#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_২০
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
একটা অন্ধকার রুমে চেয়ারে হাত পা বাঁধা অবস্থায় অজ্ঞান হয়ে আছে পলাশ।
অন্ধকার রুমের দরজা ঠেলে একজন লোক প্রবেশ করলো। অন্ধকার রুমটা সেকেন্ডে আলো জ্বলে উঠলো। যত্ন সহকারে একটা চেয়ার পলাশের মুখোমুখি রেখে বলে উঠলো, ‘ মেডাম আসেন। ‘
দরজা দিয়ে ফরমাল ড্রেসআপে প্রবেশ করলো একটা নারী। খুব সুন্দর করে হেঁটে এসে চেয়ার টেনে পলাশের মুখোমুখি বসল। পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটাকে বললো,’ ফাহিম ওর মুখে পানি ঢেলে দাও।’
__________
আহনাফ বসে আছে রনির সামনে।
এতোক্ষন প্রচুর মেরেছে রনিকে। কিন্তু এই ছেলে ভয় পাওয়ার বদলে কেমন বিশ্রী হাসছে।
~ ভাই শা*লা পাগল হয়ে যায় নাই তো.?
রনি~ ওই তোর কাছে আমার বইন বিয়া দিছি.? শা*লা কছ কোন সম্পর্কে.?
ছেলেটা আহনাফের দিকে তাকালো। আহনাফ খুব শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রনির দিকে। ঝড় আশার আগে যেমন প্রকৃতি শীতল থাকে এখন ঠিক তেমনই আছে।
রনি ঘারটা বাঁকা করে এক হাত দিয়ে ঠোঁটের কোনে লেগে থাকা রক্তটা মুছে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ দুলাভাই একগ্লাস পানি দে.. বইন তো নাই তাও তোরে দুলাভাই বানায় নিলাম। এই খুশিতে একটা সিগারেট দে।’
ছেলেটা ভয়ে ভয়ে আহনাফের দিকে তাকালো। আহনাফ এখনো চুপচাপ রনিকে দেখছে।
রনির সে দিকে খেয়াল নেই। দেখেও না দেখার মতো একে ওকে এটা আনতে ওটা আনতে বলছে৷ আর হুঁ হুঁ করে হাসছে।
আহনাফ হঠাৎ বলে উঠলো, ‘ সাদ ওই রুম থেকে আগুনে দিয়ে রাখা রডটা নিয়ে আয়।’
রনি থামলো ভয়ার্ত দৃষ্টিতে আহনাফ দিকে তাকালো। হাত জোর করে বলে উঠলো ” ভাই ভাই আমাকে মারবেন না ভাই মারবেন না, আমি সব বলছি।’
আহনাফ ঠিক আগের মতোই।
রনি আহনাফের দিকে তাকিয়ে বিশ্রী ভাবে হাসতে হাসতে বলে উঠলো, ‘ তোর কি মনে হয় আমি আমার জীবন ভিক্ষা এভাবে তোর কাছে চাইব.?? এই রনি কারো কাছে মাথা নত করে না সবাই রনির পায়ে ধরে জীবন ভিক্ষা চায়। তুইও চাইবি শুধু একবার এখান থেকে বের হই তোর জীবন আমি জাহান্নাম বানিয়ে ছাড়ব।
আহনাফঃ আগে বের হয়ে দেখা। জীবন নিয়ে বের হতে পারবি তো.?
এর মধ্যে সাদ ছেলেটা গরম রড এনে আহনাফের সামনে রাখল। রড লাল হয়ে আগুনের লাভার মতো হয়ে আছে।
রনি উপর দিয়ে এইসব বললেও ভীষণ ভয় পেয়ে গেছে। ভয়ে হাত পা কাঁপছে।
আহনাফ রনির অবস্থা খুব ভালো করেই বুঝতে পারলো। তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে উঠলো, ‘ তোকে দুইটা অপশন দিচ্ছি যে কোনো একটা বেছে নে.’
