মেঘের_শহর #পর্ব_১৮ Saji Afroz

0
201

#মেঘের_শহর
#পর্ব_১৮
Saji Afroz

.
সাইয়ারা কি বলবে বুঝতে পারছে না। আশেপাশের সবকিছু যেন ঝাপসা দেখছে সে। কেবল মেঘের হাসিমাখা মুখটা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে । যেই হাসিমুখ হুরায়রার জন্য হয়েছে!
-আচ্ছা পরে কথা বলব। এখন আসি।
.
মেঘ নিচে চলে গেল। হয়তো এখন সে হুরায়রার সাথে ফোনে কথা বলবে। নাহয় পরিবারের সকলের সাথে আজকের দিনটা উৎযাপন করবে। উৎযাপন করার মতোই তো আজকের দিন টি! কিন্তু সাইয়ারা কি করবে? একটুর জন্যও কেনো তার মনে আনলো না? মেঘ অন্য কাউকে ভালোবাসতে পারে! কেনো সে নিজের কথায় শুধু চিন্তা করে গেছে!
নাহ, আর কিছু ভাবতে পারছে না সে। হাতে থাকা ভেজা তোয়ালে টা রশির উপরে রেখে হাঁটা শুরু করলো। নিচে যাওয়া প্রয়োজন। সূর্যের তাপে যেন মাথাটা গরম হয়ে যাচ্ছে। শরীর টা থরথর করে কাপছে। বুকের মাঝে চিনচিনে ব্যথা অনুভব করছে। হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে। ধীরেধীরে মাথাটা ভার হয়ে আসছে। মনেহচ্ছে মাথাটা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মাটিতে পড়ে যাবে। এই মুহুর্তে দূরে কোথাও ছুটে চলে যেতে পারলে কিছুটা শান্তি পেত। কিন্তু তা সম্ভব নয়।

.
.
.

অনাথ আশ্রম থেকে বের হতেই মোখলেসের দেখা পেল জিকো। মোখলেস কে দেখে কিছুটা অবাক হলো সে। কারণ এই মুহুর্তে সে মোখলেস কে এখানে আশা করেনি।
মোখলেস তার পাশে এসে জানতে চাইলো, আজ বাচ্চারা তাকে বিরক্ত করেছে কি না।
জিকো জানালো, করেনি। কিন্তু মোখলেস কি এমন করেছে যার কারণে বাচ্চারা তাকে এত মান্য করে।
জিকোর প্রশ্ন শুনে মৃদু হেসে মোখলেস বলল-
আগেও বলেছিলাম তোমাকে, আমি প্রায় এখানে এসে সময় কাটাই বাচ্চাগুলোর সাথে। ওদের সাথে আমি এত বেশি ক্লোজ যে সবাই আমাকে বড় ভাই এর মতো দেখে।
-বুঝলাম। কিন্তু আপনি এই সময়ে এখানে কেনো তা বুঝলাম না।
-ভাবছি আজ বাইরে কোথাও দুপুরের খাবার খাব তোমার সাথে।
.
বাইরে মানে নিশ্চয় রেস্টুরেন্টে! রেস্টুরেন্টের কথা শুনে জিকোর জিভে পানি চলে আসলো।
আলুর ভর্তা ও ডিম ভাজি খেতে খেতে ক্লান্ত সে। অবশ্য ব্যাচেলর লাইফ মানেই আলুর ভর্তা ও ডিম ভাজি!
-অসুবিধে নেই তো তোমার?
.
আরে মোখলাইস্সা কিসের অসুবিধে! পারলে প্রতিদিনই রেস্টুরেন্টে নিয়ে যা। কোনো অসুবিধে না, শুধুই সুবিধা…
-কি হলো?
.
মনের কথা মনের মাঝেই হজম করে জিকো বলল-
আজ আমারো রান্না করতে ইচ্ছে করছে না। চলুন যাওয়া যাক।
.
একটা রিকশা ঠিক করে দুজনে উঠে বসলো। আজ আর মোখলেস দূরে সরে বসছে না। বরং অনেকখানি ঘেষে বসেছে। মনে হচ্ছে আগে থেকেই ঠিক করে এসেছে, আজ সে দূরে সরবে না!
তাতে অবশ্য জিকোর কোনো অসুবিধে নেই। মোখলেস হাত ধরে বসলেও তার খারাপ লাগবে না। কারণ সে তার বন্ধু।
.
.
.

