খোলা_জানালার_দক্ষিণে #পর্ব_২৫ #লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

0
496

#খোলা_জানালার_দক্ষিণে
#পর্ব_২৫
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

রজনীর আঁধার কেটে গিয়ে প্রভাতের আলো চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিটি মানুষ নিদ্রা দেশে তলিয়ে আছে। নির্ঘুম রজনী পার করেছে মুনতাসিম। অদ্ভুত ভাবে বুকের ভেতর অসহ্য যন্ত্রনায় সারারাত ছটফট করেছে। তার মানতেই কষ্ট হচ্ছে মেহেভীন তাকে বিশ্বাস করে না। সে শক্ত মনের অধিকারী জন্যই হয়তো নিজেকে সামনে নিয়েছে। ভাগ্যিস ভেতরের খবর কেউ দেখতে পায় না। তাহলে সবাই এতক্ষণে মুনতাসিমের জন্য আকুল হয়ে উঠত। ভেতরটা রক্তাক্ত করে দিয়ে চলে গিয়েছে মেয়েটা। বেহায়া মন শুনেনি মেয়েটাকে বোঝানার জন্য আরো একবার চেষ্টা করেছিল। যার পরিনাম সে এখন প্রেয়সীর ব্লক লিস্টে। সারারাত না ঘুমানোর ফলে আঁখিযুগল রক্তিম ধারণ করেছে। প্রয়োজনের তুলনায় চোখ ফুলেছেও বেশ। বেলকনির গ্রীল ধরে আকাশ পাশে চেয়ে আছে মুনতাসিম। মুখ দিয়ে অস্ফুত স্বরে বেড়িয়ে আসলো,

–আপনি আমার মুখ দেখতে চান না। আমিও আপনার সামনে যাব না। ভালোবাসলেই যে তাকে পেতে হবে। তার কোনো মনে নেই। সব পেয়ে গেলে আক্ষেপ ফুরিয়ে যাবে। আক্ষেপ করার জন্য হলে-ও আমি আপনার থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করব। নিজের সক্রিয়তা কতটুকু বজায় রাখতে পারব। তা আমি জানি না তবে আপনি আমার সামনে আসলে, আমি সবকিছু ভুলে আপনাতেই মিশে যাই। ভুলে যাই সব অভিমান অভিযোগ। আপনি মানুষটা আল্লাহ তৈরি নিখুঁত সুন্দর মানবী। আমার অভিমান গুলোও আপনার প্রেম পড়তে বাধ্য হয়৷ সেখানে আমি তো তুচ্ছ মানব। কথা গুলো আনমনে ভাবতেই দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসলো।

মাত্র দুই ঘন্টা ঘুমিয়েছিল মুনতাসিম। তখনই মুঠোফোনটা শব্দ করে বেজে উঠে। বিরক্তিতে মুখশ্রী কুঁচকে এল তার৷ সে নিদ্রা মিশ্রিত কণ্ঠে ফোন তুলল। ওপর পাশ থেকে তাইয়ানের চিন্তিত কণ্ঠ স্বর ভেসে এল। মুনতাসিম তড়িৎ গতিতে উঠে বসলো। রাগান্বিত হয়ে বলল,

–কে সে? তাড়াতাড়ি আমাকে তার নাম বলো না হলে ফলাফল ভালো হবে না, বলে দিলাম।

–তাহিয়া ম্যাডাম এসব করেছেন। শুধু তাই নয় আপনাকে নিজের স্বামী বলে পরিচয় দিয়েছে। সে আরো বলেছে সে দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা। আপনি তাকে নিয়মিত মা’রধর করেন। সে মেহেভীন ম্যাডামকে আপনার জীবন থেকে দূরে সরে যেতে বলছে। তাছাড়া মেহেভীন ম্যাডাম… তাইয়ানের কথা শেষ হবার আগেই মুনতাসিম কল কেটে দিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেল। ফ্রেশ হয়ে এসে ফুরফুরে মেজাজে ড্রয়িং রুমে আসলো। সেখানে সকাল সকাল চায়ের আড্ডা জমেছে বেশ। মুনতাসিম আয়েশী ভঙ্গিতে সোফায় গিয়ে, তার ফুপির পাশে গিয়ে বসলো। কিছুটা লাজুক মুখশ্রী করে বলল,

