শুধু_তোমাকেই_চাই #শারমিন_হোসেন #পর্ব০৮

0
609

#শুধু_তোমাকেই_চাই
#শারমিন_হোসেন
#পর্ব০৮

“জানালার সফেদ পর্দা ভেদ করে এক টুকরো সোনালী রোদের আলো এসে চোখে মুখে পড়তেই লিয়ার ঘুম ভেঙ্গে যায়।লিয়া ঘুম থেকে জেগে আড়মোড়া ভেঙ্গে ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়।ব্যালকনি দিয়ে বাইরে দৃষ্টি দিয়ে স্নিগ্ধ সকালটা উপভোগ করে কিছুক্ষণ।তারপর ফ্রেশ হয়ে ওড়নাটা গলার সাথে ঝুলিয়ে নিয়ে নিচে নেমে আসে।

“খাঁন বাড়ির গিন্নিরা সকাল সকাল রান্না করতে ব্যাস্ত। চারিদিকে মসলার গন্ধ ভেসে আসছে।বাড়ির ছেলেরা খবরের কাগজে মুখ ডুবে আছে আর সাথে চায়ের কাপ।লিয়া সরাসরি রান্না ঘরে যায়। গিয়ে দেখে ওর মা চাচিদের সাথে তাসনিম ও আছে রান্না ঘরে। তাসনিম কফি বানাচ্ছে।লিয়া গিয়ে বলে আমিও হেল্প করি। তহমিনা বেগম মিষ্টি হেসে বলেন,,”থাক লিয়া।আমরা তো আছিই।”

লিয়া জিদ ধরে থাকায় রাজিয়া সুলতানা বলেন সবজি কাটতে।লিয়া ছুড়িটা নিয়ে ফটাফট সবজি কাটতে থাকে।সেই সময় কিচেনের দরজার সামনে আলিফ এসে দাঁড়ায়।লিয়াকে দেখে বলে,,”বাহ্ পিচ্চি তো দেখছি।ভালই ফটাফট গ্যাচগ্যাচ সবজি কাটছে। শুধু কথাই নয় কাজও তবে পারে পিচ্চি।”

আলিফ এর কথা শুনে লিয়া একবার আলিফের দিকে তাকিয়ে আবার সবজি কাটায় মন দেয়।রাজিয়া সুলতানা বলেন,,”হ্যা এই ফটাফট কাঁটার জন্য হাত কে’টে ও বসে থাকে।কতবার বলেছি ধীরে ধীরে কাজ করতে,না শুনবে না। শেষমেষ একটা দুর্ঘটনা ঘটিয়ে বসে থাকবে।রাজিয়া সুলতানা আলিফ কে উদ্দেশ্য করে বলে,,আলিফ তোমার কিছু দরকার?”

আলিফ আড়চোখে তাসনিম এর দিকে একবার তাকিয়ে দুই হাত প্যান্টের পকেটে গুঁজে বলে,,আসলে মামি কফি।এক মগ কফি হলে ভালো হয়।”

রাজিয়া সুলতানা ব্যাস্ত গলায় বলেন,”এই তো তাসনিম কফি বানাচ্ছে। তুমি বসো।বানানো হলেই তাসনিম দিয়ে আসবে।”

আতিকা বেগম কড়াইয়ে তেল দিতে দিতে বলেন,,”সকালে কফি খাওয়া আলিফ এর অভ্যাস।কফি না খেলে ওর হেডেক হয়। তাসনিম কে উদ্দেশ্য করে আরো বলে,, তাসনিম কফিটা একটু কড়া করেই বানাস কেমন।”তাসনিম ঘাড় নাড়িয়ে হ্যা সম্মতি দেয়।

