খোলা_জানালার_দক্ষিণে #পর্ব_০৩ #লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

0
806

#খোলা_জানালার_দক্ষিণে
#পর্ব_০৩
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

বৃষ্টি হয়ে চারিদিকে স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে আছে। গাছের মরা ডালপালা গুলো রাস্তায় পড়ে আছে। মেহেভীন নামাজ শেষ করে প্রতিদিন হাঁটতে বের হয়। আজকেও হাঁটতে বের হয়েছে। আজকের সকালটা একটু অন্য রকম কেমন স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে। মনটা কাল থেকে ভিষণ খারাপ। কেন জানি ভেতর থেকে শান্তি পাচ্ছে না সে। তখনই পেছনে থেকে কারো কণ্ঠস্বর কর্ণকুহরে এসে পৌঁছল,

–এত সকাল বেলা কোথায় যাচ্ছেন ম্যাডাম? মেহেভীন তাকিয়ে দেখলো কালকের ছেলেটা। সে ভদ্রতা বজায় রেখে বলল,

–হাঁটতে বের হয়েছি।

–আমি কি আপনার যোগদান করতে পারি?

–না।

–কেনো?

–আশ্চর্য! আমি আপনাকে চিনিনা জানি না। আমি কেনো আপনার সাথে হাঁটতে যাব। আপনার কি নিজের পা নেই। একা একা চলতে পারেন না৷ যে অন্যের সাথে আপনাকে হাঁটতে যেতে হবে। এমন গায়ে পড়া মানুষ আমার একদম পছন্দ না। আমার আশেপাশে যেন আপনাকে না দেখি। কথা গুলো বলেই মেহেভীন বিলম্ব করল না। দ্রুত পায়ে স্থান ত্যাগ করল। মুনতাসিম মেহেভীনের যাওয়ার দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে।

মেহেভীন বাসায় এসে দম নিয়ে বিছানায় বসল। কণ্ঠস্বর কুসুমের ন্যায় কোমল করে রুপাকে ডাকলো। রুপা এসে মেহেভীনের পাশে বসল। রুপা ভালো মতোই জানে মেহেভীন এখন তাকে কি করতে বলবে। তবুও রুপা প্রশ্ন করল,

–কিছু বলবেন আপা?

–তোকে এখন মায়ের সাথে কথা বলতে হবে। কালকে মনটা খারাপ থাকায় কল দেওয়া হয়নি।

–দিয়ে কি বলব আপা। আপনি আমাকে সবকিছু শিখিয়ে দেন। না হলে ভুলভাল কিছু বলে ফেলবো।

–আজকে বেশি কিছু বলতে হবে না। মায়ের ভালো মন্দ খবর নিবি। কথা গুলো বলেই রাইমা বেগমের নাম্বারে ফোন দিল। একবার ফোন বেজে কেটে গেল। দ্বিতীয় বার ফোন দিতেই ফোনটা রিসিভ হলো। একটা গম্ভীর কণ্ঠস্বর কথা বলে উঠলো। মানুষটার কথা কর্ণকুহরে আসতেই বুকের ভেতরে মোচড় দিয়ে উঠলো মেহেভীনের। বিষাদে ছেয়ে গেল মনটা চেয়েও মাথা উঁচু করে বলতে পারছে না। আব্বু আমি তোমাদের হতভাগা মেয়ে মেহেভীন। কথা বলার সাহস হয়ে উঠলো না। সে রুপাকে বলতে শিখিয়ে দিল। রুপা সালাম দিয়ে বলল,

–বাবা কেমন আছেন? মা কোথায় মায়ের ফোন আপনি তুললেন যে!

–এই মেয়ে তোমাকে কতবার নিষেধ করেছি। তুমি আমার অর্ধাঙ্গিনীর ফোনে ফোন দিবে না। তোমার উদ্দেশ্য কি বলো তো? এই নিষ্ঠুর ধরণীর বুকে নিজের স্বার্থ ছাড়া কেউ এক কদম হাঁটে না। সেখানে তুমি একটা অপরিচিত মেয়ে হয়ে আমার অর্ধাঙ্গিনীর জন্য এত দরদ দেখাও। এটা আমি মোটেও ভালো নজরে নেই না। আমার অর্ধাঙ্গিনী নির্ঘাত ভালো মানুষ ধরনীর মার প্যাচ বুঝে না। সরল মনে তোমাকে বিশ্বাস করে কথা বলে। আজকের পর থেকে তাকে ফোন দিলে আমি অন্য ব্যবস্থা নিব।

