আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা♥ #পর্ব_১৯+২০

0
360

#আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা♥
#পর্ব_১৯+২০

এমন সময় রেদোয়ান বলল, এটেনশান প্লিজ। আজকে আমাদের সাথে আমার এক বিশেষ বন্ধু যোগ দিতে এসেছে। লেট মি ইন্ট্রোডিউস……

হঠাৎ আমাদের থেকে বেশ কিছু দূরে পিয়ানোর শব্দ। শব্দটা আমার পেছনে। আমি পিছন ফিইরা দেখলাম একটা মঞ্চের মতো বানানো হইসে। আসার সময় খেয়াল করি নাই। সেখানে একটা পিয়ানো রাখা। আমাদের দিকে উল্টো মুখ কইরা একটা ছেলে পিয়ানো বাজাইতেসে। সাদা শার্ট আর হালকা নীল জিন্স পরা। দুইটা স্পটলাইট তার মাথার উপর জ্বলতেসে। সে ‘A Thousand Years’ গানটার সুর তুলল। কিছুক্ষণ বাজিয়ে গলা ছেড়ে দিল। বেশ ভালোই গাইতেসে। আমার বেশ ভালো লাগতেসে। পরিবেশটার সাথে গানটা যেন মিশে গেল। কেন জানি খারাপ হইয়া গেল মনটা। চেরি ফলের কথা মনে পড়তেসে খুব। কবে পিছু ছাড়বে ওর স্মৃতি!!!!!!

♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪
Heart beats fast colours and promises
How to be brave?
How can I love when I’m afraid to fall?
But watching you stand alone
All of my doubt suddenly goes away somehow.

One step closer
I have died everyday waiting for you
Darling don’t be afraid
I have loved you for a thousand years
I’ll love you for a thousand more

Time stands still beauty in all she is
I will be brave
I will not be anything take away
What’s standing in front of me
Every breath
Every hours has come to this

One step closer
I have died everyday waiting for you
Darling don’t be afraid
I have loved you for a thousand years
I’ll love you for a thousand more

All alnoe I believe I would find you
Time has brought your heart to me
I have loved you for a thousand years
I’ll love you for a thousand more

One step closer ……
♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪

হঠাৎ দেখলাম গানের মাঝে ছেলেটা পিয়ানো ছেড়ে উইঠা আসল। আরেকজন লোক এসে পিয়ানো বাজানোর দায়িত্ব নিল। ছেলেটার মুখে একটা মুখোশ স্পটলাইটের আলোয় জ্বলজ্বল করতেসে। তাই চেনা যাইতেসে না। সে গান গাইতে গাইতে আমার দিকে এগিয়ে আসলো। আমি তারে দেইখা চমকে উঠলাম। ছেলেটার পরনে আমার চেরি ফলের শার্ট যেটা আমি এতদিন যত্ন কইরা আলমারিতে লুকাই রাখছিলাম। ছেলেটা গান শেষ হতেই আমার সামনে হাঁটু গেড়ে একগুচ্ছ গোলাপ ধরে বলল, হ্যাপি বার্থ ডে, ছোঁয়া। আমি তারদিকে তাকাই আছি আর সে আমার দিকে। বারোটা বাইজা গেসে। সবাই আমার একসাথে উইশ করলো। আমার সেদিকে খেয়াল নাই। এখন মাথায় শুধু একটা জিনিস ঘুরতেসে এই ছেলে শার্টটা পাইলো কোথায় থেইকা। কারন বুক পকেটে ফুলগুলা আন্টি নিজের হাতে সেলাই করছিলো। আমাকে একদিন বলছিল। এই শার্ট দ্বিতীয় কারো হইতে পারে না। কে এই ছেলে? আমি কাঁপা কাঁপা হাতে ছেলেটার মুখের মুখোশটা খুইলা নিলাম। সাথে সাথে একটা বড়োসড়ো ধাক্কা খাইলাম। দুই পা পিছনে সইরা গেলাম। ও আমার দিকে তাকাই হেসে বলল, কেমন আছো, গাজরের হালুয়া? চে… চে… চেরি ফল!!!!!!!!!!! আমি কখনো কল্পনাতেও ভাবি নাই এমন কিছু। আমি দুই হাত দিয়া মুখ চাইপা ধরলাম। কেউ কিছু বলার আগেই দৌঁড়ে চইলা আসলাম বাংলোয়। প্রথম চোখের ফোঁটাটা না হয় গোপন থাক।

