মায়াবন্দী
লেখিকা- তাসনীম তামান্না
পর্ব- ১২ ও শেষ পর্ব
☆☆☆
সেদিনের পর কেটে গেছে আরও বেশ কয়েকটি দিন। ওরা সবাই মিলে খুলনায় ওদের আগের বাড়িতে চলে আসছে। রুমা নিজেকে ঘর বন্দি করে ফেলছে খুব একটা রুম থেকে বের হয় না। বাসার কারোরই মনের অবস্থা ভালো না। রুমার বফ রোহিত তার এবং তার পরিবারকে অনেক রিকুয়েষ্ট করার পরও তারা রুমাকে মেনে নেই নি উল্টো অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছে। পুলিশের কাছে গিয়েও লাভ হয় নি তারা এসব বড়লোকদের পক্ষে টাকা খেয়ে বসে আছে তাছাড়া তারাও অনেক অপমান করে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। এখন ওদের হাতে কিছুই নেই ওদের সাধ্যর মধ্যে যা ছিল তার চেয়ে বেশি করছে।
“যে যা কর্মফল ভোগ করবে সেটা ভালো হোক বা খারাপ ‘REVENGE OFF NATURE’ বলেও তো একটা কথা আছে নাকি”
.
.
ড্রইংরুমে বড়রা সবাই বসে চা খাচ্ছে। সাথে ছোটাও আছে।
-তুমি কি যেনো বলবে আমাদেরকে (আয়মানের বাবা)
-হ্যাঁ আঙ্কেল আসলে (সুমন)
-হ্যাঁ বলো কি বলবা বাবা (আয়মানের বাবা)
-আ আসলে আ আঙ্কেল আ আমি র রুমাকে বিয়ে করতে চাই (সুমন)
সুমনের কথা শুনে সবাই থমকে গেলো কারোর মুখে কোনো টু শব্দ নেই। সবাই বিষময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সুমনের দিকে তারা বিশ্বাস করতে পারছে সুমনের কথাটা। সাদমান স্বাভাবিক ভাবেই আছে কেনোনা সাদমান আগে থেকেই জানে। যখন সুমনের মুখ থেকে প্রথম এ কথাটা শুনছিলো সাদমান ও থমকে গেছিলো সবার মতো। বিষময়ের রেশ কাটিয়ে বলল
– কি বলছো এগুলা (ফুপা)
-আঙ্কেল আপনারা সবাই জানেন আমি অনাথ কিন্তু আমি ছোট থেকে বেশিরভাগ সময় কেটেছে আপনা দের সাথে আমি ছেলে হিসেবে কেমন আপনারাই ভালো করে জানবেন আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে রুমাকে ভালো রাখার চেষ্টা করবো আর আপনাদের যদি আপত্তি থাকে তাহলে সমস্যা নাই বলে দিতে পারেন (সুমন)
-তুমি কি বলছো তুমি ভেবে চিতে বলছো তো পরে আপসোস করবে না তো (ফুপি)
-না আন্টি এটাতে আপসোস করবার কি আছে যাকে ভালোবাসি তাকে আজীবন কাছে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার (সুমন)
সুমনের কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে গেলো। আজ যেনো অবাক হওয়ার দিন। কেউ আর না করলো না কিন্তু সুমন আলাদা ভাবে রুমির সাথে কথা বলবে বলে অনুমতি চাইলো ওরাও অনুমতি দিয়ে দিলো।
.
.
