তোমার_খোঁজে_এই_শহরে #পর্বঃ৭ #নবনী_নীলা

0
230

#তোমার_খোঁজে_এই_শহরে
#পর্বঃ৭
#নবনী_নীলা
” তোর কাছে মেয়েদের এই ঘড়ি কেনো ইয়াদ?”, মায়ের এমন প্রশ্নে ইয়াদ হকচকিয়ে তাকালো। ইয়াদের মা মনোযোগ দিয়ে ঘড়িটা দেখছে। ইয়াদ কিছু বললো না সে নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে নিতে ব্যাস্ত।

” কিরে কিছু জিজ্ঞেস করেছি। কথা বলছিস না কেনো? সব বিয়ের প্রস্তাব কি এই কারণেই ফিরিয়ে দিস?”, গম্ভীর গলায় ইয়াদের মা আবার প্রশ্ন করলো।

ইয়াদ ব্যাগ গুছানো বন্ধ করে দুই হাত বুকের কাছে গুঁজে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,” সবসময় বিয়ে বিয়ে করো কেনো মা?”

ইয়াদের প্রশ্নে ইয়াদের মা বললেন,” ছেলের বিয়ের বয়স হয়েছে বিয়ে বিয়ে করবো না? নাতি নাতনিদের মুখ না দেখেই মরে যাবো নাকি? সারাদিন একা বাসায় থাকতে তো আর আমার ভালো লাগে না।”

ইয়াদ ফোঁস করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে আবার নিজের কাপড় গুছিয়ে নিতে নিতে বললো,” একা কোথায় বাবা তো এখন রিটায়ার্ড করেছে, তোমার সাথেই তো থাকে।”

” তোর বাবা মানুষের কাতারে পড়ে বুঝি? তোর বাবার মতো বেরসিক মানুষের সাথে আবার কথা বলা যায় নাকি। তুই কথা না ঘুড়িয়ে বল এই ঘড়ি কার। তোর কাছেই বা কেনো? এর আগেও ঘড়িটা দেখেছি এতো বছর ধরে এতো যত্নে রেখেছিস কেনো বলতো?”

ইয়াদ মায়ের কাছ থেকে ঘড়িটা নিয়ে ব্যাগ এ রাখতে গিয়ে বললো,” ঘড়ির মালিককে পেলে নিয়ে আসবো তোমার কাছে।” বলে ইয়াদ তার মায়ের দিকে তাকিয়ে হাসলো।

ইয়াদের মা বললেন,” খুঁজে পেলে মানে? মেয়েটা কোথায়?”

ইয়াদ ব্যাগের চেইন লাগাতে গিয়ে একটু থমকে গিয়ে বললো,” হারিয়ে ফেলেছি মা।”

” তোর কথা আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। আর হটাৎ ব্যাগ গুছিয়ে কোথায় যাচ্ছিস সেটাও তো বললি না।”, মায়ের প্রশ্নের উত্তরে ইয়াদ বললো,” তোমাকে না বললাম আজকে একটা এনজিওর সাহায্যে একটা গ্রামে যাবো সেখানে ফ্রী ট্রিটমেন্ট দিয়ে তারপর কাল রাতে ঢাকায় ফিরবো।”

” তুই নাকি নতুন শহরে একটা হসপিটালে জয়েন করেছিস?”, ইয়াদ মায়ের প্রশ্নে না সূচক মাথা নেড়ে বললো,” নতুন না মা আমার খুব চেনা এক শহর। তুমিও শহরটাকে চিনো।” তখনই ইয়াদের ফোন বেজে উঠল। ইয়াদ ফোনটা টেবিল থেকে তুলে রিসিভ করল।ওপাশ থেকে বললো,” স্যার, আমি গাড়ী নিয়ে আপনার বাসার সামনে এসে গেছি।”

” আচ্ছা, আমার সব গোছানো হয়ে গেছে। আমি আসছি।”, বলে ইয়াদ ফোনটা প্যান্টের পকেটে রেখে বললো,” মা, ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে এসেছে আমার এক্ষুণি যেতে হবে।”

ইয়াদ সব কিছু রেডি করে ব্যাগটা হাতে নিয়ে মায়ের কাছে গেলো। ইয়াদের মা আবার প্রশ্ন করলো,” বিয়েটা কি তাহলে করছিস না? এই মেয়েকেও না করে দিবো?”

