#শুধু_তোমাকেই_চাই
#শারমিন_হোসেন
#পর্ব২৮
“সন্ধ্যার দিকে রুমে শুয়ে আছে লিয়া।চোখ বন্ধ করে বালিশে মুখ গুঁজে আছে ।আসার পর থেকে রুমেই আছে।বাড়ির সবাই নিচে লিভিং রুমে বসে বিয়ের প্রোগ্রাম এর ব্যাপারে কথাবার্তা বলতে ব্যস্ত আছে।এমন সময় রাজিয়া সুলতানা এসে লিয়ার মাথায় স্নেহের হাত রাখতেই লিয়া চোখ মেলে তাকায়।রাজিয়া সুলতানা ম্লান কন্ঠে বলেন,,”আমি জানি তোর মন খা’রাপ। তোর কষ্ট টা আমি বুঝতে পারি।তবে আমি বলি,তুই এইভাবে মন খা’রাপ করে না থেকে সবার সাথে স্বাভাবিক ভাবে কথা বার্তা বল।আর বিষয়টা যাতে কেউ বুঝতে না পারে,সেইজন্য আপাতত যে কয়দিন এখানে আছি।সেই কয়দিন সবার সাথে আগের মতই মিশবি।মান সম্মানের ব্যাপার আছে,তাই কাউকে বুঝতে দেওয়া ঠিক হবে না।”
লিয়া ঘাড় নাড়িয়ে হ্যা সূচক সম্মতি দেয়।রাজিয়া সুলতানা নিরস গলায় বলেন,,”বিকেলে সবাই শপিং এ গেলো তুই তো গেলি না। তোর জন্যও শপিং করে এনেছে।নিচে গিয়ে দেখবি চল।”
লিয়া মলিন মুখে মৃদু স্বরে বলে,,”আমি একটু পর যাচ্ছি।”
লিয়া বিছানার হেডের সাথে হেলান দিয়ে জারিফের কথা ভাবতে থাকে।লিয়া মনে মনে ভাবে,আমি যতটুকু স্যারকে চিনি জানি তাতে আমার মনে হয়।আমাকে ছাড়া স্যার-ও ভালো নেই।আমি যতটা কষ্ট পাচ্ছি ,তার থেকেও হয়তো বেশি কষ্ট স্যার পাচ্ছেন।স্যার তো খুব নীতিবান মানুষ।স্যারের অনুভূতি আমি জানি।স্যারের অনুভূতি জুড়ে শুধু আমারই বসবাস। সেখানে আমাকে ছাড়া স্যারের ভালো থাকার প্রশ্নই আসে না।
পরের দিন,,,,
জারিফ বেনাপোল সীমান্তে গিয়েছে তদন্ত করার জন্য।ওখানে গিয়ে রাজনৈতিক লিডারদের চাপের মুখে পড়তে হচ্ছে।একজন নেতা তো ফোন করে অফার দিচ্ছে সাথে হুমকিও।আর বলছে প্রতিবেদন টা যেনো তাদের মন তো হয়।জারিফ সরাসরি নাকোচ করে বলে,এটা আমার নৈতিকতার ব্যাপার।দেশের জন্য,আমাকে সঠিক প্রতিবেদন তৈরি করতে হবে।আমাকে কোনো প্রকারের লোভ বা হুমকি,ধামকি দিয়েও লাভ হবে না। আমার নীতি থেকে আমি কখনোই এতটুকু বিচ্যুত হবো না।
সব দিক দিয়েই জারিফ হতাশার মধ্যে আছে।এদিকে কর্ম ক্ষেত্রেও প্রতিকূল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।আবার অন্যদিকে লিয়ার সাথে কোনো যোগাযোগ নেই। লিয়ার সাথে যোগাযোগ না থাকায় মানসিক ভাবে খুবই কষ্টের মধ্যে আছে জারিফ।ঠিকমতো ঘুমাতে পারে না।মনটা সার্বক্ষণিক লিয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।কাজে মন বসানোও বড় দায় হয়েছে।জারিফ প্রতিবেদন এর ড্রাফ করতে থাকে। মাঝে মাঝেই আ্যবসেন্ট মাইন্ড হয়ে যাওয়ার কারনে লেখা গুলো বারবার কাঁটতে হচ্ছে।বারবার কাঁটা কাটি হওয়ার জন্য,জারিফের নিজের উপরই রা’গ হচ্ছে।জারিফ রাগে ড্রাফ পেপারটা এক হাতের মুঠোয় নিয়ে দুমড়ে মুচড়ে ফেলে।পাশে থাকা বাস্কেটের মধ্যে হাতের মুঠোয় থাকা মুড়ানো পেপারটা ছুঁড়ে ফেলে দেয়।দুই আঙ্গুল দিয়ে কপালে স্লাইড করে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা চালায়।জারিফ লিয়ার প্রতি অভিযোগ নিয়ে অস্ফুট স্বরে বলে,,”এমন একটা চ্যালেঞ্জিং সিচুয়েশনে আমার খুব তোমাকে প্রয়োজন ছিলো লিয়া।তুমি পাশে থাকলে, তোমার সাথে কথা হলে আমি মানসিক শান্তি পেতাম।আর আমি মেন্টালি প্রশান্তিতে থাকলে যে কোন কাজ করাই আমার জন্য ইজি হয়ে যেতো।এক পলক তোমাকে না দেখলে আমার কিছুই ভালো লাগে না।