ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি 💞💞 #লেখিকা-Mehruma Nurr #পর্ব-২১

0
1071

#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি 💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-২১

★নূর আর তানি মাত্রই ক্লাস শেষ করে বেড়িয়েছে।
হঠাৎ ওদের সামনে এ্যানি ওর দুই চামচা লিলি আর মিলিকে নিয়ে হাজির হলো।

নূর হঠাৎ ওদের দেখে একটু ঘাবড়ে গেল। তানি ওদের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বললো।
….কি ব্যাপার? এভাবে আমাদের রাস্তা আটকে দাঁড়িয়েছেন কেন?

এ্যানি সয়তানি হাসি দিয়ে বললো।
….এখনতো শুধু রাস্তা আটকিয়েছি। আমার কথা না মানলে, ধীরে ধীরে তোদের সবকিছু আটকে দেব।

….মানে? কি বলছেন এসব? আর তুই তুকারি করছেন কেন? ভদ্রভাবে কথা বলুন।

এ্যানি রাগী চোখে তানির দিকে আঙুল তুলে বললো।
…ইউ কিপ কোয়াইট। আ্যাম নট টকিং টু ইউ। সো ইউ স্টে এ্যাওয়ে।
তারপর নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
….হে ইউ মিস ওয়াটেভার। তোমার সাহস কি করে হলো আমার আদির পিছে পড়ার? তুমি জানো আমি তোমার কি হাল করতে পারি?

এ্যানির মুখে আমার আদি, কথাটা শুনে নূরের বুকের ভেতর ধক্ করে উঠলো। আবারও সেই অসহ্য যন্ত্রণা শুরু হয়ে গেলো। তাহলে কি ওর ভাবনাই ঠিক ছিল? এই মেয়েটা উনার গার্লফ্রেন্ড? কিন্তু উনিতো কাল বললো এই মেয়েটা তার বাবার বন্ধুর মেয়ে।

নূরের ভাবনার মাঝেই এ্যানি আবারও ক্ষিপ্ত স্বরে বলে উঠলো।
….লজ্জা করেনা নিজের শরীর দেখিয়ে ছেলেদের কাবু করতে? আমার আদিকেও তোর শরীরের মোহে ফাঁসিয়েছিস তাই না? এতোই যখন শরীরের চাহিদা, তো পতিতালয়ে গেলেই পারিস। এখানে ক্যাম্পাসে কেন নোংরামী করে বেড়াচ্ছিস?

এমন জঘন্য নোংরা কথা শুনে নূরের মরে যেতে ইচ্ছে করছে। মাথা নিচু করে দু চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়তে শুরু করলো। শেষমেশ কিনা ওকে এসব কথাও শুনতে হলো।নিজের উপর নিজেরি ঘৃণা হচ্ছে এখন।

তানি প্রচন্ড ক্ষেপে উঠে এ্যানির দিকে আঙুল তুলে বললো।
….এই এই তোর সাহস কি করে হলো আমার বান্ধবীকে নিয়ে এতো নোংরা কথা বলার? আমরা সম্মান দিয়ে বলছি দেখে তুই যা খুশি তাই বলে যাবি?

এ্যানি তাচ্ছিল্যের সুরে বললো।
….সত্যি কথা বললে সবারি গা জ্বলে।

তানি তেজি কন্ঠে বললো।
….কিসের সত্যি হ্যা?কিসের সত্যি? এতোযে আমার আদি, আমার আদি করছিস। তো তোর আদিকে যেয়েই এসব কথা জিজ্ঞেস কর না? আমাদের সামনে কেন বাহাদুরি দেখাচ্ছিস?
আদিত্য ভাইয়ার সামনে যেয়ে একবার এসব কথা বল।তারপর দেখিস কতো ধানে কতো চাল।

তানির কথা শুনে এ্যানি ভেতরে ভেতরে দমে গেলেও উপরে উপরে রাগ দেখিয়ে নূরের দিকে আঙুল তুলে বললো।
….আমার আদি থেকে দূরে থাকবে।তা নাহলে আমার চেয়ে খারাপ কেও হবে না। আদি শুধু আমার। মনে থাকে যেন।
কথাটা বলেই গটগট করে চলে গেলো এ্যানি।