–আমাকে তোমার কেমন লাগে ফুপি? মুনতাসিমকে কখনো পরিবারের আড্ডায় বসতে দেখা যায় না। মুনতাসিমকে দেখে সবাই বিস্ময় নয়নে তার দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। মুহুর্তের মধ্যে পরিবেশ শীতল হয়ে উঠল। নিস্তব্ধতার রাজত্ব চলছে চৌধুরী বাড়ির প্রতিটি কোণায়। এ যেন ঝড় আসার পূর্বাভাস দিয়ে যাচ্ছে। সবাইকে শীতল হয়ে যেতে দেখে সুফিয়া চৌধুরীর মুখে ভাঁজ পড়ল। সে আনন্দিত হয়ে মুনতাসিমকে বলল,

–তোর মতো ছেলে যার ঘরে হবে। সে তো ভাগ্যবতী রে। তোর মতো হীরাকে অপছন্দ করার কোনো কারন আছে। এতদিন পর বুঝি ফুপির কথা মনে পড়ল। সে কবে এসেছি। সারাদিন বাসায় থাকিস না। রাতে কোনোরকম আসিস। ভোর হবার সাথে সাথে তোর খোঁজ পাওয়া যায় না। তুই আমাকে আগে কতটা ভালোবাসতি রে মুনতাসিম। এখন কি ফুপিকে আর ভালো লাগে না।

–আমি এত সহজে আমার ফুপিকে ভুলতে পারি। আমি আমার ফুপির শখের ফুলদানিটা ভেঙে ফেলে দিয়েছিলাম। শাস্তি স্বরুপ শীতের দিনে কনকনে ঠান্ডা পানিতে দুই ঘন্টাটা ডুবে থাকতে হয়েছিল। ছোট্ট মুনতাসিমের সহ্য ক্ষমতা কম ছিল। মা টাও ছিল না। এই সুযোগটা হাতিয়ে নিলেন। আমার মাকে আল্লাহ নিয়ে গিয়েছেন তার কাছে। এই সুযোগ হাত ছাড়া করা যায়। সেদিন আমি পানিতেই জ্ঞান হারালাম। ভাগ্য সহায়ক ছিল বলেই আব্বা আমায় খুঁজতে এসে পেয়ে যায়। তারপর দু’দিন আমার কোনো জ্ঞান ছিল না। পনেরো দিন হসপিটালের বেডে থাকতে হয়েছে। কত রাত যন্ত্রনায় ছটফট করেছি। মা মা করে ডেকেছি। ছোট্ট মুনতাসিমের পাশে কেউ ছিল না৷ আদরের সন্তানের জন্য সেদিন আব্বাকে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে দেখেছি। সেদিনই উপলব্ধি করেছিলাম। যার মা নেই তার কেউ নেই কেউ না। একটু ভুল হলেই আপনার চড়,বিশ্রী ভাষায় গালি, আমার নামে সৎ মায়ের কাছে বি’ষ ঢালা সবকিছুই দেখেছি। এত ভালোবাসা কি এত সহজেই ভুলে যাওয়া যায় ফুপি। মনে নেই দুধের সাথে বি’ষ মিশিয়ে মা’র’তে চেয়েছিলেন। সেইদিনের ভালোবাসা আমি কখনোই ভুলব না। সেদিনের কথা মনে হলে আনন্দে আমার ভেতরটা ছটফট করে। মুনতাসিমের কথায় সুফিয়া চৌধুরীর সমস্ত মুখশ্রীতে আঁধার ঘনিয়ে এল। অতীতে করা পাপ গুনো যত্ন সহকারে মুনতাসিম তাকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। ছেলেটার মধ্যে দারুন প্রতিভা আছে। মিষ্টি কথায় কত সুন্দর করে অপমান দিল। সুফিয়া চৌধুরীর মুখটা দেখে মুনতাসিমের ভেতরটা দাউ দাউ করে জ্বলে উঠল। পুরোনো ক্ষত যেন নতুন করে জাগ্রত হয়ে গেল। চোয়াল শক্ত করে মুখশ্রীতে কৃত্রিম হাসি ফুটিয়ে বলল,

–আমাকে জামাই হিসেবে কেমন লাগে আপনার? মুনতাসিমের কথায় রিয়াদ চৌধুরী বিস্ময়ের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেল। সবার দৃষ্টি মুনতাসিমের দিকে স্থীর। সমস্ত অপমান ভুলে সুফিয়া চৌধুরীর মুখশ্রী চিকচিক করে উঠল। সে কিছুটা আদুরে কণ্ঠে বলল,