একবার তোমার সাথে কথা না হলে,আমি ঘাবড়ে যাই।না জানি কি হয়েছে?সেখানে আজ চারদিন হয়ে যাচ্ছে তোমার মায়াবী মুখটা না একবার দেখেছি।আর না তোমার মিষ্টি স্বর শুনতে পেয়েছি।তুমি ছাড়া যা কিছু দেখি সেসব কিছুতে আমার নজর কোনো পাত্তা দেয়না।আমার দুচোখ তৃষ্ণার্ত শুধু তোমারই জন্য।তুমি বিনা আমার শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া খুবই কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে।আমি এতটাই উন্মাদ তোমার জন্য,যে আমার মন মস্তিষ্ক সব সময় তোমার নাম স্মরণ করছে।মিস করা যদি ভালোবাসা হয়।তাহলে প্রতিটা নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে আমি তোমাকে ভালোবাসি।কারন প্রতি শ্বাসে শ্বাসে আমি তোমায় মিস করছি।তুমি ছাড়া এতটা কষ্টের মধ্যে আছি,সেটা আমি কাউকে বলে বোঝাতে পারবো না।তুমি কিভাবে এমন অবস্থায় আমাকে ফেললে?আমার জন্য তোমার কি একবারো মায়া হচ্ছে না?তোমার সাথে কথা না হলে ঠিক কতটা কষ্টে আমি থাকতে পারি। প্লিজ,লিয়া আর্লি আমার সাথে যোগাযোগ করো।
বিয়ে বাড়ি মানেই হইহুল্লোড়।সবাই আনন্দ উৎফুল্ল হয়ে কাজ করছে। বাড়ির বড়রা কাজ করতে ব্যস্ত।ছোটরা হলুদ শাড়ি পড়ে বিভিন্ন স্টাইলে সেলফি তুলতে ব্যস্ত।কথায় আছে না যার বিয়ে তার খবর নেই পড়াপড়শির ঘুম নেই।এই কথাটা বাকিদের সাথে কতটা যায় জানিনা তবে তাসনিম এর সাথে কথাটা যথাযত।সবাই যেখানে আনন্দ উৎসবে মশগুল সেখানে তাসনিম নির্বিকার। তাসনিম কে হলুদ শাড়ি, কাঁচা হলুদ গাঁদা ফুল দিয়ে সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। হলুদের জন্য ছাদে স্টেজ করা হয়েছে। প্রথমে বড়রা হলুদ ছোঁয়ায় তারপর ছোটরা।তুলির জোড়াজুড়িতে অবশেষে লিয়া হলুদ শাড়ি পড়েছে।লিয়া সবার সাথে মিশছে, কথাবার্তা বলছে তবে মুখটা সব সময় ফ্যাকাশে হয়েই আছে।
উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ মুখে হলুদ লেগে আছে।এই অবস্থায় তাসনিম কে দেখতে খুব সুন্দর লাগছে।আলিফের গায়ে ছুয়ানো হলুদ তাসনিম এর শরীরে ছুয়ানো হয়।সকাল দশটার দিকে আলিফের হলুদ পর্ব শেষ হয়।তারপর হলুদের তত্ব নিয়ে আলিফের দুইজন ফ্রেন্ড রওনা হয় জামালপুরে ।আসতে আসতে বিকেল হয়ে যায়।আর এখন বিকেলেই হলুদ ছোঁয়ানো হয় তাসনিম কে।
শেষের দিকে লিয়া যায় তাসনিম কে হলুদ দিতে।লিয়া জোর করে মুখে হাসির রেখা টেনে কোমল গলায় বলে,,
“তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে আপু।”
তাসনিম লিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে লক্ষ্য করে, লিয়াকে কেমন জানি বিষন্ন লাগছে।আগের মতো প্রাণবন্ত লাগছে না।আজ দুইদিন লিয়াকে নোটিস করেছে তাসনিম।কেমন যেনো আগের মতো কথা বলে না লিয়া।সবার সাথে থেকেও, নিজেকে একা করে রাখে। উদাসী হয়ে কিছু নিয়ে সব সময় লিয়া চিন্তা করতে থাকে। তাসনিম ও আর আগের মতো লিয়ার সাথে মেশে না।বলা যায় ইচ্ছে করেই এড়িয়ে যায়।তাসনিম মনে মনে ভাবে,কিছু একটা হয়েছে নিশ্চয়।যার জন্য লিয়াকে উচ্ছ্বসিত দেখা যায় না।লিয়া তো সব সময় হাসি খুশি থাকতো।সেই লিয়ার হঠাৎ এই পরিবর্তনের পেছনে কোনো কারন আছে তো বটেই।
লিয়ার ম্লান মুখ দেখে তাসনিম এর মনে মায়া হয়। তাসনিম মায়া জড়ানো স্বরে বলে,,”লিয়া তুই ঠিক আছিস?”
