#শুধু_তোমাকেই_চাই
#শারমিন_হোসেন
#পর্ব১৯
“লিয়া স্থির চাহনিতে পাশে থাকা জারিফের দিকে তাকিয়ে মুচকে হেসে উপরের দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে বলতে থাকে,,”স্যার কেমন আছেন?”
জারিফ শুকনো ঢোক গিলে নেয় বার কয়েক।জারিফ লিয়ার চোখ মুখ দেখে বেশ বুঝতে পারছে,লিয়া ইচ্ছে করে ওকে আরো অস্বস্তিতে ফেলতে চাচ্ছে।জারিফ হালকা ঘামতে শুরু করে। বিন্দু বিন্দু ঘাম কপালে জমা হতে থাকে।জারিফ অস্ফুট স্বরে এক ওয়ার্ডে লিয়ার করা প্রশ্নের জবাবে বলে,,”ভালো।”
লিয়া নির্বিকার ভঙ্গিতে ভাবলেশহীন ভাবে বলে,,”স্যার আপনার কথা মাঝে মধ্যে রাহবার এর কাছে শুনি।”
লিয়ার কথা শুনে জারিফ স্তব্ধ হয়ে যায়। আশ্চর্যের সপ্তম আকাশে পৌঁছে যায়।লিয়ার কথা শুনে জারিফ মনে মনে আওড়ায়,,ড্রামা কুইন একটা।মনে হচ্ছে ছয় মাস পর এই প্রথম ওর সাথে আমার দেখা হচ্ছে আর ফাস্ট কথা হচ্ছে।”
জারিফের ভাবনার মাঝেই দোকানদার লোকটা রাজিয়া সুলতানা কে উদ্দেশ্য করে বলে,,”ম্যাডাম আপনারা একটু ওয়েট করুন।জারিফ কে দেখিয়ে বলে,এই ভাই আগে আসছেন।ওনাকে আগে বিদায় দিয়ে নেই।”
দোকানদার এর কথা শুনে,জারিফ ভদ্রতার খ্যাতিরে বেশ শান্ত গলায় স্পষ্টভাবে বলে,,”সমস্যা নেই আমি ওয়েট করছি।আপনি আগে ওনাদের কে দিয়ে নিন।”
জারিফ আরেকটু কর্ণারের দিকে চেপে দাঁড়িয়ে পকেট থেকে ফোন বের করে স্ক্রল করতে থাকে।লিয়া একটা পায়েল দেখিয়ে ওর আম্মু কে বলে, আম্মু এটা আমার পছন্দ হয়েছে।এটা নেওয়া যায়।”
রাজিয়া সুলতানা পায়েল টি হাতে নিয়ে দেখে বিস্মিত গলায় বলে,,”এই লিয়া এটার তো অনেক গুলো পাথর নেই দেখছি।এটা নিবি?অন্যটা দেখ নাহয়।”
লিয়া অন্য গুলোতে চোখ বুলিয়ে নিয়ে ঠোঁট উল্টে বলে,,”নাহ্।অন্যগুলো আমার ভালো লাগছে না।এইটাই পছন্দ হয়েছিলো।আচ্ছা বাদ দেও,নেবো না।”
রাজিয়া সুলতানা দোকানদার কে জিগ্গেস করে সেইম ডিজাইনের আর পায়েল আছে কিনা। দোকানদার দেখে জানায়,,”নেই ম্যাডাম,ওয়ান পিসই ছিলো।”
রাজিয়া সুলতানা আর কথা না বাড়িয়ে দোকানদার কে পারফিউম দিতে বলেন।দোকানকার একটা প্যাকেটে পারফিউম আর অন্য একটা প্যাকেটে মেহেদী আর পেস্ট আনে।একটা প্যাকেট জারিফের দিকে বাড়িয়ে দেয় অন্যটা লিয়ার দিকে।
দোকানদার মেহেদী প্যাকেটের ভেতর ঢুকানোর সময়।লিয়া মনে মনে ভাবে,,স্যার তো আর নিজে মেহেদী নিবে না তাহলে কার জন্য মেহেদী নিলো?লিয়া কয়েকবার ভেবে নিলো,এখনই জারিফ কে মেহেদীর ব্যাপারে কিছু বলবে? কি-না?আবার পরক্ষণেই ভাবল, আম্মু পাশে আছে।তাই এখন আমি যদি স্যারকে এসব নিয়ে প্রশ্ন করি,বিষয়টা কেমন দেখাবে না।তারচেয়ে পরে ফোনে শুনে নিবো।লিয়া মনে মনে আওড়ায়, কোনো মেয়ে টেয়ে কে আবার গিফট করবে না তো। কোনো মেয়ের কথা ভাবতেই লিয়ার রা’গ হতে থাকে।লিয়া ড্যাবড্যাব করে জারিফের দিকে তাকিয়ে পরখ করতে থাকে।আবার ভাবে,না শুনে অনুমান করে রিয়াক্ট করা ঠিক হবে না।আগে স্যারের থেকে শুনে নেবো।”
