নব_প্রেমের_সূচনা #Sumaiya_Akter_Bristy #পর্ব_৩৪

0
355

#নব_প্রেমের_সূচনা
#Sumaiya_Akter_Bristy
#পর্ব_৩৪

আরভীকে হাসিমুখে দেখে এমনিতেই সমুদ্রের মনে সন্দেহ জেগেছিলো। তারউপর যখন বললো সমুদ্রের জন্য সারপ্রাইজ আছে তখন সমুদ্র নিশ্চিত হয়েছে নিশ্চয়ই এ মেয়ে ভয়ংকর কিছু একটা ভেবে রেখেছে। কেননা আরভীর চোখের চাহনি তখন অন্য কিছু বলছিলো। ওই চাহনিতে ছিলো ধূর্ততা। যেই ধূর্ততায় সমুদ্র স্পষ্ট নিজের সর্বনাশ দেখতে পেয়েছে।

গাড়িতে বসে সিটের সাথে হেলান দিয়ে আরভীকে নিয়েই ভাবছে সমুদ্র। আসার সময় সবাই ট্রেনে চড়ে আসলেও যাচ্ছে নিজেদের গাড়িতে করে। এ গাড়িতে করেই নাহিদ চৌধুরীকে এখানে এনেছে সমুদ্র। হৃদয়পুরে প্রয়োজনীয় কিছু কাজ আছে বলে বাকিদের সাথে এখানে আসে নি সেদিন। সমুদ্রের এসব ভাবনার মাঝেই নোমান আহমেদ মিনহাজের ব্যাপারে জানতে চেয়ে বললেন,”তোদের কিছুই আমি বুঝি না। এভাবে না বলে হুট করে কানাডায় চলে যাওয়ার মানে কি সমুদ্র?”

“তা আমি বলবো কি করে? তুমি বরং মিনহাজের থেকেই জেনে নাও।”

“তোরা কি বিয়ে করবি না বলে পণ করেছিস? নাকি তোদের মাঝে কোনো ঝামেলা আছে? তোর ডাক্টার আংকেলের সাথে কথা বলবো?”

এ কথা শুনে সমুদ্র হতভম্ব হয়ে যায়। অবাক চোখে তাকায় নোমান আহমেদের দিকে। ইয়াসমিনকে উদ্দেশ্য করে বলে,”মা তুমি কি কিছু বলবে?”

ইয়াসমিন নিজের স্বামীকে ধমকে বলে উঠেন,”কখন কি বলতে হয় তা বুঝো না তুমি? কোন কথার মাঝে কি ঢুকিয়ে দিলে? বাবু তুই এসব পাগল লোকদের কথায় মাথা ঘামাস না তো।”

ইয়াসমিনের ধমক খেয়ে নোমান আহমেদ চুপটি করে বসে রইলেন। ছেলে-মেয়েদের সামনে কে’ই বা গিন্নির ধমক খেতে চায়?
অপরদিকে এসব দেখে নিলুর দারুন হাসি পাচ্ছে। কিন্তু বেচারি মন খুলে জোরে হাসতেও পারছে না। কারন এই মূহুর্তে হাসলেই সমুদ্রের ধমক খেতে হবে। তাই বেচারি অতি কষ্টে মুখ টিপে হেসে চলেছে।

——

সমুদ্র পরিবার সহ বান্দরবন থেকে ফিরেছে আজ দু’দিন হয়ে গেছে। কিন্তু একবারও আরভীর সামনে গিয়ে দাঁড়ায় নি সমুদ্র। কিন্তু দূর থেকে ঠিকই নজর রেখেছে আরভীর উপর। সমুদ্র আসলে আরভীকে কিছুটা সময় দিতে চাইছে সব বুঝার জন্য। এখন সমুদ্র কিছু বলতে গেলে বা কোনো পদক্ষেপ নিতে গেলে হীতে বিপরীত হবে হয়তো।
এছাড়া সমুদ্রের মাঝে এক প্রকার ভয় কাজ করছে। আরভীকে যতোটুকু চিনেছে, বুঝেছে, তাতে এটা নিশ্চিত যে আরভী সমুদ্রকে এতো সহজে মেনে নিবে না। আরভীকে মানাতে হলে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে।

মোবাইলের টুংটাং শব্দে সমুদ্রের ধ্যান ভাঙ্গে। মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে অপরিচিত নম্বর থেকে কল এসেছে। কলটি রিসিভড করে কানে ধরতেই আরভীর মিহি কন্ঠ সমুদ্রের কানে ভেসে আসে।

“হ্যালো সমুদ্র? কি অবস্থা আপনার? ভালো আছেন তো? হৃদয়পুর এসে একটা খোঁজও নিলেন না। এমন নিষ্ঠুর নির্দয় হলেন কেমন করে বলুন তো?” একনাগাড়ে কথা গুলো বলে থামে আরভী।

সমুদ্র যেনো নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। স্বয়ং আরভী রায়হান নিজ থেকে ফোন করেছে সমুদ্রকে! আবার মিষ্টভাষী হয়ে কথাও বলছে!
আরভীর কথার ধরনে সমুদ্রের কাশি উঠে যায়। অপরদিকে আরভী সমুদ্রের কাশির শব্দ পেয়ে উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলে উঠে,”এমা! ঠিক আছেন তো আপনি?”