লিয়া তাসনিম এর দুই গালে হলুদ দিয়ে বলে,,”হুম।আমার তো খুব ভালো লাগছে।হুট করে তোমার বিয়ে না হয়ে,আরেকটু সময় নিয়ে হলে আমি আরো বেশি আনন্দ করতে পারতাম।তোমার বিয়ে নিয়ে আমার কত শখ ছিলো।এই করবো সেই করবো। কিন্তু দেখো এখন এত অল্প সময়ে আনন্দ গুলো কম হয়ে যাচ্ছে।”
লিয়ার কথা বলার মাঝেই তুলি এসে তাসনিম এর দিকে ফোন বাড়িয়ে দিয়ে বলে,,আপু এখন থেকে তোর উচিত ফোনটা সব সময় সাথে সাথে রাখা।কারন তোর হবু বর হুটহাট করে যখন তখন কল দিতে পারে।এইযে প্রায় আধা ঘন্টা ধরে আলিফ ভাইয়া ফোন দিয়ে যাচ্ছে।ফোনটা রুমে বাজছিলো,ভাগ্যিস আমি মেকআপ ঠিক করার জন্য রুমে গিয়েছিলাম।”
তুলির কথার মাঝেই ফোনটা শব্দ করে আবার বেজে উঠে। তাসনিম ফোনে দৃষ্টি দিয়ে দেখে হটস আ্যপে ভিডিও কল দিয়েছে আলিফ। প্রথমে রিসিভ করতে তাসনিম ইতস্তত বোধ করে। অবশেষে রিসিভ করে দৃষ্টি নিচু করে মৃদু আওয়াজে সালাম দেয়।আলিফ ফোনের স্ক্রিনে অপলক চাহনিতে চেয়ে মুগ্ধ হয়ে সফট ভয়েজে বলে,,”আমার শুভ্র পরিকে আজ হলুদ সাজে একদম হলুদ পরি লাগছে।তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।”
তাসনিম দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে নিশ্চুপ রয়।আলিফ ইচ্ছাকৃতভাবে তাসনিম কে লজ্জায় ফেলতে বলে,,”আমার গাঁয়ের ছোঁয়া হলুদের ছোঁয়া পেয়ে তুমি তো বেশি সুন্দর হয়ে গিয়েছো।না জানি আমার স্পর্শ পেয়ে আরো কতটা সুন্দরী হবে।আমার চোখ ঝলসে যাবে তোমার রুপে।তোমার রুপের আগুনে পুড়ে আমি সিক্ত হতে চাই।তোমাকে এই লুকে দেখে আমি তো নতুন করে আবার তোমার প্রেমে পড়ে গেলাম।তবে আমি বারংবার তোমার প্রেমেই পড়তে চাই।যদি তোমার অনুমতি পাই।”
কথাগুলো শুনে তাসনিম এর মুখ লজ্জায় লালাভ বর্ণ ধারণ করে।কান উষ্ণ হতে থাকে। হার্টবিট ফাস্ট হতে থাকে। তাসনিম মুখ ফুটে কিছু বলতে পারছে না।আর না পারছে ফোন টা রাখতে। তাসনিম প্রসঙ্গ বদলাতে জড়ানো স্বরে বলে,,”ভাইয়া ফুপ্পি কি করে?”
এমন সময় তাসনিম এর এমন কথা শুনে আলিফ কিঞ্চিৎ বিরক্ত হয়।আলিফ গম্ভীর কন্ঠে বলে,,”তোমাকে দেখে আমার কোনোদিন বোন বোন ফিলিংস আসেনি।এই মুহূর্তে তো বোন ফিলিংস আসার প্রশ্নই আসে না। আমার হবু বউয়ের মুখ থেকে ভাইয়া ডাকটা শোভা পাচ্ছে না।”
তাসনিম কথাটা শুনে কিছুটা লজ্জিত হয়।ঠোঁট নেড়ে বলে,,”সরি।আসলে ভাইয়া আমি আপনার ব্যাপারে ইজি হতে পারছিনা।”
আলিফ স্মিত হেসে বলে,,”ইটস্ ওকে।তবে তুমি যত তাড়াতাড়ি ইজি হবে।আর শুধু মাত্র ট্রুলি আমাকে নিয়েই চিন্তা করবে।তাহলেই তুমি প্রকৃত সুখ শান্তি তত তাড়াতাড়ি পাবে।আমাদের দু’জনের জন্যই জীবন চলাটা তত সহজ হবে।”
আলিফের বলা কথাটা তাসনিম অনুধাবন করতে থাকে। তাসনিম ভাবে,সত্যিই আমাকে দ্রুতই ইজি হতে হবে।সেটা শুধু মাত্র আমার নিজের জন্যই।
আলিফ ফোনে সময় দেখে নিয়ে শান্ত স্বরে বলে,,”আর মাত্র টুয়েন্টি ফোর আওয়ারস পরেই দেখা হচ্ছে তোমার সাথে,ইন শা আল্লাহ।জানি না তোমার অনুভূতি কি?তবে আমার মনে আনন্দের স্রোত বইছে।আর একদিন পরেই তুমি আমার হবে, একান্তই আমার।যেখানে তোমাকে হারানোর আর কোনো ভ’য়, শঙ্কা থাকবে না। সারাজীবন এর জন্য তোমাকে পেতে যাচ্ছি।লাভ ইউ সুইটহার্ট।”
