#শুধু_তোমাকেই_চাই
#শারমিন_হোসেন
#পর্ব৩৪
“পথের ধুলো উড়িয়ে শা শা শব্দে গাড়ি চলে যায়।গাড়ির যাওয়ার দিকে দুই জন মানব অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে। দু’জনের মনে ভিন্ন ভিন্ন অনুভূতি হচ্ছে। একজনের মনে স্বর্গীয় অনুভুতি হচ্ছে। আরেকজনের মনে বেদনাদায়ক অনুভূতি হচ্ছে।ব্যাথাতুর নয়নে চেয়ে এক হাত চুলের মধ্যে চালনা করে অভ্র অস্পষ্ট স্বরে বলে,,”আমি জানি তুমি আমাকে ইগনোর করো। তারপরেও তোমাকে একনজর দেখার লোভ সামলাতে না পেরে।তোমাকে দেখার কোনো সুযোগ পেলে আমি সেটার সদ্ব্যবহার করি। সুন্দরের প্রেমে পড়লে হয়তো এতদিন তোমার থেকেও বেটার কাউকে নিয়ে ঘর বাঁধতে পারতাম। কিন্তু আমি তো তোমার ঐ মায়াবী চোখের, ইন্নোসেন্ট ফেসের প্রেমে পড়েছি।তাই তো আমার দু’চোখ তোমাকে ছাড়া আর কাউকে খুঁজতে নারাজ।লিয়া তুমি আমাকে যতই ইগনোর করো না কেনো।আমি তোমাকে সারাজীবন ভালোবেসে যাবো।হয়তো তোমাকে পাবো না।আর তোমাকে পাওয়ার আশা করা হলো,সে গুড়ে বালি।আমার ভাগ্যকাশে কালো মেঘ ছেয়ে গিয়েছে আমি সেটা উপলব্ধি করতে পারছি।তোমাকে পাওয়ার যেটুকু আশা আমি করেছিলাম।তবে আজ আমার মন বলছে,সেটা সম্ভব নয়।তবে তুমি আমার না হলেও মৃ”ত্যু”র আগ পর্যন্ত তোমাকে ভালোবেসে যাবো।তোমাকে পেয়ে গেলে হয়তো বুঝতেই পারতাম না যে তোমাকে এতটা ভালোবাসি।
হারানো জিনিস খুঁজে পেলে মানুষের খুব ভালো লাগে।আর সেই জিনিসটা যদি হয় নিজের থেকেও বেশি প্রিয়।তাহলে তো কথাই নেই।জারিফের মনে আনন্দের স্রোত বইছে। জারিফ সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে।জারিফ রাহবারের সাথে দেখা করে কিছু কথাবার্তা বলে একদম শিওর হয়ে নেয়।জারিফ যেহেতু অফিসার্স দের সাথে আসছে।তাই বাড়ি যাওয়ার আগে তাদেরকে বলে যাওয়াটা কার্টেসির মধ্যে পড়ে।
জারিফ কলিগদের উদ্দেশ্যে গলা ঝেড়ে বেশ ভদ্রতার সহিত বলে,,”আসলে আমার বাড়ি থেকে বারবার ফোন করে যাওয়ার কথা বলছে।আমার বাড়ি পাশের জেলাতেই।তাই আমাকে একবার বাড়িতে যেতে হবে।”
একজন বলেন,,”শিওর। নিশ্চয় যাবেন।তাহলে তো জারিফ সাহেব আপনি কালকে আমাদের সাথে ফিরছেন না।”
জারিফ শান্ত গলায় জবাবে বলে,,”আপনাদের সাথেই ফিরবো।কালকে রিসেপশনে দেখা হবে।”
“ওকে।”
লিয়া রুমে বসে বিভিন্ন কথা ভাবছে।লিয়ার নিজের কাছে খা’রাপ লাগছে।লিয়া ভাবছে জারিফের সাথে কঠোরভাবে কথা বলা মোটেও ঠিক হয়নি।আমার উচিত ছিলো,স্যারের কাছে সব কিছু খুলে বলা।কোথাও মিসআন্ডারস্টান্ডিং-ও তো হতে পারে।আর কেনো জানি সেদিনের ফোনকলের কথা গুলো আমার বিশ্বাস হয়না।আজও স্যারের দু’চোখ আমাকে জানান দিয়েছে,স্যার আমাকে ছাড়া কখনোই ভালো নেই।মানছি,মেয়টার কথাগুলো মিথ্যে ছিলো।হয়তো এতে স্যারের কোনো হাত ছিলো না।আর স্যারের উপর যেকোনো মেয়ে ক্রাশড হবে এটা স্বাভাবিক।স্যারকে পাওয়ার জন্য কেউ নিচে নেমে তার স্বার্থ হাসিল করতে পারে।এটাও অস্বাভাবিক কিছু নয়।এসব আমি বিলিভ করি।তারপরেও একটা প্রশ্ন রয়েই যায়,স্যার কেনো আমার কাছে এতদিন আসেনি?আর এই প্রশ্নের উত্তর একমাত্র স্যারই দিতে পারবে।