আমি দরজা বন্ধ কইরা দরজার পাশে বইসা আছি। টপটপ কইরা চোখের পানি পইড়া বুকের কাছের শাড়ির অংশটা ভিইজা গেসে। চিবুকের কাছে ফোঁটাগুলো হাত দিয়া ধইরা রাখা বোতামটায় পড়তেসে। আমি মনে মনে বলতে লাগলাম, হঠাৎ এতদিন পরে কেন? কেন আবার আমার সাজানো জগতটাকে এলোমেলো করতে ফেরত এসেছে? আমি তো সবাইকে আঁকড়ে ধরে বেশ ভালো আছি। তোমাকে আঁকড়ে আমি কষ্ট ছাড়া কিছু পাইনি। তাহলে কেন ফিরে আসতে চাইছো আমার জীবনে? আমি দরজার পাশে বইসা মুখ ঢাইকা কাঁদতে লাগলাম। দরজা ওপাশে হঠাৎ ওর ডাক শোনা গেল। দরজায় ধাক্কা মাইরা বলল, ছোঁয়া, দরজা খোলো। দেখো, আমি ফিরে এসেছি। তুমি দরজা খুলবে না? তোমার চেরি ফলকে দেখবে না? ছোঁয়া… প্লিজ দরজা খোলো। ওর গলার স্বরে আমার আরো কান্না পাইতেসে। চোখের পানি ঝর্ণার মতো গলগল কইরা বাইর হইতেসে। ও বলল, ছোঁয়া, তুমি যতক্ষণ দরজা খুলবে না আমি কিন্তু এখানেই দরজার পাশে বসে থাকবো। ও বইসা পড়ল। আমি নিজেকে না বুঝাইতে পারতেসি না থামাইতে পারতেসি। এতদিন কি চাঁদনির সাথে থাইকা সাধ মিটে নাই? আজ আমার কাছে ফেরত আসছে? আমি দরজার এই পাশে আর ও ওই পাশে। মাঝে যেন শত যোজন দূরত্ব!!!
.
.
.
.
চোখ খুইলা দেখি সূর্যের আলো মেঝেতে মহা আনন্দে নাচানাচি করতেসে। কালকে কাঁদতে কাঁদতে কখন যে ফ্লোরে ঘুমাই পড়সি টের পাই নাই। হঠাৎ মনে পড়ল চেরিফল বলছিল যতক্ষণ আমি দরজা খুলমু না ও দরজার ঐপাশে বইসা থাকবে। সত্যিই এখনো বইসা আছে নাকি! আমি সাবধানে দরজা খুইলা উঁকি দিলাম। তাকাই আমি বেকুব হই গেলাম। দেখি কেউ নাই। এ্যাঁহ্, সিনেমার ডায়ালগ মারসে কালকে। আমিও গাধার মতো ভাবছি এখনো বইসা আছে। দরজা মারতে গিয়া এক টুকরা কাগজের দিকে চোখ পড়ল। কাগজটা নিয়া দেখলাম লেখা, আমি ওয়াশরুম গেলাম। পইড়া আমার মাথাটা খারাপ হইল, এই বেক্কলে চিঠিও লেইখা গেসে যে সে ওয়াশরুম যাইতেসে। আর কি কইতাম! বিয়ার পরে তো বৌয়ের থেইকা ওয়াশরুম যাওয়ারও অনুমতি লাগবো তার। আমি কি তার বউ হওয়ার কথা ভাবতেসি নাকি!? এটা সম্ভব না। ভাইবা মন খারাপ হইয়া গেল। আমি আবার দরজা মাইরা ফ্রেশ হইয়া নিলাম।

