#কাজল_কালো_ভ্রমর
#পর্ব২৫(বোনাস পর্ব)
#Raiha_Zubair_Ripte
দরজার আড়াল থেকে আয়ুশ আর সাদিয়ার কথোপকথন গুলো সামিরা আর মিহিকা শুনে ফেলে,তারা সাদিয়ার পেছন পেছন এসেছিলো তাদের প্রেম আলাপ দেখতে,কিন্তু এসে যে এগুলো শুনবে ভাবতে পারে নি,মিহিকা দৌড়ে বাহিরে চলে আসে,পেছন পেছন সামিরাও আসে।
মিহিকা আর সামিরা কে ওভাবে দৌড়ে যেতে দেখে ড্রয়িং রুমে বসা সবাই হতচকিত হয়ে যায়,পেছন থেকে সামিরার মা মমতাজ বেগম উঠে আসে।
মিহিকা বাহিরে এসে বাগানের সামনে দাঁড়িয়ে তখনকার সাদিয়া আর আয়ুশের কথা গুলো মনে করে,পাশে থাকা ফুলের টপে একটা লাথি মারে যার ফল সরূপ মিহিকা পায়ে ব্যাথা পায়।
সামিরা এসে মিহিকার হাতের কব্জি ধরে বলে,,
_ আরে তুই টপে লাত্থি মারছিস কেনো।
_ আপাই তুমি শুনলে আয়ুশ ভই নাকি আমায় বোনের নজরে ছাড়াও অন্য নজরে দেখে।
_ হ্যাঁ তাই তো শুনলাম।
_ কিন্তু বিশ্বাস করো আপা আমি কিন্তু আয়ুশ ভাইকে ভাই ছাড় অন্য নজরে দেখি নি। সাদিয়া আপু তো মনে হয় আমায় খারাপ ভাবছে।
_ এতে খারাপ ভাবার কি আছে।
_ আমি আর এখানে থাকবো না,আমার কেমন যেনো অস্বস্তি লাগছে,আয়ুশ ভাইয়ের সামনে দাঁড়ালেন তখনকার কথা গুলো ভেসে উঠবে।
_ তাহলে কি চলে যাবি বাসায়?
_ হ্যাঁ চলো চলে যাই।
_ কিন্তু চাচা রাগ করবে না,
_ রাগ করলে সে কিছু একটা বলে ম্যানেজ করে ফোলবো।
পেছন থেকে মমতাজ বেগম বলে উঠে,,
_ কি রে তোরা কই যাবি।
_ চাচি বাসায় যাবো একটা জরুরি কাজ মনে পড়েছে।
_ কিন্তু আরমান যে বললো সে যাবার পথে আমাদের নিয়ে যাবে।
_ তুমি না হয় থাকো চাচি আমরা চলে যাই খুব দরকার বুঝলে তো।
_ হ্যাঁ মা তুমি পরে চাচার সাথে চলে গিয়ো আমরা বরং আসি।
কথাটা বলেই মিহিকা আর সামিরা চলে যায়।
দুপুরের দিকে আরমান সাহেব বাড়ি চলে আসে সোজা,বাড়ি এসে ড্রয়িং রুমে দাঁড়িয়ে গলার টাই খুলতে খুলতে মিহিকাকে ডাকে।
মিহিকা সবে নামাজ পড়ে উঠে জায়নামাজ রাখতেই আরমান সাহেবের গলার আওয়াজ শুনে তড়িঘড়ি করে নিচে নামে।
মিহিকা নিচে নামতেই আরমান বলে উঠে,,
_ তোমার সাহস কি দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে মিহিকা,তুমি কোন সাহসে কাল সারা রাত বাড়ির বাহিরে ছিলে আহিলের সাথে,তোমার তার সাথে এখনো বিয়ে হয় নি জাস্ট কথা বার্তা চলছে,তোমাকে এখনো এতো স্বাধীনতা দেওয়া হয় নি।
মিহিকা মাথা নিচু করে শুধায়,,
_ বাবা তুমিই তো বলেছিলে আহিল কে পরখ করে।দেখতে যে সত্যি আমায় ভালোবাসে নাকি তাই তো…
_ জাস্ট শাট আপ, আমি কি তোমায় বলেছি সারা রাত বাহিরে কাটিয়ে তাকে পরখ করো।
_ না আসলে,,
_ আসলে নকলে কি,সামিরার কাছে তোমার ব্যাপারে খোঁজ না নিলে তো জানতামই না কাল সারা রাত তুমি বাসায় ছিলে না।
_ সরি বাবা ভুল হয়ে গেছে,আর আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
আরমান সাহেব মিহিকার কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে বলে,,
_ কিসের সিদ্ধান্ত নিয়েছো তুমি?