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে নামলো। মন খারাপ থাকলে এই সময়টায় যেন আরো মনটা খারাপ হয়ে যায়। মনেহয় দিনের আলো নেভার সাথে সাথে জীবনের আলো টাও নিভে যাচ্ছে!
মেঘ এখানে এসেছে বেশিদিন হচ্ছে না। তবে কখন কিভাবে সে হুরায়রার প্রেমে পড়লো?
নিয়মিত ভার্সিটি তে গেলে হয়তো বা কিছুটা হলে এই বিষয়ে জানতে পারতো সে। কারণ হুরায়রা তো তারই ক্লাসের।
কিন্তু হুরায়রার চেয়েও সে মেঘের পাশে বেশি থেকেছে। তবে কেনো মেঘ তার প্রেমে পড়েনি? হুরায়রা তার চেয়ে বেশি সুন্দরী বলে?
শোয়া থেকে উঠে পড়লো সাইয়ারা। আয়নার সামনে এসে নিজেকে দেখলো সে। হ্যাঁ, হুরায়রা তার চেয়ে বেশি সুন্দরী। এবং সকলেই সুন্দরের পূজারী। মেঘও এর ব্যতিক্রম নয়। তাই তো তার মনের কথা সে বুঝতে পারেনি। ভালোবাসার পেছনে না ছুটে সুন্দরের পেছনে ছুটেছে।
মেঘের উপরে হুট করেই রাগ হচ্ছে তার।
রাগ সামলাতে না পেরে ড্রেসিন টেবিলের উপরে থাকা পারফিউমের বোতল টা মেঝেতে ছুড়ে ফেললো সে। সাথে সাথে তার খালা এসে বললেন-
ওমা! কিভাবে ভেঙেছে বোতল টা?
.
সাইয়ারা কে নিশ্চুপ দেখে তার মেজাজ বিগড়ে গেল। বুঝতেন পারলেন ইচ্ছে করেই সাইয়ারা বোতল ভেঙেছে। রাগান্বিত কণ্ঠে তিনি বললেন-
সেই দুপুর থেকে দেখছি তোকে কেমন হয়ে আছিস। ভাত খাস নি, বিকেলের নাস্তা টাও করিস নি। এখন আবার জিনিসপত্র ভাঙচুর করছিস। কি হয়েছে তোর বল তো?
.
” কিছু না ‘ বলে সাইয়ারা চুল আঁচড়ে নিজের হাত ব্যাগ টা নিয়ে খালা কে ঠেলে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে লাগলো।
তার খালা চেঁচিয়ে বললেন-
এখন কোথায় যাচ্ছিস?
– ক্ষিধে পেয়েছে। চটপটি খাব।
.
তিনি আর আটকালেন না সাইয়ারা কে। হয়তো কোনো কারণে তার মন মেজাজ ভালো নেই। থাক না কিছুক্ষণ নিজের মতো।
.
.

