ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি💞💞 #লেখিকা-Mehruma Nurr #পর্ব-৬০

0
887

#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-৬০

★ সকাল ৮টা
নূর আড়মোড়া ভেঙে পিটপিট করে চোখ খুলে তাকালো। গতকাল অনেক রাত পর্যন্ত আড্ডা দেওয়ায় ঘুম ভাঙতে দেরি হয়ে গেছে। নূর পাশে তাকিয়ে দেখলো আদিত্য নেই। এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলো আদিত্য আয়নার সামনে রেডি হচ্ছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে আদিত্য মাত্রই শাওয়ার নিয়ে এসেছে। চুলগুলো এখনো ভেজা,চুলের পানি শরীরেও ছিটিয়ে পরছে।আদিত্য শুধু প্যান্ট পরে আছে, খালি শরীরে পারফিউম স্প্রে করছে। আদিত্যকে এভাবে প্রচুর আকর্ষণীয় লাগছে নূরের কাছে। নূর লোলুভ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আদিত্যর দিকে। এমনিতেও নূরের ঘুম ঘুম ভাবটা পুরোপুরি কাটেনি,তারওপর আদিত্যকে এভাবে দেখে ঘোর লেগে যাচ্ছে ওর। ইশশ্ আমার বরটা কত্ত হ্যান্ডসাম, কত্তো হট। ইচ্ছে করে একদম খেয়ে ফেলি। নিজের ভাবনার ওপর নিজেই অবাক হয় নূর। আমি কবে থেকে এতো লুচু হয়ে গেলাম। আবার ভাবে লুচুর হওয়ার কি আছে? আমারিতো বর,ওকে নিয়ে যা খুশি তাই ভাবতে পারি, যা খুশি তাই করতেও পারি। নূরের মনে পরলো আদিত্য কাল বলেছিল, আজ নাকি আদিত্যর অনেক ইম্পর্ট্যান্ট একটা মিটিং আছে। একটা বড়ো প্রজেক্টে কাজ করছে আদিত্য, সেটারই মিটিং আজ। কথাটা ভাবতেই নূরের মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি এলো।

নূর ধীরে ধীরে গায়ের ওপর থেকে চাদর সরিয়ে বেড থেকে নেমে দাঁড়াল। নূরের গায়ে শুধু আদিত্যের একটা শার্ট পরা আছে। যা হাটুর কিছুটা ওপর পর্যন্ত ঝুলে আছে। এটা নতুন না,নূর প্রতিদিনই শোয়ার সময় নিজের কাপড় পড়ে শুলেও, ওঠার সময় ওর গায়ে আদিত্যর শার্ট বা টিশার্ট থাকে। এটা এখন নূরের অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। আদিত্যর জামাকাপড় পরতে ওর নিজেরও ভালো লাগে। কারণ এতে আদিত্যর ঘ্রাণ মিশে থাকে।

নূর ধীরে ধীরে এস আদিত্যকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। আদিত্যর পিঠে নাক ঘষে পিঠে একটা চুমু খেল।

আদিত্য মুচকি হেসে নূরের হাত ধরে সামনে এনে বললো।
….গুড মর্নিং প্রাণপাখী।

নূর সামনে এসে আবারও সামনে থেকে আদিত্যকে জড়িয়ে ধরে ঘুমো ঘুমো কন্ঠে বললো।
….গুড মর্নিং।
কথাটা বলে নূর আদিত্যর বুকে একটা চুমু খেল।

আদিত্যও নূরকে জড়িয়ে ধরে মুচকি হেসে বললো।
….কি ব্যাপার, আজ সকাল সকাল এতো প্রেম আসছে আমার ওপর?