–আপনি রেগে যাচ্ছেন কেন? আমার মনে কোনো পাপ নেই। আমার আল্লাহ জানে আমি কোনো খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে মায়ের সাথে কথা বলি না। আমি মায়ের আদর, ভালোবাসা পাবার জন্য মায়ের সাথে কথা বলি। আজ যদি আমার নিজের মা থাকতো। তাহলে কি আমি আপনার অর্ধাঙ্গিনীর কাছে ফোন দিতাম বলেন। আমাকে একটা বার মায়ের সাথে কথা বলিয়ে দেন। আমি আর বিরক্ত করব না।

–তাকে দেওয়া যাবে না। কাল থেকে সে ভিষণ অসুস্থ। শুনেছ এবার রাখো আর কখনো ফোন দিবে না। কথা গুলো বলেই কল কেটে দিল। মায়ের অসুস্থতার কথা শুনে মেহেভীনের ভেতরটা অস্থির হয়ে উঠলো। যন্ত্রনায় কেমন ছটফট করতে লাগলো। মেহেভীনের মন খারাপ দেখে রুপারও মন খারাপ হয়ে গেল। সে মলিন কণ্ঠে বলল,

–দেখেছেন আপা আমি আপনাকে বলে ছিলাম না। আপনার চাচাতো বোন ভালো না। সে আপনার ভালো চায় না। আপনার মা অসুস্থ সে খবর আপনাকে জানায়নি কেন? রুপার কথায় মেহেভীন রুপার থেকে ফোনটা নিয়ে নিল। প্রাপ্তির নাম্বার বের করে ফোন দিল।

–হ্যাঁ মেহেভীন বল এত সকালে কি মনে করে ফোন দিলি?

–আপু আম্মু কেমন আছে?

–চাঁচি তো ভালোই আছে। সকালেও চাঁচির সাথে কথা হয়েছে।

–একটু আম্মুর কাছে নিয়ে গিয়ে ফোনটা দিবে।

–চাঁচি তোর সাথে কথা বলতে চায় না। তোর মুখ ও দেখতে চায় না।

–সে কথা আমি আম্মুর মুখে শুনতে চাই।

–তোর নাম শুনলেই চাঁচি রেগে যাবে।

–বেশ ভালো তো তুমি তাহলে ফোনটা লাইনে রাখো। আমি কলে আছি সে কথা আম্মুকে বলবে না। তুমি আম্মুর কাছে গিয়ে আমার কথা তুলো। আমি দেখতে চাই আম্মু কি বলে। মেহেভীনের কথায় প্রাপ্তি অনুভূতি শূন্য হয়ে পড়ে। মাথা কাজ করছে না। বুদ্ধিরা জোট বেঁধে পালিয়েছে। এখন সে মেহেভীনকে কি জবাব দিবে। প্রাপ্তির নিরবতা মেহেভীনকে ভাবাচ্ছে গভীর ভাবে ভাবাচ্ছে। প্রাপ্তি কি তার থেকে কিছু আড়াল করছে। নিজের ক্যারিয়ার গড়তে গিয়ে তবে কি সে পরিবারের থেকে দূরে সরে এসেছে। নিজের সাফল্য অর্জনের আশায় সে এতটাই ব্যস্ত পরিবারের দিকে তাকানোর সময় হয়নি। তার সুযোগই কি প্রাপ্তি নিতে চাইছে। মেহেভীনের ভাবনার মাঝেই প্রাপ্তি বলে উঠলো,

–আমি একটা জব পেয়েছি। তোকে জানানো হয়নি। আমি তো অফিসে আছি৷ এখন কিভাবে চাঁচির সাথে কথা বলতে যাব।

–তুমি আবার কবে চাকরি পেলে? সারাদিনই বাসায় বসে থাকো। এরমধ্যেই তোমার চাকরি হয়ে গেল!

–তুই আমাকে এভাবে পুলিশের মতো জেরা করছিস কেন? আমাকে তোর চোর মনে হয়। নিজের বোনকে বিশ্বাস করিস না।

–আম্মু যে অসুস্থ আমায় জানাওনি কেন? মিথ্যা কথা বললে কেন আমায়? তুমি আবার বিশ্বাসের কথা বলছ! এদিকে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে ব্যস্ত আমি। সেজন্য আমি নিজের পরিবারের দিকে তাকাইনি৷ আর তুমি সেই সুযোগটা নিলে আপু।

–মেহেভীন তুই আমাকে ভুল বুঝছিস। আমি তোকে জানাইনি তার একটা কারন আছে। চাঁচির শ্বাসকষ্ট আছে। সেটা তুই ভালো মতোই জানিস। চাঁচির অসুস্থতার কথা শুনলে তুই চিন্তা করবি। তাই তোকে জানাইনি। তেমন গুরুতর কিছু না। গুরুতর কিছু হলে সবার আগে আমি তোকেই জানাতাম।

