অনুভূতিরা_শব্দহীন লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী দ্বিষষ্টি পর্ব (পর্ব ৬২)

0
359

#অনুভূতিরা_শব্দহীন
লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী

দ্বিষষ্টি পর্ব (পর্ব ৬২)

জামিলের এপার্টমেন্টে গিয়ে মৃত্তিকা দেখে গ্যারেজে কোনো একটা অনুষ্ঠান হচ্ছে, মনে হলো গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান।

মৃত্তিকা এখানে দাঁড়িয়ে যায়। ছয়তলায় যাওয়ার কথা ভুলে সে অনুষ্ঠান দেখতে শুরু করে। মেয়েগুলো সব হলুদ, সবুজ শাড়ি পড়েছে। ফুলের সাজে সবাইকে খুব সুন্দর লাগছে। স্টেজে বাসন্তী রঙের শাড়ি পড়া মেয়েটা বউ।

পেছনে লেখা ‘মেহজাবিনের হলুদ সন্ধ্যা’। অজান্তেই হাসতে থাকে মৃত্তিকা। ওর নামও তো মেহজাবিন, মৃত্তিকা মেহজাবিন মিউকো।

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে লিফটের দিকে পা বাড়ায়। লিফটেও কিছু মানুষ উপরে উঠছে, সবাই সেজেগুজে আছে।

মৃত্তিকা লিফটে উঠে ছয়তলার সুইচ চাপলে একটা মেয়ে বলল,
“আপনি ছয়তলায় থাকতেন?”

মৃত্তিকা মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বলে,
“না, একজনের সাথে দেখা করতে এসেছি।”

“কার সাথে দেখা করবেন? ছয়তলার তিনটা ফ্ল্যাটই তো খালি।”

মৃত্তিকা কপাল কুঁচকে ফেললে আরেকটা মেয়ে বলে,
“হ্যাঁ, ওখানে তো অনেকদিন ধরে কিসের যেন কাজ হচ্ছে। সব টাইলস উঠিয়ে ফেলেছে। দিনের বেলা মাঝে মাঝে দুইটা লোক আসে, এখন কেউ আছে কিনা জানা নেই।”

মৃত্তিকা কপালের ভাঁজ গাঢ় করে ছয়তলায় নামে। ফোনের ফ্ল্যাশ জ্বালিয়ে আশেপাশে দেখতে শুরু করে।

রাত প্রায় আটটা বেজে গেছে, এখন কি আদৌ এখানে কেউ থাকার কথা। আবারো লিফটের সাইরেনের শব্দ হয়৷ মৃত্তিকা বুঝতে পারে এই ফ্লোরে কেউ এসেছে।

একটা ফ্ল্যাটে ঢুকে সে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে।

“কেউ আছেন? মৃত্তিকা, আপনি কি এখানে?”

কন্ঠটা আহনাফের, মৃত্তিকা চিনে যায়। সে বেরিয়ে এসে আহনাফকে মারতে উ°দ্ধত হলে আহনাফ সরে দাঁড়িয়ে ধ°মক দিয়ে বলে,
“আমি না করার পরেও কেন এখানে এসেছেন? ইমতিয়াজ জানলে কি ভাববে?”

মৃত্তিকাও পালটা ধ°মক দেয়,
“আমার ইচ্ছা, আমি এসেছি। আপনার কি সমস্যা?”

“গলা নামিয়ে কথা বলুন, মিউকো ম্যাডাম। আমার কিন্তু রাগ হচ্ছে।”

“রাগ একা আপনার আছে? আমার নেই? বাচ্চা আমি?”

“বাচ্চা হবেন কেন? সবকিছুর জ্ঞান তো টনটনা। এটা বুঝেন না যে, এখানে আপনার কোনো সমস্যা হলে দায়ভার আমার উপরেও যাবে।”

“আপনি কিন্তু আমার বিষয়ে বেশি নাক গলাচ্ছেন?”

“ইমতিয়াজ থাকলে নাক গলাতাম না। যেহেতু সে নেই, তাই গলানো লাগতেছে।”

“এই ফ্ল্যাটের এ অবস্থা কেন, এখানে সকালে কোন লোক আসে, খবর আছে? আমি খবর নিবো।”

“ওরে সাংবাদিক এলেন?”

“আমার ইচ্ছা, আমি যাবো কি থাকবো?”