রনি ভয়ে আহনাফের দিকে তাকালো। রডের দিকে একবার তাকালো আরেকবার আহনাফের দিকে।
আহনাফঃ প্রথম, তুই প্রথম থেকে মহুয়ার সব কিছু বলবি। তাহলে খুব সহজ মৃত্যু দেওয়া হবে।
দ্বিতীয়, এই সব কিছুর পেছনে কে.? আর না বললে , বলেই রডটা হাতে নিয়ে রনির হাতে চেপে ধরলো।
রনি চিৎকার দেওয়ার আগেই সাদ ছেলেটা রনির মুখ টেপ মেরে ছিলো।
রনি যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে ইশারা করলো সে সব বলবে।
বিজয়ী হাসি ফুটে উঠলো আহনাফের চোখে মুখে।
____________
পলাশ চোখ পিটপিট করে আশেপাশে তাকালো। সে এখানে কেন? ওতো হসপিটাল ছিলো”!
পলাশঃ আমি এখানে কেন? আর আপনি.?
মেয়েটা অবাক হলো না। জেনো সে জানতো ছেলেটা ওকে চিনে ফেলবে।
মেয়েটা পকেট থেকে রিভলবার বের করে ওর আর ছেলেটার মাঝ খানে ছোট টেবিলের উপর রাখলো।
ভয়ে চুপসে গেলো পলাশ।
~ তাহলে আগে পরিচিত হয়ে নেই।
পলাশ ভয়ে ভয়ে মাথা নাড়ল।
~ আমি CID মেঘলা ইসলাম মেঘ।
CID শুনেই কপাল বেয়ে ঘাম পড়তে শুরু করলো পলাশের।
মেঘলা চঞ্চল চোখে পলাশকে ভালো করে দেখে নিলো তারপর ফাহিমের দিকে তাকিয়ে বললো,’ আচ্ছা ফাহিম আমাকে দেখতে কি ডাইনীদের মতো লাগছে.??
ফাহিম নিজেও মেঘলাকে ভয় পায়। মেঘলাকে ভয় পাওয়ার যথেষ্ট কারন আছে। এই যে সামনে বসে থাকা মেয়েটা এখন কি মিষ্টি করে হাসছে, কিছু জিজ্ঞেস করছে এখন যদি সঠিক উত্তর না পায় সাথে সাথে সে ডাইনী রুপ দারন করতে এক মুহূর্ত দেরি করবে না। CID সব চেয়ে সাহসী আর রাগী অফিসার হলো মেঘলা। যার তাকানোতেই সবাই ভয়ে মাথা নিচু করে ফেলে।
ফাহিমঃ না মেডাম আপনাকে দেখতে খুবই মিষ্টি লাগছে।
মেঘলা খুশি হলো উত্তর শুনে। সাদা সার্ট,চুল গুলো উপরে করে জুটি বাঁধা, দেখতে আসলেই মিষ্টি একটা মেয়ে লাগছে।
মেঘলা পলাশের দিকে তাকিয়ে বললো,’ আপনি ভয় পাচ্ছেন কেন.? কাঁপছেন কেন.? ‘
পলাশ কিছু না বলে রিভলবারের দিকে তাকিয়ে পানি খেতে চাইল।
মেঘলা ফাহিমকে ইশারায় পানি নিয়ে আসতে বললো।
ফাহিম পানি নিয়ে আসতেই মেঘলা পলাশকে দেখিয়ে সবটা পানি একটু একটু করে খেয়ে নিল।।
মেঘলাঃ পানি কেন সাথে বিরিয়ানি ও পাবেন আগে আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।
পলাশঃ জ…জ্বি।
মেঘলাঃ ভয় পাবেন না উত্তর ঠিকঠাক হলে আপনার কিছু হবে না আর ভুল হলে বলেই পাশ থেকে একটা ছুরি হাতে নিয়ে পলাশের হাতের চারপাশ ঘুরিয়ে বলে উঠলো, ‘ একটা আঙ্গুল ও থাকবে না।’
পলাশ CID শুনার পর থেকেই ভীষণ ভয়ে আছে। আজ হয়তো তার জীবনের শেষ দিন। আজ কি তাহলে জীবনের সব পাপের ধুলো পড়া পৃষ্ঠা নাড়া খাবে!!??.
