#ওগো_মনোহারিণী ( #রৌদ্র_মেঘের_আলাপন )[১০]
লেখনিতে : তাসলিমা নাসরিন
— ফুলসজ্জা করবো না নাকি ? ”
ধূসর স্যারের মুখে এমন কথা শুনে লজ্জায় আমার মাথাটা নুঁয়ে গেলো। এসেছিলাম ঘুমাতে কিন্তু এসে এইরূপ কথা যে শোনবো তা আমার কল্পনার বহির্ভূত ছিলো ।
— কি হলো কথা কানে যায়নি তোমার !”
— আব,,আসলে ! ”
— আসলে নকলে কিচ্ছু শুনতে চাইনা, তোমাকে আধা ঘন্টা টাইম দিলাম রুমটা ডেকোরেশন করার জন্য। আর পৃথা কে সাজিয়ে দেওয়ার জন্য আধা ঘন্টা। মোট ১ ঘন্টা টাইম পাচ্ছো তুমি। এখন বাজে রাত ১১ টা বেজে ২৩। কাজ শেষ করবে ১২ টা বেজে ২৩। গট ইট। ”
এই বলে গটগট পায়ে চললেন বাহিরে। একে তো আমার সাথে আমার বাপের বাড়ি যাবে দূর আমাকে যেতে দেওয়া হলো না আর সেখানে নিজের সতীনের বাসর আমি সাজাবো ! আর কত কি দেখাবে আল্লাহ এই জীবনে।
এইসব হবে জানলে নিজের মনে ভালোবাসা জন্মানোর আগেই মরে যেতাম। তবে ধূসর স্যার যদি ইচ্ছে করেই এইসব না থাকে তবে ফুলসজ্জা এইসব কি ? নাকি আমাকে শান্ত্বনা দেওয়া হচ্ছে ।
বাবাকে কলে সবটা জানালে তিনিও বলেন যে পরিস্থিতি এখন গরম শুধু সব মেনে চলতে। আচ্ছা বাবা কি আমাকে ধোকা দিচ্ছে ! না না , এ কি ভাবছি আমি ? তারা আমাকে নিজেদের জীবনের থেকেও ভালোবাসে তারা যে আমাকে ঠকাবে না এই বিশ্বাস টুকু আমার জন্য।
কিন্তু এই মারপ্যাচ আমি নিজেও বুঝতে পারছিনা। আর তখন-ই ঘরে অবস্থানরত মানবী আমাকে বললো-
— এই মেয়ে ? ”
— হু,হুম! বলো ! ”
— ধূসর কি বললো শোনো নি ?”
— আব,,আচ্ছা করছি ! ”
এই বলে ভাবতে লাগলাম যে ঘর সাজাতে তো দরকার অনেক কিছু কিনতি এই মূহুর্তে কি দিয়ে সাজাবো ? সময়-ও নেই যে কিনে আনবো, অর্ডার করলেও ১ ঘন্টায় তো আর হচ্ছেনা।
এতো রাতে বাগানে গেলাম। যে কিনা ভূত-প্রেত ভয় পেতো তার নাকি আজ কোনো ভয় হচ্ছেনা বরং ইচ্ছে হচ্ছে কেউ এসে তাকে মেরে ফেলুক। আর তখনি আমার কাঁধে কেউ হাত রাখলো।
এইরকম টা হওয়াতে আমি খানিকটা হকচকিয়ে গেলাম। ঝুড়ি রেখে পেছনে তাকালাম আর যাকে দেখলাম তাতে আমি আরো চমকালাম। বধূবেশী “সতিন” নামক পৃথা । চোখে একরাশ বিস্ময় নিয়ে জিজ্ঞাসু হয়ে তাকে কিছু বলতে যাবো ওমনি সে আমাকে বলতে লাগলো-
— আপু তখনকার ব্যবহারের জন্য আমি দুঃখিত। আমি জেনেশুনে তোমার সংসারে ঢুকেছি বলতে পারো,,,! ”
তার কথাটা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে বললাম-
— এখন এইসব কে,,!”
