#শুধু_তোমাকেই_চাই
#শারমিন_হোসেন
#পর্ব২১
“জারিফ বাইরে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে আর মনে মনে ভাবছে, হঠাৎ কিজন্য তাসনিম দেখা করার জন্য ডাকছে।আর এমন কি কথা যে ফোনে বলতে পারলো না। সামনা-সামনি বলতে হবে, স্ট্রেইন্জ।আর তাসনিম কে যতটুকু চিনি ওতো যথেষ্ট সিরিয়াস সব বিষয়ে,তাই এমনি এমনি এই সময় দেখা করার কথা বলবে না। নিশ্চয় ইম্পর্ট্যান্ট কোনো বিষয় হতে পারে।
তবে এই ইম্পর্ট্যান্ট বিষয় টা কি?অনেক ভেবেও জারিফ বুঝতে পারলো না।জারিফ রেডি হয়ে বিছানার উপর থেকে ফোনটা হাতে নিতে যাবে সেই সময়।জারা এসে কাঁদতে কাঁদতে বলে,,”ভাইয়া আম্মু সেন্সলেস হয়ে গিয়েছে।”
জারিফ চিন্তিত হয়ে কোনো কথা না বলেই ছুটে চলে যায় জাহানারা বেগম এর রুমে।গিয়ে দেখে জেরিন জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করছে।চোখে মুখে পানির ছিটা দিচ্ছে।জারিফ পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে কয়েকবার ডেকে কোনো সাড়া না পেয়ে,দুই বোনের উদ্দেশ্য বলে,,”হঠাৎ কিকরে এমন হলো?তোরা কোথায় ছিলি?”
জেরিন ভেজা গলায় বলে,,”সকাল থেকেই পেশার টা বেশি ছিলো।মাথা ব্যাথা ছিলো।আর এখন হঠাৎ করেই জ্ঞান হারায়।”
জারিফ ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,,”সকাল থেকে আম্মুর শরীর খা’রাপ ছিলো। তোরা এখন আমাকে এটা বলছিস।আরো আগে বলা উচিত ছিলো।আচ্ছা চিন্তা করিস না। আম্মুকে হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে।”
জাহানারা বেগম কে হসপিটালে এডমিট করা হয়েছে।ডায়াবেটিস লেবেল ত্রিশ।আবার বিপি বেশি হওয়ার জন্য, হঠাৎ করেই সেন্সলেস হয়ে পড়ে। হসপিটালের করিডোরের সামনে জারিফ চিন্তিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।জারিফের বাবা ভিজিটরদের জন্য রাখা চেয়ারে বসে আছেন।জারা জারিফের কাছে গিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে,,”ভাইয়া আম্মু ঠিক হয়ে যাবে তো?”
জারিফ ছোটবোনের মাথায় আলতোভাবে হাত রেখে ভরাট গলায় বলে,,”ইন শা আল্লাহ। চিন্তা করিস না ঠিক হয়ে যাবে।”
জারিফের কথায় জারার কান্নার বেগ বেড়ে যায়।জারা জারিফকে জড়িয়ে ধরে হেঁচকি তুলে কাঁদতে থাকে।জারিফ জারাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলে,,”ছুটকি কান্না করিস না। ডক্টর তো বললো সিরিয়াস কিছু না। ট্রিটমেট করলেই ঠিক হয়ে যাবে।”
জেরিন কেবিনে জাহানারা বেগম এর কাছে আছেন।জারিফ ছোট বোনকে সাহস দিয়ে কথা গুলো বললেও জারিফ ভিতরে ভিতরে কষ্ট আর টেনশন হচ্ছে।ছেলে মানুষ চাইলেই সহজেই তাদের কষ্ট গুলো প্রকাশ করতে পারে না। ভিতরে হাজার কষ্ট থাকবে তবুও বাইরে তাকে শক্ত খোলস ধারন করে থাকতে হয়।
আইনাল হোসেন এক হাত কপালে দিয়ে চিন্তিত হয়ে বসে আছেন।আটাশ বছরের সংসার জীবনে,তার স্ত্রীর অবদান অনস্বীকার্য। ছোট্ট সংসার টাতে অর্থের অভাব ছিলো হয়থ। কিন্তু অভাব ছিলো না, বিশ্বাস আর সুখ শান্তির। ছেলের চাকরি হয়েছে।এখন তাদের সুদিন।অথচ ইদানিং জাহানারা বেগমের অসুস্থতা যেনো পিছুই ছাড়ছে না।