নূর আর সহ্য করতে পারলো না। মুখের ওপর হাত চেপে ধরে কান্না করতে করতে ওখান থেকে দৌড়ে চলে গেলো।
তানি ওর পিছু পিছু দৌড়ে ওকে ডাকতে লাগলো। কিন্তু নূর থামলো না দৌড়ে গেট দিয়ে বেড়িয়ে চলে গেলো। তানি ওকে ধরতে না পেরে গেটের কাছে থেমে গেল।
————————————-

আদিত্য আধাঘন্টা হলো বসে আছে কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে। নূর এখনো আসছে না।আদিত্য ভাবছে নূর এখনো আসছে না কেন? ক্লাস কি শেষ হয় নি? আদিত্য ফোনটা বের করে নূরের নাম্বারে ফোন দেয়। কিন্তু ফোন রিসিভ হয় না। আদিত্য ভ্রু কুঁচকে ফোনের দিকে তাকিয়ে ভাবছে নূর ফোন কেন ধরলো না। তারপর আবার এটা ভেবে মনকে বুঝ দেয় যে, হয়তো এখনো ক্লাসেই আছে তাই ফোন ধরছে না।

এভাবে বসে থাকতে থাকতে যখন একঘন্টা পার হয়ে যায় তবুও নূর আসছে না। আদিত্যের এবার টেনশন হতে শুরু করে। সকালেতো আমার সাথেই আসলো।তাহলে এখন আসছে না কেন? কোনো সমস্যা হলো নাতো? এসব ভেবে আদিত্য আবারও নূরের নাম্বারে ফোন দিল। কিন্তু নূর এবারো ধরলো না। এভাবে আদিত্য তিন চারবার ফোন দেওয়ার পরেও নূর ফোন না ধরায় আদিত্যের রাগ হতে শুরু করলো। ড্যাম ইট, ফোন কেন ধরছে না মেয়েটা? মেয়টার কি কোনো প্রবলেম হলো নাকি?
নাহ্ আর বসে থাকতে পারলো না আদিত্য। উঠে বাইরের দিকে গেল, নূরের খোঁজ নেওয়ার জন্য।

আবির আর তাসির দাঁড়িয়ে কথা বলছিলো। হঠাৎ দেখলো তানি প্রচন্ড রাগী মুডে ধাপধুপ করে পা ফেলে ওদের দিকেই আসছে।

আবির বেচারা তানির এমন রণচণ্ডী রুপ দেখে ভয়ে শেষ। মনে মনে ভাবছে আবির বেটা তুই তো আজকে শেষ। তানি যেই কালীমূর্তি রুপ ধারণ করেছে। মনে হচ্ছে তোকে বথ করেই ছাড়বে। কিন্তু আমার জানা মতে তো আজ আমি তেমন কোনো ভুল করিনি।তাহলে তানি এতো রেগে আছে কেন?

তানি ওদের কাছে আসতেই আবির দৌড়ে যেয়ে তাসিরের পিছনে লুকালো।
আবিরের কান্ড দেখে তাসির আর তানি দুজনেই ওর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো।

আবির তাসিরের ঘাড়ের ওপর দিয়ে মাথা বেড় করে তানির দিকে তাকিয়ে ভীতু কন্ঠে বললো।
…..দে দে দেখো, আমি সত্যি বলছি আমি আজ কোনো মেয়ের সাথে কথা বলিনি। এমনকি কোনো মেয়ের দিকে তাকায়ও নি। আমিতো এখন সবাইকে আমার বোনের নজরে দেখি। গড প্রমিজ। বিশ্বাস নাহলে তাসিরকে জিজ্ঞেস করো। তাইনারে তাসির? তাসিরের দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো আবির।

আবিরের এমন করুন অবস্থা দেখে তাসিরের ভীষণ হাসি পাচ্ছে।

তানি বিরক্তির সুরে আবিরকে বললো।
….কি পাগলের মতো উল্টো পাল্টা কথা বলছো? আমি কি তোমাকে কিছু বলেছি নাকি?