সমুদ্র কোনো রকমে নিজেকে সামলে আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করে,”ডিরেক্ট পয়েন্টে আসুন ললনা। আপনি আসলে কি করতে চাইছেন?”

“ওইযে বলেছিলাম না? সারপ্রাইজ। আমি আসলে আপনাকে সারপ্রাইজ দিতে চাচ্ছি সমুদ্র।”

“তা হঠাৎ আমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার ইচ্ছে পোষণ করার কারন?” সন্দিহান কন্ঠে জিজ্ঞেস করে সমুদ্র।

“আমি কারো ঋণ রাখতে পছন্দ করি না। আপনি আমাকে এতো এতো সারপ্রাইজ দিয়েছেন। এর বিনিময়ে আমি আপনাকে কিছুই ফিরিয়ে দিবো না, এ কেমন করে হয়?”

সমুদ্র এবার শব্দ করে হেসে উঠে। সমুদ্রের হাসির শব্দ পেয়ে আরভী চুপ হয়ে যায়।

“সারপ্রাইজের বদলে সারপ্রাইজ দিচ্ছেন। কিন্তু ভালোবাসার বদলে ভালোবাসা দিচ্ছেন না কেন ললনা? আমি চাই আপনার আর আমার সম্পর্কটা মাধুর্যে পরিপূর্ণ হোক। অথচ আপনি বারেবারে সম্পর্কটাকে সাপ বেজির সম্পর্কে গড়ে তুলতে চাইছেন।”

“ভুল ভাবছেন সমুদ্র মুনতাসিন। আমি এ সম্পর্ক শেষ করতে চাচ্ছি। সে যাই হোক, আপনার সারপ্রাইজটা কিন্তু আমি প্রস্তুত করে রেখেছি। কবে দেখা করবেন বলুন।”

সমুদ্র কিছুটা সময় নিয়ে ভেবে বললো,”আজ বিকেলে?”

“ঠিক আছে। আমি অপেক্ষায় থাকবো।”

খানিক সময় বাদে ইয়াসমিন সমুদ্রের ঘরে এলেন। এসে বললেন,”বাবু তোর সাথে কিছু কথা ছিলো।”

“হ্যাঁ মা বলো।”

ইয়াসমিন সমুদ্রের বিছানায় বসলেন। তারপর ধীরেসুস্থে বলতে আরম্ভ করলেন,”দেখ বাবু, তুই ছেলে। তাই তোকে বিয়ের ব্যাপারে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছি। তুই যেদিন যাকে বলবি তার সাথেই তোর বিয়ে দিবো আমরা। কিন্তু নিলু বড় হয়েছে। নানা জায়গা থেকে বিয়ের জন্য সম্বন্ধ আসছে। আমার আর তোর বাবার মনে হচ্ছে নিলুর বিয়েটা এবার দিয়ে দেওয়া উচিত। কারন সবসময় ভালো ছেলে পাওয়া যায় না। তাই চাচ্ছিলাম এখন কাবিন করিয়ে রাখবো আর পরীক্ষা শেষে উঠিয়ে নিয়ে যাবে।”

“এখন এসবের প্রয়োজন নেই মা। আর নিলুর সাথে এ বিষয়ে কথা বলেছো?”

“না তা বলা হয় নি। কিন্তু আজ বিকেলে তোর বাবার এক বন্ধুর ছেলে নিলুকে দেখতে আসবে। ওরা এমন ভাবে বললো যে তোর বাবা আর না করতে পারে নি। আর ছেলেও আমাদের চেনা-জানা। নিলু সুখে থাকবে ও বাড়িতে।”

“নিলু কোথায় সুখে থাকবে সেটা নিলুকে বুঝে নিতে দাও মা। আর ওকে বলো আমার ঘরে আসতে।”

সমুদ্রের কথায় ইয়াসিন কিছুক্ষণ চুপ করে সমুদ্রের মুখ পানে তাকিয়ে থাকেন। তারপর কিছু একটা ভেবে সমুদ্রকে প্রশ্ন করেন,”নিলু কি কাউকে পছন্দ করে?”

