#শুধু_তোমাকেই_চাই
#শারমিন_হোসেন
#পর্ব৩০
“জারিফের মাথা হ্যাং হয়ে আসে। জারিফ বাকশূন্য হয়ে পড়ে।জারিফের মন মস্তিষ্কে কাল বৈশাখীর তান্ডব শুরু হয়েছে।মন মস্তিষ্ক জুড়ে একটাই প্রশ্ন কিকরে এটা সম্ভব? জারিফের মন বলছে না কোনো মতেই এটা হতে পারে না।লিয়া কখনোই আমাকে ছাড়া অন্যকাউকে গ্রহণ করতে পারে না।কখনোই না। পরক্ষণেই মস্তিষ্ক মনের উল্টো দিকে যায়। মস্তিষ্ক স্মরণ করায় লাস্ট লিয়ার সাথে ফোনালাপের কথাগুলো। লিয়া বলেছিলো আমাকে হারালে আপনি কোনো একদিন আফসোস করবেন।
জারিফ ভাবে,তবে কি লিয়া আমার উপর অভিমান করেই বিয়েটা করে নিয়েছে। জারিফ এক হাত মুখে রেখে ভাবতে থাকে। জারিফ লিয়াদের ফ্লাটের সামনে দাঁড়িয়েই তাসনিম এর নম্বরে কল করে।বাট সুইচড অফ বলে।এতে যেনো জারিফ আরো হতাশার মধ্যে পড়ে।জারিফের কাছে মনে হচ্ছে, চতুর্দিক থেকে হতাশা জারিফকে ঘিরে ধরছে।ফাইভ সেকেন্ড ভেবে নিয়ে জারিফ রুপকের কাছে কল দেয়। জারিফ ভাবে রোজের সাথে তাসনিমের কন্টাক্ট থাকবেই।রুপক ফোন রিসিভ করে আনন্দিত কন্ঠে বলে,,
“হ্যা দোস্ত বল।কি খবর? চাকরী কেমন চলছে?”
এই সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মতো মনের অবস্থা জারিফের নেই। জারিফ ছোট করে শ্বাস টেনে নিয়ে এক কথায় বলে,,”ভালো।”
কিয়ৎক্ষন পরে উদ্বিগ্ন গলায় বলে,,”তাসনিম এর সাথে যোগাযোগ আছে তোর।না মানে ওর কাছে কল দিলাম,বাট আনফরচুনেটলি সুইচড অফ বলছে।”
রুপক শান্ত কন্ঠে বলে,,”আসলে দোস্ত এখন সবাই যার যার চাকরি-বাকরি নিয়ে বিজি থাকে।তাই আর আগের মতো যোগাযোগ হয়না।আমিও কাজ সংসার নিয়ে ব্যস্ততার মধ্যেই আছি।রোহানের অবস্থাও তো আমার মতো।তাই আর আগের মতো সবার সাথে যোগাযোগ নেই।আর আমার সাথে তাসনিম এর দেখা বা কথা হয়নি আমাদের রিসেপশনের পর থেকে। কয়েকদিন আগে রোজ হঠাৎ আফসোস করে বললো, তাসনিম নাকি ওর সাথেও যোগাযোগ করছে না।”
জারিফ ভরাট গলায় বলে,,”ওহ্।”
“তা জারিফ তুই এখন কোথায়?যশোরেই আছিস।”
“নাহ্।আমি ময়মনসিংহে আসছি। আচ্ছা রুপক আমি পরে করা বলবো,হ্যা।”
কথাটা বলেই জারিফ কল কে’টে দেয়।জারিফ চোখে অন্ধকার দেখছে।মাথা ঘুরতে শুরু করছে।এক পা দু করে জারিফ সিড়ি দিয়ে নিচে নামতে থাকে আর লিয়ার কথা ভাবতে থাকে। জারিফ যেতে বসে আবার ঘাড় ঘুরিয়ে লিয়ার ব্যালকনির দিকে তাকায়।জারিফ অস্ফুট স্বরে বলে, তোমাকে পড়িয়ে যাওয়ার সময় আমি বুঝতে পারতাম তুমি ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আমার যাওয়ার পানে চেয়ে থাকতে।যতদূর তোমার দৃষ্টি যেতো।ততদূর তুমি তাকিয়ে থাকতে।আমি কখনো ঘাড় ঘুরিয়ে তোমাকে লজ্জায় ফেলেনি।বা বলতে পারো ইচ্ছে করেই তোমাকে লজ্জায় ফেলতে চাইনি।তোমার এসব পাগলামি নিয়ে আমি ভাবতাম।তবে তোমাকে বুঝতে দিতাম না। অবশেষে তোমার করা ছোট ছোট পাগলামি নিয়ে ভাবতে ভাবতেই তোমার ভাবনায় আমি নিজেকে জড়িয়ে ফেলি।এখন আমার চিন্তা ভাবনা জুড়ে শুধু তুমি আর তুমি।তাহলে একবার ভেবে দেখো তোমাকে ছাড়া আমার কি হতে পারে?