আবিরের এবার একটু জানে পানি এলো।তারমানে তানি ওর ওপর রেগে নেই। আবির তানির সামনে এসে বললো।
….তাহলে এমন রাগী মুডে আছো কেন?

তানি বললো।
….আদিত্য ভাইয়া কই?আমি উনার সাথে কথা বলবো।

ততক্ষণে আদিত্যও ওখানে চলে আসে। তানিকে দেখে বলে।
….তানি তুমি একা কেন? আর নূর কোথায়? এখনো আসছে না কেন? আমার ফোনও ধরছে না।

তানি নিজের দুহাত ভাজ করে নিয়ে রাগী গলায় বললো।
….কারণ নূর চলে গেছে।

আদিত্য ভ্রু কুঁচকে একটু উচ্চস্বরে বললো।
…..ওয়াট??? চলে গেছে মানে?

……চলে গেছে মানে, চলে গেছে। আর কখনো এখানে আসবে বলেও মনে হয় না।

…….কেন? কি হয়েছে ওর?

…..সেটা আপনার গার্লফ্রেন্ড কে যেয়েই জিজ্ঞেস করুন। সেই বলে দিতে পারবে।

তানির কথায় আদিত্যসহ সবাই হতভম্ব হয়ে গেলো।
আবির আদিত্যের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বললো।
….ভাই তোর গার্লফ্রেন্ড আছে! আর এই কথা তুই আমাদের বলিসনি। দ্যাটস নট ফেয়ার ভাই। আমরা না তোর ল্যাংটা কালের সাথী? আর আমাদেরই এতবড়
একটা কথা জানালিনা?
হাত মুঠ করে বুকের বাম পাশে হালকা আঘাত করে দুঃখী মুখ করে আবার বললো।
….দিলে বহুত চোট পাইছি ভাই। আর খেলমু না তোর সাথে। যাহ্ কাট্টি। 😤

আদিত্য দাঁত কটমট করে অগ্নি চোখে আবিরের দিকে তাকালো। আবির ভয় পেয়ে জোরপূর্বক একটা হাসি দিয়ে বললো।
…..হে হে জাস্ট কিডিং।

তাসির আবিরকে একটা ধমক দিয়ে বললো।
….তুই একটু চুপ করবি? সব জায়গায় কি তোর ফান না করলে চলে না? ইডিয়ট।
তারপর আবার তানির দিকে তাকিয়ে তাসির সিরিয়াস ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলো।
….তানি ঠিক করে বলো। কি হয়েছে? নূরকে কেউ কিছু বলেছে? আর আদিত্যর গার্লফ্রেন্ড কোথাথেকে আসলো?

তানি রাগী মুডেই নূরের সাথে হওয়া সব ঘটনা খুলে বললো।

সব শুনে আদিত্যের মাথায় আগুন ধরে গেল। কপালের রগ ফুলে উঠলো। চোয়াল শক্ত করে
হাত মুঠ করে প্রথমে বিড়বিড় করে বললো।
…..হাউ ডেয়ার সি?
তারপর পাশের ভবনের দেয়ালে জোরে ঘুষি দিয়ে উচ্চস্বরে বললো।
…..হাউ ব্লাডি ডেয়ার সি??????

আদিত্যের রাগ দেখে সবাই ভয় পেয়ে গেল। তানি বেচারি নিজে কি রাগ দেখাবে? আদিত্যের রাগ দেখে ওর নিজেরি আত্মার পানি শুকিয়ে গেল।

তাসির আদিত্যের ঘাড়ে হাত দিয়ে বললো।
….রিলাক্স আদি, এতো হাইপার হলে চলবেনা। মাথা ঠান্ডা কর। আমি তোকে আগেই বলেছিলাম। ওই চিপকু মেয়েটার হাবভাব আমার একদম পছন্দ না। এখন দেখলিতো ওকে লায় দেওয়ার পরিণাম।

আদিত্য নিজের ফোনটা বের করে। এ্যানির নাম্বারে ফোন দিল।

এ্যানি ক্যানটিনে বসে লিলি আর মিলির সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছিল। হঠাৎ ফোন বেজে ওঠায় এ্যানি ফোন বের করে দেখে আদিত্য ফোন করেছে। এ্যানির যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না। আদিত্য ওকে নিজে থেকে ফোন করেছে। এই প্রথম আদিত্য ওকে নিজে থেকে ফোন করেছে। এ্যানি অত্যন্ত খুশি হয়ে ফোন রিসিভ করে বললো।
….হ্যাঁ আদি বলো কি বলবে?