জানালার কাছে দাঁড়াইতেই মনটা একেবারে ফুরফুরে হইয়া গেল। রুমটা থেকে সাগর দেখা যায়। কি সুন্দর সাগরের ঢেউ আইসা আছড়ে পড়তেসে পাড়ে। আমার তো দেইখা খুশিতে নাচতে মন চাইতেসে। দাঁড়া, আজকে সাগরে গোসল করমু। আমি দরজা খুইলা গুনগুন করতে করতে নিচে নামলাম। নাস্তার টেবিলের দিকে তাকাইতেই মুখ কালো হইয়া গেল। চেরি ফল আমার দিকে তাকাই ভেটকাইতেসে। ইচ্ছা করতেসে ভেটকি মাছটারে ধইরা লবণ মরিচ দিয়া মাইখা তেলে ভাজি কইরা খাই। আমি মুনের পাশে গিয়া বসলাম। ওর খানা দেইখা কইলাম, এমন করে খাইতেছিস কেন? জন্মে জেলি পাউরুটি খাস নাই? মুন আমার দিকে তাকাই মুখ সুচালো কইরা কইল, একদম এমন বলবি না। কালকে তো দরজা মাইরা সেই লেভেলের নাক ডাইকা ঘুম দিসো। আমারে তো ঘুমাইতেই দিলি না রুমে। আমি প্রতিবাদ কইরা কইলাম, আমি মোটেও নাক ডাকি না। আমিও একটা পাউরুটিতে জেলী মাখতে লাগলাম। হঠাৎ দেখি চেরিফল আমার দিকে তাকাই আছে। আমি মুখ হাতে ভর দিয়া পাউরুটি কামড়াইতেসি আর ভাবতেসি, এভাবে তাকাই আছে কেন? জীবনে কোনোদিন পেত্নী দ্যাখে নাই? আমি আরেক পিস পাউরুটিতে জেলী মাইখা চেরির দিকে আগাইয়া দিলাম। সে সুন্দর কইরা আমার হাত থেইকা কাইড়া নিয়া ওটা বাইচ্চা ইন্দুরের মতো কচকচ কইরা খাইয়া ফেলল। তারপর আবার তাকাইলো আমার দিকে। আমি আরেকটা পাউরুটি দিতে সে ওটাও খাইয়া তাকাই রইলো। আমি আর খাইতে পারলাম না। বেচারার মনে হয় বেশি খিদা লাগসে। আমি একটা প্লেটে দশটা পাউরুটি আর জেলীর বোতলটা ওর সামনে রাইখা কইলাম, এত খিদা লাগসে যখন বেশি কইরা খান। অন্যের দিকে তাকাই পেটেব্যাথা তুলানোর দরকার নাই। আমি যাইতে লাগলে সে আমার হাত ধইরা বলল, জেলী লাগাই দাও না হলে পেট ভরবে না। এ্যাঁহ্, শখ কতো! যেন আমি তার বউ। ভালবাইসা জেলী লাগাই দিমু আর উনি বইসা বইসা গিলবো। আমি কাছে আইসা বললাম, হাত ছাড়েন, জেলী লাগাই দিতেসি। সে হাত ছাড়লো ওমনি আমি ফুরুত কইরা দৌঁড় দিলাম। সে আর ধরার সুযোগ পাইলো না। যাওয়ার আগে তার দিকে ফিইরা একটা ভেংচি কাটলাম। বেশি করলে তারেই জেলী লাগাইয়া কস কস কইরা খামু। হুহ্।

আমি রুমে বইসা দু’ঘন্টা ধরে কোঁকাইতেসি। খিদা লাগসে। সকালে নাস্তায় গাজর না খাইলে আমার প্রচুর খিদা পায়। কি করি? এটা তো আর নিজের বাড়ি না যে যাইয়া ফ্রিজ থেইকা গাজর নিয়া আসমু। মুন বেটিটাও সেই সকাল থেইকা হাওয়া। নাস্তার টেবিলে যে দেখসি আর কোনো পাত্তা নাই। নিশ্চয়ই হবু বরের লগে ঘুরতে গেসে। যাবেই তো। এখন তো আর বোইনরে চিনবে না। আমি আর সহ্য করতে পারতেসি না। নাহ্, আমারে কালা চোর হওয়া লাগবো।

