ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি 💞💞 #লেখিকা-Mehruma Nurr #পর্ব-৭০

0
875

#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি 💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-৭০

★ আদিত্যর লন্ডনে যাওয়ার সাতদিন হয়ে গেছে। এই কয়দিন নূরের কিভাবে কেটেছে তা শুধু নূরই জানে। মনে হচ্ছে ও শুধু নিঃশ্বাস নিচ্ছে বাচ্। আদিত্য যাওয়ার পর থেকে ওকে কেউ হাসতে দেখেনি। খাওয়া দাওয়াও ঠিকমতো করে না। সবার চাপাচাপিতে কখনো খায় আবার খায় না। সারাদিন সবার সাথে কথাবার্তা বলে সময় কাটলেও, রাতটা পার করা যেন ওর কাছে সবচেয়ে কষ্টের হয়ে যায়। বিছানায় একা একা শুয়ে নূরের মনটা হু হু করে ওঠে। আদিত্যের বুকে ঘুমানোর জন্য মনটা ছটফট করে। নূর এখন শোবার সময় আদিত্যর টিশার্ট পড়ে শোয়।যাতে আদিত্যর শরীরের ঘ্রাণ পায়। যদিও রোজই আদিত্যর সাথে ভিডিও কলে কথা হয় তবুও নূরের এতে মন ভরে না। কবে আদিত্য আসবে, ওকে বুকে জড়িয়ে নিবে সেই আশায় দিন গুনছে শুধু।

ওদিকে আদিত্যরও একিই অবস্থা। সারাদিন কাজের মাঝে কাটালেও, রাতে আর ঘুম হয় না ওর। শুধু এপাশ ওপাশ করে রাত কাটিয়ে দেয়। নূরকে বুকে না নিয়ে যে ওর ঘুম হয় না। আদিত্য চেষ্টা করছে দ্রুত কাজ শেষ করে ওর প্রাণপাখীর কাছে চলে যেতে। নূরকে ছাড়া যে ওর আর চলছেই না।

দুপুর ২টা
সবাই লাঞ্চ শেষ করে সোফায় বসে গল্প করছে। সবাই কথা বলছে আর নূর বসে শুনছে। তখনই টেবিলে থাকা নূরের ফোনটা বেজে উঠল। নূর জানে এইটাইমে আদিত্যই ফোন দেয়। কারণ এইসময় ও ফ্রী থাকে। নূর খুশী হয়ে ফোনটা ধরতে যাবে তার আগেই আবির খপ করে ফোনটা হাতে নিয়ে নিল। তারপর দুষ্টু হেসে ফোনটা রিসিভ করে সামনে ধরলো।

আদিত্য আবিরকে দেখে ভ্রু কুঁচকে বললো।
….কিরে তুই ফোন ধরেছিস কেন? নূর কোথায়?

আবির ন্যাকামি করে দুঃখী ভাব ধরে বলে উঠলো।
….বাহ ভাই বাহ, এখন তোর জন্য শুধু ভাবিই সব হয়ে গেল? আমরা কেউ না? আমাদের কোনো ভেলুই নেই তোর কাছে? একবারও জিজ্ঞেস করলি না আমরা কেমন আছি, মরে আছি না বেঁচে আছি? আজ তোকে চেনা হয়ে গেল। তোর সাথে কাট্টি, আর খেলমু না তোর সাথে।

নূর এদিকে আদিত্যকে দেখার জন্য পেছন থেকে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। সেটা দেখে সানা আর তানিও ফোনের সামনে চলে এলো। ফোনের সামনে এসে আদিত্যর সাথে কথা বলতে লাগলো। আর নূর একদম পেছনে পড়ে গেল। বেচারি আর দেখতেই পারছে না আদিত্যকে।

এভাবে অনেকক্ষণ ওরা৷ হাবিজাবি কথা বলতে লাগলো।
আদিত্য এবার বলে উঠলো।
….আচ্ছা হয়েছে তোদের? এখন নূরের কাছে দে।

আবির বলে উঠলো।
….আরে কি হয়েছে, তোকেতো ইম্পরট্যান্ট জরুরি কথা বলাই হয়নি। জানিস কি হয়েছে?

