#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-৩৫
১১১.
গাঁজার নৌকা পাহাড়তলী যায়
ও মীরাবাই,গাঁজার নৌকা পাহাড়তলী যায়
মিলন,রোমান ভাইয়ের গান শুনে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে বিরবির করে বলল,
শালা।হারামী।কি গান গায় রে?গান শুনে তোও আমার জান যায়।গলাটা পরিষ্কার করে খ্যাক করে বলে,
ওই থামেন।কি গান ব’লেন এগুলো?আপনার গান শুনে আমি বেহুশ হয়ে যাই।
কেডা রে?রোমান পুকুর পাড়ে আরামে বসে সিগারেট টেনে টেনে গান ধরে।কিন্তু কারো ঝাড়ি খেয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখে মিলন দাঁড়িয়ে।কোমড় হাত রেখে বলল,
রোমান ভাই আপনি।এখানে কি করেন?আমাদের পুকুরের ঘাটে আপনি বসে আছেন।কিন্তু কেন?
কি করুম ভাই?তোর ভাবীর কথা চিন্তা করেই বুক ফাটি যায়।বউ তার বাপের বাড়ি। আর আমি বউরে না পাইয়া মনের সুখে সিগারেট টেনে ফাটা গলায় গান গাই।মনটা বউয়ের জন্য কেমন কেমন করে।
ওহ,মা গো।এ দেখি টু’রু লাভ।
ছোট থেকেই এই গ্রামেই বড় হয়েছি।আজ পর্যন্ত আপনার বউরে আপনি না মেরে ভাত খান নাই।আজ এতটা দরদ।কাহিনি কি?
কি করুম?বউরে না মারতে পারলে শান্তি লাগে না।খালি হাত চুলকায়।
যখন হাত চুলকায়।তখনই আপনার হাতটাতে ওই শীল নূরের পুতা দিয়ে ছেচা মারা দরকার।কথায় কথায় বউ মারে।এখন বউ গেছে গা।ভালোই করছে।দোয়া করি।সে যেন আপনার জীবনে ফিরে না আসে।আমীন।
সকালের ঘুম ভেঙে যেতেই পুতুল উঠে বসে।বেলা কতটুকু হয়েছে তা দেখার জন্য জানালা খুলে দেয়।জানালা খুলতেই এক দমকা বাতাসে কেঁপে ওঠে।বাহিরে কুয়াশায় ঘেড়া।শীত আমেজ ফিরে এসেছে।এতটা ঠান্ডা পড়ছে দেখে পুতুল তাড়াতাড়ি জানালা বন্ধ করে।বিছানায় বসে পড়ে।গায়ের চাদরটা আরো ভালো করে পেঁচিয়ে নেয়।মিলন,সাজু,ঘরে নেই।নিশ্চয় বাহিরে আছে।পুতুল বিছানা গুছিয়ে রাখতে গিয়ে হাতে চিরকুট পায়।চিরকুট খুলে দেখে।
তুমি আমার দেখা সবচেয়ে শক্তিশালী মহিলা যিনি বয়সের সাথে শক্তিশালী হয়ে উঠে।এবং সব খারাপ অনুভূতিকে টেক্কা দেয়।শুভ জন্মদিন আমার পুতুল আম্মা।
চিরকুট পরে পুতুলের মুখে হাসি ফুটে।হালকা ঠান্ডা লাগছে।পুতুল হাঁচি দিতে দিতে ঘর ছেড়ে বাহিরে নামে।সকাল বেলা রিফাত সূরা পাঠ করছে।তা কানে আসে।কি মিষ্টি সুর।কলিজা শীতল করে।এগিয়ে যায় মামা,মামীর থাকার ঘরে।পুতুল এগিয়ে এসে দেখে মামী তার তিন ভাইকে আরবি পড়াচ্ছে।পুতুল খুশি মনে সালাম দিলো।রেনু,পুতুলকে দেখতে পেয়ে কাছে ডাকে।পুতুল এগিয়ে আসতেই তার কপালে চুমু বসিয়ে দিলো।তোমার নতুন দিনটির জন্য অনেক শুভেচ্ছা আর ভালোবাসা।
যাও, হাত মুখ ধুয়ে আসো।আজ নামাজ পড়নি।এখনো পেট ব্যাথা করছে।পুতুল মাথা নাড়িয়ে না বলল।
কয়েকদিন গেলেই সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।আবার নামাজ পড়তে পারবে।পুতুল মাথা নাড়িয়ে কলপাড়ে চলে গেলো।হাত,মুখ ধুয়ে আসতেই।তাদের চার ভাই বোনকে গরম গরম ক্ষীর পায়েস পরিবেশন করে।হাড়ির ঢাকনা সরাতেই ক্ষীর পায়েস গন্ধে জিহ্বায় পানি আসে।মিলন,সাজু পায়েসের গন্ধে পেটে হাত বুলিয়ে নেয়।এতখন হালকা খিদে ছিল।এখন আরো বেশি খুদা লাগছে।তাদের বাটিতে পায়েস তুলে দিতেই মামাও বাজার নিয়ে হাজির হয়।সে-ও ছেলেমেয়ের সাথে যোগ দেন।একসাথে পরিবারের সকল সদস্য আনন্দের সাথে খাবার খাচ্ছে।