জারিফ ঠোঁট গোল করে ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে মনে মনে বলে,,পৃথিবীটা এত বিষাদময় লাগছে।আমি যদি মানুষ না হয়ে রাস্তার একটা ইট-ও হতাম তাও বুঝি ভালো হতো।জড় পদার্থের ন্যায় অসাড় হলেই বুঝি ভালো হতো। অনুভূতি শূন্য হলে এতটা কষ্ট হতো না।তুমি ছাড়া আমার নিজেকে অস্তিত্বহীন মনে হচ্ছে। চারিদিক থেকে হতাশা আমাকে গ্রাস করছে। বন্ধুগন যাদের সাথে মিশেছি তারা কেউ পাশে নেই।সবাই সবার লাইফ কর্ম নিয়ে ব্যস্ত। লিয়ার উপর একরাশ অভিযোগ নিয়ে জারিফ মনে মনে বলে,,তুমি কিকরে আমাকে ছাড়া অন্যকাউকে বিয়ে করতে পারলে লিয়া?তোমাকে ছাড়া আমার কি করুণ অবস্থা হতে পারে।সেটা তুমি জানতে না?আমার কথা তোমার একবারো মনে হয়নি?এসবের আনসার আমার চাই লিয়া।তুমি নিজে থেকে আমার জীবনে এসেছিলে।আমার লাইফে আসার রাইট তোমার থাকলেও।আমার লাইফ থেকে ব্যাক করার রাইট ছিলো না।আর না আমি কখনো তোমাকে সেই রাইট দিতাম।
সাথে সাথে জারিফের মস্তিষ্ক বলে উঠে,লিয়া তো সেদিন ফোন করে জানিয়েই ছিলো।আর লিয়া এটাও বলেছিলো।স্যার আপনি যা বলবেন আমি তাই করবো।এখানে লিয়ার তো কোনো দোষ নেই।আর একটা মেয়েরই বা কি করার থাকে। বাস্তবতা খুব জটিল আর কঠিন সেখানে মেয়েরা হার মেনে নিতে বাধ্য হয়। পরিস্থিতির সাথে টিকে থাকা বড় কষ্টকর হয়।না চাওয়া সত্বেও পরিবারের কথা ভেবে নিজের চাওয়া পাওয়া কে বিসর্জন দিতে হয়।
জারিফের মনমস্তিষ্ক জুড়ে প্রতিটা নিউরনে নিউরনে একটা প্রশ্ন ই ঘুরপাক খাচ্ছে। জারিফ অনেক চিন্তা ভাবনা করে,নিজেকে ধাতস্থ করে অস্পষ্ট স্বরে বলে,,বিষয়টা কি সত্যি?যদি সত্যি না হতো। তাহলে এই পৃথিবীতে আমার থেকে হ্যাপি আর কেউ হতো না।
জারিফের মন মানতে নারাজ।জারিফের মনে হচ্ছে মহিলাটির কথা আমার বিশ্বাস করা উচিত কি?জারিফ নানান কিছু ভেবে নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়।জারিফ কালকে জামালপুরে গিয়ে লিয়ার দাদু বাড়ি খুঁজে বের করে দেন শিয়র হবে।
রাত দশটা বাজতে চললো।শীতের সময় দশটা মানে একটু বেশিই রাত মনে হয়।কারন সবাই শীতে জবুথবু হয়ে বসে থাকার চেয়ে লেপ কম্বল মুড়ি দিয়ে আয়েশ করে শুয়ে পড়ে। জাহানারা বেগম চিন্তিত হয়ে শাল চাদর গায়ে জড়িয়ে সোফায় বসে আছেন।মা মানেই যেমন মায়া মমতা আদরের ডিব্বা। ঠিক তেমনি মা মানেই সন্তানের জন্য অতিরিক্ত টেনশন করা।কারনে বা অকারনে ঘাবড়ে যাওয়া।জারিফ সেই বিকেলে এসেই বের হয়েছে অথচ এখনো বাসায় আসার নামই নেই। জাহানারা বেগম চিন্তিত হয়ে ভাবছেন, ছেলে টা কখনো এতো রাত করে বাড়ি ফিরে না।আর বললো তাড়াতাড়ি ফিরবে। কিন্তু রাত দশটা পার হয়ে গেলো এখনো আসছেই না। এসে খাবার পর্যন্ত খায়নি।কোথায় গেলো?