আকাশটা লালচে রং ধারন করে জানান দিচ্ছে সন্ধ্যা নামার। কিছুক্ষণের মধ্যেই ধরিত্রীকে ঢেকে দিবে নীকষ কালো অন্ধকার। ঠিক তেমনি করে ধীরে ধীরে তাসনিম এর মন জুড়েও ঘনঘটা করে অন্ধকারে ছেয়ে যেতে থাকে। তাসনিম এর মনে যে হালকা আশার আলো ছিলো,ধীরে ধীরে সময় যাচ্ছে আর হতাশা আর কষ্ট সেই আলো কে ছেয়ে দিতে থাকে।আর কষ্ট গুলো মনের কোণে বাসা বাঁধতে থাকে। প্রায় পৌনে দুই ঘন্টা যাবৎ তাসনিম কফিশপে বসে আছে। প্রিয় মানুষটার জন্য ওয়েট করছে।অথচ সেই মানুষ টার আসার নাম, গন্ধ ও নেই।আর না ফোনটা রিসিভ করছে।আধা ঘন্টা যাবৎ তাসনিম পাঁচ মিনিট পর পর জারিফের নম্বরে কল দিয়ে যাচ্ছে। রিং হয়ে নো আনসার হচ্ছে। তাসনিম এই টেবিলটা বুকড নিয়ে রেখেছিলো বিধায়,কেউ কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না তারপরেও কফিশপের ওয়েটাররা কেমন জানি আড়চোখে তাসনিম এর দিকে বারবার তাকাচ্ছে।হয়ত এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।কারন একটা মেয়ে এতক্ষন যাবৎ একা একা বসে আছে,বিষয়টা দৃষ্টি কটু।
তাসনিম মনে মনে ভাবে,,আমি জারিফ কে যতটুকু চিনি তাতে তো ও এরকম নয়।কথা দিয়ে রাখবে না।আর যদি নাই আসতো তাহলে তো সরাসরি বলে দিতো,এভাবে আমাকে ওয়েট করতে হতো না।কোনো সমস্যা বা কাজে আটকে গেলে তো ফোন করে বা ছোট্ট একটা মেসেজ দিয়ে বলতে পারতো।”
তাসনিম ছোট করে শ্বাস নিয়ে ভাবে,,”আমি এতবার জারিফকে কল করছি।ও কি পারছে না একবার রিসিভ করে বলে দিতে যে,ও আসতে পারবে না। বন্ধু হিসেবেও তো এটা বলতে পারে।মানছি আমার প্রতি ওর কোনো ফিলিংস নেই তাই বলে কি একটা মেসেজ দিয়েও কি জানানো যায় না যে,ও আসতে পারবে না?”
চারিদিক থেকে সুমধুর কন্ঠে আজানের ধ্বনি ভেসে আসছে।চারপাশে মসজিদ থাকায় স্পষ্ট আজান শোনা যাচ্ছে, মাগরিবের আজান। তাসনিম দীর্ঘশ্বাস ফেলে টেবিলের উপর রাখা তাজা ফুল গুলোর দিকে তাকিয়ে দেখে, ফুলগুলো আগের মত সতেজ টকটকে নেই।কেমন জানি নেতিয়ে গিয়েছে।এই ফুলের মতই তাসনিম এর মনটাও নেতিয়ে পড়েছে,অসাড় হয়ে আসছে তাসনিম এর মন মস্তিষ্ক। তাসনিম উঠে দাঁড়িয়ে ফুলগুলো এক হাতে নিয়ে। ধীর পায়ে হেঁটে রিসিপশন এ গিয়ে বুকড করা বিল পে করে বাইরে এসে দাঁড়ায়। তাসনিম রিকশা নিয়ে হলে ফিরতে থাকে।
রাত সাড়ে আটটা বাজে। জাহানারা বেগম এখন আগের থেকে বেটার আছে।করিডোরের সামনে রাখা চেয়ারে মাথাটা ঝুঁকে এক হাত থুতনিতে রেখে বসে আছে জারিফ। এশার নামাজ আদায় করে আইনাল হোসেন এসে জারিফের কাঁধের উপর এক হাত রেখে শান্ত গলায় বলে,,”জারিফ বাবা তুমি জেরিন আর জারা কে নিয়ে বাসায় যাও।আমি আছি এখানে।”
জারিফ উঠে দাঁড়িয়ে মৃদু আওয়াজে বলে,,”আব্বু তুমি না হয় ওদেরকে নিয়ে বাসায় যাও।আমি থাকছি।”
আইনাল হোসেন মুখে গম্ভীরতার ছাপ টেনে নিয়ে শান্ত গলায় বলেন,,”সমস্যা নেই বাবা তুমি যাও।আমি থাকতে পারবো।আর তোমার আম্মু তো এখন অনেকটা বেটার আছে।তাই আশাকরি আল্লাহর রহমতে কোনো অসুবিধা হবে না।”
জারিফ আর কথা না বাড়িয়ে কেবিনে ঢুকে জাহানারা বেগমের সাথে কথা বলে,জারা আর জেরিন কে নিয়ে বাসায় রওনা হয়। এরমাঝে একসময় সময় দেখার জন্য পকেটে হাত দিয়ে ফোন না পেয়ে,জারিফ কিছুটা অবাক হয়।পরক্ষণেই মনে হয় হয়ত বাসায়ই রেখে আসছে ফোন।সেই সময় তাড়াহুড়া করে হসটপিটালে আসার সময় ফোনটা আনতে ভুলে গিয়েছিলো।