–আমি জানতাম আমার বাবা আমার মনের কথা বুঝবে। আমি তোকে শক্ত করার জন্যই ছোট বেলার বারবার তোকে আঘাতপ্রাপ্ত করেছি। এই জন্য আজ তুই এতটা শক্ত হয়েছিস। কার জন্য হয়েছিস। আমার ওপরে রাগ করেই তো হয়েছিস। মুনতাসিমের মুখশ্রীতে তাচ্ছিল্য ফুটে উঠল। সে গম্ভীর কণ্ঠে জবাব দিল,

–মুনতাসিম তার মায়ের মতো হয়েছে। তার মায়ের সহ্য ক্ষমতা ছিল বলেই, এই নিকৃষ্ট পরিবারে মানুষদের সাথে কতগুলো বছর সংসার করতে পারছে। আপনিই বলুন আপনাদের মানুষদের কাতারে ধরে?

–আমি তোমার ফুপি হই ভুলে যাচ্ছ!

–সামনে আপনি আমার শাশুড়ী হতে চলেছেন। আমি কি আমার শাশুড়ীর সাথে একটু মশকরা করতে পারি না। আচ্ছা আপনি রাগ করবেন না। এখন বলুন আপনার মেয়ে কোথায়? তাকে দেখার জন্য ভেতরটা ছটফট করছে। কবে থেকে তাকে দেখিনা। তার মায়াবী মুখশ্রী দেখে পরাণটা শীতল করতে চাই। মুনতাসিমের কথায় সবার আঁখিযুগল আপনা-আপনি বড় হয়ে গেল। কিন্তু সুফিয়া চৌধুরীর মুখশ্রীতে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠল। যে আশা নিয়ে এতদিন বুক বেঁধে ছিল। আজ সেই আশা পূর্ণতা পেতে চলেছে। সে আঙুল দিয়ে মাশরাফির পাশের কক্ষটা দেখিয়ে বলল,

–ওখানে তাহিয়া আছে। মুনতাসিম মুহুর্তের মধ্যে লাজুক মুখশ্রী করে ফেলল। লজ্জা মাখা কণ্ঠে বলল,

–আমি যাই আপনার মেয়ের সাথে প্রণয়ের সম্পর্ক গড়ে আসি। রিয়াদ চৌধুরী মুনতাসিমকে বাঁধা দিতে আসলে, মুনতাসিম রক্তিম দৃষ্টিতে বাবার দিকে দৃষ্টিপাত করে। আঁখিযুগল দিয়ে তার আগুন ঝরছে। মুনতাসিম হাতের ইশারা করে দেখাল। সে তার কাজে বাঁধা সৃষ্টি করলে সে নিজেই নিজের শরীর গু’লি চালিয়ে দিবে। রিয়াদ চৌধুরী অনুভূতি শূন্য হয়ে পড়লেন। একদিকে ছেলের জীবন অন্য দিকে তাহিয়ার জীবন। সে কাকে বাঁচাবে? অজানা ভয়ে বুকটা কেঁপে কেঁপে উঠছে। ইতিমধ্যেই তাইয়ান রিয়াদ চৌধুরীকে সমস্ত কথা খুলে বলছে। ছেলেটা তার ভিষণ নিষ্ঠুর। মেয়েটা আবেগে বশিভূত হয়ে ভুল জায়গায় আঘাত করেছে। সে মুনতাসিমের ব্যক্তিত্বের আঘাত করেছে। মেয়েটাকে বাঁচতে দিবে না মুনতাসিম।

