ওগো_মনোহারিণী ( #রৌদ্র_মেঘের_আলাপন ) [৯] লেখিনিতে : তাসলিমা নাসরিন

0
707

#ওগো_মনোহারিণী ( #রৌদ্র_মেঘের_আলাপন ) [৯]
লেখিনিতে : তাসলিমা নাসরিন

চোখে আটকে গেলো ডায়রিতে #মনোহারিণী নামক শব্দটি দেখে। তা দেখে ঘন ঘন শ্বাস পড়তে লাগলো আমার। কাঁপাকাঁপা হাতে সেটি হাত নিলাম। দু’টানায় ভুগলাম কারন কারোর ব্যক্তিগত জিনিস না বলে নেওয়া বা দেখা উচিত না , আরেকবার ভাবলাম তার সকল জিনিসের প্রতি আমার অধিকার আছে তাই দেখতেই পারি।

তারপর নিজের মনকে শান্ত্বনা দিয়ে ডায়রি টার প্রথম একটা পৃষ্ঠা খুললাম, তাতে সুন্দর হাতের লেখায় লেখা –

জলহীন এক মরুদ্যানে,
পেয়েছি তোমার দেখা।
গম্ভীরমুখো এক মানবের বুকে ছড়িয়েছো স্নিগ্ধতা।
বলি কি হারি এমনি ?
তুমি আমার মনোহারিণী ! আমার প্রণয়সূচনাকারী।
ভালোবাসি তোমায় #ওগো_মনোহারিণী ।

এতটুকু পড়তেই বাহিরে মায়ের গলা শুনতে পেলাম। কারোর সাথে চেঁচাচ্ছে যেনো, এইরকম লাগছে। সেইসাথে ধূসর স্যারের কন্ঠ-ও শোনা গেলো । মনে হয় যেনো এদিকেই আসছে আমাকে ডাকতে ডাকতে।

তাই তাড়াতাড়ি করে গুছিয়ে শাড়িটা নিয়ে যেই আলমারি লক করলাম তখনই উপস্থিত হলেন ধূসর স্যার । এসে আমার হাতটা শক্ত করে ধরে বলতে লাগলেন –

— চলো !”

আমার হাতটা তিনি এতো জোড়ে ধরেছেন যে ব্যাথায় ককিয়ে উঠে ” আহ ! ” সূচক শব্দ বের করলাম। আমার আর্তনাতের তোয়াক্কা না করে সে নিজের মতো করে টেনে টেনে নিচে নামালো।

তার বড় বড় কদম ফেলার সমান হলো আমার দুইটা কদম। তাই আমি অল্পতেই হাঁপিয়ে উঠলাম। নিচে গিয়ে দেখি শাশুড়ী আর তার সামনে কনে বেশে থাকা একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে যেনো ভাজা মাছটা উলটে খেতেও জানেনা।

তখনি ধূসর স্যার বলে উঠলো আমায় –

— সিয়া ? ”

— জ,,,জি ! ”

— তোমার আর আমার মধ্যে সম্পর্ক টা এই ক’দিনে ঠিক কেমন সেটা এখানে এক্সপ্লেইন করো তো ? ”

তার এমন প্রশ্নে আমি হতবিহ্বল হয়ে গেলাম। অবাক চোখে তার দিকে তাকাতেই আমি চমকে উঠলাম তার মৃদ্যু চিৎকারে।

— এতো সময় লাগে ? সামান্য একটা বিষয় এক্সপ্লেইন করতে ! ”

— আব,,,আসলে এইসব ব্যাপার এখানে উঠছে যে ? ”

— তোকে এতো ভাবতে হবে না ! রক্ষিতা রক্ষিতা’র মতো-ই থাক। ”

” রক্ষিতা ” শব্দটা কর্ণকুহর হতেই মেজাজ টা মাথায় উঠে গেলো , তার স্বভাবে আমি জাস্ট পাগল হয়ে গিয়েছি। তার এতো এতো রূপ কেনো ? কিছুক্ষন আগেই সে আমাকে বললো সে আমাকে ভালোবাসে অথচ এখন এক বাহিরের লোকের সামনে অপমান করলো রক্ষিতা বলে ।আচ্ছা ভালোবাসার মানুষ কে কি রক্ষিতা বলা যায় ? যায় না !