এসব ভেবে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে। হাঁক ছেড়ে জারাকে ডেকে বলেন,,”জারা এই জারা।জারিফের কাছে আবার কল দে তো।”
জারা রুম থেকেই চিল্লিয়ে বলে,,”এই নিয়ে বিশবার হবে তোমার ছেলের কাছে কল দিচ্ছি।বাট ফোন তুলছেই না তো।”
মিনিট পাঁচেক পর পর জাহানারা বেগম জারাকে এমনটা বলে চলছেন।আর অস্পষ্ট স্বরে বলছেন,কোনো বিপদ আপদ হলো না তো।হে আল্লাহ! আমার ছেলেটাকে সুস্থ রেখো।ভালো রেখো।যেখানেই থাকুক না কেনো।”
জাহানারা বেগম এর ভাবনার মাঝেই কলিং বেলের শব্দ হয়।বেলের শব্দ শুনে জাহানারা বেগমের মনটা কিছুটা হলেও শান্ত হয়। বিলম্ব না করে ছুটে গিয়ে দরজা খুলে জারিফকে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন। উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলেন,,”জারিফ বাবা এতক্ষণ কোথায় ছিলি।ফোন দিচ্ছি ধরছিলি না কেনো?”
জারিফ মৃদু আওয়াজে বলে,,”ফোনটা সাইলেন্ট ছিলো।খেয়াল করিনি।”
জারিফ আর কথা না বলে সোজা ওর রুমের দিকে যেতে নিলে। জাহানারা বেগম জারিফ কে পরখ করে দেখে।জারিফের গায়ে পাতলা একটা ট্রিশার্ট।বাইরে খুব কুয়াশা পড়ছে।সাথে হাড় কাঁপানো শীত। জারিফকে দেখে কেমন যেনো এলোমেলো লাগছে।জারিফকে বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে। জাহানারা বেগম বুঝতে পারেন কিছু একটা নিশ্চয় হয়েছে। জাহানারা বেগম ছোট করে শ্বাস ছেড়ে শান্ত স্বরে বলেন,, বাইরে যে ঠান্ডা পড়ছে।সেখানে তুই শীতের পোশাক ছাড়া এই পাতলা কাপড় পড়ে আছিস। ঠান্ডা লেগে অসুখ বাঁধিয়ে ফেলবি তো।ফ্রেশ হয়ে আয় খাবার খেয়ে নিবি।”
জারিফ নির্বিকার ভাবে বলে,,”আম্মু আমার ক্ষুধা নেই।এখন খাবো না।”
ছেলের কথা শুনে কিছুটা হতভম্ব হন জাহানারা বেগম।বেশ বুঝতে পারছেন নিশ্চয় বড়সড় কিছু সমস্যা হয়েছে। জাহানারা বেগম মায়া জড়ানো গলায় বলেন,,
“কি হয়েছে বাবা?কোনো সমস্যা হয়েছে?”