আলিফ সৌজন্যমূলক হেসে ওখান থেকে চলে আসে ড্রয়িং রুমে।সোফায় বসা তুষারের কোলে আরিয়ান ছিলো।আলিফ কে দেখে আরিয়ান খিলখিলিয়ে হাসতে থাকে।আর আলিফ এর কোলে আসার জন্য হাত নাড়াতে থাকে।আলিফ দুই হাত বাড়িয়ে দিতেই আরিয়ান এক লাফে চলে আসে আলিফের কোলে।আলিফ আলতোভাবে আরিয়ানের গালটা টিপে দিয়ে বলে,,”ছোট ভাই কালকে তো হিসু করে আমার ল্যাপটপ ভাসিয়েছো।আজকে আবার আমার গা ভাসানোর মতলব এঁটোছো না-কি? এরকম হলে কিন্তু ভেরি ব্যাড।দিস ইজ নট ফেয়ার ব্রো।

এরমধ্যে কফির মগ হাতে তাসনিম আসে।নরম গলায় তাসনিম বলে,,”ভাইয়া আপনার কফি।”

আলিফ একবার তাসনিম এর দিকে তাকিয়ে আবার আরিয়ানের দিকে তাকায়।এতে তাসনিম বুঝতে পেরে কফির মগটা টি-টেবিলের উপর নামিয়ে দুই হাত বাড়িয়ে বলে,,”ভাইয়া আরিয়ান কে আমার কাছে দিন।আপনি কফি খেয়ে নিন।”

আরিয়ান কে তাসনিম এর কোলে দিতে দিয়ে হঠাৎ করেই তাসনিম এর বাহুর সাথে আলিফ এর হাতের স্পর্শ লাগে। আলিফ এর মনের মধ্যে ভালোলাগার সৃষ্টি হয়। সম্মোহনী দৃষ্টিতে তাসনিম এর দিকে তাকিয়ে রয়।তাসনিম আরিয়ান কে কোলে নিয়ে দ্রুত ওখান থেকে চলে যায়।

বিকেলের দিকে লিয়া, তাসনিম,তুলি আম বাগানে গিয়েছে।তুষার বড় কুটা দিয়ে আম পাড়ছে।ওরা তিনজন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ডিরেকশন দিচ্ছে এই এইটা পাড়। হঠাৎ করে রাহবার এসে লিয়ার সামনে দাঁড়িয়ে জিহ্বা বের করে বলে,,”এই আপু দেখতো কিরকম দেখাচ্ছে।”

রাহবার পাকা জাম খেয়ে এসে এই কথা বলছে।জাম খাওয়ার জন্য জিহ্বা জাম রঙা হয়ে গিয়েছে।লিয়া দেখে নাক মুখ সিঁটকে বলে,,”এই তোর জিহ্বা দেখে তো মনে হচ্ছে আশি বছরের কোনো পান খাওয়া লোকের জিহ্বা।কিছু বয়স্ক লোকের জিহ্বা পান খেতে খেতে যেমন কয়ড়া বা ঝং ধরে যায় সেরকম লাগছে।”

রাহবার ঝাঁঝালো গলায় বলে,,”তোর কাছ থেকে এর চেয়ে ভালো কথা আশা করাই আমার ভুল।”

লিয়া ঠোঁট বেঁকিয়ে বলে,,”আচ্ছা ভাই তোকে একদম গোস্ট এর মতো লাগছে। এভাবে ইয়া বড় একটা কালো জিহ্বা বের করে রাখলে দিন দুপুরে তোকে দেখে গোস্ট ভেবে সবার হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।”

লিয়ার কথা শুনে রাহবার কাটকাট গলায় বলে,,”এই সব বাজে কমেন্ট করার জন্য,এখন আমার রঙিন হাত তোর ওড়নায় মুছবো বলে রাহবার হাত সামনে ধরে।”

লিয়া জিহ্বা দিয়ে ঢোক গিলে নিয়ে বলে,,”এই ভাই একদম না।আমার ফেবরিট হোয়াইট ওড়নাটায় জামের রং লাগলে একদম বিশ্রী দেখাবে।আমি আর পড়তে পারব না।এরকম করিস না প্লিজ।”

