কাজল_কালো_ভ্রমর #পর্ব৮ #Raiha_Zubair_Ripte

0
494

#কাজল_কালো_ভ্রমর
#পর্ব৮
#Raiha_Zubair_Ripte

তোমার একাউন্ট থেকে শুরু করে মানিব্যাগের সব টাকা আমি নিয়ে নিয়েছি।

কন্ঠের আওয়াজ শুনে আরশিয়া সাহিল পিছন ফিরে দেখে আহিয়া দাঁড়িয়ে আছে। আহিয়াকে দেখে তেড়ে তার সামনে যায় সাহিল, রাগান্বিত ঝাঁঝালো কন্ঠে আহিকা শুধায়,,

_ তোর সাহস তো কম না তুই আমার টাকা আমার কার্ড থেকে টাকা গায়েব করিস।

সাহিলের কথা শুনে যেনো আহিয়ার মধ্যে কোনো পরিবর্তন ঘটে নি,আহিয়া দ্বিগুণ তেজ নিয়ে সাহিলকে শুধায়,,,

_ বেশ করেছি টাকা সরিয়েছি ওগুলো একটা টাকাও তোমার না সব টাকা আমার একাউন্টে ছিলো যা তুমি ট্রান্সফার করে তোমার একাউন্টে নিয়েছো,তুমি কি ভেবেছো আমি জানবো না,তোমার মতো এমন একটা মানুষকে আমার ভাই বলে ডাকতে ঘৃণা করছে,লজ্জা করে নি ছোট বোনের টাকা গুলো এভাবে চোরের মতো করে নিতে…

আহিয়া আর কিছু বলতে নিবে আচমকা সাহিল হাত উঁচু করে আহিয়াকে চড় মারতে উদ্ধত হলে কেউ এসে সাহিলের হাত ধরে ফেলে।

সাহিল পাশে ঘুরে হাত ধরার ব্যাক্তিটাকে দেখতে নিলে তাকিয়ে দেখে আহিল।

শুকনো ঢক গিলে সাহিল,আহিলের চোখ দিয়ে আগুন ঝড়ছে,সেই আগুনে হয়তো সাহিলকে ভস্ম করে দিবে।

সাহিলের ধরা হাত টা ঝাড়ি মে’রে ফেলে দিয়ে এক হাত দিয়ে ধাক্কা মারে।

আরশিয়া এতোক্ষণ নিরব দর্শকের মতো সব দেখছিলো। সাহিলকে ধাক্কা মারার ফলে পড়ে যেতে নিলে আরশিয়া ধরে ফেলে।

_ এই তোর সাহস হয় কি করে আমার বোনের গায়ে হাত তুলার,তোর হাত জাস্ট ভেঙে ফেলতে আমার দু মিনিট ও লাগবে না,আর একবার যদি দেখি আমার বোনের গায়ে ফারদার হাত তুলার জন্য হাত টা উঁচু করছিস তাহলে সেদিনই তোর জীবনের শেষ দিন কথাটা মাথায় রাখিস।

আহিল হুংকার দিয়ে কথাগুলো বলে, আহিলির চিল্লানি শুনে বাড়ির ভেতরে থাকা সাইফা বেগম আর আসমানী বাহিরে চলে আসে।

_ আপনি নিজের বোনের দোষ টা দেখবেন না আহিল ভাই,ও যে সাহিলের একাউন্ট থেকে ইভেন মানিব্যাগ থেকেও সব টাকা সরিয়ে নিয়েছে। তার বেলায় দোষ নেই আর এর বিপরীতে কথা বলতে গেলেই আপনি তার হাত ভেঙে ফেলবেন।

_ এই একদম আমার সাথে কথা বলতে আসবে না,আমি কি করবো না করবো সেটা আমি বুঝবো তুমি বোঝাবে না,তোমার স্বামী কে আগে ঠিক করো ওর সাহস হয় কিভাবে আমার বোনের একাউন্ট থেকে টাকা নেওয়ার,আর নিছে যেহেতু তাহলে বললো না কেনো।

_ তাই বলে আপনার বোন এভাবে না বলে নিয়ে নিবে টাকা গুলো।

_ আহিয়া না বলে নেয় নি আর ও নিজে থেকে নেয় নি আমি বলেছি নিতে তাই নিয়েছে।

পেছন থেকে সাইফা বেগম কথাগুলো বলে ফেললো।

সাহিল দাদির পানে চেয়ে বিরস গলায় জানান দেয়,

_ কাজটা ঠিক করলে না দাদি টাকা টা কিন্তু আমার কাজে লাগাতে যাচ্ছিলাম না,তোমরা খাবে সেই খাবারের বিল টাই দিতে যাচ্ছিলাম।