আহনাফ গিয়ে সিঁড়িতে বসে পড়ে। মৃত্তিকা আবারো আশেপাশে ঘুরাঘুরি করতে থাকে। একটা রুমে গিয়ে সে অবাক হয়। এ রুমে খাট আছে, লাইট-ফ্যান লাগানো, কয়েকটা ব্যাগ রাখা।

“আহনাফ ফয়েজ, এখানে আসবেন একটু প্লিজ।”

আহনাফ বির°ক্তি নিয়ে উঠে এসে বলে,
“জীবনে কতটা দুঃখ থাকলে আরেক লোকের বউ পাহারা দেয়া লাগতেছে।”

আহনাফ রুমে এসেই হা করে তাকিয়ে থাকে। মৃত্তিকা ব্যাগগুলো ঘাটাঘাটি করে মেয়েদের জামাকাপড় পায়। আরেকটা ব্যাগে ছেলেদের পোশাক।

“এখানে ছেলে-মেয়ে উভয়ই থাকে। এই মেয়ে অপরূপা ছাড়া আর কেউ হতেই পারে না।”

আহনাফ ব্য°ঙ্গ করে বলে,
“তা হবে কেমনে? অপরূপা ছাড়া আর কোনো মেয়ে তো দুনিয়ায় নাই।”

মৃত্তিকা ফিরে তাকিয়ে বলল,
“দেখেন, আপনি পায়ে পা দিয়ে ঝগড়া করতেছেন। বাচ্চাদের মতো আচরণ করেন কেন?”

আহনাফ উত্তর না দিয়ে আশেপাশের জিনিসপত্র দেখতে শুরু করে। সি°গা°রেট, ম°দের বোতল, শুকনো কিছু খাবার পায়। কয়েকটা ছেঁড়া কাগজের সাথে আহনাফের ফোনের কাভারটাও পায়।

আহনাফ মৃত্তিকার দিকে তাকালে মৃত্তিকা একটা বি°চ্ছি°রি হাসি দিয়ে বলে,
“আগে এলে ফোনটাও পেয়ে যেতে পারতেন। এখন কোনো ক্রা°ইম করে আপনাকে ফাঁসিয়ে দিলে আপনার আম, ছালা দুটোই যাবে।”
______________________________________

ইমতিয়াজের মুখোমুখি অপরূপা বসে আছে। বাঁধা নয়, একদম স্বাভাবিকভাবে বসে আছে সে। আহনাফের ফোনটা অপরূপার থেকে নিয়ে নিয়েছে ইমতিয়াজ।

ইমতিয়াজ পায়ের ব্য°থায় একটু কষ্ট পাচ্ছে, কিন্তু তবুও সে যথেষ্ট শান্ত আছে। বাইরে শান্ত থাকলেও ভেতরটা তার অস্থির। রাত হয়ে গেল, অথচ মৃত্তিকা আসলো না।

বাসায় নিয়াজীর সাথে মৃত্তিকাকে রেখে যাওয়া কিংবা নিয়াজীকে একা রেখে যাওয়া খুবই অনিরাপদ, আবার মৃত্তিকাকে একা ছেড়েও যেন ভুল করেছে।

“আমার লোকজন নিচে আছে ইমতিয়াজ। মৃত্তিকা আসলেই কিন্তু ধরা পড়বে।”

অপরূপার কথায় ইমতিয়াজ হেসে দেয়। বলে,
“ওই নারীকে নিয়ে আমার চিন্তা নেই। তোমার শাফিনকে যে নারী বিবির বাজার থেকে ঢাকায় আনতে পারে, তার পক্ষে তোমার দুই-চারজন লোক কোনো ব্যাপার না।”

বেল বাজলে ইমতিয়াজ দ্রুত দরজা খুলে দেখে শরীফ এসেছে। ইমতিয়াজকে দেখে ঠেলেঠুলে কোনোমতে ভিতরে এসে বলল,
“তুমি ঠিক আছো? আমি তো অন্য কিছু শুনেছিলাম।”

ইমতিয়াজ মৃদু হেসে বলল,
“কি শুনেছিলেন?”

“বাদ দাও।”

শরীফ নিয়াজীর দিকে তাকিয়ে বলে,
“ও কে?”

“চেনেন না? নিয়াজী।”

শরীফ ইমতিয়াজের দিকে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে বলল,
“ও এখানে কেন?”