সূর্যের সোনালী রশ্মি মেহেভীনের মুখশ্রীতে আঁচড়ে পড়ছে। কালকে নিজেকে পাগল মনে হচ্ছিল মেহভীনের। মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল। অকেজো মস্তিষ্ক নিয়ে ছটফট করতে করতে নিদ্র দেশে তলিয়ে গিয়েছে। মাথাটা এখন বেশ হালকা লাগছে। ঘুম থেকে উঠলে অনুভব করা যায়। ঘুম হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার শ্রেষ্ঠ নেয়ামত। কালকে সমস্ত চিন্তায় একটা কাজও মস্তকে প্রবেশ করছিল না। মস্তিষ্ক গভীর ভাবে সজাগ হতেই কালকের সমস্ত ঘটনা মনে পড়ে গেল। নিজের অজান্তেই সমস্ত শরীর কেঁপে উঠল। ভেতরটা যন্ত্রনায় হুঁ হুঁ করছে। মানুষটার ব্যক্তিত্বে আঘাত করেছে সে। মানুষটা তাকে ক্ষমা করবে তো। মেহেভীন বিলম্ব করল না। দ্রুত ফোন বের করল। কোনোদিন কাউকে ফোন করার সময় তার হাত কাঁপেনি। তবে আজ কাঁপছে। অপরাধ বোধে ভেতরটা তচনচ হয়ে যাচ্ছে। দু’বার ফোন বেজে কেটে গেল। মেহেভীন চারবার ফোন করল। পাঁচ বারের বেলায় ফোনটা কেটে দিল। পরের বার ফোন করতেই মেহেভীন অনুভব করল নাম্বারটা ব্লক করে দেওয়া হয়েছে। মেহেভীন সাথে সাথে মেসেজ করল। আমাকে একটা বার ক্ষমা করে সুযোগ দেওয়া যায় না৷ সত্যিটা সামনে নিয়ে আসার জন্য। মেসেজ ব্লকটাও মুহুর্তের মধ্যে হয়ে গেল। ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে মেহেভীনের। এত বাজে ভাবে জ্বালা করছে মনটা। মেহেভীনকে বিধ্বস্ত অবস্থায় বসে থাকতে দেখে, রুপা আসলো তার কক্ষে। কালকে মেহেভীন দরজা না লাগিয়েই ঘুমিয়েছিল। রুপাকে দেখে শান্ত দৃষ্টিতে একবার পরখ করে নিল মেহেভীন।

–আমি বোধহয় জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলটা করেই ফেললাম রুপা। সমস্ত শরীর যন্ত্রনায় জ্বলে যাচ্ছে আমার। মানুষটা আমাকে কোনোদিন ক্ষমা করবে না। আমার উচিত চিল৷ একটা বার ঐ মেয়েটাকে তার সামনে উপস্থিত করা। আমি নিজের কথা ভেবেছি। মানুষটাকে একটা বার বোঝার চেষ্টা করিনি। মানুষটা কালকে গ’লা কাটা মুরগীর মতো ছটফট করছে, আমার সাথে একটু কথা বলার জন্য আমি স্বার্থপরের মতো তার নাম্বার ব্লক করে আরামে ঘুমিয়েছি। আল্লাহ ভালো জানেন কিভাবে মানুষটা রাত পার করেছেন। ফোন দিলাম আমার ফোনটা ধরল না রে রুপা। মানুষটা আমার জীবন থেকে চলে গেলে আমি কি নিয়ে বাঁচব। মেহেভীনের অসহায়ত্ব দেখে রুপার কোনো ভাবান্তর হলো না। তার মুখশ্রীতে বিরক্ত ফুটে উঠল।

–আপনি কার জন্য কষ্ট পাচ্ছেন আপা। যে মানুষটা আপনাকে ঠেকিয়েছে। আপনি যা করেছেন একদম ঠিক করেছেন। মানুষটাকে আমার একদম পছন্দ ছিল না। সেদিন ছাদে সে আমাকে অচেতন করে রেখে এসেছিল। আমি থাকলে তার সমস্যা হতো। আমাকে সরিয়ে আপনার থেকে সুযোগ নিতে চেয়েছিল। প্রথম থেকেই মানুষটার চরিত্রে সমস্যা ছিল। এমন চরিত্রহীন ছেলের জন্য এতটা কষ্ট পাবেন না। আপনার জন্য কত সুন্দর সুন্দর ছেলে পাগল। রুপার কথায় মেহেভীন মুহুর্তের জ্বলে উঠল। রক্তিম চোখে রুপার দিকে তাকিয়ে আছে। একবার রুপা বলে চেঁচিয়ে সাবধান করেছে। তবুও রুপা শুনছে না। মেহেভীন রাগান্বিত হয়ে রুপার গালে থা’প্পড় বসিয়ে দিল।