বিষন্ন মন নিয়ে পড়ার টেবিলে বসে আছে তাসনিম। দৃষ্টি সামনে রাখা বইয়ের উপর থাকলেও, মনটা আছে অন্য জায়গায়।মন মস্তিষ্ক জুড়ে বিষন্নতায় ছেয়ে গিয়েছে।জারিফের উপর জমেছে পর্বত সমান অভিমান,ক্ষোভ।জারিফের প্রতি এক আকাশ সমান অভিমান নিয়ে তাসনিম মনে মনে বলে,জোর করে কাউকে ভালোবাসতে নেই।কেউ যদি ভালোবাসে সে এমনিতেই ভালোবাসবে।জোর করে ভালোবাসাকে ভালোবাসা বলে না।আজ আমি জারিফের জন্য ফুল নিয়ে বসেছিলাম।অথচ আমার জায়গায় জারিফের থাকার কথা ছিলো।সব কিছু যদি স্বাভাবিকই হতো,তাহলে আমি নই জারিফ নিজেই ওয়েট করত আমার জন্য।আমি কি এতটা অবহেলা ডিজার্ভ করি জারিফের থেকে?যে সামান্য একটা মেসেজ দিয়েও বলতে পারতো,ও আসতে পারবে না।”
জারিফ বাসায় গিয়ে ফোনটা ওপেন করতেই দেখতে পায় তাসনিম এর অনেকগুলো মিসড কল।সেই সময় জারিফের স্মরণ হয়। তাসনিম এর সাথে দেখা করতে যাওয়ার কথা ছিলো।জারিফ ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে অস্ফুট স্বরে বলে,,”ওহ্ শিট।আজকে তো একের পর এক ভুল।ফোনটা ফেলে গিয়েছি। তাসনিম তো নিশ্চয় আমার জন্য ওয়েট করেছিলো।আমার উচিত ছিলো,ওকে ফোন করে বলে দেওয়া।”
জারিফ দ্রুত তাসনিম এর কাছে কল করে। তাসনিম টেবিলের উপর মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে ছিলো।সেই সময় ফোনটা ভো ভো শব্দে কেঁপে উঠে।ফোনের স্ক্রিনে জারিফের নাম দেখে আজ আর তাসনিম এর মুখে হাসি ফোটে না। তাসনিম মলিন মুখটা নিয়ে ফোনটা রিসিভ করে বিষন্ন গলায় বলে,,”হ্যা বল।”
জারিফ অপরাধ বোধ নিয়ে শান্ত গলায় বলে,,”সরি তাসনিম।আ’ম রিয়েলি সরি।দেখা করতে না যেতে পারার জন্য।তার থেকেও বেশি সরি,ফোন করে না বলতে পারার জন্য।”
তাসনিম ছোট করে শ্বাস নিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে,,”ইটস্ ওকে।”
জারিফ ওর মায়ের অসুস্থতার কথা।তারপর ফোন ফেলে রাখার কথা।আর এইমাত্র বাসায় আসার কথা বলায়। তাসনিম এর অভিমান টা কিছুটা কমে। তাসনিম বুঝতে পারে আসলেই জারিফ সমস্যার মধ্যে ছিলো।
তাসনিম শান্ত গলায় বলে,,”আন্টি এখন কেমন আছেন?”
“আলহামদুলিল্লাহ এখন বেটার আছে।”
“আচ্ছা চিন্তা করিস না। আল্লাহ তায়ালা সব কিছু ঠিক করে দিবেন।আর টেনশন করিস না।ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করিস।”
“ওকে।”
তাসনিম ফোন কে’টে বুক ভরে নিঃশ্বাস নেয়। তবে আজকের বিষয়ে জারিফের উপর তাসনিমের কিছুটা অভিমান থেকেই যায়। তাসনিম এর মন বলছে এরকমটা হওয়া স্বাভাবিক। পরক্ষণেই মস্তিষ্ক বলছে,বিষয়টা এতটাও স্বাভাবিক নয়।কারন এই কয় ঘন্টায় তাসনিম এর কথা জারিফের একবারো মনে পড়ল না। তাসনিম ওয়েট করছে ওর জন্য।
লিয়ার প্রাকটিক্যাল পরীক্ষা শেষ হয়ে গিয়েছে।একদিকে লিয়ার আনন্দ হচ্ছে বাসায় ফিরবে অন্যদিকে ফ্রেন্ডদের থেকে বিদায় নিতে গিয়ে বুক ফে’টে কান্না আসছে।আজ ছয় বছর যাবৎ একসাথে আছে ওরা।তাই বিদায়ের সময় কষ্ট হওয়াটা স্বাভাবিক।গোলগোল চশমার ফ্রেমের ভেতর দিয়েও স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে ফিহার চোখে পানি টলমল করছে। লিয়ার গাল বেয়ে টসটসে কয়েকফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।অরিন ঠোঁট কামড়ে ধরে কান্না টাকে আটকিয়ে জোর করে হাসার চেষ্টা করে বলতে থাকে,,”এই তোরা দুজনে আমার জন্য দোয়া করিস। আমি যেনো কারেন্ট এর মত একটা লাইফ পার্টনার পাই।”
অরিনের কথা শুনে লিয়া আর ফিয়া বিস্ময়কর চাহনিতে অরিনের দিকে তাকিয়ে ইশারায় বোঝায়,,”মানে?সেটা আবার কেমন?”