আদিত্য ভ্রু কুঁচকে বললো।
…..কি হয়েছে?

….আরে আমাদের মালি কাকা আছে না? ওনার গরুর একসাথে দুটো বাচ্চা হয়েছে জানিস? তাও আবার নরমাল ডেলিভারি, নো সিজারিয়ান।

আদিত্য বিরক্তির সুরে বললো।
…..এই তোর ইম্পরট্যান্ট কথা? দেখ অনেক হয়েছে। আমি জানি তোরা মজা করছিস। কিন্তু তোরা হয়তো নূরকে জানিস না। পেছনে তাকিয়ে দেখ পাগলিটা হয়তো আমাকে না দেখতে পেয়ে এতক্ষণে কান্নাও শুরু করে দিয়েছে।

আদিত্যের কথামতো সবাই পেছনে তাকাতেই থতমত খেয়ে গেল। নূর সত্যি সত্যিই বসে বসে নীরবে চোখের পানি ফেলছে। ওদের তাকানো দেখে নূর তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে নিল। এসব দেখে আবির বলে উঠলো।
….ভাই তোরা দুজন কি মানুষ না এলিয়েন? কারণ নরমাল মানুষ কখনো এমন পিরিতি করতে পারে না। ভাই তোরা ধন্য।
আবির নূরের হাতে ফোনটা দিয়ে বললো।
….এইনেন ভাবি আপনার পেয়ারেলাল কে। ভুল হয়ে গেছে আমাদের। আর কখনো এমন করবো না। এই কান, নাক সবই ধরছি এবারের মতো মাফ করে দেন। আপনার সোয়ামালাই রে নিয়ে রুমে যেয়ে প্রেমালাপ করেন।

কথাটি বলে সবাই হেসে উঠলো। আর নূর লজ্জায় ফোন নিয়ে রুমে চলে গেল।

রুমে এসে নূর ফোন সামনে রেখে বেডের ওপর মাথা নিচু করে বসে আছে। আদিত্য মুচকি হেসে আদুরে গলায় বললো।
….কি হলো প্রাণপাখী,তাকাবেনা আমার দিকে?

নূর মাথা ঝাকিয়ে না বুঝাল।

….কেন? আমি কি দোষ করলাম? ওদের শাস্তি আমাকে কেন দিচ্ছ? তাকাওনা এদিকে সোনাটা। তোমার মুখটা না দেখলে যে আমার শান্তি হবে না।

আদিত্যের এমন আদুরে ডাকে নূর আর থাকতে পারলো না। নূর লাজুক হেসে আদিত্যের দিকে তাকালো। আদিত্য বুকে হাত দিয়ে বললো।
….হায় মে মারজাবা। তোমার এই হাসিটা একদম বুকে গিয়ে লাগে প্রাণপাখী।

আদিত্যের কথায় নূর হেসে দিল। তারপর ফোনটা বেডের মাথার সাথে হেলান দিয়ে রেখে নূর বালিশের ওপর উপর হয়ে শুয়ে আদিত্যের সাথে কথা বলতে লাগলো। নূর উপর হয়ে শোয়ায় নূরের জামার গলাটা নিচের দিকে নেমে গেছে। যার জন্য নূরের বুকের ভাজ অনেকখানি বেড়িয়ে আছে। ভাজের মাঝখানের কালো তিলটাও দেখা যাচ্ছে।

এসব দেখে আদিত্যের অবস্থা শোচনীয়। গলা শুকিয়ে আসছে ওর। দুষ্টু চোখ জোড়া ওখানেই আটকে আছে। আদিত্য একটা ঢোক গিলে বললো।
….দি দিস নট ফেয়ার প্রাণপাখী। এভাবে আমাকে পোড়ানো টা কি ঠিক। এমনিতেই তোমাকে না ছুতে পেরে আমি জ্বলে মরছি। তারওপর এসব দেখিয়ে তুমি কি বদ্ধ উন্মাদ করতে চাও?

নূর আদিত্যের কথা বুঝতে না পেরে ভ্রু কুঁচকে বললো।
…মানে? আমি আবার কি করলাম?