তখনি সে আবারো বলতে লাগলো-
— আপু আমার হাতে সময় বেশি নেই। আমি তোমার মনে থাকা সব প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারলেও কিছু জিনিসের উত্তর আমি দিতে পারবো। তুমি তো জানোই তোমার জন্মের পর তোমার মা তোমাকে নিজের সন্তান হিসেবে অস্বীকার করে ফেলে আসে রাস্তায় আর সেখান থেকেই কুড়িয়ে আনে তোমার মা বাবা । ”
এইটুকু শুনতেই চোখে জল এসে পড়লো। সত্যিই সেদিন বাবা-মা আমাকে এইরকম কিছুই বলেছিলো। তবে আমি আমার জন্মদাত্রী মাকে ঘৃণা করি। এসব বাদ দিয়ে পৃথার কথায় মনোযোগ দিলাম-
— তবে তুমি জেনে অবাক হবে যে তোমার বর্তমান মা বাবার কাছে বড় হয়েছো শুধুমাত্র তোমার জন্মদাত্রী মায়ের জন্য। তিনি স্বামীর ভয়ে তোমাকে অস্বীকার করেছেন পরে ফেলে এসে তার একজন গুপ্তচরের সাথে কথা বলে তোমাকে নিরাপদে ওদের কাছে দিয়ে আসেন। ”
— অস্বীকার করে এইসব করার মানে কি ? ”
— বললাম ই তো কারনটা তোমার বাবা ! ”
— আমার বাবা ? ”
— হ্যাঁ ! তোমার বাবা একজন নামকরা বিজনেসম্যান আর মা সিআইডি অফিসার ! ”
— ওয়েট ওয়েট ! তুমি এসব কি করে জানছো ? যেখানে আমি তাদের মেয়ে হয়ে এতোদিনে জানতে পারলাম না । ”
— আমি তোমার চাচাতো বোন সিয়া । আর তুমি তোমার মা-বাবার ব্যাপারে এইজন্যই জানো না কারন তোমাকে জানতে দেওয়া হয়নি। এখন বলবে যে তাহলে আমার সংসারে ঢুকেছো কেনো সব জেনেও। শোনো সিয়া এই বাড়ির প্রত্যেকটা ঘরে সিসিটিভি ক্যামেরা সেট করা আছে সেই সাথে ভয়েস কন্ট্রোলার । এটার মাধ্যমে-ই তোমার বাবা এ বাড়ির সকল কার্যাদি রক্ষণাবেক্ষণ করেন। আর সেকারনেই বাড়ির লোকেরা তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে। ”
— আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করার কারন বুঝে উঠতে পারছি না। ”
— তুমি যাতে নিজে থেকে সুইসাইড করতে পারো, আর ওরা তোমার নামে উইল করা সব সম্পত্তি পেয়ে যায় ! ”
— কিহ ! ”
— হ্যাঁ ! আর আমি জানতে পেরেছিলাম যে ধূসরের সাথে তোমার বিয়ে হয়েছে, পরে কাকিমা’র থেকে সব জেনে বুঝতে পারি যে তুমি এবাড়িতে নিরাপদ নও তাই আমি ধূসরের সাথে চিঠির মাধ্যমে কন্টাক্ট করে বউ সেজে এই বাড়িতে ঢুকেছি। এটা অবশ্য তোমার বাবার প্ল্যানেও আছে তাই তিনি আমাকে কিছু বলেন নি। ”
— আমি না কিছু বুঝতে পারছিনা ! ”
— রিলাক্স! আবার বলছি সবটা মনোযোগ দিয়ে শোনো ! ”
— হুম ! ”
— তোমার জন্মদাত্রী মা-বাবা হলেন আরাভ চৌধুরী আর মা অয়না চৌধূরী । তোমার বাবারা তিনভাই ছিলেন। তার মধ্যে একজন ছোট বেলাতেই মারা যান আর থাকেন তোমার বাবা আর আমার বাবা। হঠাৎ করে বড় বাবা মানে তোমার বাবার কি জানি হয় যে তোমার মা’কে বেবি নেওয়ার প্রেশার দেন।
কাকিমনি বাধ্য হয়েই তোমাকে নেন। কারন তার ছিলো তোমার থেকে একবছর বয়সী আরো একটা মেয়ে। তিনি কীভাবে কি করবেন তা বুঝে উঠতে পারেননি। কিন্তু প্রেগন্যান্সির ৮ মাস পর ওনি এমন এক রহস্য জানতে পারেন যে ওনি তখন-ই তোমাকে গর্ভে রাখতে চাননি। যেই রহস্য আজ অব্দি কেউ জানে না।