মেঘলা এবার সিরিয়াস হয়ে পলাশের মুখোমুখি বসল। গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো, ‘ মহুয়ার জীবনের প্রথম থেকে সবটা শুনতে চাই।’
পলাশের ভয় দ্বিগুণ বেড়ে গেলো।
পলাশঃ কে মহুয়া.? আ…আমি কিছু জানিনা।
মেঘলা ছুরি হাতে নিয়ে ফাহিম কে বলে উঠলো, ‘ সুপারি কাঁটার যন্ত্রটা নিয়ে আয়। আমার চোখের সামনে একটা একটা করে ওর আঙ্গুল গুলো কাঁট যতোক্ষন না সত্যি কথা বলে।
পলাশের ভয়ে আত্মা শুকিয়ে গেলো। ভয়ে ভয়ে বলে উঠলো, ‘ বলছি বলছি..’
মেঘলা মুচকি হেঁসে তাকালো।
___________
অতীত,
মহুয়ার বাবা মা ওর জন্মের পরপর মা-রা যায়।
মহুয়া বড় হয় ওর মামা মামির কাছে। মামার ছিল দুই ছেলে এক মেয়ে।
মুর্শেদ তালুকদার ছিল মহুয়ার মামা। একমাত্র মুর্শেদ আর ওর দুই ছেলে ছাড়া আর কেউ তেমন মহুয়াকে পছন্দ করত না। রাস্তা দিয়ে বের হলে পাড়াপ্রতিবেশিরা বুঝিয়ে দেয় ওর বাবা মা বোনের মৃত্যুর জন্য একমাত্র ও দায়ী। মহুয়া অলক্ষী যার জন্য ওর জন্মের প্রথম দিন ওর বাবা বোন আর দ্বিতীয় দিন মা পৃথিবী ছাড়েন।
নিজের মামিও কোনোদিন ছাড় দেয় না প্রতিদিন নিয়ম করে মনে কড়িয়ে দেয় মহুয়া অপয়াঅলক্ষী।
রুমের পাতলা পর্দা টেনে নিলো মহুয়া। সূর্য মামা আজকে একটু বেশি জ্বালাতন করছে। আজ নিশ্চয়ই সূর্য মামা মামির সাথে ঝগড়া করে এসেছে,সেই জন্যই এতো সকাল সকাল মামির সব রাগ আমার মতো নিরীহ বাচ্চার উপর ঝারছে।
বালিশে মুখ গুঁজে একটু ঘুমানোর চেষ্টা করতেই নিচে চেচামেচি, ভাঙচুরের শব্দ শুনতে পেল। এটা নতুন কিছু না প্রতিদিন হয়ে আসছে।
রায়মা বেগম রেগে ভাঙচুর করছেন আর মহুয়াকে ইচ্ছে মতো গালাগালি করছেন।
মহুয়া বিছানা থেকে উঠে রুমের দরজা জানালা ভালো করে লাগিয়ে আবার এসে শুয়ে পড়লো দশটার দশ মিনিট আগে ঘুম থেকে উঠবে। এর আগে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে গেলেও সে নিচে যাবে না।
আর এই দিকে রাইমা বেগম বলেই চলেছেন,’ জমিদারের মাইয়া সারাদিন ঘুমাইব আর আমি এই বাড়ির কাজের লোক। সারাদিন রান্না ঘরে পড়ে থাকি রুপ দিয়ে কি ধুয়ে ধুয়ে পানি খাইব আপদ আল্লাহ আপদ চোখের সামনে থেকে দূরও করে না। এতো মানুষ ম’রে তোরে দেখে না। আজ থেকে মেপে মেপে খানা দেওয়া হইব। খানা কি রাস্তায় পইরা থাহে।সারাদিন ঘুম, বন্ধুদের সাথে আড্ডা ঘরে কোনো কাম নাই। আরও হাজারো কথা বলছেন আর হাঁড়ি পাতিলের উপর রাগ ঝাড়ছেন।
মহুয়া এইসব শুনতে শুনতে অভস্ত্য।
ফ্রেশ হয়ে দশটার ঠিক পাঁচ মিনিট আগে বের হলো বাড়ি থেকে। আজ সকালের খাবার যে পাবেনা আগে থেকেই জানত। ব্যাগে দেখে নিল কতো টাকা আছে। ৫০ টাকা পেলো।