নূর মাথা তুলে আদিত্যর দিকে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো।
….কি করবো সকাল সকাল আমার বরটা যে এতো হ্যান্ডসাম লাগছে। তাইতো চোখ সরছেই না। আমার তো ভয় করছে কোনো পেত্নীর নজর না লাগে আবার তোমার ওপর।

আদিত্য নূরের কোমড় চেপে ধরে দুষ্টু হেস বললো।
….তাই? তাহলে নজর নামিয়ে দেও।

নূর বুঝতে পারছে যে,আদিত্য কি বলতে চাচ্ছে। নূর একটা আবেদনময়ী হাসি দিয়ে, আদিত্যর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো।
….শুধু নজর নামানো না, তুমি চাইলে আমি আরো কিছু করতে পারি। আই এ্যাম অল ইওরস নাও। ইউ ক্যান ডু ওয়াট এভার ইউ ওয়ান্ট। বাম্পার ওফার।

নূরের এমন কথায় আদিত্যর অবস্থা শোচনীয়। শরীরের সব লোম দাঁড়িয়ে গেল। গলা শুকিয়ে আসছে। নূর এর আগে কখনো আদিত্যকে নিজে থেকে এভাবে কাছে ডাকেনি। আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে করুন সুরে বললো।
…দি দিস ইস নট ফেয়ার পা প্রাণপাখী। তুমি ভালো করেই জানো যে আমার এখন মিটিংয়ে যেতে হবে। তুমি এইসময় আমাকে এমন লোভনীয় অফার দিলে আমি কিভাবে যাবো?

আদিত্যর অবস্থা দেখে নূরের পেট ফেটে হাসি পাচ্ছে। তবে সটা বুঝতে না দিয়ে নূর ড্রেসিং টেবিলের ওপর উঠে বসলো। তারপর হাত দুটো পেছন দিকে ড্রেসিং টেবিলের ওপর রেখে, হালকা পেছন দিকে হেলে পায়ের ওপর পা তুলে আবেদনময়ী ভঙ্গিতে বসে বললো।
…. আমার অফার দেওয়ার ইচ্ছে হলো তাই আমি দিয়েছি। এখন অফার নেওয়া না নেওয়া তোমার ওপর। আমি তো আর তোমাকে জোর করছি না তাইনা?

নূর ওভাবে বসায় নূরের ফর্সা মোলায়েম পা জোড়া আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। যা দেখে আদিত্যর কলিজার পানি সব শুকিয়ে যাচ্ছে। হুঁশ জ্ঞান সব হারিয়ে ফেলছে। নূরকে দেখলে এমনিতেই ওর কোনো হুঁশ থাকে না। তারওপর আজ নূরের এমন আবেদনময়ী রুপ দেখে আদিত্যর যেন অজ্ঞান হওয়ার উপক্রম।

আদিত্যর এভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে নূর মুচকি হেসে বললো।
….কি হলো তুমি না মিটিংয়ে যাবে?

মিটিংয়ের কথা শুনে আদিত্যর হুঁশ এলো। আদিত্য নূরের দিক থেকে চোখ সরিয়ে মাথা ঝাকিয়ে নিজেকে ঠিক করার চেষ্টা করলো। নো আদিত্য ফোকাস, তোকে মিটিংয়ে যেতে হবে। দূর্বল হয়ে পরলে চলবে না। ওইদিকে তাকাস না। ওটা শুধু মোহ মায়া।
মনে মনে এসব হাবিজাবি বলে মনকে মিথ্যে বুঝ দিতে লাগলো আদিত্য।

আদিত্য তাড়াতাড়ি শার্ট পরে নিল। টাই গলায় নিয়ে লাগাতে লাগলো। হাজার চেষ্টা সত্ত্বেও চোখ দুটো বারবার শুধু নূরের পায়ের দিকেই যাচ্ছে। আদিত্যর সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। টাই লাগাতে যেয়ে বারবার শুধু ভুল হয়ে যাচ্ছে।

নূর উঠে দাঁড়িয়ে বললো।
….আমি লাগিয়ে দিচ্ছি।
কথাটা বলে নূর আদিত্যর গলায় টাই বেঁধে দিতে লাগলো।