ইয়াদ নিজের মায়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,” হুম।” ইয়াদের মা আর কিছু বললেন না আজ এতো বছর ধরে তার ছেলে একটা ঘড়ি আগলে রেখেছে। তিনি নিজেও চান সেই মেয়ের সাথেই ইয়াদের বিয়ে হোক যাকে ছেলেটা এতো ভালোবাসে।

ইয়াদ মায়ের থেকে বিদায় নিয়ে বের হয়ে এলো। ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করায় ইয়াদ বেশি দেরি করলো না গাড়িতে উঠে রওনা হলো। গ্রামটায় এসে পৌঁছাতে পৌঁছাতে বিকেল হয়ে গেলো।

গ্রামের ভিতরের কোন জমিদার বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে, এদিকে নাকি হোটেলের ব্যবস্থা অনেক দূরে। ইয়াদকে যে লোকেশন এ আসতে বলা হয়েছে সেখানে এসে সে দাঁড়িয়ে আছে কিছুক্ষণ হলো। গ্রামের পরিবেশটা ভালোই লাগছে তার। এর মাঝেই ইফতি চলে এসেছে ইয়াদকে নিতে। ইফতি এই এনজিওর একজন সহযোগী।

” স্যার,আপনার কোনো সমস্যা হয় নি তো?”, ইফতি হাসি মুখে জিজ্ঞেস করলো।

ইয়াদ হেসে না সূচক মাথা নাড়ল। ইফতি ইয়াদের ব্যাগ হাতে নিতে চাইলো ইয়াদ তা দিলো না। লোকটা জোর করে ব্যাগটা হাতে নিয়ে বললো,” আরে আরফিন সাহেব দিন ব্যাগটা। এতক্ষন আসতে অসুবিধা হয় নি এবার হবে। বিশ মিনিট হাঁটার পর খাল পেরিয়ে বড় রাস্তায় গাড়ী পাবো বুঝলেন?”

ইয়াদ ড্রাইভারকে গাড়ী নিয়ে আশেপাশের কোনো গ্যারেজে বা কোনো খালি ঘরে রাখার ব্যাবস্থা করতে বলেই ইফতির সাথে হাটা ধরলো।

ইফতি কথা বলতে বলতে হাটছে,” আরফিন সাহেব আর বইলেন না কেও এই গ্রামে এসে সাহায্য করতে ইচ্ছুক না। আমরা বলেছি টাকা দিবো সেটাতেও কেও রাজি না। আর আপনি তো ফ্রী ট্রিমেন্ট দিতে রাজি হয়ে গেলেন। অনেক কষ্টে তিন জন ডক্টরের ব্যাবস্থা করতে পারলাম।”

কথা বলতে বলতে ইয়াদ আর ইফতি বড় রাস্তায় পৌঁছে একটা রিক্সা ভাড়া করলো। তবে এই রিক্সা গুলো একটু অন্য রকম অনেক জায়গা থাকলেও একটু নিচু। ইয়াদ জমিদার বাড়িতে এসে একটু অবাক হলো। বাড়িটা পুরনো লাগছে তবে ভিতরে যে পরিমাণ হাসাহাসি কথা শুনা যাচ্ছে মনে হচ্ছে জমিদারের নাতি নাতনী পিকনিক করতে এসেছে।
ভিতরে নয় দশ জনের মতো ছেলে মেয়ে রয়েছে। দেখে সবাইকে ভার্সিটির স্টুডেন্ট বলেই মনে হচ্ছে।