আমি আস্তে কইরা দরজা খুইলা বাইর হইলাম। উঁকি মাইরা দেখলাম কেউ নাই। মনে হইল কোনো কাকপক্ষীও বাড়িতে নাই। ভালো হইসে। আমি নাইমা ফ্রিজের কাছে চইলা গেলাম। খুইলাই দেখি ফ্রিজে থাকা গাজরগুলা আমার সাথে অভিমান কইরা বলতেসে, তোমার এতক্ষণে আসার সময় হইল? আমরা সেই কতক্ষণ ধইরা ওয়েট করতেসি। আমি মনে মনে কইলাম, না, সোনারা। রাগ করে না। এই তো আমি এসে গেছি। আমি মোটা দেইখা গাজর নিয়ে সবে মাত্র একটা কামড় দিয়া পিছন ফিরসি, সাথে সাথে ভয় পাইয়া একটা চিক্কুর দিলাম। আল্লাহ গো! একটা খাম্বা থুক্কু চেরি ফল আমার দিকে চোখ বাঁকা কইরা তাকাই আছে। আমি কি কমু বুঝতেসি না। ধরা খাওয়া চোরের মতো এদিক ওদিক তাকাইতেসি। সে জিগাইল, কি করছো এখানে? আমি আমতা আমতা কইরা বললাম, কি…কি…কিছু না তো। আ…আমি যাই। আমি চইলা যাইতে ছিলাম। সে আমার গাজর ধরা হাতটা টাইনা ফ্রিজের সাথে চাইপা ধরল। আমি আইটকা গেলাম। আমি অসহায়ের মতো গাজরের দিকে তাকাইতেসি আর গাজর আমার দিকে। তোরে খাইতে আইসা কি বিপদেই না পড়লাম। হঠাৎ সে আমার গাজরে ভাগ বসাইলো। আমার কামড়ানো অংশে একটা কামড় বসাইয়া কইল, আচ্ছা, এই জায়গাটা এতো মিষ্টি কেন? চিনিতে ঢুবিয়েছো নাকি? আমি তো লজ্জায় কই লুকামু বুঝতেসি না। বেটা, ছয় বছর বিদেশে থাইকা ইয়ে হই আসছে। আমি সরমে মুখ তুলতে পারতেসি না। সে তো হাতটা ছাড়ার নামই নিতেসে না। সে আমার কাছে এগুতেই আমি পিছিয়ে ফ্রিজের সাথে মিইশা গেলাম। হায় হায় আর যাওয়ার জায়গা নাই। পারতেসি না ফ্রিজের ভেতর ঢুইকা যাইতে। সে আমার বাম কানের কাছে এসে বলল, তোমার গায়ের গন্ধটা আগের থেকেও মিষ্টি লাগছে। কি ব্যবহার করো বলতো? আমি আর দাঁড়াইতে পারতেসি না। খালি মাটিটা ফাঁক হওয়া বাকি। হঠাৎ সে হাতটা ছাইড়া দিল। আমি সাথে সাথে এক দৌঁড়ে রুমে। সেই ছয় বছর আগের ব্যাঙটা আবার ফেরত চইলা আসছে বুকের ভেতর। আইসাই তিরিং বিরিং লাফাইতেসে। গাজররে!!! Crush is coming back……
চলবে…

#আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা♥
#পর্ব_২০

সেই ছয় বছর আগের ব্যাঙটা আবার ফেরত চইলা আসছে বুকের ভেতর। আইসাই তিরিং বিরিং লাফাইতেসে। গাজররে!!! Crush is coming back……
.
.
.
.
প্রত্যেক বছর আব্বা আম্মাকে এই দিনে একবার দেইখা আসি। আজকে যাইতে পারতেসি না। ইচ্ছা করতেসে ছুইটা যাই। আসতে ইচ্ছা করতেছিলো না কিন্তু মিষ্টি খালার কথা ফেলতে পারি নাই। এখন মন খারাপ হইতেসে। আব্বা আম্মা আমার ভীষণ অভিমানী। নিশ্চয়ই আমার পথ চেয়ে বইসা আছে। আমি মন খারাপ কইরা সাগর পাড়ে হাঁটতেসি। বাপ রে!!!!! কত মানুষ!!!!! একটু শান্তি কইরা কোথাও বসমু তার উপায় নাই। আমি ভেজা বালিতে হাঁটতেসি। একটু পর পর সাগরের পানি পায়ে এসে আছড়ে পড়তেসে। সে এক অন্য ভালো লাগা। আমি ব্যাপারটা উপভোগ করতেসি এমন সময় মনে হইল কেউ আমারে ফলো করতেসে। আমি শিউর হওয়ার জন্য সাগর ছাইড়া পাহাড়ের দিকে রওনা দিলাম। দুইটা পাও আমার সাথে রওনা দিল। আমি বুঝতে পারতেসি কিন্তু দেখতে পাইতেসি না। দাঁড়া ব্যাটারে হাতে নাতে ধরমু। আমি পাহাড়ে উঠা শুরু করলাম। সেও ওঠা শুরু করল। একটা সময় আমি দ্রুত উইঠা লুকাই পড়লাম। পা দুইটা আমারে খুঁজতেসে আর আমি লুকাই মিটিমিটি চিনা হাসি দিয়া বলতেসি এইবার বাছাধন যাইবা কই? তুমি চলো পিছে পিছে, আমি চলি লুকাই লুকাই।

আমি যেখানটাই লুকাইসি সেই জায়গাটা বিপদজনক। একটু থেকে একটু হইলেই খাঁড়া গর্তে। আমি যখনই ধরতে যামু হঠাৎ পা পিছলাই গেল। পড়তে লাগছিলাম গর্তে। কিন্তু একটা হাত পড়তে দিল না। টান দিয়া আমারে বুকের সাথে মিশাই ফেলল। আমারে জড়াই ধইরা আছে তো আছেই। ছাড়ে না ক্যান? গায়ের পারফিউমটা চেনা চেনা লাগতেসে। আরে, আজকে সকালেই তো চেরি ফল যখন আমার কাছে আসছিল তখন এই গন্ধটা নাকে লাগছিল। তাহলে এটা চেরি ফল? কেমন একটা মাতাল করা গন্ধ। সেই ছয় বছর আগে এই মাতাল করা গন্ধে আমি ঘায়েল হই গেসিলাম। আজ আবার হইলাম। না না… এ কি করতেছিস ছোঁয়া!? ঘায়েল হইলে হবে না। এখন রিভেঞ্জ টাইম। আমি ধাক্কা দিয়া তারে সরাই দিলাম। কইলাম, এভাবে জড়িয়ে ধরে আছো কেন? নিঃশ্বাস বন্ধ করিয়ে মেরে ফেলবে নাকি? চেরি আমার দিকে আগাইতে লাগল, আমি তো ভয়ে শ্যাষ। পেছনে গর্ত, সামনে চেরি। কোন দিকে যাই। সে আচমকা আমারে টাইনা হাঁটা ধরল। যাইতে যাইতে কইল, গর্তে পড়ে মরার শখ হয়েছে, তাই না? আমি মুখ ভার কইরা কইলাম, আপনি আমার পিছু নিসেন কেন? নইলে তো আমি এদিকে আসতামই না।