অরিন দাঁত কেলিয়ে বলে,,”মানে হলো, কারেন্ট যেমন একবার কাউকে ধরলে ছাড়ে না সেরকম। কারেন্ট এর মত একজন জীবন সঙ্গী হবে, সারাজীবন আর ছাড়বে না।”
অরিনের কথা শুনে লিয়া আর ফিহা খিলখিলিয়ে হেসে উঠে।অরিন ওদেরকে হাসানোর জন্যই কথাটা বলেছিলো।
লিয়ার আব্বু বাইরে গাড়িতে ওয়েট করছে লিয়ার জন্য।লিয়া ওদের থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসে।অরিন এক হাত উঁচু করে চিল্লিয়ে বলে,,”এই লিয়া রাতে গ্রুপে আসিস।”
লিয়া মিষ্টি হেসে ঘাড় নাড়িয়ে হ্যা সম্মতি দেয়।গাড়ি চলতে শুরু করে।লিয়া ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকিয়ে ক্যাম্পাস টা আরেক নজর দেখতে থাকে। অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে এখানে। ফ্রেন্ডদের সাথে করা খুনশুটি গুলো,স্যার ম্যামদের করা শাষন আবার উপদেশ সব কিছু মনে পরতে থাকে।
জাহানারা বেগম এখন প্রায় সুস্থ। হসপিটাল থেকে দুই দিন পরেই বাসায় আসছেন। ডক্টর বিশ্রামে থাকতে বলেছেন। বিকেলের দিকে ড্রয়িংরুমেই ছিলেন। হঠাৎ একজন দূর সম্পর্কের আত্মীয় আসেন দেখা করতে। অসুস্থতার কথা শুনে দেখতে আসেন।দূর সম্পর্কের মামাতো বোন হয়।মহিলাটির বয়স পঁয়তাল্লিশ প্লাস হবে এরকম। জাহানারা বেগম এর থেকে এক দুই বছরের বড় হবে হয়ত।পরনে হালকা রঙের সুতি কাপড়।বেশ পরিপাটি হয়েই আছেন।জেরিন নাস্তা দিয়ে যায়। মহিলা টি খেতে থাকেন আর বিভিন্ন কথা বলতে থাকেন।অনেক কথা বলার পর অবশেষে গলা খাঁকারি দিয়ে শান্ত গলায় বলেন,,
“তা জাহানারা তোমার তো দিনদিন শরীর খা’রাপ বাড়ছেই। এবার ছেলেকে বিয়ে দিয়ে বউমা আনতে পারো।ছেলে তো ম্যাজিস্ট্রেট হয়েই গিয়েছে ।আর তো কোনো চিন্তা নেই এখন আর।”
থেমে আবার বেশ নরম কন্ঠে বলতে থাকেন,,
“বলছিলাম যে আমার ছোট মেয়ে রুপাকে তো তুমি চেনোই। লম্বা চওড়া দেখতে শুনতে তো মাশআল্লাহ ভালোই। শুধু পড়া শোনায়ই একটু ডাব্বা।তাছাড়া সব দিক দিয়ে সেরা।আর মেয়ে মানুষের অত পড়াশোনা দিয়ে কি হবে। বাচ্চা কাচ্চা মানুষ করার জন্য যতটুকু দরকার তা জানলেই হলো।এতো আর চাকরি-বাকরি করে খাবে না।”
মহিলাটির কথা শুনে জাহানারা বেগম একটু নড়েচড়ে বসে।মুখটা কিঞ্চিত হা হয়ে যায়। ঠোঁট প্রসারিত করে কিছু বলতে যাবেন তখন আবার মহিলা টি গমগমে কন্ঠে শুধালেন,,”তা এ ব্যাপারে কি বলো তুমি?তুমি বললে আমি রুপার বাবার সাথে কথা বলে আগাতে পারি।”
জাহানারা বেগম চোখ মুখে গম্ভীরতার ছাপ নিয়ে ভরাট গলায় বলেন,,”আসলে এখনই আমি কিকরে তোমাকে বলি বলোতো।জারিফের বাবার থেকে না শুনে।তারপর জারিফের থেকে না শুনে।জারা,জেরিন ও তো আছে।ওদের ও তো মতামতের ব্যাপার আছে ওরাও তো পরিবারের ই সদস্য। সম্পর্কের অংশ।হয়তো ওদের মতামতের প্রায়োরিটি কম হবে। তারপরেও ওদের কেও জানানো উচিত। সর্বোপরি জারিফের কোনো পছন্দ আছে কিনা? সেসব না জেনেই হুট করে আমি কি বলবো বলো?”
জাহানারা বেগম এর কথাটা মহিলার মোটেও পছন্দ হলো না।সেটা তার ফেস দেখেই বোঝা যাচ্ছে। মহিলা টি মুখ অবয়ব গম্ভীর করে বেশ শান্ত গলায় ই বললেন,,
“তোমার আবার বুদ্ধি শুদ্ধি একটু কমই আছে দেখছি।”
জাহানারা বেগম একটু ত্যাড়া করে শুধালেন,,
“কেনো?আমি আবার কিকরে বা বলে কম বুদ্ধিতার পরিচয় দিলাম?”
মহিলাটি গলা ঝাড়লেন। সুক্ষ্ম চাহনিতে চেয়ে নিরস গলায় এক নাগাড়ে বললেন,,
“এত সুন্দর ছেলে।এত বড় চাকরি পেয়েছে।তো এই ছেলের আবার সম্পর্ক না থেকে পারে।আসলে আমি বলতে চাচ্ছি ,রুপা আসলে তোমাকে যেভাবে সেবা যত্ন করবে।অন্য মেয়ে আসলে করবে কোনোদিন?রুপা আমার কাঁদা মাটির মত মেয়ে। তুমি যেভাবে গড়ে নিবে সেই ভাবেই হবে।ও আধুনিকতার নামে অশ্লীলতা পছন্দ করে না।টিভি সিরিয়াল দেখে না।আমাকে ছাড়া তো মার্কেটে যাবেই না।তারপর আমাকে রান্না বান্নার কাজে সাহায্য করে।নিজের মেয়ে বলে কথা গুলো বললাম না।একটু ভেবে দেখার জন্য বললাম। তোমাদের সাথে সম্পর্ক আমার ছিন্ন করার মতো নয়, সম্পর্ক টা আরো গভীর করার জন্য বললাম।”
জাহানারা বেগম শীতল কন্ঠে বলেন,,
“তা আমি জানি। কিন্তু এখানে বিষয় হলো ছেলে মেয়ে বড় হয়েছে তাদের মতামত নেওয়াটা জরুরি।আমি আগেও বলেছি আবারো বলছি,জারিফের বাবা আর জারিফের থেকে না শুনে তোমায় আমি কিছুই বলতে পারছি না।”
জারিফ রাতে খাবার খেয়ে রুমে এসে শুয়ে পড়েছিলো।সেই সময় জাহানারা বেগম এসে দরজার পাশ থেকে হালকা কেশে জারিফকে শুধায়,,”জারিফ বাবা,ঘুমিয়ে পড়েছিস?”
