#অন্যরকম_প্রেমানূভুতি
#অস্মিতা_রোদৌসি
#part___9+10
আমি আপনাকে বিয়ে করবোনা করবোনা করবোনা।ব্যাস।আপনার মতো খাটাশকে বিয়ে করার কোনো ইচ্ছেই নেই আমার।আপনার আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে বলে এমন নয় যে আপনাকে আমায় বিয়ে করতেই হবে মিস্টার অভ্র।যেদিন বিয়ে হতো সেদিন ওই আমি বিয়ের আসর হতে পালিয়ে যেতাম। এই প্লান ছিলো আনার। আর আপনি কিনা হুটহাট করে বিয়ে করতে চাইছেন? আজব লোক তো বটে আপনি!!!!
কথা গুলো এক নিশ্বাসে বলে ফেললাম।পরক্ষণেই কি বলে ফেলেছি ভাবতেই নিজের মুখ চেপে ধরলাম।আল্লাহ আমার সব তথ্য ফাঁস। এখন কি হবে!! এই রাক্ষস তো আমার চিবিয়ে খাবে।আল্লাহ বাঁচাও আমায়য়য়!!!
আমার সামনে মিস্টার অভ্র দাঁড়িয়ে নিচের ফোন টিপছেন ভ্রু কুঁচকে। মনে হয় আমার কথা গুলো মন দিয়ে শোনেনি।আল্লাহ বাঁচাইছো আমারে।
___ এসব ভেবে থাকলে তুমি ভুল ভাবছো।আমি সব শুনেছি।আর নিজেকে খুব চালাক ভাবো তাই না???
কিন্তু তুমি হলে বোকা।আর আমার বোকাপাখি।বলেই নুচকি মুচকি হাসছে অভ্র।
___ আমাকে বোকা বললেন কেনোহ??? কোন দিক দিয়ে আমায় বোকা মনে হয়??
___ সব দিক দিয়ে বলেই আমার দিকে বাঁকা চোখে তাকালেন তিনি।
এটুকু বলেই চলে গেলেন তিনি আমার রুম থেকে।একটু পরেই আবার আম্মু রুমে ধুকলো।
____ মেঘা তারাতারি রেডি হয়ে নাও।বাহিরে সবাই অপেক্ষা করছে।
___ আম্মু ১ মাস পর বিয়ের ডেট ছিলো তাহলে আজ হঠাৎ??
____ আমরাও জানিনা।অভ্র এসে তোর আব্বুকে বললো সে আজই বিয়ে করতে চায় তাই তোর আব্বুও না করেনি।তুই তারাতারি রেডি হয়ে নীচে আয়।আমি টিয়া আর মিঠিকে পাঠিয়ে দিচ্ছি তোর রুমে।
____ আম্মু আমি এখনি বিয়েটা করতে চাচ্ছিনা।মিনমিন করে বললাম আমি।
____ কোনো কথা না। তোর আব্বু যা সিন্ধান্ত নিয়েছে তাই হবে।কিছুটা রেগে বললো আম্মু।
____ আচ্ছা আম্মু।
আম্মু চলে গেলো। রাগে মাথা ফোটে যাচ্ছে। আম্মু আব্বু দুজনকেই আমি খুব ভয় পাই।তারা আমাকে আদরের সময় আদর শাসনের সময় শাসন।আমাকে তারা সব সময় শাসনে রেখেছে।
কালই নানু বাসা থেকে ফিরেছি।কাল রাতে আব্বু বিয়ের কথাটা বলেছিলো।আর একটু আগে অভ্র হনুমানটা এসে বিয়ের কথা বললো।আর এখন আম্মু। বুঝতে ছিনা কি হচ্ছে এসব আমার সাথে।
মিঠি আর টিয়া এসে আমাকে সাজাতে লাগলো।আমি চুপ মেরে বসে আছি।আর তারা দুজন সাজাচ্ছে আর বকবক করছে।
কেনো জানিনা রিদ ভাইয়ার কথা খুব মনে পরছিলো।বউ সাজার স্বপ্ন ছিলো তবে রিদ ভাইয়া বউ হিসেবে।কিন্তু অযাচিত ভাবে আজ আমি ওই অভ্র হনুমানের জন্য বউ সাজছি।আর পৃথিবীতে আমিই একমাত্র মেয়ে যে কিনা তার হবু বরকে মনে মনে গালি দিয়ে মহাশূন্যে পাঠিয়ে দি।
একটু পর নিচে গেলাম।নীচে সোফায় সবাই বসে আছে।আর অপেক্ষা করছে আমার জন্য।শুধু একজন নেই। সে হলো রিদ ভাইয়া।তিনি অফিসের কাজে রাজশাহী গিয়েছেন।আর আমরা থাকি ঢাকা বনানীতে।
হঠাৎ চোখ পড়লো অভ্রর দিকে।তিনি এক ধান্দায় আমাকে দেখেই চলেছে।তাকে আজ সুন্দর লাগছে বটে।লাল সেরোয়ানী ফর্সা জিম করা শরীরে বেশ ফুটেছে।মাথায় পাগড়ি।তার জন্য আরো কিউট লাগছে।
