#মায়াবিনী_(২)
#Ayrah_Rahman
#পর্ব_৩৮
______________
আরুহীর দখলে আরুশের রুমের অর্ধেক জিনিস, যেমন কাবার্ডের একপাশে আরুহীর কাপড় তো অপর পাশে আরুশের। বিছানার হাফ আরুহীর তো হাফ আরুশের। এমনকি স্টাডি টেবিলে, বুক শেলফ এ অর্ধেক আরুহীর অর্ধেক আরুশের।
যা দেখে আরুশ রীতিমতো মতো টাস্কিতো, চমকিত, অবাকিত সাথে আতঙ্কিত কখন জানি আবার কিসে ভাগ বসাতে চায়। সারাদিন শেষে রাত আট’টায় হসপিটালে থেকে ফেরার পর থেকে প্রায় পনেরো মিনিট ধরে নিজের অতি চেনা রুমটাকে বারবার চোখ ঘুরিয়ে দেখছে৷ এটা কি আদৌও তার রুম ই ছিলো? নিজের জিনিস এর থেকে আরুহীর জিনিস ই বেশি দেখা যাচ্ছে। আরুশের মুখোভঙ্গি দেখে রুশা হাসতে হাসতে ফ্লোরে লুটোপুটি খাওয়ার দশা।
আরুহী সোফার উপর বসে মোবাইল ঘাটতে ঘাটতে আড়চোখে আরুশের গতিবিধি লক্ষ্য করছে আর মুচকি মুচকি হাসছে, বেচারা সত্যি ই টাস্কিতো।
আরুশ হাতের এপ্রোন টা বিছানার উপর রেখে আরুহীর দিকে তাকালো,
” এসব কি আরু! ”
আরুহী মোবাইল থেকে চোখ তুলে আরুশের দিকে তাকালো, ভ্রু জোড়া কুঁচকে বলল,
” কোন সব? ”
” আমার ঘর এভাবে দখল করার মানে কি? তোর রুম না আছে ওখানে যা ”
আরুহী চোখ দুটো ছোট ছোট করে বলল,
” ডক্টর আরুশ খান আপনার অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে আমি আপনার সদ্য বিয়ে করা বউ, এই ঘরে আপনার যতটুকু অধিকার আমার ততটাই অধিকার। আর আপনাকে তো বের করে দিচ্ছি না রুম থেকে, যাস্ট হাফ কেটে দিছি এতো রিয়েক্ট করার মানে কি? বিয়ে করার সময় মনে ছিলো না? ”
আরুশ আরুহীর দিকে সন্দেহের দৃষ্টি তে তাকালো, এই মেয়ের মতিগতি ঠিক লাগছে না! ঘাপলা তো আছেই, আপাতত কথা না বাড়িয়ে কাবার্ড থেকে টি শার্ট আর টাউজার নিয়ে ওয়াসরুমে ঢুকে গেলো।
আরুহী সেদিকে নজর দিয়ে ঠোঁট এলিয়ে হাসলো। হঠাৎ রুশার ফোনে কল আসাই সে ফোন টা পকেট থেকে বের করে স্ক্রিনে থাকালো। স্ক্রিনে পরিচিত নাম্বার দেখে লাজুক হাসলো, তৎক্ষনাৎ রুম থেকে বের হয়ে গেলো,
আরুহী ভ্রু কুঁচকে রুশার যাওয়ার দিকে তাকালো, বোনটা তার বাজে ভাবে ফেঁসেছে, ছেলেটা ভালো তাই আরুহীর ও তেমন কোন আপত্তি নেই।
আরুহী ও হাতে ফোন নিয়ে ছাদের উদ্দেশ্যে পা চালালো। জরুরি একটা ফোন করতে হবে। হেড অফিস থেকে মেইল এসেছে এই মিনিট বিশেক আগে। নতুন মিশনের ডাক পড়েছে আবার। কপাল খারাপ থাকলে যা হয় আর কি! একটু স্বস্থির নিঃশ্বাস টুকুও ফেলবার জো নেই। কাল ই একবার হেড অফিসে যেতে হবে ওখান থেকে সিভিলিয়ান হয়ে উল্লেখিতো জায়গায় যেতে হবে, ব্যাপার টা ভীষণ রিস্কি আর সিক্রেট। তবে আশ্চর্য জনক হলেও নতুন কেস টা কেমন যেন ঘোলাটে ঘোলাটে লাগছে। মনে হচ্ছে কেঁচু খুঁড়তে না কেউটে বেরিয়ে আসে। তবে ব্যাপার টা মন্দ হবে না, নতুন নতুন অভিজ্ঞতা হবে!