তিনি তার মেয়েকে বলবেন এই রহস্য তাই আজো নিজেকে ঘরবন্দি করে রেখেছেন। আমি রিসার্চ করে যতটুকু জানতে পেরেছি যে দাদুমনি বড় বাবার দ্বিতীয় বংশধর কে তার সবকিছু লিখে দিয়েছেন আর সেটা উইল ও করা হয়েছে তবে সেটা কত বছরের সেটা আমি বা অন্য কেউ জানে না শুধু তোমার বাবা আর দাদুমনি ছাড়া।
কিন্তু দাদুমনি এখন প্যারালাইজড। বাকি আছে তোমার বাবা। তোমার বাবা সেই বছরে-ই তোমাকে শেষ করে দেবে আর সম্পত্তি নিজের নামে করে নেবে। এখন আসি আমার কথায় ! আমি আমার মা-বাবার একমাত্র মেয়ে।
মায়ের দ্বিতীয় কোনো উত্তরাধিকারী হওয়ার কোনো চান্স নেই। আর আমি বর্তমানে একটা সিআইডি ব্রাঞ্চে কর্মরত আছি। জীবনে প্রথম কেইস হিসেবে নিজের পরিবারকে বাছানোর কেইস টা-ই নিলাম।
তাই বধূ সেজে তোমার সংসারে আর তোমার বাবাকে বোঝালাম যে আমি তার দলে। এইভাবেই হলো। আর বড় বাবা মনে হয় এই বাড়ির সবার গলায় কিংবা শরীরে কোনো অংশে কিছু একটা করে রেখেছেন যার কারন তারা সত্য সবার সামনে প্রকাশ করতে পারেনা।
আমার জানামতে আর ধারনায় আমি এইটুকুই বললাম বাকীটা তোমাকে খুঁজতে হবে । আর তোমার সতীন আমি মোটেও না , বিয়েও হয়নি আমাদের, বড় বাবাকে দেখাতে শুধু এইটুকু করতে নাটক করতে হলো । আমি বিবাহিত, আমার স্বামী আনাফ খান পেশায় আইনজীবী । প্রেমের বিয়ে আমাদের সো নো টেনশন। তাই নাকের জল চোখের জল সত্যি করে ফেলতে হবে না ! ”
— মানে হলো যে তুমি ওখানে এক্টিং করবে যে তুমি সেখানে সুখে নেই। রোজ রোজ আমাকে নিয়ে ধূসরের সাথে ঝগড়া করবে। ”
— আমাকে এইসব করতে হবে আপু?
— নিজের পরিবারের জন্য কি পারবে না ? যে পরিবার তোমার সেফটি’র জন্য সন্তান বলে অস্বীকার করে ! ”
— হুম পারবো কিন্তু ধূসর স্যারের সাথে তার কি সম্পর্ক ? ”
— ধূসর তোমার আমার ফুফাতো ভাই ! ”
— মানে ? ”
— মানে তোমার বাবার একটা বোন-ও আছে সে-ই তোমার শাশুড়ী। ”
অবাকের চরম পর্যায়ে গিয়ে আবার জিজ্ঞাসা করলাম-
— তবে ধূসর স্যার কি আমাকে আগাম চিনতেন ? ”
— সেটার উত্তর একমাত্র ওনিই দিতে পারবেন। কারন এই সমীকরণ আমি নিজেও মিলাতে পারিনি। তবে আজ এখানে এসে একটা কাজ করেছি ! ”
— কি ? ”
— ধন্যবাদ জানা আগে! ”
— কাকে ? ”
— তোর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সতীন কে ! ”
আপুর কথা শুনে ফিক করে হেসে উঠলাম। আর বললাম-
— ধন্যবাদ। এবার বলো কি করেছো । ”
— ধূসরের রুমে থাকা আর বাড়ির সকল সিসিটিভি আর ভয়েস কন্ট্রোলার নষ্ট করে দিয়ে বড়বাবাকে বলেছি ক্যামেরাগুলো নষ্ট হয়ে গিয়েছে সকালে যেনো ঠিক করার জন্য কাউকে পাঠিয়ে দেন। যেহেতু ওনার ডান হাত মানে আমি এখানে আছি তাই তিনিও আর চিন্তা করলেন না। সকালেই পাঠাবেন ! ”
— কি বুদ্ধি রে বাবা তোমার! ”
— কিভাবে করেছো শোনাও,আর কেনোই বা করেছো এইসব ? ”