___ মানতে হবে মেঘ– তোর বর কিন্তু হেব্বি সুন্দর আর কিউটের ডিব্বা। তবে সুন্দর হলে হবে কি!সে তো আস্তো একটা খাটাশ।হুহ।মনে মনে বললাম।
কিছুক্ষণ পর কাজি বিয়ে পড়ানো শুরু করলেন।আমি আব্বু আম্মুর ভয়ে কবুল বলতে দেরি করিনি।
যাওয়ার সময় মিঠি, আম্মু, বড় আম্মু, নানি,টিয়া
,বড় আব্বু, আব্বু সাবাই কেঁদেছে।আম্মুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছি খুব।
কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছি।যখন চোখ খুলি তখন গাড়িতে নিজেকে আবিষ্কার করি।অভ্র আমাকে তার বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে আছে।শরীর দূর্বল থাকায় আস্তে করে তাকে নীচের থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু তিনি আমাকে আরো জোড়ে নিজের বুকের সাথে আমার মাথা চেপে ধরলেন।মনে মনে রাগ লাগলেও তখন কিছু বলতে পারলাম না।ওভাবেই তাদের বাড়ি পৌঁছালাম।
নীলাদের বাড়িতে কোনো গেস্ট নেই।শুধু নীলা,বাবা,আর অভ্র, মিঠি, টিয়স আর কাজের মহিলা রহিমা আন্টি, সাথে তার মেয়ে মিনু।
আমাকে পাঁজাকোলে করে রুমে নিয়ে গেলো অভ্র।তার কোথাকে জানি চলে গেলো।
(তার পরেরটুকু ৮+বোনাস পর্বে উল্লেখ করা রয়েছে)
এগুলো মনে মনে ভাবছি ছাদে দাড়িয়ে।তখনি পেছনে কারো অস্তিত্ব অনুভব করলাম।বুঝলাম অভ্র খাটাশ আমার পেছনে দাড়িয়ে আছে। আমি পেছন ঘুরলাম না।
ওভাবেই দাড়িয়ে আকাশ পানে চেয়ে রইলাম।
বিকেল তখন ৪টা____
আকাশটা আজ বড্ড মেঘলা।কালো কালো মেঘের খন্ড গুলো আকাশে দাপট সহকারে ভেসে বেড়াচ্ছে। মাঝে মাঝে গর্জন করে উঠছে আকাশ।বাতাসে গাছপালা গুলো দুলছে।এক ঝাক পাখি উড়ে নিজেদের ঠিকানায় পৌঁছানোর জন্য প্রচেষ্ঠা চালাচ্ছে। সব মিলিয়ে বলতে গেলে অসাধারণ প্রাকৃতিক রুপ।আর আমি সেই রুপ রসদ গন্ধ অনুভব করছু খুব মনোযোগ সহকারে।
অভ্রর স্পর্শে কেঁপে উঠলাম আমি।পিছন থেকে তিনি জড়িয়ে ধরেছেন আমায়।কেনো জানিনা আমি তাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলাম না।ওভাবেই আকাশের দিকে নির্লিপ্ত ভাবে তাকিয়ে রইলাম।
___আমার দস্যি বউ আজ এত শান্ত কেন হুম??স্লো বয়েসে আমার কানের কাছে তার ঠোঁট নিয়ে কথাগুলো বললেন তিনি।
তার মুখে বউ শব্দটা শুনে আমার বুকটা ধক করে উঠলো।মৃদু কেঁপে উঠলাম। কেমন যেন এক অনুভূতি হচ্ছে আমার।যার নাম আমার অজানা।
____মন খারাপ নাকি আমার শুভ্রপরির হুমম???তিনি আবার বললেন।
___ নাহ।ছোট্ট করে জবাবা দিলাম আমি।
___ একটা গান শোনাই।বললেন তিনি।
★★★★★★★★★★★★★★♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪
“তোর মন খারাপের দেশে,যাবো প্রেমের খেয়ায় ভেসে”
“তোর মনটা ভালো করে,দেবো অনেক ভালোবেসে”
“ডাকলে কাছে আসিস,পারলে একটু হাসিস”
“বুকটা রাখিস পেতে ভালোবাসা নিতে”
“সব অভিমান ভেঙে দেবো তোর কাছে এসে”
“তোর মন খারাপের দেশে,যাবো প্রেমের খেয়ায় ভেসে”
“তোর মনটা ভালো করে,দেবো অনেক ভালোবেসে”
“মন গড়া অভিযোগ,জানি ভুলে যাবি তুই!