আমার ভাবনার মাঝেই পুনরায় আওয়াজ করে বলে উঠলো-

— সিয়া যা জিজ্ঞাসা করেছি উত্তর দে ! ”

আমি আমার শাশুড়ী’র দিকে তাকিয়ে নিলাম একপলক। তিনি আমার মাথায় হাত দিয়ে আমাকে বলতে লাগলো-

— বলে দাও মা প্লিজ ! আমার এইসব সহ্য হচ্ছেনা । ”

— কি সব মা ? কি হয়েছে ! ”

— ধূসর যেটা জিজ্ঞাসা করেছে সেটা তুমি বলো ? তারপর বলছি তোমাকে ! ”

— আসলে মা,,,!”

— বলে দাও মা ! সত্য একদিন না একদিন বেরিয়ে আসবেই তাই আজ হোক কাল আমরা জানবোই তার আগে তুমি আমাদের কে জানালে নিশ্চয়ই কোনো ক্ষতি হবেনা ! ”

শাশুড়ী মায়ের এমন মমতাময় কথায় আমি মাথাটা নিচু করে বলতে লাগলাম-

— মা আমাদের মধ্যে অন্যান্য স্বামী-স্ত্রীর মতো কুশলাদি বিনিময়ের সুযোগ টুকু নেই। নেই কোনো মিল মহব্বত আর ভালোবাসা। ”

বলা শেষ হতেই অসাবধানতা বষে চোখের কার্নিশ বেয়ে দু’ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো। তা লক্ষ্য মাত্রই মুছে নিলাম নিচে পড়ার আগে। অনেকক্ষন ধরে কান্না আটকে রাখায় হঠাৎই টুপ করে পড়ে গেলো কখন বুঝতেই পারিনি।

তখনই মা তার সামনে দাড়িয়ে থাকা বধূবেশি মানবী কে দেখিয়ে আমাকে বললো-

— সতীন মেনে নেবে তো ? ”

“সতীন” শব্দটা বারকয়েক মস্তিষ্কের নিউরনে নাড়া দিলো। শান্ত কন্ঠে বললাম –

— মানে ?

তখনই মা আমাকে বললো-

— ধূসর তোমাকে বিয়ে করে তোমার সাথে সুখী নয়। তাই ও এই মেয়েকে বিয়ে করেছে। ”

— মা ! ”

— বাস্তবতা বড়ই কঠিন মা । ”

ভাবতে লাগলাম-
সবার সামনে আমার ক্ষেত্রে খারাপ ক্যারেক্টরের রোল প্লে করে , আর আড়ালে আমাকে ভালোবাসে ! এই মানুষ টা ভালোবাসে আদ-ও ? নাকি সবটা তার কোনো চাল ? কিন্তু এটা কীভাবে সম্ভব ? বাবার কথা মতে শশুড় কিংবা ধূসর স্যার ভালো , তারা অজ্ঞাত কোনো এক কারনে আমার সাথে এইরুপ ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু তাই বলে কি আমার সতীন আনবে ঘরে ?

তখনই শাশুড়ী মা পুনরায় বললেন-

— কি ভাবছো মা ? ”

— আমার ভাগ্য ! ”

মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে চলে যেতে গেলেন। আর আমি অতি শক খেয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। আর আমার স্বামী নামক ধূসর নতুন স্ত্রীর হাত ধরে আমার সামনে থেকে গটগট করে চলে গেলেন রুমে।

মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লাম সোফায় । দু’হাতে মাথা চেপে ধরলাম। মাইগ্রেনের ব্যথা টা ক্রমশ যেনো বাড়ছেই । এতো এতো চিন্তা কেনো আমাকেই করতে হবে আল্লাহ ! আর এ কেমন মা যে নিজের ছেলের সতীন ঘরে আনা সত্ত্বেও তাকে কিছু বললো না। এতোটা শান্ত কীভাবে হতে পারে মানুষ ?

তখনি’ই আমি উঠে চললাম ধূসর স্যারের রুমে। বেমালুম ভুলে বসেছিলাম যে সে ঘরে নতুন দম্পতি রা আছে। হুশে আসলাম তখন যখন ধূসর স্যার কে মেয়েটির কপালে চুম্বন দেওয়ার সময়ে। দরজায় যে এক পা বাড়িয়েছিলাম সেটা আমি আবার উঠিয়ে নিয়ে পেছনে ফিরে আসলাম।

