#ত্রিধারে_তরঙ্গলীলা
|৩৭| (বর্ধিত অংশ)
গভীর নিস্তব্ধ রজনী। স্পষ্ট সমুদ্রের গর্জন শুনা যাচ্ছে। চারদিক থেকে শীতল বাতাস এসে ছুঁয়ে দিচ্ছে কয়েকটা মানব শরীর। পাতলা ফিনফিনে শাড়ি পরিহিত রমণী হিম বাতাসে থেকে থেকে শিউরে ওঠছে। শরীরের লোমকূপ দাঁড়িয়ে পড়ছে তার৷ পাশে দাঁড়িয়ে আছে রমণীটির অর্ধাঙ্গ। বউয়ের
নাজুক অবস্থা দেখে লম্বাটে দেহখানা গা ঘেঁষে দাঁড়াল। ফিসফিস করে বলল,
‘ এইতো কিছুক্ষণের মধ্যেই বিয়ে কমপ্লিট। তারপর রুমে চলে যাব। ‘
সুহাসের নরম স্বরে বিগলিত হলো নামী। চোখের ইশারায় বোঝাল,
‘টেনশন করো না। আমি ঠিক আছি। ‘
মন মানল না সুহাসের। নামীর হাতের আঙুলের ফাঁকে আঙুল গুঁজে দিল। গায়ে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে রইল নিশ্চুপ। নামীও জড়োসড়ো হয়ে ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইল। ওদের সঙ্গে আরো কয়েকজন সদ্য পরিচয় হওয়া মানব, মানবি রয়েছে। যারা আইয়াজ, ফারাহর বিয়ে উপলক্ষে সাহায্য করতে এসেছে৷ এরা সৌধর পরিচিত। মধ্যরাতে কাজী সাহেবও উপস্থিত। মোটা অংকের টাকা দিয়ে ঠিক করা হয়েছে তাকে। আজকের সব আয়োজন সৌধরই পরিকল্পনা। বলা যায় বন্ধু আইয়াজের বিয়ের উপহার এটি৷ এমন স্মরণীয় একটি উপহার কেবল সৌধর মাথা থেকেই আসা সম্ভব। সমুদ্রের কাছাকাছি বালুচরের ওপর গোলাকৃতির একটি টেবিল ঘিরে তিনটে চেয়ার রাখা। যার দু’টিতে বসে আছে আইয়াজ, ফারাহ। আর একটিতে কাজী সাহেব৷ বিয়ে পড়ানো শুরু করতেই থরথর করে কাঁপতে শুরু করল ফারাহ। কাজী সাহেব ভ্রু কুঁচকে একবার আইয়াজের দিকে তাকাল তো আরেকবার সুহাসের দিকে। বলল,
‘ জবরদস্তি করে বিয়ে পড়ানো ঠিক না। বিয়ে কবুল হয় না৷ ‘
সুহাসের কপালে ভাঁজ পড়ল। আইয়াজ আহত চোখে একবার কাজী আর একবার ফারাহর ভীত মুখের দিকে তাকাল৷ নতুন বরের করুণ দশা দেখে সুহাস মিটিমিটি হাসল। নামীকে ইশারায় বলল ফারাহর কাছে যেতে। সঙ্গে সঙ্গেই নামী ফারাহর পাশে এসে ওর কাঁধ স্পর্শ করল। অভয় দিয়ে কাজী সাহেবকে বলল,
‘ আসলে ও নার্ভাস ফিল করছে। ‘
কথাটা বলেই ফারাহকে উদ্দেশ্য করে বলল,
‘ বি স্ট্রং ফারাহ। আজ তোর জীবনের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি রাত। তোদের পাঁচ বছরের ভালোবাসা পূর্ণতা পাবে আজ দোস্ত, ভাবতে পারছিস? ‘
কেঁপে ওঠল ফারাহ। কিয়ৎক্ষণ সময় নিয়ে তাকাল আইয়াজের পানে। মৃদুমন্দ বাতাসে মৃদু আলোয় প্রিয়জনের আকুল দৃষ্টি দেখে বুক ধুকপুক করে ওঠল৷ নিমেষে দৃষ্টি সরিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। নামী কাজীকে ইশারা করল বিয়ে পড়াতে। পাঁচ বছরের ভালোবাসা! ঢোক গিলল কাজী সাহেব। ভালোবাসাবাসির বিয়ে তাহলে… মধ্যরাতে অদ্ভুত বিয়ের আয়োজন দেখে সন্দেহ হচ্ছিল তার। ভেবেছিল মেয়েটাকে জোর করে তুলে আনা হয়েছে। সে ভাবনা ভুল প্রমাণিত হলে নিশ্চিন্ত মনে বিয়ে পড়ানো শুরু করল। বিয়েটা সুসম্পন্ন হতেই দু’হাতে মুখ চেপে ডুকরে ওঠল ফারাহ। উপস্থিত সকলে হতভম্ব। নামী তৎক্ষনাৎ পিছন থেকে ওকে জড়িয়ে ধরল। আসলে ওর অনুভূতি একমাত্র নামীই বুঝতে পারল। আইয়াজও বুঝল কিছুটা তবে পুরোপুরি নয়। সে শুধু আহত চোখে, নির্বাক মুখে বসে রইল চুপচাপ। অনেকটা সময় নিয়ে ফারাহ শান্ত হলে আকস্মিক সবাই মিলে আতশবাজি ফোটাতে শুরু করল। নামী সুহাস সহ সকলেই একসুরে বলে ওঠল,
‘ মাঝরাতে সমুদ্রপাড়ে একজোড়া লাভ বার্ডের বিয়ে সম্পন্ন হলো। হাউ রোমান্টিক! ‘
আর পাঁচটা স্বাভাবিক, সাধারণ বিয়ের মতো বিয়ে নয়। সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিবেশে, অনন্য দৃশ্যপটে বিয়ে হলো আইয়াজ, ফারাহর৷ পূর্ণতা পেল দু’টো আকুল হৃদয়। যে প্রণয়ে সার্বক্ষণিক ভয় জেঁকে ছিল সে প্রণয় পরিণয় পেল। মনোমুগ্ধকর এক দৃশ্যপট তৈরি করল কক্সবাজার সমুদ্র পাড়ে। বিয়েটা যেমন আর পাঁচটা স্বাভাবিক, সাধারণ নয় বাসরটাও অসাধারণ ভাবে করল ওরা৷ বদ্ধ, নিস্তব্ধ ঘরে বিছানায় শরীর বিছিয়ে শরীর ছুঁয়ে নয় এই নব দম্পতির বাসর হলো সমুদ্র পাড়ে। বালুচর আর শীতল জলে পা ডুবিয়ে। একে অপরের হাতে হাত রেখে। কাঁধে মাথা ফেলে। সূর্যোদয়ের একটুক্ষণ পূর্বে দু’জনার আকুল হৃদয়ের টানে কিয়ৎক্ষণের জন্য দু’টো ঠোঁট অবশ্য এক হলো। সিক্ত হলো গভীর প্রণয় স্পর্শে…!
.
.
|চলবে|
®জান্নাতুল নাঈমা
পর্ব ৩৮ থেকে টানটান উত্তেজনা আবার ইনশাআল্লাহ।