আদিত্য চোখের ইশারায় নিচের দিকে দেখালো। নূর নিচের দিকে তাকাতেই ওর চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেল। নূর এক ঝটকায় উঠে বসে ওড়না দিয়ে গলা ঢেকে নিল। লজ্জায় বেচারি আর আদিত্যের দিকে তাকাতেই পারছে না।
আদিত্য হেসে উঠে বললো।
….ইটস ওকে প্রানপাখী। তোমার হাসব্যান্ডই দেখেছে অন্য কেউ না।এতো লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। এখন দূরে আছি তাই দেখলে সমস্যা হচ্ছে। একবার ফিরে আসি তারপর যত খুশী, যা খুশী দেখিও। আই ডোন্ট মাইন্ড। আই উড লাভ টু সি দিস।

নূর লজ্জায় লাল হয়ে বললো।
……ছিহ্ অসভ্য একটা।

….বারে এখানে অসভ্যের কি হলো? নিজের বউকেই তো বলছি, অন্য কাওকে তো না? অবশ্য তুমি বললে অন্য মেয়েদেরও বলতে পারি। জানো এখানে কতো হট হট মেয়েরা আছে? যারা আমার জন্য পাগল।

নূর রাগে দাঁত কিড়মিড় করে বললো।
…..কিহ? কি বললে তুমি? অন্য মেয়ের কাছে যাবে?ঠিক আছে যাও। যা খুশী তাই করো। আমার সাথে কথা বলতে আসবেনা। তুমি যাও তোমার ওই হট হট মেয়েদের কাছে।
কথাটা বলেই নূর ঠাস করে ফোনটা কেটে দিল।

আদিত্য বিড়বিড় করে বললো।
…..এইরে বেশি রাগিয়ে দিলাম বোধ হয়। এখন তো আমারই বারোটা বেজে যাবে।
আদিত্য নূরকে আবারও ফোন দিতে লাগলো, কিন্তু নূর ফোন ধরছে না।

হঠাৎ সানা নূরের রুমে এলো। সানা নূরকে কিছু বলতে যাবে তখনই দেখলো নূরের ফোনটা বেজে যাচ্ছে কিন্তু নূর ফোন ধরছে না। সানা ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো আদিত্যের ফোন। সানা নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
….কি হলো ভাবি ফোন ধরছ না কেন?

….এমনি, আমার ইচ্ছে নেই।

সানা নূরের পাশে বসে বললো।
….কাহিনি কি বলোতো ভাবি? একটু আগেওতো ফোন ধরতে পেরে কেঁদে কেটে পদ্মা মেঘনা বানিয়ে ফেলছিলে। আর এখন নিজেই ফোন ধরছ না? রাগারাগি হয়েছে ভাইয়ার সাথে?

….রাগরাগীর কি আছে? ও থাক ওর হট হট মেয়েদের নিয়ে। আমার কি দরকার আছে?

সানা দু্ষ্টু হেসে বলল।
….আচ্ছা তো এই কথা? জেলাসি চলছে হ্যাঁ? তবে ভাবি তুমি চাইলে আমরাও ভাইয়াকে মজা দেখাতে পারি।

নূর ভ্রু কুঁচকে বললো।
….মানে? কিভাবে?

…শোন আমার কাছে একটা প্ল্যান আছে।
সানা নূরকে সবকিছু বুঝিয়ে বললো। নূরও হেসে উঠে সানার প্ল্যানে সায় জানালো

এদিকে আদিত্য ফোন দিয়েই যাচ্ছে। নূরের কোনো খবর নেই। একটু পরে নূর ফোনটা রিসিভ করলো। সেটা দেখে আদিত্য একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিল। আদিত্য হাসি মুখে বলতে যাবে তখনই ফোনের দিকে তাকিয়ে আদিত্যের ভ্রু কুঁচকে এলো। আদিত্য দেখলো নূরের সামনে একটা ক্যাপ পড়া ছেলে বসে আছে। ছেলেটা উল্টো দিকে থাকায় শুধু পিঠটাই দেখা যাচ্ছে।

হঠাৎ নূর ছেলেটার গলা জড়িয়ে ধরে আদুরে গলায় বলল।
…..অওওও ইউ আর সোওও কিউট, সোওও হ্যান্ডসাম। তোমার সামনেতো আদিত্যের কোনো বেলি নেই। একদম চা কম পানি। আমারা হ্যান্ডসাম হাংক।

আদিত্য চোয়াল শক্ত করে হুংকার দিয়ে উঠে বললো।
….নূররর কি হচ্ছে এসব?