– আমি পিছু না নিলে তো গর্তে পড়ে ঘাড় বাঁকা হয়ে থাকতে এতক্ষণে।

আমি আর কিসু কইলাম না। সে আমারে হাত ধইরা সোজা বাংলোতে নিয়া আসলো। আজকে আমার সমুদ্র স্নান একেবারে মাটি।
.
.
.
.
আমি বিছানায় গড়াগড়ি যাইতেসি আর ভাবতেসি সবাই এত স্বার্থপর ক্যান? দুপুরের খাবার খাইয়া মুন আবার রেদোয়ানরে নিয়া হাওয়া হই গেসে। রেদোয়ানের বাবা মাও নাই। মিষ্টি খালা, সানজিদা আপু আর সারা সায়েমকে নিয়া ঘুরতে গেসে। যাওয়ার আগে একটু বইলাও যায় নাই। তাহলে হয়ত বাইর হইতাম। ধুর কিচ্ছু ভালা লাগের না। কালকে এত কাঁদলাম কেউ একটু দেখতেও আসে নাই। ইচ্ছা করতেসে চোখের কল ছাইড়া আবার কাঁদি। দাঁড়া, রিদিরে ফোন করি। ফোন খুঁইজা বাইর করলাম বালিশের তলা থেইকা। এই দুঃখের সময় মেয়েটারে বহুত মিস করতেসি। ডায়াল করলাম ওর নাম্বারে। প্রথমবারে ধরল না। আজকে যে সবার কি হইল!? কেউ আমারে মিস করে না। কেউ আমারে ভালোবাসে না। হঠাৎ ফোনের রিংটোন বাইজা উঠল। আমি না দেইখাই খুশিতে গদগদ হইয়া ফোন রিসিভ করে কইলাম, হ্যালো, রিদুকি বাচ্চি, কই তুই?

– রিদির বাচ্চা হল কবে?

এ্যাঁ!!!! ছেলের গলা ক্যান!? রিদি আবার ছেলে হইল কেমনে!? ফোন নামাই দেখি ভ্যাম্পায়ারের ফোন। আল্লাহ গো!!!! একদিন অফ ছিল। আজকে আবার ফোন করসে। আর ভালা লাগে না। এমনেতে মন মেজাজ ভালো নাই, তার উপর এই ব্যাটা বাটপারটা ফোন করসে। সে ওপাশ থেইকা ভাঙ্গা ট্যাপ রেকর্ডারের মতো হ্যালো হ্যালো করতেসে। ইচ্ছা করতেসে রেকর্ডারটা আছাড় মাইরা ভাইঙ্গা ফেলি। আমি ফোন কানে লাগাই বললাম, হ্যাঁ শুনছি।

– ব্যস্ত থাকায় ফোন করতে পারি নি। কেমন আছো?

– ভালো ছিলাম। এখন নেই। (মনে মনে) আরও ব্যস্ত থাক। তাইলে একটু রেহাই পামু। এই ছয় বছরে তো আমার পিছে কত সময় ব্যয় করো নাই।

– কেন?

– সেটা জেনে আপনি কি করবেন?

– জানলে বউকে একটু সঙ্গ দিতাম।

ভ্যাম্পায়ার ব্যাটা, সামনে থাকলে তোরে বেল কইরা সেখানে ডুগডুগি বাজাইতাম। একবার শুধু হাতের কাছে পাই। আমারে বউ করার সাধ জন্মের মতো ঘুইচ্চা যাইতো।

– কি হল? কথা বলছো না যে?

– আমার কিছু বলার নেই। আপনার আর কিছু বলার আছে?

– হুম।

– বলে ফেলেন। আমি ব্যস্ত।

– ভালোবাসি। লাভ ইউ, লাভ ইউ, লাভ ইউ…

তোর লেবু তোর কাছে রাখ। আমি কিনমু না। এমনিতে তোর চুকা লেবুর জ্বালায় আমার দাঁত কিড়মিড় করতেসে। আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেইলা ফোনটা কাইটা বিছানায় ছুইড়া রাখলাম। বিছানায় চিৎ হইয়া শুয়ে গেলাম। আগে আমি চেরির পিছে ঘুরতাম আর এখন ভ্যাম্পায়ারটা আমার পিছে ঘুরে। হায়রে দুনিয়া! সবাইরে লাভ ট্রায়াঙ্গেলে ফালাইয়া কি যে মজা পাও কে জানে।

আবার ফোন বাইজা উঠল। এবার আর রিস্ক নিলাম না। ফোনটা হাতে নিয়া তাকাই দেখলাম রিদি ফোন করসে। আমি রিসিভ করতেই শুনলাম ও নাক টাইনা বলতেসে, হ্যালো…।

– কিরে!? কাঁদিস ক্যান?

– আরে ঝালে নাক দিয়ে পানি পড়ছে।

– অ।

– কেন ফোন দিয়েছিস?