নতুন বউকে নিয়ে বাড়িতে ফিরেছে সবাই।লিয়া রুম থেকে বের হয়ে উপরে দাঁড়িয়ে নিচের দিকে দৃষ্টি দিয়ে হাঁসফাঁস করতে থাকে।লিয়ার খুব জানতে ইচ্ছে করছে।জারিফ বিয়েতে ছিলো কোন পক্ষের হতে।লিয়া মনে মনে ভাবে,কনের কোনো রিলেটিভ নয়তো।আমাদের দিক থেকে তো হবে না।আবার পরক্ষণে মনে হয়, চাচ্চু কাকে কাকে ইনভাইট করেছে সেটা কি আর আমি জানি না-কি।দুই হাত রেলিংয়ের ওপর দিয়ে থুতনিতে রেখে ভাবুক ভঙ্গিমায় এসব কথা ভেবে চলছে।এমন সময় নিচে রাহবার কে দেখে লিয়া গলা ছেড়ে ডাকে,,
“ভাই।এই ভাই। এদিকে,এদিকে।”
রাহবার ডাকটাকে ফলো করে উপরে তাকিয়ে ইশারায় বোঝায় “কি?”লিয়া ইশারায় রাহবার কে উপরে আসতে বলে। রাহবার আসতেই লিয়া কিছুটা জড়তা নিয়ে মৃদু কন্ঠে বলে,,
“জারিফ স্যারকে তো দেখলি।তা বলছি যে স্যার বিয়েতে আসলো কিকরে?না মানে চাচিমার রিলেটিভ হয় না-কি?”
রাহবার একহাতে কানের পাশে মশা তাড়ানোর ভঙ্গি করে গমগমে স্বরে বলে,,”আরে নাহ্।স্যার তো চাচ্চুর কলিগ হয় মনে হয়। চাচ্চুর বেশ কয়েকজন কলিগ আসছে।”
লিয়া দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,”স্যার চাচ্চুর কলিগ হবে কিকরে শুনি? চাচ্চু তো এসি ল্যান্ড। চাচ্চু ভূমি অফিসে আর স্যার তো প্রশাসনিক।”
এমন সময় পিছন থেকে তাসনিম বলে,,”ছোটো চাচ্চু কলিগ সহ অফিসার্স ক্লাবের কয়েকজন সদস্যকেও ইনভাইট করেছে।আর জারিফ অফিসার্স ক্লাব থেকেই নিমন্ত্রণ রক্ষার্থে আসছে।”
আসফি ঘুমিয়ে পড়েছে।আসফিকে শুয়িয়ে দেওয়ার জন্য রুমে যাচ্ছিলো তাসনিম।লিয়ার কথাটা শুনতে পেরে যেতে যেতেই কথাটা বলে।জারিফ যখন রাহবারের সাথে কথা বলছিলো,সেই সময় তাসনিম আর জারিফের দেখা হয়।আর বেশ কিছু কথাবার্তা ও হয়। তাসনিম এর কথাটা শুনে লিয়া মনে মনে আওড়ায়,তারমানে স্যার এখন বগুড়ায় থাকে।
জারিফ আছে না নেই সেই টা জানার জন্য লিয়া কৌশলে প্রশ্ন করে বলে,,”ওহ্।ভাই তা সেই সব গেস্টরা আছে কি?”
রাহবার বলে,,”হুম আছে তো।ওনারা গেস্ট হাউজে আছে।কাল রিসেপশন পর্যন্ত থাকবে মে বি।তবে জারিফ স্যার নেই।উনি ময়মনসিংহে চলে গিয়েছেন।”
রাহবারের শেষের কথা শুনে লিয়ার মনটা খা’রাপ হয়ে যায়।লিয়া ভাবে,মানছি আমি স্যারের সাথে কঠোর আচরণ করেছি।তাই বলে উনি আমার সাথে দ্বিতীয়বার কথা বলার চেষ্টা করবে না।লিয়া রুমে গিয়ে হতাশ হয়ে বসে রয়।
এমন সময় রাজিয়া সুলতানা গিয়ে লিয়ার পাশে বসে বলেন,,”তুই চলে আসছিস।এটা শোনার পর একেক জন আমাকে প্রশ্ন করে হয়রান করে ফেলেছে।কি হয়েছে?কিজন্য তুই চলে আসলি? বেশি অসুস্থ কিনা?তোর আব্বু তো আমাকে ঝাড়ি দিয়ে বলেছে,আমি কেনো তোর সাথে যায়নি হেনতেন।”
লিয়া ওর আম্মুর কোলের উপর মাথা দিয়ে দুইহাতে কোমড় জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকে।রাজিয়া সুলতানা ম্লান স্বরে শুধালেন,,”লিয়া কি হয়েছে?কোনো সমস্যা?”