কথাটা শেষ করার পর ফাইভ সেকেন্ড পর আলিফ কল কাটে।ফোনের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস টেনে নিয়ে অস্ফুট স্বরে বলে,, রিটার্ন কথাটা আজ না বললেও একদিন নিশ্চয় তুমি বলবে।আমি আশায় থাকবো সেই কাংখিত কথাটা শোনার জন্য।তোমার ওষ্ঠ মেলে বলা লাভ ইউ টু কথাটা আমার জন্য আমি শুনতে চাই।তবে জোর জবরদস্তি করে নয়।আমি আমার ভালোবাসা দিয়েই তোমার মন জয় করে নেবো একদিন।
সন্ধ্যার পর তাসনিম কে মেহেদী পড়ানো হয়।হাতের মাঝখানে লাভ সেভের মধ্যে ইংরেজীতে A+T লেখা হয়। তাসনিম হাতের লেখার দিকে তাকাতেই আলিফের কথা স্মরণ হতে থাকে।আলিফের করা কেয়ার গুলোর কথা মনে হতে থাকে।যমুনা নদীর তীরে আলিফের পাশাপাশি হাঁটার কথা মনে হতে থাকে। আলিফের কথা ভাবতে খা’রাপ লাগছে না।মন মস্তিষ্ক কেনো জানি বারবার আলিফের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।নতুন কিছু ভালোলগার অনুভূতি হচ্ছে হৃদয় কুঠরিতে।
সোফায় এক পাশে বসে লিয়া আরিয়ানের হাতে মেহেদী দিয়ে দেয়।সবার মেহেদী নেওয়া দেখে আরিয়ানও কান্না শুরু করে দিয়েছিলো মেহেদী নিবে বলে। অবশেষে লিয়া যেই মেহেদী দিবে বলেছে অমনি কান্না থামিয়ে খিলখিলিয়ে হাসছে। আরিয়ানের মেহেদী দেওয়া শেষে। লিয়া একহাতে মেহেদী নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে হঠাৎ কিছু ভেবে বাম হাতের তালুতে J+L লিখে।হাতের দিকে তাকিয়ে লিয়া মনে মনে বলে,,এমন একটা দিন আমাদেরও আসবে।আমি সেই প্রতিক্ষায় বসে আছি।সানাই বাজবে সবাই আনন্দ করবে।আপনি বর বেশে আসবেন।আমি বধু বেশে আপনার জন্য অপেক্ষা করবো। আপনার নামে আমি কবুল বলবো।আমাদের ছোট্ট একটা মিষ্টি সংসার হবে।যে সংসার সুস্থ জ্ঞান সম্পন্ন প্রত্যেকটা মেয়েরই একান্ত চাওয়া থাকে।আমার এই স্বপ্ন গুলো পূরণ হওয়ার জন্য আমার শুধু আপনাকেই চাই স্যার। আপনি দ্রুত আসুন।আমার কোনো কিছুই ভালো লাগছে না।এই আনন্দ ঘন পরিবেশে সবাই যেখানে আনন্দ উৎসবে মেতে আছে।এমন একটা আনন্দময় পরিবেশে থেকেও আমার মন পুলকিত হচ্ছে না।আপনাকে ছাড়া আমার হৃদয় বিষাদে ছেয়ে আছে।
পরের দিন,,,,
বিয়ে বাড়ি মানেই চারিদিকে আলোক সজ্জা।হৈ-হুল্লোড় গান-বাজনা আর আনন্দের বন্যা।বেলা বারোটার দিকে পার্লার থেকে আর্টিস্ট এসে তাসনিম কে সাজিয়েছে। ব্রাইডাল সাজ তাসনিম এর পছন্দ নয়।তাই লাইট সাজে সাজানো হয়।তবে সাধারণ সাজেই তাসনিম কে অসাধারণ লাগছে।অফ হোয়াইট কালারের উপর এ্যশ কালারের ছাপ আর গোল্ডেন কালারের স্টোন বসানো লেহেঙ্গা পড়ানো হয়।হালকা জুয়েলারি। তাসনিম কে বেশ সুন্দর লাগছে।
লিয়া ব্লু কালারের থ্রি পিস পড়েছে।সবাই যেখানে পার্লার থেকে সাজতে ব্যস্ত। সেখানে লিয়া কোনো মেকআপ টেকআপ ছাড়াই শুধু ঠোঁটে লিপবাম দিয়েই যথেষ্ট।মানে এতটুকুতেই লিয়ার সাজ কমপ্লিট।লিয়া স্টেজের একপাশে চেয়ারে বসে আছে।
এমন সময় তুলি এসে উচ্ছ্বসিত হয়ে বলে,,”এই লিয়া তোর উডবি তো দেখতে বেশ হ্যান্ডসাম।”
তুলির কথা শুনে লিয়ার কপালে কিঞ্চিৎ ভাঁজ পরে।লিয়া ইশারায় বোঝায়,,”মানে?কার কথা বলছিস?”