আদিত্যের হুংকারে দুইজনই কেঁপে উঠল। সানা তাড়াতাড়ি আদিত্যের দিকে ঘুরে বসে বললো।
…কি হয়েছে ভাইয়া এমন চিল্লাছিস কেন? ভয় পাইছি না আমি?

সানাকে দেখে আদিত্য ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। আদিত্য ভ্রু কুঁচকে বললো।
…তুই?

সানা মাথার ক্যাপ খুলে বললো।
….হ্যাঁ তো, এখানে আর কাকে দেখতে পাচ্ছিস তুই?

আদিত্য থতমত খেয়ে বললো
….তো তুই এভাবে ছেলে সেজে বসে আসিছ কেন? আর কি করছিলি তোরা এসব?

….আরে এটা? এটাতো আমার কলেজের একটা নাটকের রিহার্সাল করছিলাম। কেন তুই কি ভেবেছিস?

আদিত্য আমতা আমতা করে বললো।
…..কি আবার ভাববো? কিছুই না। তোর কাজ হয়ে গেলে তুই এখন যা।

সানা নূরের দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ মেরে চলে গেল।

নূর অভিমান করে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। আদিত্যের দিকে তাকাচ্ছে না। আদিত্য বলে উঠলো।
…..এসব তোমরা ইচ্ছে করে করেছ তাইনা আমাকে জালানোর জন্য? তুমি জানো আরেকটু হলে আমার হার্ট অ্যাটাক এসে যেত।

নূর তাচ্ছিল্যের সুরে বললো।
….. কেন? আমার জন্য কেন তোমার হার্ট অ্যাটাক হতে যাবে? তোমার কাছে তো তোমার হট হট মেয়েরা আছে।

….এই পাগলি এখনো ওটা নিয়েই পড়ে আছ? আরে আমি তো মজা করছিলাম। আমার ওপর কি তোমার বিশ্বাস নেই?

নূর আদিত্যের দিকে তাকিয়ে বললো।
….নিজের থেকেও বেশি বিশ্বাস আছে। কিন্তু কি করবো? মজা করে হলেও তোমার মুখে অন্য মেয়ের কথা শুনলে আমার সহ্য হয়না।

আদিত্য এক কান ধরে বললো।
…..আই এ্যাম সরি প্রাণপাখী। আর কখনোই এমন করবো না। এই দেখ কান ধরছি। এবার একটু মিষ্টি করে হাসোনা লক্ষীটি।

আদিত্যের কান ধরা দেখে নূর ফিক করে হেসে দিল।যা দেখে আদিত্যের প্রাণটা জুড়িয়ে গেল।
—————-

দেখতে দেখতে ১৩ দিন কেটে গেছে। আজ নূর অনেক খুশী , কারণ আদিত্য বলেছে ও কাল ফিরে আসবে। কথাটা শোনার পর থেকে নূরের খুশীর যেন ঠিকানাই নেই। ওর আদিত্য ফিরে আসবে, ওর কাছে ফিরে আসবে। আদিত্য এসে ওকে বুকে জড়িয়ে নিবে। নূর খুশিতে সারা বাড়ি দৌড়ে দৌড়ে সবাইকে খুশীর খবরটা শোনাচ্ছে। এতদিন পরে নূরকে এভাবে হাসি খুশী দেখে বাকি সবারও অনেক ভালো লাগছে।

দুপুর ২টা
নূর বেডের ওপর বসে আদিত্যের ফোনের জন্য ওয়েট করছে। এইটাইমেই আদিত্য সবসময় ফোন দেয়। কিছুক্ষণ পরেই কাঙ্খিত কলটা চলে এলো। নূর একরাশ খুশী নিয়ে ফোনটা রিসিভ করলো। আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
….কি করছে আমার প্রাণপাখীটা?