লিয়া শান্ত গলায় বলে,,”জানো আম্মু।আজকে জারিফ স্যারের সাথে আমার দেখা হয়েছে।”
কথাটা শুনে রাজিয়া সুলতানা বিস্ফোরিত নয়নে লিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে বলেন,,”কিভাবে?”
লিয়া মৃদু আওয়াজে বলে,,”বগুড়া থেকে তো চাচ্চুর ইনভাইট করা কয়েকজন গেস্ট আসছে।সেই হিসেবে।”
রাজিয়া সুলতানা ছোট করে বলে,,”ওহ্।”
রাজিয়া সুলতানার মনের মধ্যে অনেক প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে। তবে নিজ থেকে প্রশ্ন গুলো করতে চাইচ্ছেন না। কিয়ৎক্ষন ভেবে রাজিয়া সুলতানা শুধায়,,
“কথা হয়েছে তোর জারিফের সাথে?”
লিয়া ঠোঁট মেলে বলে,,”হুম।তবে আমি অভিমান করে চলে আসছি।আমি জানিনা আমি ঠিক করেছি।না ভুল করেছি।তবে এখন আমার মনে হচ্ছে আমি ভুলই করেছি হয়তো।তবে এতদিনের কষ্টের পাহাড়টা যেনো আমার বুক থেকে নামতে শুরু করেছে।আজ যেনো আমি বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারছি।আমার কাছে এই পৃথিবীর বাতাস আর বিষাক্ত লাগছে না।তবে কি হয়েছো জানো আম্মু, মিস্টার অভ্র ছিলো।স্যার বিষয়টা কিভাবে নিয়েছে আমি জানি না। সেইজন্য আমি কিছুটা টেনস।”
রাজিয়া সুলতানা লিয়াকে ভরসা দিয়ে বলেন,,”চিন্তা করিস না।সব ঠিক হয়ে যাবে।আমি জারিফের সাথে কথা বলবো।”
এমন সময় দরজার দাড়গোড়ায় দাঁড়িয়ে মঈনুল খাঁন হালকা কেশে লিয়াকে ডাকেন।লিয়া শোয়া থেকে উঠে সোজা হয়ে বসে মৃদু কন্ঠে বলে,,”ভেতরে আসো চাচ্চু।”
মঈনুল খাঁন ভেতরে গিয়ে চিন্তিত গলায় শুধালেন,,
“আমার ছোটো আম্মুর কি হয়েছে?আমাকে না বলেই চলে আসলে যে।কেউ কিছু বলেছিলো তোমাকে?নামটা বলো তার।”
লিয়া ঠোঁট চওড়া করে বলে,,”নাহ্ চাচ্চু।তেমন কিছুই না।এমনি।”
লিয়ার কথার মাঝেই রাজিয়া সুলতানা মঈনুল খাঁন কে উদ্দেশ্য করে বলেন,,”মঈলুন তুমি আমার সাথে আসো। তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।”
রাজিয়া সুলতানা রুম থেকে প্রস্থান করেন সাথে মঈনুল খাঁন ও।বাড়িতে মেহমানরা থাকায় সব যায়গাতেই লোক সমাগম। ছাদের সিঁড়ির পাশে দাঁড়িয়ে রাজিয়া সুলতানা সব বলতে থাকেন।
মঈনুল খাঁন অবাক গলায় বলেন,,”ওহ্ তাই।এই ম্যাজিস্ট্রেট-ই সেই ছেলেটা। আজ দুইমাসের মতো হবে ওর সাথে দেখা হয় আমার।একবাক্যে আমি বলতে বাধ্য ছেলেটা খুবই ভালো।মেজো ভাই তো বড় বো’কামি করে ফেলেছে। আচ্ছা যাক গে সেসব আগের কথা।এখন এসব বললে সময়গুলো আর ফিরে আসবে না।তাই সামনে যাতে সব কিছু ভালো হয়।সেই ব্যবস্থা করতে হবে।”
রাজিয়া সুলতানা গম্ভীর গলায় বলেন,,”হুম।ঠিক বলেছো। আচ্ছা জারিফের কন্টাক্ট নম্বর আছে তোমার কাছে?”