“আম্মু আমার কিছুই ভালো লাগছে না।আমাকে জোর করো না, প্লিজ।আমি তোমাকে পড়ে বলবো সব।”
“আচ্ছা ঠিক আছে। কিন্তু এখন খাবার টা খেয়ে নে।”
“আমি এখন খাবো না।আমার একটু একা থাকা দরকার। প্লিজ লেট মি এ্যলোন।”
লিয়ারা আজ সকালে বগুড়ায় আসছে। রাজিয়া সুলতানা সারাদিনই সব কিছু গুছিয়ে রাখতে খুব ব্যস্ত আছেন।রাতে খাবার খেয়ে আবার ড্রয়িংরুমে কেবিনেট সাজাচ্ছেন। এনামুল খাঁন সোফায় বসে টিভিতে নিউজ দেখছিলেন। হঠাৎ টিভি অফ করে গলা খাঁকারি দিয়ে বলেন,,লিয়ার রেজাল্ট তো সামনের সপ্তাহে বের হবে।তারপরই তো আবার এডমিশন।তাই বলছি লিয়াকে প্রিপারেশন নিতে বলো ভালো করে।সব ভুলভাল চিন্তা ভাবনা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে বলো।”
রাজিয়া সুলতানা কোনো জবাব না দিয়ে।ওনার মতো কাজ করতে থাকেন। এনামুল খাঁন গম্ভীর গলায় বলেন,,”আমি আমার কথা রাখবো।আমি লিয়াকে বিয়ের জন্য কখনো ফোর্স করবো না।লিয়া যখন রাজি হবে তখনই।এছাড়া বিয়ের বিষয়ে আমি আগাবো না। অভ্রের বাবা মায়ের কাছেও কথাটা বলেছি।তা লিয়াকেও বলো আমার কথাটা যেনো রাখে।ওযেনো আমার কথার বিরুদ্ধে গিয়ে জারিফের সাথে কোনো কন্টাক্ট করার চেষ্টা না করে।”
রাজিয়া সুলতানা কপাল কুঁচকে শান্ত কন্ঠে বলেন,,”তুমি কি মেয়ের সাথে জিদ হিসেবে নিলে।বিষয়টা জিদাজেদির পর্যায়ে চলে গেলো না।”
এনামুল খাঁন শক্ত গলায় বলেন,,”আমার মেয়ে আজ আমার কথার বিরুদ্ধে যাওয়ার সাহস পেয়েছে তোমার থেকে।তুমি প্রতিনিয়ত মেয়েকে ইন্সপায়ার করে চলছো। কোথায় মেয়েকে বোঝাবে এসব আবেগ ঠিক নয়।তা না করে মেয়েকে সাপোর্ট করে চলছো।যা তোমার থেকে আমি কখনোই আশাকরিনি।সাপোর্ট করা মোটেও তোমার উচিত হচ্ছে না।”
কথাগুলো জোরে বলার জন্য রুমে বসেই সব কথা লিয়ার কর্ণগোচর হয়।লিয়ার নিজের কাছে খুব খা’রাপ লাগছে।বাবা মায়ের কথা কাটাকাটির জন্য লিয়া নিজেকে দায়ী ভাবতে থাকে।লিয়া মনে মনে ভাবে,আজ আমার জন্য আম্মু কে কথা শুনতে হচ্ছে।এসব কথা,এরকম বিহেভ আব্বুর থেকে আম্মু কখনোই ডিজার্ভ করে না।তারপরেও আজ এরকম হচ্ছে।এই সিচুয়েশনের জন্য সম্পূর্ণ আমি দায়ী।তবে আমিও আমার কথা রাখবো। আব্বুর কথা অমান্য করে নিজে থেকে স্যারের সাথে যোগাযোগ করবো না।আর রইলো স্যারের কথা।স্যার যদি একান্তই আমাকে চায়।তাহলে খুঁজে নেওয়া কোনো ব্যাপার নয়।আমি আপনার জন্য ওয়েট করবো স্যার।আমি বিলিভ করি।আজ হোক বা কাল হোক আপনি আমার খোঁজ পাবেনই।আপনি যথেষ্ট ইন্টেলিজেন্ট।আর আমার ঠিকানা পাওয়া আপনার কাছে তুড়ি বাজানোর ব্যাপার।