এই দুতলা বাড়িটি মহুয়ার বাবার। ওর বাবার মৃত্যুর পর পর যখন ওর মা ও মা-রা যায় তারপর ওর দায়িত্ব নেয় মুর্শেদ তালুকদার। সম্পর্কে ওর দূর সম্পর্কের মামা হয়। তারপর থেকে তারা এই বাড়িতেই থাকে মহুয়ার আব্বুর সব কিছু দেখাশোনা করে। মহুয়া কখনো দাদা বাড়ি ঠিকানা বা নানা বাড়ির ঠিকানা পায়নি। না কখনো কোনো আত্মীয় স্বজনরা এসেছে। সে একমাত্র তাদের ছাড়া আর কাউকে চিনে না। মা বাবার, বোন তাদের ছবিও কোনোদিন দেখেনি। পাড়াপ্রতিবেশিদের মুখ থেকে শুনে ওর মা বাবা ভালোবেসে পালিয়ে বিয়ে করেছিলেন। ওর বাবা খুব ভালো মনের মানুষ ছিলো। ওর বাবা ছিল পুলিশ আর মা উকিল। মহুয়া এইসবের সত্যি কতোটুকু তাও জানেনা। মামা মামি কখনো ওর মা বাবার কথা তুলে না। কিছু জিজ্ঞেস করলেও ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দেয়। সে নাকি বড় হয়নি সে এখনো ছোটো।
মহুয়া পাঁচ মিনিট হাঁটতেই স্কুলে চলে আসলো। সে এবার দশম শ্রেণিতে পড়ে। স্কুলে আসতেই বেস্টুর সাথে দেখা হয়ে গেল। দুইজন কথা বলতে বলতে গেইট দিয়ে ঢুকার সময় লক্ষ করলো একটা বোকাসোকা, চশমা পড়া ছেলে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।
মহুয়া বেস্টু মাইশা দুষ্টু হেঁসে বলে উঠলো, ‘ তোর আশিক।’
মহুয়া রেগে মাইশার দিকে তাকালো।
মাইশাঃ ওফ্ফ তোর রাগী তাকানো তে আমিই প্রেমে পড়ে গেলাম বেচারা আশিক তো আছাড় খেয়ে পড়বে।
মহুয়াও মাইশার কথা শুনে হেঁসে ফেললো। আজ একটা বছর এই ছেলেটাকে দেখে আসছে। মহুয়া বাড়ি থেকে বের হলেই ছেলেটাকে দেখবে রাস্তার পাশে টং দোকানে, কখনো স্কুলের গেইটের পাশে, আবার কখনো ওদের বাড়ির রাস্তায়। মোট কথা মহুয়া যেখানে এই ছেলেও সেখানে। মহুয়া বুঝে পায় না এই ছেলে কি জাদু জানে.? না হলে মহুয়া কোথায় আছে এই ছেলে কিভাবে জানতে পারে.?? দেখতে বোকাসোকা, চোখে গোল ফ্রেমের চশমা, গায়ের রং ফর্সা, চুল গুলো এক পাশে লেপ্টে রাখা যেন তেল দিয়ে রেখেছে। শার্টের সব গুলোই বোতাম লাগানো, গলার কাছের বোতাম টাও যার জন্য একটু বেশিই বোকা টাইপের লাগছে।
বোকাসোকা চোখে তাকিয়ে থাকে মহুয়ার দিকে। এই এক বছরে কখনো মহুয়ার সামনে এসে দাঁড়িয়ে একটা কথা বলেনি। শুধু পাঁচটা চিঠি দিয়ে ছিলো তাও বিশেষ দিনে, চিঠির ভাষায় যে কোনো নারী এই বোকাসোকা ছেলের প্রেমে পড়তে দ্বিতীয় বার ভাববে না। মহুয়া মাঝে মাঝে ভাবে এই ছেলে কি কোনো লেখকের লেখা চিঠি চুরি করে আমাকে দিল.?? এতো সুন্দর কিভাবে হয় একটা মানুষ চিন্তা ভাবনা!!..?