কয়েকদিন পর…
তালুকদার বাড়িতে ফুফিয়ে কেঁদে যাচ্ছেন রাবেয়া।একটু পর পর স্বামীর ওপর রাগ ঝাড়ছেন।কিন্তু অসীম তালুকদার বউয়ের রাগ পানি করতে মিষ্টি মিষ্টি কথা তুলছেন। কিন্তু তার মিষ্টি কথায় কাজ হচ্ছে না।সে যাই করে তাতেই বউ ঝাড়ছে।একমাত্র বউ হওয়াই না পারছে বেশি রাগতে আর না পারছে ঠান্ডা করতে।অসীম তালুকদার বউয়ের মন ভালো করতে দৌড়ে চা করে নিয়ে আসেন।
রাবেয়া স্বামীর বানানো চা মুখে দিতেই গড় গড় করে সেটা ফেলে দিল। তার মুখটা এখন তিতা লাগছে।
এই তুমি আমাকে কি খাইয়েছোও?সত্যি করে বলো।এতে কি মিশিয়েছোও?
বিশ্বাস কর।কিছুই মিশাই নিই।চিনি,চা পাতি দিয়ে বানিয়ে আনছি।
এতদিন পর আসছি।কোথায় রাগ ভাঙ্গিয়ে সোনা,বাবু ব’লে ডাকবে।কিন্তু না।বেডা আমির তালুকদারের ছেলে আমাকে বিষ খাইয়ে মারা প্লান করছে।এই তোমরা কে কোথায় আছোও দেখে যাও?আমার স্বামী আমাকে বিষ দিয়ে মারতে চাইছে।বেডা মিথ্যুক।
এতখন ভালোবাসে বউয়ের জন্য কতকিছু করলো।তবুও নাম নেই।সব দোষ পুরুষ মানুষের হলো।এরজন্যই লোকে ব’লে।মেয়ে মানুষের বুদ্ধি হাঁটুর তলে।বিয়ে করলে পাগল হবি।বিয়ের পর টের পাবি।বউ কি চিজ?
রাবেয়া ফ্যাসফ্যাস কান্না দেখে অসীম তালুকদার বিরক্ত হয়ে বলল,
বেশি কিছু দেয় নিই।ইন্দুর মারার বিষ দিয়েছি।এবার খুশি।
স্বামীর কথায় রাবেয়া চোখ বড় বড় করে তাকায়।চিতকার করে বলল,
তুমি আমাকে চা নামের ইন্দুর মারার বিষ খাইয়ে মারতে চাইলে।এটা তুমি পারলে।আজকে তোমার খবর আছে।রাবেয়া জামদানী শাড়ি আঁচল কোমড়ে খুঁজে সারা বাড়িতে অসীম তালুকদারকে দৌড় করিয়ে ছাড়ল।বেচারা একটু দৌড়িয়ে হাঁপিয়ে উঠেন।হাঁপাতে হাঁপাতে বউয়ের সামনে সারেন্ডার করলো।মানে আত্মসমর্পণ করেছে।
এইদিকে ঢাকার কাজ শেষ করে।অর্পণ বাড়িতে ফিরে এসেছে।বাড়িতে এসে মা,আর বাবার ঝগড়া দৃশ্য দেখে মুখ অটোমেটিক হা হয়ে আছে।
বাড়িতে এসব কেলোরকীর্তি হবে।সে কি আর জানত?
১১২.
রাতের বেলা মায়ের কোলে মাথা দিয়ে অর্পণ গল্প করছে।রাবেয়া ছেলের মাথায় চুমু একে বলল,
তা আব্বু এবার কি ঘরে বউ তুলবেন না?বয়স তোও আর কম হলো না।বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে।আপনি এতদিনে বিয়ে করলে নাতি নাতনীর মুখ দেখা হয়ে যেতো।
মাথা থেকে মায়ের হাতটা নামিয়ে চুমু খেয়ে বলল।
বিয়ে করব মা।কিন্তু আমার আদুরনী এখনো ছোট।তার স্বপ্ন পূরণ হোক।তার স্বপ্ন পূরণ হলেই তাঁকে ঘরে তুলে আনব।
ছেলের কথায় রাবেয়ার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।কোল থেকে ছেলেকে উঠিয়ে দিয়ে। পিঠের মধ্যে ঠাসস করে থাপ্পড় মেরে বলল।
ওরে বাবা।আমার আব্বা প্রেম করে।আর আমি জানি না।হুম।আমার আগে এই কথা আর কাকে কাকে বলেছিস।এই কথা কয়জন জানে?
