ওগো_মনোহারিণী ( #রৌদ্র_মেঘের_আলাপন ) [৪] #তাসলিমা_নাসরিন

0
830

#ওগো_মনোহারিণী ( #রৌদ্র_মেঘের_আলাপন ) [৪]
#তাসলিমা_নাসরিন

— কাল নাকি আমার বিয়ে ! কোনোদিন তো তোদের ছাড়া কিছুই করিনি তাই প্লিজ কালকে তোরা তিনজনেই আমার বিয়েতে আসসিস প্লিজ ! ”

গ্রুপ কলে কথা বলছিলাম আমার বিয়ের ব্যাপারে অরন্য,অর্পিতার সাথে। একটু আগের ঘটে যাওয়া ঘটনার কথা বললাম তাদের।

*ঘটমান অতীত*

— কাল তোকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে মা। রেডি থাকিস ! ”

মায়ের কথাটা শুনে খানিকক্ষণ থম মেরে বসেছিলাম। যার বউ হওয়ার সপ্ন দেখতাম রোজ তার বদলে অন্য কাউকে নাকি অন্য কারোর বউ হতে হবে আমার। হে আল্লাহ ! এই মরণযন্ত্রনা দেওয়ার আগে কেনো আমার মৃত্যু দিলে না ? কেনো ? ”

প্রথমে তো ভেবেছিলাম ওই নিকৃষ্ট মানুষ টাকে ছাড়া আমি দিব্যি থাকতে পারবো , পেরেওছিলাম। কিন্তু তার জায়গায় অন্য কাউকে কল্পনা করাটা আমার জন্য পানির নিচে শ্বাস নেওয়ার মতো। কি করবো আমি ? আল্লাহ আমার সহায় হও !

মা আবারো বলে উঠেছিলো –

— মা রে। ওত দেখাশুনা করতে চাইনা, তাই তোর বাবা এই পাত্রকেই ফিক্সড করেছেন। তুই অমত জানাস না। আর আমি তো জানি তোর অন্য কোথাও পছন্দ নেই। যদিও তুই বলেছিলিস যে তোর জবের পর বিয়ে করবি সেটা আমি আর তোর বাবাও মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু হুট করে তোর বাবার যে কি এমন হলো ? সে যাইহোক মা তুই কাল রাত্রিবেলা রেডি থাকিস। ”

অবাক হয়ে মায়ের পানে তাকিয়েছিলাম। অন্য জায়গায় বউ দেখতে আসে বিকালবেলা আর আমাকে কিনা রাতে? তাই কৌতুহল দমিয়ে রাখতে না পেরে মা কে বলেই ফেললাম-

— রাতে কেনো মা ? ”

— আমি তো আগেই বলেছি মা যে পাত্রপক্ষ ফিক্সড করা, তাই ওদের তোর পছন্দ হলে বিয়ে করিয়ে তাদের কাছেই নিয়ে যাবে। ”

অবাক হলাম খানিক আর মাকে নিজের অজান্তেই জড়িয়ে ধরলাম। মা বলতে লাগলো –

— জানি মা! এখন বলবি যে কেনো আমি এইসব করছি, আমার কি একটুও কষ্ট হচ্ছে না ? মা রে মায়েদের কষ্ট সহ্য করতে হয়, বুলি ফুটাতে নেই রে আমাদের। আর তোর বাবা বলেছে এতে তোর সেইফটি আরো বেশি হবে।”

— মা! ”

— কি মা ! ”

— যেখানে তোমরা আছো সেখানে আমার সেইফটির দরকার নেই। ”

— আবেগ দিয়ে জীবন চলে না মা। ”

— আমি কি একবারো বলেছি যে আমার সেইফটি লাগবে ? ”

— জানি বলিস নি। কিন্তু আজ হোক কাল হোক পরের ঘরে যেতেই হবে, তাই,,,! ”

— সেখানে আমার সেইফটি থাকবে সেটা কীভাবে এনশিউর হচ্ছো মা ?”

— ওমা ! জানিস না বুঝি ? ”

— বুঝিয়ে বলো ! ”

— তাহলে শোন, মেয়েরা হচ্ছে বাবা-মায়ের এক দায়িত্ব। নির্দিষ্ট সময় পর সেই দায়িত্ব থাকে স্বামীর উপর। মেয়েদের স্বামী-ই সব। একমাত্র স্বামী-ই তার স্ত্রী কে নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে প্রটেক্ট করতে পারে, যেটা তার বাবা-মায়ের দ্বারাও সম্ভব নয়। ”

— আচ্ছা বুঝলাম। ”

— এইতো আমার লক্ষী মেয়ে। ”

— হুম । ” ( এই বলে মায়ের কোমড় ছাড়লাম )

— খাবার রেডি করছি তাড়াতাড়ি আয় !”