টাই বাঁধার সময় নূরের গরম নিঃশ্বাস আদিত্যর গলায় ঘাড়ে পরছে। আদিত্যর অবস্থা আরো করুন হয়ে যাচ্ছে। নাহ শেষমেশ আর পারলো না আদিত্য। আদিত্য একটানে নিজের টাই খুলে ফেলে ফ্লোরে ছুড়ে মারলো। তারপর নূরের কোমড় চেপে ধরে বললো।
….গোল্লায় যাক মিটিং। আই একসেপ্ট ইউর অফার।
কথাটা বলেই আদিত্য নূরের কোমড় পেঁচিয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে তার কাজ শুরু করে দিলো।
হঠাৎ আদিত্যর এমন এ্যাকশনে নূর ভ্যাবাচেকা খেয়ে খেল। ওতো শুধু মজা করছিল। এখন তো ওর মজা ওর ওপরই ভারী পরে গেল। এখন কি করবে ও? এই পাগল কে কিভাবে থামাবে? নূর চায় না আদিত্যর মিটিং মিস হয়ে যাক।তাই নূর দুই হাত দিয়ে আদিত্যকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলো। মুখ দিয়ে উম উম শব্দ করতে লাগলো।

আদিত্য নূরকে ছেড়ে বললো।
….কি হলো? নিজেই অফার দিয়ে আবার নিজেই আটকাচ্ছ কেন?

নূর মাথা নিচু করে অপরাধীর সুরে বললো।
….আই এ্যাম সরি।আমিতো শুধু মজা করছিলাম। কিন্তু তুমি সত্যি সত্যিই আমার জন্য মিটিং মিস করলে আমার অনেক খারাপ লাগবে। প্লিজ তুমি মিটিংয়ে যাও। নাহলে তোমার এতদিনের মেহনত সব বিফলে যাবে।

আদিত্য মুচকি হেসে নূরের কপালে চুমু দিয়ে বললো।
….তো এইজন্য মন খারাপ করছ কেন পাগলী? তুমি আমার সাথে মজা করবে নাতো কার সাথে করবে? আমি তোমার হাসব্যান্ড, তুমি আমার সাথে যা খুশী তাই করতে পারো।

নূর আদিত্যর দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বললো।
….তারমানে তুমি অফিসে যাবে?

….হুম যাবো তবে আমার একটা শর্ত আছে।

….কি শর্ত?

আদিত্য নূরের গালে স্লাইড করে বললো।
….আমি মিটিং শেষে দুপুরেই চলে আসবো। সেই পর্যন্ত তোমার এই বাম্পার অফার চালু রাখা চাই। তাহলেই আমি যাবো, রাজি?

নূর নিচের দিকে তাকিয়ে লাজুক হেসে মাথা ঝাকালো। মানে সে রাজি। আদিত্য মুচকি হেসে নূরের কপালে চুমু দিয়ে, রেডি হয়ে বেরিয়ে গেল।
————-

সকাল ১০-৩০
নূর সানার রুমের সামনে এসে দরজায় নক করলো। সানা ভেতর থেকে বললো।
….দরজা খোলাই আছে।

নূর দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলো। সানা কালকে এই বাসাতেই থেকে গিয়েছিল। নূরই বলেছিল সানাকে কিছুদিন এই বাসাতেই থাকতে। সানার কলেজ বন্ধ থাকায় সানাও খুশী খুশী রাজি হয়ে গেছে। নূরকে দেখে সানা মুচকি হেসে বললো।
….আরে ভাবি তুমি? তোমার আবার আমার রুমে আসতে নক করতে হয় নাকি?

নূর সৌজন্যেমূলক হাসি দিয়ে বললো।
…..কি করছিলে তুমি?

…..এইতো কি আর করবো, মোবাইল গুতাচ্ছিলাম।

…..তোমার সাথে কিছু কথা ছিল আমার।

….হ্যাঁ বলনা ভাবি, কি বলবে।

নূর একটু আমতা আমতা করে বললো।
….না মানে আসলে আমি বলতে চাচ্ছিলাম যে, তুমি আর তাসির ভাইয়া কি একজন আরেকজনকে ভালবাসো?

নূরের কথায় সানা ঘাবড়ে গেল। কি বলবে বুঝতে পারছে না। মনে মনে ভীষণ ভয় করছে ওর।

সানার চুপ থাকা দেখে নূর আবার বললো।
….কি হলো চুপ করে রইলে যে? বলো?

সানা ভীতু ভাবে নিচের দিকে তাকিয়ে মাথা ঝাকিয়ে বললো।
……হ্যাঁ ভাবি। তুমিই ঠিকই ধরেছ। আমি আর তাসির একজন আরেকজনকে ভালবাসি।

নূর একটু গম্ভীর স্বরে বললো।
…..হুম, তা এসব কবে থেকে চলছে?