কারন আব্বুর ট্রান্সফার যেকোন ক্যান্টনমেন্টেই হবে।আর আপনি ময়মনসিংহ ক্যান্টনমেন্ট থেকে সহজেই জেনে নিতে পারবেন কোন ক্যান্টনমেন্ট এ বদলি হয়েছে।ব্যাস এতটুকুই এনাফ।এসব ভেবে নিয়েও লিয়ার মন স্বস্তি পাচ্ছে না।লিয়া ভাবে স্যার আপনি কি এখনো ময়মনসিংহে আসেননি?আমি চাইলেই হয়তো অন্য কারো ফোন দিয়ে আপনার সাথে কন্টাক্ট করতে পারতাম।তবে আপনি জানেন কি?আমি নিজেও দেখতে চাচ্ছি আপনি কি করেন?আমার সাথে যোগাযোগ না করে কতদিন থাকতে পারেন। আপনার কাজ নিয়ে। আপনার চাকরী নিয়ে। আপনার কাছে আমার ইম্পর্ট্যান্স কতটা আমিও দেখতে চাই।
রাত বারোটা বাজতে চলছে তবুও জারিফের দুচোখে ঘুম নেই।ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে দুই আঙ্গুল দিয়ে কপালে স্লাইড করতে করতে জারিফ অস্পষ্ট স্বরে বলে,,আমার এই জীবন টা যতটা প্রয়োজন তার থেকেও বেশি আমার তোমাকে প্রয়োজন লিয়া। নিঃশ্বাস একবার আটকা পড়লে যতটা কষ্ট হয়। বিশ্বাস করো তার থেকেও বেশি কষ্ট আজ আমার হচ্ছে।তাহলে তুমি বুঝো,তোমাকে এতটা ভালোবাসার পরেও সেই তোমাকে ছাড়া আমি কিভাবে থাকবো?তুমি ছাড়া আমার নিজেকে আজ বড্ড একা লাগছে।আমার নিজেকে খুব অসহায় আর অস্তিত্বহীন মনে হচ্ছে।তুমি যদি বলো তোমাকে আমার কোথায় রেখেছি?আমি বলবো আমি তোমাকে আমার কোথায় রাখিনি।আমার শরীরের শিরায় শিরায়, নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে, ব্রেনের নিউরনে নিউরনে, অনুভূতিতে আমার সবটা জুড়ে শুধু তোমারই রাজত্ব।আমার অনুভূতির সবটা জুড়েই তুমি আছো।তবে আজ আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি,তুমি বোধহয় আমার ভাগ্যতেই নেই শুধু।
লিয়ার সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো মনে করে জারিফের মনটা হাহাকার করে উঠে।জারিফ অস্ফুট কন্ঠে বলে,,যখন তুমি পাশে ছিলে এক প্যারাডাইসের মতো ছিলো আমার এই জীবনটা।বালু ঝড়ে কিছু স্মৃতি আমার নামে লিখে দিয়ে তুমি চলে গেলে।আমাদের এই অসম্পূর্ণ কাহিনী অসম্পূর্ণই রয়ে গেলো।কোনো সম্ভাবনাই কি নেই?আমাদের কাহিনী পূর্ণতা পাওয়ার।আমার দুইটা জিনিস এর খুব প্রয়োজন ছিলো।একটা তুমি।আর একটা তোমার সঙ্গ।তোমায় ভেবে মনটা আমার বিষাদে ছেয়ে যাচ্ছে।সময় যে কাটতেই চাচ্ছে না।নিজেকে আজ পরাজিত মনে হচ্ছে।সব থেকেও মনে হচ্ছে কিছুই নেই। আমার মনে হচ্ছে আমি হেরে গিয়েছি।আমার হৃদয় হেরে গিয়েছে আজ।