“আমি এনেছি। আর উনি (অপরূপাকে দেখিয়ে) নিজে নিজে এসে হাজির হয়েছে।”

শরীফ আশেপাশে তাকিয়ে বলল,
“মিউকো নেই?”

“চলে আসবে।”

নিয়াজী আর অপরূপার কথা বলতে বলতে সময় পার হয়ে যায়। রাত দশটার দিকে মৃত্তিকা আসে। বাসায় এসে শরীফকে দেখে অবাক না হলেও অপরূপাকে দেখে সে প্রচন্ড অবাক হয়।

ইমতিয়াজ মৃত্তিকাকে বলে,
“খাচ্ছিলো তাঁতি তাঁত বুনে, কাল হলো তার এঁড়ে গরু কিনে। অপরূপাকে তোমাকে মা°রতে এসেছে।”

ইমতিয়াজের কথায় মৃত্তিকা হেসে বলে,
“বাহ, এখন নিজেই ধরা পড়েছে।”

আহনাফের ফোনটা দেখিয়ে ইমতিয়াজ বলে,
“আহনাফ ফয়েজের ফোন। (একটু থেমে) তুমি এতোক্ষণ কোথায় ছিলে?”

“গিয়েছিলাম আহনাফের ফয়েজের নাম্বার থেকে অপরূপার পাঠানো ঠিকানায়।”

ইমতিয়াজ চোখ রা°ঙিয়ে বলে,
“না গেলে হতো না? আমি তোমাকে বারবার নিষেধ করেছি অতিরিক্ত কিছুই করবে না। আমি তো আগেই বুঝেছিলাম ও আসবে।”

মৃত্তিকা রুমে চলে যায়। ইমতিয়াজ শরীফকে বলে,
“এখন আপনি বলেন আপনি আগে আগে সব কিভাবে জেনে যান? মৃত্তিকাকে কে, কবে, কখন মারতে চেয়েছিল। মৃত্তিকার মামা ওকে একা করতে চায় কি চায় না। (একটু থেমে) ইভেন, যে কথা আমি মনে মনে ভাবিনি তাও জেনে গেছে। হাউ?”

“দেখো রিপা মা°রা যাওয়ার পর মিউকো ইতালি চলে গেছিল। এরপরই আমি জানতে পারি এসব কিছু সাজানো ছিল।”

“কিভাবে জেনেছেন? কার মাধ্যমে?”

শরীফ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“সেদিন চারটা খু°ন হয়েছিল। একটা ছেলে মা°রা গেছিলো, ওর ফোনে ভিডিও করছিল। ওই ভিডিওতে আমি কলরবের বাবা দুলালকে দেখেছিলাম।”

“ভিডিও কোথায় পেয়েছেন আপনি?”

“ওর ভাইয়ের ফোন আর ওর ফোনের জিমেইল একাউন্ট একটাই ছিল। ভিডিও জিমেইল রিস্টোর করে নেয়। সেখান থেকে পেয়েছি, মানে ওর ভাইয়ের ফোন থেকে।”

“ওর ভাইকে কোথায় পেয়েছেন?”

“বিষয়টা আমি বলবো কাকতালীয়। ওর ভাই ওকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছিল। সেখান থেকে আবার থানায় গিয়ে মা°মলা করেছিল। সেই মা°মলা নিয়ে হাসপাতালে তার বাবার সাথে হওয়া কথোপকথন শুনে আমার সন্দেহ হয়। বিশেষ করে স্থান আর সময় একই হওয়ায় এই সন্দেহের উৎপত্তি। তারপর কথা।”

ইমতিয়াজ ভ্রূ উঁচিয়ে বলে,
“তা আপনার গ্যাং কবে তৈরি করেছেন?”

“এ গ্যাং আরো আগে থেকেই তৈরি হয়েছে। রিপার সাথে ছাড়াছাড়ির পর থেকেই গ্যাং তৈরি করেছি।”

“কি কি করেছে এই গ্যাং?”

“তেমন কিছু না, আগে গ্যাং ছোট ছিল। শক্তিশালী টিম আমি আরো পরে তৈরি করেছি।”

ইমতিয়াজ শরীফের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল,
“করতোটা কি এরা তখন?”