….এইতো মাসখানিক হলো।

…..তো এসব আমাদের কবে জানানোর ইচ্ছে ছিল তোমাদের? নাকি এইভাবে সারাজীবন লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করারই ইচ্ছে ছিল হুম?

সানা ভয়ে কেঁদেই ফেলল। কাঁদতে কাঁদতে বললো।
….সরি ভাবি আসলে আমার অনেক ভয় করছিল। ভাইয়া যদি রাগ করে ভুল বুঝে আমাদের, সেটা ভেবে।

নূর মুচকি হেসে সানার চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো।
….আরে পাগলি কাদছ কেন? আমিতো মজা করছিলাম। খুব ভালোবাস বুঝি ভাইয়াকে?

সানা মাথা ঝাঁকিয়ে বলল।
….হ্যাঁ ভাবি অনেক ভালোবাসি। ওকে ছাড়া আমি বাচবো না।

….হুম ঠিক আছে। তবে একটা জিনিস তোমরা ভুল করছ। আদিত্যের কাছ থেকে এসব লুকিয়ে। তোমাদের উচিৎ ওকে সবকিছু জানিয়ে দেওয়া। তুমি তো জানোই তুমি আর তাসির ভাইয়া দুজনেই আদিত্যর কাছে কতটা মূল্যবান ব্যাক্তি। তাহলে তোমাদের ব্যাপারে এতো বড়ো কথাটা যদি অন্য কোথা থেকে জানতে পারে। তাহলে ও অনেক হার্ট হবে।

…..হ্যাঁ ভাবি তুমি ঠিকই বলেছ। তাসিরও ভাইয়াকে বলে দিতে চায়। আমিই ওকে মানা করেছিলাম। কারণ আমার অনেক ভয় করে, ভাইয়া নাজানি কেমন রিয়াক্ট করবে?

….তুমি চাইলে আমি তোমার ভাইয়ার সাথে কথা বলতে পারি এই ব্যাপারে।

সানা খুশী হয়ে বললো।
….সত্যিই তুমি বলবে কথা?

….হুম অবশ্যই।

সানাা খুশী হয়ে নূরকে জড়িয়ে ধরে বললো।
….থ্যাংক ইউ। থ্যাংক ইউ সো মাচ ভাবি। ইউ আর দা বেস্ট।
——–

দুপুর ২-৩০
নূর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রেডি হচ্ছে। আদিত্য বলেছিল দুপুরে আসবে। তাই একটু সাজুগুজু করছে। সকালের কথা মনে করে বারবার লাজুক হাসছে।

তখনই আদিত্য চলে এলো। রুমে এসে দরজা আটকে দিল। নূর আদিত্যকে দেখে পেছনে তাকিয়ে বললো।
….তুমি এসে গে,,,,

আর বলতে পারলো না নূর। আদিত্য রুমে এসেই ওর একশান শুরু করে দিল। আদিত্য কোনো সময় নষ্ট না করে,কিছু না বলেই সোজা নূরকে জড়িয়ে ধরে ঠোঁটে চুমু খাওয়া শুরু করে দিল।

আচমকা আদিত্যর অ্যাটাকে নূর প্রথমে একটু থতমত খেয়ে গেলেও। কিছুক্ষণ পরে নিজেও আদিত্যর সাথে তাল মিলাতে লাগলো। আদিত্য কিছুক্ষণ পর নূরের ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে নাকের উপর নিজের নাক ঠেসে ধরে হাঁপাতে হাঁপাতে নেশালো কন্ঠে বললো।
….আমি আর এক মূহুর্তও থাকতে পারবো না। অফিসে যেয়ে একসেকেন্ডও মন বসেনি। মাথায় শুধু তোমার সকালের সেই মূহুর্ত আর তোমার অফারের কথায় মাথায় ঘুরছিল। কোনরকমে মিটিং শেষ করে ছুটে এসেছি।আই কান্ট ওয়েট নাও। আই ওয়ান্ট ইওর অফার রাইট নাও। নাহলে পাগল হয়ে যাবো আমি।

নূরকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আদিত্য নূরকে কোলে নিয়েই বেডের দিকে এগুলো। দুজন আবারও মেতে উঠলো ভালোবাসার আদিম খেলায়।
____

ভালোবাসাবাসি শেষে, নূর আদিত্যর উন্মুক্ত বুকের উপর শুয়ে আছে। আদিত্য নূরের চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। দুজনের গায়ের ওপর শুধু একটা চাদর ছাড়া আর কিছুই নেই। নূর ভাবছে সানার কথাটা কিভাবে বলবে? আদিত্য যদি রাগ করে? তবুও বলতে তো হবেই। এসব ভেবে নূর আদিত্যর বুকে মাথা রেখেই বললো।
…..বলছি শোন না?