বিছানায় বসে হাঁটুতে মুখ গুঁজে লিয়া ভাবে,কেনো জানি আজকে বেশি করেই আপনার কথা মনে হচ্ছে।আপনি ঠিক আছেন তো?তবে হাজার চেষ্টা করেও আমি নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে পারছিনা।আপনাকে ভেবে আমার মনটা শুধু কাঁদে। সময়গুলো কাটতেই চায়না।রাতে দুচোখে ঘুম নামে না।কেনো আপনি এখনো দূরেই আছেন?সবই থাকা সত্বেও তবুও কিছু নেই মনে হয় সারাক্ষণ।আমার প্রিয় মানুষ টা আমার পাশে নেই।কোনো কিছুতেই মনটা বসছে না আমার।হায়রে! আমি বোঝাবো কিকরে?আমার কষ্ট টা কাউকে বোঝানোর কোনো ভাষা নেই।এখন বুঝছি ভালোবাসা কি।ভালোবাসা যতটা প্রশান্তি দেয় আবার তার থেকে দ্বিগুণ কষ্টও দিতে জানে।
জাহানারা বেগম চিন্তিত আছেন।ছেলে রাতে খাবার খায়নি।আবার সেই রুমে ঢুকলো আর বের হয়নি। নানান টেনশনে বিছানায় শুয়ে ঘুম আসছিলো না।তাই বিছানা ছেড়ে এক পা দু পা করে রুম থেকে বের হন।জারিফের রুমের দিকে দৃষ্টি যেতেই দেখতে পান।আলো জ্বলে আছে জারিফের রুমে।জারিফের রুমের সামনে গিয়ে দেখে দরজা হালকা ভিড়ানো।হালকা কেশে বলেন,,”জারিফ। ঘুমিয়ে পড়েছিস?”
জারিফ এক হাত কপালে রেখে বিছানায় বসে ছিলো।জারিফ ভাবছিলো,কালকে প্রথমে জামালপুর যাবে।লিয়ার থেকে কথা প্রসঙ্গে এক সময় শুনেছিলো।লিয়ার দাদুবাড়ি জামালপুর শহরেই।আর খোঁজ করলে ঠিক বাড়ি পাওয়া যাবে।তা না পাওয়া গেলে লিয়ার আব্বুর অফিসে গিয়ে জানবে কোথায় বদলি হয়েছে।তাহলেই লিয়ার খোঁজ পাওয়া যাবে।আর শিয়র হওয়াটা খুব জরুরী আদৌতেও লিয়া অভ্র কে বিয়েটা করেছে কি-না? জারিফের মন বলছে লিয়া বিয়ে করতে পারে না।এটা ইম্পসিবল।এমন সময় হঠাৎ মায়ের গলা পেয়ে জারিফ মৃদু স্বরে বলে,,”নাহ্।”
জাহানারা বেগম ভিতরে গিয়ে জারিফের পাশে বসেন।জারিফের মলিন মুখটা দেখে ওনার খুব কষ্ট হতে থাকে। উনি কিছুটা আন্দাজ করতে পারছেন। নিশ্চয় লিয়াকে নিয়েই কিছু হয়েছে।মায়া ভরা গলায় শুধালেন,,”কি হয়েছে তোর?তোকে একদম ঠিক লাগছে না।তোকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে কোনো কিছু নিয়ে খুবই কষ্টের মধ্যে আছিস।”
জারিফ মায়ের কাছে সব খুলে বলে। বিকেলে মহিলাটির বলা সব কথা মাকে বলে।জারিফ অভিযোগের সুরে বলে,,”আম্মু আমি তো সেদিন আব্বুকে ফোন করে বলেছিলাম। আব্বু যেনো সরাসরি লিয়ার আব্বুর সাথে কথা বলে।আর আমি না আসা পর্যন্ত যেনো সব কিছু ঠিক থাকে।সেই ব্যবস্থা করতে।”
জাহানারা বেগম হতাশ গলায় বলেন,,”তোর জয়েনিং এর দিন সকাল নয়টার দিকে তুই ফোন করে এসব বলেছিলি।তো তোর সাথে কথা বলার পরই তোর আব্বু লিয়ার আব্বুর অফিসে দেখা করতে গিয়েছিলো।আর তোর আর লিয়ার ব্যাপারে কনভিন্স করতে অনেক কিছুই বলেছিলো।অনেক করে রিকুয়েস্ট পর্যন্ত করেছিলো। কিন্তু ভদ্রলোক সরাসরি তোর আব্বু কে না করে দেন।আর উনি কড়া করে না-কি বলেছিলেন, আর যেনো আমরা এ বিষয় নিয়ে ওনাদের কাছে না যাই।”
