লুকোচুরি_গল্প #পর্ব_১৮ #ইশরাত_জাহান 🦋

0
549

#লুকোচুরি_গল্প
#পর্ব_১৮
#ইশরাত_জাহান
🦋
আজ সবাই একসাথে নীরাদের বাসায় আছে।নীরব আসবে সেই আনন্দে মিসেস নাজনীন সারাদিন নীরবের পছন্দের খাবার রান্না করছেন।মিসেস সাবিনা এখন তাকে সাহায্য করতে গেলো।মিস্টার রবিন ও মিস্টার সমুদ্র এক ঘরে বসে গল্প করতে থাকে।নীরার খুদা লাগে হঠাৎ।কিছু খাওয়ার জন্য খাবার টেবিলের দিকে যায়।সব ফলমূল সুন্দর করে কেটে সাজিয়ে রাখা।মিষ্টিগুলো সাজিয়েছে মিসেস নাজনীন।নীরব এভাবে খেতে ভালোবাসে তাই।এগুলোতে এখন হাত দেওয়া যাবে না।

টেবিলের মাঝে একটি ছোট ঝুড়িতে কলা ছিলো।তার ভিতর এক জোড়া কলা নীরা ছিঁড়ে খেতে যায় ওমনি মিসেস শিউলি খেয়াল করেন।রসিকতা করে বলেন,”নাতবৌ জোড়া খাবার খাইতে নাই।এতে যমজ বাচ্চা হয়।”

নীরা দাদী শাশুড়ির কথা শুনে হিসাব করলো,যদি এক জোড়া খাবার খেলে যমজ বাচ্চা হয় তাহলে আমি ছয় জোড়া কোনো খাবার খেলে এক ডজন হয়ে যাবে।সাথে সাথে নীরা দ্বীপকে বলে ওঠে,”শুনুন ক্যাডার সাহেব,আমার জন্য কালকে ছয় জোড়া কলা আনবেন।একটা ক্রিকেট টিম হবে আর একজন ওই টিমকে কন্ট্রোলে রাখবে।”

নীরার কথা শুনে হো হো করে হেসে ওঠেন মিসেস শিউলি।তিনি বলেন,”নাতবৌ আমার দেখি বারোটা বাচ্চার শখ করছে!”

কেউ আর কিছু বলার আগে কলিং বেল বেজে ওঠে।নীরা যেয়ে দরজা খুলে দেয়।দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে নীরব। নীরবকে দেখার সাথে সাথেই নীরা “ভাইয়া” বলেই এক চিৎকার দিয়ে জড়িয়ে ধরে।মিসেস নাজনীন রান্নাঘর থেকে এসে ছেলের দিকে তাকিয়ে থাকেন।দীর্ঘ সাড়ে পাঁচ বছর পর আজ ছেলেকে দেখছেন তিনি।মাতৃত্বের প্রথম স্বাদ তিনি নীরবকে গর্ভে ধারণ করে পেয়েছিলেন।এই ছেলে এতগুলো বছর দূরে ছিলো।কত মনে পড়তো ছেলের কথা।ছেলেকে কোলে নিয়ে কত আদর করতো সবকিছুই যেনো আজ চোখের সামনে ভেসে উঠেছে।সাথে সাথে নীরবের কোলে মুখ গুজলেন মিসেস নাজনীন।হাউমাউ করে কান্না করছেন ছেলের কোলে মুখ রেখে।সবাই দেখছে মা ছেলের মুহূর্ত।নীরব মাকে জড়িয়ে ধরে বলে,”আমি যেদিন জার্মানে গিয়েছিলাম ঐ দিনও তো এত কান্না করনি তোমরা!আজ এসেছি আর কান্নার বন্যা বয়ে গেলো?”