– তোর সাথে কতদিন কথা হয় নাই। তাই ভাবলাম একটু কথা কই।

– তাই? লাস্ট কবে কথা হয়েছে?

আমি অনেক ভাইবা দেয়াল ঘড়ি দেইখা কইলাম, একদিন সাত ঘন্টা সাইত্রিশ মিনিট পনের সেকেন্ড …… ও আমারে থামাইয়া কইল, তোর ঘন্টা মিনিট কে চায়? কি হইসে বল তো? আমি কাঁদো কাঁদো গলায় ইমোশান ঢাইলা বললাম, সবাই আমারে ফেলে ঘুরতে গেসে। আমি একলা বাসিন্দা ঘরে পইড়া আছি।

– তোকে কি শিকল পরাই গেছে?

– এহ্, শিকল পরাইতে যাবে ক্যান?

– তাহলে তুইও ঘুরে আয়।

– একলা ঘুরতে মন চাইছে না। তুই কি করিস?

– বি এফের সাথে বের হয়েছি। ফুসকা খাচ্ছি। আচ্ছা এখন রাখি। বাইরে থেকে ঘুরে আয়। বাই।

– এই……হ্যালো……টুট টুট…… রিদুকি বাচ্চি……সামনে পেলে তোর বফরে আমি আচ্ছা মতো কেলাইতাম। হায়রে……একজন ঘুরে বর নিয়া ঘুরতে যায় আরেকজন বি এফ নিয়া ফুসকা খাইয়া নাক টানে। মাঝে আমি বেকার মানুষ।

এমন সময় দরজা নক করল কেউ। আমি জিগাইলাম, কে? উত্তর নাই। বিছানা ছাইড়া উঠতে ইচ্ছা করতেসে না। কে যে আইলো। ধুর। গিয়া দরজা খুইলা দেখি আমার এক্স মানে চেরি ফল দাঁড়াই দাঁড়াই হাসতেছে। আমি জিগাইলাম, কোনো দরকার? সে একই ভাবে হাঁস ছাইড়া কইল, হুম। তোমাকে। আমি শুইনা ঢোক গিললাম। বাড়িতে কেউ নাই। এখন উল্টাপাল্টা কিসু কইরা বসলে! শুনসি বিদেশে নাকি এসব কমন ব্যাপার। সকালে যেভাবে টিজ করসে…… যদি ওইসব কিছু শিইখা আসে তো…… ও আমার অতি রঞ্জিত ভাবনায় ছেদ ঘটাইয়া বলল, কি ভাবছো? আমি আমতা আমতা করে কইলাম, ইয়ে মানে…। ও বলল, আরে বাবা, রুমে একলা ভালো লাগছে না। তাই ভাবলাম তোমাকে বলি। চল, বের হবো।