_ আমি চাইছি আমার বিয়েটা খুব শীগ্রই হয়ে যাক।
আরমান সাহেব তপ্ত শ্বাস ফেলে চলে যায়।
মিহওকা সামিরার ঘরে এসে সামিরা কে জিজ্ঞেস করে,,
_ কি গো আপাই তুমি জানলে কিভাবে কাল আমি রাতে ঘরে ছিলাম না।
_ ঐ তো আহিল ভাইয়ের গাড়ির হর্ণে আমার ঘুম ভেঙে গেছিলে,জানালা দিয়ে দেখলাম তুই উনার সাথে কোথাও যাচ্ছিস হেঁটে।
_ তাই বলে বাবাকে বলে দিবা। জানো না বাবা এসব পছন্দ করে না।
_ পছন্দ যখন করে না তাহলে ওমন কাজ করো কেনো। সে যাই হোক মুখ ফস্কে বেরিয়ে গেছে,এমন ভুল আর করো না কেমন।
মিহিকা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানিয়ে আবার বলে উঠে,
_ আপাই আমি বাবাকে বলে দিছি।
_ কি বলেছিস?
_ বলেছি আমার বিয়েটা যেনো তাড়াতাড়ি দিয়ে দেয়।
কথাটা সামিরার কর্ণকুহর হতেই ভ্রু কুঁচকে বলে,,
_ সিরিয়াসলি তুই বলছিস,চাচা কে এই কথা! যে মেয়ে কাল ও বলেছিলো বিয়ে করবে না সে মেয়ে আজ বলছে সে বিয়ে করার জন্য উঠে পড় লেগেছে।
_ তুমিই তো বলেছিলে বিয়ে একদিন তো করতেই হবে তাহলে এখনই কেনো নয়।
_ তোর বয়স দেখেছিস,এখনো ইন্টার পাশ করিস নি আবার বিয়ের জন্য লাফাচ্ছিস।
_ তুমি ও তো ইন্টার পাশ করো নি।
_ তো কি হইছে আমার বিয়ে পরীক্ষার পর বুঝলি।
_ সে যাই হোক,আমি আর আয়ুশ ভাইয়ের সামনে যাচ্ছি না,আমার বিয়ে হয়ে গেলে সাদিয়া আপু নিরদ্বিধায় নির্ভয়ে থাকতে পারবে।
_ হ্যাঁ কথাটা মন্দ বলিস নি,তা বিয়ে কি আহিল ভাইকেই করবি।
_ তাকে ছাড়া আর কাকে।
_ ও মা গো টুরু লাভ।
_ দূর কি বলো,তেমন কিছু না
প্রগাঢ় লজ্জায় হয়ে কথাটা বলে মিহিকা।
_ হয়েছে আর ভাব দেখাতে হবে না,জানি বুঝলে তো।
_ কচু জানো তুমি।
বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বলে মিহিকা।
_ তবে রে বড় বোনকে বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছিস।
কতাটা বলেই মিহিকার পেছন ছুটে সামিরা।
________________
এর মধ্যে কেটে যায় দু সপ্তাহ,এই দু সপ্তাহে অনেক কিছু বদলে গেছে,আয়ুশ আর সাদিয়ার ছোট করে বউ ভাতের অনুষ্ঠান হয়েছে,এক সপ্তাহ আগে আহিলের ফ্যামিলি এসে মিহিকা আর আহিলের বিয়ের ডেট ফিক্সড করে গেছে,আরমান সাহেব এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে দিতে চাচ্ছিলেন না,মিহিকা কে আরো পড়াতে চাচ্ছিলেন কিন্তু আহিল আর আহিলের বাবা মায়ের জোর করায় আর মিহিকার ও সম্মতি পাওয়ায় বিয়ে দেওয়ার জন্য রাজি হয়। সাহিল আর আরশিয়ার সম্পর্কের ও অনেকটা উন্নতি হয়েছে। সাহিল খুব একটা ভালো না বাসলেও আরশিয়ার যেনো কোনো কিছুতে কষ্ট না পায় সেদিকে অনেক খেয়াল রাখে,আরশিয়ার ভালোমন্দ নিয়ে ভাবে।
এর মধ্যে একদিন আরশিয়া সজিবের ব্যাপারে খোঁজ নিলে জানতে পারে সজিব বিদেশে চলে গেছে, সজিবের বাবা খুবই অসুস্থ।
মিহিকা আজ কাল আহিল কে চোখে হারায়,প্রতিদিনের রুটিন হয়ে গেছে প্রায় মধ্যে রাত অব্দি কথা বলার। এই তো চার দিন বাদেই তাদের বিয়ে।
আহিল মিহিকার বিয়ের খবর শুনে অভি আফসোসে ম’রে যাচ্ছে কেনো সে সেদিন বড় গলায় বললো পাঁচ মাস পর বিয়ে করবে।
আয়ুশের ভাবভঙ্গি দেখে সাদিয়া কিছুই বুঝতে পারছে না আদৌও কি আয়ুশ মিহিকাকে ভুলতে পারবে। সংসার তো ঠিকই করছে কিন্তু মনে কি আদৌও জায়গা করে নিতে পেরেছে।
#চলবে
(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন, গল্পটা কালই শেষ করে দিবো,হ্যাপি রিডিং)