….তোমার অপেক্ষা করছে।

…..কালই সব অপেক্ষার অবসান হয়ে যাবে প্রানপাখী। এখন বলো লাঞ্চ করেছ?

…হুম করেছি।আচ্ছা শোন না কাল কখন আসবে তুমি? আই মিন কয়টা বাজবে আসতে?

…উমম রাত দশটা এগোরাটা তো বেজেই যাবে আসতে আসতে। আচ্ছা তোমার জন্য কি নিয়ে আসবো বলো?

…আমার শুধু তোমাকে চাই। বাচ তুমি চলে এস আরকিছু চাইনা আমার।

নূরের কথায় আদিত্য একটা প্রাপ্তির হাসি দিল। আরো কিছুক্ষণ কথা বলে ফোনটা রেখে দিল আদিত্য। ফোন রেখে আদিত্য মুচকি হেসে মনে মনে বললো।
…আমি কাল না আজই আসছি প্রাণপাখী। তোমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য দুদিনের কাজ একদিনেই সেরেছি। আমি আসছি আমার প্রাণপাখী টার কাছে।
আদিত্য রেডি হয়ে একটু পরেই ফ্লাইটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো।

এদিকে আদিত্যের সাথে কথা বলার পাঁচ মিনিট পরে নূরের ফোনে একটা কল এলো। নূর ফোনটা রিসিভ করে কতক্ষণ কথা বলার পর নূর তাড়াতাড়ি করে রেডি হয়ে কোথাও যাওয়ার জন্য বের হলো। সিড়ি বেয়ে নিচে আসতেই আবিরের মা নূরকে দেখে বললো।
….ডাটার ইন লাউ, তুমি গোয়িং হয়ার?

নূর অপ্রস্তুত হয়ে বলে উঠলো।
….আ আসলে চাচীমা আমার একটু কাজ আছে, আমি একটু পরেই চলে আসবো।

আবিরের মা মুচকি হেসে বললো।
…ওকে ওকে তাড়াতাড়ি কামিং করো।

নূর মাথা ঝাকিয়ে বেড়িয়ে গেল।
—————-

রাত ১১টা
আদিত্যের গাড়ি মাত্রই বাসার গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকলো। সবাইকে সারপ্রাইজ দিবে বলে কাওকে নিজের আসার কথা জানায়নি। এয়ারপোর্ট থেকে একাই গাড়ি ভাড়া করে চলে এসেছে।

গাড়ি এসে থামলে আদিত্য গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়াল। হঠাৎ ওর বুকের ভেতর দুরুদুরু করে উঠলো। মনটা কেমন যেন অশান্ত হয়ে যাচ্ছে। আদিত্য ভাবছে হয়তো এতদিন পরে নূরের সাথে দেখা হবে সেই এক্সাইটমেন্টে এমন হচ্ছে। তাই বিষয়টা বেশি পাত্তা না দিয়ে হাসি মুখে বাসার দরজায় এসে কলিং বেল বাজাল।

একটু পরে সানা এসে দরজা খুলে দিল। আদিত্যকে দেখে সানা অবাক হয়ে বললো।
…ভাইয়া? তুমি এখন? তোমার না কাল আসার কথা ছিল?

আদিত্য হাসি মুখে বলে উঠলো।
…সারপ্রাইজ,,,পিচ্চি। কেমন আছিস তোরা?

সানা জোরপূর্বক একটা হাসি দেওয়ার চেষ্টা করে বললো।
….ভা ভালো।

আদিত্য ভেতরে এসে দেখলো সবাই ড্রয়িং রুমেই জড়ো হয়ে আছে। এমনকি তাসিরও এখানে।সবার চোখেমুখে কেমন যেন চিন্তার ছাপ। আদিত্য ভ্রু কুঁচকে বললো।
….কি ব্যাপার, সবাইকি আগেই জেনে গিয়েছিল নাকি যে আমি আসবো?

আদিত্যকে এইসময় এখানে দেখে সবাই কেমন ঘাবড়ে গেল। সবার চেহারার রং উড়ে গেল। তাসির এগিয়ে এসে বললো।
….আদিত্য তুই? তোর না কাল আসার কথা ছিল?