যামু না। তখন আমার সমুদ্র স্নান মাটি কইরা এখন বলতেসে ঘুরতে যাবে। আমি মুখে হাসি টাইনা বললাম, আমি একটু ব্যস্ত। আরেক সময়। বইলাই দরজা মাইরা দিলাম। দরজা মাইরা নিজের চুল টানতে লাগলাম। কি করলাম ইডা আমি! এতদিন যারে নিয়া খালি ভাবতেসি আজকে তারসাথে বাইর হওয়ার সুযোগটা নিজের হাতে বন্ধ কইরা দিসি। আবার যামু? না না, মান সম্মান বইলা একটা জিনিস আছে। থাক। আরেকবার ডাকলে তখন রাজি হইয়া যামু। আমি অপেক্ষা করতেসি ডাক শোনার। সে তো আর ডাকে না। চইলা গেল নাকি! আমি দরজা খুইলা উঁকি দিয়া দেখি কেউ নাই। সবাই আমারে একলা রাইখা চইলা গেসে। আমি নাক টানতে টানতে বাইর হইলাম। সাগরের দিকে রওনা দিলাম আর মাথা চাপড়াইতে চাপড়াইতে কইলাম, ছোঁয়া তোরে দিয়া কিচ্ছু হইব না।
.
.
.
.
আমি মুখ গোমড়া কইরা দাঁড়াই আছি মাইক্রোর পাশে। সবাই তাদের বোঁচকা বুঁচকি গাড়িতে তুলতে ব্যস্ত। আমারটা সবার আগে তুইলা দিসি। আমি দাঁড়াই আছি, আমার গোমড়া মুখের কারণ আমার দিকে মুচকি হাইসা তাকাই আছে। আজকে কতো শখ কইরা সাগর পাড়ে গেসিলাম বিকালে। পিসলা খাইয়া পড়তাম সাগরে তখন আইসা হিরোর মতো ধরল চেরিটা। আমি একটু লজ্জায় লাল হইয়া অভিমানের সুরে কইলাম, আমাকে ধরসো কেন? সাথে সাথে ছাইড়া দিলো একগাদা পানিতে!? একটু মায়াও দেখাইলো না। গোসলের পানি এখনো আমার চুল থেকে পড়তেসে। একেবারে ভালো কইরা সমুদ্র স্নান করাই দিসে। এখন ভেটকাইতেসে দাঁড়াই দাঁড়াই। চেরি রে!!!!! দাঁড়া একবার পাই, তোরে কাইটা লবন মরিচ দিয়া খামু। আচ্ছা চেরি ফল তো মিষ্টি, লবন মরিচ কি লাগবে? আমি ভাবতেসি, মুন এসে কইল, এতো কি ভাবিস বল তো? উঠ। আমি নাকি নাকি গলায় বললাম, আমার পেছনে বসলে বমি পায়। আমি সামনে বসবো। মুন সাফ জানাই দিল সব সিট ব্লক। বলল, তোকে পেছনের সিটেই বসতে হবে। বমি পেলে সমস্যা নাই৷ পেছনের পুরা সিট খালি। তুই শুয়ে বসে ইচ্ছা মতো বমি কতে পারবি। ধর পলিথিন। ও আমারে এক প্যাকেট পলিথিন ধরাই দিল। এই পৃথিবী নিষ্ঠুর!!!!! আমি মনের দুঃখে পেছনের সিটে যাই লম্বা হই শুয়ে পড়লাম। সামনের সিটে রেদোয়ানের মা, মিষ্টি খালা আর সানজিদা আপু। মাঝের ডান সিটে সারা সায়েম আর বাম সিটে রেদোয়ান মুন। আমি মাত্র চোখটা বন্ধ করসি হঠাৎ চেরি ফল এসে বলল, এযে গাজরের হালুয়া। হালুয়ার মতো ছড়িয়ে না থেকে জায়গা দাও। আমি পিট পিট কইরা ওর দিকে তাকাইতেই বলল, নিজে জায়গা দিবে না জোর করে নিবো? ইস্ রে!!!! ক্যান যে বিদেশ থেকে আইলো। তাইলে একটা লম্বা ঘুম দিতে পারতাম শুয়ে শুয়ে। আমি উঠে ডান পাশে জানালার কাছে চইলা গেলাম। চেরি বাম জানালার কাছে গিয়ে বসল। রেদোয়ানের বাবা ড্রাইভারের পাশের সিট থেকে বললেন, এসি ছাড়বো না জানালা খোলা রাখবে? আমি পিছন থেকে বললাম, আঙ্কেল জানালা খোলা থাক। গাড়ি চলতে শুরু করল। এই সন্ধ্যেবেলায় গোসল করায় শরীরটা কেমন হালকা লাগতেসে। ঘুমও পাইতেসে। বাইরে অন্ধকার। জানালার কাচে মাথা রেখে চোখ বুজতেই কখন ঘুমাই গেলাম টের পাইলাম না।

সকালে চোখ মেইলা দেখি আমি বিছানায় শুয়ে আছি। মাথাটা কারো বুকে। সে আমাকে জাপটে ধইরা আছে। আমি পিট পিট কইরা তার দিকে তাকাইলাম। সেও পিট পিট কইরা আমার দিকে তাকাইলো। তারপর যেই না চিক্কুর দিমু ওমনি সে আমার মুখ চেপে ধরে বলল, শসসসসসস্।
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here