জারিফ পকেট থেকে টাকা বের করতে যাবে,সেই মূহূর্তে রাজিয়া সুলতানা জারিফকে উদ্দেশ্য করে বলে,,”জারিফ বাবা তুমি রাখ।আমি দিচ্ছি।”
জারিফ সাথে সাথেই বিনম্র ভাবেই বলে উঠল,,”না আন্টি আমি দিচ্ছি।”
রাজিয়া সুলতানা শান্ত গলায় বলে,,”আমি তোমার বড়।তো আমি তোমার গার্ডিয়ান হিসেবে বলছি,বাবা আমি দিচ্ছি তুমি না করো না, প্লিজ।”
পাশ থেকে মৃদু আওয়াজে লিয়া বলে,,”স্যার নিন না প্লিজ।”
জারিফ মুখ দিয়ে চ জাতীয় শব্দ উচ্চারণ করে অস্ফুট স্বরে বলে,,”বিষয়টা কিরকম হয়ে গেলো না।”
লিয়া নির্বিকার গলায় বলে,,”কিরকম হবে আবার। বরং ভালো হয়েছে।”
যাওয়ার সময় লিয়া ওর আম্মুর আড়ালে।জারিফের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি একটা হাসি উপহার দেয়।জারিফও বিনিময়ে স্মিত হাসে।
সন্ধ্যার দিকে অভ্র ওর অফিস রুমে বসে কফির মগে চুমুক দিচ্ছে আর ভাবছে,,সেদিন আসার পর লিয়া ফোন দিলো না। আন্টি আঙ্কেল কেউ একবার ফোন দিয়ে খোঁজ নিল না। সৌজন্যেতার খ্যাতিরেও তো লিয়া একবার কল দিতে পারতো।এখন বুঝতে পারলাম।সেদিন যাওয়ার কথা আঙ্কেল সিরিয়াসলি বলেছিলো না। জাস্ট সৌজন্যতার খ্যাতিরেই বলেছিলো।আসলে আমার ভালো লাগার কারনে আমি আগ পিছ না ভেবে সিরিয়াসলি নিয়েছি। অভ্র নিজে নিজেই বিড়বিড় করে ঠোঁট আওড়িয়ে বলে,, অভ্র তুমি ভূল করো নাই। ভালোবাসার জন্য অনেকেই রাজ্য ছেড়ে দেয়। যুদ্ধ করে নগরি ধ্বংস হয়ে যায়,তার বাস্তব উদাহরণ গ্রিস এর ট্রয় নগরী। মানুষ দেশান্তর হয়। সর্বোপরি জীবনও দিয়ে দেয়।তুমি কমিটমেন্ট করো,জীবন দেওয়ার।সেই হিসেবে তুমি কিছুই করোনি। ভালোবাসার জন্য,এখন থেকে তোমার শুরুটা হলো।আর সেদিন যেটা করে আসলে সেটা তো মানবিক।সামনের যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে নাও।এখানে হারা জিতার কোনো কথা নয়।বিষয়টা হচ্ছে ভালোবাসার।লিয়ার রাজ্যটাকে তোমাকে জয় করতেই হবে।তুমি তো তোমার নিজেকে চেনো।এই পৃথিবীর একজন পরিপূর্ণ মানুষের জন্য যা দরকার তা সবই তোমার আছে। অতএব হার জিতের কোনো বিষয় না। এখানে বিষয়টা হলো মাইন্ডের।আর মন তো হচ্ছে সফটওয়্যার এর ও সফটওয়্যার। এখানে সঠিকমত প্রোগ্রাম না হলে, ইনপুট আউটপুট কোনোটাই হবে না।অতএব, প্রোগ্রাম টি সঠিকভাবে আগে প্রয়োগ করো। এখানে ভেঙ্গে পড়ার কিছু নেই।এসব ভেবে অভ্র নিজেকে কঠোর করে।”
চারিদিকে নিস্তব্ধতা।দূর আকাশে মিটমিট করে তারকারাজি জ্বলছে।ব্যালকনিতে রাখা ইজি চেয়ারে বসে জারিফের কাছে ফোন করে লিয়া।জারিফ রিসিভ করতেই লিয়া সালাম দেয়।জারিফ সালামের উত্তর দিয়ে প্রথমেই শান্ত কন্ঠে বলে,,”লিয়া, তখন দোকানে আন্টি তো সন্দেহ করেনি কিছু।”