এ্যানির কন্ঠ শুনে আদিত্যের রাগ আরো বেড়ে গেল। তবুও চোখ বন্ধ করে নিজের রাগকে কিছুটা কন্ট্রোল করে দাঁতে দাঁত চেপে বললো।
….কোথায় তুমি?

….এইতো ক্যানটিনে আছি।

….. আমার সাথে দেখা করো এখনি। বায়োলজির ক্লাসে চলে আসো।

এ্যানি খুশিতে যেন সাত আসমানে পৌঁছে গেল। আদিত্য ওর সাথে দেখা করতে চাচ্ছে? এই দিনের জন্য ও কবে থেকে অপেক্ষা করছে। এ্যানি খুশিতে গদগদ হয়ে বললো।
….আমি এখুনি আসছি।

….ওকে
বলেই আদিত্য ফোন কেটে দিল। তারপর ওখান থেকে চলে যায় এ্যানির সাথে দেখা করতে। বাকিরাও ওর পিছু পিছু যায়।

এ্যানি মুখে একরাশ হাসি নিয়ে ক্লাসে ঢুকে। কিন্তু ক্লাসে ঢোকার পর এ্যানির হাসি গায়ের হয়ে যায়। সামনে তাকিয়ে দেখে।
আদিত্য একটা চেয়ারে পায়ের ওপর পা তুলে বসে আছে। চোখে মুখে রাগী ভাব স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। পাশেই আবির তাসির আর তানি দাঁড়িয়ে আছে।
তানির দিকে তাকিয়ে দেখলো। তানি সয়তানি হাসি দিচ্ছে। এ্যানির বুঝতে বাকি নেই যে, এই মেয়েটা আদিত্যকে সব বলে দিয়েছে। মনে মনে অনেক ভয় পেয়ে গেল এ্যানি। নাজানি আদিত্য এখন আমার সাথে কি করে? এ্যানি একটা ঢোক চিপে জোরপূর্বক একটা হাসি দিয়ে বললো।
….কি হয়েছে আদি? তুমি আমাকে ডেকেছিলে কিছু বলবে?

আদিত্য এ্যানির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো।
…নূরকে কি বলেছ তুমি?

এ্যানি না চেনার ভান ধরে বললো।
….কে নূর? কার কথা বলছো?

তানি মাঝখান থেকে ফুসে উঠে বললো।
….আ হাহাহা, ভাব তো এমন ধরেছ যেন কিছুই জানো না। তখন নূরকে এতগুলো খারাপ কথা শুনিয়ে আসলে এখন বলছো নূর কে?

এ্যানি বললো।
…ওহ আচ্ছা ওই মেয়েটার কথা বলছো?

আদিত্য চোয়াল শক্ত করে দাঁত কিড়মিড় করে বললো।
….ওর নাম নূর। আর তুমি ওকে ওসব কথা কেন বলেছ?

এ্যানি একটু রাগী স্বরে বললো।
….হ্যাঁ বলেছি। কারণ ও এইটারই যোগ্য। ওর সাহস কি করে হলো তোমাকে চুমু খাওয়ার?

এতক্ষণে তাসির বলে উঠলো।
….তুমি কোথাথেকে চুমু খাওয়া দেখলে?

