#তোমায়_যবে_পাই_দেখিতে
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া
#পর্ব_১৯
(প্রাপ্তবয়স্ক ও কঠোরভাবে মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।)
তিয়াস প্রিয়ন্তির কোমর চেপে ধরে একেবারে নিজের শরীরের সাথে মিশিয়ে ফেললো। প্রিয়ন্তি শুধু কেঁপে কেঁপে উঠছে বারবার । প্রথম অনুভূতি সব সময় সুন্দর। সেই অনুভূতির জোয়ারে ভেসে গেলো দু’জন।
ভোরের মিঠে রোদ্দুরে আলোকিত হয়েছে ধরণীর বুক। ঘুম ভেঙে গেছে তিয়াসের। সাতটার মধ্যে ঘুম থেকে উঠায় অভ্যস্ত সে। প্রিয়ন্তি এখনো ঘুমাচ্ছে গুটিশুটি হয়ে। শরীরের উপর থেকে কম্বল সরে গেছে। এলোমেলো শাড়িতে বেশ মোহনীয় লাগছে তাকে। তিয়াস মুচকি হেসে খুব সাবধানে কম্বল গায়ে দিয়ে দিলো। অবশেষে প্রিয় মানুষটাকে নিজের বক্ষে জড়িয়ে রাখার অধিকার পেয়েছে তিয়াস। তিয়াস আরো একটু এগিয়ে শোয় প্রিয়ন্তির দিকে। আলতো করে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। ঘুমন্ত মুখখানি আগে কখনো দেখার সুযোগ হয়নি তার। তাই আজ খামারে একটু দেরিতে যাবে। যতক্ষণ প্রিয়ন্তি ঘুমোচ্ছে ততক্ষণে ইচ্ছামত দেখবে ঘুমন্ত মুখশ্রী।
কিছু জিনিস মানুষ জীবন থেকে একবার হারিয়ে ফেললে আর ফিরে পায় না। দিনের পর দিন আঘাত করা পাথরটাও একদিন ভেঙে যায়। আর সেই ভাঙা পাথর কখনো আর জোড়া লাগে না। তেমনই অর্পা আর রেজওয়ানের সম্পর্কের বেলায় ঘটেছে। আত্মসম্মানহীন নারী যখন অবহেলার বাণে জর্জরিত হয় তখন সেও চরম আত্মসম্মানবোধ গড়ে তোলে নিজের মধ্যে। অবহেলা হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো অদৃশ্য অস্ত্র, যে-ই অস্ত্রের মাধ্যমে বিনা যুদ্ধে, বিনা কথায় মানুষকে ধীরে ধীরে শেষ করে দেওয়া যায়। প্রিয়ন্তির বিয়ের পরে অর্পা মিউচুয়াল ডিভোর্স করার জন্য রেজওয়ানের সাথে শেষবারের মতো কথা বলে। রেজওয়ান অর্পার পা পর্যন্ত ধরেছিলো। কিন্তু না মন গলেনি অর্পার। কিন্তু খারাপ লেগেছে মানুষটাকে দেখে। একসাথে থাকতে গেলে পরষ্পরের প্রতি যে ভরসা, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা দরকার সেটা আর কখনোই রেজওয়ানের প্রতি আসবে না অর্পার। আসমা যদি নিজে থেকে সরে না যেতো রেজওয়ান কি তার ভুল বুঝতো? একসাথে থেকে অশান্তিতে থাকার চেয়ে আলাদা থাকা বেশি ভালো বলে মনে হয়েছিল অর্পার।
ভরসন্ধ্যা, মাগরিবের নামাজ শেষে ঘরের জানালা বন্ধ করে টেবিলে পড়তে বসেছে অর্ষা। তবে পাঠ্যবই নয়,হুমায়ুন আহমেদ স্যারের উপন্যাস। অর্ষা বরাবর সাহিত্যপ্রেমী মেয়ে। সময় পেলেই বই নিয়ে বসে পড়ে। তবে সমসাময়িক বইয়ের চেয়ে কালজয়ী উপন্যাস তার বেশি প্রিয়।
” অর্ষা!”