মহুয়া ক্লাস শেষে স্কুল থেকে বের হতেই রাস্তার পাশে তাকালো। ছেলেটা কে না দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেললো। আশেপাশে খুঁজতে শুরু করলো। না কোথাও নেই, ছেলেটাকি চলে গেল.??
মন খারাপ হলো মহুয়ার। মাইশা এসে মহুয়ার পেছনে দাঁড়িয়ে বললো,’ চল বাড়িতে যাওয়া যাক।’
মহুয়াঃ হুম।
মাইশাঃ এই মেহু তোর মুখ এতো শুখনা কেন.? সকালে খেয়েছিস.?
মহুয়ার পেটে মোচড় দিয়ে উঠলো। ভীষণ খিদে পেয়েছে ক্লাসে পড়ার চাপে ভুলে ছিলো আর এখন সেই নোকাবোকা লোকটা খুজতে গিয়ে।
মহুয়াঃ চল মাইশা দুইটা সিঙ্গারা কিনে নিয়ে আসি।
মাইশাঃ তোর বাড়ি, তোর সব কিছু আর ওই ডাইনী মহিলা তোর উপর এতো অত্যাচার করে! কিভাবে সহ্য করিস তুই.? আমি হলে তো ডাইনীর ঘার মটকে দিতাম।
মহুয়াঃ তোর ঘার মটকানো শেষ? এবার চল. আমার প্রচুর খিদে পেয়েছে।
মাইশাঃ তুই এমন কেন.?
মহুয়াঃ উনি যেমনি হোক মাইশা, উনারা আমাকে লালন পালন করে বড় করেছে। আজ আমি কোথায় থাকতাম যদি উনারা আমাকে আগলে না নিত.? আমার উনারা ছাড়া কেউ নেই। মামি আমাকে আপন নাই ভাবুক আমার উনাকে আমার মামি নয় মা মনে করি। ছোটো থেকে মা ঢেকেছি বলে কতো মার খেয়েছি তাও আমি মা ডাকি, মামি বলতে চাইলেও মুখ দিয়ে মা চলে আসে। আমি ভালোবাসি উনাদের। একদিন তারাও বাসবে।
মাইশা আর কিছু বললো না চুপচাপ একটা হোটেল থেকে সিঙ্গারা আনতে গেল।মহুয়া রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
হুট করে সেই বোকাসোকা টাইপের ছেলেটা মহুয়ার সামনে এসে দাঁড়ালো। বেশ অবাক হলো, থাকে বুক ধুকপুক করা শুরু করলো। কেমন লজ্জা লাগতে শুরু করলো।
ছেলেটার হাতে একটা প্যাকেট, প্যাকেট টা মহুয়ার দিকে বাড়িয়ে দিলো।
মহুয়া কি বলবে..? কিছু জিজ্ঞেস করতে চেয়েও পারছে না। হুট করে সামনে আশায় সব গুলিয়ে যাচ্ছে। এতোদিন তো কতো কিছু ভেবে রেখে ছিলো। কত শব্দ সাজিয়ে রেখে দিলো।
ছেলেটা এই প্রথম মহুয়ার সাথে কথা বললো,’ নেন দরুন.’