ছাদের এক কোনায় দাড়িয়ে নির্দিষ্ট নাম্বারে কল করলো আরুহী, ২য় বার রিং হতেই অপর পাশে থেকে কল টা রিসিভ হয়ে গেলো। আরুহী গম্ভীর কন্ঠে বলল,
” খবর বলেন ”
অপর পাশ থেকে কিছু বলতেই আরুহী বলে উঠলো,
” ঠিক আছে, আমি আসবো ”
অপর পাশে থেকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ফোনটা কেটে দিলো আরুহী। ফোনটা রেলিঙের উপর রেখে দুর আকাশে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো । আকাশে নেই কোন চন্দ্র কিংবা নক্ষত্র। মেঘেরা ও হয়তো আজ ছুটি নিয়েছে, চারপাশ নিস্তব্ধ অন্ধকার নেই কোন বাতাসের ছিটেফোঁটা কেমন যেন গুমট ভাব।
মোবাইলের ডিসপ্লে তে এক পলক সময়ের গন্ডি টা দেখে নিলো আরুহী। প্রায় ন’টা। দশটায় সুলতান আসবে, কারো হিসেব চুকাতে বের হতে হবে।
হঠাৎ ই কড়া পারফিউম এর ঘ্রানে মুখরিত হলো চারপাশ। পাশে কারো উপস্থিতি টের পেয়েও কিছু বলতে ইচ্ছে হলো না আরুহীর।
নিরবতার পর্দা ছেদ করে আরুশ ই বলল,
” আরু! ”
আরুহী সামনের দিকে ই কোমল দৃষ্টিতে তাকিয়ে জবাব দিলো,
” কিছু বলবে তুমি? ”
” তুই কি আজও আমাকে ক্ষমা করতে পারিস নি? ”
আরুহী ঘাড় ঘুরিয়ে এক পলক আরুশের দিকে তাকিয়ে পুনরায় সামনে তাকালো,
” তোমার কেন এমন মনে হচ্ছে? আমি কি তোমাকে কিছু বলেছি? ”
আরুশ কথা ঘুরালো,
” তুই যতটা কঠিন ভাবে নিজেকে প্রকাশ করিস ততটাও কঠিন তুই না আরুহী। কেন এতো গম্ভীর হয়ে থাকিস? জীবনের কোন কথা তুই শেয়ার করিস না, সব কথা চেপে যাস, এভাবে কি আদৌও বাঁচা যায়! ”
আরুহী মুচকি হাসলো,
” দিব্বি বেঁচে আছি। ”
আরুশ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে আরুহীর কাছ ঘেঁষে বাহু টেনে মুখোমুখি দাড় করালো। শক্ত পোক্ত হাত দুটো দিয়ে আরুহীর কোমল মুখ খানি আজলে তুলে নিলো,
” এভাবে বেচেঁ থাকা যায়, তবে ভালো থাকা যায় না আরু, তোকে নিয়ে আমার ভয় হয় জানিস, যেই আরুশ খান জীবনে কোন কিছুর পরোয়া করতো না, ভয় কি জিনিস তা জানতো না আজ সেই আরুশ খান কে ভয় যেন আষ্টেপৃষ্ঠে ধরে থাকে, ভীষণ ভয় হয় আরু শুধু তোকে হারাবার ভয়, একবার হারিয়ে ফিরে পেয়েছি আর হারাতে চাই না, তোর কিছু হলে আমি সত্যি মরে যাবো আরু , ট্রাস্ট মি আরু! ”
আরুহী আলতো চোখে তাকালো আরুশের মুখের দিকে, অন্ধকারে ও যেন স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে শুভ্র মুখের আদল রক্তিম হয়ে উঠেছে যেন একটু টোকা দিলেই রক্ত বের হবে। চোখে তার আকুল তৃষ্ণা । আরুহী হাসলো,