নীরা মিসেস নাজনীনকে জড়িয়ে বলে,”তুমি কি করে জানবে আমরা কান্না করেছিলাম কি না।মাকে তো জোর করে খাইয়ে দিতে হতো।শুধু তোমার সপ্নের জন্য তোমাকে সুযোগ করে দেওয়া।এই জন্য মা তোমার সামনে স্ট্রং ছিল।”

নীরব বোনের মাথায় হাত দিয়ে বলে,”এবার ভাইকে ভিতরে আসতে দিবি নাকি বাইরে দাড় করিয়ে রাখবি?লম্বা একটা জার্নি করে এসেছি আমি।বাকি সবার সাথে তো সাক্ষাৎ করতে দে।”

নীরা হেসে দিলো।মিসেস নাজনীনকে নিয়ে সাইড হয়ে মিস্টার রবিনের দিকে যাওয়ার সুযোগ করে দেয় নীরবকে।বাবা হলেও মিস্টার রবিন হলেন নীরবের বেস্ট ফ্রেন্ড।সব সময় বেস্ট ফ্রেন্ডের মত করেই চলাফেরা করেন তারা।নীরব ঘরে এসে বাবাকে জড়িয়ে ধরে।মিস্টার রবিন নীরবকে বুকে টেনে বলেন,”আমার কলিজার টুকরোর এক অংশ।”

মিস্টার রবিন সব সময় নীরা ও নীরবকে বলে এসেছেন,”তোমরা দুইজন আমার কলিজার টুকরো।কিন্তু আমার কলিজার একাংশ জুড়ে আছে তোমাদের মা।বয়স বাড়বে দিন শেষ হবে কিন্তু তোমাদের মাকে আমি কখনও ভুলতে পারবো না।তোমাদের মা আর তোমরা দুই ভাই বোন আমার একটি আস্ত কলিজা।তোমাদের কোনো কিছু হলে আমি ঠিক থাকতে পারবো না।”

বাবা,মা ও বোনের সাথে সুখ দুঃখের মুহূর্ত ভাগাভাগির পর নীরব মিস্টার সমুদ্র,মিসেস সাবিনা ও মিসেস শিউলিকে দেখে সালাম দিলো।তারপর দ্বীপের সাথে কোলাকোলি করে নিলো।অতঃপর দীপান্বিতার দিকে তাকালো নীরব।দীপান্বিতা এতক্ষণ নীরবের দিকেই তাকিয়ে ছিলো।কতগুলো বছর পর তার প্রণয়ের পুরুষকে দেখছে।আগের থেকে আরো সুন্দর হয়েছে।বয়স বেড়েছে কিন্তু মুখের ছোপ ছোপ চাপদারী আর বডি ফিটনেস দেখলে তো একদম মিস্টার পার্ফেক্ট লাগছে।দীপান্বিতা মনে মনে বলে ওঠে,”আমারও তো বয়স বেড়েছে।বয়সের সাথে সাথে মুখের উজ্জ্বলতা কমে এসেছে। আর এনাকে দেখো উজ্জ্বলতা যেনো আমার থেকে ঢেলে ঢেলে নিয়েছে।আমাকে হয়তো এখন আর মানাবে না তার সাথে।তাই তো এতদিন কন্টাক্ট অফ রেখেছে।”

নীরব দীপান্বিতার কাছে আসতে যাবে ওমনি অভ্র এসে দীপান্বিতার হাত ধরে বলে,”খুদা লাগছে,আম্মু।”

থমকে গেলো নীরব।চেয়ে আছে দীপান্বিতার চোখের দিকে।এখন দীপান্বিতা তার নিষিদ্ধ নারী।দীপান্বিতাকে ইগনোর করে চলে গেলো ঘরের ভিতর।বুকের ভিতর জ্বলতে থাকে নীরবের।আয়নার সামনে দাড়িয়ে দীপান্বিতাকে উদ্দেশ্য করে বলে,”এক সময়ের ময়াবন বিহারিনী।এখন আমার হৃদয়হরণী।”

দীপান্বিতা অভ্রকে কিছু খাইয়ে দিতে চায় তাই মিসেস নাজনীনকে বলে খাবারের ব্যাবস্থা করে।দীপান্বিতা অভ্রকে খাইয়ে দিচ্ছে।এমন সময় নীরব পোশাক পাল্টে ড্রয়িং রুমে এসে দীপান্বিতাকে দেখতে থাকে।নীরা সবকিছুই খেয়াল করে দেখছে।অভ্র দীপান্বিতাকে বলে,”ওনাকে আমি কি বলে ডাকবো আম্মু?”