মহুয়াঃ এটা কি.?
~ বাসায় গিয়ে খুলে দেখবেন।
মহুয়া হাত বাড়িয়ে প্যাকেট টা নিল।
ছেলেটা হাসলো। কি চমৎকার সেই হাসি। সদ্য কিশোরী মেয়ে মহুয়া মুগ্ধ হলো। এখন বুঝি মুগ্ধ হওয়ার বয়স? হুটহাট প্রেমে পড়ার বয়স.? মিথ্যা মায়াজালে আঁটকে পড়ার বয়স.? ! এই যে মহুয়া ছেলেটার হাসি দেখেই মুগ্ধ হলো। পৃথিবীর সব চেয়ে সুন্দর হাসির অধিকারী হিসেবে সামনে দাঁড়ানো বোকা ছেলেটাকে ঘোষণা করল।
মহুয়ার ভাবনার মধ্যেই খেয়াল করলো ছেলেটা চলে যাচ্ছে। মহুয়া এক ভয়াবহ কাজ করে বসলো। হঠাৎ পেছন থেকে ছেলেটা কে ডেকে বলে উঠলো, ‘ আপনার নাম কি..?’
ছেলেটা পেছন ফিরে মুচকি হেঁসে বললো, ‘ পলাশ’
ব্যাস এই মুচকি হাসি তীরের মতো মহুয়ার কিশোরী মনে এসে বিঁধল। কি বিঁধল!? কাঁটা নাকি গোলাপ.? এটা কাঁটা যুক্ত গোলাপ।
________
বাড়িতে এসেও মহুয়া শুধু সেই বোকাসোকা ছেলের কথাই ভাবছে। চাইলেও মাথা থেকে নামাতে পারছে না। হুট করে সব কিছু রঙিন মনে হচ্ছে। ফুল দেখে কানে গুজতে ইচ্ছে করছে, শাড়ি পড়ে ছেলেটার সামনে যেতে ইচ্ছে করছে কি আজব! মহুয়া কি প্রেমে পড়েছে.? তাও এক বোকাসোকা ছেলের.?
পাঁচটা চিঠি হাতে নিয়ে বসে আছে। ঠিক জানা নেই এই এক বছরে এই চিঠি গুলো কতোশবার পড়েছে। ফ্রী হলেই চিঠি গুলো পড়তে শুরু করে মিটিমিটি হাসে, আবার মন খারাপ করে। কেন ছেলেটা সাহস করে সামনে এসে কথা বলে না। দূর থেকে শুধু তাকিয়ে দেখে। ছেলেটার কি একটু দু চারটা কথা বলতে ইচ্ছে হয় না.?? মহুয়ার তো হয়, অনেক কথা বলতে ইচ্ছে হয়।
রাতে বাড়িতে সাইফ আসল। সাইফ, সবুজ জমজ ভাই। সবুজ বিদেশ থাকে আর সাইফ নতুন চাকরি নিয়েছে।
সাইফ খেতে বসতেই মিম দৌড়ে এসে ভাইকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো, ‘ আমার চকলেট কোথায় ভাই.?’
সাইফ চকলেট বের করতেই মিম দুইটা চকলেট নিতে চাইল। সাইফ একটা মিমের হাতে দিয়ে মহুয়াকে ডাকল। মহুয়া রুম থেকে বের হয়ে আসলে। সাইফ মহুয়ার হাতে আরেকটা চকলেট দিল।
মিম রেগে মহুয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,’ বাহিরের লোকের জন্য আমি আমার ভাইদের ভালোবাসাও ঠিক মতো পাচ্ছি না। এখানে ভাগ বসাতে চলে আসে। অলক্ষী আমার জীবন থেকে কবে যাবে!!..??