জারিফ উঠে বসে মৃদু কন্ঠে বলে,,”নাহ্। আম্মু ভিতরে আসো।”
জাহানারা বেগম ভিতরে গিয়ে জারিফের পাশে বসে গলা ঝেড়ে বলতে থাকে,,”দেখ বাবা আমার শরীর টা তো ইদানিং ভালো যাচ্ছে না।আর সময় থাকতে থাকতেই সব কিছু করতে হয়।দেরি করা ঠিক নয়।”
মায়ের কথাটা কিসের ইঙ্গিত দিচ্ছে জারিফ সেটা কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পারছে।জারিফ স্পষ্টভাবে সোজাসুজি বলে,,”তোমার কিছু বলার থাকলে বলো।সমস্যা নেই কোনো দ্বিধা ছাড়াই তুমি বলো, আম্মু।”
জাহানারা বেগম হালকা হেসে নরম গলায় বলে,,
“আসলে বাবা চারিদিক থেকে তোর বিয়ের জন্য প্রস্তাব আসছে।আর ভাবছি বিয়ে শাদি সব সময় সঠিক সময়েই করা উচিত।বাবা মা হিসেবে এটা আমাদের একটা বড় দায়িত্ব।তাই বলছি বাবা তোর কি কোনো পছন্দ আছে?”
জারিফ মাথাটা নিচু করে শান্ত গলায় বলে,,”আসলে আম্মু আমি একটা মেয়েকে পড়াতাম ওকে আমার ভালোলাগে।আমি চাই তোমরা রাজি থাকলে।তুমি আর আব্বু প্রস্তাব নিয়ে যাবে।”
জাহানারা বেগম হাসি মুখে বলে,,”ঠিক আছে।এতো ভালো কথা।”
জারিফ গম্ভীরভাবে বলে,,”তবে এখনই নয়। জেরিন, জারা ওরা বড় হয়ে উঠছে।আগে জেরিনের বিয়ে হয়ে নিক তারপর।আর এদিকে আমি নিজেকে একটু গুছিয়ে নেই।”
জাহানারা বেগম জারিফের মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে বলেন,,”আচ্ছা ঠিক আছে।রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড় এবার।”
আজ দুই দিন লিয়া বাসায় আসছে। দুপুরে লাঞ্চ করে এসে বিছানায় শুয়ে ফোনটা নিয়ে জারিফের কাছে কল করে। জারিফ ফোন রিসিভ করে বলে,,
“হ্যা লিয়া বলো।”
জারিফের এহেন কথা শুনে লিয়া কিঞ্চিত বিরক্ত হয় সাথে কিছুটা অভিমান জমে।লিয়া ভাবে,আজ প্রায় ছয়মাস হতে চলছে স্যারের সাথে দেখা হয়নি।কোথায় ফোন দিয়ে নিজে থেকে আগ বাড়িয়ে দেখা করার কথা বলবে।ফোন রিসিভ করেই প্রথমেই তো মিষ্টি করে বলতে পারতো,জান তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।তা না করে হ্যা লিয়া বলো।সব সময় মনে হয় আমিই বলবো দেখা করার কথা,হুহ।কপাল করে একটা আনরোমান্টিক মাস্টার মশাই প্রেমিক পেয়েছি।যে কিনা সব সময় মাস্টার মশাই এর রোল প্লে করতে থাকে।
লিয়ার কোনো উত্তর না পেয়ে জারিফ শান্ত গলায় শুধায়,,”কিহলো।চুপ করে আছো যে।কেমন আছো তুমি?”
লিয়া ত্যাড়া করে বলে,,”আমি যেমনই থাকি না কেনো। আপনার তাতে কিছু আসে যায় কি?”
লিয়ার কথা শুনে জারিফ বুঝতে তার প্রেয়সী অভিমান করেছে।জারিফ শব্দহীন হাসে।শীতল কন্ঠে বলে,,
“কে বলেছে কিছু আসে যায় না?তুমি রাগ করলে, আমার আসমান জমিন এক হয়ে যায়।আমার জন্য নিঃশ্বাস নেওয়াটা কষ্ট হয়ে যায়।এতএত অক্সিজেন থাকা সত্ত্বেও মনে হয় আমি যেনো পর্যাপ্ত অক্সিজেন পাচ্ছি না।তুমি তো আমার দিলরুবা তাই প্লিজ আর রা’গ করে থেকো না।”
লিয়া নিরস গলায় বলে,,”থাক হয়েছে হয়েছে আর বলতে হবে না।আজ দুইদিন হলো আমি আসছি। আপনার কোনো খোঁজখবর নেই।অথচ আপনার হাতে এখন অফুরন্ত সময়।কোনো টেনশন নেই,পড়াশোনারো চাপ নেই।”
জারিফ শান্ত গলায় বলে,,”আচ্ছা বলো কখন দেখা করবে?কোন জায়গায়?”