লিয়া একহাত দিয়ে কিছু চুল সামনে এনে এক আঙ্গুলে চুল পেচাতে পেচাতে বলে,,”উমম! মনে হয় করেনি।কারন আম্মু সন্দেহ করলে,সরাসরি আমাকে এ বিষয়ে কিছু জিগ্গেস করতো।এখন পর্যন্ত জিগ্গেস যেহেতু করেনি, তারমানে সন্দেহ বা আপনার আর আমার সম্পর্কের ব্যাপারে কিছু বুঝতে পারেনি।”
জারিফ অস্ফুট স্বরে বলে,,”ওহহহ।”
লিয়ার মন, মস্তিষ্ক লিয়াকে খোঁচাতে থাকে মেহেদীর বিষয়টা জানার জন্য।লিয়া ভাবে,কিভাবে মেহেদীর কথাটা জিগ্গেস করবে জারিফ কে।কিয়ৎক্ষণ ভেবে নিয়ে লিয়া নির্বিকার গলায় বলে,,”ইট ইজ মাই কিউরিওসিটি।ডোন্ট মাইন্ড।আমি আপনার ব্যক্তিগত সম্পর্কে জানি বাট আপনার ফ্যামেলি সম্পর্কে হয়ত খুব কমই জানি।”
লিয়ার কথা শুনে জারিফ নিঃশব্দে হেসে নরম গলায় বলে,,”ওকে লিয়া।সময়মত জানলেই চলবে। মেহেদী টা আমার ছোট বোনের জন্য।আমি বাসায় ফিরছিলাম।সেই সময় ফোন করে আনতে বলে,ইউ আর ক্লিয়ার?”
জারিফের কথা শুনে লিয়া কিছুটা লজ্জিত হয়।আর মনে মনে আওড়ায়,,”স্যার সত্যি বিচক্ষণ।আমার কথাটা এতো সহজেই বুঝে নিলো।স্যার আমাকে খুব ভালো ভাবেই রিড করতে পারে।লিয়া হালকা কেশে মৃদু আওয়াজে বলতে থাকে,,
“ওহ্।আমি মনে মনে ধারনা করেছিলাম।স্যার আমি আপনার পরিবার সম্পর্কে আরো জানতে চাই।”
জারিফ শান্ত গলায় বলতে থাকে,,”আমার ছোট দুইটা বোন আছে।আব্বু প্রাইমেরি স্কুল এর হেড টিচার।আর আম্মু লেখা পড়া করেছে কিন্তু জীবনটা আমাদের পিছনেই ব্যয় করেছে। জানো লিয়া,আমাদের পিছনে আম্মু খুব কষ্ট করেছে। আব্বুর স্বল্প আয়ে সব কিছু আম্মুকেই মেইনটেইন করতে হয়েছে। জানিনা আম্মুর মুখে প্রাণ ভরে হাসি ফোটাতে পারব কিনা?জীবন শেষে এ কথা আম্মু বলবে কিনা যে,আমি ভালো আছি। আল্লাহ আমাকে ভালো রেখেছেন।”
জারিফের কথা শুনে লিয়া মনে মনে বলে,,এখানেই স্যার ইউনিক। একদিকে যেমন মায়ের প্রতি দায়িত্ব কর্তব্য অন্যদিকে সংসারকে স্টাবলিশ করার চিন্তা, কথাগুলো কত সহজ সরলভাবে বললো।এতেই একজনকে পরিষ্কার করে চেনা যায়।তার জ্ঞানের গভীরতা কতখানি।আচার আচরণের পরিশুদ্ধতা।লিয়া মনে মনে অভ্র এর কথাগুলো ও চিন্তা করলো তাতে দেখলো, সুন্দর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন জীবন ব্যবস্থা স্যারের মধ্যে খুঁজে পাই।জ্ঞানের,সততা, দায়িত্ব বোধ এর প্রতিচ্ছবি স্যারের মধ্যে ফুটে উঠে। জীবন সংগ্রামের প্রতিষ্ঠিত হওয়ার প্রতিটি ক্ষণ উপভোগ্য।এরকম নয়,যে প্রতিষ্ঠিত বাবার প্রতিষ্ঠিত ছেলে।এখানে জীবনের কোনো মজা নেই।
এসব ভেবে ছোট করে শ্বাস নিয়ে লিয়া কোমল গলায় বলে,,”ওহ্!ভালো তো ছিমছাম। সুন্দর হ্যাপি ফ্যামেলি।”
“জানিনা কতটুকু ছিমছাম।দেখি তুমি কতটা করতে পারো।”