তাসিরের কথায় এ্যানি একটু ঘাবড়ে গেল। কিন্তু উপরে সেটা বুঝতে না দিয়ে নিজেকে সঠিক প্রমাণ করার জন্য মিথ্যে কাহিনি করে বললো।
…কোথা থেকে দেখেছি সেটা আসল ম্যাটার না। ম্যাটার হোলো আমি দেখেছি।
তারপর আদিত্যের দিকে তাকিয়ে বললো।
…. আর আমি এটাও বুঝতে পেরেছি যে মেয়েটা নিশ্চয় তোমাকে কোনো কিছু নিয়ে ব্ল্যাকমেইল করেছে। তানা হলে যে তুমি কখনো কোনো মেয়েকে নিজের কাছে ঘেঁষতে দেওনা।এমনকি আমি একটু তোমার হাত ধরলেও বিরক্ত হয়ে যাও। সেই তোমাকে কিনা ওই মেয়েটা চুমু দিয়ে দিলো আর তুমি কিছুই বললে না? তখনই আমি বুঝে গেছি যে মেয়েটার মতলব ঠিক না। তাই আমি ওকে শায়েস্তা করার জন্য ওসব কথা বলেছি।

আদিত্য আগে থেকেই রেগে ছিল তারউপর এ্যানির এসব ফালতু কথা শুনে রাগ যেন আরো তরতর করে বাড়তে থাকলো।আদিত্য ফট করে দাঁড়িয়ে যেয়ে রাগী কন্ঠে বললো।
…জাস্ট সাট আপ। না জেনে না শুনে একটা মেয়েকে এতগুলো খারাপ কথা বলতে তোমার বিবেকে একটুও বাঁধলো না? তোমার যখন এতোই জানার শখ ছিল। তুমি আমাকে এসে জিজ্ঞেস করতে আমি তোমাকে আসল ঘটনা বলতাম।

এ্যানি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো।
……মানে???

…..মানে নূরকে আমি বলেছি চুমু দিতে।

তাসির বুঝতে পারছে আদিত্য অতিরিক্ত হাইপার হয়ে যাচ্ছে। ও ভালো করেই জানে,আদিত্য অতিরিক্ত রেগে গেলে ওর হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। তাই ওকে থামিয়ে তাসির এ্যানির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো।
…..মানে আমি বলছি তোমাকে। তারপর তাসির এ্যানিকে সবকিছু খুলে বললো। কিভাবে আদিত্য নূরকে শাস্তি হিসেবে রোজ একটা করে চুমু দিতে বলেছিল।

সব শুনে এ্যানি মনে মনে একটু খুশি হলো। তারমানে আদি মেয়েটাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য চুমু দিতে বলেছে আর কিছু না। এ্যানি আদিত্যের দিকে তাকিয়ে বললো।
….কিন্তু আদি এটা আবার কেমন শাস্তি? তোমাকে চুমু খাওয়াতো যে কোনো মেয়ের জন্য একটা সৌভাগ্যের ব্যাপার। এটা কোনো শাস্তি হলো নাকি? তুমিতো শাস্তিও ঠিকমতো দিতে জানোনা। তুমি এক কাজ করো। তুমি ওকে অন্য কাওকে চুমু খেতে বলো।

আদিত্য এমনিতেই রেগে বম হয়ে ছিল। তারউপর এ্যানির এমন কথায় আদিত্যের রাগে আরো ঘি ঢেলে দিল। আদিত্য রাগের সপ্তম পর্যায় পৌঁছে গেল। হাত দুটো শক্ত করে মুঠ করে নিল। কপালের রগ ফুলে নীল হয়ে উঠলো।

এ্যানি আবারও বলে উঠলো।
…..তুমি একটা কাজ করো। আমাদের ভার্সিটিতে একটা ছেলে আছে না? ওইযে বদমাইশ নেশাখোর আজিজ। নূরকে বলো ওই আজিজকে চুমু খেতে। আর শুধু গালে না, ঠোটেও চুমু দিতে বলো তাও আবার সবার সামনে। তখন দেখবে কি মজ……

আর বলতে পারে না এ্যানি। আদিত্য তেড়ে এসে এ্যানির গলা চিপে ধরে দেয়ালের সাথে ঠেকিয়ে দেয়। রাগে আদিত্যের সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে। চোখ দিয়ে যেন আগ্নেয়গিরির লাভা বের হচ্ছে।