আদিত্য বলে উঠলো।
….কেনরে ভাই, আমাকে দেখে কি তোরা খুশী হোসনি? আরে সবাইকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম তাই আজই এসেছি।

তাসিরও জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে বললো।
….ওহ।

এদের সবার রিয়্যাকশন দেখে আদিত্যের মনে কেমন যেন খটকা লাগছে। আদিত্য চারিদিকে চোখ বুলিয়ে দেখলো নূর এখানে নেই। আদিত্য বলে উঠলো।
….সবাই এখানে কিন্তু নূর কোথায়? ওকেতো দেখছিনা?

আদিত্যের কথা শুনে সবাই একজন আরেকজনের মুখ চাওয়াচায়ি করছে। আদিত্যকে কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না ওরা। আদিত্যের বাবা কিছু বলতে যাবে তখনই আদিত্য বলে উঠলো।
….বুঝতে পেরেছি ও রুমে আছে তাইনা? তোমরা এখানেই থাক আমি ওকে গিয়ে সারপ্রাইজ দিয়ে আসি।
কথাটা বলে আদিত্য তাড়াতাড়ি সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেল। পেছন থেকে সবাই ডাকছে কিন্তু সেকথা শুনছে না ও।

আদিত্য ওর রুমের দরজার সামনে এসে একটা লম্বা শ্বাস নিল। তারপর হাসি মুখে দরজা খুলেই বলে উঠলো।
….সারপ্রাইজ প্রাণপাখী।
আদিত্য সামনে তাকিয়ে দেখলো রুমে কেওই নেই। আদিত্য ভ্রু কুঁচকে এদিক ওদিক তাকিয়ে ভালো করে দেখতে লাগলো। ওয়াশরুম আর বেলকনিতেও দেখলো, কোথাও নেই। নূরকে না দেখে আদিত্যের বুকের কাঁপুনি যেন আরও বেড়ে গেল। অজানা আশংকায় ভেতরটা কেমন ঘাবড়ে যাচ্ছে। আদিত্য দ্রুত নিচে নেমে এলো।

নিচে এসে উত্তেজিত হয়ে বললো।
….নূ নূর কোথায়? ওকে দেখছিনা কেন? নূর কি কোথাও গেছে? ও কি ওর বাবার বাসায় গিয়েছে?

তাসির আদিত্যর হাত ধরে বললো।
….আদি প্লিজ শান্ত হ। তুই বস এখানে আমরা বলছি তোকে।
কথাটা বলে তাসির আদিত্যকে সোফায় এনে বসিয়ে দিল।

আদিত্য অস্থির হয়ে বললো।
…..আরে কি শান্ত হ?নূর কোথায় আগে তাই বল।

তাসির আমতা আমতা করে বলে উঠলো।
….আ আসলে আদি নূরকে পাওয়া যাচ্ছে না। দুপুরে বাসা থেকে বের হয়েছিল, তারপর আর কোনো খোঁজ নেই। ফোনও বন্ধ আসছে। বাসার গাড়িও নিয়ে যায়নি।আমরা অনেক জায়গায় খোঁজ নিয়েছি কিন্তু নূরকে কোথাও পাইনি। জানি না ও কোথায় আছে?

আদিত্যের মাথার উপর যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। ওর সামনে পুরো পৃথিবীটা গোল গোল ঘুরতে লাগলো। নিঃশ্বাস যেন আটকে আসছে ওর। আদিত্য জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠলো।
….ম মজা করছিস তোরা তাইনা? এ এসব তোদের প্ল্যান তাইনা, আমার সাথে মজা করার? নূর নিশ্চয় কোথাও লুকিয়ে আছে? আমি ওকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম তাই ও আমাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য এসব করছে তাইনা?
আদিত্য উঠে দৌড়াদৌড়ি করে পাগলের এদিক ওদিক নূরকে খুঁজতে খুঁজতে বলতে লাগলো।
….নূর নূর, প্রাণপাখী কোথায় তুমি বেড়িয়ে এসোনা? দেখ এইরকম মজা আমার একদম পছন্দ না। প্লিজ অনেক হয়েছে এবার বেড়িয়ে এসোনা? আমি প্রমিজ করছি আর কখনো তোমাকে ছেড়ে যাবোনা। প্লিজ একবার সামনে আসো।

আদিত্যের এমন অবস্থা দেখে সবার চোখে পানি চলে এলো। আদিত্যের বাবা ধপ করে সোফায় বসে পড়লো। ছেলেকে এখন কিভাবে সামলাবে সে?