ইফতি বললো,” এরাই হল সব। আমাদের দৌড় তো এনজিও খোলা পর্যন্তই ছিলো। সব ধরনের সাহায্য এরাই করে থাকে বাকি দুজন ডক্টর এরাই ম্যানেজ করে। আর এই জমিদার বাড়ির সাথে এদের কারোর যোগসূত্র থাকায় সুবিধা হয়েছে। নয়তো থাকার জায়গা নিয়ে বিপাকে পড়ে যেতাম।” কথা বলতে বলতে ইফতি খেয়াল করলো ইয়াদকে ক্লান্ত লাগছে।

ইফতি ম্যাডাম বলে একজনকে ডাকলো। মধ্য বয়সী এক মহিলা এগিয়ে আসলেন।” ম্যাডাম ওনাকে একটু ওনার ঘরটা দেখিয়ে দিন।”

মহিলা ইয়াদকে ওর ঘর দেখিয়ে দিলো। ইয়াদ যতটা খারাপ হবে ভেবেছিলো এতো খারাপ না যথেষ্ট ভালো ব্যাবস্থা করা হয়েছে। ইয়াদ ব্যাগ রেখে ফ্রেশ হয়ে এসে মাকে ফোন করলো। তারপর নিচে নেমে এলো।

এনজিওর লোকজন একপাশে বসে আছে কিন্তু অল্প বয়সী ছেলমেয়েরা একজন মহিলাকে এনে তাকে দিয়ে চিতই পিঠা আর পাটিসাপটা বানাচ্ছে। ইয়াদের ভিতরে থাকতে ইচ্ছে হচ্ছে না সে বাহিরে বের হয়ে এলো। বাড়ির পেছনের নারিকেল বাগানটা খুব সুন্দর লাগছে।

ইয়াদ অনেকদিন পর গএতো গ্রামীণ কোনো জায়গায় এসেছে। যদিও এখন সন্ধ্যা প্রায় তবুও হাঁটতে ভালো লাগছে।ইয়াদ হেঁটে হেঁটে বাগানটা দেখছিল হটাৎ কেউ তাকে পিছন থেকে হাত টেনে সরিয়ে নিলো।ইয়াদ যখন পিছনে ফিরলো তখন চোখে চশমা পড়া একটা মেয়ে তার হাত ধরে তাকে সরিয়ে এনেছে। ইয়াদ মেয়েটার হাতের দিকে তাকাতেই মেয়েটা অপ্রস্তুত হয়ে হাত সরিয়ে নিলো।

তখনই উপর থেকে জোড়ে কোনো কিছু পড়ার শব্দে ইয়াদ পিছনে ফিরলো। গাছ থেকে ডাব পাড়া হচ্ছিলো, মেয়েটা যদি না সরিয়ে আনতো তাহলে ডাবটা ইয়াদের মাথায় পড়তো। ইয়াদ ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বললো,”ধন্যবাদ।”

মেয়েটা ইয়াদের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,” আপনাকে তো চিনলাম না আপনি কি সেই নতুন ডাক্তার?”

ইয়াদ মাথা নাড়ল তবে কিছু বলার আগে আরেকটা মেয়ে অর্নীহা বলে ডাকলো। নামটা শুনে ইয়াদ চোখ বড় করে তাকালো। যেই মেয়েটা তাকে বাঁচিয়েছে তার নাম অর্নিহা। অন্য মেয়েটি এগিয়ে এসে বললো,” মাগরিবের আজানের পর জমিদার বাড়ির বাহিরে বের হতে বারণ করেছে। চল যাই আর থাকা ঠিক হবে না।

অন্য মেয়েটি ইয়াদকে উদ্দেশ্য করে বলল,” স্যার আপনিও চলুন।” বলে মেয়ে দুইটি বাড়ির দিকে এগিয়ে গেল।

ইয়াদ চুপ করে আছে কারণ টয়ার নাম ছিল অর্ণিহা তাবাসসুম। এই মেয়ে কি কোনো ভাবে টয়া?এমন লম্বা চুল চোখে চশমা এই কয় বছরে এতো পরিবর্তন সত্যিই কি সম্ভব!

[ চলবে ]

#তোমার_খোঁজে_এই_শহরে
সকল পর্বের লিংক
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=122115225080106938&id=61553208165829&mibextid=2JQ9oc

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here