লিয়া একহাত মুখের সাথে ধরে ঠোঁট প্রসারিত করে বলে,,”ওকে,স্যার।আসলাম প্রিয়জনের কথা শুনে মনটা ভালো করে ঘুমাতে যাবো।আর আপনি তো হাতে তুলে দিলেন প্রশ্ন পত্র। উত্তর প্রস্তুত করতেই তো আমার সারাটা রাত চলে যাবে। ঘুমাবো কখন আর স্বপ্নই বা দেখবো কখন।”
“তুমি এখনই এতো সিরিয়াসলি নিয়ো না।এমনি মজা করে বললাম।তুমি তোমার মতো করে উত্তর দিও।এখন রিলেক্স মুডে ঘুমিয়ে পড়।ভালো থেকো।”
সময় বড়ই নিষ্ঠুর।কারো জন্য অপেক্ষা করে না।সময় কে ধরে বেঁধে রাখা যায়না। মহান আল্লাহ তায়ালার সকল সৃষ্টির মধ্যে সময়ই বেশি রহস্য জনক।যার হিসেব হয় সকল প্রাণীর বেঁচে থাকা আর মৃ’ত্যুর সাথে।সময় তার আপন গতিতে যেতে থাকে।কে’টে গিয়েছে আরো কয়েকদিন।একমাস হয়েছে লিয়ার আসা।আবার ক্যাডেটে ফেরার দিন ঘনিয়ে আসছে।আজ শুক্রবার। আর চারদিন পরেই লিয়ার ছুটি শেষ।তারপর শুরু হবে, পড়াশোনা,রুটিন মাফিক চলা, নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে থাকা।যদিও আজ পাঁচ বছর যাবৎ লিয়া এসকল কিছুতে অভ্যস্ত। কিন্তু জারিফের সাথে চাইলেই কন্টাক্ট করতে পারবে না,রাত ছাড়া অন্য সময় কথা বলার সুযোগ থাকবে না,আবার ছুটিতে আসা অব্দি দেখা হবে না।ইদানিং এসব ভেবে লিয়ার মন খা’রাপ হয়।লিয়া ভাবে যাওয়ার আগে একবার অন্তত স্যারের সাথে দেখা করা দরকার। কিন্তু কি করে?বাসা থেকে বেরোবো কি বলে? অনেকক্ষন ভাবাভাবি করে লিয়া অরিনের কাছে কল করে।কল রিসিভ করে অরিন চঞ্চল কন্ঠে বলতে থাকে,,
“তা কি খবর লিয়া? মাস্টার মশাইয়ের সাথে তো দারুণ প্রেম করছিস বুঝি?
ফোনের এপাশ থেকে লিয়া লম্বা শ্বাস টেনে নিয়ে বলে,,”রাখ তোর দারুন।”
অরিন উত্তেজিত কন্ঠে বলে,,”এভাবে বলছিস কেনো?কি হয়েছে? আচ্ছা তার আগে বল,এই একমাসে কয়বার ডেটে গিয়েছিস?”
লিয়া ঠোঁট উল্টিয়ে বলে,,”একদিন স্যারের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম,সেটা তো আসার পরের দিনই।আর মাঝে একদিন কাকতালীয় ভাবে শপিং করতে গিয়ে দেখা হয়েছিলো,ব্যস এতটুকুই।”
অরিন অবাক গলায় বলে,,”মাত্র।আমি হলে তো রোজ রোজ ডেটিং এ যেতাম।”
লিয়া অসহায় ফেস করে করুণ গলায় বলে,,”হ্যা তোর যেনো,বাসা থেকে বেরোনোর স্বাধীনতা আছে।আর আমার তো কজ দেখিয়ে যেতে হয়।আর স্যার নিজেও দেখা করার কথা বলে না।আমি যদি কখনো বলি তখন আমাকে উপদেশ দিতে থাকে।সেই সময় নিজেকে একদম নার্সারির বাচ্চা মনে হয়।”
লিয়ার কথা শুনে অরিন খিলখিলিয়ে হাসতে থাকে।লিয়া ঠোঁট উল্টিয়ে করুণ সুরে বলে,,”তুই হাসছিস।আমার কষ্ট গুলো শুনে তোর হাসি পাচ্ছে।”
“সরি দোস্ত।তবে আমি তোকে হেল্প করতে পারি।যাওয়ার আগে তো নিশ্চয় জিজুর সাথে দেখা করতে চাস।উমম,আমি আন্টিকে ম্যানেজ করে তোকে বাসা থেকে বের হওয়ার সুযোগ করে দিবো,এবার হ্যাপি।”
লিয়া চোখে মুখে একরাশ উৎসুকতা নিয়ে এক্সাইটেড হয়ে বলে,,”সত্যি। হেল্প করবি, কিন্তু কি বলবি?”