তাসির সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে ফেললো।ও জানতো এটাই হবে। এতক্ষণ এই ভয়টাই পাচ্ছিল ও। আদিত্য অতিরিক্ত রেগে গেলে আউট অফ কন্ট্রোল হয়ে যায়। তখন ও কি করে ও নিজেও জানে না। ওকে কন্ট্রোল করা মুশকিল হয়ে যায়। আর এই মেয়েটা সেই কাজটাই করলো।
তানি বেচারি ভয় পেয়ে আবিরের হাত শক্ত করে ধরে দাঁড়িয়ে রইলো।

আদিত্য এক হাত দিয়ে এ্যানির গলা চেপে ধরে, অন্য হাত দিয়ে দেয়ালে সজোরে ঘুষি দিয়ে গর্জন করে বললো।
…..হাউ ডেয়ার ইউ? হাউ ব্লাডি ডেয়ার ইউ? তোর সাহস কি করে হলো নূরকে নিয়ে এসব বলার? নূর অন্য কাউকে কেন চুমু খাবে? নূর শুধু আমাকে চুমু খাবে। যা করার আমার সাথে করবে। অন্য কেউ নূরকে ছোঁয়াতো দূরের কথা নূরের দিকে চোখ তুলে তাকালেও, তার চোখ উপরে ফেলবো আমি। নূর শুধু আমার। বুঝতে পেরেছিস তুই? সি ইস অনলি মাইন।
রাগের মাথায় আদিত্য কি বলছে ওর সেই হুঁশ নেই।

আবির হা করে চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছে আদিত্যের দিকে। তার ভাই যে নূরকে পছন্দ করে সেটা সে আগে থেকেই জানতো। কিন্তু আদিত্যযে নূরের প্রেমে এমন সাইকো হয়ে যাবে। এটা আবির ভাবতেই পারিনি।

তানি একটু ভয় পেলেও মনে মনে প্রচুর খুশি হচ্ছে। এই এ্যানি ফ্যানি কুত্তার নানিকে শায়েস্তা করতে পেরে। আর আদিত্যের এমন রিয়্যাকশন দেখে বোঝাই যাচ্ছে যে আদিত্য শুধু নূরকে পছন্দ না বরং অনেক ভালোবেসে ফেলেছে।

এদিকে আদিত্য গলা চেপে ধরায় এ্যানির দম বন্ধ হয়ে আসছে। চোখ দুটো বড়বড় হয়ে গেছে। নিজের দুই হাত দিয়ে আদিত্যর হাত গলা থেকে ছাড়নোর চেষ্টা করছে। কিন্তু আদিত্যর শক্তির সাথে পেরে উঠছে না।

তাসির অবস্থা খারাপ দেখে আবিরের দিকে ইশারা করলো আদিত্যকে আটকানোর জন্য। নাহলে এ্যানি মরে যেতে পারে।
আবির আর তাসির যেয়ে আদিত্যকে ধরে সরানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু আদিত্যর কোনো হেলদোল নেই। তাসির চিন্তিত স্বরে বললো।
….দেখ আদি ও মরে যাবে। ছেড়ে দে ওকে। দেখ ওর কিছু হয়ে গেলে তোর বাবাকে কি জবাব দিবি?

বাবার কথা শুনে আদিত্যের এতক্ষণে হুঁশ আসে। আদিত্য ফট করে এ্যানির গলা ছেড়ে দেয়। গলা ছেড়ে দিতেই এ্যানি ধপ করে নিচে বসে কাশতে থাকে। আর কিছুক্ষণ থাকলেই হয়তো ওর পরাণ পাখি উড়াল দিতো।
সবাই যেন হাফ ছেড়ে বাচলো।

আদিত্য একবার মাথা ঘুরিয়ে সবার দিকে তাকালো। তারপর হনহন করে বেড়িয়ে গেলো।

একটু পরে তাসিরও গেলো আদিত্যর পিছু পিছু। কারণ ও জানে আদিত্য এখনো প্রচুর রেগে আছে। আর রাগের বসে ও উল্টো পাল্টা কিছু করতে পারে।
আবির তানির দিকে তাকিয়ে বললো।
….তুমি বাসায় চলে যাও। আমি ভাইয়ের কাছে যাচ্ছি। ও অনেক রেগে আছে এই মুহূর্তে।