দীপান্বিতা চুপ থাকলেও নীরা বলে ওঠে,”মামা।মামা বলে ডাকবে আমার ভাইকে।আমার ভাই মানে তো দীপান্বিতা আপুরও ভাই।সেদিক থেকে মামা বলা যায়।”

নীরবের মাথা ঘুরতে শুরু করলো।এক সময়ের ছাইয়া এখন হয়ে গেলো ভাইয়া!নীরার মত বোন থাকলে সব সম্ভব।অভ্র নীরবের কাছে এসে বলে,”আমার নাম অভ্র।তুমি আমার নতুন মামা।আমার জন্য চকলেট এনেছো?আমি সেই বিকাল থেকে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।”

নীরব কি করবে বুঝতে পারছে না।মন তো চাচ্ছে ঠাটিয়ে দিবে এক চড়।মামা মামা করছে সে।এগুলো সহ্য হয় নাকি তাই?মনের দুঃখ মনে রেখে নীরব “হুম” বলে মাথা নাড়ায়।

সবাই মিলে একসাথে খাওয়া দাওয়া করতে বসেছে।মিসেস নাজনীন ও নীরা আজ পরিবেশন করছে।নীরব ও দীপান্বিতা টেবিলের সামনা সামনি বসে আছে।দুজন দুজনের দিকে এক পলক তাকিয়ে আবার নিজেদের খাওয়া দাওয়াতে মন দেয়।খাওয়ার মাঝে হঠাৎ দীপান্বিতার পায়ের সাথে ছোয়া লাগে নীরবের পা। পায়ে পায়ে ছোয়া লাগাতে দীপান্বিতা ও নীরব একে অপরের দিকে চাওয়া চাওয়ি করে।ভুল বশত লেগেছে পা।সারাদিন প্লেনে বসে ছিলো নীরব।পা একটু অবাস হয়ে আছে।তাই পা নাড়াতে যেয়ে দীপান্বিতার সাথে লেগে যায়।

সবার খাওয়া শেষ হয়ে গেলে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে সবাই বাড়িতে চলে আসে।ঘরে এসে লাইট জ্বালানোর সাথে সাথে দ্বীপ নীরাকে বলে,”তুমি আমার থেকে কয়টা চুনু মুনু চাও?”

“এক ডজন,কেনো?আপনি দিবেন না আমাকে এতগুলো চুনু মুনু?”

দ্বীপ নীরার অতি নিকটে এসে নীরার কানে ফিসফিস করে বলে,”আমি দিতে পারবো কিন্তু তুমি নিতে পারবে তো?”

নীরা চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে থাকে দ্বীপের দিকে।দ্বীপ হাসতে হাসতে আলমারি থেকে বাড়ি পড়ার পোশাক নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।পাঞ্জাবি পাল্টে টি শার্ট পরে আসে।নীরা কিছু না বলে জামা নিয়ে ওয়াশরুম থেকে শাড়ি পাল্টে ঘরে আসে।এসেই খাটে শুয়ে পড়ে।মিনিকে এখন সোফায় ঘুমোতে দেয়।

কিছুক্ষণ নিরবতা ভেঙ্গে নীরা আস্তে আস্তে দ্বীপের দিকে এগোতে থাকে।দুই কদম আগায় তো কিছুক্ষন থেমে থাকে।এরকম করতে করতে যেই নীরা দ্বীপের কাছে আসবে ওমনি দ্বীপ বলে ওঠে,”স্টপ,এখানেই থেমে থাকবে। আর এগোবে না।পরীক্ষা শেষ হয়ে যাক তারপর তোমার এক ডজন বাবু লাগে নাকি দুই ডজন লাগবে সবকিছুর ব্যাবস্থা হয়ে যাবে।”

যে নীরা এতক্ষণ দ্বীপের কাছে আসছিলো সেই নীরা যখন দ্বীপের মুখে দুই ডজন বাচ্চার কথা শুনে সাথে সাথে দূরে সরে আসে।দ্বীপ মিটমিট করে হাসতে থাকে।নীরাকে শায়েস্তা করার জন্য তাকেও কি না নীরার মত হতে হয়।

চলবে…?
সবার আগে গল্প পেতে ইশরাত জাহান পেজটি ফলো দিয়ে সাপোর্ট করুন 🖤🦋

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here