“রিপার উপর নজর রেখেছে। যেভাবে আমি মৃত্তিকার জন্য স্পা°ই রেখেছিলাম সেভাবে রিপার জন্যও ছিল।”

ইমতিয়াজ এবারে জোরে চেঁচিয়ে উঠে,
“তো সেদিন ওই স্পা°ই গুলো কোথায় ছিল? রিপা বেগমকে সেদিন কেন ওরা বাঁচাতে পারেনি?”

শরীফ মাথানিচু করে ঠোঁট চেপে নিজের কান্না লুকিয়ে বলে,
“আমার বিশ্বস্ত তিনজনের লা°শ পেয়েছিলাম আমি, শাফিন হয়তো বুঝে গিয়েছিল ওরা নজর রাখছে।”

ইমতিয়াজ নিয়াজীকে বলে,
“এ কথা তো তুমি বলোনি?”

“আমি জানি না এ ব্যাপারে। শাফিন আর দুলালের কাছে যে ধরনের মানুষ ছিল, তার কাছে শরীফের এদেরকে আমার চুনোপুঁটি লাগে।”

টেবিলের উপর থেকে কাচের জগটা নিয়ে নিয়াজীর মাথায় আ°ছড়ে ফেলে ইমতিয়াজ। জগ ভে°ঙে কাচের টুকরো তার মুখে মাথা লাগে। গলার আশেপাশেও কয়েক টুকরো লেগেছে। র°ক্ত ঝরা শুরু হয়েছে।

মৃত্তিকা দ্রুত গতিতে বেরিয়ে এসে ইমতিয়াজকে টে°নে সরিয়ে নেয়। রাগে এখনো জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে সে।

শরীফ নিয়াজীকে ধরে ইমতিয়াজকে ধমক দেয়,
“কি করছো তুমি এসব? মে°রে ফেলবে নাকি?”

“ম°রে যাক।”

ইমতিয়াজ রুমে চলে যায়। হুটহাট রাগের উপর তার নিয়ন্ত্রণ কম।

শরীফ কাউকে কল করে। কয়েক মিনিট পর দুজন লোক এসে নিয়াজীকে নিয়ে যায়।

মৃত্তিকা রুম থেকে বলে,
“কোথায় নিয়ে যাচ্ছে ওকে?”

“ইমতিয়াজের হাতে যেন কারো মৃ°ত্যু না হয়, সে ব্যবস্থা করছি। দরজা লাগিয়ে দাও।”

মৃত্তিকা দরজা লাগাতে গেলে অপরূপা ওকে বলে,
“ভাবো নিয়াজী মা°রা গেল আর ইমতিয়াজের ফাঁ°সি হলো বা যাবজ্জীবন সাজা, শাফিনের মতো সে কিন্তু বের হতে পারবে না।”

অপরূপা কথা শেষে হেসে দেয়। মৃত্তিকা জবাব না দিয়ে অপরূপাকে চেয়ারের সাথে বেঁধে রুমে চলে আসে।

ইমতিয়াজের কাছে গিয়ে বসে বলল,
“এই পাগলামিগুলো কেন করেন আপনি?”

ইমতিয়াজের মুখটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে ওর কপালে-গালে চুম্বন করে মৃত্তিকা। ইমতিয়াজ ওকে টে°নে কাছে এনে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।

নিজের শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে ওকে ঝাপটে ধরে বলল,
“হয়তো আমার রাগের জন্যই আমরা আলাদা হয়ে যাবো।”

“প্লিজ, এভাবে বলো না। আমার সহ্য…”

মৃত্তিকার কথা মাঝপথে থেমে যায়। অপরূপার শ°কুনি দৃষ্টি ওদের রুমের দিকেই। দরজা অর্ধেক খোলা থাকায় এখান দিয়েই সে দেখছে স্বামী-স্ত্রীর একান্ত কাটানো সময়টুকু।

মৃত্তিকা ইমতিয়াজকে সরিয়ে উঠে যায়। অপরূপার দিকে একবার পূর্ণদৃষ্টি দিয়ে সে সশব্দে দরজা বন্ধ করে দেয়।
______________________________________

আহনাফকে আবারো বাসায় আসতে দেখে সারাহ্ মুখ ভেংচিয়ে ব্য°ঙ্গ করে বলে,
“বড়বড় কথা বলে কে যেন বেরিয়ে গেছিলো? কোথায় তাহার বড়বড় কথা?”

