#চন্দ্রকলা
#লামিয়া_ইসলাম
#পর্ব_৫
-চন্দ্রিমা আমার এক্সিডেন্টের কথা শুনে তুমি কি আজকে ভয় পেয়েছো?
-হুম।
-কেন?
-জানি না।
-উহু। তুমি খুব তাড়াতাড়িই জেনে যাবে আমার এক্সিডেন্টের কথা শুনে তুমি কেন ভয় পাচ্ছিলে?
-ওহ ভুলেই গিয়েছিলাম। তোমার ছোট বোন কে বলো তোমার একাডেমিক পেপারস গুলো গুছিয়ে রাখতে। আমি লোক পাঠালে যেন তার কাছে দিয়ে দেয়।
-কেন?
-কারণ আমি চাই তুমি তোমার গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করো। কারণ ভবিষ্যতে আমি আমার সন্তানের জন্য একজন আত্মনির্ভর এবং শিক্ষিত মা চাই।
-বৌভাতের এর পরের দিন আমি তোমাকে এখানকার কলেজে ভর্তি করে দেবো। সকাল বেলা আমি ওই কলেজের আমার একজন পরিচিত শিক্ষকের সাথেই দেখা করতে গিয়েছিলাম।
সাফোয়ানের বলা কথাগুলো শুনে চন্দ্রর খুশিতে যেন লাফিয়ে উঠতে ইচ্ছে করছিলো। সেও তো চেয়েছিলো আরো পড়তে কিন্তু ভাগ্য তার সহায় হয় নি। আজকের পর থেকে সাফোয়ানের প্রতি তার শ্রদ্ধা যেন কয়েকগুন বেড়ে গেলো। যেই না সে সাফোয়ানকে ধন্যবাদ বলতে যাবে হঠাৎই দরজায় জোরে জোরে নক করার শব্দ পাওয়া গেলো। দরজা খুলতেই দেখলো আমেনা বেগম ভীতসন্তোস্ত হয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
-কি হয়েছে ছোট মা? তোমাকে এরকম দেখাচ্ছে কেন?
-তাড়াতাড়ি নিচে চল। ভয়ানক কান্ড ঘটেছে স্টোররুমে।
সাফোয়ান আর চন্দ্র আমেনা বেগমের সাথে স্টোররুমে এসে দেখলো সামিরা শিরিন বেগমকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আর তার কিছু দূরেই একটি কাছের বয়াম ভেঙে পরে আছে। আর তার পাশেই পরে আছে একজোড়া মানুষের চোখ । আশেপাশে কিছু তরল পদার্থ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। দৃশ্যটি দেখতে খুবই জঘন্য। দৃশ্যটি দেখার পর চন্দ্র আর সহ্য করতে পারলো না সে স্টোররুম থেকেই দৌড়ে বের হয়ে বেসিনে গিয়ে গড়গড় করে বমি করে দিলো।
শিরিন বেগম বাড়ির কাজের মহিলা রমিজাকে স্টোর রুমে পাঠিয়েছিলো রান্না করার জন্য বড়ো পাতিল আনতে। কিন্তু রমিজার যাওয়ার সময় সামিরা এসে তাকে বলে সে যেন তার জন্য মেহেদী পাতা তুলে আনে স্টোররুম থেকে পাতিল সে এনে দিচ্ছে। আর সামিরা সেখানে গিয়ে দেখে নিচে একটা কাছের বয়াম রাখা। তাই সে বয়ামে আছে দেখার জন্য বয়াম হাতে নিয়ে মানুষের চোখ আছে দেখে ভয় পেলে বয়াম হাত থেকে ফেলে দিয়ে চিৎকার করে উঠে।
-এই বয়ামটা কি মিস সামিরাই প্রথম দেখেছে?
-জি।
-আপনাদের স্টোররুম কি সবসময় তালা দেয়াই থাকে?