ফাইভ সেকেন্ড ভেবে নিয়ে লিয়া আনন্দিত কন্ঠে বলে,,”আজকে আপনাদের বোটানিক্যাল গার্ডেনে যাবো।”
“ওকে।”
লিয়া ঠোঁট কামড়ে ধরে নির্লিপ্ত কন্ঠে বলে,,”স্যার আপনার মনে আছে।আমি বলেছিলাম আপনাদের ক্যাম্পাসটা,আপনি আমাকে ঘুরে দেখাবেন।”
“হুম মনে আছে।আরো অনেক কিছুই আমার মনে আছে। ইচ্ছেকৃত তোমার করা সব ফা’জলামি।চোখে পোকা পড়া,বাতাসে তোমার চুল
জারিফের কথা শুনে লিয়া লজ্জায় পড়ে যায়।জারিফকে থামিয়ে দিয়ে লিয়া বলতে থাকে,,”স্যার লজ্জা দিবেন না,প্লিজ।আর সেই সময় গুলোর জন্য সরি। ইচ্ছাকৃতভাবে আপনাকে বি’রক্ত করার জন্য।”
জারিফ শান্ত কন্ঠে বলে,,”তবে তোমার চুলগুলো যখন বাতাসে আমার মুখে এসে পড়ত।সেই সময় তোমার চুলের থেকে একটা মাতাল করা সুগন্ধ আমার কাছে ভেসে আসত।যদিও আমার কাছে অন্যরকম অনুভূতি হতো। তবুও আমি সেই অনুভূতিটাকে পাত্তা দিতাম না।তারপরেও দেখো শেষমেষ আঁটকে গেলাম তোমার মায়ায়।আমার অবস্থা এখন এরকম হয়েছে যে,দিবানি কে জালমে, ফাঁস গিয়া উসকে জালমে।”
দুজনের মধ্যে আরো কিছুক্ষণ কথা হয়। অবশেষে জারিফ নির্বিকার ভাবে বলে,,”ওকে।তাহলে তুমি গাঙ্গিনাপাড়ের ট্রাফিক মোড়ে এসো।আমি তোমার জন্য ওয়েট করবো।”
“ওকে।”
প্রায় ফাইভ মিনিটস ধরে লিয়া জারিফের জন্য ওয়েট করছে।চারটার সময় এখানে জারিফের থাকার কথা।অথচ এখন চারটা দশ বাজে।লিয়া মিনিট পাঁচেক আগেই এসেছে। ফুটপাতের এক পাশে লিয়া দাঁড়িয়ে আছে।ব্যাগ থেকে ফোন বের করে জারিফের কাছে কল দিতে যাবে,সেই সময় একটা জাম কালারের ক্যারোলা গাড়ি এসে লিয়ার পাশেই ব্রেক করে।লিয়া একনজর গাড়িটার দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলে,,এত এত ফাঁকা জায়গা থাকতে গাড়িটাকে আমার গা ঘেষেই দাড় করাতে হলো, অদ্ভুত।”
লিয়ার এসব ভাবার মাঝেই গাড়ির কাঁচ নামিয়ে গাড়িতে থাকা মানবটা হাঁক ছেড়ে ডাকতে থাকে,,”হেই মিস লিয়া।”
পুরুষালি কন্ঠ স্বরে নিজের নামটা শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই অভ্র কে দেখে লিয়া অবাক হয়,কপালটা খানিক কুঞ্চিত হয়।সাথে প্রচন্ড বি’রক্ত প্লাস রা’গ হতে থাকে।
অভ্র গাড়ির ডোর খুলে নেমে এসে লিয়ার পাশে দাঁড়িয়ে হাস্যোজ্জ্বল মুখে শান্ত গলায় শুধায়,,”মিস লিয়া আপনি এখানে?কেমন আছেন?”