তুলি ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,”বুঝতে পারছিস না।আমি কার কথা বলছি। মিস্টার অভ্র চৌধুরীর কথা বলছি।”
অভ্র নামটা শুনেই লিয়ার বিরক্তিকর ভাবটা আকাশ সমান হয়।লিয়া দাঁত কটমট করে শুধায়,,”তাকে তুই কোথায় পেলি?না মানে কোথায় থেকে দেখেছিস?”
তুলি হাস্যোজ্জ্বল মুখে গমগমে স্বরে বলে,,”এইতো এইমাত্র দেখলাম।মেজো চাচ্চু আব্বুর সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলো তখন।”
লিয়া ঠোঁট গোল করে ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে মনে মনে বলে,, ওহ্ গড। আব্বু টাও না।একে ইনভাইট করেছে।এখানে একে ইনভাইট না করলে কি এমন হতো?”
লিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে তুলি কপাল কুঁচকে বলে,,”কি এত ভাবছিস শুনি? নিশ্চয় মন খা’রাপ হচ্ছে তোর।এসে কেনো সবার আগে তোর সাথে দেখা করলো না।তাই ভাবছিস নিশ্চয়।”
লিয়া দাঁতে দাঁত পিষে বলে,,”বয়েই গেছে আমার ঐ মাকাল ফল কে নিয়ে ভাবতে।”
তুলি আশ্চর্য হয়ে অবাক কন্ঠে বলে,,”একি তুই তোর উডবি কে মাকাল ফল বলছিস কেনো? স্ট্রেইন্জ।”
কি তখন থেকে উডবি উডবি করছিস।আমি ওকে কখনো আমার উডবি ভাবি?আর না ভাববো।আর না ওকে আমার উডবি মানবো।যতসব উজবুক একটা।জীবনটা ওর জন্য তেজপাতা হয়ে গিয়েছে।এসব কিছু মনে মনে বলেই মাথা ঝাড়া দিলো লিয়া।তবে মুখে বলতে পারলো না। লিয়া ঠোঁটে ঠোঁট চেপে বলে,,
“মাকাল ফল বলবো না তো কি বলবো?ওকে দেখলেই আমার রবি ঠাকুরের অপরিচিতা গল্পের অনুপমের কথা মনে পড়ে।”
তুলি আশ্চর্যিত মুখাবয়ব করে শুধায়,,”এত বড় বিজনেস ম্যান কে তুই কেনো অনুপমের সাথে মিলাচ্ছিস?আমি বুঝতে পারছি না।”
লিয়া তাচ্ছিল্য করে বলে,,”বাবার বিজনেস নিয়ে ফুটানি করে।”
তুলি ঠোঁট উল্টিয়ে বলে,,”বাবার বিজনেস হলেও তো সামলাচ্ছেন।তাই আমার মনে হয় এইভাবে ট্রিট করাটা ঠিক নয়।”
লিয়া নিরস গলায় বলে,,”বোন তোর যখন এতো ভালো লেগেছে।তুই নিজের উডবি করে নিতে পারিস।এর থেকে ভালো হবে ফটাফট কবুল পড়েনে।”
তুলি আফসোসের সুরে বলে,,”ধ্যাত ভালো লাগে না।তুই,আপু দু’জনেই পড়ালেখা করতে ভালোবাসিস।তা সত্বেও পরিবার তোদের কে বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।আর এদিকে আমার পড়াশোনা করতে ভালো লাগে না।অথচ কেউ আমার বিয়ের কথা বলছেই না।আমার তো পড়াশোনা বাদ দিয়ে ঘর সংসার করতে ইচ্ছে করছে।”
লিয়া মনে মনে আওড়ায়,এখানে যত সময় থাকবো ততক্ষণ এই মেয়ে কানের পাশে প্যাচাল পারতেই থাকবে।তার চেয়ে আমি বরং বাসার ভিতর থেকে একটু ঘুরে আসি। লিয়া তুলিকে উদ্দেশ্য করে বলে,,”আমি ভেতর থেকে আসছি কেমন।”
লিয়া এই বলে বাড়ির ভেতর যেতে নিলে এমন সময় পিছন থেকে কেউ ডাক দেয়।
“হেই মিস লিয়া।”
ডাকটা কর্ণগোচর হতেই লিয়া দাঁড়িয়ে যায়।লিয়া বিড়বিড় করে বলে, যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়।উজবুকটার সামনে পড়বো না বলেই ভেতরে চলে যাচ্ছি।আর এদিকে উনি এসে হাজির।
লিয়া পিছন ফিরে তাকিয়ে ভদ্রতার খ্যাতিরে সালাম দেয়। অভ্র উত্তর দিয়ে শীতল কন্ঠে বলে,,
“কেমন আছেন মিস লিয়া?”
লিয়া এক কথায় বলে,,”ভালো।”
“কবে আসছেন?”