আবির যেয়ে আদিত্যকে ধরে বলে উঠলো।
…..ভাই বাচ করো। আমরা কোনো মজা করছি না। ভাবি সত্যিই নিখোঁজ।

আদিত্য আবিরের কলার চেপে ধরে উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলো।
….নিখোঁজ মানে? কিভাবে নিখোঁজ হলো?তোরা এতগুলো মানুষ থাকতে আমার প্রাণপাখী কিভাবে হারিয়ে গেল? বল কিভাবে?
কথা বলতে বলতে আদিত্য ধপ করে হাঁটু গেড়ে নিচে বসে পড়লো। বুকের ভেতর যেন কিছু একটা কামড় দিয়ে ধরেছে অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে। আদিত্য হাত দিয়ে বুকের বাম পাশে খামচে ধরলো।

তাসির দৌড়ে এসে আদিত্যের কাঁধে হাত দিয়ে বললো।
….একটু শান্ত হ আদি। আমরা খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছি। কমিশনার আঙ্কেল কেউ বলেছি। উনিও পুলিশ ফোর্স লাগিয়ে দিয়েছে। নূরের ফোন বন্ধ থাকায় নাম্বার ট্রেস করা যাচ্ছে না। তবে আমরা অবশ্যই নূরকে পেয়ে যাবো। নূরের তো এখন আর কোনো শত্রুও নেই। ওর সৎ মায়ের ফাঁসি হয়ে গেছে। আর ওই জনিও জেলে সাজা কাটছে।

আদিত্য আহত কন্ঠে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো ।
….সব আমার জন্য হয়েছে। আমি যদি আমার প্রাণপাখীকে রেখে না যেতাম তাহলে এসব কিছুই হতো না।সব আমার জন্য হয়েছে, সব।
কথাটা বলে আদিত্য উঠে দাঁড়িয়ে দৌড়ে বাইরে চলে গেল। তাসির আর আবিরও ওকে ডাকতে ডাকতে ওর পেছনে পেছনে দৌড়ালো।

আদিত্য ওর গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো নূরকে খুজতে। আবির আর তাসিরও অন্য গাড়িতে ওর পিছু পিছু গেল।
আদিত্য পাগলের মতো সারা ঢাকা শহর জুড়ে নূরকে খুঁজতে লাগলো। নিজের ওপর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে আদিত্যের। আজ যদি ও নূরকে ছেড়ে না যেত, তাহলে ওর প্রাণপাখী ওর কাছেই থাকতো। আদিত্যের চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি পরতে লাগলো। কোথায় গেলে প্রাণপাখী? দেখ আমি আমার কথা রেখেছি। আমি ফিরে এসেছি তোমার কাছে। তাহলে তুমি কোথায় গেলে? ফিরে আসো আমার কাছে প্রাণপাখী। আমি আর কখনো তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না। একবার ফিরে এসো প্লিজ।

সারারাত খুঁজেও কোথাও নূরকে পেলনা আদিত্য। আদিত্যের এবার দমটা বন্ধ হয়ে আসছে। বুকের যন্ত্রণা আরও অসহনীয় হয়ে উঠছে। নিঃশ্বাস নিতে পারছে না আদিত্য। চোখের সামনে অন্ধকার দেখছে ও। আদিত্য কোনরকমে গাড়ি থামিয়ে গাড়ি থেকে নেমে রাস্তার পাশে ধপ করে বসে পড়লো। তারপর গগনবিদারী এক আর্তনাদ করে উঠলো।
….নূররররররররর

আর থাকতে পারলো না আদিত্য ওখানেই জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেল।

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here