রাহবার হাত নামিয়ে চলে যায়।লিয়া স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে।তুষার তুলিকে ঢেকে বলে,,”তুলি এই আমটা তোর ক্যাচ ধর।তারপর লিয়াকে ক্যাচ ধরতে বলে। লিয়া এইটা তোমার নাও।শেষে তাসনিম কে দেয়।লিয়া ঠোঁট উল্টিয়ে বলে,,”আপু আমি তোমার হাতের আমটা নেবো।এটা বেশি পাকা এতো পাকা আম আমার ভালো লাগে না।”

লিয়ার বলতে দেরি কিন্তু তাসনিম এর দিতে দেরি হয় না। তাসনিম সাথে সাথেই লিয়াকে আমটা দিয়ে দেয়।লিয়া তুষার কে উদ্দেশ্য করে বলে,,”ভাইয়া আপুকে আরেকটা দিন আমি আপুর টা নিয়েছি।”

তুষার একটু দূর থেকে জোরে করে ছুঁড়ে দেয়। তাসনিম দুই হাত গোল করে ধরে হঠাৎ তাসনিম এর চোখে একটা পোকা পড়ায় চোখ বন্ধ করে নেয়।পিছন থেকে কেউ একজন একটা হাত বাড়িয়ে আমটা ধরে নেয়। তাসনিম হাত দিয়ে চোখ ডলতে থাকে।আলিফ আমটা ধরে নেয়।ঠিক সময় মতো আলিফ আম টা না ধরলে তাসনিম এর মুখের উপর গিয়ে পড়ত।

আলিফ এক হাত দিয়ে তাসনিম কে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়।আরেক হাতে আমটা তাসনিম এর হাতে ধরিয়ে দিয়ে। তাসনিম এর ওড়নার কোণা দিয়ে খুব সাবধানে চোখের কোণায় থাকা ছোট্ট পোকাটা তুলে নেয়।দুই হাত দিয়ে তাসনিম এর চোখ টা একটু আলগা করে ঠোঁট গোল করে ফু দেয়।কয়েকবার ফু দেওয়ার পর তাসনিম বলে,,”ভাইয়া আ’ম ফাইন। কোনো সমস্যা নেই।”

লিয়া এগিয়ে এসে বলে,,” আপু তুমি ঠিক আছো তো? ভাইয়া যদি ঠিক সময়মতো আম টা না ধরতো তাহলে তো এক্সিডেন্ট হয়ে যেতো।”

আলিফ গম্ভীরভাবে বলে,,”এভাবে কেউ ছুড়াছুড়ি করে।এখনই তো একটা এক্সিডেন্ট হয়ে যেতো।তুষার কে উদ্দেশ্য করে আরো বলে,,তুষার তুই তো একটু এগিয়ে এসে হাতে ধরিয়ে দিতে পারতি।”

তুষার মৃদু আওয়াজে বলে,,”সরি ভাইয়া বুঝতে পারিনি এরকমটা হবে।”

“সমস্যা নেই,আমি একদম ঠিক আছি।আসলে হঠাৎ করে একটা পোকা পড়ায় এরকমটা হয়।”

আলিফ তাসনিম এর দিকে তাকিয়ে বলে,,”বাসায় গিয়ে চোখে মুখে পানি দিয়ে নাও,বেটার লাগবে।”

আলিফ স্মিত হেসে এক হাত প্যান্টের পকেটে গুজে অন্য হাত দিয়ে চুলগুলো ব্যাক ব্রাশ করে চলে যায়।

আলিফের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে লিয়া মনে মনে ভাবে,,”ব্যাপার কি আলিফ ভাইয়া কে দেখে মনে হচ্ছে পুরাই ইউ টার্ন নিয়েছে। আগে তো কখনো আমাদের কারো আশে পাশে ছায়াও মাড়াতো না। কথাও তেমন বলতো না।এবার বেশ কথা বার্তায় উন্নতি।আর আগে সব সময় গম্ভীরভাবে থাকতো,অথচ এবার দেখছি প্রায় সময়ই মুখে গ্লুকোজ মার্কা হাসি লেগে থাকে,স্ট্রেইন্জ।ডাল মে কুচ কালা হে।