সাইফ মিম কে ধমক দিয়ে বলে উঠলো, ‘ মিম এইসব কেমন ব্যাবহার! দিন দিন তুই বেয়াদব হয়ে যাচ্ছিস! মহুয়া আমাদের আরেক বোন। রক্তের সম্পর্ক সব নয় আত্মার সম্পর্কই সব। মহুয়ার সাথে আমাদের রক্তের সম্পর্ক নেই তবে আত্মার সম্পর্ক আছে।
মিম বিরক্ত হয়ে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচি কেটে নিজের রুমে চলে গেল।
সাইফ মহুয়ার হাত ধরে নিজের পাশে বসিয়ে প্লেটে খাবার বেরে বড় মাছের মাথাটা মহুয়াকে দিল। মহুয়ার মাছের মাথা পছন্দ।
রেনু বেগম রান্না ঘর থেকে ছেলের জন্য তরকারি বাটি এনে টেবিলে রেখে মহুয়ার প্লেটের দিয়ে তৃক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো।
এই মাছটা উনি সাইফের জন্য রেখে ছিলেন। মিম কতো বার বলেছে মাথাটা আমাকে দাও তাও দেননি। আর এখন কিনা নবাব জাদি বসে বসে খাচ্ছে। রাগ হলো ভীষণ তাও ছেলের সামনে কিছু বলা যাবে না। দুই ছেলে কে কি জাদু করেছে এই কালনাগিনী আল্লাহ ভালো জানে। কারো কাছেই ওর নামে কিছু বলা যায় না৷
রাত গিয়ে দিন আসছে। সময় নিজের মতো চলে যাচ্ছে।
এই এক সপ্তাহে পলাশ বেশ কয়েকবার মহুয়াকে এটা সেটা দিয়েছে তবে আগের মতো অন্য কাউকে দিয়ে নয়। নিজ হাতে চোখে চোখ রেখে দিয়েছে।
একদিন সাহস করে পলাশ বলে উঠলো, ‘ আপনি কি আমার বন্ধু হবেন মহুয়া ? আমার জন্য অপেক্ষা করবেন.?’
মেঘ না চাইতে বৃষ্টির মতো অবাক হয়ে ছিলো মহুয়া। তবে সেদিন কিছু বলেনি, চুপচাপ চলে গিয়ে ছিলো।
তারপর থেকে মহুয়া স্কুলে আসলেই রাস্তার আশপাশে তাকাতে শুরু করত । কিন্তু কোথাও পলাশ কে দেখা যেত না। দুইদিন হয়ে গেল কিন্তু পলাশ কে একবারও দেখা যায়নি।
মহুয়া মন খারাপ হলো। বুকের ভেতর কিছু একটা নেই, শূন্যতা অনুভব হলো।যেখানেই যেত আশেপাশে তাকাত। এই বুঝি পলাশকে একটু দেখা গেল।
এর মধ্যে স্কুল থেকে অনেক মেয়ে গায়েব হয়ে গেছে। স্কুলে এসে ছিলো কিন্তু তারা আর বাড়ি ফিরে যায়নি। ১-২ জন নয় ২৫জন ছাত্রী নিখুঁজ। সবার মা বাবা মেয়েদের চিন্তায় পাগল প্রায়। সবাই স্কুলের কর্তৃপক্ষের উপর দোষ দিচ্ছে। পুলিশরাও আজ দুইদিন মেয়েদের কোনো খুঁজ বের করতে পারছে না।খুব নিখুঁত পরিকল্পনায় ওদের কিডন্যাপ করা হয়েছে। ভুলেও এক ফোটা খুঁত রেখে যায়নি কিডন্যাপার।
তিনদিনের দিন দেখা মিললো পলাশের। চোখে চশমা ঠেলে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে এই দিকে। কাউকে এক মুহূর্ত দেখার তৃষ্ণায় যেন সে বেআকুল হয়ে আছে।
মহুয়া পলাশকে দেখে থমকে গেলো। চোখে পানি চিকচিক করে উঠলো। মন তাকে জানিয়ে দিল তুমি ভীষণ বাজে ভাবে এই বোকা ছেলের প্রেমে পড়ে গেছ।
চলবে….
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।