আহনাফ উত্তর দেয় না। নার্গিস পারভিনের ডাকে সারা দিয়ে ডাইনিং এ যায়। নিরবে রাতের খাবার খেয়ে রুমে আসতেই আবারো সারাহ্-র ভাষণ শুরু হয়,

“সাইদা মা, তোমার আব্বা কি বলছিলো?”

কথাটা বলে সারাহ্ নিজের পেটে হাত দিয়ে আবারো বলে,
“একদম তাই, আমি চলে যাবো।”

সারাহ্ বিছানায় বসে হাসতে লাগলে আহনাফ বলে,
“হু, একটা গান আছে, কি যেন এখন মনে পড়তেছে না। (একটু ভেবে) হ্যাঁ মনে পড়ছে।
আমার ঘরেরও রমনী
যেন কাল না°গিনী।
একদম তাই, এমন বাচ্চার মায়ের জন্যই বলছিলো।”

সারাহ্ রেগেমেগে উঠে,
“কি? আমি কাল না°গিনী? আমি কাল সা°প, রাসেল ভাই°পার।”

আহনাফ হেসে বিছানায় ওর পাশে এসে ওকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“তোমার জন্য ফিরে আসিনি, আমি আমার সাদাব-সাইদার জন্য আছি।”

সারাহ্ও আহনাফকে জড়িয়ে ধরে,
“আমি জানি, আমার জন্য জীবনেও থাকবেন না।”

“একদম ঠিক। কাল সকালে কিন্তু যেতেই হবে।”
______________________________________

তিনদিন পর, শাফিনের অবস্থা আজ অনেক খারাপ হয়ে গেছে। হাত আর পায়ে যেখানে যেখানে পে°রেক ঠু°কে দেয়া হয়েছিল, সেখানে পঁচন ধরতে শুরু করেছে।

য°ন্ত্র°ণায় থেমে থেমে চিৎকার করে শাফিন। এমনকি ওর অবস্থা দেখে সহজে কোনো নার্সও ওর কাছে ঘেষতে চায় না।

ডা: মাহিন আর সুস্মিতা এসেছে ওকে দেখতে। একজন নার্স ওয়াশ করতে শুরু করলে আবারো সে চিৎকার করতে থাকে,

“বাঁচাও আমাকে, ও আল্লাহ্, ম°রে গেলাম, কি ব্য°থা।”

মুখ দিয়ে যে যে শব্দ বের হচ্ছে, সে তাই উচ্চারণ করছে।

সুস্মিতা ক্ষ°তস্থান দেখে মুখভঙ্গি পালটে ফেলে। এমনিতেই সে শাফিনকে ঘৃ°ণা করে আর ওর এসব ক্ষ°ত দেখে সুস্মিতা বুঝতে পারে প্রকৃতির প্রতি°শোধ বলে আসলেও কিছু আছে।

“আমি কি ভিতরে যেতে পারি?”

বাইরে কেউ অনুমতি চাচ্ছে। সুস্মিতা দরজার কাছে গিয়ে সুরভিকে দেখে। পুলিশরা ওকে অনুমতি দিচ্ছে না।

সুস্মিতা বলে,
“আসতে দিন, শাফিনের মেয়ে।”

সুরভি মাথানিচু করে ভিতরে এসে বলল,
“পরিচয়টা না দিলেও হতো।”

শাফিনের পরিচয় দিতে সুরভির লজ্জা হয়, ঘৃ°ণা হয়। বিতৃষ্ণা চলে এসেছে তার জীবনের প্রতি।

শাফিনের কাছে গিয়ে ওর এ অবস্থা দেখে সুরভির চোখে পানি চলে আসে। যতই হোক সে তার বাবা।

“নিজের এ হাল করে ছেড়েছো তুমি? আরশে গিয়ে যে চিৎকারগুলো ঠেকেছে, আরশের মালিক কি তার বিচার করবে না ভেবেছো? তুমি ওই আল্লাহ্-কে সেদিন ভুলে গেছিলে আর আজ ডাকছো?”

মনের কষ্টে কথাগুলো বলতে থাকে সুরভি। শাফিনের কানে হয়তো সবগুলো কথা পৌঁছায়নি। সে তো পৃথিবীতে ভোগ করছে তার পা°পের এক ক্ষুদ্রাংশের শা°স্তি।

‘নিশ্চয়ই যারা জা°লেম, তাদের জন্যে রয়েছে য°ন্ত্র°ণাদায়ক শা°স্তি।’ (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ২২)

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here