-তোমার কি আমাকে বিয়ে করতে আপত্তি আছে (সুমন)
রুমা জানালা দিয়ে আনমনে বাইরের দিকে তাকিয়ে ছিলো হঠাৎ এমন কথা শুনে পিছনে ফিরে বিষময় দৃষ্টি চেয়ে রইলো সুমনের দিকে। রুমা কিছু বলছে না দেখে সুমন বলল
-কি হলো কথা বলছো না কেনো কোনো সমস্যা আছে (সুমন)
-আপনি কি বলছেন আপনার মাথার ঠিক আছে আমি নষ…..(রুমা)
পুরো কথাটা শেষ করার আগে সুমন রুমার মুখে হাত দিয়ে আটকে দিলো
-হুঁশশ এসব কিছু আমি শুনতে চাইছি আমি তোমাকে ভালোবাসি (সুমন)
রুমা সুমনের মুখে ‘ভালোবাসি’ কথাটা শুনে থমকে গেলো অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো। সুমন রুমার চোখে তাকিয়ে বলল
-রেডি থেকো আমার বউ হয়ে পবিত্র সম্পর্কে ভালোবাসা হওয়ার জন্য (সুমন)
সুমন আর না দাঁড়িয়ে চলে গেলো।
★★★
পরিবারের সকলের উপর দিয়ে ঝড় বয়ে গেলো। চারিদিকে বিয়ে আয়োজন করছে সবাই গুটিকয়েক আত্নিয় স্বজনরা ছাড়া বড় করে অনুষ্ঠান করে নি। এর মধ্যে অনেকই রুমার ব্যাপারে জেনে আসেনি। অনেক আবার বিয়েতে এসে খেয়ে নানান রকমের কথা বলে যাচ্ছে। নানা ঝড় ঝাপটা সামলিয়ে বিয়ে সম্পন্ন হলো পবিত্র সম্পর্কে আবধ্য হলো দুজোড়া কপত কপতি।
:
ফুলে সজ্জিত খাটে বসে আছে সিয়া। সিয়া আজ নিজের মধ্যে এক অজানা অনুভূতির সংমিশ্রণ কাজ করছে ভয়ের সাথে একরাশ লজ্জারা উঁকি দিচ্ছে। দরজা খোলার শব্দে সিয়ার মধ্যে আরো ভয় কাজ করতে লাগলো শাড়ি হাত দিয়ে খামছে ধরে চোখ বন্ধ করে নিলো। কোনো সারাশব্দ না পেয়ে ঘোনটার ভিতর দিয়ে দেখলো সাদমান খাটের কাছে দাড়িয়ে আছে। সিয়া ঘাট থেকে নেমে বলল
-আসালামু আলাইকুম (সিয়া)
-ওয়ালাইকুম আসসালাম গুড পায়ে হাত দিয়ে সালাম করিস নি ভালোই করছিস এটা আমার ভালো লাগে না যা এইটা পড়ে আই (সাদমান)
সিয়া মুচকি হেসে সাদমানের কাছ থেকে প্যাকেটা নিয়ে ওয়াসরুমের দিকে রওনা হলো কিন্তু আবার সাদমানের কথায় থেমে গেলো
-শোন মেকাপ যেনো না থাকে আর চুলগুলা খোলা রাখবি (সাদমান)
সিয়া মাথা নাড়ালো। সিয়া সাদমানের এতটা স্বাভাবিক ব্যবহারে অবাক না হয়ে পারলো না। সাদমান ও রুমে চেঞ্জ করে নিলো।
.
সুমন আসতেই রুমা সুমনকে সালাম করতে গেলেই সুমন আটকে দিয়ে বলল
-তোমার স্থান আমার বুকে পায়ে নয় (সুমন)
বলে জড়িয়ে ধরলো রুমাকে। রুমা অবাক না হয়ে পারছে না সুমনকে দেখে। সুমন রুমাকে খাটে বসিয়ে বলল
-তুমি আমাকে মেনে নিতে পারো নি তাই না (সুমন)
-আসলে আমার একটু সময় লাগবে (রুমা)
-হ্যাঁ জানি যত খুশি সময় নেও তোমাকে যে নিজের করে পেয়েছি এতেই খুশি আমি। আমি জানি তুমিও আমাকে একদিন ভালোবাসবে। আর শুনো তোমার পেটে এই বাবুটার খেয়াল রেখো বলবে আমি তার বাবা এই আমিটা তাকে কখনো কষ্ট পেতে দিবে না (সুমন)
রুমা অবাক হয়ে শুধু দেখে যাচ্ছে সুমনকে কত সহজে সব কিছু মেনে নিলো। সবটা ওর কাছে স্বপ্নের মতো লাগছে এটাও কি সম্ভব। রুমার খুশিতে চোখ দিয়ে পানি পরতে লাগলো যাকে এতো দিন ভালোবাসলো সে ঠকালো আর যার সাথে কখনো ভালো ভাবে কথায় হয় নি সে কত সহজে আপন করে নিলো। সুমন রুমার চোখে পানি দেখে হাত দিয়ে পানি মুছে বলল
-তোমার চোখে পানি মানায় না আর বেইমান দের জন্য এই মুল্যবান রত্ন অপচয় করতে নেই। কথায় আছে না পাপ বাপকেও ছাড়ে না তেমনটাই হয়েছে বুঝলে (সুমন)
রুমা সুমনের কথা বুঝতে না পেড়ে বলল
-মানে (রুমা)
-মানে হলো বেইমান তার শাস্তি পেয়েছে (সুমন)
-কি ভাবে (রুমা)