— সেটা পড়ে হবে , হাতে আছে আরো ৪৫ মিনিট । তাড়াতাড়ি করে দু’জন আগে ফুল তোলো আর ঘর সাজাও তারপর বাকিসব। ”
কাঁদোকাঁদো ফেস করে আপুর দিকে তাকালাম। আর তখনি আপু হাসতে নেয়। হাসি থামিয়ে বলতে লাগে-
— আগে ঘর তো সাজাই দু’জন তারপর না-হয় ডিসাইড হবে কে কোথায় থাকবে। ”
আমিও আর কিছু বললাম না কারন জানি যে এখন বললে কিছুই জানতে পারবো না আর ধূসর স্যার তার কথামতো কাজ না দেখলে আমার সাথেই চিল্লাবেন। তাই দুই ঝুড়ি ভর্তি ফুল নিয়ে নিলাম ৫ মিনিটেই।
সাবধানে বাডির পেছনের দরজা দিয়ে ঢুকলাম। রুমে এসে ঝুড়ি থেকে ফুল গুলো নিয়ে আপুকে দিলাম মালা করতে। আর কাবার্ড থেকে নতুন বেডশিট নিয়ে বিছালাম। রুম ঝাট দিলাম। বালিশ গুলো ঠিক ঠাক করলাম। বারান্দায় সাইডে থাকা পর্দা পুরোটা মেলে দিলাম।
কেনো জানি না নিজের আনমনেই এইসব করতে ইচ্ছে হলো আমার। তখনি পৃথআ আপু আমাকে ডাক দিলেন। তার ডাকে আমি রুমে গিয়ে দেখলাম তার মালা করাও শেষ। তাই দুজনে মিলে সেগুলো দিয়েই খাট টা সাজালাম। আমিই মনে হয় প্রথম যে নিজের স্বামীর বাসরঘর অর্থাৎ ফুলসজ্জার খাট আমিই সাজাচ্ছি। মনে মনে খানিক হাসলাম।
সাজানো শেষ করে করে আপু বিছানার মাঝে হার্টশেইপ করে নীল আর সাদা কম্বিনেশনের অপরাজিতা দিয়ে মাঝে লিখলেন ধূসরের #মনোহারিণী । #মনোহারিণী লেখা দেখে আবারো সেদিনকার ডায়েরি টা’র লেখা গুলো ফুটে ওঠলো সামনে। চ’ট করে কিছু জিজ্ঞাসা করতে যাবো আর তখনি আপু বলে উঠে –
— এই মনোহারিণী’র রহস্য টা না-হয় আজ ধূসর বলবে ? ”
আমিও চুপ করে গেলাম কি মনে করে। হয়তো প্রিয় পুরুষের থেকে শোনার ব্যাপার টা বড্ড আলাদা। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি ঠিক ১২ টা বাজে। আপু আমার দিকে তাকিয়ে বলে-
— ঘর সাজানো শেষ, এবার এদিকে আয় তো। ”
আমিও তার কাছে গেলাম আর জিজ্ঞাসা করলাম-
— এতো তাড়াতাড়ি সাজালে কি করে আপু ? ”
— দু’জনে মিলে কাজগুলো করেছি তো তাই সময় কম লেগেছে। আর সাজানোর মধ্যে তো শুধু এই বেড টাই সাজালাম। আর আশেপাশে ক’টা ক্যন্ডেল দিলাম। আশেসিম্পল ফুলসজ্জা যাকে বলে। ”
এই বলে আপু টেবিলের উপরে থাকা প্যাকেট টা আমাকে ধরিয়ে দিয়ে বললো-
— এটা জলদি পড়ে আয় তো। ধূসরের দেওয়া এটা । ”
ধূসরের দেওয়া এটা ভাবতেই কতক্ষন “থ” মেরে রইলাম।। কিন্তু আজ আমি কেনো পড়ে আসবো। আর ততক্ষনে তো আপুকে সাজানো হবেনা আমার। আমাকে ভাবতে দেখে আপু বললো-
— বোনু বাসর আজকে আমার না তোর। তাই দয়া করে তাড়াতাড়ি কর। আমার ঘুম পাচ্ছে।”
— আচ্ছা শোন তোকে আমি সাজিয়ে দি-ই তারপর না-হয় প্যাকেটের জিনিস গুলো পড়িস। কারন তোকে সাজিয়ে দিয়ে ঘুমাবো, অনেক ক্লান্ত আমি। ”
আপুকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে কতোটা ক্লান্ত সে। তাই তার মতে দ্বিমত করলাম না। বসে পড়লা সাজতে। সাজ শেষে ঘড়িতে দেখলাম ১২:১৫ বাজে। আর এই কম সময়ে প্যাকেটে’র জিনিস কিভাবে পড়বো ? যদিও জানিনা এতে কি আছে !