ওরা সবাই বাড়ির ভেতরে চলে আসে। তাসনিম ওর রুমে চলে যায়।সিড়ি বেয়ে উপরে উঠার সময় লিয়ার মনে হয়,ইশ আলিফ ভাইয়া যেভাবে আপুর কেয়ার করলো।ঠিক ঐভাবে যদি জারিফ স্যার আমার কেয়ার করতো।আমার হাত স্পর্শ করতো,তাহলে সেটা হতো আমার জন্য বেস্ট লাক।লিয়া রুমে গিয়ে ফোনটা নিয়ে ধীর পায়ে হেঁটে ছাদে গিয়ে রেলিং এর উপর বসে হাতে থাকা আম টা খেতে থাকে আর ভাবে,স্যারের কাছে কল দিবো?কি দিবো না? কন্ট্রাক্ট লিস্ট এ গিয়ে জারিফ এর নম্বর টা বের করে দ্বিধায় থাকে। অবশেষে এক আঙ্গুল স্পর্শ করিয়ে জারিফ এর নম্বরে কল দিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ রিং হওয়ার পর জারিফ রিসিভ করে। নম্বর টা দেখে লিয়ার নম্বর এটা বুঝতে জারিফ এর ফাইভ সেকেন্ড সময় লাগে।

লিয়া প্রথমে নীরব হয়ে থাকে।কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।ফোনের ওপাশ থেকে ভরাট গলায় বলে,,
“হ্যালো লিয়া বলো।কিজন্য ফোন দিয়েছো?”

জারিফ এর কন্ঠস্বর শুনে লিয়ার মনে শীতলতা বয়ে যায়।জারিফ এর প্রগাঢ় নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছে লিয়া। চোখ বন্ধ করে লম্বা শ্বাস টেনে নিয়ে মৃদু কন্ঠে বলে,,”কেমন আছেন স্যার?”
“ভালো।কিছু দরকার আছে কি?”

জারিফের কথা শুনে লিয়া ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে মুখ টা মলিন করে মনে মনে বলে,,”সৌজন্যতার খ্যাতিরেও তো একবার জিগ্গেস করতে পারতো যে,আমি কেমন আছি।আর বলছেন কি দরকার?আমার শুধু আপনাকেই দরকার।আমার ভালো থাকা খা’রাপ থাকা সব অবস্থাতেই শুধু আপনাকেই চাই।

“কি হলো কিছু বলছো না যে,হ্যালো হ্যালো।”

জারিফের কথা শুনে লিয়ার ধ্যান ভাঙ্গে। স্বাভাবিক ভাবে বলে,,”আসলে স্যার আমরা কালকের দিন পরই ফিরবো।”

“হ্যা সেটা জানি তো।সেদিনই তো বলেছিলে।”

“স্যার আমরা দাদু বাড়িতে আছি।আমি এখন ছাদে বসে আম খাচ্ছিলাম একা একা আছি তাই ভাবলাম আপনার সাথে কথা বলে নেই।স্যার আপনার জন্য আমার দাদু বাড়ির আম নিয়ে আসবো কি?”

লিয়ার কথা শুনে জারিফ বিরক্ত হয়। গমগমে স্বরে বলে,,”তুমি খাও সমস্যা নেই।আর আমাদের বাড়িতে আম গাছ আছে, কষ্ট করে তোমাকে আনতে হবে না।”

“স্যার আপনাদের বাড়িতে আর কি কি গাছ আছে।না মানে আমাদের এখানে প্রায় সব ফলের গাছই আছে সেইজন্য বলছি আরকি।”

জারিফ দীর্ঘশ্বাস ফেলে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,”তুমি এইসব বলার জন্য আমাকে ফোন করেছো, আশ্চর্য!”