হঠাৎ আবরিশামের কন্ঠে চমকে মাথা ঘুরিয়ে পেছনে তাকালো অর্ষা। এটা কি বাস্তব না-কি তার মনের কল্পনা? মানুষটা না বলেকয়ে এই অসময়ে কেনো আসবে!
” তুমি! এখন!”
” এমনভাবে পরপর চমকাচ্ছ মনে হচ্ছে আমি আসাতে সৌরজগতে আরেকটা গ্রহ যুক্ত হয়েছে। ”
” আরে হুট করে না বলে এলে তাই একটু চমকালাম। বসো বিছানায়, বাবা-মায়ের সাথে কথা হয়েছে? ”
আবরিশাম বিছানায় বসে। অর্ষাও বই বন্ধ করে আবরিশামের সামনাসামনি বসেছে।
” হ্যাঁ কথা হয়েছে মামীর সাথে, মামা বাইরে গেছেন বললো। তোমার বিচ্ছু ভাইবোনের সাথেও কথা হলো। দুটোকে এক হাজার টাকা দিয়ে তোমার ঘরে আসতে হলো।”
” কী বলো! শয়তানগুলো বড্ড পাজি হয়েছে। ”
” এটা কী ছিলো অর্ষা? ওঁরা শয়তান থেকে কি পাজিতে আপগ্রেড করলো?”
অর্ষার কথায় অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো আবরিশাম। অর্ষা ভেংচি কেটে চুপ রইলো। আবরিশাম হাসতে হাসতেই আচমকা অর্ষাকে কোলে তুলে নিয়ে ঘুরতে শুরু করেছে। অর্ষা তো শুধু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তাকিয়ে আছে আবরিশামের দিকে।
” থামো,থামো! মাথা ঘুরাচ্ছে তো।”
” আগে ওষ্ঠে ওষ্ঠ ছুঁইয়ে দিতে দাও তারপর থামবো।”
” এটা কেমন জুলুম! তুমি জোর করতে পারো কিন্তু আমি স্বেচ্ছায় এ কাজ করতে দিবো না। লাগলে সারারাত ঘুরাও,বুঝলাম চোখ আমি। ”
আবরিশাম জানে অর্ষা কখনো এসবে রাজি হবে না। তবুও মজা করার জন্যই বলেছে কেবল। স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে অর্ষাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে নিজেও পাশে শুয়ে অর্ষার একটা হাত ধরলো আবরিশাম।
” অর্ষা আমার চাকরি হয়ে গেছে। বেশি হলে তিনদিন লাগবে তোমাকে ঘরে তুলতে। এখন তো আর তোমার কথায় বিয়ে পিছবে না।”
” আলহামদুলিল্লাহ! ভালো খবর। এজন্যই বুঝি এতদূর ছুটে আসা?”
” হ্যাঁ মিসেস আবরিশাম। মামা বাসায় ফিরলেই বলবো কালকেই আমার সাথে রাজশাহী যেতে। তারপর ওখানে কথাবার্তা হবে তারপর বিয়ে! আমার না খুব এক্সাইটেড লাগছে। ধ্যাৎ! কপালে তো একটা চুমু খেতে পারি?”