-রোহিত ও এক্সিডেন্টে করছে আর ডক্টর বলছে ও আর হাটা চলা করতে পারবে না আর ওর বাড়ির লোক এর জন্য তোমাকে মেনে নিতে চেয়েছিলো কিন্তু তোমার বাবা-মা রাজি হয় নি (সুমন)
রুমা রোহিতের এক্সিডেন্টের কথাটা শুনে একটু চমকালো কিন্তু ওর মনে কোনে কোথাও কষ্ট হচ্ছে না শুধু মন একটা কথায় বলছে অপরাধী তার শাস্তি পেয়েছে অন্য সময় হলে রুমা ছুটে যেত কিন্তু এখন ওর মনে রোহিতের জন্য টান অনুভব করছে না কি অদ্ভুত তাই না। সুমন রুমির মনের ভাব বুঝতে পেরে মুখে হাসি ফুটলো।
:
সিয়া ওয়াসরুম থেকে এসে দেখলো সাদমান রুমে নেই কি ভেবে বেলকনিতে গিয়ে দেখলো সাদমান গ্রিল ধরে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। সিয়া আসতেই পিছনে না ফিরেই বলল
-বস ওখানে (সাদমান)
সিয়া অবাক হলো কিন্তু কিছু না বলে বেলকনির সোফায় বসে পড়লো। সাদমান এসে সিয়ার পাশে বসে সিয়ার হাত ধরে বলল
-আমি যে কথা গুলো বলবো সবটা মন দিয়ে শুনবে আমার কথার মাঝে কথা বলবে না (সাদমান)
সিয়া বাধ্য মেয়ের মতো মাথা নাড়ালো। + অবাক হলো সাদমানের মুখে তুমি শুনে।
-জানো আমার সাথে যখন তোমার বিয়ে হয়েছিল তখন আমি এটা মেনে নিতে পারে নি এতো ছোট একটা মেয়ে সাথে না আছে তার রূপ না আছে গুন সে শুধু পড়া ছাড়া কিছু বোঝে না বন্ধু গুলাকে দেখতাম সুন্দরী গালফেন্ড নিয়ে ঘুরে বেড়ায় আমার ও ইচ্ছে করতো ওমন ভাবে ঘুরে বেড়াতে আমিও পারতাম কিন্তু যখনি ওসব করবো বলে ভাবি তখনি এক মায়াপরির মুখ আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে…(সাদমান)
এইটুকু বলে সাদমান থামলো। সিয়া অবাক হয়ে সাদমানের প্রতিটা কথা শুনছিলো। অন্ধকারে সাদমান সিয়ার মুখটা ভালোভাবে বুঝতে না পারলেও এটা বুঝেছে সিয়ার অবাক হয়ে শুনছে।
-যানো মায়াপরিটা কে? সে আর কেউ নই তুমি (সাদমান)
সিয়া থমকে গেলো। শ্বাস নিতে ভয় লাগছে ওর হঠাৎ বুকে ধুকপুক করতে লাগলো।
-জানো এই মায়াপরিটার মায়ায় যে কবে বন্দী হয়ে গেলাম টেরই পাই নি। একেবারে #মায়াবন্দী করে ফেললে তুমি আমাকে জানো সেদিন আমি নিজের ভালোবাসাটা বুঝতে পারলাম যে দিন তোমাকে কলেজে দিয়ে একটা ফেন্ডের বাসায় গিয়েছিলাম ঔ ফেন্ডটা ভালোবেসে সুন্দরী মেয়েকে বিয়ে করছিলো কিন্তু শুধু টাকার লোভে জানো মেয়েটা ছেড়ে চলে যাওয়ায় ও কেঁদে বলছিলো কখনো রূপের জালে পরিস না মন দিয়ে ভালোবাসতে হয় ভালো মন দেখে ভালোবাসবি রূপ নায় সেদিন ও তোমার মুখটায় ভেসে উঠিলো। জানো মায়াপরি তোমার সাথে আমি নিজ অজান্তেই খারাপ ব্যবহার করে ফেলছি তুমিকি আমাকে ক্ষমা করবে আমি সে দিন ওভাবে বলতে চাই নি কিন্তু অন্য ছেলে তোমার দিকে তাকিয়ে থাকায় রাগ হয়েছিলো খুব তাই তো ওভাবে বলে ফেলছি জানো পরে তোমাকে ওভাবে বলায় নিজেরই খুব কষ্ট হচ্ছিলো….. জানো মায়াপরি…আমি তোমাকে খুব ভালোবেসে ফেলছি…তোমার মায়ায় আটকা পড়ে মায়াবন্দী হয়ে গেছি এই মায়া কাটানোর কোনো উপায় নাই তুমি ছাড়া! হবে কি আমার মনের #মায়াবন্দী রাণী
সাদমান অন্ধকারে নিজের হাতের উপরে তল অনুভব করলো বুঝতে বাকি রইলো না সিয়া কাঁদছে। সাদমান সিয়াকে বাহুডোরে আগলে নিলো।
-জানেন আমার খুব কষ্ট হতো (সিয়া)
-জানি তো সরি মাফ করা যায় না আমাকে আর কখনো কষ্ট দিয়ে কাঁদাবো না নতুন করে সব শুরু করবো (সাদমান)
-হুম সত্যি তো (সিয়া)
-হুম আমার মায়াবন্দীনী (সাদমান)
🥀__________সমাপ্ত__________🥀
#Tasnim_Tamanna
[ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত গল্পটা কেমন লাগলো মুল্যবান বক্তব্য কমেন্ট করে বলবেন রি চেক করি নাই ]