সেই রেস্টুরেন্ট টায় এসে বসলো সাইয়ারা, যেখানে এসে চটপটি খায় সে। তবে আজ কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না। কিছু সময় একা কাটানোর জন্য এখানে এসেছে সে।
-বসতে পারি?
.
মেঘের কণ্ঠস্বর শুনে তাকে বসতে বললো সে। মেঘ বলল-
এদিকটায় হাঁটছিলাম। তোমাকে এখানে ঢুকতে দেখে আসলাম। ভাবলাম গল্প করি কিছুক্ষণ।
-হুরায়রার গল্প?
-তুমি শুনতে চাইলে করব। তখন তো হুট করে চলে গিয়েছিলাম। আসলে মা কে খবর টা কে কিভাবে দিয়েছে জানার জন্য আগ্রহী ছিলাম তো।
-কে দিয়েছে?
-হুরায়রার বাবা।
-কথা হয়েছে ওর সাথে?
-নাহ। খুব জলদি ও আনন্দে নগরে ফিরবে জানালো।
-এখন কোথায়?
-তা আমার জানা নেই।
-ওহ।
.
সাইয়ারার দিকে ভালোভাবে তাকিয়ে মেঘ বলল-
তোমাকে এত বিষণ্ণ লাগছে কেনো?
.
নড়েচড়ে বসে সে বলল-
আমি ঠিক আছি।
-চটপটি খাচ্ছ না?
-ইচ্ছে করছে না। আপনার ইচ্ছে হলে খান।
-নাহ। আমি কফি খাব। তুমি খাবে?
-খাওয়া যায়।
.
কফি অর্ডার করার কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে এল। মেঘ সাইয়ারার দিকে একটা মগ এগিয়ে দিয়ে বলল-
নাও খাও।
.
সাইয়ারা চুমুক দিতে যাবে ঠিক তখনি মেঘ বলল-
আচ্ছা সাইয়ারা, তোমার কেমন লাগে হুরায়রা কে?
.
মগ টা মুখের কাছে এনে নামিয়ে রাখলো সাইয়ারা। মুখে হাসি আনার চেষ্টা করে বলল-
ভালোই।
.
মেঘ চুমুক দিয়ে বলল-
প্রথম দেখাতেই ওর প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম আমি। জানি না কি আছে ওর মাঝে!
.
মেঘ জানালার দিকে তাকিয়ে হুরায়রার কথা বলতে লাগলো। আকাশ বা আধারের কালো দেখতে মেঘের ভালো লাগে নিশ্চয়। কিন্তু সাইয়ারার ভালো লাগে তাকে দেখতে। তাই সে মেঘের দিকে তাকিয়ে রইলো।
হুরায়রার কথা বলার সময় মেঘের মুখটা অন্যরকম সৌন্দর্য ধারণ করেছে। মনে হচ্ছে মেঘ পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী একজন ব্যক্তি।
যা দেখে সাইয়ারার রাগ কমে গেল।
ভালোবাসা কি রূপ দেখে হয়? মেঘ সত্যিই ভালোবাসে হুরায়রা কে। হোক সেটা যেকোনো কারণেই!
পৃথিবীতে এত ছেলে থাকতে সাইয়ারাও মেঘ কেই কেনো ভালোবেসেছে? সে দেখতে সুন্দর বলে?
মেঘ অসুন্দর হলে কি সে তার প্রেমে পড়তো না?
নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলো সাইয়ারা।
.
জানালার দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো মেঘ। কফি শেষ করে মগ টা টেবিলের উপরে রেখে বলল-
তোমার সাথে বন্ধুত্ব করিয়ে দিব। হুরায়রা কে দেখতে গম্ভীর মনেহয়। কিন্তু আসলে সে অনেক ভালো। মিশলেই বুঝবা।
.
মুচকি হেসে অস্পষ্ট গলায় সাইয়ারা বলল-
আচ্ছা।
.
কথাটি বলে উঠে দাঁড়ালো সে। সাইয়ারা কে দেখতে বেশ দূর্বল দেখাচ্ছে। মেঘ চিন্তিত স্বরে জিজ্ঞাসা করলো-
তুমি ঠিক আছ তো?
-হু।
-চলো বাসায় পৌঁছে দিই তোমায়।
.
এতটুকুতেই খুশি হয়ে গেল সাইয়ারা। প্রিয় মানুষ থেকে এতটুকু পাওয়াই যেন আনন্দের!
.
.

সাইয়ারা বাসায় ঢুকতেই মেঘ নিজের বাসার দিকে পা বাড়ালো। কিন্তু এক ছেলের কণ্ঠস্বর কানে আসতেই থেমে গেল সে। পেছনে ফিরে এলাকার বন্ধু নোবেল কে দেখলো, যে সাইয়ারা কে বিশ্রি বলেছিল।
-ওই বিশ্রি মেয়েটা তোকে কি জাদু করেছে মেঘ? যার কারণে তুই তার সাথেই ঘোরাফেরা করিস?
.
মেঘ অবাক হয়ে বলল-
মানলাম সে আহামরি সুন্দরী না। কিন্তু সে বিশ্রিও নয়। আমার মনে হচ্ছে তোর মানসিক ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত।
.
রেগেমেগে ভেতরে প্রবেশ করে গেইট বন্ধ করলো মেঘ। নোবেলের বিষয় টা সে বুঝতে পারছে না। তার কি সাইয়ারার সাথে কোনো শত্রুতা আছে?
.
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here