“এইতো গত পরশু।”
অভ্র দুই হাত প্যান্টের পকেটে গুঁজে স্ট্রেইট দাঁড়িয়ে শান্ত স্বরে বলে,,”আপনার সাথে কথা বলে, আপনার পছন্দের রঙ টা তো জেনেছিলাম।এই নীল রঙে আপনাকে অপূর্ব লাগছে।নীল রঙতো বিশালতার প্রতিক। আপনার মনটাও নিশ্চয় নীল রঙের মতই বিশাল।মানে ভালোবাসায় হয়তো ভরপুর হবে।”
অভ্রর কথা শুনে বিরক্ত প্লাস অস্বস্তি দুইটাই হতে থাকে লিয়ার।লিয়ার বিবর্ণ ফ্যাকাসে মুখ পানে শীতল চাহনিতে চেয়ে অভ্র গম্ভীর কন্ঠে বলে,,”আমি যতটুকু বুঝতে পারছি,আপনি আমাকে ইজি হিসেবে নিচ্ছেন না। আনইজি ভাবে নিচ্ছেন।এটা আমি ধারনা করলাম।তবে মানুষের তো সব সময় মুড এক রকম থাকে না।”
লিয়া মনে মনে আওড়ায়, বাব্বাহ এ আবার সাইকোলজিস্ট নাকি?
অভ্র নির্বিকার ভঙ্গিতে বলে,,”আমি এতো কথা বলে যাচ্ছি।আপনি কিন্তু সেভাবে আমাকে রেসপন্স করছেন না।একদিকে আপনার নীল রঙের পছন্দের অপমানই করছেন।”
লিয়া ঠোঁট মেলে বলে,,”নাহ্ ।আসলে তেমনটি না।”
চোখে মুখে একরাশ আনন্দ নিয়ে অভ্র বলতে থাকে,,”আজকের এই অনুষ্ঠানের পরিবেশ টা বেশ চমৎকার হয়েছে। আমার কাছে খুব ভালো লাগছে। আসলে সত্যি কথা বলতে কি,এই মুহূর্তে এখানে দাঁড়িয়ে,আমার সবচেয়ে আনন্দের অনুভূতি গুলো নিয়ে,আমি স্বপ্ন দেখছি।হয়তো আমার এই স্বপ্ন কোনোদিন বাস্তব হবে কি-না জানিনা।তবে এটা সত্যি আল্লাহ জানেন যে আমি কোনো অন্যায় করছি না।এটা আমার পবিত্র ভালোবাসা।”
লিয়া বিড়বিড় করে বলে,,বেচারা আদৌতেও এরকম না অভিনয় করছে।ছেলেরা তো আবার এক্টিং করে থাকে।তবে যাইহোক সেটা আমার ভেবে কাজ নেই।
লিয়ার কোনো উত্তর না পেয়ে অভ্র বলে,,আপনি যেভাবেই নিন-না কেনো,আমি মানুষ টা সবার দুঃখে দুঃখী হই।সবার আনন্দে আনন্দিত হই।আজকের এই আনন্দঘন পরিবেশে আপনার সঙ্গ পেয়ে।এই পৃথিবীর আনন্দ টা আমাকে স্বর্গের আনন্দে পরিণত করছে।”
এই বলে অভ্র ওর ব্লেজারের পকেট থেকে একটা হলুদ গোলাপ বের করে বললো,,আমি যতটুকু বুঝতে পেরেছি।আপনাকে অনেক বড় বড় অফার দিয়ে লাভ নেই।আমার আবেদনের ফাইলটা অপেন হবে না।তাই পৃথিবীর সবচেয়ে দামী একটা জিনিষ আপনাকে দিতে চাচ্ছি।ফাইলটা অপেন করতেই হবে এমন না।তবে আমার পূর্বের কথার ধারাবাহিকতায় আনন্দের জায়গা থেকে আমার চেষ্টা।”
কথাটা শেষ করে হলুদ গোলাপটা লিয়ার দিকে বাড়িয়ে
দেয়।লিয়া কপাল কুঁচকে চুপ করে থেকে ইতস্তত বোধ করে।লিয়ার অস্বস্তি টা বুঝতে পেরে অভ্র নিভু নিভু স্বরে বলে,, সৌজন্যতার খ্যাতিরে-ও ফুলটা গ্রহণ করতে পারেন মিস লিয়া।ফুল তো পবিত্র।আর পবিত্র যেকোনো বিষয়ই মন ভালো করতে পারে।এই দিক ভেবেও নির্দ্বিধায় ফুলটা নিতে পারেন।”
লিয়া মনে মনে ভাবে,উনি তো বললো এটা তার চেষ্টা।আমি গ্রহণ করবো কি করবো না?সেটা কোনো ব্যাপার নয়।আর ভদ্রতার খ্যাতিরে ফুলটি লিয়া নেয়।
অভ্র চোখে মুখে হাসি নিয়ে মনের থেকে বলে,,”থেকিউ ভেরি মাচ। আপনি তো জানেন আমি বেশি কথা বলে ফেলি।আর একনাগাড়ে অনেক কথাই বলে ফেলেছি। সেইজন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।তো মিস লিয়া,এই সুন্দর উপভোগ্য পরিবেশে আপনার কেমন লাগছে জানতে পারি?”