মঈনুল খাঁন ফোন বের করে চেক করতে করতে বলেন,,
“ওয়েট দেখছি।থাকার কথা তো। ক্লাবের সবার মোবাইল নম্বরই তো সেভ করা আছে মে বি।”
জারিফ নামে সেভ করা একটা নম্বর দেখতে পেয়ে বলেন,,”এটা হবে হয়তো।”
“ফাইন। আচ্ছা আমি জারিফের সাথে কথা বলতে চাই।আগে চুপ করে থেকে অনেক সময় ওয়েস্ট করেছি।তাই আর সময়গুলো ওয়েস্ট করতে চাইনা।আমার জীবনের এই পর্যায়ে এসে,আমার সন্তানেরাই সব।আমার মেয়ের ম্লান মুখটা দেখলেই আমার বুকটা হাহাকার করে উঠে।”
কথাটা বলতে বলতে রাজিয়া সুলতানার দুচোখের কোল ভিজে যায়। মঈনুল খাঁন জারিফের নম্বরে কল দিয়ে ফোনটা রাজিয়া সুলতানার হাতে দেন।
ঘড়ির কাঁটা রাত নয়টার ঘর পেরিয়েছে।জারিফ বাসায় আসছে নয়টার দিকে।মা বাবা বোনের সাথে কথা বলে ওয়াশরুম থেকে শাওয়ার নিয়ে বের হয় এমন সময় মোবাইল বেজে উঠে।এক হাতে টাওয়েল নিয়ে চুলগুলো মুছতে থাকে অন্যহাতে ফোনটা নিয়ে আন্নাউন নম্বর দেখে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে রয়। প্রায় ফাইভ সেকেন্ড পর রিসিভ করে সালাম দেয়।
রাজিয়া সুলতানা সালামের উত্তর দিয়ে শান্ত গলায় বলেন,,”জারিফ বাবা আমি লিয়ার আম্মু বলছি। কেমন আছো?”
জারিফ ভাবে লিয়া নিশ্চয় আন্টির কাছে আজকের কথা শেয়ার করেছে।জারিফ নম্র কন্ঠে বলে,,”ওহ্! আন্টি। আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।আপনি কেমন আছেন?”
“আলহামদুলিল্লাহ।তোমার বাবা মা কেমন আছেন?”
“সবাই ভালো আছে।”
“জারিফ বাবা আমার তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো।আসলে কথাগুলো আমি সামনা-সামনি বলতে চাই।তাই বলছি তুমি কি কালকে একবার আসতে পারবে?”
“নিশ্চয় আসবো।এমনিতেও আমার কালকে যাওয়ার প্লান ছিলো।”
“উই আর ওয়েটিং ফর ইউ।”
“আপনি চিন্তা করবেন না আন্টি।আমি অবশ্যই যাবো।আমার নিজের জন্যই আমাকে যেতে হবে।”
“আচ্ছা।ভালো থেকো।
“আসসালামুয়ালাইকুম।”
পরের দিন,,,
জারিফ শাওয়ার নিয়ে এসে রেডি হতে থাকে।পার্পেল কালারের বস শার্ট এ্যশ কালারের ডেনিম প্যান্ট ইন করে পড়েছে।উপরে ব্ল্যাক কালারের ব্লেজার। চুলগুলো জেল দিয়ে সেট করতে থাকে।এমন সময় জারা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে গলা ছেড়ে বলে,,”ভাইয়া।আসবো?”
“ছুটকি।আস।”
জারা ভিতরে গিয়ে বিছানার একপাশে পা ঝুলিয়ে বসে জারিফের দিকে কপাল কুঁচকে রয়।জারা ভাবে, ভাইয়া কোথায় যাচ্ছে?আর এতদিন পর ভাইয়াকে বেশ ফুরফুরে মেজাজে দেখাচ্ছে ব্যাপার-স্যাপার কি?
জারা উৎসুক ভাবে প্রশ্ন করে,,”ভাইয়া এত সাজ গোজ করে কোথায় যাচ্ছিস?”
জারিফ বডি স্প্রে করতে করতে বলে,,”শ্বশুর বাড়ি।”
জারা বিস্ফোরিত চোখে চেয়ে অবাক স্বরে বলে,,”হোয়াট?তা শ্বশুর বাড়ি কই পেলি শুনি?”
জারিফ শান্ত গলায় বলে,,”শ্বশুর বাড়ি আবার কই থেকে পায় মানুষ।আমার বোন হয়ে তোর এরকম বোকা বোকা প্রশ্ন আমি মানতে পারছি না।”
জারা নাক মুখ কুঁচকে বলে,,”আচ্ছা বাদ দিলাম এই প্রশ্ন।তার আগে বল কিজন্য যাচ্ছিস।আর কোথায়?”