” কাছে এসে আলতো করে, যদি তোর হাতটা ছুঁই”
“মন গড়া অভিযোগ জানি ভুলে যাবি তুই”
“কাছে এসে আলতো করে যদি তোর হাতটা ছুঁই”
“সব অভিমান ভেঙক দেবো, তোর কাছে এসে”
“তোর মন খারাপের দেশে,যাবো প্রেমের খেয়ায় ভেসে”
“তোর মনটা ভালো করে,দেবো অনেক ভালোবেসে”
“ডাকলে কাছে আসিস,পারলে একটু হাসিস”
“বুকটা রাখিস পেতে ভালোবাসা নিতে”
“সব অভিমান ভেঙে দেবো তোর কাছে এসে”
(বাকিটুকু নিজ দায়িত্বে শুনে নেবেন)….
গানটা আকাশের দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ হয়ে শুনলাম আমি।গানটা খুব পছন্দের আমার।বরাবরি ইমরানের গান আমার পছন্দ।তার মধ্যে এটাও একটা।
___ এত সুন্দর গানের গলা অভ্রর আমি বিশ্বাস ওই যেন করতে পারছিনা।সেদিন তার শুনেছি বাট ওটাও মন দিয়ে বা কেয়ার করিনি।আজ স্লো ভয়েসে খালি গলায় এবং এই পরিবেশে গানটা মারাত্মক মানান সই।
___ কেমন লাগলো বউ গানটা??
___ খুব খুব খুব ভালে লেগেছে গানটা।আপনার মতো খাটা শের কন্ঠ এতটা মিষ্টি হবে আমি ভাবতেই পারিনি।আবেগি কন্ঠে বললাম আমি।
___ তিনি আমার ছেড়ে দিয়ে খিলখিল করে হাসতে লাগলেন।আমি পেছন ঘুরে তার মনোমুগ্ধকর হাসি দেখতে লাগলাম আর কান দিয়ে তার হাসির ঝংকার শুনতে লাগলাম।ছেলেদের হাসি এতটা সুন্দর হয়। কই আমি তো কারো এমন হৃদয় ঘায়েল করা হাসি দেখিনি।এমনকি রিদ ভাইয়ার ও না।
____ কি হলো বউ এমন ড্যাব ড্যাব করে আমাকে দেখছো কেনো?? আমার বুঝি লজ্জা করেনা”!!অভ্রর এমন কথায় আমি চমকে উঠলাম।সাথে সাথে বাস্তবে ফিরে আসলাম।
___হুহ বলেই দৌড়ে ছাদ থেকে নেমে পড়লাম।
অভ্রও মুচকি মুচকি হাসতে হাসতে নীচে গেলো।
ডয়িংরুমের সোফায় বসে টিভি দেখছে নীলা,মিঠি,টিয়া বসে গল্প করছে।আমিও গিয়ে তাদের পাশে বসলাম।
____কিরে মেঘা তোদের রোমান্স শেষ??বলেই হাসতে লাগলো নীলা। সাথে মিঠি আর টিয়াও।
___ আমি অগ্নি দৃষ্টিতে ওদের দিকে তাকালাম আর বললাম____ ওই পেত্নি mind your language
____হা হা হা হি হিহিহিহি।তোরা রোমান্স করবি আর আমরা বললে দোষ ৩২ টা দাঁত বের করে হেঁসে বললো নীলা।
___ওইই পেত্নী!!!! রেগে বললাম আমি।
____ আপু আমাদের তোর হাতে মজাদার টেস্টি নুডলস খাওয়ানা প্লিজ।বললো মিঠি।
___হ্যাঁ ভাবি যাওনা তোমার ননদের জন্য নুডলস নিয়ে আসো।বললো নীলা।
আমি কিছুনা বলেই রান্না ঘরে গেলাম।কিছুক্ষণ পর নুডলস এসে ওদের দিলাম।নিজেও খেতে বসবো তখনি নীলা বলে উঠলো___এই এই তুই কেমন বউ রে।স্বামী কে রেখে নিজে খেতে বসছিস??