আরুহীর হাসি দেখে আরুশ খানিকটা এগিয়ে আরুহীর কপালে উষ্ণ স্পর্শে ওষ্ঠ দুটো চেপে ধরে সেকেন্ড কয়েক থেকে কপালে কপাল ঠেকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলল,
ধীর কন্ঠে বলল,
” কথা শুনিস না কেন আরুহী? তোর পেশা নিয়ে আমার কোন আপত্তি নেই তবে তুই অল টাইম রিস্কি মিশন হ্যান্ডেল করিস, কখনো লাইফ রিস্কে কাজ করিস, নিজের প্রতি একটুও মায়া হয় না তোর! এতো পাষাণ কেন তুই! ”
আরুহী আলতো হাসলো,
” কিছু হবে না আমার! এতো টেনশন করো কেন বলোতো! তুমি না ডাক্তার! তুমি জানো না টেনশন করা শরীরের জন্য কতটা ক্ষতি! সকল রোগের সৃষ্টি হয় এই টেনশন থেকে, যা ভাগ্যে আছে তাই হবে, রিস্ক জানি তাই বলে সত্যি টা সবার আনতে, অন্যায় রুখতে পিছু হটবো! ইম্পসিবল! দেশে কত অবিচার হচ্ছে তুমি জানো! টাকার জোরে কত রাজনৈতিক দলের লোকেরা নিজেদের গদি টিকিয়ে রেখেছে, কত অপকর্ম করে টাকা দিয়ে ধামাচাপা দিচ্ছে! কত নারী, শিশু অবহেলিত কত কিশোর আজ মা*দ*কাসক্ত, কত কিশোরী বাড়ি থেকে কলেজ, স্কুলের উদ্দেশ্যে বের হয়ে আজ পর্যন্ত নিখোঁজ, বাবা মা তাদের পথ চেয়ে বসে আছে। অথচ তারা জানেই না পথে ঘাটে কত শুয়োরের বাচ্চারা তাদের মেয়েদের…..
আর বলতে পারলো না আরুহী, কথা গুলো যেন গলায় কুন্ডলী পাকাচ্ছে, মুখ দিয়ে বের হচ্ছে না।
আরুশ আরুহীর মাথাটা বুকের উপর চেপে ধরলো, হিসহিসিয়ে বলল,
” আর বলতে হবে আমি জানি, আমি বুঝতে পেরেছি। চুপ কর তুই ”
আরুহী চুপচাপ আরুশের বুকে মাথা রেখে দাঁড়িয়ে আছে, তার ভেতরে ঠিক কত খানি ঝড় বয়ে যাচ্ছে তা বোধ হয় বাইরে থেকে দেখলে কেউ আন্দাজ করতেই পারবে না।
বেশ অনেক ক্ষন পর আরুহী চোখ তুলে উপরে তাকালো, নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বলল,
” নিচে চলো আরুশ ভাই, আমাকে বের হতে হবে ”
আরুশ ভ্রু কুঁচকে আরুহী র দিকে তাকালো,
” এতো রাতে কোথায় যাবি? ”
আরুহী দরজার দিকে মুখ করে হাটতে হাটতে বলল,
” যাব এক জায়গায়, সুলতান আসবে ”
বলেই আরুহী সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলো, একবার ও পিছনে ফিরে তাকালো না, একবার তাকালেই হয়তো আতঙ্কিত চোখ জোড়া দেখতে পেতো সে।
চলবে…
[কেমন লাগলো আজকের পর্ব]
Apnader half half golpo deoya sovab hoye giyeche