জারিফ নির্বিকার গলায় বলে,,”তোর ভাবীর অভিমান ভাঙ্গাতে যাচ্ছি।”
জারা কাঁদো কাঁদো ফেস করে বলে,,”ভাইয়া।ভালো করে বল।এসব ভনিতা না করে।”
জারিফ জারার নাকটা একহাতে টেনে দিয়ে বলে,,
“এমনিতেই অনেক কিছু বলে ফেলেছি।আর বলা যাবে না।সরি ছুটকি।”
জারা মিছিমিছি মৃদু রা’গ দেখিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে বলে,,”আচ্ছা বলতে হবে না তোকে।তবে যে কথাটা বলার জন্য আমার আসা।জেরিন আপু ফোন করে বলেছে তোকে যেতে ওর বাসায়।”
জারিফ স্পষ্টভাবে বলে,,”এবার আর সম্ভব নয়।এরপরে ট্রায় করবো”
“তুই তো প্রতিবারই শুধু এই একটা কথাই বলিস। কিন্তু কোনো বারই তো যাস না।আপু অনেক করে তোকে যেতেই বলেছে।না গেলে মন খা’রাপ করবে।”
জারিফ রিচ ওয়াচ টা পড়তে পড়তে বলে,,”আমি জেরিনের সাথে ফোনে কথা বলে নেবো।আর মন দিয়ে পড়াশোনা করিস।কোনো অসুবিধা হলেই আমাকে জানাস।তোর প্রশ্নের উত্তর হলো, আম্মুর থেকে সব শুনে নিস।”
জারা একগাল হেসে জারিফকে জড়িয়ে ধরে বলে,,”থেংকিউ ভাইয়া।”
জারিফ একহাত জারার মাথায় রেখে বলে,,”ছুটকি আমার জন্য দোয়া করিস।তোর ভাবী যেনো আমার প্রতি সহৃদয় হয়।অভিমানের পাহাড় যেনো ভেঙ্গে যায়।”
আজকে বউ ভাত পুরো বাড়ি বিভিন্ন রঙের মরিচ বাতি দিয়ে সাজানো।ডুপ্লেক্স বাড়িটা ঝলমল করছে।বাড়ির সামনে প্যান্ডেল করা হয়েছে। তাসনিম আসফিকে নিয়ে লিভিং রুমে সোফায় বসে ছিলো।তুলি সাজতে ব্যস্ত।লিয়া পার্পেল কালারের থ্রি পিস পড়েছে।লিয়ার ঠোঁটে শুধু লিপবাম।মুখে নেই কোনো কৃত্রিমতার ছোঁয়া। লম্বা স্লিকি স্ট্রেইট চুলগুলো খোলা।লিয়া নিচে নেমে তাসনিমের পাশে বসে পড়ে।এমন সময় তুষার এসে আসফিকে কোলে নিয়ে তাসনিমের পাশে বসে।
আসফির গাল টেনে দিয়ে তুষার বলে,,”কি মামা খাবার খেয়েছো।”
তাসনিম কপাল কুঁচকে তাকিয়ে তুষারকে উদ্দেশ্য করে বলে,,”এই আমার ছেলের গাল টানলে কান্না করে তুই জানিস না।এখন কান্না শুরু করলে তোকে থামাতে হবে কিন্তু।এমনিতেই বিয়ে বাড়িতে সবাই কাজে ব্যস্ত। সারাদিন আমাকেই রাখতে হচ্ছে ওকে।”
তুষার দাঁতে দাঁত পিষে বলে,,”কই কান্না করেছে কি?হুতাশায়-ই তুই অস্থির হোস।তোর এই বাজে স্বভাব যাবে না।”
কিছুক্ষণ পর তুষার শান্ত স্বরে বলে,,”ছোটো চাচ্চুর বিয়েটা হয়েছে।ভালো হয়েছে।”
তাসনিম ভ্রু কুঁচকে সোজাসুজি স্পষ্টভাবে বলে,,”তোর পথ ক্লিয়ার হয়েছে।কাকাকে রেখে ভাইপো কিকরে বিয়ে করে।সেইজন তো এতদিন বিয়ে করতে পারছিলি না তাইতো।”
তাসনিম এর কথা শুনে লিয়া ঠোঁট চেপে হাসে।তুষার শক্ত গলায় বলে,,”এক বাচ্চার মা হয়ে গেলি তাও আমার পিছে লাগা ছাড়লি না।”
তুষার আসফিকে নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলে,,”চলো মামা আমরা এখান থেকে চলে যাই।এখানে থাকলে তুমি শুধু ঝগড়াই শিখবে।তারচেয়ে বরং চলো বাইরে গিয়ে তোমার জন্য একটা মামী সিলেক্ট করি।চলো দেখি কাউকে চুজ হয় কিনা।?