কোথায় যাবো আমি ? ঠিকানা কোথায় আমার ! হে আল্লাহ আমি কি কখনো মুক্তি পাবো না ? আমাকে কি কেউ আগলে নিবে না ? এসব ভাবতে ভাবতেই কোনো একটা রুমে এসে পৌছালাম। মনে হলো যেনো এ ঘরে কেউ আসেনা, কিন্তু এটা লক কেনো করেনি। আর তখনই একটা তারে বেজে পড়ে গেলাম। আর সাথে সাথে বাড়ির সব লাইট অফ হয়ে গেলো।

ঘুটঘুটে অন্ধকারে আমি হাতড়ে কিছুই পেলাম না। ফোনটা-ও ঘরে। তাই নিজেকে সামাল দিয়ে উঠে দাড়ালাম বের হবার জন্য তখনই কেউ একজন আমার কাছে দৌড়ে আসে। অবয়বটা আমার চেনা। হ্যাঁ, আমার শাশুড়ী এনি।

তিনি তড়িঘড়ি করে আমাকে বললেন-

— সিয়ু ! আমি এই দিনটা’র-ই প্রগর গুনছিলাম। অবশেষে সেই প্রহর আসলো। ”

— মানে ? মা আম,,,!”

আমাকে বলতে না দিয়ে তিনি বলে উঠলেন-

— শুনো মা ! এইবাড়ির একটা ঘর বাদে বাকি ঘরে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো আছে সেইসাথে ভয়েস কন্ট্রোলার । যার সাহায্যে এই বাড়ির প্রতিটি পদক্ষেপ অন্য পক্ষ জানতে পারে। আর,,,!”

আর কিছু বলার আগেই আমার শাশুড়ী’র গলায় থাকা লকেটের একপাশ সবুজ আলোতে জ্বলে উঠলো ! আচমকা এমনটা হওয়াতে আমি ভড়কে গেলাম। আর তখন-ই শাশুড়ী কাঠকাঠ গলায় বলতে লাগলেন-

— এখানে কি করছো মেয়ে ? ”

হঠাৎ তার এমন রুপ আর এমন চাহনী সেইসাথে কথার ধাঁচ দেখে দু’কদম পিছিয়ে গেলাম। একটু আগেই তো এই মানুষ টা আমাকে কতো কিছু বলতে চেয়েছিলো। দিব্যি বলছিলো-ও কিন্তু হঠাৎ কি এমন হলো যে তিনি এইসব বলছেন ? এই মূহুর্তে এইসব না ভেবে নিজেকে সামলে বলে উঠলাম-

— আসলে মা, হাটতে হাটতে এখানে চলে এসেছি। ”

আমার কথা শুনে মা তার চোখ দু’টো বুজে আবার খুলে ফেলে বুঝালেন যে আমি ঠিক উত্তরটা-ই দিয়েছি। তাই আমার হাত ধরে তিনি নিয়ে যেতে লাগলেন আর আগের কন্ঠে বললেন –

— এরপর যেনো এখানটা’র আশপাশেও তোমায় না দেখি ! ”

আমি উত্তরে শুধু ঘাড় নাড়ালাম। আমিতো চিন্তায় রইলাম একটু আগের ঘটে যাওয়া ঘটনা। আর তখন-ই রুমের সব লাইট জ্বলে উঠলো ! যা দেখে আমার আশ্চর্যের সীমা রইলো না।

কারন আমার পায়ে তারটা যেভাবে বেজে গিয়েছিলো সেটা ইলেক্ট্রিক ম্যান ছাড়া সাড়ানো সম্ভব হতো না। কারন আমি নিজেই এই বিষয়ে পড়াশোনা করছি। তাহলে এতো অল্প সময়ে কীভাবে কি হলো !? ব্যাপারটা দেখতে হচ্ছে তো !

কিন্তু মা তো বললো বাড়িতে সিসিটিভি ক্যামেরা আছে সেইসাথে ভয়েস কন্ট্রোলার। কিন্তু এমন একটা ঘর আছে যেটায় লাগানো নেই। আমাকে খুঁজে বের করতেই হবে। আর শাশুড়ী মায়ের সাথেও এই ব্যাপারে কথা বলা দরকার কিন্তু কিভাবে। সর্বপ্রথম তো তাকে এই বাড়ি থেকে বাইরে আনতে হবে আমাকে। কিন্তু কীভাবে?

আর মায়ের লকেটে কি-ই বা ছিলো ? যার কারনে মা নিজের কন্ঠটা পরিবর্তন করতে দু’বার ভাবলো না ! ”

(চলবে)

রিচেইক করিনি। বানানে ভুল হতে পারে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here