….বলো না প্রাণপাখী?

….একটা কথা বলার ছিল।

আদিত্য নূরের হাতের তালুতে চুমু খেয়ে বললো।
….. একটা কেন হাজার টা বলো।আমাকে কিছু বলতে আবার তোমার অনুমতি নিতে হবে নাকি? কি বলবে বলো?

….আ আসলে কথাটা সানার ব্যাপারে।

আদিত্য ভ্রু কুচকে বললো।
…..সানা? সানার কি হয়েছে?

নূর ভীতু স্বরে বললো।
…. আসলে স সানা আর তাসির ভাইয়া একজন আরেকজনকে ভালোবাসে।
কথাটা বলেই নূর চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিল।

আদিত্য ভাবলেশহীন ভাবে বললো।
….হুম তো?

আদিত্যর এমন রিয়্যাকশন দেখে নূর চরম অবাক হয়ে গেল। নূর বললো।
….মানে? তুমি অবাক হওনি এই কথা শুনে?

….অবাক কেন হব?যে কথা আমি আগে থেকেই জানি, সেটা শুনে অবাক হওয়ার কি আছে?

নূর অবাক হয়ে মাথা তুলে আদিত্যের দিকে তাকিয়ে বললো।
….মানে তুমি আগে থেকেই জানতে?

আদিত্য মুচকি হেসে মাথা একটু উঁচু করে নূরের ঠোটে আলতো করে একটা চুমু খেয়ে বললো।
….ইয়েস বেবি, আমি অনেক আগে থেকেই জানি। তাসির কি ভাবে?শুধু ওই আমাকে বোঝে? আমি ওর মন বুঝি না? আরে আমি তো ছোটবেলা থেকেই বুঝতে পেরেছি যে তাসির পিচ্চির প্রতি দূর্বল। ওর চোখে পিচ্চির জন্য ভালোবাসা দেখেছি। তবে আমি ওকে এই বিষয়ে কখনো কিছু বলিনি। কারণ আমি চায়নি এই বিষয় নিয়ে আমাদের বন্ধুত্বের ভেতরে কোনো দূরত্ব তৈরি হোক। হ্যাঁ তবে পিচ্চিও যে তাসিরকে ভালোবেসে ফেলেছে এটা জানতাম না।

….তারমানে ওদের এই সম্পর্কে তোমার কোনো আপত্তি নেই?

…আপত্তি কেন থাকবে?তাসিরের মতো একটা ছেলে সানার জীবনসঙ্গি হলে, এটাতো ওর জন্য সৌভাগ্যের ব্যাপার। আমি নিজেও হয়তো সানার জন্য ওরকম একটা ছেলে খুঁজে বের করতে পারতাম না।

নূর খুশী হয়ে আদিত্যকে জড়িয়ে ধরে বললো।
….সত্যিই? আই এ্যাম সো হ্যাপি।

আদিত্যও মুচকি হেসে নূরকে জড়িয়ে ধরলো। নূর বলে উঠলো।
….তাহলে এখন?

….কি এখন?

…..আরে এখন সামনে কি করবে ওদের বিষয়ে?

….আমি কিছুই করবো না। যতক্ষণ না তাসির এসে নিজে থেকে সবকিছু বলবে। আমি চাই ও নিজে এসে সানাকে বিয়ের কথা বলুক।

….হুম,, কিন্তু তাসির ভাইয়া যদি না বলে?