“নিশ্চিত ভাবে বলতে পারছি না। তবে একটু আগে বললে না নিলু বড় হয়েছে? যেহেতু বড় হয়েছে সেহেতু থাকতেও পারে। বলা যায় না।”

ইয়াসমিন আর কিছু বললেন না। বসা থেকে উঠে সমুদ্রের ঘর হতে বেরিয়ে গেলেন। তার কিছুক্ষন বাদেই নিলু মাথা নিচু করে সমুদ্রের ঘরে আসে। নিলুকে এরকম মাথা নিচু করে রাখতে দেখে সমুদ্র নিজ বোনের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। পরম যত্ন সহকারে মাথায় হাত রেখে ধীর কন্ঠে বলে,”নিলু! আমার দিকে তাকা।”

নিলু কিছুটা সময় নিয়ে নিজেকে ধাতস্থ করে। তারপর গভীর শ্বাস নিয়ে চোখে টলমল করা পানি আটকে রেখে সমুদ্রের দিকে তাকায়।

নিলুর চোখ যুগল দেখে সমুদ্র আটকে উঠে। বোনটা তাহলে সত্যি’ই এক পাগল ছেলের প্রেমে পড়েছে! চোখে-মুখে স্পষ্ট তাকে হারানোর ভয় দেখতে পারছে সমুদ্র। একদিন সমুদ্রের চোখে-মুখেও তো ঠিক একই রকম ভয় ফুটে উঠেছিলো।

“শুনেছিস কিছু?” সমুদ্র শান্ত স্বরে কথাটি জিজ্ঞেস করে নিলুকে।
কিন্তু নিলু প্রতিত্তোরে কিছু বললো না। ভয় পাচ্ছে সমুদ্রকে বলতে। এছাড়া কান্না আটকে রাখার জন্যও মুখ খুলছে না। এখন কিছু বলতে গেলে নিশ্চিত এই চোখ জোরা বেইমানি করে বসবে। আপাতত ভাইয়ের সামনে নিজের অশ্রু বিসর্জন দিতে চাচ্ছে না নিলু। ভাইয়ের সামনে বোন কাদছে নিজের প্রেমিক পুরুষকে হারানোর ভয় পেয়ে। ব্যাপারটা কেমন অদ্ভুত দেখায় না?

এদিকে নিলুকে কিছু বলতে না দেখে সমুদ্র বুঝে নেয় সংশয় থেকে নিলু নিজ ভাইয়ের সামনে মুখ খুলতে পারছে না। তাই সমুদ্র নিলুকে আশ্বাস দিতে নিলুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,”তুই কি তন্ময়কে পছন্দ করিস? নির্দ্বিধায় বলতে পারিস আমায়। আমি তোর বিশ্বাসের দাম রাখবো।”

তবু নিলু মুখ ফুটে কিছু বললো না। যদি সমুদ্র এ সম্পর্ক মেনে না নেয়? এ ভয়ে। আর তা বুঝিতে পেরে সমুদ্র সামান্য হেসে বলে উঠে,”তবে কি পছন্দ করিস না? তাহলে আর কি করার? সুন্দর করে সেজেগুজে রেডি হয়ে থাকিস। আজই বিয়ে পড়িয়ে দিবো।”

এবার নিলু শব্দ করে কেঁদে উঠলো। তা দেখে সমুদ্র বুঝে যায় সমুদ্রের কৌশল কাজে লেগেছে। সমুদ্র চুপ করে থাকে নিলুর কাছ থেকে তার মনের কথা জানার অপেক্ষায়।

নিলু খানিকটা সময় নিয়ে নিজেকে কোনো রকমে সামলে থেমে থেমে বললো,”ভভাইয়া, আমি উউনাকে ছাড়া, আর কাউকে বিবিয়ে করতে, পারবো না।”

সমুদ্র এবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে নিজের অন্য রুপে ফিরে এসে বিরক্তির স্বরে বলে উঠলো,”মাইয়া মানুষ মানেই ন্যাকামির কারখানা। এই উনি টা কে সেটাই তো জানতে চাচ্ছি নাকি?”

“ত’ত’তন্ময় ভাইয়া।” মিনমিন করে প্রতিত্তোরে বললো নিলু।

“ভাইয়া যখন ছাইয়া।” সমুদ্র বিরবির করে বললো। তারপর আবার গম্ভীর হয়ে কাঠকাঠ গলায় বলে উঠে,”তুই ঘরে যা। দেখছি কি করা যায়।”

নিলু ভীত হয়ে গেলো। সমুদ্রকে দেখে বুঝা যাচ্ছে না কিছু। সমুদ্র যদি এ সম্পর্কটাকে না মেনে নেয় তবে কি হবে নিলুর? কিভাবে পারবে তন্ময়কে ভুলে অন্য কারো সাথে ঘর বাঁধতে। মনে একজনকে রেখে অন্য একজনের সঙ্গে ঘর বাঁধা যায় বুঝি? এর থেকে তো মৃত্যু শ্রেয়।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here