এই বলে মা উঠে দাড়ালো বাইরে যাবার উদ্দেশ্যে। বাবা এখনো ফেরেনি। তাই বাবাকে কল দিয়ে বললাম আর বাবা বললো সে আসছে। সত্যি বলতে বাবাকে ছাড়া কখনো খাবার মুখে নিই নি, পুরোনো অভ্যাস রয়ে গিয়েছে। ফোস করে শ্বাস ফেলে ফোন চার্জে লাগিয়ে গেলাম বাহিরে।

মায়ের সাথে হাতে হাতে কাজ করতে করতে দরজায় কড়া নাড়লো কেউ। আমি উঠতে গিয়েও গেলাম না। মা উঠে গেলো! দরজা খুলে দেখলো বাহিরে বাবা আর একজন অপরিচিত লোক এসেছে।

বাবা সচরাচর বাড়িতে অপরিচিত কাউকে আনে না। কিন্তু আজ এনেছে মানে নিশ্চিত কোনো কাজ আছে। তাই আমি আর সেদিক গেলাম না। কারন অপরিচিত দের সামনে আমি খুব কমই যাই। মা এসে বললো যে আমাদের সাথে তিনিও নাকি রাতের খাবার খাবেন।

তাই আরো একটা প্লেট নিয়ে মায়ের হাতে তুলে দিলাম। মা ওখানে পাটি বিছিয়ে সব নিলো বাকী রইলো পানি তাই আমি নিয়ে যাচ্ছিলাম, তখনিই মনে পড়লো বাহিরে তো অন্য লোক আছে, তাই মাথায় কাপড় টেনে পানির জগ নিয়ে গেলাম সেখানে।

মেঝেতে তাকিয়ে বাবাকে আর অজ্ঞাত লোক কে দেখতে পেলাম। আমি অজ্ঞাত লোকটির উদ্দেশ্যে সালাম জানালাম, কারন এটা আমার বাবার আদর্শ। খাওয়া শেষে বাবা আমাকে বললো তিনি লোকটিকে এগিয়ে দিতে যাবেন। তাই বাবাও গেলো।

প্রায় আধা ঘন্টা পর বাবা বাড়ি ফিরলো। মা এসে আমাকে ডেকে গেলো। গেলাম বাবা-মায়ের রুমে। বাবার হাতে মিষ্টির হাড়ি , বাবাকে দেখে মনে হলো বাবা অনেকটা খুশি কিন্তু ঠিক কি কারনে সেটা বুঝে উঠতে পারলাম না। তাই বাবাকে জিজ্ঞাসা করতে যাবো তখনিই বাবা আমার দিকে একটা মিষ্টি তাক করে বলতে লাগলো-

— আগে মিষ্টিমুখ করে নে তারপর সুখবর দিচ্ছি। ”

এই বলে বাবা মা’কে দিয়ে নিজেও একটা খেয়ে নিলো আর আমিও বাবার কথা মতো খেয়ে নিলাম। বাবার টেবিলে রাখা পানির জগ থেকে পানি নিয়ে সেটা পান করে তাদেরকেও দিলাম। খাওয়া শেষে মা বলতে লাগলো-

— কি গো সিয়ুর বাবা ! কি হয়েছে তোমার আজ বলবে ? পাগল হয়ে গেলে নাকি ! প্রথমে কাকে রাতের খাবার খাওয়ালে আর এখন ? মিষ্টিমুখ করাচ্ছো আমাদের। তোমার এই পাগলামোতে আমি আর আমার মেয়ে পাগল হয়ে যাবো। নিজেও কিছু বলো না, আর কিছু বোঝার অবকাশ ও রাখো না। ”

পুরোদমে কথা বলে মা থামলেন। আমিও মায়ের কথায় মুখে সিরিয়াস ভাব টেনে মায়ের সাথে তাল মেলালাম। যাকে বলে সুরে সুর মেলানো। আর এর উত্তরে বাবা বললো –

— যে লোকটা এসেছিলো তিনি আর কেউ নয় , স্বয়ং! ”

এটা বলতেই বাবার ফোন টা বেজে উঠলো। বাবা আর মুখের কথাটা শেষ করতে পারলেন না। ফোনের জ্বলজ্বল করে ওঠা নাম্বার টা দেখে মুচকি হেসে ফোন নিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেলেন। নাম্বার টা সেইভ না থাকায় কে কল করলো সেটাও আমি বুঝলাম না। আমি আর মা আহাম্মকের মতো দাঁড়িয়ে রইলাম। আর একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি শুরু করলাম।

এটা কি হলো ? সত্যিই মা’কে আর আমাকে পাবনায় সিট বুক করতে হবে। আর আজকের দিনটাই কুফা। বলতেই হয় মিস্টার ধূসর চৌধুরী মানেই একটা কুফা। বেটা শয়তান , ওর অভিশাপেই আমার জীবন ত্যানাত্যানা।

(চলবে)

রি চেইক করিনি। বানানে ভুল হতে পারে আর নেট সমস্যা জন্য পোস্ট করতে খানিক সময় লাগলো। তার জন্য দুঃখিত আমি। 🤍🖤

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here