” মোটেও না। সবুরে মেওয়া ফলে। আগে যা হয়েছে হয়েছে এখন থেকে বিয়ের আগ পর্যন্ত হাতও ছোঁবে না।”
” এই ছাড়লাম হাত। বিয়ের দিন থেকে আজীবন ধরে রাখবো। মানুষ এতো পাষাণ! যাই তাহলে অন্য রুমে। ফ্রেশ হয়ে আসি তুমি বরং এককাপ চা করো।”
” ঠিক আছে যাও।”
আবরিশাম নিজের জন্য বরাদ্দকৃত ঘরের উদ্দেশ্য অর্ষার ঘর থেকে প্রস্থান করলো।
গতকালই বাড়ি তোলার কাজ শুরু হয়েছে। সারাদিন নিজে দাঁড়িয়ে থেকে কাজের তদারকি করে তিয়াস। যদিও তিয়াসের খালা খালু খুব করে বলেছিলেন তাদের সাথে থাকতে। কিন্তু সারাজীবনে নিজের বলতে কোনো বাড়ি না থাকায় একটা বাড়ি করার খুব ইচ্ছে ছিলো তিয়াসের। তাছাড়া প্রিয়ন্তির জন্য সুন্দর একটা সংসার সাজিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব তো তার। যদিও বিল্ডিং না কিন্তু ফ্লোর ইট দিয়ে বাঁধিয়ে দিবে। দোচালা টিনের ঘরে শুরু হবে তাদের ছোটো সংসার। বিল্ডিং কিংবা টিনের ঘর বিষয় নয়, ভালোবাসা থাকলে যেকোনো জায়গায় সুখে সংসার করা যায়।
” আবরিশাম কল দিয়েছিলো দুপুরে। ”
খাওয়াদাওয়া শেষে ঘুমোনোর জন্য শুয়েছে তিয়াস ও প্রিয়ন্তি। শাড়ির উপর দিয়ে পেটে হাত রেখেছে তিয়াস। প্রিয়ন্তি বারবার বললেও রাতে এভাবে না ধরে ঘুমাতে পারে না তিয়াস। আবরিশামের বিয়ে কাল। বিয়ের পরেরদিন রিসিপশনের আয়োজন করবে, সেটার জন্য দাওয়াত করতেই কল দিয়েছিলো সে।
” ওদের বিয়ে ঠিক হয়েছে? ”
” হ্যাঁ কাল বিয়ে,পরশু রিসিপশন। বিয়ে তো গ্রামে হবে। আমাদের যেতে বলেছে কিন্তু আমার মনে হয় যাওয়াটা ঠিক হবে না। লোকজন বিভিন্ন কথা শোনাবে। ”
” লোকজনের কথা দিয়ে তো আমাদের কোনো কাজ নেই প্রিয়। আমি আবরিশামকে আমার উপকারী বন্ধু হিসেবে মেনেছি। সেদিন আবরিশাম যে সাহায্য করেছিলো সেটা যদি না করতো তাহলে আজকে আমরা একসাথে শুয়ে থাকতে পারতাম না। ”
” তা ঠিক বলেছো। তাহলে যাচ্ছি আমরা?”
” অবশ্যই। আগামীকাল সকালে রওনা হবো, এখন অনলাইনে টিকিট কেটে নিচ্ছি। ”
” ঠিক আছে। শোনো।”
তিয়াস প্রিয়ন্তিকে গভীরভাবে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে মুখ গুঁজে বলে,
” হু।”
” শুনেছি বউয়ের কপালে চুমু খেয়ে কাজে বেরোয় বিবাহিত পুরুষরা। তা তুমি কেনো সকালে চুমু খেয়ে বের হও না?”
তিয়াস আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয় ঘাড়ে। প্রিয়ন্তি পেটের উপর থাকা তিয়াসের হাত চেপে ধরে।
” এটা কোনো ব্যাপার বলো তো? আমি তো জানতাম না আগে। কাল থেকে মিস হবে না। প্রিয় তুমি কি আমাকে বিয়ে করে অসুখী? ”
হঠাৎ তিয়াসের এরকম কথায় আঁতকে উঠলো প্রিয়ন্তি। তিয়াসের চোখে চোখ রেখে শুধালো,
” এসব কেনো বলছো? আমি কি কোনোভাবে তোমাকে কষ্ট দিয়েছি?”
” তাহলে এভাবে দূরে দূরে থাকো কেনো? বিয়ের পরে একদিনও তো নিজে থেকে কাছাকাছি আসোনি তুমি। আমি তো সবসময় কাছে টানি।”
” তুমি আসলে একটা বুদ্দু। আমার যে লজ্জা লাগে সেটা বোঝো না?”