লিয়া মাথা নিচু করে এক শব্দে বলে,,ভালো।”
অভ্র আশানুরূপ উত্তর না পেয়ে আহত হয়।দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলে আহত স্বরে বলে,,”জানেন মিস লিয়া।আজকে আমাদের গার্মেন্টস মালিকদের হোটেল রেডিসেন্টে একটা প্রোগ্রাম ছিলো। কিন্তু সেটাকে আমি প্রায়োরিটি না দিয়ে। ফাস্ট প্রায়োরিটি আপনাকে দিয়েছি। বলতে পারেন এবারের এখানে আসাটা শুধু আপনার জন্যই।আই হেভ নো রিজন ফর ক্যাম হেয়ার।
লিয়া বিরক্তিকর কন্ঠে বলে,,”আমি জানি তা।”
অভ্র আহত গলায় বলে,,”তবে আপনাকে দেখে সেটা কখনো বুঝা যায় না।আপনাকে দেখলে আমি বুঝতে পারি,আমার উপস্থিতিতে আপনি যথেষ্ট বোর ফিল করেন।তবে কি জানেন মিস লিয়া? যেটুকু সময় আমি আপনার আশেপাশে থাকি।সেই সময়টা আমার কাছে বেস্ট মনে হয়।আর আমার মনে হয় আপনি এই সময়টুকু থেকে আমাকে বঞ্চিত করতে পারেন না। এতটুকু এক্সপেক্ট আপনার কাছে আমি রাখতেই পারি।আমি জানিনা শেষ পর্যন্ত আপনাকে পাবো কি-না?তবে ওয়ান সাইডেড হলেও আপনাকে সারাজীবন ভালোবেসে যাবো। আমার ভালোবাসা একদম ট্রু ।”
লিয়া কথাগুলো শুনে নিশ্চুপ রয়। এদিকে রাহবার এসে লিয়াকে উদ্দেশ্য করে ফিসফিসিয়ে বলে,,”আ্যই আপু আব্বু বলেছে অভ্র ভাইয়া যেহেতু এখানকার কাউকে চেনে না।তাই তুই ওনাকে টাইম দিস।আর সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে।”
লিয়া মনে মনে বলে,,”যে চেনে না জানে না তাকে ইনভাইট করার কি দরকার ছিলো, আশ্চর্য।এখন এর সাথে আমাকে সময় কাটাতে হবে।হে আল্লাহ!এতো আমার কান ঝালাপালা করে দিবে।
লিয়া আশে পাশে তাকিয়ে একটু দূরে তুষার কে দেখতে পায়।তুষার কে দেখে কিছু ভেবে লিয়ার চোখ চকচক করতে থাকে।লিয়া গলা ছেড়ে ডাক দেয়,,”ভাইয়া।”
তুষার ডাকটাকে ফলো করে ঘাড় ঘুরিয়ে লিয়াকে দেখে এগিয়ে এসে বলে,,”কি হয়েছে লিয়া?”
লিয়া হালকা হাসার চেষ্টা করে অভ্র কে দেখিয়ে বলে,,”ইনি মিস্টার অভ্র চৌধুরী।আর মিস্টার অভ্র এ আমার ভাইয়া।”
অভ্র হাত বাড়িয়ে দেয় হ্যান্ডশেক করতে। অভ্র আর তুষার কথা বলতে থাকে।মাঝখান থেকে লিয়া কে’টে পরে।
খাওয়া দাওয়া পর্ব শেষে। প্রথমে ধর্মীয় ভাবে তারপর আইনিভাবে দুইভাবেই তাসনিম আর আলিফের বিয়ে সম্পন্ন হয়।বিয়ে শেষে সবাই ওদের জন্য মোনাজাত করে সংসার জীবনের জন্য দোয়া করে।বিকেলেই বিদায় পর্ব হয়।কারন ঢাকায় ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যাবে।বিদায়ের সময় তাসনিম অনেক কান্নাকাটি করে।
পিচঢালা রাস্তা দিয়ে শা শা শব্দে ফুলে ফুলে সজ্জিত গাড়িটা ছুটে চলেছে। রাস্তার পাশের গাছ সহ দালান কোঠা মূহূর্তেই পিছনে চলে যাচ্ছে।আর গাড়ি এগিয়ে যাচ্ছে গন্তব্যের দিকে। তাসনিম ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করছে।আলিফ পকেট থেকে টিস্যু বের করে এক হাত দিয়ে তাসনিম এর বাহু ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে।অন্য হাত দিয়ে টিস্যু পেপার দিয়ে গাল বেয়ে পড়া পানিটুকু মুছে দিয়ে।মৃদু আওয়াজে বলে,,”হুশ!আর কান্না নয়। তোমার চোখে পানি দেখলে আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়।তুমি কি ইচ্ছাকৃতভাবে চাইবে আমাকে কষ্ট দিতে? তুমি যদি চাও তাহলে কাঁদতে পারো।আমি তোমাকে বাধা দেবনা।”
তাসনিম চোখ তুলে আলিফের দিকে তাকিয়ে নির্বাক হয়ে থাকে।আলিফ ভ্রু নাচিয়ে ইশারায় তাসনিম কে বলে,,”কি হলো আরো কান্না করবে?”