_ তোমার বউকে বলা হয়েছিলো রান্না করার জন্য, তোমার বউ রান্না না করে খাবার অর্ডার করতে গেছে,তোমাদের যখন এতোই টাকা নাও এবার খাবারের বিল দাও। এক কানাকড়ি ও পাবে না এই বাড়ি থেকে কাল থেকে নিজের চাকরির ব্যবস্থা করো।

_ আর ইউ ম্যাড দাদি আমি কি না করবো চাকরি,হা কোনোভাবেই না।

_ বেশ তো তাহলে দেখতে থাকো তোমার সাথে কি হয়,এই চলো আহিল,আহিয়া আসমানী আমার ভেতরে যাই এরা কিভাবে টাকা দিবে এদেরই বুঝতে দাও।

_ মা আমি আপনায় প্রথমেই বলেছিলাম এই ছেলে সুবিধার না,দেখছেন তো আমাদের সুখের সংসারটা কিভাবে পতনের দিকে যাচ্ছে।

আসমানী কথাগুলো তার শাশুড়ী কে উদ্দেশ্য করে বললো।

সাইফা বেগম সরোষ চোখে একবার সাহিল আরশিয়ার পানে চেয়ে বাড়ির ভেতর চলে যায়।

সাইফা বেগমের পিছন পিছন আহিল আাহিয়া আসমানী ও চলে যায়।

গেটের কাছে পড়ে রয় শুধু আরশিয়া আর সাহিল।

____________________

কি রে হলো নাকি তোর, আর কতক্ষণ ওয়েট করনো এবার তো বেড়ো এমনিতেই দেড়ি হয়ে গেছে, বলতে বলতে মিহিকার ঘরের সামনে এসে মাথা উঁচু করে তাকাতেই আয়ুশের চোখ জোড়া আটকে যায় সামনে থাকা রমনীর দিকে,কালো শাড়িটাতে তার ভ্রমর কে আজ অসাধারণ লাগছে,ইস কি কিউট লাগছে,

মিহিকা সবেই রেডি হয়ে দরজা দিয়ে বেরোতে নিলে সামনে আয়ুশ এসে পড়ে। আয়ুশ কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আরেক বার নিজেকে পর্যবেক্ষণ করে সব কিছু ঠিক আছে নাকি।

_ আয়ুশ ভাই ওভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো,বাজে লাগছে না কি,আমি আপনায় আগেই বলছিলাম কালো শাড়িতে আমাকে আরো বাজে লাগবে,দেখলেন তো তাই হলে।

_ হুসসস একদম বাজে কথা বলবি না,তোকে খুব সুন্দর লাগছে,আমি গাড়িতে অপেক্ষা করছি তুই তারাতাড়ি আয়। বলে চলে যেতে নিলে পিছন থেকে ডেকে উঠে মিহিকা। দাঁড়িয়ে পরে আয়ুশ।

_ আয়ুশ ভাই আমি গাড়িতে করে ঘুরবো না আমি হেঁটে হেঁটে ঘুরবো।

_ পাগল নাকি,হেঁটে হেঁটে ঘুরবি পরে তে তোর পা ব্যাথা করবে।

_ না করবে না,আমি গেলে হেঁটেই যাবো নচেৎ যাবো না।

_ আচ্ছা তাহলে আয় দাঁড়িয়ে না থেকে।

আয়ুশের পেছন পেছন মিহিকা ও যায়।

রাস্তার পাশ দিয়ে হেঁটে চলছে আয়ুশ আর মিহিকা, আবহাওয়া টা আজ দারুন, চাদিকে হীম শীতল বাতাস বইছে থেকে থেকে হালা করে মেঘ ও ডাকছে। ঠান্ডা বাতাস এসে দুজন মানুষের শরীর ক্ষনে ক্ষনে কাঁপিয়ে তুলছে।

বেশ কিছুক্ষণ নিরবাতায় হাঁটে দুজন। নিরবতা ভেঙে এবার আয়ুশ মিহিকাকে প্রশ্ন করে,,

_ আচ্ছা মিহিকা তুই এতো চুপচাপ কেনো,চগের মতো কথা বলিস না,আমি কিছু জিজ্ঞেস করলে তবেই সেটার উত্তর দিস,আগে তো প্রচু জ্বালাতি,তাহলে এখন এতো নিশ্চুপ কেন।

মিহিকা দাঁড়িয়ে একবার আয়ুশের দিকে তাকিয়ে আবার সোজা হাঁটতে থাকে।

_ কিরে কথা বলছিস না কেনো,আমি যে দেশে এসেছি তুই খুশি হস নি।

_ খুশি হবো না কেনো, হয়েছি তো খুশি।

_ সত্যি খুশি হয়েছিস?