___ ভাইয়া সহ তুই রুমে গিয়ে নুডলস খা আর গল্প সল্পতায় কর।বললো মিঠি।
আমি রান্না ঘরে গিয়ে নুডলস নিয়ে রুমে গেলাম।মহারাজ রুমে শুয়ে ফোন টিপছে।
___ এইযে।খেয়ে নিন।বলে টেবিলের উপর নুডলসের বাটি রেখে আমি ব্যালকানিতে গেলাম।
এদিকে অভ্র তার শুভ্রপরির কান্ড দেখছে আর মিটিমিটি হাসছে।আজ সে অন্য মেঘাকে দেখছে।যেমন মেঘাকে সে চেয়েছিলো।খুব খুশি আজ অভ্র।খুব খুশি।
________________________________
রাতের রান্না আমি করেছি।অফিস থেকে সবে ফিরেছেন বাবা।সবাই মিলে খেতে বসলাম।খাওয়া শেষে বাবা এবং সবাই আমার প্রসংশা করছে।শুধু অভ্র বাদে।মন হঠাৎ খারাপ হয়ে গেলো।কত কষ্ট করে রান্না করলাম আর ওনি বললেন ও না কেমন হয়েছে।
সব কাজ সেরে কিছুক্ষণ ওদের সাথে গল্প করে রুমে গেলাম।
রুমে গিয়ে অভ্রকে দেখতে পেলাম না।হয়তো ব্যালকানিতে আছে।আমি রুমের লাইট অফ করে শুয়ে পড়লাম।
অভ্র বুঝতে পেরেছে তার শুভ্রপরি মন খারাপ করেছে।কেন মন খারাপ করেছে তাও জানে সে।মলিন হাসলো অভ্র।রুমে গিয়ে মেঘার পাশে শুয়ে মেঘাকে বুকে টেনে নিলো অভ্র।
অভ্রর কাছ থেকে নিজেকে ছারানোর চেষ্টা করলাম।কিন্তু পারলাম না।আগের থেকে দ্বিগুণ জোরপ আমাকে তার বুকে চেপে ধরলো।
____ এত অভিমান আমার শুভ্রপরিটার হুমম??
___ ছাড়ুন আমাকে ছাড়ুন।খচ্চর লোক একটাহ।
____ তোমার হাতের রান্না এত টেস্টি তা তো আগে জানতাম না গো।অবশ্য বউটা কার দেখতে হবে না।
___হুহ।হইছে পাম মারার প্রয়োজন নেই।ছাড়ুন আমাকে।
___কত ইচ্ছে ছিলো বিয়ের পর আমার বউ আমার বুকে ঘুমাবে কিন্তু আমার কপাল খারাপ।এমন একটা আনরোমান্টিক বউ আমার কপালে জুটলো।হায় আল্লাহ!!! ব্যাঙ্গ করে বললো অভ্র।
___হ্যাঁ আমি আনরোন্টিক।আপনি মনে হয় একেবারে বিশ্ব রোমান্টিক হুহ।
____, হু তোমার বর বিশ্ব রোমান্টিক। কোনো সন্দেহ আছে এতে ???? অবশ্য তুমি চাইলে আরো রোমান্টিক হতে পারবো।এখন চুপচাপ ঘুমাও।নয়তো আজই বাসর টা সাড়বো।
_আমি ভয়ে আর কিছু বললাম না।এনাকে আমার বিশ্বাস নেই।লুচু খচ্চর লোক একটা।
_________________
_মেঘু তোকে হারিয়ে বুঝতে পেরেছি আমি তোকে কতটা ভালোবাসি।আজ নিজের দোষেই আমি তোকে হারিয়েছি।আজ আমার বুকে থাকার কথা ছিলো তোর।কিন্তু তুই আজ অন্যকারো বুকে।এটা কিভাবে মানবো আমি কিভাবে?? আমার হৃদয় যে জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। পুরো পৃথিবী আমার বিষাদ সময় লাগছে।তোকে ছাড়া বিরক্ত লাগছে সব। প্লিজজজ তুই ফিরে আয় প্লিজজজজজজ!!!!!!
ছাদে দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুকছে আর কথা গুলো আকাশের দিকে তাকিয়ে বলছে রিদ।উষ্কখুষ্ক চুল,মুখ ভরা দাড়ি,চোখে মুখে বিষাদের ছায়া,শার্টের বোতাম খোলা।কেমন যেন পাগল পাগল লাগছে রিদ কে।
_____
(সরি গল্পটা রিচেইক করার সময় পাইন)…
(আগের পর্বে মেঘা এবং অভ্রের বিয়ের কাহিনী উল্লেখ করা ছিলো না। তা এই পর্বে উল্লেখ করতাম তা আর আগের পর্বে নীচে লিখে দেওয়ার মনে ছিলোনা।তার জন্য সরি।)