লিয়া নিরস গলায় বলে,,”ভালো আছি।”
অভ্র আনন্দিত কন্ঠে বলতে থাকে,,”এই সময় আপনাকে এখানে দেখে আমি অনেকটা অবাক হয়েছি।তবে ভালোও লাগছে আপনাকে দেখে।এমনিতেও মাঝে মাঝে আঙ্কেলের সাথে আমার কথা হয়।শুনেছি আপনার আসার কথা।তা আপনার পরীক্ষা কেমন হয়েছে।”
লিয়া ফুঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে এক ওয়ার্ডে বলে,,
“ভালো।”
অভ্র লিয়া কে উদ্দেশ্য করে বলে,,”তা আপনি কি কোথাও যাচ্ছেন? না মানে কিছু মনে না করলে আমি আপনাকে ড্রপ করে দিতাম।”
লিয়া জোর করে মুখে হাসি টেনে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,”নো থ্যাংকস।”
অভ্র গমগমে কন্ঠে বলতে থাকে,,”মিস লিয়া প্লিজ কোনো হেজিটেশন ফিল করবেন না অন্তত আমার কাছে।আপনি শপিং এ যাবেন চলুন আমি আপনার সাথে যাচ্ছি। ফিউচারে তো আমার সাথে শপিং, লং ড্রাইভে যাবেনই তাই এতো লজ্জা পাবেন না, প্লিজ।আজ থেকেই না হয় একটু অভ্যাস করলেন গাড়িতে আমার পাশে বসা আর শপিং করা।”
অভ্র এর কথা শুনে লিয়ার রাগের পারদ আকাশ ছুঁয়ে যায়।হাতে থাকা ফোনটা চেপে ধরে রা’গ টা কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে।তারপর নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে বেশ শান্ত গলায় বলে,,”আসলে আমার বান্ধবী আমার জন্য ওয়েট করছে।এক হাত দিয়ে দেখিয়ে বলে,,এই তো ঐ মলের সামনেই ও আছে। তাই বুঝতেই পারছেন।”
লিয়ার কথাটা শুনে অভ্র কিছুটা হতাশ হয়।নরম গলায় বলে,,”আচ্ছা ঠিক আছে মিস লিয়া।তবে আপনি আপনার ফ্রেন্ড এর সাথে শপিং বা ঘোরাঘুরি করে আসেন। ততক্ষণ আমি আপনার জন্য ওয়েট করছি।আপনাকে বাসায় পৌঁছে দিবো কেমন।”
অভ্র এর কথা শুনে লিয়ার ইচ্ছে করছে ভ্যা ভ্যা করে কান্না শুরু করতে আর না হয় বেয়াদব টার দুই গালে ঠা’স ঠা’স করে দুইটা চ’ড় লাগিয়ে দিতে।ও কি বুঝতে পারছে না।লিয়া আসলে ওকে এভয়েড করছে।লিয়া যথেষ্ট শান্ত গলায় বলে,,”আজ নয় মিস্টার অভ্র।”
এরমধ্যে অভ্র এর ফোন বেজে উঠে।ফোনে কথা বলার সময় অভ্র বলে,,”ওকে বাবা আমি এখনই আসছি।”
অভ্র এর শেষের কথা শুনে লিয়া স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।মনে মনে ভাবে একবারের মতো যাক বাঁচা গেলো বোধহয়। এরমধ্যে অভ্র গম্ভীরভাবে বলে,,”সরি মিস লিয়া ইম্পর্ট্যান্ট কল এসেছে,আমাকে আর্জেন্ট অফিসে যেতে হবে।”
লিয়া হাসি মুখে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে বলে,,”আপনি যান।ব্যাপার না আমাকে নিয়ে টেনশন করবেন না।”
অভ্র চলে যেতেই লিয়া স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।বিড়বিড় করে বলে,, থেংক গড। বাঁচা গেলো।”
আরো মিনিট তিনেক পরে জারিফ আসে।জারিফ এসে দৃষ্টি সরু করে লিয়ার দিকে তাকিয়ে অপরাধীর সুরে বলে,,”সরি।তোমাকে ওয়েট করানোর জন্য। হঠাৎ করে একটা কাজে আটকিয়ে গিয়েছিলাম।”
লিয়া কপাল কুঁচকে গম্ভীর মুখ অবয়ব করে গম্ভীর কন্ঠে বলে,,”এই আপনি যানেন আমি কতক্ষন ওয়েট করছি। পাক্কা পনেরো মিনিট ধরে এখানে দাঁড়িয়ে আছি।এভাবে দেরি করার জন্য কোনদিন আপনার জায়গায় অন্য কেউ এসে আমাকে নিয়ে চলে যাবে।সেই দিন আপনি শুধু আফসোস করবেন,হুহ।”
জারিফ ইন্নোসেন্ট ফেস করে মৃদু আওয়াজে বলে,,”তুমি যত পারো আমাকে ব’ক।তবুও এইভাবে বলো না, প্লিজ।তোমার পাশে আমি ছাড়া অন্য কাউকে আমি মেনে নিতে পারবো না।তোমার সাথে অন্য কাউকে ভাবতেও আমি পারিনা।তোমার আমার মধ্যে ভালোবাসা কতটা,তা আমি জানি না!তবে তোমাকে ছাড়া কেউ আমাকে ভালো রাখতে পারবে না।”
বিকেলে কলিং বেলের শব্দ হওয়ায়,রাজিয়া সুলতানা গিয়ে দরজা খুলে অরিন কে দেখে অবাক হয়।এই সময় অরিনকে এখানে দেখে অবাক হওয়ারই কথা।কারন লিয়া বলে গিয়েছে ও অরিনের সাথে শপিং এ গিয়েছে। অরিন নাকি শপিং করবে,ফোন করে লিয়াকে ডেকেছে।এখন লিয়া আর অরিনের একসাথে থাকার কথা। অথচ অরিন একা এখানে।অরিন কে দেখে রাজিয়া সুলতানার মুখটা আশ্চর্যান্বিত হয়ে যায়।অরিন মিষ্টি হেসে গড়গড় করে বলতে থাকে,,
“আন্টি কেমন আছেন?লিয়া কি করে?”
অরিনের এহেন প্রশ্নে রাজিয়া সুলতানা স্তব্ধ হয়ে যায়।রাজিয়া সুলতানা নির্বাক হয়ে শুধালেন,,
“লিয়া কী করে মানে?লিয়ার না তোমার সাথে থাকার কথা।তাহলে এখন লিয়া কোথায় আছে?”