বলতে তো চাই অনেক কিছু, কিন্তু বলতে পারছি না মনে মনে বলে।তারপর আচমকা মুখ ফোসকে বলে ফেলে,,”স্যার আপনাকে মিস করছিলাম।মিস ইউ সো ম্যাচ।”

“ইডিয়েট একটা কথাটা গলা পর্যন্ত এসে আঁটকে যায়।জারিফ মুখ দিয়ে কেনো জানি লিয়াকে এটা বলতে পারলো না। অবশেষে জারিফ কল কে’টে দেয়।জারিফ এর কানে মিস ইউ সো ম্যাচ কথাটা বারবার বাজতে লাগলো।

সন্ধ্যার পর ড্রয়িং রুমে সবাই বসে ছিলো।বাড়ির বড় রা এক পাশে আর ছোটরা অন্য পাশে। তাসনিম,লিয়া আর তুলি ফোনে লুডু খেলছিলো।আলিফ আর তুষার অন্য সোফায় বসে কথা বলছিলো।আলিফ ফোন স্ক্রল করছিলো আর মাঝে মাঝে তুষারের সাথে কথা বলছে। আলিফ দের পাশের সোফাতে জান্নাত বেগম বসে ছিলেন।আর একটা বয়স্ক মহিলা। জান্নাত বেগমের দূর সম্পর্কের আত্মীয়। মহিলাটির গাল ভরতি পান ছিলো। দাঁত দিয়ে পিষে পিষে পান চিবুতে চিবুতে জান্নাত বেগমের সাথে গল্প করছিলো।এমন সময় মহিলাটি লিয়া দের দিকে তাকিয়ে গলা খাঁকারি দিয়ে বলে উঠে,,

“আপনার তিন নাতনিই তো বিবাহ যোগ্য হয়ে গিয়েছে দেখছি।তা মাশআল্লাহ তিনজনই বেশ সুন্দর আছে।তবে ছোট দুইটার চেয়ে বড়টার গায়ের রঙ একটু চাপা।তাই বলছি কী,বড় নাতনি টারে দ্রুত একটা পাত্র দেখে বিয়ে দিয়ে দেন।না হলে পাত্র পক্ষ এসে বড় টা কে রেখে ছোট দুইটা রে চেয়ে বসবে। বিশেষ করে ছোট টা কে চাওয়ার সম্ভাবনা আরো বেশি।শেষে কিন্তু বড় টা রে বিয়ে দেওয়া মুশকিল হয়ে যাবে।”

মহিলাটির কথা শুনে আলিফের খুব রাগ হচ্ছে।আড়চোখে মহিলাটিকে পরখ করে দেখে।পান খাওয়ার ফলে দাঁত গুলো কালো হয়ে মনে হচ্ছে ঝং ধরে গিয়েছে। বেক্কেল এর মতো পান চিবুতেছে।আলিফ হালকা কেশে মহিলাটিকে উদ্দেশ্য করে বলে,,”আপনি তাসনিম কে নিয়ে বলছেন তো।যার ওকে নেওয়ার প্রয়োজন হবে সে নিজের গরজেই নিবে।সেখানে গায়ের রং মেটার করে না।আর একটা কথা আছে না জহুরি জহুর চেনে।

আলিফ এর কথা শুনে মহিলাটি মুখটা চুপসে যায় আর মুখে কোনো কথা থাকে না। জান্নাত বেগম ঠোঁট প্রসারিত করে বলে,,”আমি আর কি বলবো।আমার নাতি তো আমার মন তো উপযুক্ত উত্তর দিয়ে দিয়েছে।শুনেছো আমার নাতির কথা।

তাসনিম এর হয়ে মহিলা কে উদ্দেশ্য করে আলিফের বলা কথাগুলো শুনে তাসনিম এর আলিফ এর প্রতি রেসপেক্ট বেড়ে যায়।

রাতে খাওয়া দাওয়া পর্ব শেষ করে তুলি আর লিয়া বলে,,”আপু আজকে না জোসনা রাত চলো ছাদে বসে গল্প করবো।”

তাসনিম অবাক হয়ে বলে,,”এখন?এখন রাতে ছাদে গেলে তো দাদিমনি ব’কবে।”

লিয়া চঞ্চল গলায় বলে,,”আমি দাদিমনি কে ম্যানেজ করবো। ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে দাদি মনি কে রাজি করাবো।”

তাসনিম শান্ত গলায় বলে,,”কিভাবে?”