রাজিয়া সুলতানা সবার সাথে কথা বলছেন আর মনে মনে জারিফের জন্য অপেক্ষা করছেন।গেইটের দিকে বারবার ওনার দৃষ্টি যাচ্ছে।এমন সময় জারিফ কে দেখে এগিয়ে যান।জারিফ সালাম দিয়ে কুশলাদি বিনিময় করে। চারিদিকে লোক সমাগম থাকায় রাজিয়া সুলতানা জারিকে বলেন,,”ভিতরে চলো বাবা।”
গেস্ট রুমে থাকা তিন আসন বিশিষ্ট সোফায় জারিফ বসে।অন্যপাশের সিঙ্গেল সোফায় রাজিয়া সুলতানা বসেন।গলা পরিষ্কার করে রাজিয়া সুলতানা শান্ত কন্ঠে বলেন,,”আজকে মনে হচ্ছে আমার মাথা থেকে চিন্তার পাহাড় টা নেমে গিয়েছে।কি থেকে কি হয়েছিলো আজও আমি ভেবে কোনো উত্তর পায়নি।
জারিফ মাথাটা নিচু করে নম্র স্বরে বলে,,”আন্টি আমার নিজেরও খুব খুবই ভালো লাগছে। আসলে আন্টি পরিস্থিতি টাই এমন হয়েছিলো।আর আমার কিছু ভুল ছিলো।আমার এখন আফসোস হচ্ছে সাথে নিজের উপর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে।আমি কিকরে এত বড় বো’কামি করেছিলাম।আমি গভীরভাবে না ভেবে নিয়েই,একজনের কথা বিশ্বাস করে নিলাম। কালকে রাহবার আর তাসনিমের সাথে কথা বলে আমি আমার ভুলটা ধরতে পেরেছি।আজকে আমার নিজেকে পারফেক্ট মনে হচ্ছে। জানিনা বাকিটা কি হবে।তারপরেও আমার নিজেকে সুখী মনে হচ্ছে।”
রাজিয়া সুলতানা গম্ভীর কন্ঠে বলেন,,”আসলে বাবা এরকমটা হয়তো হওয়ারই ছিলো।আজকের দিনটার জন্যই হয়তো এরকম মিসআন্ডারস্টান্ডিং হয়েছিলো।তবে যা হওয়ার হয়েছে।সামনে যেনো সব কিছু ভালো হয়।”
জারিফ অমায়িক হেসে বলে,,”ইন শা আল্লাহ। ”
লিয়া ড্রয়িংরুম দিয়ে যাচ্ছিলো এমন সময় তাসনিম লিয়াকে ডেকে বলে,,”এই লিয়া ওয়েট ওয়েট।”
কথাটা কর্ণগোচর হতেই লিয়া দাঁড়িয়ে যায়। তাসনিম একটা ট্রে লিয়ার হাতে ধরিয়ে দেয়।ট্রেতে কয়েক রকমের শরবত।লিয়া ঠোঁট উল্টে বলে,,”কাকে দিতে হবে এগুলো।”
তাসনিম মিষ্টি হেসে বলে,,”এগুলো নিয়ে তোকে গেস্ট রুমে যেতে হবে।একজন গেস্ট ওখানে আছে।বোন তুই একটু দিয়ে আয় কেমন।”
লিয়া বিরক্তিকর কন্ঠে বলে,,”অতিথিদের জন্য তো বাইরে আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা হয়েছে।ওখানেই তো খাবার সহ কোমল পানীয় সব কিছুর ব্যবস্থা করা আছে।তো কোন স্পেশাল মেহমানকে আবার আলাদা করে গেস্ট রুমে নিয়ে জামাই আদর করা হচ্ছে।”
তাসনিম মুচকি হেসে বলে,,”জামাইকেই জামাই আদর করা হচ্ছে।”
লিয়া বুঝতে না পেরে বোকা চাহুনিতে চেয়ে থাকে।তাসনিম লিয়াকে তাড়া দেয়।লিয়া ট্রে টা নিয়ে গেস্ট রুমের দিকে যেতে থাকে। গেস্টরুমে গিয়ে দেখতে পায় রাজিয়া সুলতানা আর জারিফ কথা বলছে।জারিফকে দেখে লিয়ার বুকের ভেতর তোলপাড় শুরু হয়।জারিফকে দেখে ঘনঘন কয়েকবার পলক ঝাপটায়।মনের ভেতর প্রশান্তি বয়ে যেতে থাকে।লিয়া এক পা দু পা করে এগিয়ে যেতে থাকে।কারো পায়ের শব্দ পেয়ে জারিফ সামনের দিকে দৃষ্টি দিয়ে লিয়াকে দেখতে পায়।এক পলক দেখে দৃষ্টি সরিয়ে নেয়।রাজিয়া সুলতানা ইশারায় লিয়াকে ট্রে টা ট্রি টেবিলের উপর রাখতে বলেন।তারপরে উনি জারিফকে উদ্দেশ্য করে বলেন,,”জারিফ বাবা আমার একটু কাজ আছে।তোমরা কথা বলো আমি আসছি।”