কথাগুলো শুনে অরিন বার কয়েক শুকনো ঢুক গিলে নেয়।অরিনের বুঝতে বাকি থাকে না।যে,লিয়া ওর সাথে দেখা করার কথা বলে, নিশ্চয় জারিফের সাথে দেখা করতে গিয়েছে।অরিন জোর করে হাসার চেষ্টা করে জড়তা নিয়ে বলে,,”আ আ আসলে আন্টি আমার মনে হয় লিয়া ফিহার সাথে আছে।”
রাজিয়া সুলতানা অরিনের কথাটা বিশ্বাস করতে পারলেন না তারপরেও অরিনকে সেটা বুঝতে না দিয়ে শান্ত গলায় বলেন,,”ভেতরে আসো তুমি।”
অরিন গমগমে কন্ঠে বলে,,”লিয়া নেই,আমি আর ভিতরে গিয়ে কি করব। তারচেয়ে বরং বাসায় চলে যাই।”
রাজিয়া সুলতানা আর বাক্য ব্যয় না করে নিশ্চুপ রইলেন।অরিন আর কথা না বলে দ্রুত প্রস্থান নেয়। অরিন পার্স থেকে ফোন বের করে লিয়ার কাছে কল দিতে যাবে সেই সময় দেখে ফোনে ব্যালেন্স নাই।অরিন মেসেঞ্জার এ মেসেজ দিয়ে শর্টকাটে বলে ঘটনা টা।মেসেজ গিয়েছে বাট এখনো সীন করেনি।অরিন বিড়বিড় করে বলে,,এই লিয়া কি এখন আর ফোন চেক করবে নাকি?এখন তো ওর প্রেমিকের সাথে প্রেম আলাপ করতেই বিভোর থাকবে। মনে হয়না ফোনটা আদৌ চেক করবে কিনা।”
রাজিয়া সুলতানা সোফায় বসে ভাবতে থাকেন।তারপর লিয়ার কাছে কল করেন।লিয়া রিসিভ করতেই গম্ভীর কন্ঠে বলেন,,”এই লিয়া তুই কোথায়?”
এহেন প্রশ্নে লিয়া কিছুটা চিন্তিত হয়। তারপরও বেশ স্বাভাবিক ভাবে মিথ্যে বলে,,”কেনো আম্মু?আমি অরিনের সাথে শপিং মলে।”
রাজিয়া সুলতানা শান্ত গলায় বলে,,”আচ্ছা ঠিক আছে।এমনি মনে হলো ঠিকমত আছিস কিনা তাই ফোন করলাম।”
রাজিয়া সুলতানা আর দ্বিতীয় কথা না বলে কল কে’টে দেয়।রাজিয়া সুলতানা ভাবতে থাকেন।লিয়া কিজন্য মিথ্যে বললো?আর ইদানিং লিয়ার মাঝে অনেক পরিবর্তন দেখা যায়।আগে বাসায় আসলে কখনো বাইরে যাওয়ার কথা বলতো না।অথচ আজ একবছর যে কয়বার ছুটিতে আসছে সেই কয়বারই আসার দুদিনের মাথায়ই একা একা বাইরে যাওয়ার জন্য বাহানা দিতে থাকে।রাজিয়া সুলতানা মনে মনে আওড়ায়,,আমাকে সত্যিটা জানতে হবে।লিয়া আসলে কি লুকাচ্ছে।
লিয়া ফোনটা রেখে জারিফকে উদ্দেশ্য করে বলে,,”আপনার সাথে দেখা হবার পর থেকে আম্মুকে যত মিথ্যে কথা বলেছি।আমি শিয়র আমার আঠারো বছর জীবনে আগে কখনো বলেনি।”
রাজিয়া সুলতানা এডুকেটেড প্লাস বিচক্ষণ মহিলা।তাই উনি কিছু একটা ভেবে লিয়ার মোবাইলের লোকেশন বের করেন। লোকেশনে দেখা যায় বাকৃবি ভার্সিটির বোটানিক্যাল গার্ডেন লেখা যায়গায় লাল বিন্দু টি জ্বলতে থাকে।তারমানে লিয়া এখন বোটানিক্যাল গার্ডেন এরিয়ায় আছে।রাজিয়া সুলতানা বিষয়টা ক্লিয়ার হওয়ার জন্য দ্রুত বোটানিক্যাল গার্ডেন এর দিকে রওনা হন।
আসলে ছেলে মেয়ের জন্য প্রত্যেক টা বাবা মা রাই খুব পজেসিভ হয়। রাজিয়া সুলতানা ভাবেন আমার জানা টা জরুরী। লিয়া ছোট ও যদি আবেগের বশে ভুল কিছু করে বসে।এর জন্য মা হিসেবে আমি দায়ী থাকব।যে আমি ঠিকমত দেখে শুনে রাখতে পারিনি সেইজন্য মেয়ে বিপথে চলে গিয়েছে।মেয়ে কোথায় যায়?কার সাথে দেখা করে?এটা আমাকে জানতেই হবে।”
রাজিয়া সুলতানা বোটানিক্যাল গার্ডেনে গিয়ে এদিক সেদিক দৃষ্টি বুলিয়ে নিয়ে অবশেষে দেখতে পান।জারিফ আর লিয়াকে।জারিফ আর লিয়া পাশাপাশি বসে গল্প করছে।
[চলবে…ইন শা আল্লাহ]
(সুপ্রিয় পাঠক-পাঠিকা,আমার এই গল্পটা পুরোটাই কাল্পনিক।তারপরেও যদি এই গল্পের কোনো অংশ বা কোনো চরিত্র যদি কারো সাথে কাকতালীয় ভাবে মিলে যায়।তাহলে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।আর সাইলেন্ট রিডারগণ গল্প পড়ে,ভালো মন্দ একলাইন অনুভূতি প্রকাশ করবেন।এদিকে অলসতা আমাকে ঘিরে ধরেছে,লিখতে ইচ্ছে করে না। ধন্যবাদ সবাইকে।)