মুখের উপর আশা চুলগুলো এক হাত দিয়ে কানের পাশে গুঁজে নিয়ে লিয়া বলে,,”বলবো কিছু একটা।আর মাত্র একদিন ই তো আছি আবার কবে আসবো।তাই না করো না দাদি মনি। দুঃখী দুঃখী ফেস বানিয়ে এক্টিং করে দেখায় লিয়া।”

লিয়ার এক্টিং দেখে ওরা দুজনে ফিক করে হেসে ফেলে।লিয়া বলে,,”তুষার ভাইয়াকেও ডাক দেও আমরা গেইম খেলবো।”

লিয়ার কথা শুনে সাথে সাথে তুলি লাফিয়ে উঠে বলে,,”গুড আইডিয়া। ট্রুথ আর ডিয়ার গেইম খেলবো।”

তাসনিম প্রথমে রাজি হতে চায়না এই গেইম খেলতে।কারন এই ট্রুথ আর ডিয়ার গেইম মানে হলো মান সম্মান এর বারোটা বাজানো। অবশেষে ছোট বোনদের মন রাখতে খেলতে যায়।তুলি একটা বড় শীতল পাটি নিয়ে আসে।লিয়া রাহবার কে ডেকে বলে তুষার কে সাথে করে ছাদে যেতে।ওরা ছাদে গিয়ে দেখে ছাদের দরজা খোলা হালকা হলুদ রঙের বাতি জ্বলছে। ছাদের রেলিং ঘেঁষে দক্ষিণ দিকে দৃষ্টি দিয়ে আলিফ দুই হাত বুকে গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে। ওরা সবাই পাটি বিছিয়ে বসে পড়ে।ওদের কে দেখে আলিফ চলে আসতে নিলে তুষার বলে,,”ভাইয়া তুমিও আমাদের সাথে জয়েন করো।”

আলিফ শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে এক মিনিট ভেবে ওকে বলে বসে পড়ে। হইহুল্লোড় চেঁচামেচি এসব কিছুতে আলিফ বিরক্ত ফিল করে অথচ আজ কেনো অজানা কারনেই না করতে পারলো না।অজানা কারন নাকি প্রেয়সীর কাছাকাছি সময় কাটানো যাবে ভেবে আলিফ বসে পড়ল,এটা ভেবে আলিফের ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটে।

তুষারের পাশে আলিফ বসে।আলিফের পাশে রাহবার,তারপর তাসনিম,লিয়া তারপর তুলি।সবাই গোল হয়ে বসেছে।আলিফ বসে ফোন স্ক্রল করছে আর আড়চোখে মাঝে মাঝে তাসনিম এর দিকে তাকাচ্ছে। তাসনিম বাকিদের থেকে একটু চুপচাপ স্বভাবের এই জিনিস আলিফের কাছে খুব ভালো লাগে। তাসনিম এর ধীরে ধীরে বলা কথাগুলো কান খাঁড়া করে খুব মনোযোগ দিয়ে আলিফ শোনে অথচ বিষয়টা কাউকে বুঝতে দেয়না।

একটা কৌটার ভেতর ট্রুথ আর ডিয়ার লেখা অনেক গুলো কাগজের টুকরা আছে।তুলি বলতে থাকে,,”প্রথমে কে শুরু করবে রাহবার।রাহবার একটা কাগজের টুকরা তোলো ।”

রাহবার একটা কাগজের টুকরা তুলে সবার সামনে মেলে ধরে বলে,,”ডিয়ার।ব্যাপার না আমি খুব সাহসী আছি।তাই আমার জন্য উপযুক্ত টাই পড়ছে।”

লিয়া বলে,,”হ্যা সাহসী তুই তাহলে তোর জন্য একদম পারফেক্ট ডিয়ার আমি দিচ্ছি।এক মিনিট খানেক ভেবে নিয়ে বলে,,তুই এখন একদম একা একা বাইরে গিয়ে পুকুরের চতুর্দিক থেকে রাউন্ড দিয়ে আসবি কেমন।কাউকে সাথে নেওয়া যাবে না।”