–অন্যকে খারাপ বলার তুই কে? তুই নিজের যোগ্যতা ভুলে যাস না। তুই কি করে বেড়াস সেসব আমি জানিনা মনে করেছিস। আমার সামনে মুনতাসিমকে নিয়ে বাজে কথা বললে, তোর জিভ আমি টেনে ছিঁ’ড়ে ফেলব। আমার জিনিসে বলার অধিকার শুধু আমারই। আমার জিনিস নিয়ে কথা বলার অধিকার আমি তোকে দেইনি৷ তাকে খারাপ বললেও আমি বলব৷ ভালো বললেও আমি বলব। তুই যে মুনতাসিমকে আঁড়চোখে দেখিস৷ তোর মনের অন্তরালে কি চলে। সেটা আমার থেকে ভালো কেউ জানে না। আমার সামনে থেকে চলে যা। না হলে তোকে আমি খু’ন করে ফেলব। রুপা অশ্রুসিক্ত নয়নে মেহেভীনের দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে৷ মেহেভীন রুপাকে উপেক্ষা করে ওয়াশরুমে চলে গেল।

তাহিয়া বই পড়ছিল। মুনতাসিম এসে দরজা লাগিয়ে দিল। মুখশ্রীতে তার স্বাভাবিক ভাব ফুটে উঠেছে। মুনতাসিমকে নিজের কক্ষ দেখে রহস্যময় হাসি হেসে উঠল তাহিয়া। তা মুনতাসিমের দৃষ্টি এড়ালো না। মুনতামিস আদুরে কণ্ঠে বলল,

–বই পড়ছিস? কি বই পড়ছিস জামাইকে কিভাবে আঁচলে বাঁধতে হয়।

–বাঁধতে আর পারলাম কই। বিয়েই তো করতে পারলাম না।

–এই তুই আমার সাথে মজা করছিস৷ তোর আঁখিযুগলের সামনে তোর অর্ধাঙ্গ দাঁড়িয়ে আছে। তাকে বুঝি তোর পছন্দ হচ্ছে না। আমাকে কি আর তোর পছন্দ হবে৷ কোথায় তুই কোথায় আমি। বামুন হয়ে চাঁদে হাত বাড়াতে পারি বল৷ মুনতাসিমের কথায় তাহিয়া আঁখিযুগল বড় বড় করে তাকলো। মুহুর্তের মধ্যে সমস্ত শরীর শীতল হয়ে উঠল। সে দ্রুত উঠে দাঁড়াল। মুনতাসিম তাহিয়ার কিছুটা কাছে গিয়ে শীতল কণ্ঠে বলল,

–বিয়ে করেছি বহুদিন হলো। কিন্তু বাসর করা হয়নি। তাই বউয়ের সাথে শুভ কাজটা সারতে আসলাম। তোর কোনো আপত্তি নেই তো আবার৷ মুনতামিসম লাজুক ভঙ্গিতে বলল। তাহিয়ার সমস্ত শরীর কেঁপে উঠল। গলা শুকিয়ে কাট হয়ে আসছে। মুনতাসিম কিছুটা চিন্তিত হয়ে বলল,

–আমি আমার বউকে কিছু করিনি জানিস। তবুও সে অন্তঃসত্ত্বা হয়েছে। এটা কিভাবে সম্ভব জানিস কিছু। লজ্জায় তাহিয়ার মুখশ্রী নত হয়ে আসলো। মুনতাসিম ভালো মানুষির মুখোশ ছেড়ে বের হয়ে আসলো।

–আমার কাছে আমার চরিত্র শ্রেষ্ঠ সম্পদ। ছোট থেকে বড় হয়েছি। কারো সাহস হয়নি আমার চরিত্রের দাগ লাগানোর। কিন্তু তুই তো আমার চরিত্রে সোজা কলঙ্ক লাগিয়ে দিলি। তোকে শাস্তি স্বরুপ কেমন মৃ’ত্যু দিলে ভালো হয় বল তো। তুই আমার বাবার রক্তের বোনের মেয়ে। আমি তোকে কষ্ট দিয়ে মা’রতে পারি না। কেমন মৃত্যু তোর পছন্দ। আর হ্যাঁ যে কাগজ গুলো মেহেভীন কে দেখিয়েছিস। সেগুলো তাড়াতাড়ি বের করে দে। তাহিয়া থরথর করে কাঁপছে। কণ্ঠনালি দিয়ে কোনো বাক্য উচ্চারিত হচ্ছে না। ভয়ে পুরো শরীর অবশ হয়ে আসছে। একদম দেওয়ালের সাথে মিশে দাঁড়িয়ে আছে তাহিয়া। মুখশ্রীতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে তার।

চলবে…..

(কিছু বলার ছিল হাত চলছে না। পরবর্তী পর্বে বলা হবে।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here