_ না হইনি হয়েছে,একটা কথা কতো বার বলতে হবে, দেখতেছো সামনে আইসক্রিম সেটা না এনে সে বকবক করছে শুধু।

আয়ুশ মিহিকার কথা শুনে বোকা বনে চলে যায়,সামান্য আইসক্রিমের জন্য তার ভ্রমর এমন করছে।

দৌড়ে আইসক্রিমের ভ্যানের কাছে গিয়ে যতো প্রকার আইসক্রিম ছিলো সব গুলোর একটা একটা ফ্লেভার নিয়ে আসে।

আয়ুশের হাতে এতো আইসক্রিম দেখে হা করে তাকিয়ে থাকে মিহিকা।

মিহিকাকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আয়ুশ তাড়া দিয়ে বলে,,

_ কিরে তুই নিচ্ছিস না কেনো, এমন হা করে তাকিয়ে না থেকে খেতে শুরু কর,দেখ গলে যাচ্ছে।

_ তুমি কি পা’গল এতো গুলো আইসক্রিম আমি আদৌও কি খেতে পারবো, আমাকে কি তোমার রা,ক্ষস মনে হয়।

_ আচ্ছা যতোগুলো পারিস খেতে থাক।

মিহিলা আয়ুশের হাত থেকে একটা স্ট্রবেরি ফ্লাভারের আইসক্রিম নিয়ে সেটা খেতে থাকে, আড় চোখে তাকিয়ে দেখে আয়ুশ তার দিকে তাকিয়ে আছে,,

_ আয়ুশ ভাই নজর দিয়ো না আমার পেট খারাপ করবে,তার চেয়ে তুমিও একটা খাও আইসক্রিম ওখান থেকে নিয়ে,

আয়ুশ মিহিকার কথা শুনে মুচকি হাসি দিয়ে একটা আইসক্রিম নিয়ে খেতে লাগলো,

________________

এখন কি করবে সাহিল আমার কাছে হাজার টাকার মতো রয়েছে।

_ বেয়া,দব মেয়ে তাহলে এতোক্ষণ ধরে দাও নি কেনো দেখলে তো আমি টাকার জন্য এতো ছুটাছুটি করলাম আর তুমি নিজের কাছে টাকা থাকতেও দিলে না। এখন এই খাবার তুমি বসে বসে গিলো।

কথাগুলো বলেই চলে গেলো বাড়ির ভেতর সাহিল।

আরশিয়া ডেলিভার ম্যান কে পাঁচ মিনিট দাঁড়াতে বলে ঘর থেকে হাজার টাকার নোট নিয়ে এসে ডেলিভারি ম্যানের হাতে ধরিয়ে দেয়।

খাবার গুলো নিয়ে গিয়ে টেবিলে সাজিয়ে সবাইকে হাক ছেড়ে ডাকে, কিন্তু কেউ আসে না।

রাগে দুঃখে নিজে কতোগুলো খেয়ে বাকিটুকু ফ্রিজে রেখে দিলো।

দেখো আরশিয়া তোমায় আমি বিয়ে করছি টাকার জন্য, কিন্তু না পেলাম টাকা আর না পেলাম নিজ বাড়িতে সুখ,তুমি তারাতাড়ি তাকে বলো আমায় টাকা দিতে তা না হলে কিন্তু আমি তোমায় বাড়ি থেকে বের করে দিবো।

আরশিয়া ঘরে ঢুকতে না ঢুকতেই কথা গুলো শুনায় সাহিল।

_ তুমি বিয়ে করছো টাকার জন্য তুমি চাও গিয়ে আমায় বলছো কেনো আমি তো তোমায় টাকার জন্য বিয়ে করি নি, আমি তোমায় ভালোবাসি তাই বিয়ে করছি। সো এসব আমায় না বলে জায়গা মতো গিয়ে তার কাছে বলো।

সাহিল একবার আরশিয়ার দিকে চেয়ে মাথার চুল গুলে খামচি দিয়ে ধরে,

___

_ হ্যালো অভি কাল সকালে আমার বাসায় আসিস মিহিকাদের বাসায় যাবো,সব কিছু ঠিক করার জন্য।

অভিকে কথা গুলো বলে ফোন রা কেটে দিলো আহিল। ফোনটা পকেটে ভরে বেলকনির রেলিং ধরে আকাশ পানে চেয়ে কিছু একটা ভেবে আনমনে হেঁসে ঘরে চলে আসে।

#চলবে

( ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন, আর গত পর্বে একটি জায়গায় ভুল হয়েছিলো লাস্টের কথায় আরশিয়ার জায়গায় মিহিকার নাম দিয়ে ফেলছিলাম ভুলে,ওটা মিহিকা না আরশিয়া হবে। আপনারা নায়ক কিয়ে কনফিউজড, তাহলে নায়ক হিসেবে কাকে চান? হ্যাপি রিডিং)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here