আমাকে সাজিয়ে আপু ছুটলেন কোনো এক রুমে। জিজ্ঞাসা করায় তিনি বললেন যে সিসিটিভি ক্যামেরা যেহেতু নষ্ট তাই এতো চিন্তার কিছু নেই। আমিও তার কথায় সায় দিয়ে দরজা ভিড়িয়ে প্যাকেট টা খুললাম। ইলেক্ট্রিসিটি না থাকার কারন টা ঠিক বুঝলাম না। ক্যান্ডেলের আলাওতে দেখলাম নীল আর সাদা কম্বিনেশনের জরজেট শাড়ি,ব্লাউজ আর পেটিকোট।
ব্লাউজ দেখে আমার মাথায় পড়লো হাত। কারন ব্লাইজটা পেছিন দিকটা’য় চেইন আর হাতা নেই। পেটিকোট মানসম্মত হলেও শাড়ি টা পাতলা। শরীরের সব দেখা যাবে। কিন্তু এদিকে সময় ও কম। তাই কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে আস্তে আস্তে সবগুলোই পড়ে নিলাম।
আর তখনি দরজায় আওয়াজ হলো-
— আসবো ! ”
ধূসর স্যারের কন্ঠে অনুমতি সূচক বাক্য শুনে অবাক হলাম। এতো ভদ্র ওনি কবে থেকে হলেন। আমার কোনো উত্তর না পেয়ে আবারো বললেন-
— সিয়া তোমার হলো ? ”
তার কথা শুনে খানিকটা জমে গেলাম। আয়নায় দাঁড়িয়ে দেখলাম নিজেকে। ছিঃ! পড়নে এইসব জামা কাপড় রেখে যে তার সামনে যাবো কিংবা তিনি আসবেন সেটাই আমার কাছে কেমন জানি লাগছিলো।
তিনি এবার আর কাউকে তোয়াক্কা না করেই রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলেন। আর তার কান্ড দেখে আমি অবাক হয়ে গেলাম। আর এদিকে গম্ভীরমুখো মানবের পরিবর্তন এলো একরাশ মুগ্ধ দৃষ্টিতে।
তার সামনে দাঁড়িয়ে সেদিনকার বিয়ে করা #মনোহারিণী । আজ তার পড়নে স্লিভস ছাড়া ব্লাইজে বেগুনি শাড়ি। চোখে কাজল আর আইলাইনার। চুলগুলো খোঁপা করা। ক্যান্ডেলের আলোতে সেই সিয়া মানবীর সৌন্দর্যতা যেনো উপচে পড়ছে। সবকিছুতে যেনো সে আজ ঘোরে আছে।
এদিকে আমি ভয়ে আছি, না জানি আমাকে এখানে দেখে সে কি রিয়েক্ট করে। তাই চুপ করে আছি। আর তখন-ই তিনি এগিয়ে এসে আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলেন। আচমকা এমন হওয়াতে খানিক ভড়কে গেলাম।
তার দু’হাত আমার পেটে । আর ফিসফিসিয়ে বলছে-
— জলহীন এক মরুদ্যানে,
পেয়েছি তোমার দেখা।
গম্ভীরমুখো এক মানবের বুকে ছড়িয়েছো স্নিগ্ধতা।
বলি কি হারি এমনি ?
তুমি আমার মনোহারিণী ! আমার প্রণয়সূচনাকারী।
ভালোবাসি তোমায় #ওগো_মনোহারিণী ।
তার কন্ঠে সে-ই লাইনগুলো শুনে চোখে পানি এসে গেলো। আবার-ও সেই #মনোহারিণী । কে এই মনোহারিণী ? তাই তাকে জিজ্ঞাসা করেই ফেললাম-
— কে সে-ই মনোহারিণী ?
আমার কথা শুনে তিনি হাসতে লাগলেন মনে হলো যেনো আমি তাকে নতুন কোনো ভালো জোকক্স শুনিয়েছি। হাঁসি থামিয়ে এর উত্তরে তিনি যা বললেন তাতে আমার কানে বৃষ্টিহীন মেঘের গর্জন কানে সাড়া দিলো। মুহুর্তের মধ্যেই রোমাঞ্চকর পরিবেশ শীতল বাতাসের ন্যায় ঠান্ডা হয়ে গেলো ।
(চলবে)
রিচেইক করিনি , বানানে ভুল হতে পারে। অনেক বড় একটা পর্ব দিয়েছি তাই প্লিজ কেউ নীরবে পড়ে চলে যাবেন না। আপনাদের উপস্থিতি -ই আমার মনোবল বাড়িয়ে দেয়, অনুপ্রেরণা জোগায় লেখালেখিতে।