অরিন ঠোঁট কামড়ে ধরে ফাইভ সেকেন্ড ভেবে নিয়ে বলে,,”আন্টির কাছে কল দিয়ে কিছু একটা বলে তোর বাইরে যাওয়ার ব্যবস্থা করলেই হলো।তোকে অত শুনতে হবে না।”
“আচ্ছা আমি শুনতে চাচ্ছি না।বাট ঝামেলা পাকিয়ে ফেলিস না কিন্তু আবার।”
রাহবার এসে লিয়াকে ডাকতে থাকায়।লিয়া অরিন কে বলে “পরে কথা বলছি”।লিয়া রাহবারের সামনে যেতেই রাহবার মিষ্টি করে বলে,,”আপু তৈরি হয়ে নে। পার্কে যাবো।”
লিয়া বিস্ময়কর চাহনিতে সামনে দাঁড়ানো ছোট ভাইয়ের পানে চেয়ে অবাক গলায় শুধায়,,”এখন পার্কে যাবো কেনো?”
রাহবার ঠোঁটে ঠোঁট চেপে বলে,,”পার্কে আবার কিজন্য যায়?আজকে ছুটির দিন,তাই বলছি চল ঘুরে আসি।”
লিয়া ঠোঁট উল্টিয়ে বলে,,”আমার যেতে ইচ্ছে করছে না।ভাই তুই যা।আমি যাবো না।”
রাহবার মুখটা মলিন করে লিয়ার এক হাত ধরে বলে,,”চল না আপু আমি আম্মু কে রাজি করিয়েছি।এখন তুই যদি না করিস।তাহলে তোকে রেখে আম্মু যেতে চাইবে না।”
ভাইয়ের মলিন মুখটার দিকে তাকিয়ে লিয়া মিষ্টি হেসে এক হাত দিয়ে রাহবারের চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে বলে,,”আচ্ছা,ঠিক আছে।যাবো,এবার খুশি।”
“থেংকিউ আপু।”
“ওয়েলকাম আমার কিউট ভাই।”
সুন্দর একটা ঝলমলে পড়ন্ত বিকেল।বিকেল হলেই পার্কে লোকসমাগম বাড়তে থাকে।ছোট ছোট বাচ্চাদের দৌড়াদৌড়ি,আবার বড় বড় লোকজন এর দাঁড়িয়ে বা বসে আলাপের দৃশ্য দেখা মেলে। বলাবাহুল্য দেখা মেলে অনেক কাপল এরও।লিয়ারা কিছুক্ষণ আগেই আসছে।রাহবার দোলনায় বসেছিলো তখন লিয়া পিছন থেকে ওকে ধাক্কা দিয়েছিলো।এখন লিয়া বসেছে,রাহবার কয়েকবার ধাক্কা দিয়েই বলে,,”আ্যই আপু,আমি আইসক্রিম খাবো।আমি গেলাম।”
রাহবার কথাটা শেষ করে দ্রুত রাজিয়া সুলতানার কাছে গিয়ে টাকা নিয়ে আইসক্রিম কিনতে যায়।রাজিয়া সুলতানা এক পাশে পাকা করা বসার স্থানে বসে ফোন স্ক্রল করছিলেন।
মাঝে মাঝে শুক্রবারের দিন জেরিন আর জারা এই পার্ক টায় ঘুরতে আসে।এখান থেকে ওদের বাসা বেশি দূরে নয়।পায়ে হেঁটে দশ মিনিটের পথ।ওরা দুইবোন বিকেলে হাটতে হাঁটতে এদিকে আসছিলো।সেই সময় জারা বলে, ঝালমুড়ি খাবে।জারা ঝালমুড়ি খেতে থাকে।আর জেরিন সেলফি তুলতে ব্যস্ত থাকে।
লিয়া হাঁটতে থাকে।তখন রাহবার এসে ওর সাথে হাঁটতে থাকে আর সেভেন আপ খেতে থাকে।লিয়া রাহবারের দিকে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে নির্বিকার গলায় শুধায়,,”তুই না আইসক্রিম কিনতে গেলি। কিন্তু হাতে তো সেভেন আপ দেখছি।”
রাহবারের মুখে থাকা পানীয় ঢক করে গিলে নিয়ে বলে,,”সেভেন আপ খেতে ইচ্ছে করলো তাই।তুই খাবি?”