লিয়ার কথা শুনে রাহবার এর হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে।কি বিপদ এই রাতের বেলা পুকুরের চতুর্দিক রাউন্ড তাও একা একা। যেখানে রাতে বাসার ভেতর এ রুম থেকে অন্য রুমে যেতেই রাহবারের ভয় লাগে।”

তাসনিম নির্বিকার ভাবে শান্ত গলায় বলে,,”খেলার আগে রুলস করা হয়েছিলো যে, এক্সেস কিছু করা যাবে না। রুলস টা ভুলে গেলে চলবে না।”

আলিফ ভাবলেশহীন ভাবে বলে,,”রাহবার তোমার ডিয়ার আমি দেবো।তুমি একটা পোয়েম বলে শুনাও কেমন।”

আলিফ এর কথা শুনে রাহবার স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।আর ভাবে আমার নিজের বোন আমাকে বিপদে ফেলতে যাচ্ছিলো ভাগ্যিস ভাইয়া বাঁচিয়ে দিলো। রাহবার একটা পোয়েম শুনিয়ে ডিয়ার কমপ্লিট করে।এবার আলিফের পালা।আলিফ কাগজের টুকরা তুলে।খুলে দেখে বলে,,”গাইস আমার ট্রুথ পড়েছে।”

তুলি এক হাত উঁচু করে বলে,,”আমি ভাইয়াকে ট্রুথ দেবো।দশ সেকেন্ডে ভেবে তুলি বলে,,”ভাইয়া আপনি কী কাউকে পছন্দ করেন?”

আলিফ তাসনিম এর দিকে তাকিয়ে স্লো ভয়েজে বলে,,”হ্যা”

হ্যা কথাটা শোনার পর সবাই আলিফ এর দিকে বিস্ফোরিত চোখে তাকায়।তুলি আবার প্রশ্ন করে,,”ভাইয়া সে কে?তার বাড়ি কোথায় ঢাকাতে?”

আলিফ ফোনে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বলে,,”রুলস ব্রেক করছো কেনো?একবারই তো প্রশ্ন করার সুযোগ নেক্সট কোনো সুযোগ নেই।”

আলিফের কথা শুনে সবাই ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়ে।তুষার তো মনে মনে তুলিকে গালি দেয়।গাধী কোথাকার। প্রথমেই বলবে যে,কাকে পছন্দ করেন তা না করে।একটা সুযোগ ছিলো ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড কে জানার তা এই তুলি গাধীর টা দিলো স্পয়েল করে।তুষার তুলিকে উদেশ্য করে বলে,,
“এই তুই আর নাচতে নাচতে আগ বাড়িয়ে কাউকে কিছু বলবি না।আমরা বড় রা আছি আমরা বলবো কেমন।”

এবার তুষারের পালা।তুষারের কপালে ট্রুথ পড়ে।তুষার মনে মনে ভাবে লে বাবা যে বিছুটি বোনেরা আমার।এবার কি ট্রুথ দেয়,মান এর সাথে সম্মান টাও খোয়াতে না হয়।ফট করে রাহবার বলে,,”ভাইয়া আপনি কাকে দেখে এখনো বেশি ভ’য় পান?”

তুষার দৃষ্টি সরু করে বলে,,”আমি এখনো যাকে দেখে ভ’য় পাই সে হলো আমার নানীর মেয়ে।কারন সবার সামনে এখনো আমার গালে ঠা’স করে চ’ড় মা’রা’র সাহস কেবল আমার নানীর মেয়েরই আছে।”

তুষারের কথা শুনে সবাই শব্দ করে হেসে ফেলে।এইবার তাসনিম এর পালা। তাসনিম হাত দিয়ে একটা টুকরা তুলে ছাড়িয়ে ধরে অসহায় ফেস করে করুণ গলায় বলে,,গাইস আমার ভাগ্যে ডিয়ার ছিলো। প্লিজ ভালো কিছু দিয়ো যাতে করে প্রেস্টিজ টা ঠিক থাকে।

[চলবে…ইন শা আল্লাহ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here