” ঠিক আছে। এরপর যেদিন তুমি নিজে থেকে চাইবে সেদিনই তোমার কাছে আসবো। তার আগে ঘনিষ্ঠ হবোনা আমরা।”
তিয়াস মনে হয় অভিমান করলো ভেবে খারাপ লাগছে প্রিয়ন্তির। সত্যিই তো নিজের প্রিয়তমা স্ত্রী’র কাছ থেকে এটুকু তো পাওনা তার। তিয়াস প্রিয়ন্তির শরীরের উপর থেকে হাত সরিয়ে ফেলে। কেমন খালি খালি লাগলো তাতে প্রিয়ন্তির। কোনো প্রকার দূরত্ব চায় না আর প্রিয়ন্তি। নিজের লজ্জাকে সংবরণ করে আচমকাই তিয়াসের ওষ্ঠ নিজের ওষ্ঠ দিয়ে আঁটকে ফেললো। তিয়াস চমকালো। এটা কী মন থেকে করছে মেয়েটা না-কি অভিমান ভাঙাতে? তিয়াস সরতে চাইলেও প্রিয়ন্তি ছাড়লো না। আরো গভীরভাবে আলিঙ্গনে ব্যস্ত হয়ে উঠলো দু’জন।
আবরিশামের বিয়ে আজ। বাড়ি জুড়ে বিয়ের সাজসজ্জা। আত্মীয়স্বজনে গিজগিজ করছে সারা বাড়ি। কিছুক্ষণের মধ্যেই হয়তো ফিরবে বউ নিয়ে সে। আবরিশামের মা সবদিক সামলাতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছে রীতিমতো। এরমধ্যেই গেটের সামনে থেকে ছেলেমেয়েদের হৈহল্লা শোনা গেলো। বউ নিয়ে এসেছে! মাগরিবের আজান দিচ্ছে। বউ বাড়িতে প্রবেশ করিয়ে রান্নাবান্নার কাজ তদারকি করতে গেছেন আবরিশামের মা। অর্ষাকে আবরিশামের ঘরে বসিয়ে আনহা ফ্রেশ হতে গেছে। আবরিশাম অন্য রুমে ফ্রেশ হতে গেছে। মজার কথা হলো অর্ষার কাছে মনেই হয়নি শ্বশুর বাড়ি এসেছে। নিজের ফুপুর কাছে এসে আরো ভালো লাগছে তার। কিন্তু পরিবারের কাছ থেকে বিচ্ছেদে কষ্ট হচ্ছে।
” কী ভাবছো আপু?”
আনহা এসেছে কিছু খাবার নিয়ে। সাথে অন্যান্য ভাইবোনেরা আছে। অর্ষা বিয়ের শাড়ি পাল্টে অন্য একটা শাড়ি পরেছে। সাথে ছোটো ঝুমকো ও কপালে কালো টিপ।
” কিছু না। তোরা বস। আমি এখন কিছু খাবো না রে।”
আনহা খাবারগুলো বিছানার পাশে থাকা ছোটো টেবিলের উপর রেখেছে। উর্মি, মিহু বসেছে বিছানায়। ওঁরা আবরিশামের খালাতো বোন। দুজনে যমজ,উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিবে সামনে।
” ভাইয়া শুনলে ভীষণ রাগ করবে আর মা শুনলে তো মারবে তোমাকে। অল্পকিছু খাও আপু।”
” উনাদেরকে বলিস না। রাতে বরং খাবো একেবারে। ”
” আচ্ছা বেশ। মামীর সাথে কথা বলো কল দিয়ে, মন ভালো লাগবে। ”
” বলেছি কথা। তোর লেখাপড়ার খবর কী?”
” লেখাপড়া চাঙে আমি ভাসি গাঙে। ”
আনহার সাথে উর্মি আর মিহুও হেসে উঠলো। অর্ষা তো এই মেয়ের ছন্দ শুনে অবাক। বয়সের তুলনায় বেশি পেকেছে মেয়েটা।
” তোর ভাই এসব শুনলে চুবানি দিবে গাঙের জলে। মন দিয়ে লেখাপড়া কর,সামনে পরীক্ষা। ভালো রেজাল্ট করলে আমি তোকে ননদী বলে মানবো নইলে বোন হিসেবে সারাদিন গাট্টা মারবো।”
” তুমি তো এরকম ছিলে না? ভাইয়ের সাথে মিশে গাট্টা মারা শিখে গেলে!”
আনহার অভিমানী মুখখানা দেখে ঠোঁট টিপে হাসছে অর্ষা।
চলবে,
রিচেক দেওয়া হয়নি। টাইপিং মিসটিক হলে ক্ষমা করবেন। পান্ডুলিপি নিয়ে একটু ব্যস্ত সময় কাটছে। গল্প একেবারে শেষের পথে।