আদিত্য বাঁকা হেসে বললো।
….বলবে বলবে, অবশ্যই বলবে। শোন আমার কাছে একটা প্ল্যান আছে।
আদিত্য নূরকে সব বুঝিয়ে বললো। নূরও মুচকি হেসে সায় দিল।
———-

রাত ৯টা
নূর ডাইনিং টেবিলে ডিনার রেডি করছে। তখনই বাসার কলিং বেল বেজে উঠল। নূর যেয়ে দরজা খুলে দিল। দরজায় তাসির দাঁড়িয়ে আছে। নূর মুচকি হেসে বললো।
….আরে ভাইয়া, আসুন ভেতরে আসুন।

তাসির মুচকি হেসে ভেতরে ঢুকলো। আদিত্য সোফায় বসে আছে। তাসির ভেতরে ঢুকে আদিত্যর দিকে তাকিয়ে বললো।
….কিরে হঠাৎ আসতে বললি যে?

আদিত্য উঠে দাঁড়িয়ে মুচকি হেসে বললো।
…..আরে বলবো সবই, আগে আয় ডিনার করে নেই।

আদিত্য তাসিরকে নিয়ে ডিনার টেবিলে গিয়ে বসলো। নূর আর সানাও এসে বসলো।

ডিনার করতে করতে আদিত্য বলে উঠলো।
….হ্যাঁ তো, তোকে যে জন্য ডেকেছিলাম। আসলে আজ বাবা ফোন করেছিল। কাল সবাইকে ওই বাসায় যেতে বলেছে। আর তুইতো আমাদের ফ্যামিলিরই একজন মেম্বার। তাই তোকেও ডেকে পাঠালাম।

তাসির বলে উঠলো।
….হঠাৎ আঙ্কেল যেতে বলেছে কেন? কোনো বিশেষ কারণ আছে?

…হ্যাঁ বিশেষ কারণ তো আছেই। অনেক বিশেষ।

….কি কারণ?

….কারণ বাবা সানার বিয়ে ঠিক করেছে।

কথাটা শোনার সাথে সাথে তাসিরের গলায় খাবার আটকে গেল। বেচারা কাশতে শুরু করে দিল।

আদিত্য বাঁকা হেসে তাসিরের পিঠে হালকা করে চাপড় দিয়ে, পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বললো।
….আরে আরে কি হলো তোর আবার? পানি খেয়ে নে।

তাসির পানি খেয়ে কোনরকমে কাশি থামিয়ে বললো।
…. বি বিয়ে মানে? কিসের বিয়ে? কার সাথে বিয়ে? হঠাৎ বিয়ে কোথা থেকে আসলো? আর সানাতো এখনো ছোট। এখুনি কেন বিয়ে দিবি?

…..আরে আরে একসাথে এত প্রশ্ন করলে, কোনটার উত্তর দিব? ছেলে নাকি বাবার বন্ধুর ছেলে। বাবার অনেক পছন্দ। আর তুই তো জানিস , বাবার কথার ওপর আমি কখনো কথা বলতে পারি না। আর সানার বয়স কম দেখেই, এখন শুধু এঙ্গেজমেন্ট করে রাখবে। পরে বিয়ে হবে।

আদিত্যর কথা শুনে তাসিরের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। তাসির সানার দিকে তাকিয়ে দেখলো, সানা নির্বিঘ্নে খেয়ে যাচ্ছে।মনে হচ্ছে এসব কথায় ওর কোনো ভাবন্তই নেই। এটা দেখে তাসির আরও বেশি অবাক। সাথে রাগও হলো প্রচুর। আমি এখানে টেনশনে মরছি।আর এই মেয়েটা কতসুন্দর ভাবে খেয়ে যাচ্ছে। যেন কিছুই হয়নি।
তাসির বলে উঠলো।
….আমি একটু ফ্রেশ হয়ে আসছি।
কথাটা বলে তাসির উঠতে নিলে,নূর বলে উঠলো।
….আরে ভাইয়া, খাবার তো শেষ করে যান।

…..আমার পেট ভরে গেছে।
কথাটা বলেই তাসির উঠে গেস্ট রুমের দিকে গেল। যেতে যেতে সানার দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় ওকে রুমে আসতে বললো।

তাসির চলে যেতেই সবাই হেসে উঠলো। নূর বলে উঠলো।
….আহারে বেচারা টেনশনে খাবারটাও খেলনা।

একটু পরে সানা উঠে তাসিরের কাছে গেল।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here