লিয়া হাঁটতে হাঁটতে এক কথায় বলে,,”না।”
রাহবার সেভেন আপ শেষ করে বলে,,”এই আপু দেখ আমি কিভাবে কিক মা’রি।
এটা বলেই রাহবার সেভেন আপ এর বোতল টা নিচে ছেড়ে দিয়ে এক পা দিয়ে কিক করে।আর এক্সিডেন্টলি বোতল টা গিয়ে পড়ে একটু দূরে দাঁড়ানো জারার হাতে থাকা ঝালমুড়ির উপর।সাথে সাথেই জারার হাত থেকে ঝালমুড়ি মাটিতে পড়ে যায়।লিয়া এটা দেখে রাগান্বিত দৃষ্টিতে রাহবারের দিকে তাকিয়ে বলে,,”ভাই সব সময় তুই একটা না একটা ঝামেলা বাঁধিয়ে ছাড়িস।কে বলে ছিলো,এইভাবে বোতলে কিক করতে।দেখলি তোর ফা’জলামির জন্য কি হলো।এখন ঐ মেয়েটা যদি রিয়াক্ট করে।”
রাহবার মুখটা ম্লান করে অপরাধ বোধ নিয়ে মাথাটা নুইয়ে নিশ্চুপ হয়ে থাকে।লিয়া জারার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে।
জেরিন এটা দেখে মনে মনে আওড়ায়,, বে’য়াদব ছেলে একটা। কমন সেন্স নেই কারো গায়ে বোতলটা পড়তে পারে।সেইটা না ভেবে, এ মনে হয় ফুটবল খেলার মাঠ পেয়েছে।”
লিয়া আর পিছনে রাহবার এসে জেরিনদের সামনে যেতেই।জেরিন চোয়াল শক্ত করে কয়েকটা কড়া কথা রাহবার কে বলতে যাবে।সেই সময় মিষ্টি কন্ঠস্বরে লিয়া বলতে থাকে,,”সরি।আমার ভাইয়ের হয়ে আমি সরি বলছি।ও ছোট তো তাই বুঝতে পারেনি।তোমার কোথাও লাগেনি তো?”
জেরিন বিরক্তিকর ফেস নিয়ে মনে মনে বলে,,”যতসব ঢং এতবড় ছেলে নাকি ছোট।বুঝতে পারেনি।”
জারা মিষ্টি হেসে বলে,,”নাহ্, ঠিক আছে। সমস্যা নেই।এটা কোনো ব্যাপার নয়।”
লিয়া কোমল গলায় বলে,,”তুমি করেই বলে ফেলেছি।কিছু মনে করোনি তো?তারপর রাহবার কে উদ্দেশ্য করে বলে,,রাহবার সরি বলো।”
জারা বলে,,”ইটস ওকে।”
লিয়া ঝালমুড়ি কিনে এনে বলে,,”আসলে আমিও খাবো।চলো আমরা সবাই মিলে খাই আর গল্প করি।”
লিয়ার কথা শুনে জেরিনের কোনো হেলদোল নেই।ও একমনে ফোন স্ক্রল করছে।জেরিন কিছুটা বিরক্ত হচ্ছে।তবে জারার কাছে খুব ভালো লাগছে। লিয়ার আচরণে জারা মুগ্ধ হচ্ছে।লিয়া জেরিন কে ঝালমুড়ি খাওয়ার কথা বললে জেরিন না করে।তবে জারা খায় আর কথা বলতে থাকে।লিয়া নাম জিগ্গেস করায়।জারা উত্তর দেয়,,”আমি জারা আর আমার আপু জেরিন।”
লিয়া স্মিত হেসে বলে,,”নাইস নেইম।আমি এনাবুল জান্নাত খাঁন লিয়া।”
হঠাৎ লিয়ার কাছে কেমন জানি মনে হচ্ছে, জারার ফেসটা কিছুটা পরিচিত।কার সাথে মিল আছে লিয়া কিয়ৎক্ষণ ভাবতে থাকে।ফাইভ সেকেন্ড ভেবে নিয়ে লিয়া মনে মনে আওড়ায়,জারিফ স্যারের সাথে কিছুটা মিল মনে হচ্ছে এই মেয়েটার ফেস।লিয়া ভাবে দেখি জিগ্গেস করি তো বড় কোনো ভাই আছে কিনা?ভাই থাকলে,পরে নাম শুনলে শিয়র হওয়া যাবে।লিয়া ঠোঁট প্রসারিত করে বলতে যাবে।সেই সময় রাজিয়া সুলতানা এসে তাড়া দিয়ে বলেন,,”লিয়া চলো। অনেকক্ষন হলো আসছি এবার বাসায় ফিরতে হবে।”
রাজিয়া সুলতানার তাড়া দেওয়াতে লিয়া আর কোনো প্রশ্ন করেনি। শান্ত কন্ঠে বললো,,”আমরা ক্যান্টনমেন্টে থাকি।কখনো ওদিকে গেলে বেড়াতে যেয়ো কেমন।”