-জি সবসময় তালা দেয়া থাকে। কিন্তু বিয়ে বাড়িতে বিভিন্ন জিনিস দরকার হয় তাই গত দুইদিন থেকে খোলাই আছে
-আপনাদের পুরানো ড্রাইভার আব্দুল মিয়ার বডি থেকেও তার চোখ দুটি গায়েব। আমি ফরেন্সিকে পাঠাচ্ছি চোখ দুটিকে। আমার যতদূর ধারণা চোখ দুটি ওনারই হবে।
ইন্সপেক্টর সাফোয়ানের সাথে কথা শেষ করে বেরিয়ে গেলো।
——————————————
-স্যার আপনার কাছে খুব আজব লাগছে না? প্রথমে এই জমিদার বাড়ির পুরানো দুই কর্মচারীর খুন তারপর আবার স্টোররুমে চোখ পাওয়া। আর এর আগেও শুনেছি জমিদারের ছেলের সাথে যে মেয়ের বিয়ে ঠিক হয় সেই মারা গেছে।
-হুম আরিফ । সত্যিই আজব। আমি শুনেছি বিশ বছর আগে জমিদার বাড়ির উপরে কে যেন অভিশাপ দিয়েছিলো বংশ ধ্বংস হওয়ার।আচ্ছা অভিশাপটা কেন দিয়েছিলো আর কে দিয়েছিলো এইটা বের করতে পারলেই মনে হয় কেসটা অর্ধেক সমাধান হয়ে যাবে। তোমার পরিচিত কেউ আছে? তুমি তো এই গ্রামেরই ছেলে। এমন কেউ আছে যে বিশ বছর আগে কি হয়েছিল টা সম্পর্কে কিছু বলতে পারবে?
-জি স্যার। আমার একজন কাকাতো কাকা আছে। উনি আগে এই বাড়ির মালি ছিল। উনি হয়তো কিছু বলতে পারবে। আমি খবর নেয়ার চেষ্টা করছি এই ব্যাপারে।
ইন্সপেক্টর আসাদ এই কেসের কোনো কুল কিনারা খুঁজে পাচ্ছিলো না। কিন্তু সাব ইন্সপেক্টর আরিফের কথা শুনে তার মনে হলো হয়তো এখন কোনো ক্লু পাওয়া যাবে খুনগুলোর ব্যাপারে।
-চন্দ্রিমা তুমি ঠিক আছো তো?
-জি আমি ঠিক আছি।
-সরি। আমাদের বাড়িতে এসে তোমাকে এত কিছুর সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
-আরেহ না না। আমি ঠিক আছি।
-উম। দাড়াও আজ রাতে তোমাকে একটা জায়গায় নিয়ে যাবো। আমার পছন্দের একটা জায়গা।
চন্দ্র সাফোয়ানের কথা শুনে মুচকি হাসলো। চন্দ্রর হাসি দেখে সাফোয়ানের মনে হলো সে এত সুন্দর হাসি কখনো দেখেনি।
-চন্দ্রিমা তুমি ঠিক আছো তো?
-জি আমি ঠিক আছি।
-সরি। আমাদের বাড়িতে এসে তোমাকে এত কিছুর সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
-আরেহ না না। আমি ঠিক আছি।
-উম। দাড়াও আজ রাতে তোমাকে একটা জায়গায় নিয়ে যাবো। আমার পছন্দের একটা জায়গা।
চন্দ্র সাফোয়ানের কথা শুনে মুচকি হাসলো। চন্দ্রর হাসি দেখে সাফোয়ানের মনে হলো সে এত সুন্দর হাসি কখনো দেখেনি।
————————————-
রাহেলা বানু তার রুমে শুয়ে আছে। হঠাৎই তার মনে হলো জানালা থেকে কেউ তাকে দেখছে। তাই সে তড়িঘড়ি করে উঠে বসে জানালার দিকে তাকালো কিন্তু সে কাউকেই দেখতে পেলো না। তার পাশেই তার স্বামী শুয়ে আছে। আর এই ভরদুপুর বেলা কেই বা আসবে এখানে।তারপরও সে রিমাকে ডাক দেয়। রিমা তার কাছে এসে বলে,
-কি হয়েছে ডাকাডাকি করছো কেন এত?
-আমগো বাড়ি কেউ আইসিলো নাকি?
-কই না তো? আমি তো বাহিরেই বইসা আছি এত খন ধইরা।
-ওহ।
-তা মা আমি শুনলাম জমিদার বাড়ি থেইকা নাকি ওই তোমার বড়ো মাইয়ার পড়ার কাগজপত্র নিতে পাঠাইসে।
তারপরও সে রিমাকে ডাক দেয়। রিমা তার কাছে এসে বলে,
-কি হয়েছে ডাকাডাকি করছো কেন এত?