–আচ্ছা আমি তোমাকে প্রতি মাসে টাকা পাঠাই। সে টাকা গুলো তুমি কি বলে আব্বু আম্মুর হাতে তুলে দাও।

–তুই তো বলেছিস। এই টাকা গুলো তুই দিস। এ কথা চাচা চাঁচি যেন না জানে। সেজন্য চাচা চাঁচিকে বলি আমি জব করে তাদের টাকা দেই।

–তারা তোমাকে কোনো প্রশ্ন করে না। এত গুলো টাকা তুমি কেন ওদের দাও। তোমার বাবা-মা কিছু বলে না। তোমাদের ও সংসার আছে।

–তোর যদি আমার কথা বিশ্বাস না হয়। তাহলে তুই এখানে এসে দেখে যা।

–সেটা তুমি বললেও যাব আর না বললেও যাব। আমি তোমাকে অনেক বেশি বিশ্বাস করি আপু। এমন কোনো কাজ করো না। যাতে তোমার প্রতি আমার সব ভালোবাসা ঘৃণায় রুপ নেয়৷

–চাঁচি অসুস্থ এখন তোর না আসাই ভালো। মেহেভীন নিঃশব্দে কল কেটে দেয়। মেহেভীনের মধ্যে সন্দেহের দানা বাঁধে। কাউকে বিশ্বাস করা ভালো। কিন্তু অন্ধ বিশ্বাস একদমই ভালো না৷ এই কথা গুলো এতদিন মাথায় আসেনি কেন আমার। সারাদিন বাহিরের শত্রু খুঁজতে গিয়ে, ঘরের শত্রু চিনতেই ভুল করলাম আমি। মেহেভীনের মস্তিষ্ক শূন্য হয়ে পড়েছে। কোনো বুদ্ধিই তার মস্তিষ্কে এসে ধরা দিচ্ছে না। এভাবে ভেঙে পড়লে চলবে না। সবকিছু ঠান্ডা মাথায় ভাবতে হবে।

অন্ধকার রুমের মধ্যে বসে আছে প্রাপ্তি। তার সামনে বসা আগন্তুক। প্রাপ্তির মুখশ্রীতে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট। আগন্তুক প্রাপ্তিকে উদ্দেশ্য করে বলল,

–মেহেভীনের মনে তুমি নিজেই সন্দেহের বীজ রোপণ করে দিয়েছ। তাই চাইলেও মেহেভীনের মনে আগের স্থান নিতে পারবে না। কি দরকার ছিল মিথ্যা কথা বলার। তুমি কি জানতে না মেহেভীন তার কাজের মেয়েটার মাধ্যমে রোজ তার বাবা-মায়ের খবর নেয়।

–সে কথা কি আপনি আমাকে বলেছিলেন। আমি তো জানতাম না। মেহেভীন তার বাবা-মায়ের খোঁজ খবর নেয়। আমি ভেবেছিলাম বোকা মেয়েটা জীবনে কিছু করতে পারবে না। কে জানতো জীবনের সফলতার শীর্ষে পৌঁছে যাবে। আমি মনে করেছিলাম। বাসার বাহিরে হলে কিছু নরপশু মেহেভীনকে শেয়াল কুকুরের মতো ছিঁড়ে খাবে। ধরনীর বুক থেকে মুছে যাবে মেহেভীন নামক রমনীর ছোট্ট দেহটা। আমার সবকিছু যে ব্যর্থ হয়ে গেল। এখন আমি কি করব? সব দোষ আপনার আপনি যদি আমাকে একটু সর্তক করে দিতেন। তাহলে আজে এতবড় ধরা খেতাম। মেহেভীন এবার কাজের পাশাপাশি পরিবারের দিকে নজর রাখবে। আগে আমায় ভরসা করত। তাই পরিবারের দিকে সেভাবে নজর দিত না। আজ মিথ্যা বলার কারনে আমাকে আর বিশ্বাস করবে না। মেয়েটা ভিষণ চালাক আর ধুরন্ধর হয়ে গিয়েছে।

–মেহেভীন কিছু করার আগেই ফরিদ রহমানের দেহটা ছয় টু’ক’রো হয়ে যাবে। সেটা নিয়ে তোমাকে চিন্তা করতে হবে না। তুমি মেহেভীনের বাবা-মায়ের কানে বি’ষ দিতে থাকো। তারা যেন মেহেভীনকে ঘৃণা করতে থাকে।

–ওর বাবা-মা এতটা মেয়ে ভক্ত মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। সে কথা জেনেও তাদের মেয়েকে চাই।

–তাহলে আমি যেই ঔষধ টা দিয়েছি। সেটার ডোজ বাড়িয়ে দাও। মেহেভীন চাইলেও কিছু করতে পারবে না।

–আমি দেশে আসছি সেটা তোমার বাবা জানে?