তাসনিম বোকা বোকা চোখে চেয়ে গোলাপী পাতলা ওষ্ঠ মেলে বলে,,”আসলে বাড়ির সবার কথা খুব করে মনে পড়ছে তো।”
আলিফ স্মিত হেসে বলে,,”মাত্র হাফ আওয়ার হয়েছে তোমার আসা।এই হাফ আওয়ার এর মধ্যেই তোমার বাড়ির সবার কথা মনে হচ্ছে।তাহলে আমি ড্রাইভারকে বলবো গাড়ি ঘুরাতে। তোমার কষ্ট আমি সয্য করতে পারবো না।তার চাইতে বরং ভালো হবে তোমাকে বাড়িতেই রেখে আসি।কি বলো তুমি?”
তাসনিম অসহায় ফেস করে মাথা নাড়িয়ে না বোধক জবাব দেয়। আলিফ মুচকে হেসে এক হাত দিয়ে তাসনিম কে জড়িয়ে নেয়। তাসনিমের মাথাটা আলিফের বুকের উপর থাকায়। তাসনিম আলিফের হার্টবিট শুনতে পারছে। তাসনিম এর কাছে মনে হচ্ছে ওর বুকের ভেতরও কেউ হয়তো হাতুড়ি পেটা করছে। বুকের ভেতর থাকা যন্ত্রটা দ্বিগুণ হারে লাফাতে থাকে।
রাত নয়টা বেজে যায় আলিফ দের বাসায় পৌছাতে পৌছাতে।আলিফ গাড়ি থেকে নেমে মিষ্টি হেসে একটা হাত বাড়িয়ে দেয় তাসনিমের দিকে। তাসনিম নির্দ্বিধায় বিনাবাক্যে ওর ডান টা রাখে আলিফের হাতের উপর।আলিফ পাঁচ আঙুল দিয়ে আলতোভাবে ধরে তাসনিমের হাতটা। আলিফ স্লো ভয়েজে বলে,,ওয়েলকাম মাই বেটার হাফ, মোস্ট ওয়েলকাম মাই সুইটহার্ট।”
তাসনিম বিনিময়ে হালকা হাসার চেষ্টা করে। বাসার ভেতরে যেতেই দুই পাশ থেকে ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে স্বাগতম জানানো হয় ।আতিকা বেগম তাসনিম এর হাত ধরে নিয়ে সোফায় বসান।আলিফ তাসনিম দুজনকেই মিষ্টি মুখ করায়।আলিফ একটা মিষ্টি মুখে নিয়ে চিবুতে চিবুতেই রুমে চলে যায়। উপস্থিত মেহমানরা উৎসুক ভাবে নতুন বউকে দেখতে থাকে। অবশেষে আতিকা বেগম গলা ঝেড়ে আলিফের এক কাজিনকে উদ্দেশ্য করে তাসনিম কে রুমে নিয়ে যেতে বলে আর এই সব ভারি পোশাক ছেড়ে হালকা পোশাক পড়ে ফ্রেশ হতে বলেন।
রুমের দরজা পর্যন্ত যেয়েই মেয়েটি বলে,,”ভাবি আপনি রুমে যান।”
এই বলেই মেয়েটি প্রস্থান করে। ভিতরে পা বাড়িয়ে গিয়ে।তাসনিম চারিদিকে দৃষ্টি বুলাতে থাকে। সারা রুম জুড়ে ফুলের সুবাস বইছে। লাল গোলাপ আর রজনীগন্ধা দিয়ে রুমটা সুন্দর করে সাজানো। বিছানার মাঝে ফুলের পাপড়ি দিয়ে লাভের মাঝে দুইজনের নামের লেটার লেখা।রুমটার রং অফ হোয়াইট। পর্দা গুলো সফেদ রঙের।বেশ বড়সড় গুছানো রুমটা।দেখলেই যে কেউ বলবে,রুচি সম্মত আভিজাত্য পূরণ। তাসনিম এর আগেও এই বাড়িতে কয়েকবার এসেছে।এই রুমটাতেও হয়তো তিনচার বার আসা হয়েছে।তবে আজকে এই রুমে এসে সম্পূর্ণ নতুন ভিন্ন অনুভূতি হচ্ছে।এই রুমটা আজ থেকে ওর-ও। ওয়াশরুম থেকে পানির শব্দ আসছে। তারমানে আলিফ ওয়াশরুমে আছে।
ড্রেসি়ং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে প্রথমে পিন ছাড়িয়ে মাথা থেকে ওড়নাটা খুলে রাখে।তারপর হাতের চুড়ি গুলো খুলতে থাকে।এমন সময় পেটে ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেয়ে তাসনিম কেঁপে উঠে।আয়নায় দৃষ্টি দিতেই আলিফের সাথে চোখাচোখি হয়ে যায়। গ্রিন টিশার্ট আর এ্যশ কালারের টাউজার পড়ে আছে আলিফ।ভেজা চুল থেকে টপটপ করে কয়েক ফোঁটা পানি তাসনিম এর কাধ বেয়ে পড়লো। আলিফের গরম নিঃশ্বাস আছড়ে পড়ছে তাসনিম এর কাঁধে।তাসনিমের গলা শুকিয়ে আসছে।আলিফ তাসনিম এর কাঁধে থুতনি রেখে সফট ভয়েজে বলে,,”জার্নি করে এসেছো, শরীর খা’রাপ লাগছে কি?”
তাসনিম ছোট করে বলে,”উঁহু।”
[চলবে…ইন শা আল্লাহ]