হুম।দুলা শালা ছাড়া আর কেউ জানে না।
কি?আবার শালাদেরকে পটিয়ে ফেলছিস।তুই কি ‘রে?তা যাকে ভালোবাসি।তাঁকে পটিয়েছিস?তাকেঁ বলেছিস মনের কথা।সে জানে!
অর্পণ মায়ের হাতটা ধরে বলল,
সে কিছুই জানে না।এখনো মনের কথা বলা হয়নি।
ছেলের কথায় রাবেয়া ঠাসস করে পিঠের মধ্যে আরেকটা থাপ্পড় মেরে বলল।
আরে গাধার বাচ্চা।এখনো বলিস নিই।ওই মেয়ে তোর মনের কথা জানে না।সে কি আর তোর পথ চেয়ে বসে থাকবে।অন্য কারো বউ হয়ে যাবে না।আমার বাড়িতে যার বউ হওয়ার কথা সে যদি অন্য বাড়িতে পা রাখে।তাইলে তোর খবর আছে।
আরে মা কিছুই হবে না।তার পিছনে অলরেডি গোইন্দায় লাগানো আছে।আর মা তুমি আমাকে এটা কি বলে?আমি গাধার বাচ্চা।তারমানে আমার বাপ অসীম তালুকদার একটা গাধা।
রাবেয়া মুখ ভেঙ্গিয়ে বলল,
হু…হু।গাধারের গাধা বলবো না তোও কি করব?আমি যে পাঁচ বছর তার থেকে দূরে ছিলাম।একবার খোঁজ নিয়েছে।যখন দুইদিন ছিলাম বাপের বাড়ি।একবার খবর নিলো না।রাগে, দুঃখে গেলাম লন্ডনে।রোগীদের দেখেই সময় চলতো।অবসরে সময় রাতটুকু বিশ্রামে চলে যেতো।ডাক্তার হ’য়েছিলাম ব’লে আজ নিজের একটা আলাদা পরিচয় হয়েছে।
হুম তোমার বউ মা ওহ ডাক্তার হতে চায়।এটাই তার একমাত্র স্বপ্ন। রাবেয়া চোখ উজ্জ্বল হয়ে গেলো।হাসিমুখে বলল
সত্যি।
হুম।সত্যি।
আলহামদুলিল্লাহ।মন থেকে দোয়া রইলো।আমার ছেলের বউ ডাক্তার হবে।
সকাল সাড়ে সাতটা বাজে কনকনে ঠান্ডায় মানুষের বের হওয়া দায়।আজ পুতুল সকালে হাঁটতে বের হয়েছে।গায়ে কালো বোরকা তার ওপরে শীতের চাদর মুড়ানো।ফজরের নামাজ শেষ করে বাড়ি থেকে বের হয়েছে।মায়ের কবর থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে মোনাজাত ধরে।অর্পণ বাইক থেকে নেমে মাথায় টুপি পরে।তার গায়ে সাদা পাজামা,পাঞ্জাবি।পুতুলের পাশে দাঁড়িয়ে একপলক তার আদুরিনীকে দেখে নিয়ে মোনাজাতে দুইহাত তুলে দোয়া পাঠ করতে লাগল।
অর্পণ মোনাজাত শেষ করে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে পুতুল এখনো চোখ বুঝে আছে।অর্পণ এক ধ্যাণে তার প্রেয়সীর দিকে তাকিয়ে রইলো।মনে মনে বলল,
আমার রাজ্যের রাণীকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা।ভালবাসার মুকুটে তোমায় সবসময় ভালই মানায়।
তোমার ভালোবাসা ছাড়া আমার জীবন অসম্পূর্ণ থাকবে।তোমার নিঃশর্ত ভালবাসা এবং যত্ন দিয়ে আমায় প্রাণবন্ত করে তোলে।শুভ জন্মদিন আমার আদূরনী।
চলবে…
আসসালামু আলাইকুম।কেমন আছেন?জানি আমি।সবাই লুচির মতো ফুলে আছেন।গাল ফুলে থাকাটাই স্বাভাবিক।
আসলে নতুন চাকরিতে হঠ্যাৎ জয়েন করেছি।তাই বলা হয়নি।সরি।