এই বলে রাজিয়া সুলতানা চলে যান।জারিফ মনে মনে ওনাকে ধন্যবাদ দেয়।লিয়া ট্রে টা শব্দ করে টেবিলের রেখে ।আড়চোখে জারিফের দিকে তাকায়।জারিফ ইশারায় ওর পাশে দেখিয়ে লিয়াকে বসতে বলে।লিয়া না বসে চলে আসতে নেয়।এমন সময় জারিফ উঠে দাঁড়িয়ে এক হাত দিয়ে লিয়ার হাত ধরে টান দিয়ে। নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে কোমড় জড়িয়ে ধরে।লিয়া নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে মোচড়ামুচড়ি করতে থাকে।জারিফ লিয়ার দিকে ঝুঁকে ফিসফিসিয়ে বলে,,”এনার্জি লস না করে চুপ করে থাকো।”
জারিফের নিঃশ্বাস লিয়ার মুখে পড়ছে ।জারিফের এত কাছে থেকে লিয়ার হার্ট বিট ফাস্ট হতে থাকে। লিয়ার মনে হচ্ছে দম আটকে আসছে।অথচ জারিফ ভাবলেশহীন ভাবে আছে। মুখের উপর থাকা কিছু চুল একহাত দিয়ে জারিফ লিয়ার কানের পাশে সযত্নে গুঁজে দেয়।
লিয়া চোখ বন্ধ করে নিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে।লিয়া মৃদু রা’গ দেখিয়ে শক্ত গলায় বলে,,”কি হচ্ছে এসব।ছাড়ুন আমাকে।এসব কিছু আমার কাছে একদম বিরক্ত লাগছে। প্লিজ আমাকে ছাড়ুন।বাড়িতে অনেক লোকজন।যেকোনো মুহূর্তে যে কেউ চলে আসতে পারে।এভাবে দেখলে খা’রাপ ভাববে।”
জারিফ ভাবলেশহীন ভাবে জবাব দেয়,,”কে কি ভাবলো বা বললো আই ডোন্ট কেয়ার।তুমি পাশে থাকলে।আমার হাতে হাত রাখলেই হবে।বাকি সব আমি সামলে নেবো।”
লিয়া ঠোঁট মেলে বলে,,”সামলে তো নিয়েছিলেন সব।আজ থেকে দুইবছর আগে।এমন সামলিয়ে নিয়েছিলেন যে আমাকে জীবিত লা”শে পরিণত হতে হয়েছে।”
জারিফ অপরাধীর সুরে বলে,,”সরি জান।আমার ভুল হয়েছিলো।তবে আমার নিজেরও কিন্তু একই দশা হয়েছিলো।আমি বেঁচে আছি তবে আমার জীবন কই।এরকম অবস্থায় আমি ছিলাম।”
লিয়া কাটকাট গলায় বলে,,”আমি শুনতে চাইনা আপনার কোনো কথা।আমার কোনো ইচ্ছাও নেই আপনার কথা শোনার।”
জারিফ লিয়াকে আরেকটু নিজের দিকে এনে নরম কন্ঠে বলে,,”সুন্দরী মেয়েদের মন নাকি নরম হয়।তা তোমার মন তো দেখছি বেশ কঠোর। শুধু কঠোর ই নয়, তোমার মন তো দেখছি আমার জন্য একদম জালিম হয়ে গিয়েছে।তোমার মন জুলুম করছে আমার উপর।”
“তা কে বলেছিলো ধরে ধরে এত মেয়েদের টেস্ট করতে। ভালই জানেন কার মন কঠোর হয় কার মন নরম হয়।”
“ছিঃ লিয়া এসব কি ওয়ার্ড ইউজ করছো তুমি।আর আমাকে দেখে তোমার এরকম মনে হয়।আমার ক্যারেকটার ওরকম মেয়েদের টেস্ট করা।তুমি ছাড়া অন্য মেয়েদের দিকে ঠিকমতো তাকায়ই না।আমি একজনেই সীমাবদ্ধ।সেই একজন হলো তুমি।আর আমার চরিত্রের সার্টিফিকেট তো তুমি নিজে দিবে।কারন তুমি ভালো করেই জানো আমি কিরকম।তোমার সাথে রিলেশনে যাওয়ার পর কখনো খা’রাপ কিছুর আভাস পেয়েছো।তুমি ভালো করেই জানো হাজারো সুযোগ ছিলো।আমি কখনো সেই সব সুযোগ নিয়েছি?আর এই প্রথম তুমি আমার এতটা কাছে।”
লিয়ার দুচোখ ছলছল করতে থাকে।লিয়ার মন বলছে,স্যার তো ঠিকই বলছে।সত্যি তো অনেক সুযোগ ছিলো। কিন্তু স্যার কোনোদিন তো সুযোগ নেয়নি।সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা ও করেনি।পরক্ষণে মস্তিষ্ক বলছে, এতদিন তাহলে কোথায় ছিলো?কেনো কোনো খোঁজখবর নেয়নি।আমি বেঁচে আছি কি ম’রে গিয়েছি। একবারো জানার প্রয়োজন মনে করেনি। মস্তিষ্কের কথাটা মনের উপর প্রভাব ফেলতেই লিয়া নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ছটফট করতে থাকে।
লিয়ার ছটফটানি দেখে জারিফ শান্ত গলায় বলে,,”কুল লিয়া কুল।এত হাইপার হওয়ার কিছু নেই। আর অভিমান করে থেকো না প্লিজ।চলো সব ভুল ভেঙ্গে নতুন করে শুরু করি।”