আসছি বলে লিয়া চলে যায়।গাড়িতে উঠার সময়ও লিয়া একবার ঘাড় ঘুরিয়ে ওদের দিকে তাকায়।জারা জেরিনকে বলে,,”মেয়েটা অনেক মিষ্টি দেখতে।আরো বেশি মিষ্টি ওনার আচরন।ইশ! এরকম মিষ্টি দেখতে যদি একটা বউ আমার ভাইয়ার হতো।আমরা যদি এরকম একটা ভাবি পেতাম।তাহলে খুব ভালো হতো।”
জেরিন জারার দিকে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে বলে,,”দেখেছিস তুই।মেয়েটা পাজেরো গাড়িতে করে গেলো। আর পোশাক-আসাক দেখেও বড়লোক মনে হলো।আমাদের মত মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য এরকম মেয়ে আশা করা মানে বিলাসীতা ছাড়া কিছু নয়।আর এসব বড়লোকের মেয়েরা খুব ন্যাকা হয়।এসব জেগে জেগে স্বপ্ন দেখা বাদ দে।”
জারা শান্ত গলায় বলে,,”আপু এভাবে বলছিস কেনো?সবাই কি সমান হয় নাকি?আর দেখলি না কত সুন্দর আচরন করলো। ভদ্রভাবে, কত সুন্দর মিষ্টি করে কথা বলে।”
“তুই ছোট তাই তোর কাছে এরকম মনে হচ্ছে।একটা মিষ্টি কথায় গলে গিয়েছিস। আর আমি তোর থেকে বড় তাই আমার চিন্তা ভাবনাও তোর থেকে ডিপ ।
জারা বলে উঠল,,”হয়ত আমাদের পাজেরো গাড়ি নেই। কারো থেকে কি কোনো অংশে কম। কেনো কিছুর অভাব আছে কি?সুখ দুঃখ এর হিসেব করে দেখ,মে বি আমরাই হয়ত বেশি সুখি হতে পারি। একজন হালাল উপার্জন করা সৎ বাবা সৎ চরিত্রের মেধাবী, দায়িত্ববান ভাই যাদের আছে তাদের আর অন্যকোনো সম্পদ দরকার আছে?
অরিন রাজিয়া সুলতানা কে ফোন করে বলেছে,আজকে ওদের বাসায় পিকনিক করতে চায়।ফিহা আর লিয়ার সাথে।তাই লিয়া যেনো আসে।অরিন আবদার করে বসে, আন্টি ফিহাও আসবে তাই লিয়াকেও আসতে দিন। অবশেষে রাজিয়া সুলতানা রাজি হন।
লিয়ার ইচ্ছে হয়েছে জারিফের সাথে রিকশা ভ্রমণ করতে।রিকশাতে পাশাপাশি বসে জারিফ আর লিয়া গল্প করছে।বাতাসে লিয়ার খোলা চুলগুলো উড়তে থাকে।লিয়া মলিন সুরে বলতে থাকে,,
“স্যার কালকের দিন পরেই আমাকে ক্যাডেটে ফিরতে হবে। আপনাকে খুব মিস করবো। ইচ্ছে হলেই যখন তখন আপনার সাথে কথা বলতে পারবো না।”
জারিফ লিয়ার মুখের দিকে শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,,”মন খা’রাপ করো না।তুমি কাছে থাকো বা দূরে।সব সময়ই তোমার প্রতি আমার ভালোবাসাটা সমানই রয়ে যাবে।এক শহর নয় আমি তোমাকে এক আকাশ পরিমাণ ভালোবাসা দিয়ে আমার মনের মাঝে আগলে রাখতে চাই।”
লিয়া মিষ্টি হেসে বলতে থাকে,,”আসলে যে সম্পর্কটা বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব দুইজনের মধ্যে থাকে।সে সম্পর্কে হাজারো বাধা, বিপত্তি, ঝড় ঝাপটা এলেও সেটা টিকে থাকে সারাজীবন। দূরত্ব কখনো ভালোবাসা কে দুর্বল করে না বরং ভালোবাসটাকে বৃদ্ধি করে আরো মজবুত করে।”
শহরের পিচ ঢালা রাস্তা দিয়ে রিকশা যাচ্ছিলো। এরমধ্যে ট্রাফিক সিগন্যাল পড়তেই রিকশা থেমে যায়। চারিপাশে ছোট বড় সব ধরনের যানবাহন আছে।এরমধ্যে লিয়া বাম সাইডে তাকাতেই শকড খায়। লিয়া ভিতু ফেস করে কয়েকবার শুকনো ঢোক গিলে নিয়ে জড়ানো গলায় বলে,,”স স্যা স্যার।”