তানি মাথা ঝাকিয়ে বললো।
…ঠিক আছে।

——————————————

আদিত্য হাই স্পিডে গাড়ী চালিয়ে নিজের ফ্লাটে চলে এসেছে। রাগের কারণে অফিসেও যায়নি।
বাসায় ঢুকেই সামনে থাকা চেয়ারটাতে একটা লাথি মারলো। টেবিলের উপর থেকে ফুলদানিটা হাতে নিয়ে ফ্লোরে আছাড় দিয়ে ভেঙে ফেললো। তারপর দুই হাত দিয়ে নিজের চুল টেনে ধরে ঘরের ভেতর পায়চারী করতে লাগলো। বারবার শুধু এ্যানির বলা কথাগুলো ওর কানে বাজছে। কিছুতেই নিজের রাগ কমাতে পারছেনা।

একটু পরেই আবির আর তাসিরও চলে আসলো আদিত্যের ফ্লাটে। ওদের কাছে ডুপ্লিকেট চাবি থাকায় ওরা দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে পরলো।

ভেতরে ঢুকেই দেখলো নিচে কাচের টুকরো পরে আছে। ওদের বুঝতে আর বাকি রইলো না যে কি হয়েছে।

তাসির তাড়াহুড়ো করে আদিত্যের কাছে যেয়ে বললো।
…আদি রিলাক্স। কাম ডাউন। যা হবার হয়ে গেছে। তুই এখন একটু শান্ত হ।

আদিত্য ক্ষিপ্ত চোখে তাসিরের দিকে তাকিয়ে বললো।
…তুই আমাকে শান্ত হতে বলছিস? তুই শুনলি না ও কি বললো? ওর সাহস কি করে হলো নূরকে নিয়ে এসব বলার?

….ওকে ওকে রিলাক্স। তুই ওকে যে শায়েস্তা করেছিস। লজ্জা থাকলে আর কখনো নূরকে নিয়ে আর কোনো বাজে কথা বলতে আসবে না।
তারপর একটু থেমে তাসির আবার বললো।
…..তুই কি এখনো বলবি যে নূরের প্রতি তোর কোনো ফিলিংস নেই। তুই ওর প্রেমে পরিসনি? এখনো বলবি যে তুই নূরকে ভালোবা……..

তাসিরের কথা শেষ করার আগেই আদিত্য নিজের হাত দিয়ে তাসিরের দুই ঘাড় ঝাকিয়ে চোখ দুটো বড়সড় করে উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলো।
…..ইয়েস ম্যান, ইয়েস।আই লাভ হার।আই লাভ হার এ লট। আ্যাম ডিপলি এন্ড ম্যাডলি লাভ উইথ হার।
তারপর তাসিরকে ছেড়ে দিয়ে একটু হেসে আবার বললো।
…..ইনফ্যাক্ট নট অনলি লাভ। ইটস মোর দ্যান লাভ। নূরের প্রতি আমার ফিলিংস গুলো শুধু ভালোবাসা নামক একটা শব্দে প্রকাশ করা যাবে না। আমার ফিলিংস গুলো #ভালোবাসার চেয়েও বেশি। আমি হয়তো আগেও কিছুটা বুঝতে পেরেছিলাম। কিন্তু আমার ফিলিংসটা ভালো করে বোঝার জন্য একটু সময় নিচ্ছিলাম। তবে এখন আমি বুঝে গেছি।নূরকে ছাড়া আমার চলবে না।আমার জীবনে নূরকে চাইই চাই।

হঠাৎ ঠাস্ করে কিছু পরার শব্দে আদিত্য আর তাসির পিছনে ঘুরে তাকালো। চেয়ে দেখলো আবির নিচে সেন্সলেস হয়ে পরে আছে। বেচারা এতো শক একসাথে নিতে পারেনি। ভার্সিটিতে আদিত্যের ্ ওমন সাইকো আবতার। তারপর আবার আদিত্যের মুখে এমন ভালোবাসার কথা শুনে আবির সেন্সলেস হয়ে পরে গেছে।

আদিত্য আর তাসির একজন আরেকজনের দিকে তাকালো তারপর দুজন ঘর কাপিয়ে হেসে উঠলো।

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here