লিয়া অভিমানী সুরে বলে,,”ছাড়ুন আমাকে।এখানে অভিমানের কিছু নেই।আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না।”
জারিফ দুষ্টু হেসে বলে,,”আমি একবারো বলেছি তোমায় বিয়ের কথা।তুমি তো দেখছি আমার থেকেও ফাস্ট চিন্তা করে আছো।তবে তোমার চিন্তা কে আমি এপরিসিয়েইট জানাই।”
লিয়ার নিজের উপর নিজেরই রা’গ হচ্ছে।কি দরকার ছিলো বিয়ে কথাটা বলার। এখন তো কথার জালে আমাকে ফাঁসিয়ে দিয়ে মজা নিচ্ছে।লিয়া চোখে মুখে রা’গ নিয়ে কপাল কুঁচকে ঠোঁট কামড়ে ধরে জারিফের দিকে তাকিয়ে থাকে।
জারিফ লিয়ার কানের পাশে মুখ নিয়ে সফট ভয়েজে বলে,,”এমনিতেই তোমার ঠোঁটের পাশের তিলটা আমাকে খুব করে টানে।আমি অনেক কষ্ট করে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখি।এভাবে ঠোঁট কামড়ে ধরেছো।এবার আমি নিজেকে কন্ট্রোল করবো কিকরে?আজ থেকে চার বছর আগে যেটা কো-ইন্সিডেন্সলি হয়েছিলো।সেটার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে।তবে আজ আর কো-ইন্সিডেন্সলি নয়।আজ না হয় ইনটেনশনালি হোক।”
কথাটা শেষ করেই জারিফ লিয়ার ঠোঁটে কিস করে।ঘটনার আকস্মিকতায় লিয়া আজব বনে যায়।লিয়ার দম বন্ধ হয়ে আসছে।জারিফ লিয়ার ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে বড় করে শ্বাস নিয়ে এক আঙ্গুল দিয়ে ঠোঁট মুছতে মুছতে বলে,,”সো সুইট টেস্ট।”
লিয়া দাঁত কটমট করে রাগি স্বরে বলে,,”আপনি কিন্তু খুব অসভ্যতামি করে ফেললেন।”
“তোমার কাছে অসভ্য হতে আমি রাজি। আর এসব বাদ দিয়ে তুমি আমাকে বলো,তুমি কেনো আমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করোনি।”
“আপনি কেনো করেননি আগে তাই বলুন।”
জারিফ দৃঢ় গলায় বলে,,”কে বলেছে আমি তোমার খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করিনি?আমি এক সপ্তাহ পরই যশোর থেকে ছুটে এসেছিলাম তোমার কাছে। দুর্ভাগ্য বশত তোমায় পায়নি।আর তোমাকে না পেয়েই হয়ে যায় বড় ভুল।”
লিয়ার কাছে সেদিনের মহিলার বলা সব কথা জারিফ খুলে বলে।তারপর বলে কালকে রাহবার আর তাসনিমের সাথে কথা বলে বুঝতে পারি তোমার নয় বিয়েটা ছিলো তাসনিমের।এসব শুনে লিয়ার মনটা নরম হতে থাকে।লিয়া অভিযোগের সুরে বলে,,
“আমি আপনাকে ফোন দিয়েছিলাম।তবে ফোনটা একটা মেয়ে রিসিভ করেছিলো।”
মেয়েটার বলা সব কথা লিয়া জারিফকে বলে।জারিফ সব শুনে বলে,,”সত্যি লিয়া আমি এসব জানতাম না।আর যশোর থাকাকালীন আমার এক কম্পিউটার অপারেটর ছিলো।ও মাঝে মাঝে বিরক্ত করতো।কথাটা ঐ হয়তো বলেছে।”
লিয়া শক্ত করে বলে,,”আপনার ফোন অন্য একটা মেয়ে রিসিভ করার সাহস পায় কিকরে?”
জারিফ করুণ গলায় বলে,,”সরি।ট্রাস্ট মি লিয়া।তুমি ছাড়া অন্য কাউকে নিয়ে আমি কখনো কল্পনাও করিনি।”
লিয়া জারিফের বুকে মাথা রেখে বলে,,”আমি আপনাকে বিশ্বাস করি।তবে আপনি কেনো আসছিলেন না। সেইজন্য আপনার উপর আমার ক্ষোভ হয়।আর আমি ভেবেছিলাম আপনার না আসার কারন হয়তো মেয়েটা।এখন বুঝতে পারছি পরিস্থিতি টাই আমাদের দুজনের প্রতিকূলে ছিলো।আমরা দু’জন-ই সিচুয়েশনের কারনে ভুল বুঝতে বাধ্য হই।”
[চলবে…ইন শা আল্লাহ]
(গাইস আগামী পর্বে মিল দিয়ে সমাপ্তি টানবো?নাকি বিয়ে শাদি বাচ্চা-কাচ্চা দেখতে চান। আপনাদের ডিমান্ডের উপর আমি আগাবো 🥱)