লিয়ার কথা শুনে জারিফ লিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখে লিয়াকে নার্ভাস লাগছে।জারিফ কিছু বলার আগেই লিয়া এক হাত দিয়ে জারিফের বাহু আঁকড়ে ধরে। আকস্মিক লিয়ার ধরাতে জারিফ মুখ দিয়ে অস্ফুট স্বরে মৃদু আওয়াজে “আহ্”শব্দ করে।লিয়া এমনভাবে জারিফের হাতটা ধরেছে,লিয়ার নখ বসে যায় জারিফের বাহুতে।জারিফ হাতের দিকে তাকিয়ে অসহায় ফেস করে করুণ গলায় বলে,,”এই কি হয়েছে তোমার বলো তো। হঠাৎ খামচে ধরলে যে।”
লিয়া বারকয়েক ঢুক গিলে নিয়ে বলে,,”ঐযে পাশের গাড়িটা আমার আব্বুর। আব্বু গাড়িতে আছে।এখন যদি দেখে নেয় আমাকে।তাহলে আমি একদম শেষ।”
জারিফের হাতে নখ বসেছে সেদিকে লিয়ার কোনো খেয়ালই হয়নি এখনো।জারিফ হাতের দিকে তাকিয়ে বলে,,”তাই বলে এইভাবে আমাকে আহ’ত করবে,ইটস নট ফেয়ার লিয়া।”
এতক্ষনে লিয়া জারিফের হাতের দিকে দৃষ্টি দিয়ে দেখে,নখ বসে গিয়েছে,আর দুই এক জায়গায় হালকা ব্লাড দেখা যাচ্ছে।লিয়া দৃষ্টি সরু করে অপরাধবোধ নিয়ে বলে,,”সরি স্যার।আমি বুঝতে পারিনি।”
জারিফ হালকা হেসে বলে,,”ব্যাপার না। আমি তো এমনি মজা করে বলছিলাম।তবে আজকে এই থেকে একটা ভালো শিক্ষা হলো আমার।এই তুমি কিন্তু আমাদের ওয়িডিং নাইটে এসব নখ টখ রাখবে না।এরকম নখ থাকলে ওয়িডিং নাইট এ নখ দিয়ে আমাকে আহত করে ছাড়বে আ’ম শিয়র।”
জারিফের কথা শুনে একগাদা অস্বস্তি লিয়া কে ঘিরে ধরে।লিয়া লজ্জায় মাথাটা নুইয়ে নেয়।লিয়া মৃদু কন্ঠে বলে,,”এমন একটা মূহুর্তে আপনি এসব কথা কিকরে বলছেন আমার মাথায় ধরছে না।যেখানে টেনশনে আমার আ্যটাক করার অবস্থা হয়েছে।সত্যি যদি আব্বু দেখে নেয়,তাহলে কি হবে?”
জারিফ এক হাত জিন্স এর পকেটে দিয়ে কিছু খুঁজতে থাকে আর বলে,,”একদিন না একদিন তো জানবেই তাই এতো ভ’য় পাওয়ার কিছু নেই জান।”
জারিফের মুখে জান শব্দটা লিয়া এই প্রথম শুনলো।লিয়ার খুব ভালো লাগছিলো। কিন্তু ভালো লাগাটাকে স্থায়িত্ব করতে পারছে না লিয়া,কারন এই ট্রাফিক সিগন্যাল না ছাড়লে লিয়া স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারবে না।যদি ওর আব্বু দেখে নেয়।জারিফের দিকে তাকিয়ে লিয়া ঠোঁটে ঠোঁট চেপে বলে,,”এই আপনি পকেট হাতড়িয়ে কি খুঁজছেন এতো শুনি?আর সেতো একদিন সবাই জানবেই।তবে এইভাবে জানুক এটা আমি চাইনা।”
জারিফ পকেট থেকে একটা মাস্ক বের করে লিয়ার সামনে বাড়িয়ে দিয়ে বলে,,”আপাতত এটা কিছুটা হলেও কাজে দিতে পারে।তবে এটা আমার ব্যবহার করা। এখন তো হাতে অত সময় নেই যে,নিউ একটা কিনে এনে দেবো।যেটা পড়ে তুমি নিজেকে আড়াল করবে।”
জারিফের কথার মাঝেই লিয়া হাত থেকে মাস্ক টা নিয়ে পড়ে নেয়।আর দুইপাশ থেকে চুল এনে মুখের দুই সাইডে দিয়ে দিয়ে মুখটা ডান সাইডে ঘুরিয়ে রাখে।যাতে করে বাম সাইডের গাড়িতে বসে থাকা লিয়ার আব্বু ডান সাইডে দৃষ্টি দিলেও চিনতে না পারে।
লিয়া মাস্ক টা পড়ে জারিফের দিকে একটু চেপে বসে বলে,,”আপনার ইউস করা বলেই হয়ত।এই মাস্ক টা আমার কাছে এতটা স্পেশাল মনে হচ্ছে।”
[চলবে…ইন শা আল্লাহ]