কিছু সময় থেমে গম্ভীরভাবে বলেন,,”আর তোর আব্বু তোকে ফোনে এসকল কথা জানায়নি।কারন তুই অনেক টেনশন করতিস আর ঠিকমতো কাজে মন দিতে পারতিস না।সেইজন্য তোর থেকে এই কথাগুলো আড়াল করেছিলো।আর বলেছিলো তুই আয় তারপর দেখা যাবে।”
কথাগুলো শুনে জারিফ হাতের মুঠ পাকায়।চোখ বন্ধ করে লম্বা শ্বাস টেনে নিজেকে স্বাভাবিক করার প্রচেষ্টা চালায়। জাহানারা বেগম জারিফ কে উদ্দেশ্য করে বলে,,”তুই চিন্তা করিস না বাবা।দেখবি এক সময় সব ঠিক হয়ে যাবে।”
জাহানারা বেগম রুম থেকে বেড়িয়ে যান চোখের কোণে জমে থাকা পানিটুকু মুছতে মুছতে। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে বলেন,হে আল্লাহ!আমার ছেলেটা কখনো মুখ ফুটে কিছুই চায়নি।ছোটবেলা থেকেই ওর চাওয়া পাওয়া ছিলো খুবই সীমিত।এখন যখন মন থেকে কিছু চাইলো,সেটাও পূরণ হলো না।আমার ছেলের মনটাকে শক্ত করে দাও।ওর কষ্ট টা দূর করে দাও।যা কিছু কল্যাণকর তুমি তাই দিও।
লিয়ার বাবার উপর জারিফের খুব ক্ষোভ হয়।জারিফ মনে মনে ভাবে,টাকাই কি সব?টাকা তো ইচ্ছে করলে আমিও ইনকাম করতে পারি।তবে অসৎ উপায়ে টাকা আর্ন আমি কখনো করবো না।লিয়ার বাবার প্রতি অভিযোগ নিয়ে জারিফ ভাবে,আমি কি এতটাই ফেলনা?আমি কি লিয়ার যোগ্য ছিলাম না?আমার আব্বুর মুখের উপর না করে দেওয়া মানে।আমার আব্বুর সামনে আমাকে রিফিউজ করা মানে আমাকে সহ আব্বুকে ইভেন আমার পরিবারকেই অপমান করা,ছোট করা। প্রথম দিন কোনো রেসপন্স না পাওয়া মানেই, নেগেটিভ মতামত তা আমার পরিবার ভালো করেই জানতো তারপরেও আমার আব্বু আমার কথা ভেবে আমার চাওয়াকে প্রায়োরিটি দিয়ে সেদিন পুনরায় প্রস্তাব নিয়ে যায়।যাকে প্রস্তাব না বলে এক কথায় বলে রিকোয়েস্ট করতে যায়।সেসব রিকোয়েস্টের কোনো মূল্যই আপনি দিলেন না।
এসব কিছু ভেবে মনে মনেই মাথা ঝাড়ল।জারিফ নিজে নিজেই অস্পষ্ট স্বরে বলে,,লিয়া তুমি পারলেও আমি কখনোই পারবো না। তোমার জায়গাটা আমি কাউকে দিতে পারবো না।তুমি ছাড়া এ জীবনে আমি কখনো সংসার জীবনে পা দেবনা।তোমার বুকে মাথা রেখে বাসর সাজাতে চেয়েছিলাম।তোমায় নিয়ে রঙিন স্বপ্ন বুনেছিলাম।সেই সব স্বপ্ন কে বাস্তবে রুপ দেওয়ার জন্য আমার শুধু তোমাকেই চাই।তোমার থেকে বেটার কাউকে আমার চাইনা।তোমার মতো কাউকেও চাই না।আমার শুধু তোমাকেই চাই।আই ওয়ান্ট অনলি ইউ।
[চলবে…ইন শা আল্লাহ]