–না আমি ছাড়া কেউ জানে না।

–বেশ ভালো কাউকে বলার দরকার নেই। তুমি এখানে থেকে চলে যাও। কেউ দেখে ফেললে সমস্যা হয়ে যাবে। প্রাপ্তি কোনো কথা না বলে আস্তে করে বাসা থেকে বের হয়ে যায়।

মেহেভীন সকালে কাজের উদ্দেশ্য বের হয়ে গিয়েছে। কখন বাসায় ফিরে ঠিক নেই। সবকিছু কাজের ওপর নির্ভর করে। রুপা ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখছে। এমন সময় দরজায় কলিং বেল বেজে উঠে। রুপা গিয়ে দরজা খুলে দেখতে পায় কয়েকজন কালো পোশাক পড়া লোক দাঁড়িয়ে আছে। রুপা কিছু বলার আগেই তারা রুপাকে সেন্সলেস করে ফেলে। তারা রুপাকে নিয়ে চলে যায়। রুপাকে নিয়ে চলে যাবার এক ঘন্টা মেহেভীন আসে। দরজা খোলা দেখে মেহেভীন অস্থির হয়ে বাসার মধ্যে আসে। একটা জমির দলিল সাইন কারনো নিয়ে একজন লোকের সাথে মেহেভীনের ভিষণ ঝামেলা চলছে। দু’বার বাসায় এসে হুমকি দিয়ে গিয়েছে। সমস্ত বাসা খুঁজেও রুপাকে দেখতে না পেয়ে মেহেভীনের ললাটে চিন্তার ভাজ পড়ল। সে চিন্তিত হয়ে দরজার কাছে আসলো। দরজার কাছে এসে মুনতাসিমকে দেখতে পেল। মুহুর্তের মধ্যে মেহেভীনের মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। মেহেভীন কিছু বলার আগেই মুনতাসিম বলল,

–কিছু খুঁজছেন ম্যাডাম। মুনতাসিমের নম্র ব্যবহারে শান্ত হলো মেহেভীন। বিরক্ততে তার মুখশ্রী কুঁচকে এলো। সে বিরক্তি মাখা মুখশ্রী করে জবাব দিল,

–আমার কাজের মেয়েটাকে খুঁজে পাচ্ছি না।

–আমি তাকে ছাঁদে ঘুমোতে দেখেছি। মুনতাসিমের কথায় মেহেভীন নিজের ললাটে দু’টো চাপড় মারল। এই মেয়েটাকে নিয়ে সে অসহ্য হয়ে গিয়েছে। একদম ছন্নছাড়া যেখানে যায় গল্পের ঝুড়ি নিয়ে বসে। ছাঁদে কাপড় তুলতে গিয়ে নিশ্চয়ই কারো সাথে গল্প জুড়ে দিয়েছিল। সেখানেই ঘুমিয়েছে। রুপার স্বভাব সম্পর্কে সবাই অবগত।

–আপনার বাসায় একটু হলুদের গুঁড়ো হবে? আসলে আমি রান্না করতে গিয়ে ময়লা ভেবে ফেলে দিয়েছি। কিনে নিয়ে আসলে দিয়ে যাব।

–আপনি রান্না করতে পারেন না। তাহলে রান্না করতে যান কেন? এতবড় ছেলে হয়ে হলুদ গুঁড়ো কোনটা চিনেন না। নাকি আমার সাথে আপনি ফ্লাট করছেন?

–এসব আপনি কি বলছেন ম্যাডাম। আপনি কত বড় মাপের মানুষ। আপনার সাথে ফ্লাট করার মতো দুঃসাহস আমার আছে। মেহেভীন কিছু বলে না হলুদের গুঁড়ো দিয়ে ছাঁদে চলে যায় রুপাকে আনতে। মুনতাসিম মেহেভীনের দিকে তাকিয়ে বুকের বা পাশে হাত দিয়ে বলল, এই মেয়েটা আমাকে একদম শেষ করে ফেলবে।

চলবে…..পরের পর্বটি সবার আগে পড়তে পেইজটি ফলো করে সাথে থাকুন👉 গল্পের ভান্ডার

আরো সুন্দর সুন্দর গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হতে ভুলবেন না 👉 লেখক-লেখিকার গল্পের ভান্ডার�

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here