-আমগো বাড়ি কেউ আইসিলো নাকি?
-কই না তো? আমি তো বাহিরেই বইসা আছি এত খন ধইরা।
-ওহ।
-তা মা আমি শুনলাম জমিদার বাড়ি থেইকা নাকি ওই তোমার বড়ো মাইয়ার পড়ার কাগজপত্র নিতে পাঠাইসে।
-হয়। জানি না কেমনে হেদিন বাইচ্চা গেলো। তবে খাড়া ওরে শান্তিতে সংসার করতে দিমু না আমি।কাইল যহন জমিদার বাড়ি যামু দেহিস কিভাবে আগুন লাগাই ওর সংসারে।
-হুম মা। ওরে কালকে ইচ্ছামতো অপমান করুম আনে।ওর রূপের খুব দেমাগ না দেমাগ একবারে ভাইঙ্গা দিমু।
এক্সিডেন্ট স্পটের ঝামেলা শেষ করে আসতে আসতে সাহিল আর সাহেদের বিকাল হলো। তারা ক্লান্ত হয়ে ফিরলো। সোফায় বসতেই কিছুক্ষন পরে দেখলো সামিরা ঠান্ডা জুস্ নিয়ে আসলো তাদের জন্য। জুসের গ্লাস সাহেদের হাতে দিতেই সে সামিরার দিকে তাকিয়ে মুচকি আসলো। কিন্তু সাফোয়ানকে এসে সোফায় বসতে দেখে সামিরা কিছু না বলেই সেখান থেকে চলে গেলো।
-কি অবস্থা ওখানকার?
-গাড়ির অবস্থা একদম বাজে। গাড়ি পানিতে পড়ার আগে ড্রাইভার গাড়ি থেকে নেমে যায় তাই সে কম আঘাত পেয়েছে।আর গাড়িটা নাকি কেউ ইচ্ছে করে এক্সিডেন্ট করানোর চেষ্টা করেছে?
-কিহহ?
-হুম ইনপেক্টর আসাদের সাথে কথা হয়েছে উনি ব্যাপারটা তদন্ত করছে।
-এক্সিডেন্টটা যে ইচ্ছেকৃত ভাবে করানো হয়েছে সেটা যেন পরিবারের আর কেউ না জানে।
-ঠিক আছে। কিন্তু আমার মনে হয় তোমার কিছুদিন বাড়িতে থাকা উচিত।চারদিকে শত্রু ওতপেতে আছে।
-তুই কি বলছিস আমি ভয় পেয়ে বদ্ধ হয়ে থাকবো ঘরে। আমি সাফোয়ান চৌধুরী আল্লাহ ছাড়া আমি কাউকে ভয় পাই না। আশেপাশে আমাদের লোক দিয়ে খোঁজ নেওয়া যে করেছে তাকে খুঁজে বের করে। ওকে আমি মাঝে রাস্তায় ফেলে জবাই করবো।
সাফোয়ান প্রচন্ড ক্রোধের সাথে কথাগুলো বললো। তার চোখে মুখে হিংস্রতা ফুটে উঠলো। সাহেদ আর সাহিল ও ভাইয়ের এই রূপ দেখে কিছুটা ভয় পেলো। কিন্তু তাঁদের অগোচরেই তাঁদের কথা আরো একজন মানুষ শুনলো। সে হচ্ছে চন্দ্র। চন্দ্রর দরজার আড়ালে বসে সাফোয়ানের এমন হিংস্রতা ভরা কথা শুনে দ্বিধাদ্বন্দে পরে গেলো। কাল থেকে তার দেখা সাফোয়ান আর আজকের দেখা সাফোয়ানের মধ্যেই অনেক পার্থক্য।
চলবে………..
যারা আইডি ফলো না করে গল্প পরছেন নীল লেখায় চাপ দিয়ে আইডি ফলো করেন 👉👉 AJ ZAHID HASSAN
(বেশি করে লাইক, কমেন্টস করুন। কমেন্টসে শুধু শুধু নেক্সট নেক্সট না লিখে গল্প নিয়ে সুন্দর সুন্দর মন্তব্য করুন। যত সুন্দর কমেন্টস করবেন পরবর্তী পর্ব ততো দ্রুত পাবেন।)