরেক ঝামেলা এসে সামনে দাঁড়ালো।
রনি দলবল নিয়ে মহুয়ার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
ছোঁয়াঃ এই সমস্যা কি তোর..?
রনিঃ তোর সাথে আমার কোনো সমস্যা নেই শালিকা, বোন জিজুর মাঝে কাবাবে হাড্ডি না হয়ে গুস্ত হওয়ার চেষ্টা কর।
ছোঁয়া লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে হাসলো।, ‘ কাক ও আজকাল দেখি নিজেকে ময়ূর ভাবতে শুরু করেছে গুড! অনেক জোক্স শুনলাম এবার রাস্তা ছাড়।’
রনি সিগারেটে আগুন জ্বালিয়ে মহুয়ার দিকে তাকালো। মাথা নিচু করে ভদ্র মেয়ের মতো দাঁড়িয়ে আছে।
রনিঃ আমার বিষয় কি ভাবলে.?
ছোঁয়া কিছু বলার আগেই রনি ইশারায় একটা কে কিছু বললো। কালো চিকনা একটা ছেলে ছোঁয়ার মুখে টেপ মেরে দিলো। হাতগুলো শক্ত করে ধরে বললো” আগে বসের সাথে মেডামের কথা শেষ হোক।”
মহুয়া তখন মাথা নিচু করে আছে।
রনিঃ দেখ আমি একটা কথা সোজাসাপটা কইয়া দেই ভালোই ভালো বিয়ে করতে রাজি হয়ে যা, না হয় এই রনি এমন অবস্থা করবো লোকের সামনে মুখ দেখাইতে পারবি না। রনির চোখ শিকারীর চোখ। বলেই বিশ্রী হাসি দিলো। যা চাই নিজের করেই ছাড়ি।
ছোঁয়া ছুটার চেষ্টা করেও লাভ হলো না চিকনার শরীরে এতো শক্তি!
মহুয়া রনির দিকে তাকাতেই রনি বলে উঠলো, ‘ এভাবে তাকিয়ে লাভ নাই রনি ভয় পায় না আরও প্রেমে পড়ে, মুগ্ধ হয়,নিজের করবার ইচ্ছে জাগে।’
মহুয়া ব্যাগটা রনির এক চেলার হাতে রাখলো। তারপর ঠাসস ঠাসস করে রনির পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটার গালে কয়েকটা থাপ্পড় বসিয়ে, ছোঁয়ার হাত ধরা ছেলেটার গালেও মারলো। রনির চুপচাপ তাকিয়ে দেখতে লাগলো। মহুয়া রনির দিকে তাকালো কিছু সময় তাকিয়ে পা থেকে জুতা খুলে রনির গালে মারতে শুরু করলো।
কেউ ভাবতেও পারেনি এমন কিছু হবে!!৷ রনিও হয়তো কল্পনাও করেনি। এতোক্ষন রনির ছেলেদের মেরেছে রনি কিছু বলেনি, এখন রনিকে মারছে রনির ছেলে গুলো দর্শকের মতো চুপচাপ দাঁড়িয়ে দেখছে। মানে সমানে সমান!! মহুয়ার দিকে পুরো কলেজের স্টুডেন্ট অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। মহুয়া জেনো নিজের হুসে নেই। রনির এখন মনে হচ্ছে ওরসামনে সামান্য একটা মেয়ে নয় ওর মৃত্যু দাঁড়িয়ে আছে। একটা মেয়ের সামনে আজ সে বিড়াল। মেয়েদের শরীরে এতো শক্তি!.?
মহুয়াঃ লজ্জা, ভয় থাকলে আর দ্বিতীয় বার এই কলেজের আশেপাশে তোকে দেখবো না।
সব ছেলে মেয়েরা এক সাথে হাত তালি দিতে লাগলো।
________
আহনাফের রাস্তায় এক বন্ধুর সাথে দেখা হয়ে গেলো। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে অনেক কথা বলে গাড়ি রেখে রেস্টুরেন্টের দিকে যাচ্ছিলো।
বিকট শব্দ শুনে পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো ওর গাড়িকে বড় একটা ট্রাক ধাক্কা মেরেছে। গাড়িটা দূরে গিয়ে ছিটকে পড়ে একদম ভেঙে মুচড়ে আগুন ধরে গেছে।
আহনাফ স্তব্ধ হয়ে শুধু তাকিয়ে রইলো।
চলবে…..
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।